যাকাত ফরজ করা হয়েছে যাদের উপর

 
কার উপর যাকাত ফরজ ?
নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক সকল মুসলিম নর-নারীর উপর যাকাত ফরজ । কোন ব্যক্তি নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর চাঁদের হিসাবে পরিপূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হলে তার উপর আগের এক বছরের যাকাত প্রদান করা ফরয। অবশ্য যদি কোন ব্যক্তি যাকাতের নিসাবের মালিক হওয়ার পাশাপাশি ঋণগ্রস্থ হয়, তবে ঋণ বাদ দিয়ে নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার উপর যাকাত ফরয হবে।

যাকাত ফরয হওয়ার পর যদি কোন ব্যক্তি যাকাত প্রদান না করে অর্থ-সম্পদ খরচ করে ফেলে তাহলেও তার পূর্ববর্তী বছরের যাকাত দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, সৌর বছর হয় ৩৬৫ দিনে আর চন্দ্র বছর হয় সৌর বছর হতে ১১ দিন কমে ৩৫৪ দিনে। তাই যাকাতের হিসাব করতে চন্দ্র বছর ৩৫৪ দিন ধরে করতে হবে।

যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য পূর্ববর্তী শর্তগুলো কি কি?
একজন ব্যক্তির উপর যাকাত ফরয হওয়ার জন্য নিম্নের বিষয়গুলো পূর্বশর্ত। শর্ত পাওয়া না গেলে যাকাত ফরজ হবে না।
১. মুসলমান হওয়া। তাই অমুসলিম ধনীর উপর যাকাত ফরয নয়। এমনকি কোন অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে অমুসলিম থাকাকালীন বছরের যাকাত দিতে হবে না।

২. বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। সুতরাং নাবালেগের সম্পদের যাকাত দিতে হয় না।
৩. আকেল বা জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া। অতএব, যে ব্যক্তি সারা বছর পাগল অবস্থায় ছিল ঐ ব্যক্তির ঐ বছরের যাকাত ফরজ হবে না।
৪. আযাদ বা স্বাধীন হওয়া। তাই পরাধীন দাস-দাসীর সম্পদে যাকাত ফরয নয়।
৫. সম্পদ নিছাব পরিমাণ হওয়া। তাই নিসাবের কম সম্পদে যাকাত ফরয নয়। যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ হয় ঐ পরিমাণ সম্পদকে ইসলামী পরিভাষায় ‘নিছাব’ বলা হয়।
 
৬. নিছাব পরিমাণ সম্পদ ব্যক্তির পূর্ণ মালিকানা এবং আয়ত্বে থাকা। তাই যে সম্পদ ব্যক্তির পূর্ণমালিকানা বা আয়ত্বে নেই ঐ সম্পদের যাকাত দিতে হবে না।
৭. নিছাব পরিমাণ সম্পদ ঋণের অতিরিক্ত হওয়া। তাই ঋণসহ সম্পদ নিছাব পরিমাণ হলে যাকাত ফরয হবে না।
৮. জীবন ধারণে নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদের অতিরিক্ত হওয়া।

৯. সম্পদ প্রবৃদ্ধি মূলক হওয়া। যেমন স্বর্ণ, রূপা, ব্যবসার মাল। আর গৃহপালিত প্রাণীর ক্ষেত্রে তা স্বাধীনভাবে চারণভূমিতে বিচরণ করে ঘাস খেয়ে বেড়ায়, ফলে মালিক এর ব্যয় নির্বাহ করতে হয় না এবং এগুলো দিয়ে চাষাবাদ বা অন্য কোন কাজে ব্যবহার করে না।
১০. নিছাব পরিমাণ সম্পদে পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়া। অর্থাৎ বছরের শুরুতে ও শেষে নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে কিন্তু বছরের মাঝখানে পূর্ণ নিছাব না থাকলেও পূর্ণ বছর হিসেবে যাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝখানের ঘাটতি শরীয়তে ধর্তব্য নয়।
 
যাকাত আদায়ে নিয়্যত করা কি?
যাকাত আদায় হওয়ার জন্য যাকাত আদায়ের সময় কিংবা যাকাতের মাল পৃথক করার সময় যাকাত দানের নিয়্যত করা পূর্বশর্ত। তাই কেউ সারা বছর নিয়্যত বিহীন দান করে বছরের শেষে যাকাতের নিয়্যত করলে যাকাত আদায় হবে না। অপর দিকে যাকাতের সম্পদ যাকাতের খাতে যাকাতের নিয়্যতে দান করে ব্যক্তিকে মালের মালিক বানাতে হবে। তাই ফক্বির মিসকিনকে যাকাতের নিয়্যতে আহার করালে যাকাত আদায় হবে না। কেননা প্রদত্ত সম্পদের মালিক বানানো হয়নি। তবে যদি খাদ্যবস্তু দিয়ে দেয়, যা ইচ্ছা করলে সে খাবে বা নিয়ে যাবে তাহলে যাকাত আদায় হবে।

ইসলামী গবেষণা বিভাগ
বাগদাদী ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা- ৩৫০০, বাংলাদেশ।
 
Top