মসজিদে প্রবেশের দোয়া ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া কি? কোন দোয়া পড়বেন?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে,মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় প্রায়ই মানুষই এই দোয়া পড়েন-
প্রবেশের সময় - اللهم افتح لي ابواب رحمتك (আল্লাহুম্মাফ্ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা)
এবং বের হওয়ার সময় - اللهم اني اسئلك من فضلك. (আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা)

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ পড়েছে তা হল- তাসময়িা ও রাসুলে পাকের ﷺ প্রতি দুরুদ ও সালাম। এ সম্পর্কে পবিত্র হাদিসের আলোকে আলোচনা করা হলো।

  এখানে বহু হাদিসের মধ্য থেকে কয়েকটি উপস্থাপন করা হলো।
  প্রথম হাদিসঃ   
عن عبد الملك بن سعيد بن سويد، قال: سمعت ابا حميد، أو أبا أسيد الأنصاري يقول: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا دخل أحدكم المسجد فليسلم على النبي صلى الله عليه وسلم، ثم ليقل: اللهم افتح لي أبواب رحمتك، فإذا خرج قليقل اللهم إني أسألك من فضلك، 
رواه أبو داود وابن ماجه والدارمي،

وقال الرازي : قال أبو زرعة : عن أبي حميد وابي أسيد كلاهما عن النبي صلى الله عليه وسلم أصح . وقال المناوي : إذا دخل أحدكم المسجد فليسلم ندبا مؤكدا أو وجوبا علي النبي صلي الله عليه وسلم لأن المساجد محل الذكر ، والسلام علي النبي صلى الله عليه وسلم منه .

হযরত আবু হােমাইদ আস্-সায়েদী বা আবু উসাইদ আল আনছারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তােমাদের মধ্য থেকে কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন তার উচিৎ যে, হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সালাম প্রেরণ করা। তারপর বলবে, হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন এবং যখন মসজিদ থেকে বের হবে তখন বলবে। হে আল্লাহ! আমি আপনার থেকে আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।

এ হাদিসকে ইমাম আবু দাউদ, ইবনু মাজা এবং দারেমী বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু হাতেম রাজী বলেন যে, ইমাম আবু জুরআ’ বলেন, হযরত আবু হােমাইদ এবং আবু ওসাইদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উভয় থেকে বর্ণিত বর্ণনাসমূহ বিশুদ্ধতম। এবং ইমাম মুনাভী বলেন, যখন তােমাদের মধ্য থেকে কেউ
মসজিদে প্রবেশ করে তখন তার উচিৎ হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে সালাম পেশ করাকে পছন্দনীয় এবং আবশ্যকীয় মনে করে আবেদন করা, কেননা মসজিদ হল জিকির করার স্থান এবং হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র খেদমতে সালাম পেশ করাও আল্লাহর জিকির এর শামিল।
- আবু দাউদ : আস্ সুনান, কিতাবুস সালাত, ১/১২৬, হাদিস : ৩৬৫;
- ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, কিতাবুল মাসাজিদ ওয়াল জামাআত, ১/২৫৪, হাদিস : ৭৭২;
- দারেমী : আস্ সুনান, ১/৩৭৭, হাদিস : ১৩৯৪;
- ইবনে হিব্বান : আস্ সহীহ, ৫/৩৯৭, হাদিস : ২০৪৮;
- রাযী : ইলালুল হাদীস, ১/১৭৮, হাদিস : ৫০৯;

  দ্বিতীয় হাদিসঃ  
عن فاطمة بنت الحسين، عن جدتها فاطمة الكبرى قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل المسجد صلى على محمد
وسلم، وقال: رب اغفر لي ذنوبي، وافتح لي أبواب رحمتك، وإذا خرجصلى على محمد وسلم، وقال: رب اغفر لي ذنوبي، وافتح لي أبواب فضلك.
 رواه الترمذي وأحمد وعبد الراق. 

হযরত ফাতেমা বিনতু হােছাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা নিজ দাদীজান সৃষ্টি জগতের সৈয়দা ফাতেমাতুল কুবরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বললেন, হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার সময় মুহাম্মদ মােস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র উপর সালাত ও সালাম পড়তেন, অতঃপর এ দোয়া বলতেন, হে রব! আমার জন্য আমার (অর্থাৎ উম্মতের) পাপ মােচন করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন। এবং বাহির হওয়ার সময়ও মুহাম্মদ মােস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাত ও সালাম পড়তেন, অতঃপর এ দোয়া চাইতেন। হে আমার রব! আমার জন্য আমার (উম্মতের) পাপ ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাসমূহ খুলে দিন।

এ হাদিসকে ইমাম তিরমিজী, আহমদ এবং আবদুর রাজ্জাক বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার হাদিস হাসান।
- তিরমিযী : আস্ সুনান, কিতাবুস সালাত ২/১২৭, হাদিস : ৩১৪;
আহমদ ইবনে হাম্বল: আল মুসনাদ, ৬/২৮২-২৮৩, হাদিস : ২৬৪৫৯-২৬৪৬২;
আবদুর রাযযাক : আল মুসান্নাফ, ১/৪২৫, হাদিস : ১৬৬৪;

এ হাদিসটি সামান্য ভিন্ন মতনে বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে এসেছে। হাদিসসমূহ দেখলে মসজিদে প্রবেশের ও বের হওয়ার সুন্নত তরীকা পরিষ্কার হয়ে যাবে। হাদিসসমূহ এখানে উল্লেখ করা হলো।

  তৃতীয় হাদিসঃ  
وفي رواية يقول : بسم الله والسلام علي رسول الله .......... فذكر الحديث نحوه.  
رواه ابن ماجه وابن أبي شيبة
অপর এক বর্ণনায় আছে যে, হযরত সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলতেন, আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং আল্লাহ তা’আলার রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর উপরও সালাম হােক... তারপর উপরের হাদিসের অনুরূপ হাদিস বয়ান করেন। 
ইহাকে ইমাম ইবনু মাজাহ এবং ইবনু আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন।
- ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, কিতাবুল মাসাজিদ ওয়াল জামাআত, ১/২৫৩, হাদিস : ৭৭১;
- ইবনে আবূ শায়বা : আস্ মুসান্নাফ, ১/২৯৮, হাদিস : ৩৪১৬; এবং ৬/৯৬, হাদিস : ২৯৭৬৪;

  চতুর্থ হাদিসঃ  
وفي رواية : قالت : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل المسجد صلي على محمد وسلم ....... فذكر الحديث نحوه.
رواه احمد وابو يعلي والتبراني-
অপর এক বর্ণনায় সৈয়দা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন মুহাম্মদ মােস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাম প্রেরণ করতেন এবং এরূপে মসজিদ থেকে বাহির হওয়ার সময়ও মুহাম্মদ মােস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র উপর সালাম প্রেরণ করতেন, ইহার পর পূর্ববর্তী হাদিসের দোয়া বয়ান করলেন।
ইহাকে ইমাম আহমদ, আবু ইয়া’লা এবং তৃবরানী বর্ণনা করেছেন।
আহমদ ইবনে হাম্বল: আল মুসনাদ, ৬/২৮২-২৮৩, হাদিস : ২৬৪৫৯-২৬৪৬২;
- আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ, ১২/১২১, ১৯৯, হাদিস : ৬৭৫৩, ৬৮২২;
- তাবরানী : আল মু’জামূল কবীর, ২২/৪২৪, হাদিস : ১০৪৪; এবং আদ্ দোয়া, ১/১৫০, হাদিস : ৪২৩-৪২৬;

  পঞ্চম হাদিসঃ  
وفي رواية : قالت : قال : السلام عليك أيها النبي ورحمه الله وبرگاته ، اللهم اغفرلي ذنوبي وافتح لي أبواب رزقك 
. رواه أبو يعلي في المعجم،
আরেক বর্ণনায় আছে যে, সৃষ্টিজগতের সৈয়দা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বয়ান করলেন যে, হযরত সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইহাই বলতেন, হে আল্লাহর নবী! আপনার উপর শান্তি হােক এবং আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকত হােক।
এ হাদিসকে ইমাম আবু ইয়া’লা আল-মু’জম এ বর্ণনা করেছেন।
- আবু ইয়ালা : আল মু’জাম, ১/৫৪, হাদিস: ২৪;

  অতএব, মসজিদে প্রবেশের বা বাহির হওয়ার দোয়াটি যেরূপ হবেঃ
  বিসমিল্লাহ + রাসুলের উপর সালাম + ইস্তেগফার + দোয়া  


প্রবেশের সময় -  
“‏ بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ ‏”
বিসমিল্লাহে ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আল্লাহুম্মাগফিরলি যুনুবী, ওয়াফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিক ‘।

  বের হবার সময় -  
“‏ بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ فَضْلِكَ ‏”
বিসমিল্লাহে ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা রাসূলিল্লাহ,আল্লাহুম্মাগফিরলি যুনুবী, ওয়াফতাহলী আবওয়াবা ফাযলিক ‘।
 
Top