বুকে হাত বাধার নিম্মের হাদিসগুলি দুর্বল ।
দলিল-১

من مرسل طاوس قال

كان رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يضع يده اليمنى على يده اليسرى ، ثم

يشد بهما على صدره وهو في الصلاة

তাউস (র) বলেন, তিনি নামাজের মধ্যে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন এবং উভয় হাত বুকের উপর বাধতেন।আবু দাউদ-৭৫৭

১। এই হাদিসটি মুরসাল, যারা কোন মাজহাবের অনুসারী নন তাদের কাছে মুরসাল হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়।

২। আল্লামা নিমভী (র) এ হাদিসকে দুর্বল বলেছেন। সিলসিলাতুস ছহিহাহ- ২/২৯১

৩। এই মুরসাল হাদিসের বিপরীত আলী (রা) ‘নাভীর নীচে হাত বাধা’র হাদিস যা একে দুর্বল করে দিয়েছে।

৪। এই হাদিসে সুলাইমান ইবনু মুসা সম্পর্কে ইমাম বুখারী (র) বলেছেন ‘আপত্তিকর বর্ণনাকারী’।

৫। ইমাম নাসাই (র) বলেছেন বর্ণনাকারী ‘অবিশস্থ’।

৬। শেখ আল্বানী বলেছেন, মুরছাল হাদিস দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। দেখুন সিলসিলাতুছ ছাহিহাহ ২/২৯১
দলিল-২ **
ওয়াইল ইবনু হুজর থেকে বর্ণিত, তিনি আমি রাসুলুল্লাহ (স) এর সাথে নামায পড়েছি। অতপর তিনি (স) তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর বাধলেন।

ইবনু খুজায়মাহ-১/৪৭৯, নাইলুল আওতার-৯২

১। এই হাদিসটি শাফী’ মাজহাবে নাভীর উপর হাত রাখার দলিল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম শাওকানী (র) বলেছেন, শাফী মাজহাবের জন্যে এটা দলিল হতে পারেনা।

২। শেখ নাছির উদ্দিন আলবানি নিজে এই হাদিসের সনদকে দুর্বল বলেছেন। কারন, বর্ণনাকারীদের মাধ্যে মুয়া’ম্মাল ইবনু ইসমাইল ভূলে যাওয়ার দুষে অব্যস্থ। দেখুন- শেখ আলবানীর ‘আছলু ছিফাতু ছালাতুন নবী’ (স) ।

৩। এ হাদিসটি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে যার মধ্যে علي صدره-‘বুকের উপর’ কথাটি্র উল্লেখ নাইঃ
•ইমাম আহমদ (র), মুয়া’ম্মাল ইবনু ইসমাইল এর সাথী বর্ণনাকারী সুফিয়ান সাউরী (র) থেকে বর্ণনা করলেও علي صدره-‘বুকের উপর’ কথাটির কোন উল্লেখ করলেও নাই।
•ইমাম নাসাঈ (র) ও আহমদ (র) জায়েদার তারীক থেকে বর্ণনা করলেও علي صدره-‘বুকের উপর’ কথাটির কোন উল্লেখ নাই।
•ইমাম আবু দাউদ (র) বিশীর ইবনুল মুফাজ্জাল এর তারীক থেকে বর্ণনা করলেও علي صدره-‘বুকের উপর’ কথাটির কোন উল্লেখ নাই।
•ইমাম ইবনু মাজাহ, ইমাম আহমদ, তায়ালাসী, ইবনু হিব্বান, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, তাব্রানী ও ইবনু খুজাইমাহ সহ সকল মুহাদ্দিসীন ইবনু ফুজাইল, আব্দল্লাহ ইবনে ইদ্রিস, আব্দুল ওয়াহিদ, জুহার ইবনে মুয়াওয়ীয়াহ ও শু’বাহ যারা মুয়া’ম্মাল ইবনু ইসমাইল এর সাথী বর্ণনাকারী তাদের কারও বর্ণনায় এর উল্লেখ আসেনি। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (র) বলেছেন যে, একমাত্র মুয়াম্মাল ইবনু ইসমাইল ছাড়া আর কেউ علي صدره-‘বুকের উপর’ কথাটির বর্ণনা করেননি। দেখুন- ‘ই’লামুল মুওকিয়ী’ন’, ইলাউস সুনান২/১৯৬
•আল্লামা ইবনু হাজার আস্কালানী (র) বলেছেন, সুফিয়ান সাউরী থেকে বর্ণনাটি দুর্বল। ফাতুহুল বারি ২/২৩৯
•ইমাম বুখারী (র) বলেছেন, মুয়াম্মাল ইবনু ইসমাইল এর হাদিস অগ্রহণযোগ্য, পরিত্যক্ত।
•আবু হাতিম ও আবু জুরা’ বলেছেন মুয়াম্মাল ইবনু ইসমাইল ‘কাসিরুল খাতা’-অতি ভুলকারী।
•ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান (র) বলেছেন যে মুহাদ্দিসগনের জন্য ওয়াজিব হল তার হাদিস থেকে বিরত থাকা। কারন তিনি অনির্ভরযোগ্য হাদিস বর্ণনা করেন।
•শায়খ যাকারিয়া সাজী (স) বলেছেন, তিনি অতি ভুল্কারী, অতি সন্দেহ কারী।
•মুহাম্মদ ইবনু আল মারওয়াজী (র) বলেছেন যে, যদি মুয়াম্মাল ইবনু ইস্মাইল একা বর্ণনা করেন তাহলে অবশ্য তার কাছ থেকে বিরত থাকতে হবে। কারন তিনি স্মরণ শক্তি লুপ্ত ও অতি ভুল্কারী।
•ইবনে কানি’ (র) বলেছেন মুয়াম্মাল ভুলে যাওয়ার দুষে অভ্যস্থ।
•ইমাম আহমদ (র), ইবনে সা’দ এবং দারকুত্নী বলেছেন, মুয়াম্মাল ইবনু ইস্মাইল ‘অতি ভুলকারী’। সিলসিলতুছ ছাহিহা-২/৩৮৮
•ইমাম সুফিয়ান সাউরী (র) এ হাদিসের সনদে রয়েছেন যিনি নিজে নাভীর নীচে হাত রাখার অনুসারী ছিলেন। তিনি কখনো বুকে হাত রাখেননি। তাহজিবুল কামাল ২৯/১৭৬-১৭৮
দলিল-৩
কাবীছাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি মহানবী (স) ( নামাজের পরে) ডানে-বামে ফিরতে দেখেছি। এবং তিনি বলেন; আমি দেখেছি, এটি তিনি বুকের উপর রাখলেন এবং ডান হাত বাম হাতের জোড়ায় বাধলেন। আহমদ - ৫/২৫৫

উক্ত হাদিসে শুধু ‘সিমাক ইবনু হারব’ একাই বুকের উপর হাত রাখার কথা উল্লেখ করেছেন যা এ হাদিসের অন্যান্য বর্ণনাকারীদের কেউ এ কথা উল্লেখ করেননি। তাই দেখুন হাদিস বিশারদ্গন ‘সিমাক ইবনু হারব সম্পর্কে কি বলেছেনঃ
•ইমাম নাসায়ী (র) ও ইমাম আলী ইবনু মাদিনী (র) বলেছেন সিমাক ইবনু হারব একা বর্ণনা করলে তা অগ্রহণযোগ্য
•ইবনু হিব্বান (র) বলেছেন ‘অতি ভুলকারী’
•ইমাম আহমদ (র) বলেছেন তার হাদিস সন্দেহযোগ্য
•ইমাম শুয়বা তাকে দুর্বল বর্ণনাকারী আখ্যায়িত করেছেন
•ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আম্মার আল মাওছীলি (র) বলেছেন যে, উনি ভুল করেন, সবিরোধী বর্ণনা করেজ
•ইমাম আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ আজলী বলেন যে, সুফিয়ান সাউরী (র) তাকে দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন
• ইমাম ইবনে খাররাস বলেছেন, তার বর্ণনায় সমস্যা রেয়েছে
•আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারাক (র) বলেছেন, তিনি দুর্বল বর্ণনাকারী
•জারীর ইবনু আব্দুল হামিদ তার বর্ণনাকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। কারন তিনি তাকে দাড়িয়ে প্রস্রাব করতে দেখেছেন
•আল্লামা নিমভী (র) বলেছেন, ‘বুকের উপর’ কথাটি অতিরিক্ত ও অসংরক্ষিত। এ হাদিস অগ্রহণযোগ্য
•সুফিয়ান সাউরী (র) এ হাদিসের সনদে রয়েছেন যিনি নাভীর নীচে হাত বাধার পক্ষে মত দিয়েছেন। সিলসিলাতুস সাহিহা- ২/২৮৬, ই’লাউস সুনান-২/১৯৪
•আবু বকর ইবনে আবু খায়সামাহ, ইমাম ইয়াহ্ইয়া ইবনে মায়িন থেকে শুনেছেন সিমাক ইবনু হারবের দোষ হল; হাদিস সমূহের সনদে একাকি বর্ণনা করেন। অন্য কেউ এ সনদে বর্ণনা করেননা
•উকাইলী তাকে দুর্বল বর্ণনাকারী বলেযাও
•ইমাম দারুকুতনী তাকে ভুলে যাওয়ার দোষে শাব্যস্ত করেছেন
•আহমদ ইবনে আব্দল্লাহ ইজলি ও ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ার ইক্রিমা থেকে হাদিসটি ইজতেরাব রয়েছে বলে উল্লেখ করেজ
•মুগ্লতাই ও সিমাক ইবনু একাকী বর্ণনা করলে তা গ্রহণযোগ্য নয় এবং
•ছালিহ ইবনে মুহাম্মদ আল বাগদাদী দুর্বল বলেছেন। দেখুন- তাহজীবুল কামাল ১২/ ১১৮-১২১

 
Top