ফাতিহা, কুলখানী, চেহেলাম ইত্যাদির বর্ণনা

দৈহিক আর্থিকইবাদতেরছওয়াবঅন্য মুসলমানকে দানকরা জায়েয এবংএটা ফলপ্রসূও হয়।কুরআন হাদীছও ফকীহগণের উক্তিথেকে এর প্রমাণমিলে। কুরআন করীমমুসলমানদেরকে একে অপরেরজন্য দুআ করানির্দেশ দিয়েছেন। জানাযার নামাযএজন্যই আদায় করাহয় মিশকাত শরীফেরفضل الصدقة শীর্ষক অধ্যায়ে আছে, হযরত সাআদ(রাঃ) একটি কূপখনন করে বলেছিলেন  هَذِهِ لِاَمِّسَعْدٍ এটা সাআদের মায়েরনামে সর্গীতহল। ফকীহগণও ঈসালেছওয়াবের নির্দেশ দিয়েছেন। তবেদৈহিক ইবাদতের ক্ষেত্রে পরনীর্ভরশীলতা নাজায়েয। অর্থাকোন ব্যক্তি অপরেরবদলে নামায পড়লে, নামায আদায় হবেনা। অবশ্য নামাযের ছওয়াবদান করা যেতেপারে। মিশকাত শরীফেباب الفتن الملا حم এরদ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণনাআছে হযরত আবুহুরাই (রাঃ) কাউকেবলেছিলেন-
مَنْ يَضْمِنُ لِىْ مِنْكُمْ اَنْ يُّصَلِّى فِىْ مَسْجِدِ الْعَشَا رَكْعَتَيْنِ وَيَقَوْلُ هَذِهِ لِاَبِىْ هَرَيْرَةَ
আমার পক্ষহয়ে মসজিদে আশারেদুরাকআত নামাযপড়ার দায়িত্ব আপনাদের মধ্যেকে নিবেন? এবংকে বলবেন, এরছওয়াব আবু হুরাইরার নামেরসর্গিত? এরথেকে তিনটি মাসায়েল জানাগেল এক, দৈহিকইবাদত অর্থানামাযওকারো ঈসালে ছওয়াবের নিয়তেআদায় করা জায়েযদুই, মুখে উচ্চারণ করেঈসালে ছওয়াব করাঅর্থাহে খোদা, এর ছওয়াব অমুককেদান করুন এরকমমৌখিকভাবে বলা অনেকউত্তম তিন, বরকতেরউদ্দেশ্যে বুযুর্গানে দ্বীনের মসজিদেসমূহে নামায আদায়েবিশেষ ছওয়াব রয়েছে।আর্থিক ইবাদত বাআর্থি দৈহিকসমন্বিত ইবাদত, যেমনযাকাত হজ্বেরক্ষেত্রে যদি কেইকাউকে বলে, তুমিআমার পক্ষে যাকাতদিয়ে দাও।
তাহলে সে দিতেপারে আর যদিআর্থিক সামর্থবান ব্যক্তির কাছেহজ্বের কার্যাদি সমাধাকরার শক্তি নাথাকে, তাহলে অন্যেরদ্বারা বদলি হজ্বকরা যায়। প্রত্যেক ইবাদতের ছওয়াবনিশ্চয় পৌঁছে থাকে।যদি আমি কাউকেস্বীয় সম্পদ দিয়েদেই, তাহলে সেমালিক হয়ে যাব।এটাও তদ্রূপ। অবশ্যসম্পদ কাউকে দিয়েদিলে এতে নিজেরকোন স্বত্ব বাকীথাকে না আরকয়েকজনকে দিলে তাওদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েযায়। কিন্তু ছওয়াবযদি সবাইকে বখশিশকরা হয়, তাহলেসবাই পরিপূর্ণরূপে পায়এবং প্রদানকারী নিজেরওবঞ্চিত হয় নাযেমন অণ্যদেরকে কুরআনপড়ানো হলো; ওরাসবাই কুরআন পড়তেশিখল, এতে শিক্ষাদাতার জ্ঞানখর্ব হলো না।
প্রসঙ্গে ফতওয়ায়ে শামীরপ্রথম খন্ড دفن ميت   শীর্ষক আলোচনাটুকু দেখুন।শিশুদের থেকে উপহারপ্রহন করা নিষেধ, কিন্তু ছওয়াব গ্রহণজায়যে। কতেক লোকবলেন যে ছওয়াবকারো কাছে পৌঁছেনা, কেননা কুরআনকরীমে উল্লেখিত এতে– لَهَامَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَامُااَكْتَسَبَتْ لَيْسَ (প্রত্যেকের জন্যসেটাই কল্যাণকর বাক্ষতিকর, যা সেনিজেই করেছে।) কুরআনকরীমে আরো উল্লেখিত আছেلَيْسَ لِلْاِنْسَانِ    اِلَّامَاسَعَى  (মানুষের জন্যঅন্য কিছু নেই, কিন্তু ওটা, যানিজের আহরণ করে।)
এতে বোঝা গেলঅপরের কাজে নিজেরকোন লাভ নেই।কিন্তু ধারণাটা ভুলকেননা لِلْاِنْسَانِ এর لَامْ (লাম) অব্যয়টা মূলধনঅর্থে ব্যবহৃত হয়েছেঅর্থামানুষের জন্যনির্ভরযোগ্য বিষয় মূলধন হচ্ছ নিজেরইআমলসমূহ কেউঈসালে ছওয়াব করুকবা না করুক, আশায় যেনকেই স্বীয় আমলথেকে উদাসীন নাথাকে (তাফসীরে খাযায়েনুল ইরফানইত্যাদি দ্রষ্টব্য) অথবা হুকমটা হযরতইব্রাহী, (আঃ) হযরত মুসা (আঃ) এর কাছে প্রদত্ত সাহীফাসমূহের ছিল, ইসলামের নয়; এখানে সেটা উদ্ধৃতকরা হয়েছে মাত্র।বা উপরোক্ত আয়াতটাও আয়াতদ্বারা মনসুখ বারহিত হয়েছে-  وَاتَّبَعَتَهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِالْاِيْمَانِ (ঈমানের ক্ষেত্রে তাঁদেরসন্তান-সন্ততিরা তাঁদেরঅনুসরণ করেণ) এটাইহযরত আবদুল্লাহ ইবনেআব্বাসের বক্তব্য। এজন্যেমুসলমানের শিশুরা মা-বাপের বদৌলতেবেহেশতে যাবে, এবংআমল ছাড়া পদমর্যাদ লাভকরবে। (তাফসীরে জুমুল খাযেন দেখুন) বা আয়াতদ্বারা দৈহিক আমলসমূহের ব্যাপারে অন্যেরউপর ভারার্পণকে নাকচকরা হয়েছে। কারণেই ওই আয়াতদ্বয়ের كسب  (সঞ্চয়)    سعى  ( প্রচেষ্টা) এর উল্লেখআছে কিন্তু ঈসালেছাওয়াবের উল্লেখ নেইবা আয়াতদ্বয়ের ন্যায়বিচারের কথা বলাহয়েছে এবং ওটাহচ্ছে ফযীলত মোট কথা, এরঅনেক বিশ্লেষণ রয়েছে।
ফাতিহা, কুলখানী, দশভী, চেহলাম ইত্যাদি সেইসালে ছওয়াবের বিভিন্ন আনুসংগিক বিষয়মাত্র। ফাতিহাখানিতে কুরআন তিলায়াত যা দৈহিক ইবাদত, এবং সদকা যা আর্থিক ইবাদত উভয় একত্রিত করে ছওয়াব পৌঁছানো হয়।
ফাতিহাখানির প্রমাণাদি প্রসংগে
তাফসীর রূহুল বয়ানে সপ্তম পারায় সুরা আনআমের আয়াত وَهَذَاكِتَابٌ   এর ব্যাখ্যা প্রসংগে বর্ণিত আছে -
وَعَنْ حَمِيْد الْاَعْرَجِ قَالَ مَنْ قَرَءَ الْقُرْأَنَ وَخَتَمَهُ ثُمَّدَعَا اَمَّنَ عَلَى دُعَائِهِ اَرْبَعَةُ الْاَفِ مَلَكٍ ثَمَّ لَا يَزالُوْنَ يَدْعُوْنَ لَهَ وَيَسْتَغْفِرُوْنَ وَيُصَلَّوْنَ عَلَيْهِ اِلَى الْمَسَاءِ اَوْاِلَى الصَّبَحِ
হযরত আরজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি কুরআন খতম করেন, তাঁর মুনাজাতের চার হাজার ফিরিশতা আমীন বলেন এবং সন্ধ্যা বা সকাল পর্যন্ত তার জন্য দুআ মাগফিরাত কামনা করতে থাকেন।
বক্তবটা ইমাম নববীলকিতাবুল আযকারগ্রন্থে তিলাওয়াতেকুরআন অধ্যায়ের উল্লেখিত আছে। এতে প্রতীয়মান হলো যেকুরআন খতমের সময় দুআ কবুল হয় এবং ইসালে ছওয়াবও দুআ বিশেষ তাই ওই সময় খতমে কুরআন পড়া উত্তম আশআতুল লুমআত গ্রন্থে زيارت القبور  অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
وتصدق كرده شود ازميت بعد رفتن او ازعالم تاهفتروز
মৃত্যুর পরসাত দিন পর্যন্ত সদকাকরা যাবে। সেইআশআতুল লুমআতের একইঅধ্যায়ে আরও উল্লেখিত আছে-
জুমআর রাতে মৃতব্যক্তি আত্না স্বীয়ঘরে আগমন করেএবং তার প্রতিলোকেরা সদকা করেকিনা তা অবলোকনকরে।
এর থেকে বোঝাগেল, কতেক জায়গায়মৃত্যুর পর সাতদিন পর্যন্ত নিয়মিতরুটি দান আরসব সময় জুমআররাতে ফাতিহাখানি করারযে প্রচলন রয়েছে, এর মূল এটাই।আনোয়ারে সাহেয়ার ১৪৫পৃষ্ঠায় এবং খজানাতুর রওয়ায়েতের হাশিয়ায় বর্ণিতআছে যে, হুযুরআলাইহিস সালাম হযরতআমীর হামযা (রাঃ) এর জন্য তৃতীয়, সপ্তম চল্লিশতম দিনেএবং ষান্মাসিক বাসরিক সদকাদিয়েছেন। এটাই কুলখানি, ষান্মাষিক বার্ষিক ফাতিহার
ইমাম নববীকিতাবুল আযকারএর تلاوت القرأن শীর্ষক অধ্যায়ের বলেছেনযে হযরত আনাসইবনে মালিক কুরআনখতমের সময় নিজঘরের সবাইকে একত্রিত করেমুনাজাত করতেন। হযরতহাকিম ইবনে আতবাবলেন, হযরত মুজাহিদ তাঁর গোলাম ইবনেআবিলুবাবা একটি জনগোষ্ঠীকে আহবানকরলেন এবং বললেন, আপনাদেরকে এজন্য আহবানকরা হয়েছে যে, আজ আমরা কুরআনপাক খতম করতেযাচ্ছি এবং খতমেকুরআনের সময় দুআকবুল হয় হযরত মুজাহিদ (রাঃ) থেকে বিশুদ্ধ রেওয়ায়েত মতেবর্ণিত আছে, বুযর্গানে দ্বীনকুরআন খতমের সময়জন সমাবেশের ব্যবস্থা করতেনএবং বলতেন, সময় রহমত নাযিলহয়। (কিতাবুল আযকারদ্রষ্টব্য) সুতরাং কুলখানি চেহলাম উপলক্ষে জমায়েতহওয়া পূর্ববর্তী মনীষীদের সুন্নাত দুররুল মুখতারে মৃতব্যক্তির জন্য কুরআনতিলাওয়াত শীর্ষক আলোচনার الدفن অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে-
وَفِى الْحَدِيْثِ مَنْ قَرَءَ الْاِخْلَاصَ اَحَدَ عَشَرَ مَرَّةً ثُمَّ وَهَبَ اَجْرَهَا لِلْاَمْوَاتِ عُعْطِىْ مِنَ الْاَجْرِ بِعَدَدِ الْاَمْوَاتِ
হাদীছ শরীফেবর্ণিত আছে, যেব্যাক্তি এগারবার সূরাইখলাস পাঠ করেএব ছওয়াব মৃতদেরপ্রতি বখশিশ করেদেয়, ছওয়াবসকল মৃতব্যক্তিগণ পাবে জায়গায়ফতওয়ায়ে শামীতে আছে-
وَيَقْرَءُ مِنَ الْقُرْأَنِ مَاتَيَسَّرَ لَهُ مِنَ الْفَاتِحَةِ وَ اَوَّلِ الْبَقَرَةِ وَ اَيةُ الْكُرْسِىْ وَ اَمَن الرَّسُوْلُوسُوْرَةَ يَس وَتَبَارَكَ الْمُلْكِ وَسُوْرَةَ التَّكَثُرِ وَالْاِخْلَاضِ اِثْنَى عَشَرَ مَرَّةً اَوْ اِحْدَىَ عَشَرَ اَوْ سَبْعًا اَوْ ثَلَاثًا ثُمَّ يَقُوْلُ اَلَّلهُمَّ اَوْصِلَ ثَوَابَ مَاقَرَأْنَاهُ اِلَى فُلَانٍ اَوْ اِلَيْهِمَ
(যতটুকুসম্ভব হয় কুরআনশরীফ তিলাওয়াত করবেন।সূরা ফাতিহা সূরাবাকারার প্রথম কয়েকআয়াত, আয়াতুল সুরসী, আমানার রসুল, সূরাইয়াসিন তাবারাকাল মূলক, সূরা তাকাছুর সূরা ইখলাস বারবা এগারবার অথবাসাত বা তিনবারপাঠ করবেন। অতঃপরবলবেন হে আল্লাহআমি যা কিছুতিলাওয়াত করলাম, এরছওয়াব অমুককে বাঅমুক লোকদের মাঝেপৌঁছে দিন।)
উপরোক্ত ইবারতে প্রচলিত ফতিহাখানির পূর্ণনিয়মটা বলা হয়েছে অর্থাকুরআনের বিভিন্ন অংশথেকে পাঠ করা; অতঃপর ঈসালে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে দুআকরা। দুআ করারসময় হাত উঠানোসুন্নাত তাইহাত উঠাবেন মোট কথা, প্রচলিত ফাতিহাখানি পূর্ণরূপে প্রমাণিত হলো।ফতওয়ায়ে আযীযিয়ার ৭৫পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
যে খাদ্যদ্রব্য হযরতহাসান-হুসাইন (রাঃ) এর নামে সর্গ করারনিয়ত করা হয়তাতে সূরা ইখলাস, সূরা ফাতিহা দরূদ শরীফ পড়ামুবারক এবং ওটাখাওয়া খুবই ভাল একই ফতওয়ার৪১ পৃষ্ঠায় আছে-
যদি কোন বুযুর্গের ফাতিহার জন্যঈসালে ছওয়াবের নিয়তেদুগ্ধজাত কোন কিছুতৈর করে পরিবেশন করাহয়, তা জায়েযএবং এতে কোনক্ষতি নাই।
বিরোধিতাকারীদেরওমান্যবর হযরত শাহওলীউল্লাহ ছাহেবেরও কুলখানি হয়েছিল যেমন হযরতআবদুল আযীয ছাহেবস্বীয় মলফুজাতের ৮০পৃষ্টায় এর বর্ণনাএভাবে দিয়েছেন -
তৃতীয় দিন জনগণেরএত সমাগম হয়েছিল, যা গণনার বাইরেছিল একাশিবার খতমেকুরআন হিসেব করাহয়েছে কিন্তু বাস্তবে এরথেকে আরও বেশীহতে পারে আর কলেমা তৈয়বারতো কোনহিসেব নেই
থেকে শাহছাহেবের কুলখানি হওয়াও উপলক্ষে খতমেকুরআন করাটা প্রমাণিত হলো দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মওলবীমুহাম্মদ কাসেম ছাহেবরচিততাহযিরুন নাসগ্রন্থে ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখকরেছেন জুনাইদের কোনএক মুরীদের চেহারাহঠাপরিবর্তন হয়েগিয়েছিল। তিনি (জুনাইদবাগদাদী (রাঃ) এরকারণ জিজ্ঞাসা করলেমুরীদ বলল, আমিকশফের সাহায্য আমারমাকে দোযখে দেখতেছি। হযরতজুনাইদ (রাঃ) একলাখপঞ্চাশ হাজার বারকালেমা পাঠ করেছিলেন আশায় যে কতেকরেওযায়েতে পরিমাণকলেমা পড়ার ছওয়াবেমাগফিরাত লাভের কথাবর্ণিত আছে। তিনিসাথে সাথে এরছওয়াব ওর মাকেবখশিশ করে দেনকিন্তু ওকে কিছুজানাননি। বখশিশ করারসাথে তিনি সেইজওয়ানটাকে আনন্দ ফূল্ল দেখছিলেন। এরকারণ জিজ্ঞাসা করলেসে আযর করল, আমার মাকে বেহেশতে দেখছি।তিনি এর পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, সে জওয়ানটির কশফ-শক্তির অধিকারহওয়াটাতো হাদীছ থেকেআমার জানা ছিলএবং হাদীছের সত্যতাওর কশফ থেকেপ্রমাণিত হয়ে গেল। ইবারত থেকেবোঝা গেল, একলাখপঞ্চাশ হাজার বারকলেমা পাঠ করেমৃতব্যক্তির আত্নার প্রতিবখশিশ করে দিলে, দ্বারা নাজাতপাবার সম্ভাবনা আছেএবং কুলখানির সময়চনাবুঠের মাধ্যমে তা- পাঠকরা হয়
এসব ভাষ্য থেকেফাতিহা, কুলখানি ইত্যাদির প্রচলিত নিয়মবৈধ প্রতিভাত হলো।উপরোক্ত ভাষ্য থেকেফাতিহা শরীফে পাঁচআয়াত পাঠ করাঅতঃপর ইসালে ছওয়াবের জন্যহাত তুলে মুনাজাত করা, কুলখানির দিন কুরআনতিলাওয়াত, কলেমা শরীফেরখতম, খাবার তৈরিকরে কাংগালী ভোজেরব্যবস্থা করা সবইবোঝা গেল। কেবলখানা সামনে রেখেহাত তুলে মুনাজাত করারপ্রসংগটা বাকী রইল। নানাবিধ প্রচলনরয়েছে। কাথিয়াওয়ার্ড নামকস্থানে খানা তৈরীকরে প্রথমে গরীবদেরকে খাওয়ানো হয়।এরপর ঈসালে ছওয়াবকরা হয়। ইউ,পি, পাঞ্জাব আরবে খাবার সামনেরেখে প্রথমে ঈসালেছওয়াব করা হয়এবং পরে খবারপরিবেশন করা হয়।উভয় রকম প্রচলনবৈধ এবং হাদীছদ্বারা প্রমানিত। মিশকাতশরীফেরও অনেক রেওয়ায়েত মওজুদআছে যে, হুযূরআলাইহিস সালাম খাবারগ্রহণ করার পরছাহেবে মেজবানের জন্যদুআ করেছেন বরংনির্দেশ দিয়েছেন, দাওয়াতখাওয়ার পর ছাহেবেমেজবানের জন্য দুআকারুন। মিশকাতশরীফের  اداب طعام শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিতআছে যে হুযূরআলাইহিস সালাম খাওয়া-দাওয়া শেষেইরশাদ ফরমাতেন -
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرُ مُكَفِّىُ وَلَامُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًا عَنْهُ رَبَّنَا
(আল্লাহর অনেকপবিত্র মুবারক শুকর, হে খোদা, এতেঅফুরন্ত, অসীম অতৃপ্ত বরকাত দিন।)
এর থেকে বোঝাগেল, খাওয়ার পরপালনীয় দুটিসুন্নত রয়েছে খোদারপ্রশংসা করা ছাহেবে মেজবানের জন্যদুআ করা। ফাতিহা শরীফের দুবিষয়মওজুদ রয়েছে। আশাকরি, বিরোধিতাকারীরাও এটাঅস্বীকার করতে পারবেনা। এখন বলতেহয় খবার সামানেরেখে দুকরা প্রসংগে। প্রসংগে অনেক হাদীছ বর্ণিতহয়েছে। মিকাত শরীফেরالمعجزات অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণিতআছে হযরত আবুহুরাইরা (রাঃ) ফরমানআমি কিছু খোরমাহুযূর আলাইহিস সালামের সমীপেপেশ করলাম এবংএর বরকতের জন্যদুআ করতে আরযকরলাম  فَضَمَّ هَنَّ ثُمَّ دَعَالِىْ فِيْهِن بِالْبَرَكَةِ   তখন তিনি(দঃ) এগুলোকে একত্রিত কলেন বরকতের জন্যদু করলেন।সেই মিকাত শরীফেরالمعجزات  অধ্যায়ের প্রথমপরচ্ছেদে বর্ণিত আছেযে তবুকের যুদ্ধেইসলামী সেনা বাহিনীর খাদ্যঘাটতি দেখ দিল।হুযূর আলাইহিস সালামসকল সৈনিককে নির্দেশ দিলেনযার কাছে যাআছে, তা নিয়েএসো। সবাই কিছুনা কিছু আনলেনদস্তরখানা বিছিয়ে দেওয়াহলো এবং এরউপর এগুলো রাখাহলো-
فَدَعَارَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَرْ كَةِثُمَّ قَالَ خُذُوْافِىْ  فِىْ اَوْعِيَتِكُمْ
অতঃপর হযূরআলাইহিস সালাম এসবেরবরকতের জন্য দুআকরলেন এবং ইরশাদফরমালেন আপনারা এখানথেকে নিয়ে নিজনিজ প্লেটে রাখুন।একই মিশকাত শরীফেরএকই অধ্যায়ে আরওবর্ণিত আছে হুযূরআলাইহিস সালাম হযরতযয়নাব (রাঃ) কেবিবাহ করা উপলক্ষে হযরত উম্মেসালমা (রাঃ) ওলিমাহিসেবে সামান্য খাবারতৈর করলেন কিন্তু অনেক লোককেদাওয়াত দেয়া হয়েছে
فَرَأَيْتُ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَضَعَ يَدَهُ عَلَى تِلْكَ الْحَرِيْسَةِ وَتَكَلَّمَ بِمَاشَاءَاللهُ
হুযূর আলাইহিস সালামওই খাবারের উপরহস্ত মুবারক রেখেকিছু পাঠ করলেন
একই মিশকাত শরীফেরএকই অধ্যায়ের আরএক জায়গায় বর্ণিতআছে, হযরত জাবির(রাঃ) খন্দকের যু্দ্ধের দিনসামান্য খাবারতৈরী করে হুযূরআলাইহিস সালামকে দাওয়াতদিলেন হুযূরআলাইহিস সালাম তাঁরঘরে যখন তশরীফআনলেন তখন তাঁরসামনে ময়দার তৈরিখাবার পেশ করাহলো। তিনি (দঃ) এতে পবিত্র থুথুফেললেন, এবং বরকতেরজন্য দুআ করলেন।এরকম আরো অনেকরেওয়ায়েত পেশ করাযায় কিন্তুএটুকুই যথেষ্ট বলেমনে করি
আল্লাহর শুকর, ফতিহাখানির আনুষংগিক যাবতীয়বিবষয় সমূহ সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েগেল বিবেকও বলেযে ফাতিহাখানিতে কোনক্ষতি নেই। কেননা, যেমন আমি ভূমিকায় আরযকরেছি, ফাতিহা হচ্ছেদুটি ইবাদতের তিলাওয়াতে কুরআন সদকার সমষ্টির নাম। দুটিকাজ যদি পৃথমপৃথকভাবে করলে জায়েযহয়, তাহলে একত্রিতভাবে করলেহারাম হবে, কেন? বিরিয়ানী খাওয়াটা কোথাওপ্রমাণিত নেই, অথচতা হালাল। কেননা, বিরিয়ানী হচ্ছে চাউল, মাংস, ঘি ইত্যাদির সংমিশ্রণে তৈরী তাই এরসমস্ত আইটেম যেহেতুহালাল, সেহেতু বিরিয়ানীও হালাল।অবশ্য সুনির্দিষ্ট যেসবক্ষেত্রে কয়েকটি হালালবিষয়কে একত্রিত করাটাহারাম বলা হয়েছে, সেটা হারাম যেমন সহোদর দুবোনকে একসাথেবিবাহ করা বাকয়েকটি হালাল বস্তুএকত্রিত করার ফলেকোন হারাম জিনিসসৃষ্টি হলে যেমনমাদক দ্রব্য তাহারাম তাহলেবোঝা গেল যেউল্লেখিত কারণে হালালবস্তুর একত্রিতকরণ হারামহবে। কিন্তু ফাতিহাউপলক্ষে কুরআন তিলাওয়াত সদকার একত্রিতকরণ শরীয়তকর্তৃক হারাম করাহয়নি। এর ফলেকোন হারাম জিনিসওসৃষ্টি হলো না।তবুও কাজটা কেনহারাম হবে?
দেখুন, একটি ছাগলমারা যাচ্ছে, যদিএমনি মারা যায়, তাহলে হারাম আরযদি আল্লাহর নামেযবেহ করে দেয়াহয়, তাহলে হালালহয়ে গেল। কুরআনকরীম মুসলমানদের জন্যরহমত শেফাস্বরূপ। যদি এরতিলাওয়াতের করণে খাবারহারাম হয়ে যায়, তাহলে কুরআন রহমতহলো কিভাবে? এটাতোঅভিশাপ (নাউযুবিল্লাহ) হবেহ্যাঁ এটা মোমিনদের জন্যরহমত আর কাফিদের জন্যঅভিশাপ।وَلَايَزِيْدُ الظَّا لمِيْنَ اِلَّا خَسَارًا  এর থেকেজালিমগণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তিলাওয়াত করারকারণে ওরা খাবারথেকে বঞ্চিত হলো
যেটার জন্য দুআকরা হয়, ওটাসামনে রেখেই করাচাই মৃতব্যক্তিকে সামনে রেখেজানাযার নামায আদায়করা হয়। কেননা, এর জন্যই দুআকরা হয়। অনুরূপখাবার সামনে রেখেদুআ করলে, এতেকি ক্ষতি রয়েছে? কবর যিয়ারতের সময়কবরকে সামনে রেখেদুআ করা হয়।হুযূর আলাইহিস সালামস্বীয় উম্মতের পক্ষেকুরবানী দিয়ে যবেহকৃত জানোযারকে সামনেরেখে বলতেন -  اَلَّلهُمَّ هَذَا مِنْ اُمَّةِ مُحَمَّدٍ  (হে আল্লাহ, এটা আমার উম্মতের পক্ষথেকে কুরবানী দেয়াহলো। ) হযরত খলিলুল্লাহ (আঃ) কাবা ঘরকে সামনেরেখে দুআ  رَبَّنَا تَقَبَّلَ مِنَّا الاية) করেছিলেন। এখনওআকীকার পশুকে সামনেরেখে দুআ পাঠকরা হয়।  সুতরাং ফাতিহাখানিতে খাবারসামনে রেখে যদিঈসালে ছওয়াব করাহয় তাতে ক্ষতিকি?
বিসমিল্লাহ বলে খাবারশুরু করা হয়এবং বিসমিল্লাহ হচ্ছেকুরআন শরীফের আয়াত যদি খাবারসামনে রেখে কুরআনশরীফ পাঠ করানিষেধ হয়, তাহলেবিসমিল্লাহ পড়াটাও নিষেধহওয়া চাই
বিরোধিতাকারী যাকে মুরুব্বী বলেস্বীকার করেন, তিনিওপ্রচলিত ফাতিহাকে জায়েযমনে করেন যেমন শাহ ওলীউল্লাহ ছাহেবالانتباه فى سلاسل اولياءالله
নামাক স্বীয় কিতাবেবর্ণনা করেছেন -
অতঃপর দশবার দরূদশরীফ পাঠ করবেনএবং সম্পূর্ণ কুরআনখতম করবেন। তারপরকিছু শিরনীতে সমস্তআওলিয়া কিরামের নামেফতিহা দিবেন খোদার কাছে দুআকরুন শাহওলীউল্লাহ ছাহেব  زبدة النصائح নামক কিতাবের ১৩২পৃষ্ঠায় একটি প্রশ্নের উত্তরেবলেছেন -
ঈসালে ছওয়াবের নিয়তেদুধ চাউলেরউপর কোন নেককারবান্দার নামে ফাতিহাদিলে, তা রান্নাকরতে পারেন খেতে পারেন এবংযদি কোন বুযুর্গের নামেফাতিহা দেয়া হয়, তা সচ্ছল ব্যক্তিদেরও খাওয়াজায়েয। মৌলবী আশরাফআলী রশীদআহমদ ছাহেবের মুর্শিদ হাজীইমদাদুল্লাহ ছাহেব, ফয়সালায়ে হাপ্তমাসায়েলা নামক পুস্তিকায় লিখেছেন-
মৃত ব্যক্তিদের রূহেরপ্রতি ঈসালে ছওয়াবের বেলায়কারো আপক্তি নেই, তবে যদি এক্ষেত্রে বিশেষকোন সময় বাকাল নির্ধারণ করাটাছওয়াব মনে করাহয় বা ওয়াজিবঅথবা ফরয করাহয়, তাহলে নিষেধ কিন্তু যদি ধরনের কোনধারণা না থাকে, কেবল বিশেষ কোনউদ্দেশ্যে অনুরূপ করাহয়, তাতে কোনক্ষতি নেই যেমন কোন যুক্তিসংগত কারণে নামাযেবিশেষ বিশেষ সূরানির্ধারণ করাকে অভিজ্ঞফিকহ শাস্ত্রবিদগণ জায়েযবলেছেন। তাহাজ্জুদ নামাযের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মাশায়েখ নীতিরই অনুসারী। তিনিআরও বলেন, নামাযের জন্যমনে মনে নিয়তকরাটা যথেষ্ট। কিন্তুমুখ অন্তরের সমাঞ্জস্যতার জন্যসাধারণ লোকদের ক্ষেত্রে মুখেবলাটা উত্তম এক্ষেত্রেও যদি মুখেবলেন, হে আল্লাহএর ছওয়াব অমুককেপৌঁছে দিন, তাতেকল্যাণ রয়েছে। এরপর কারো ধারণা হলো যে(ফাতিহার জন্য তৈরী) খাবারটা সামনে রাখলেমনের আবেগটা বৃদ্ধিপাবে, তাই খাবারটা সামনেরাখলেন আবারকেউ মনে করলেনযে এটা একপ্রকার দুআ বিশেষ তাই এরসাথে যদি কিছুকালেমা পাক পড়াহয় তাহলে দুআকবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশীএবং সাথে সাথেকালেমা পাক পড়ারছওয়াবও পৌঁছবে। এতেদুইটি ইবাদতের সংমিশ্রণ হলো তিনি আরওবলেন, গাউছে পাকেরগিয়ারভী শরীফ, দশভী, বিশভী, চেহলাম ষান্মাসিক, বাসরিক ফাতিহাইত্যাদি এবং শেখআবদুল হক (রহঃ) এর তোশা (সদকাবিশেষ) হযরত শাহবুআলী কালন্দরের বাসরিক ফাতিহা, শবে বরাতের হালূয়া-রুটি এবংঈসালে ছওয়াবের অন্যান্য পদ্ধতিউপরোক্ত নিয়মনীতির ভিত্তিতে প্রচলিআছে।
পীর ছাহেবের বক্তব্যে পরিপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেয়াহয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! আকলী নকলী দলীলসমূহ এবংবিরোধিতাকারীদেরউক্তি সমূহ থেকেফাতিহার মাসআলাটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েগেল আল্লাহতাআলা তাঁদেরকে হককবুল করার শক্তিদান করুন।  –আমীন।সুত্রঃজাআল হক২য় খন্ড -


 
Top