উমর  (رضي الله عنه) ২০ রাকাত  সহ তারাবীহের জামাত চালু করেন ও অন্যান্য সাহাবীগণের সমর্থন
 
প্রিয় পাঠক বৃন্দ ! নাবী কারীম আলইহিস স্বালাত ওয়াস সালাম নিজের জাহিরী জিবনে শুধু দুই অথবা তিন দিন জামাতের সহিত তারাবীহের নামাজ পড়িয়েছেন। তার পর যাহাতে উক্ত নামাজ উম্মতের প্রতি ফরজ না হয়ে যায় তিনি তারাবীহ্ জামাত সহকারে পাঠ করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। অতঃপর হাযরাত আবু বাক্কার সিদ্দিক রাদীআল্লাহু আনহুর ইন্তেকাল পর্যন্ত সাহাবাহগন একাকি তারাবীহ্ আদা করতে থাকেন। কিন্তু যখন গভীর চিন্তাবিদ ও ইসলাম দুনিয়ার দ্বিতীয় খালিফা হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহু খেলাফতের মসনদে আরোহন করলেন, তিনি এই ভেবে যে, নাবী কারীম আলইহিস স্বালাত ওয়াস সালাম যে কারনে তারাবীহের জামাত ছেড়ে দিয়েছিলেন তা এখন আর সম্ভব নয়। কারণ নাবী পাক আলইহিস স্বালাত ওয়াস সালাম-এর ইন্তেকালের সঙ্গে সঙ্গে ওহী আসা বন্ধো হয়ে যাওয়ার কারণে নতুন করে আর কোনো ইবাদত ফরজ হতে পারে না। তাই তিনি পুনরায় তারাবীহের নামাজ জামাতের সহিত চালু করেন। এবং যেহেতু নাবী পাক আলইহিস সালাম তারাবীহ্ জামাতের সহিত পুরো মাস আদায় করেননি তাই তিনি পুরো মাস জামাত সহকারে তারাবীহ্ চালু করে তাকে نعمت البدعة  অর্থাৎ ! সুন্দর বিদ্আত বা বিদ্আতে হাসানা বলে আখ্যায়িত করেছেন। হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহুর উক্ত কর্মকে বিনা মতবিরোধে ও বিবাদে সমস্ত সাহাবা কেরাম, তাবেয়িনে এজাম, মুফাস্সিরীন, মোহাদ্দেসীন, মুহাক্কেকীন, মুজতাহেদীন ও সমস্ত বিশ্বস্ত উলামায়ে কেরাম রাহমাতুল্লাহ্ আলাইহিম আজমাঈন মেনে নিয়েছেন এবং আজ পর্যন্ত দৃঢ় ভাবে তা বাস্তবায়ন করে আসছেন।
 *উল্লেখ থাকে যে, হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহু পুনরায় বিশ রাকাতের সহিতই তারাবীহ্ জামাত চালু করেন আট রাকায়াতের সহিত না। যে বিষয়ে সমস্ত মোহাদ্দেসীন ও মুফাস্সেরীন একমত।
উপরোক্ত মন্তব্যের প্রমান নিম্নে প্রদত্ত হল,
عن عبد الرحمٰن بن عبد القادرى انه قال خَرَجْتُ مع عمر بن الخطاب رضى الله عنه ليلة فى رمضان الى المسجد فاذا الناس اذا راع متفر قون يُصَلِى الرجال لنفسه و يصلى الرجل فيصلى بصلاته الر هط فقال عمر انى ارىٰ لو جمعت هو لا ء على قارى واحدٍ لكان امثل ثم عزم فجمعهم على ابى بن كعب ثم خرجت معه ليلة اخرىٰ و الناس يصلون بصلاة قاريهم قال عمر رضى الله عنه نعمت البدعة هذه 
(رواه البخار باب فضل من قام رمضان و اللفظ له، ومالك فى المؤطا كتاب الصلوة فى رمضان وابن خزيمة فى صحيحه وعبدالرزاق فى المصنف والبيهقى فى السنن الكبرى)
 অর্থাৎ :- হাযরাত আব্দুর রাহমান বিন আব্দুল কারী রাদীআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহুর সহিত রমজান মাসের এক রাত্রে মসজিদের দিকে বের হলাম। ( লক্ষ্য করলাম ) মুসলমানগন বিচ্ছিন্ন ভাবে নামাজে মগ্নো রয়েছেন। কেউ একাই নামাজ পড়ছেন আবার কিছু সংখ্যাক  লোক কোনো এক ব্যক্তির পিছনে নামাজে মাশগুল রয়েছেন। যা প্রত্যক্ষ করে হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহু বলেন, আমি ভাবছি, যদি আমি এই সমস্ত ব্যাক্তিদের একজন ইমামের পিছনে একত্রিত করতে পারতাম তাহলে খুব ভালো হত। অতঃপর উক্ত উদ্দেশ্যে মনস্থির করে তিনি সমস্ত লোকদেরকে হাযরাত উবাই বিন কাআব রাদীআল্লাহু আনহুর পিছনে ও ইমামত্বে একত্রিত করলেন। অন্য এক রাত্রে যখন আমি তাঁর সহিত মসজিদের দিকে বের হই (আমরা  লক্ষ্য করলাম) সমস্ত ব্যাক্তিগন তাদের একজন ইমামের পিছনে নামাজে মগ্নো আছেন। যা প্রত্যক্ষ করে হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহু বলে উঠেন, نعمت البدعة هذهٖ অর্থাৎ ! কি সুন্দর বিদ্আত এটা !
( বোখারী শরীফ প্রথম খন্ড হাদীস নং ২০১০,, মোআত্তা ইমামে মালিক হাদীস নং ২৪৬,,
সহীহ্ ইবনে খোজাইমা হাদীস নং ১৫৫,, সুনানে কুবরা ২য় খন্ড পৃষ্টা নং ৪৯৬,,) 
عن يزيد بن رومان انه كان الناس يقومون فى زمان عمر بن الخطاب فى رمضان بثلاث و عشرين ركعة (رواه مالك فى المؤطا و البيهقى فى السنن الكبرى والعسقلانى فى فتح البارى واسناد الحديث صحيح)
 অর্থাৎ :- হাযরাত ইয়াজিদ বিন রুমান রাদীআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহুর খেলাফত কালে মুসলমানগন তেইশ রাকাত ( বিশ রাকাত তারাবীহ্ ও তিন রাকাত বিত্র)-এর জামাত কায়েম করতেন।
( মুআত্তা ইমাম মালিক শরীফ হাদীস নং ২৪৮ কিতাবুস সালাত ফি রামজান,,
সুনানুল কুবরা বাইহাকী শরীফ ২য় খন্ড পৃষ্টা নং ৪৯৬,,
ফাতহুল বারী শারহিল বোখারী শরীফ ৪র্র্থ খন্ড পৃষ্টা নং ২৫৩,,
শোয়াবুল ইমান শরীফ হাদীস নং ৩২৭০,, )
 হাযরাত ইমাম আবদুল্লাহ্ বিন আহমাদ  বিন কুদামা বলেন,
وهذا كلاجماع (المغنى جلد اول ص-»456)
 অর্থাৎ :- বিশ রাকাত সহকারে তারাবীহ্ আদায় করার উপর সাহাবাগনের সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।    
(আল মুগনী প্রথম খন্ড পৃষ্টা নং ৪৫৬ ) 
عن يحي بن سعيد ان عمر بن الخطاب امر رجلا يصلى بهم عشرين ركعة
(رواه ابن ابى شيبه المصنف باب كم يصلى فى رمضان من ركعةٍ)
 অর্থাৎ :- হাযরাত ইয়াহ্য়া বিন সাঈদ রাদীআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত। নিশ্চয়ই হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহু এক ব্যক্তিকে ( উবাই বিন কাআবকে ) লোকেদের বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ পড়ানোর আদেশ প্রদান করলেন।
( মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা শরীফ ২য় খন্ড পৃষ্টা নং ১৬৩, হাদীস নং ৭৭৬৪,, )
عن السائب بن يزيد قال كنا نقوم فى عهد عمر بعشرين ركعة والو تر 
(رواه البیهقى فى معرفةُ السنن واسناده صحيح)
 অর্থাৎ :- হাযরাত সাঈব বিন ইয়াজিদ রাদীআল্লাহু আনহু বলেন, আমরা ( সাহাবা ও তাবেয়ীগন )  হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহুর খেলাফত কালে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ ও ( তিন ) রাকায়াত বিত্র আদায় করতাম।
( মারেফাতুস সুনান ৪র্থ খন্ড পৃষ্টা নং ২০৭ )
عن عبد العزيز بن رفيع قال كان ابى بن كعب يصلى بالناس فى رمضان بالمدينةِ عشرين ركعةً و يوتربثلاث
 (رواه ابن ابى شيبه فى المصنف باب كم يصلى فى رمضان من ركعةٍ)
 অর্থাৎ :- হাযরাত আব্দুল আজীজ বিন রাফীই কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন হাযরাত উবাই হিন কাআব ( যাকে হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহু তারাবীহের ইমাম নিযুক্ত করেছিলেন) রমজান মাসে মদিনা শরীফে লোকদের বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ ও তিন রাকাত বিতর পড়াতেন।
( মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২য় খন্ড পৃষ্টা নং ১৬৩, হাদীস নং ৭৭৬৬,)
عن السائب بن يزيد قال كانوا يقومون على عهد عمر بن الخطاب رضى الله عنه فى شهر رمضان بعشرين ركعةً
(رواه البیهقى فى السنن الكبرى ومعرفهُ السنن و الاثار وقال الامام جعفر بن محمد الفريابى اسناده ورجاله ثقات) 
 অর্থাৎ :- হাযরাত সাঈব বিন ইয়াজিদ রাদীআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, মুসলমানগন হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহুর খেলাফত কালে রমজান মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ কায়েম করতেন।
 ইমাম জাফার বিন মোহাম্মাদ ফিরইয়াবী রাহমাতুল্লাহ্ আলাই বলেন, উক্ত হাদীস-এর সনদ ও বর্ণনাকারীগন সহীহ্।
( বাইহাকী সুনানুল কুবরা শরীফ ২য় খন্ড পৃষ্টা নং ৪৯৬ হাদীস নং ৪৩৯৩ মাক্কি,,
মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার ৪র্থ খন্ড পৃষ্টা নং ২০৭,, কিতাবুস সিয়াম প্রথম খন্ড পৃষ্টা নং ১৭৬,, )
عن السائب بن يزيد قال كنا ننصرف من القيام على عهد عمر رضى الله عنه وقد دنافروع الفجر و كان القيام على عهد عمر رضى الله عنه ثلاثة وعشرين ركعةً
(رواه عبد الرزاق فى المصنف)
 অর্থাৎ :- হাযরাত সাঈব বিন ইয়াজিদ রাদীআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা উমার রাদীআল্লাহু আনহুর জামানায় তারাবীহ্ নামাজ হতে ফজর নামাজের কাছাকাছি অবকাশ পেতাম। এবং হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহুর খেলাফত কালে ( বিতর সহ ) তেইশ রাকায়াত তারাবীহ্ কায়েম করা হত।
(মুসান্নফ আব্দুর রাজ্জাক শরীফ ৪র্থ খন্ড পৃষ্টা নং ২৬১ হাদীস নং ৭৭৩৩,,)
عن الحسن ان عمر بن الخطاب رضى الله عنه جمع الناس على ابى بن كعب فكان يصلى بهم عشرين ركعةً
(رواه ابن ابى شيبه فى المصنف)
 অর্থাৎ :- হাজরাত হাসান বাসরী রাদীআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত। নিশ্চই হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহু মুসলমানদের তারাবীহের জন্য হাযরাত উবাই বিন কাআব-এর পিছনে একত্রিত করলেন। অতএব তিনি তাদের কে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ পড়াতেন।
( মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২য় খন্ড পৃষ্টা নং ১৬৩,, তালখীসুল হাবীর লি আসকালানী ২য় খন্ড পৃষ্টা নং ২১ হাদীস নং ৫৪০,,
সিয়ারো আলামিন নোবলায়ে প্রথম খন্ড পৃষ্টা নং ৪০০,,)
 
প্রিয় পাঠক বৃন্দ! উপরুক্ত হাদীস সমূহ দ্বারা দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার ও প্রমাণিত যে, হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহু পুনরায় তারাবীহ্ জামাত চালু করার সময় বিশ রাকাতই চালু করেছেন ও পরক্ষনে বিশ রাকায়াতই বাস্তবায়ন হয়েছে। এবং তিনার উক্ত কর্মকে সমস্ত সাহাবাগন মেনে নিয়ে তার উপর দৃঢ় ভাবে আমল করেছেন। তাদের মধ্যে অবশ্যয় সেই সাহাবাগনও উপস্থিত ছিলেন যারা নবী পাক আলাইহিস সালাম-এর পিছনে দুই বা তিন দিন জামাতের সহিত তারাবীহ্ আদায় করেছেন। যদি হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহুর বিশ  রাকায়াতের সহিত তারাবীহ্ সহীহ্ ও সুন্নাত না হত তাহলে সাহাবাগন তা কখনও হতে দিতেন না আর না বিস রাকায়াতকে বাস্তবায়ন করতেন বরং সবাই বিশ রাকায়াতের বিরোধিতা করে তা ছেড়ে দিতেন। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামগনের বাধা দেওয়া বা বিরধিতা করা কোনো হাদীস থেকে প্রমানিত নয়। বরং তিনার যুগে ও তিনার পর অন্যান্য খোলাফায়ে রাশেদীন ও তাবেয়ীগনের যুগেও  তিনার চালু করা বিশ রাকায়াত তারাবীহের উপর দৃঢ় ভাবে আমল করা প্রমানিত যা আমি আগামি অধ্যায়ে প্রমান করব ইনশাআল্লহ্। এবার কেউ যদি বলে যে, হাযরাত উমার কে আমরা কেনো মানব ? অথবা হাযরাত উমার সুন্নাতের খেলাফ ভুল করে  বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ পড়িয়েছেন ( নাউজুবিল্লাহ) আমাদের কাছে তা ভরসাযোগ্য ও আমলযোগ্য না। তাহলে আমি তাদেরকে বলবো, কি আপনারা হাযরাত উসমান ও হাযরাত আলী রাদীআল্লাহু আনহুমা ও সাহাবাগন অপেক্ষা বেশি জ্ঞানী ও হাদিস বুঝেন ? হাযরাত উমার রাদীআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ যদি ভুল হত তাহলে কি সাহাবাগন বিনা বিরোধিতায় তা মেনে নিতেন ? ইহাছাড়াও যারা উক্ত হাদীস সমূহ কে মানতে রাজি নয় তাদেরকে গোটা মাস জামাতের সহিত তারাবীহ্ আদায় করা উচিত নয় কারণ নাবী পাক আলাহিস স্বালাত ওয়াস সালাম গোটা মাস তারাবীহ্ জামাতের সহিত আদায় করেননি। আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সকলকে শরিয়তের আহ্কাম সম্বন্ধে বোঝার তৌফিক দান করুক ! আমীন বেজাহে সাইয়্যেদিল মুরসালীন আলাহিস স্বালাত ওয়াত তাসলীম।

লেখক:-মুফতী আমজাদ হুসাইন সিমনানী
প্রিন্সিপাল:-শুকানদিঘী জামিয়া নুরিয়া ও হিফজুল কোরান মাদ্রাসা
 
Top