ফসল ফলের যাকাত ও পণ্যের যাকাত কিভাবে দিতে হয়

উশর কাকে বলে? জমি থেকে উৎপন্ন ফসল ও ফলের যাকাত কিভাবে দিতে হবে?
জমিনে উৎপাদিত ফসল ফলের যাকাত কে শরীয়তের পরিভাষায় উশর বলে। জমি থেকে উৎপন্ন সকল প্রকার শস্য, শাক-সবজি, তরি-তরকারি ও ফলের উপর যাকাত প্রযোজ্য। ফসল আসার সাথে সাথে উশর পরিশোধ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বৎসর অতিক্রান্ত হওয়ার প্রয়োজন নাই। এক বৎসরে একাধিকবার ফসল আসলে একাধিকবার উশর পরিশোধ করতে হবে।

অনেক ধরনের ফল, ফসল ও শাক-সবজি একই সাথে কাটা বা উত্তোলন করা যায় না। যেমন- মরিচ, বেগুন, পেঁপে, লেবু, কাঁঠাল ইত্যাদির পরিপক্কতা বুঝে কিছু কিছু করে কয়েকদিন পর পর পুরু কৃষি মৌসুমে বার বার উত্তোলন করা হয়। ফসলের মালিক যদি ফসলের আনুমানিক পরিমাণ নিরূপণ করতে সামর্থ হন এবং তা যদি নিছাব পরিমাণ হয় তবে প্রথম থেকেই প্রতি উত্তোলনের সাথে সাথে উশর (যাকাত) পরিশোধ করবেন।

যদি মালিকের পক্ষে ফল-ফসলের পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব না হয়, তবে তিনি প্রথম উত্তোলন থেকে ফসলের হিসাব রাখবেন এবং যখনি মোট উত্তোলিত ফসলের পরিমাণ নিছাব পরিমাণে পৌঁছাবে তখনি ঐ দিন পর্যন্ত মোট উত্তোলিত ফসলের যাকাত পরিশোধ করবেন এবং তৎপরবর্তী প্রতি উত্তোলনের সাথে সাথে যাকাত পরিশোধ করবেন।

জ্বালানি কাঠ, আসবাবপত্র ও গৃহনির্মাণে ব্যবহার উপযোগী বৃক্ষের ক্ষেত্রে, এরূপ বৃক্ষ যখন কাটা হবে তখন এগুলোর উপর যাকাত প্রযোজ্য হবে, তা যত দীর্ঘ সময় পর কাটা হউক না কেন। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করা হলে বনজ বৃক্ষ, ঘাস, নলখাগড়া, ঔষধি বৃক্ষ, চা বাগান, রাবার চাষ, তুলা, আগর, ফুল, অর্কিড, বীজ, চারা, কলম যাকাতের আওতাভুক্ত হবে। তাই রৌপ্যের নিছাব অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে ৪০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত হিসেবে আদায় করবে।
 
যে জমিতে সেচ প্রয়োজন হয় না, প্রাকৃতিক সিক্ত হয়, তার ফসলের যাকাত হবে দশ ভাগের একভাগ (১০%) আর যে জমিতে সেচের প্রয়োজন হয়, তার ফসলের যাকাত হবে বিশ ভাগের একভাগ (৫%)।

ফসল উৎপাদনের ব্যয় যেমন- চাষ, সার, কীটনাশক, বপন ও কর্তন ইত্যাদি খরচ উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ থেকে বাদ যাবে, তবে এ সব খরচ মোট উৎপাদিত ফসলের এক-তৃতীয়াংশের বেশী বাদ যাবে না।

উৎপাদিত ফসলের নিছাব বা পরিমাণ কতটুকু?
ভূমিতে উৎপন্ন ফসলের উশর বা যাকাত দিতে এর নিছাব বা পরিমাণ আছে কিনা এ নিয়ে ইমামগণের মাঝে মতানৈক্য থাকলেও হানাফী মাযহাব মতে এর কোনো নিছাব নেই। ফসল কম হউক কিংবা বেশী হউক এর উশর বা ১০ ভাগের ১ ভাগ অথবা ২০ ভাগের ১ ভাগ দিতে হবে। জমি হতে উৎপন্ন ফসলের ব্যাপারে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন- يٰاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبٰتِ مَاكَسَبْتُمْ وَمِمَّا اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْاَرْضِ
[হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের পবিত্র উপার্জন থেকে এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা বের করি তা থেকে তোমরা ব্যয় কর। (সূরা বাকারা, আয়াত নং-২৬৭)]

কুরআন পাকে আরো ইরশাদ হচ্ছে- وَاٰتُوْا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهٖ
[তোমরা ফসলের হককে তার কর্তনের দিন প্রদান কর। (সূরা আনআম আয়াত নং-১৪১)]
হাদীস শরীফে রয়েছে- قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فِيْمَا سَقَتِ السَّمَاءُ وَالْعُيُوْنُ اَوْ كَانَ عَثَرِ يًّا الْعُشْرُ وَمَاسُقِيَ بِا لنَّضْحِ نِصْفُ الْعُشُرِ
[রাসূলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন- যে সকল ফসল আকাশের বৃষ্টি, কুপের পানির দ্বারা সিক্ত হয়ে উৎপন্ন হয় অথবা নালার পানি দ্বারা সিক্ত হয় এক দশমাংশ দিতে হয়। আর যা সেচ দ্বারা সিক্ত করা হয় বিশ ভাগের এক ভাগ দিতে হয়। (বুখারী, মেশকাত পৃষ্ঠা নং-১৫৯)]
 
উৎপাদিত পণ্য যাকাতের আওতাভুক্ত কিনা? অন্তর্ভুক্ত হলে এর যাকাত কিভাবে নির্ধারণ করা হবে?
তৈরি বা উৎপাদিত পণ্য, উপজাত দ্রব্য, প্রক্রিয়াধীন পণ্য, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কাঁচামাল ও প্যাকিং সামগ্রী ইত্যাদি যাকাতের আওতাভূক্ত হবে। যাকাত নির্ধারণের জন্য তৈরি বা উৎপাদিত পণ্যের মূল্যায়ন উৎপাদন খরচ মূল্যের অথবা পাইকারী বাজার দরের ভিত্তিতে হবে। প্রক্রিয়াধীন বা অসম্পূর্ণ পণ্যের মূল্যায়ন ব্যবহৃত কাঁচামাল ও অন্যান্য উপাদানের খরচের ভিত্তিতে করতে হবে।

মজুদ কাঁচামাল এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কাঁচামালের সাথে ব্যবহৃত প্যাকিং সামগ্রী ক্রয়-খরচ মূল্যের ভিত্তিতে হিসাব হবে এবং যাকাতের আওতাধীন পণ্যদ্রব্যসহ ব্যবসার নগদ অর্থ ও অন্যান্য চলতি সম্পত্তির সাথে যোগ করে যাকাত নির্ধারণ করতে হবে। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত স্থায়ী সম্পদ যেমন- জমি, দালান, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, যানবাহন ইত্যাদির উপর যাকাত প্রযোজ্য হবে না।

ইসলামী গবেষণা বিভাগ
বাগদাদী ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা- ৩৫০০, বাংলাদেশ।

 
Top