রোগীদেরকে সুস্থ করা


হজরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম (ﷺ) এর কাছে এক মহিলা তার সন্তানকে নিয়ে এলো। নিবেদন করলো, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমার এ সন্তানটি উন্মাদ, সে আমাদেরকে যন্ত্রণা দেয়। সকাল সন্ধ্যায় আমার সময় নষ্ট করে। একথা শুনে রসুলেপাক (ﷺ) বাচ্চাটির বুকের উপর হাত বুলিয়ে দিলেন। সে বমি করে দিলো। তার পেট থেকে একটি কালো রঙের কীট বের হয়ে হাঁটতে লাগলো। হাদীছখানা দারেমী বর্ণনা করেছেন। 


বনী খাছআম গোত্রের এক মহিলা তার বাচ্চাকে রসুলেপাক (ﷺ) এর নিকট নিয়ে এলো। বাচ্চাটি ছিলো বোবা। রসুলেপাক (ﷺ) পানি চাইলেন এবং তার মধ্যে কুলি করলেন এবং দুখানা হাত ধৌত করলেন। তারপর সে পানি বাচ্চাটিকে পান করিয়ে দিলেন। সাথে সাথেই বাচ্চাটির ভাষা ফুটলো এবং সে সম্পূর্ণ সুস্থ ও জ্ঞানসম্পন্ন হয়ে গেলো। 


হজরত কাতাদা ইবনে নোমান (رضي الله عنه) এর চোখে উহুদের যুদ্ধের দিন আঘাত লেগেছিলো। চোখের মণি বের হয়ে গাল পর্যন্ত নেমে এসেছিলো। তিনি নিবেদন করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমার স্ত্রীকে আমি খুব ভালোবাসি। আমার চোখের এরূপ যখম নিয়ে তার নিকট যেতে আমি অস্বস্তিবোধ করছি। রসুলেপাক (ﷺ) তাঁর চোখের মণিটি হাত দিয়ে ধরে কোটরে বসিয়ে দিলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ্! চোখটি ভালো করে দাও। তাঁর চোখটি অপর চোখের চেয়ে অধিকতর সুন্দর ও উত্তম দৃষ্টিসম্পন্ন হয়েছিলো। কখনো অপর চোখে যন্ত্রণা হলেও এই চোখটি সবসময় সুস্থ থাকতো। হজরত কাতাদা ইবনে নুমান (رضي الله عنه) এর জনৈক সন্তান থেকে বর্ণিত হয়েছে- তিনি একদিন ওমর ইবনে আবদুল আযীয (رحمة الله) এর নিকট এসেছিলেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কে?’ উত্তরে তিনি এই শেরখানা পাঠ করেছিলেন যার অর্থÑ আমার পিতা ওই ব্যক্তি, যিনি মুস্তফা (ﷺ) এর কাছে তাঁর চোখের অসুবিধা দূর করে দেয়ার আবেদন করেছিলেন। নবী মুস্তফা (ﷺ) এর পবিত্র হাতের মাধ্যমে তাঁর চোখ স্বস্থানে ফিরে এসেছিলো। কতইনা সুন্দর হয়েছিলো তাঁর চোখ, আর চোখকে স্পর্শকারী হাতও কতো যে সুন্দর। 


ওমর ইবনে আবদুল আযীয তাঁকে পুরস্কৃত করেছিলেন এবং সম্মান জ্ঞাপন করেছিলেন। তিবরানী ও আবু নাঈম হজরত কাতাদা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন, আমি আমার শরীর দিয়ে রসুলেপাক (ﷺ) এর দিকে নিক্ষিপ্ত বৃষ্টির মতো তীরগুলো প্রতিহত করছিলাম। হঠাৎ একটি তীর এসে আমার চোখে লাগলো, ফলে কোটর থেকে চোখের মণি বের হয়ে এলো। বেরিয়ে আসা চোখটিকে হাত দিয়ে ধরে রসুলেপাক (ﷺ) কে দেখার চেষ্টা করছিলাম। আমার অবস্থা দেখে রসুলেপাক (ﷺ) এর চোখ দিয়ে অশ্র“ ঝরতে লাগলো। তিনি দোয়া করলেন, বারেগাহে এলাহী! সে আপন চেহারা দিয়ে আপনার নবীকে রক্ষা করেছে এবং যখম হয়েছে। আপনি তার চোখকে এমন ভালো করে দিন, যাতে তার এই চোখ অপর চোখ থেকেও উত্তম হয়ে যায়। 


অপর এক বর্ণনায় আছে, এস্তেসকার এক রোগী তার রোগমুক্তির আবেদন করে কোনো একজনকে রসুলেপাক (ﷺ) এর নিকট প্রেরণ করলো। রসুলেপাক (ﷺ) এক মুষ্টি মাটি হাতে নিয়ে তার মধ্যে মুখের লালা দিয়ে লোকটির হাতে দিলেন। লোকটি তাজ্জব হয়ে গেলো। ভাবলো, নবী করীম (ﷺ) হয়তো তার সঙ্গে কৌতুক করছেন। যা হোক, মাটি নিয়ে লোকটি রোগী ব্যক্তির কাছে হাজির হলো। রোগী তখন মরণাপন্ন। লোকটি তার জিহবায় মাটি লাগিয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সুস্থ হয়ে গেলো।


আরেক লোকের দু’টি চোখই নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। কিছুই দেখতে পেতো না সে। রসুলেপাক (ﷺ) তার চোখে দম করে দিলেন। তারপর থেকে তার চোখ এমন ভালো হয়ে গেলো যে, আশি বৎসর বয়সেও তিনি সুই এর মধ্যে সুতা লাগাতে পারতেন। এ ধরনের অসংখ্য মোজেজা রয়েছে।


খয়বরের যুদ্ধে রসুলেপাক (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘আলী মুর্তজা কোথায়?’ সাহাবীগণ বললেন, তাঁর চোখ উঠেছে। রসুলেপাক (ﷺ) তাকে ডেকে আনলেন। হজরত আলী (رضي الله عنه) এর মাথা কোলে নিয়ে দুচোখে পবিত্র মুখের লালা লাগিয়ে দিলেন এবং দোয়া করলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন যেনো তাঁর চোখে কোনো অসুখই হয়নি। এরপর হজরত আলী (رضي الله عنه) এর জীবনে আর কখনও চক্ষু ওঠার রোগ হয়নি। 


খয়বরের যুদ্ধের দিন হজরত সালামা ইবনে আকওয়া (رضي الله عنه) এর পায়ের গোছা ভেঙে গিয়েছিলো। নবী করীম (ﷺ) তিন বার দম করে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলো। পরবর্তী জীবনে তাঁর পায়ে আর কোনো ব্যথা অনুভূত হয়নি। সেদিন হজরত যায়েদ ইবনে মুআয (رضي الله عنه) এর পায়ে তলোয়ারের আঘাত লেগে যখম হয়ে গিয়েছিলো। তিনি যখন কাআব ইবনে আশরাফকে কতল করলেন, তখন নবী করীম (ﷺ) তাঁর পায়ের যখমে থুতু লাগিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে পা ভালো হয়ে গেলো।


সহীহ্ বোখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উতায়ক (رضي الله عنه) যখন আবু রাফে ইহুদীকে কতল করলেন, তখন ছিলো জোৎস্নাময়ী রজনী। তিনি সিঁড়ির উপর পা রাখতে যেয়ে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেলেন, ফলে পায়ের গোছা ভেঙে গেলো। তিনি রসুলেপাক (ﷺ) এর শরণাপন্ন হলেন। রসুলেপাক তাঁর পায়ের গোছার উপর হাত বুলিয়ে দিতেই পা ঠিক হয়ে গেলো। হাদীছগ্রন্থসমূহে এরকম অনেক ঘটনা লিপিবদ্ধ রয়েছে। 


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 





© | সেনানী এপ্স |

 
Top