মহিলারা মসজিদে পাঞ্জেগানা নামায জামা’আত কি জায়েয?

মহিলারা মসজিদে পাঞ্জেগানা নামায জামা’আত কি জায়েয? অথবা মহিলারা ঘর হতে বের হয়ে মসজিদে গিয়ে পাঞ্জেগানা নামায জামা’আতের সাথে আদায় করা জায়েয আছে কি না?

পাঞ্জেগানা নামায জামাআত সহকারে আদায় করার জন্য মহিলারা ঘর হতে বের হওয়া জায়েয নয় বরং মাকরুহে তাহরিমী। এ ব্যাপারে ওলামায়ে মোতাআখ্খেরীন তাঁদের ঐক্যমত প্রকাশ করেছেন। নিম্নে কয়েকটি নির্ভরযোগ্য কিতাবের উদ্ধতি পেশ করা হল।

১। আওজাযুল মাসালিক শরহে মুয়াত্তায়ে মালিক ৪র্থ খণ্ড পৃষ্ঠা নং ১০৬ এ আছে- وَاَفْتَي الْمَشَا ئِخُ الْمُتَاَ خِّرُوْنَ بِمَنْعِهَا اَيِ الْعَجُوْزَ مِنْ حُضُوْرِ الصَّلٰوَاتِ كُلِّهَا كَا لشَّا بَّةِ
[মাশায়েখে মোতাআখ্খেরীন যুবতী মহিলার ন্যায় বৃদ্ধা মহিলাকে সকল নামাজে উপস্থিত হতে নিষেধের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।]
২। এমদাদুল আহকাম ১ম খণ্ড ৪২৫ নং পৃষ্ঠায় আছে- قَدِ اجْمَعَتِ الْاُمَّةُ عَلٰي كَرَا هَةِ خُرُوْجِ النِّسَاءِ اِلٰي مَسْجِدِ الْجَمَا عَةِ
[মসজিদের জামাআতে মহিলাদের বের হওয়া মাকরুহের ব্যাপারে উম্মতের ঐক্যমত সংগঠিত হয়েছে।]


৩। দোররে মোখতার ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা নং ৩৮৩ এ আছে- يَكرَهُ حُضُوْرُهُنَّ الْجُمَا عَ وَ لَوْ لِجُمْعَةٍ وَ عِيْدٍ
[মহিলাদের জামাআত সমূহে উপস্থিত হওয়া মাকরুহ যদিও জুমআ ও ঈদের নামাজে হয়।]
৪। দোররে মোখতার শামী ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা নং ৩০৭-এ আছে- وَيَكْرَهُ حُضُوْرُهُنَّ الْجَمَا عَةَ) وَ لَوْ لِجُمْعَةٍ وَ عِيْدٍ وَ وَعْظٍي (مُطْلَقًا) وَ لَوْ عَجُوْزًا لَيْلاً (عَلَي الْمَذْ هَبِ) اَلْمُفْتٰي بِهٖ لِفَسَادِ الزَّمَانِ – وَ لَوْ عَجُوْزًا لَيْلاً بَيَانٌ لِلْاِطْلاَقِ ايْ شَابَّةً اَوْ عَجُوْزًا نَهَارًا اَوْ لَيْلاً – قَوْلُهُ (عَلَي الْمَذْ هَبِ الْمُفْتٰي بِهٖ) اَيْ مَذْ هَبَ الْمُتَأَخِّرِ يْنَ

[অর্থাৎ মহিলাদের জামাআতে উপস্থিত হওয়া মাকরুহ যদিও জুমআ, ঈদ ও ওয়াজে হউক এবং যদিও রাতের বেলা বৃদ্ধা মহিলা হয়। ফাসাদের জামানার কারণে এর উপরই ফাতওয়া বা সিদ্ধান্ত। ولوعجوزا ليلا অংশটি এতলাকের বর্ণনা। অর্থাৎ ফাসাদের জামানার কারণে যুবতী অথবা বৃদ্ধা মহিলা দিনে বা রাতে সকল নামাজের জামাআতে উপস্থিত হওয়া মাক্রুহে তাহরিমী। এটা মোতাআখ্খেরীন মোজতাহিদগণের ফাতওয়া।]

৫। تبيين التحقيق شرح كنزالدقائق কিতাব ১ম খণ্ড ১৩৯-১৪০নং পৃষ্ঠায় আছে- وَ لاَيَحْضُرْنَ الْجَمَاعَاتِ) يَعْنِيْ فِي الصَّلٰوَا تِ كُلِّهَا وَيَسْتَوِيْ فِيْهِ الشَّوَابُّ وَ الْعَجَا ئِزُ وَ هُوَ قَوْلُ الْمُتَأَ خِّرِيْنَ لِظُهُوْرٍ الْفَسَادِ فِيْ زَمَانِنَا – وَ عِنْدَ اَبِيْ حَنِيْفَةَ لاَ بَأْسَ اَنْ تَخْرُجَ الْعَجُوْزُ فِي الْفَجْرِ وَ الْمَغْرِبِ وَ الْعِشَاءِ وَ الْعِيْدَ يْنِ وَيُكْرَهُ فِي الظُّهْرِ وَ الْعَصْرِ وَ الْجُمْعَةِ – وَ قِيْلَ اَلْمَغْرِبُ كَالظُّهْرِ لاِنْتِشَارِ الْفُسَّاقِ فِيْهِ وَ الْجُمْعَةُ كَالْعِيْدَيْنِ لِاِمْكَانِ الْاِ عَتِزَالِ – وَ قَالاَ يَخْرُجْنَ فِي الصَّلٰوَاتِ كُلِّهَا لِاَنَّهُ لاَ فِتْنَةَ لِقِلَّةِ الَّرغْبَةِ فِيْهِنَّ فَصَارَ كَالْعِيْدَ يْنِ – وَ لَهُ اَنَّ فَرْطَب الشَّبَقِ حَامِلٌ فَتَقَعُ الْفِتْنَةُ غَيْرَ اَنَّ الْفُسَّاقَ اِنْتِشَارُهُمْ فِي الظُّهْرِ وَالعَصْرِ وَ الْجُمْعَةِ – اَمَّا فِي الْفَجْرِ وَ الْعِشَاءِ فَهُمْ نَائِمُوْنَ وَ فِي الْمَغْرِبِ بِالطَّعَامِ مُشْغُوْلُوْنَ – وَ الْمُخْتَارُفِي زَمَانِنَا اَلْمَنْعُ فِي الْجَمِيْعِ لِتَغَيُّرِ الزَّمَانِ وَ لِهٰذَا قَالَتْ عَائِشَةُ رضي اللّٰه عنها لَوْ اَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ رَأٰي مِنَ النِّسَاءِ مَارَأَ يْنَا لَمَنَعَهُنَّ مِنَ الْمَسْجِدِ كَمَا مُنِعَتْ بَنُوْ اِسْرَا ئْيلَ نِسَاءَهَا – وَ النِّسَاءُ اَحْدَثْنَ الزِّ يْنَةَ وَ الطِّيْبَ وَ لَبْسَ الْحُلِيِّ وَ لِهٰذَا مَنَعَهُنُّ عُمَرُ رضي للّٰهُ عنه – وَ لَايُنْكَرُ تَغَيُّرُ الْاَحْكْا مِ لِتَغَيُّرِا لزَّمَانِ كَغَلَقِ الْمَسَا جِدِ يَجُوْزُ فِيْ زَمَانِنَا

[মহিলাগণ সকল নামাজের জামাআতে উপস্থিত হবেন না। এ হুকুমে যুবতী ও বৃদ্ধা সমান। আমাদের সময় ফেতনা ফাসাদ প্রকাশ হওয়ার কারণে এটা পূর্ববর্তী ফোকাহায়ে কেরামের অভিমত। (পূর্ববর্তী সময়ে) ফজর, মাগরিব, এশা ও দু’ঈদের নামাজে বৃদ্ধা মহিলা বের হওয়া ইমাম আবু হানিফা (রা:) এর নিকট আপত্তি নেই। জোহর, আছর ও জুমআর নামাজে উপস্থিত হওয়া মাকরুহ। কেউ কেউ বলেছেন, মাগরিবের নামায জোহরের ন্যায় মাকরুহ। কেননা এ সময় ফাসেকরা ছড়িয়ে পরে। আর দূর হওয়ার সম্ভাবনার কারণে জুমআ দু’ঈদের ন্যায়। আর ইমাম আবু ইউসুফ ও মোহাম্মদ বলেছেন- বৃদ্ধাগণ সকল নামাজে বের হবে, কেননা তাদের প্রতি আকৃষ্ট কম থাকায় কোন ফেতনা বা বিপর্যয় নেই। ইমাম আবু হানিফা (রা:) এর দলীল হল অত্যাধিক যৌন চাহিদা জড়িত থাকার ফলে বিপর্যয় সংগঠিত হবে।

তবে ফাসেক তথা পাপাচারীরা জোহর, আছর ও জুমআতে তাদের বিচরণ রয়েছে কিন্তু ফজর ও এশায় তারা ঘুমন্ত আর মাগরিবে খাওয়ায় রত। গ্রহণীয় মত হলো- আমাদের জামানায় কাল পরিবর্তনের কারণে সকল নামাজের জামাআতে মহিলাদের অংশ গ্রহণ করা নিষেধ। এ জন্য আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) বলেছেন, মহিলাদের থেকে আমরা যা দেখছি যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ তা দেখতেন তাহলে অবশ্যই তিনি তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন যেভাবে বনী ইসরাঈলের মহিলাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। আর মহিলারা সুন্দর্য, সুগন্ধি ও অলংকার পরিধান উদ্ভাবন করল। আর এ কারণে ওমর (রা:) মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করেছেন। কাল পরিবর্তনের কারণে আহকাম পরিবর্তনকে অস্বীকার করা যায় না। যেমন, আমাদের সময় মসজিদে তালা দেয়া জায়েয।]


৬। ১০ম শতাব্দির মোজাদ্দিদ মোল্লা আলী ক্বারী (রা:) বলেছেন- وَ كُنَّ فِيْ ذَ الِكَ الزَّمَانِ عَلٰي اَعْلٰي غَايَةِ الصِّيَانَةِ فَمَاكَانَ يَتَطَرَّقُ اِلَيْهِنَّ وَ لاَ بِهِنَّ فِتْنَةٌ اَلْبَتَّةَ وَ لَمَّا حَدَ ثَتِ الْفِتَنُ لَهُنَّ وَ بِهِنَّ مَنَعَهُنَّ الْعُلَمَاءُ مِنْ ذَ الِكَ وَ لَقَدْ قَالَتْ عَائِشَةُ لَوْ عَلِمَ النَّبِيُّ ﷺ مَااَحْدَثَ النِّسَاءُ بَعْدَهُ لَمَنَعَهُنَّ الْمَسَاجِدَ كَمَا مُنِعَتْ نِسَاءُ بَنِيْ اِسْرَ ائِيلَ – (مرقاة جلد ۲ صفحة ۱۳۳

[ঐ যামানার মহিলারা ছিল পূর্ণ নিরাপত্তার উপর। ফলে তাদের নিকট ও তাদের দ্বারা কখনো ফেতনা ফাসাদ আসতো না। আর যখন তাদের উপর ও তাদের দ্বারা ফেতনা ফাসাদ সংগঠিত হল তখন আলেমগণ মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করেছেন। আর আয়েশা (রা:) বলেছেন- যদি নবী ﷺ জানতেন তার পর মহিলারা যা নতুনভাবে সংগঠিত করেছে তাহলে তিনি নিশ্চিত তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন যেভাবে বনী ইসরাঈলের নারীদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। (মেরকাত ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-১৩৩)]

৭। বাহারে শরীয়ত ৩য় খণ্ড ৬৮নং পৃষ্ঠায় আছে- مسئله عورتوں كو كسي نماز ميں جما عت كي حا ضري جائز ﻧﮩيں د ن كي نمازﮨويا رات كي جمعه ﮨو يا عيدين خواه وه جوان ﮨوں يا بڑﮨياں يو ﮨيں وعظ كي مجا لس ميں جانا ناجا ئز ﮨﮯ – (درمختار
[মহিলাদেরকে কোন নামাজেই জামাআতে উপস্থিত হওয়া জায়েয নয়। চাই দিনের নামায হউক বা রাতের নামায, জুমআর নামায হউক অথবা দু’ঈদের নামায। চাই সে যুবতী হউক বা বৃদ্ধা হউক। ওয়াজের সভায় যাওয়াও নাজায়েয।]

উপরোক্ত ফতুয়ার কিতাবের আলোকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, পাঞ্জাগানা নামায জামাআতে আদায় করার জন্য মহিলারা ঘর হতে বের হয়ে মসজিদে যাওয়া জায়েয নয় বরং মাকরুহে তাহরিমী।

ইসলামী গবেষণা বিভাগ
বাগদাদী ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা- ৩৫০০, বাংলাদেশ।
 
Top