প্রশ্ন: দ্বীনের আলিমগণ এবং শরীআতের মুফতীগণ এই ব্যাপারে কী বলেন – সবকিছু যদি পূর্বনির্ধারিত হয়েই থাকে, তাহলে আর চেষ্টা-প্রচেষ্টার কী প্রয়োজন? যখন কারো কতটুকু রিযিক্ব (জীবিকা) অর্জিত হবে তা পূর্ব থেকেই নির্ধারিত, তখন তা বৃদ্ধির জন্য দু‘আ করার কী সার্থকতা? যখন কোনো মুসীবত (বিপদ) পূর্বনির্ধারিত, তখন তা দূর করার জন্য দু‘আ করার উদ্দেশ্য কী? দু‘আ কি তাক্বদীর (আল্লাহর বিধান/পূর্বনির্ধারণ) পরিবর্তন করতে পারে?



উত্তর:

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
الْجَوَابُ بِعَوْنِ الْمَلِكِ الْوَهَّابِ اللَّهُمَّ هِدَايَةَ الْحَقِّ وَالصَّوَابِ


হ্যাঁ, দু‘আ তাক্বদীর পরিবর্তন করে। দু‘আর বরকতে বিপদ-আপদ দূর হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন:



لَا يَرُدُّ القَضَاءَ إِلَّا الدُّعَاءُ، وَلَا يَزِيدُ فِي العُمْرِ إِلَّا البِرُّ


অনুবাদ: “দু‘আ ব্যতীত অন্য কিছু ক্বাযা (আল্লাহর ফায়সালা/বিধান) রদ করে না এবং নেক আমল ব্যতীত অন্য কিছু আয়ু বৃদ্ধি করে না।” [সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ২১৩৯]

তবে এই বিপদ দূর হওয়া এবং ক্বাযা পরিবর্তন হওয়াও ক্বাযা অনুযায়ীই হয়ে থাকে। যেকোনো কিছুর অস্তিত্ব লাভের জন্য কোনো না কোনো কারণের প্রয়োজন হয়। যেমন, বীজ বপন করলে বৃক্ষ জন্মে; কোনো কিছু প্রস্তুত করলে তা তৈরি হয়। অনুরূপভাবে, কোনো কিছু দূর করার বা থামানোর জন্যও একটি কারণ স্থির রয়েছে। ওষুধ সেবন করলে রোগ নিরাময় হয়। তেমনিভাবে, দু‘আ হলো বিপদ থামানোর এবং ক্বাযা পরিবর্তনের একটি কারণ। রোগ হলে তার প্রতিকার গ্রহণ করা তাক্বদীর-এর পরিপন্থী নয়। অনুরূপভাবে, বিপদ দূর করার জন্য দু‘আ করাও তাক্বদীর-এর পরিপন্থী নয়।

তাহ্‌ক্বীক্ব্‌ অনুযায়ী তাক্বদীর দু’ প্রকার:

১. তাক্বদীর মুব্‌রামে হাক্বীক্বী: যার জ্ঞানে আল্লাহ তাআলা-র কাছে কোনো কিছু বা কারণের অপেক্ষা নেই। তাঁর জ্ঞানে যা রয়েছে, তা অবশ্যই ঘটবে। এর পরিবর্তন সম্ভব নয়। দু‘আ বা নেক আমল দ্বারাও এটি পরিবর্তন হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা-র প্রিয় বান্দাগণ, যেমন নবীগণ عَلَيْهِمُ ٱلسَّلَامُ, যদি ঘটনাক্রমে এ বিষয়ে কিছু বলতে যান, তবে তাঁদেরকে থামিয়ে দেওয়া হয়।

২. তাক্বদীর মু‘আল্লাক্ব: যে ক্বাযা কোনো কিছুর ওপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, তাক্বদীর-এ লেখা আছে যে, অমুক ব্যক্তির আয়ু হবে ৬০ বছর, কিন্তু যদি সে দু‘আ করে বা হজ্জ করে, তবে তার আয়ু হবে ৮০ বছর। অর্থাৎ, তার আয়ু বৃদ্ধি দু‘আ বা হজ্জ করার ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং, সে যদি দু‘আ করে বা হজ্জ করে, তবে তার আয়ু বৃদ্ধি পাবে। অনুরূপভাবে, যদি তাক্বদীর-এ লেখা থাকে যে, সে নির্দিষ্ট পরিমাণ রিযিক্ব পাবে, আর যদি সে দু‘আ করে, তবে তা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বেড়ে যাবে। সুতরাং, দু‘আ করার কারণে তার রিযিক্ব বৃদ্ধিও তাক্বদীর অনুযায়ীই হয়ে থাকে।

সায়্যিদী আ‘লা হযরত رَحْمَةُ ٱللَّٰهِ عَلَيْهِ’র পিতা ইমাম নাক্বী আলী খান رَحْمَةُ ٱللَّٰهِ عَلَيْهِ বর্ণনা করেছেন যে, মানুষের আয়ু নির্দিষ্ট কারণে বাড়ে বা কমে এবং এটি লাওহে মাহফূযে লিখিত আছে। সুতরাং, ক্বাযা-এর পরিবর্তন ক্বাযা অনুযায়ীই হয়। [আহসানুল উই‘আ লি আদাবিল দু‘আ, পৃ. ২৪৪]

তাক্বদীরে মু‘আল্লাক্ব-ও আবার দু’টি ভাগে বিভক্ত:

ক. মু‘আল্লাক্ব মাহ্‌য: যার মুলতবী হওয়া লাওহে মাহূ ও ইসবাত বা ফেরেশতাদের সহিফায় উল্লেখ রয়েছে। ফেরেশতাদের সহিফায়ও এটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, অমুক ক্বাযা অমুক কারণের ওপর নির্ভরশীল। যদি ব্যক্তি ঐ কারণটি সম্পন্ন করে, তবে ক্বাযা সংঘটিত হবে। সাধারণ আউলিয়া যাঁরা তাঁদের জ্ঞানের মাধ্যমে এই ধরনের ক্বাযা সম্পর্কে জানতে পারেন, তাঁরা দু‘আর মাধ্যমেও তা অতিক্রম করতে পারেন। তাঁদের জ্ঞান রয়েছে যে, এর নির্ভরশীলতার কারণে ক্বাযা-টির রদ হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

খ. মু‘আল্লাক্ব শাবিহ বি মুব্‌রাম: যে ক্বাযা আল্লাহ তাআলা’র জ্ঞানে কোনো কারণের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু এর নির্ভরশীলতার কারণ লাওহে মাহূ ও ইসবাত বা ফেরেশতাদের সহিফায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়নি। এই ধরনের ক্বাযা ঐসব ফেরেশতা এবং সাধারণ আউলিয়া-র জ্ঞান অনুযায়ী মুব্‌রাম (অপরিবর্তনীয়)। তবে, আউলিয়া-দের মধ্যে যাঁরা বিশেষ মর্যাদার অধিকারী, তাঁদেরকে এই ধরনের ক্বাযা-র নির্ভরশীলতার বিষয়ে জানানো হয়। তাঁদেরকে এই ধরনের ক্বাযা পরিবর্তন বা রদ করার জন্য দু‘আ করার অনুমতি দেওয়া হয়। এছাড়াও, সাধারণ মু’মিনগণ, যাঁদেরকে লওহ্‌ বা ফেরেশতাদের সহিফাসমূহের বিষয়াদি সম্পর্কে জানানো হয়নি, তাঁরা যখন অভ্যাসগতভাবে দু‘আ করেন, তখন ক্বাযা পরিবর্তিত হয়, কেননা এটি মূলত নির্ভরশীল প্রকৃতির। সাধারণ আউলিয়া-দের এই বিষয়ে প্রবেশের সুযোগ নেই। সুতরাং, এটি এমন এক প্রকার তাক্বদীরে মুব্‌রাম যা পরিবর্তণ করা যেতে পারে। হাদীস শরীফে এসেছে:



أکثر من الدعاء فإنّ الدعاء یردّ القضاء المبرم


অনুবাদ: “অধিক পরিমাণে দু‘আ করো, কেননা দু‘আ ক্বাযায়ে মুব্‌রাম (অপরিবর্তনীয় বিধান) রদ করে দেয়।” [কানযুল ‘উম্মাল, হাদীস নং ৩১১৭]

অতএব, কোনো বিপদ দূর করার জন্য, রিযিক্ব বাড়ানোর জন্য অথবা কিছু অর্জনের জন্য অবশ্যই দু‘আ করা উচিত, কেননা হতে পারে যে, কোনো রোগ বা বিপদ দূর হওয়া অথবা কোনো কিছু অর্জন এই দু‘আর ওপর নির্ভরশীল। ফলে যখন দু‘আ করা হবে, তখন রোগ বা বিপদ দূর হয়ে যাবে।

ইমাম নকী আলী খান رَحْمَةُ ٱللَّٰهِ عَلَيْهِ বর্ণনা করেন: “দু‘আ (আল্লাহ'র) সন্তুষ্টির পরিপন্থী নয়। হতে পারে যে, কোনো কিছু অর্জন বা বিপদ দূর হওয়া এই দু‘আর ওপর (নির্ভরশীল করে) নির্ধারিত করা হয়েছে।” [আহসানুল উই‘আ লি আদাবিল দু‘আ, পৃ. ২৪৯]





وَاللَّهُ تَعَالَى أَعْلَمُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ


জবাব প্রদান - মুফতী মুহাম্মাদ ক্বাসিম যিয়া আল-ক্বাদিরী حَفِظَهُ اللهُ تَعَالَى [যুক্তরাজ্য]

---
Translation reviewed and approved by Ala’Hazrat Academy
Top