মহিলাদেরকে মসজিদে নামায পড়তে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে কিনা?

 
মহিলাদেরকে মসজিদে নামায পড়তে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে কিনা? হাদীস শরীফে মহিলাদেরকে তাদের ঘর হতে বের হয়ে মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করতে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে না কি নিরুৎসাহিত ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে?

মহিলাদেরকে তাদের ঘর হতে বের হয়ে মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করতে উৎসাহ প্রদান করা হয়নি বরং নিরুৎসাহিত ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। নিম্নে এ প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদীস শরীফ তুলে ধরা হল।

عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رضي اللّٰهُ تعالي عنه عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ اَلْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَاِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ
[আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি নবী করীম ﷺ হতে বর্ণনা করেছেন- তিনি এরশাদ করেছেন, মহিলা হল আওরাত তথা পর্দায় অবস্থানকারিনী। অতএব যখন সে বের হয় শয়তান তাকে উকি মেরে দেখে। (তিরমিযী ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা নং ২২২ হাদীস নং ১১৭৩, ছহীহ ইবনে খোযাইমা ৩/৯৩, ছহীহ ইবনে হিব্বান-৫৫৭)] ইবনে খোযাইমা ও ইবনে হিব্বানের বর্ণনায় অতিরিক্ত বর্ণনা রয়েছে যে, وَ اَقْرَبُ مَاتَكُوْنُ مِنْ وَ جْهِ رَبِّهَا وَ هِيَ فِيْ قَعْرِ بَيْتِهَا
[আর মহিলা তার প্রভুর সন্তুষ্টির জন্য অধিক উপযোগী হল সে তার ঘরের ভিতরে অবস্থান করা।]
 
عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رضي اللّٰهُ تعالي عنه قَالَ مَاصَلَّتِ امْرَأَةٌ مِنْ صَلاَةٍ اَحَبَّ اِلَي اللّٰهِ مِنْ اَشَدِّ مَكَانٍ فِيْ بَيْتِهَا ظُلْمَةً
[আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- মহিলা তার ঘরের ভিতর অন্ধকারে নামায পড়ার চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দের আর কোন নামায পড়ে না। অর্থাৎ মহিলা তার ঘরের ভিতর অন্ধকারের নামাযই আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। (ইমাম তাবারানী কবিরে এবং ইমাম হাইছামী মাজমা উযযাওয়ায়েদ ২/৩৫ এ বর্ণনা করেছেন।)]

عَنْ اَبِي الْاَ حْوَصِ رضي اللّٰهُ تَعالي عنه عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ اِنَّ اَحَبَّ صَلاَةِ الْمَرْأَةِ اِلَي اللّٰهِ فِيْ اَ شَدِّ مَكَانٍ فِيْ بَيْتِهَا ظُلْمَةً
[আবু আহওয়াছ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি নবী করীম ﷺ হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি এরশাদ করেছেন- নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দের নামায হল মহিলার নামায যা তার ঘরের কোনে অন্ধকারে পড়া হয়। (ছহীহ ইবনে খুযাইমা ৩/৯৬)]

فِيْ رِوَا يَةٍ عِنْدَ الطَّبَرَانِيِّ قَالَ : اَلنِّسَاءُ عَوْرَةٌ وَ اِنَّ المَرْأَةَ لَتُخْرِجُ مِنْ بَيْتِهَا وَ مَابِهَا بَأْ سٌ فَيَسْتَشْرِفُهَا الشَّيْطَانُ فَيَقُوْلُ : اِنَّكِ لاَ تَمُرِّيْنَ بِاحَدٍ اِلاَّ اَعْجَبْتِهٖ وَ اِنَّ الْمَرْأَ ةَ لَتَلْبِسُ ثِيَا بَهَا فَيُقَالُ اَيْنَ تُرِيْدِيْنَ؟ فَتَقُوْلُ اَعُوْدُ مَرِيْضًا اَوْ اَشْهَدُ جَنَازَةً اَوْ اُصَلِّيْ فِيْ مَسْجِدٍ – وَ مَاعَبَدَتْ اِمْرَأَ ةٌ رَبَّهَا مِثْلَ اَنْ تَعْبُدَهُ فِيْ بَيْتِهَا
[তাবারানীর এক বর্ণনায় আছে- তিনি এরশাদ করেছেন। মহিলাগণ আওরাত তথা পর্দায় অবস্থানকারিনী। নিশ্চয়ই মহিলা ঘর হতে বের হলে শয়তান তাকে উকিমেরে দেখে অতপর বলে তুমি যার পাশ দিয়েই অতিক্রম করবে তাকেই তুমি আশ্চর্য করে ফেলবে। আর মহিলা কাপড় পরিধান করে, অতপর তাকে বলা হয়, কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা করছো। উত্তরে সে বলে রোগী দেখতে অথবা জানাযায় শরীক হতে অথবা মসজিদে নামায পড়তে। অথচ মহিলা তার ঘরের মধ্যে ইবাদত করার ন্যায় তার প্রভুর উত্তম ইবাদত অন্য কোথাও করতে পারে না। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/৩৫)]


 
عَنْ اَبِيْ عَمْرِو الشَّيْبَانِيْ اَنَّه رَاٰي عَبْدَ اللّٰهِ يُخْرِجُ النِّسَاءَ مِنَ الْمَسْجِدِ يَوْمَ الْجُمْعَةِ وَيَقُوْلُ : اُخْرُجْنَ اِلٰي بُيُوْ تِكُنَّ خَيْرٌ لَكُنَّ – (ذكره الهيثمي في مجمع الز وائد ۲/۳۵
[আবু আমর শাইবানী (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদকে দেখেছেন যে, তিনি মহিলাদেরকে জুমআর দিন মসজিদ হতে বের করেন এবং বলেন তোমরা তোমাদের ঘরে চলে যাও। ঘর হলো তোমাদের জন্য অধিক উত্তম।]

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ صَلٰوةُ الرَّجُلِ فِي الْجَمَاعَةِ تُضَعَّفُ عَلٰي صَلاَ تِهٖ فِيْ بَيْتِهٖ وَ فِيْ سُوْقِهٖ خَمْسَةً وَّ  عِشْرِيْنَ ضِعْفًا – وَ ذَ الِكَ اَنَّهُ اِذَا تَوَضَّأَ فَاَ حْسَنَ الْوُضُوْءَ ثُمَّ خَرَجَ اِلَيالْمَسْجِدِ لَا يُخْرِجُهُ اِلاَّ الصَّلٰوةُ لَمْ يَخُطَّا خَطْوَةً اِلاَّ رُ فِعَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَهٌ وَ حُطَّا عَنْهُ بِهَا خَطِيْئَةٌ – فَاِذَا صَلّٰي لَمْ تَزِلِ الْمَلاَ ئِكَةُ تُصَلِّيْ عَلَيْهِ مَادَامَ فِيْ مُصَلاَّهُ – اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ اَللّٰهُمَّ ارْحَمُ وَ لَايَزَالُ اَحَدُكُمْ فِيْ صَلَاةٍ مَاا نْتَظَرَ الصَّلٰوةَ

[আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন- জামাআতের সহিত পুরুষের নামায একাকি তার বাড়িতে ও বাজারে পড়ার চেয়ে পঁচিশ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। এটা এজন্য যে, যখন সে অজু করে উত্তম রূপে অজু করে। অতঃপর যখন সে মসজিদের দিকে বের হয় একমাত্র নামাজের জন্যই বের হয়। তার প্রতিটি পদেই তার একেকটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং এর দ্বারা তার একেকটি অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।

অতঃপর যখন সে নামায আদায় করে ফেরেস্তাগণ তার জন্য দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাজের স্থানে অবস্থান করেন। ফেরেস্তাগণ তার জন্য এ বলে দোয়া করেন- হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! তার উপর রহমত বর্ষণ করুন। আর তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত নামাযের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত নামাযে রত হিসেবে গণ্য হবে। (বুখারী ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা নং ৮৯, হাদীস নং ৬৩৮, মুসলিম হাদীস নং ৬৪৯, আবু দাউদ হাদীস নং ৫৫৯, তিরমিযী হাদীস নং- ৬৩, ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৭৭৪)]

ইসলামী গবেষণা বিভাগ
বাগদাদী ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা- ৩৫০০, বাংলাদেশ।

 
Top