❏ প্রশ্ন-১৪৪: এ ব্যাপারে আহলে সুন্নাত এর ওলামায়ে কেরাম কী বলেন যে, আমাদের দেশে ইসলামী কনফারেন্স, মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স ইত্যাদি নামে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যেগুলোর মূল উদ্যোক্তা, সংগঠক, নেতা, কর্মী ও অনুসারীগণ হচ্ছে কলেজ-ইউনির্ভাসিটির বিভিন্ন চিন্তা-দর্শন ও মাযহাবপন্থী ছাত্ররা। এসব সংগঠনে ওয়াহাবী-সুন্নী নির্বিশেষে প্রত্যেক কলেমা উচ্চারণকারী রাফেযী, ওয়াহাবী, নজদী, কাদিয়ানী, মওদূদী বিভিন্ন মতাবলম্বী সদস্য হতে পারে। সুন্নী জনতা কর্তৃক এরূপ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা, এগুলোতে অংশগ্রহণ করা, জান-মাল দিয়ে এসব সংগঠনকে সাহায্য করা, এগুলোর সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করা, বদ-দ্বীন ও মুরতাদদেরকে মুসলমান মনে করে তাদের সঙ্গ দেওয়া, তাদেরকে মুসলমান মনে করা এবং তাদের সাথে মৈত্রী বা মেলামেশার পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তাদের নিকট হতে উন্নতি ও উপকারের আশা করা, শরীয়তে এগুলোর বিধান কী? বিষয়টি আমাদের ধর্মীয় নেতাগণ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে সহজ-সরল মুসলমানদেরকে গুমরাহী হতে বাঁচিয়ে উভয় জগতের কল্যাণ লাভ করতে পারেন।


✍ উত্তর: এ ধরনের সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা। এতে অংশগ্রহণ করা হারাম এবং বদ মাযহাবীদের সাথে মেলামেশা ও মৈত্রী স্থাপন করা অগ্নির মত বিপদ। এসব সংগঠনে থাকে ভয়ংকর আগুনের দিকে টেনে টেনে নিয়ে যাবার লোক। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,


 وَإِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ .


‘যদি শয়তান আপনাকে বিস্মৃত করে বা ভুলিয়ে দেয়, তাহলে স্মরণ হওয়ার পর যালিমদের সাথে বসবেন না।’  

200. সূরা: আন্-আম, আয়াত: ৬৮।


‘তাফসীরে আহমদীয়া’ এর মধ্যে রয়েছে যে,


 دخل فيه الكافر والمبتدع والفاسق، القعود مع كلهم ممتنع . 


 এই আয়াতের আদেশের আওতায় প্রত্যেক কাফের, বিদ‘আতী ও ফাসেক অন্তভুর্ক্ত। তাদের কারো সাথে বসার অনুমতি নেই। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,


وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ 


‘যালিমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, পড়লে আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে।’  

201. সূরা: হুদ, আয়াত: ১১৩।


সহীহ মুসলিম শরীফের হাদিসে রয়েছে,  রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)  বলেন, 


اياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم 


‘তাদের নিকট থেকে দূরে থাকো এবং তাদেরকে তোমাদের নিকট থেকে দূরে রাখো, যাতে তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে না পারে এবং তোমাদেরকে বিপর্যয়ের মুখে পতিত না করে।’ 

মুসলমানদের ঈমান হচ্ছে, আল্লাহ্ ও রাসূল   ব্যতীত আমাদের অধিক কল্যাণকামী আর কেউ নেই। তারা যে দিকে আমাদেরকে আহ্বান করেন সুনিশ্চিতভাবে সেদিকে আমাদের কল্যাণ নিহিত থাকে এবং যে সব বিষয় হতে আমাদের বারণ করেন নিঃসন্দেহে তাতে রয়েছে আমাদের সুস্পষ্ট ক্ষতি, অনিষ্ট ও বিপদ। মুসলমানের আকৃতি ধারণ করে যারা আল্লাহ্ ও রাসূলের   বিধানের বিরুদ্ধে মানুষকে আহ্বান করবে, জেনে রেখো; নিঃসন্দেহে তারা ডাকাত, তাদের অপব্যাখ্যায় কখনো কান দেবেনা। তারা ছিনতাইকারী যারা মুসলমানদেরকে স্বীয় জামাত থেকে বের করে ছিনতাই করে নিয়ে যেতে চায়। তারা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কথাবার্তা বলবে। যখন কেউ তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে তাদের দলে ভিড়বে, তখন তার গর্দান কেটে নিবে এবং তার সর্বস্ব লুটে নিবে। বাঘের পশম পরিধান করতঃ বাঘের বেশ ধারণ করে যে আসলো সে তাদের দলে ভিড়ে গেলো।

হুযূর (ﷺ) তোমাদের বারণ করেন। তিনি তোমাদের প্রাণাধিক কল্যাণকামী।

 عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ  

‘তোমাদের যে কোন বিপদ তার পবিত্র অন্তরে অসহ্য যন্ত্রণা সৃষ্টি করে।’  

202. সূরা তাওবা, আয়াত: ১৮২।


তিনি অতি দয়ালু। স্বীয় সন্তানের প্রতি তোমরা যেরূপ দয়ালু, আল্লাহ ও তিনি (ﷺ) তোমাদের প্রতি এর চেয়েও অধিক দয়ালু। তিনি (ﷺ) বলেন, 


ايَّاكُم وَايَّاهم لايضلونكم ولايفتنونكم 


‘তাদের নিকট হতে দূরে থাকো এবং তাদেরকে নিজেদের নিকট হতে দূরে রাখো, যাতে তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করে না দেয় এবং তোমাদেরকে বিপর্যয়ের মুখে পতিত না করে।’


ইমাম ইবনে হিব্বান, তাবারানী ও ওকাইলীর হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,


  لاتواكلوهم ولاتشاربوهم ولاتجالسوهم ولاتناكحوهم واذا مرضوا فلاتعودوهم واذا ماتوا فلاتشهدوهم، ولاتصلوٰ عليهم ولاتصلوٰ معهم . 

‘তাদের সাথে খাবার খেয়োনা, পানি পান করোনা, তাদের নিকট বসোনা, তাদের সাথে বিবাহ বন্ধন স্থাপন করোনা, তারা অসুস্থ হলে খবর নিতে যেয়োনা, মারা গেলে তাদের লাশ দেখতে যেয়োনা, তাদের জানাযা পড়োনা এবং তাদের সাথে নামায পড়োনা। 

আমিরুল মু’মিনীন হযরত ওমর ফারুক (رضى الله تعالي عنه) মসজিদে নববীতে মাগরিবের নামাযের পর কোন বুভূক্ষ বা ক্ষুধার্ত বা নিজের সাথে খিলাফতের পতাকা বহনকারী মুসাফিরের জন্য খাবার তলব করলেন। যখন সে খাবার খেতে বসলো তখন তার নিকট হতে কোনরূপ বদ মযহাবী কথাবার্তা প্রকাশ পেলো। এমতাবস্থায় তিনি তৎক্ষণাৎ খাবার সরিয়ে নেওয়ার এবং তাকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। এরপর তার সম্মুখ দিক হতে খাবার সরিয়ে দেওয়া হল এবং তাকে বের করে দেওয়া হলো। হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (رضى الله تعالي عنه) এর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে বললো যে, অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম বলেছে। তখন তিনি বললেন, لاتقرأ منى السلام فانى سمعتُ انه احدث  ‘আমার নিকট হতে তাকে সালাম বলোনা। আমি শুনেছি যে, সে কিছু কুসংস্কার (বিদআত) আবিষ্কার করেছে।’

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (رضى الله تعالي عنه) এর শাগরেদ হযরত সাঈদ বিন জুবাইর পথিমধ্যে একজন বদ-মযহাবী (বিদআতী) এর দেখা পেলো, ওই বিদআতী বললো, আমি কিছু বলতে চাই। তখন তিনি বললেন, আমি কিছু শুনতে চাইনা। তখন সে আবার বললো, একটি শব্দ বলতে চাই। তখন তিনি কনিষ্ঠ আঙ্গুলি মাথায় রেখে বললেন, لا نصف كلمته আধা শব্দও নয়। লোকেরা প্রশ্ন করলো এর কারণ কী? কারণ সে ছিল এদের দলভূক্ত। 

হযরত আনাস বিন মালেক (رضى الله تعالي عنه) এর শাগরেদ ইমাম মুহাম্মদ বিন সিরীনের নিকট ওই বিদআতী লোকটি আসলো, সে আরয করলো, কুরআনের কিছু আয়াত আমাকে শুনান। তিনি বললেন, আমি শুনাতে চাইনা। সে (বিদআতী) আবার বললো, রাসূলুল্লাহ'র   কয়েকটা হাদিস শুনান। তিনি বললেন, আমি শুনাতে চাইনা। সে বার বার জোরাজোরি করলে তিনি বললেন, হয়তো তুমি ওঠে যাও নচেৎ আমি ওঠে যাচ্ছি। পরিশেষে সে হতাশ হয়ে চলে গেলো। লোকেরা বললো, হে ইমাম! আপনার কী অসুবিধা হতো যদি তাকে দু’য়েকটি আয়াত বা হাদিস শুনাতেন? তখন তিনি একথার উত্তরে বললেন, আমি আশংকা করেছি যে, সে ওই আয়াত ও হাদিস সমূহের সাথে নিজের কিছু অপব্যাখ্যা যুক্ত করবে এবং তা আমার অন্তরে গেঁথে যাবে, তখন আমি ধ্বংস হয়ে যাবো। যখন ইমামগণের নিকট এই ভীতি ও আশংকা ছিল তখন সাধারণ জনগণের নিকট এই সাহস কোথায়?


لَا حَولَ وَلَا قوةَ اِلّا بِاللهِ .


এ ধরনের সংগঠন ও জায়গায় অর্থ দেওয়ার বিষয়টি ওই লোকই পছন্দ করবে যার কোন দ্বীন ও জ্ঞান-বুদ্ধি নেই। সে তার উভয় জগত নষ্ট করলো- অর্থও হারালো এবং আখিরাতে শাস্তির উপযুক্তও হলো। 

203. ইযাফাতে ইমাম আহমদ রেযা কাদেরী।


আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,  


فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَىٰ مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ. 


স্মরণ হওয়ার পর যালিমদের সাথে বসবেন না এবং প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেন,  ايَّاكُمْ وَ ايَّاهم‘তাদের নিকট হতে দূরে থাকো এবং তাদেরকে নিজেদের নিকট হতে দূরে রাখো।’ 

204. ইযাফাতে ইমাম আহমদ রেযা কাদেরী।


এখন গভীরভাবে চিন্তা করো, বিশেষভাবে ১২ রবিউল আউয়াল শরীফের বিশিষ্টতার এটাও একটা কারণ যে, যাবতীয় নেয়ামতরাজির বিদ্যমানতা হুযূর   এর অস্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল এবং পুরো সৃষ্টি জগতের বিদ্যমানতা ও নির্ভরশীলতা হুযূর (ﷺ) এর অস্তিত্বের ওপর। সুতরাং যেহেতু দুনিয়া-আখিরাত এর ছোট-বড় এবং শারীরিক-আত্মিক যাবতীয় নেয়ামত রাসূলুল্লাহ'র   উসিলায় পাওয়া গেছে। তাই এই দিনটা ঈদের দিনের চেয়েও উত্তম হলো। কারণ তাঁর   উসিলায় তো ঈদের দিনটা ঈদের দিন হলো। এ কারণে সোমবারের রোজা রাখার কারণ সম্বন্ধে বলা হয়েছে,  فِيْهِ ولِدْتُ‘ ওই দিন আমি ভূমিষ্ঠ হয়েছি।’ 


 
Top