হজরত আদম (عليه السلام) এবং নবী করীম (ﷺ)


হজরত আদম (عليه السلام)কে হকতায়ালা তাঁর কুদরতী পবিত্র হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাঁর মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেয়া হয়েছিলো। আর আমাদের নবী হাবীবেপাক (ﷺ)কে এই মহিমা প্রদান করা হয়েছে যে, হকতায়ালা স্বয়ং তাঁর বক্ষ সম্প্রসারণ করেছিলেন। তাতে ইমান ও হেকমত স্থাপন করেছিলেন। আল্লাহ্তায়ালা হজরত আদম (عليه السلام) এর অবয়বজাগতিক উপাদান দ্বারা গঠন করেছিলেন। আর আমাদের নবী হাবীবুল্লাহ্ (ﷺ) এর সৃষ্টি নবুওয়াতী সৃষ্টি। ফেরেশতাবৃন্দ হজরত আদম (عليه السلام)কে সেজদা করেছিলো নবী করীম (ﷺ) এর জন্যেই। আল্লাহ্পাক হজরত আদম (عليه السلام) এর রূহে নূরে মোহাম্মদী আমানত রেখেছিলেন। আর সেই পবিত্র নূরের ঝলক আদম (عليه السلام) এর ললাটদেশে জ্বলজ্বল করতো। সেজদা করার নির্দেশ ছিলো সে কারণেই। তাই প্রকৃত আভিজাত্য ও শরাফত রসুলেপাক (ﷺ) এর জন্যই নির্ধারিত। 


আল্লাহ্পাক পবিত্র কালামে এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্তায়ালা ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবী করীম (ﷺ) এর উপর দরূদ পাঠান।’ সেজদা করার কাজে হকতায়ালা ফেরেশতাগণের সঙ্গে শামিল ছিলেন না। আর এটা বৈধও নয়। কিন্তু দরূদ পাঠানোর ব্যাপারে দেখা যায়, আল্লাহ্পাক ফেরেশতাকুলের সঙ্গে নিজেও শামিল রয়েছেন। নবী করীম (ﷺ) এর এই ফযীলত সর্বাধিক সম্মানের। সর্বাধিক পরিপূর্ণতার। আবার দেখা যায়, ফেরেশতাকুলের সেজদার মধ্যে তেমন কোনো মাহাত্ম্য ও আভিজাত্য নেই, কেননা এটা সংঘটিত হয়েছে কেবল একবার। কিন্তু নবী করীম (ﷺ) এর উপর দরূদ ও সালাম পাঠানোর মাধ্যমে আল্লাহ্তায়ালার রহমতের নূর প্রতিটি মুহূর্তে বর্ষিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এ কাজে ইমানদারগণকেও অংশগ্রহণ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। 


একটি ব্যাপারে দেখা যায়, আল্লাহ্তায়ালা হজরত আদম (عليه السلام)কে বেশী মর্যাদা দিয়েছেন। আল্লাহ্তায়ালা তাঁকে সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন। এ সম্পর্কে দায়লামী ‘মসনদুল ফেরদাউস’ কিতাবে হজরত আবু রাফে (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছ উপস্থাপন করেছেন। রসুলেপাক (ﷺ) বলেন, আদম (عليه السلام)কে যখন বস্তুসমূহের নাম শিক্ষা দেয়া হয়েছিলো, ওই সময় আমার উম্মতকে আমার সামনে মিছালস্বরূপ পেশ করা হয়েছিলো। তখন তারা সকলেই মাটি ও পানির মধ্যে ছিলো। তখন আমাকেও সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দেয়া হয়েছিলো। কাজেই দেখা যায়, হজরত আদম (عليه السلام)কে যেমন বস্তুসমূহের নাম শিক্ষা দেয়া হয়েছিলো, তেমনি আমাদের পয়গম্বর (ﷺ)কেও দেয়া হয়েছিলো। তাঁকে শুধু বস্তুর নামই শিক্ষা দেয়া হয়নি, বরং বস্তুর হাকীকতের এলেম প্রদান করা হয়েছিলো। এটা নিঃসন্দেহ যে, নামের চেয়ে বস্তুর তত্ত্ব অনেক গুণ ঊর্ধ্বে। কেননা নামটা হচ্ছে বস্তুর তত্ত্ব সম্পর্কে অবহিত হওয়ার মাধ্যম। বস্তুই মুখ্য। নাম নয়। এটা সুস্পষ্ট যে, জ্ঞানের মর্যাদা নিরূপিত হয় তার জানিতবস্তু (মালুম) এর মর্যাদা অনুসারে। 


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 




© | সেনানী এপ্স |

 
Top