মসজিদের বর্ণনা
✍ কৃতঃ আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরী (رحمة الله) মুনিয়াতুল মুছলেমীন [১ম খন্ড]

❏ মাছআলা: (৮৪)
মসজিদের অভ্যন্তরে গাছ লাগানো মাকরূহ। কতেক ফকীহ ইহাকে নাছারাদের সাদৃশ্য বলে মত পোষণ করেছে। لانه تشبيه بالبيت হ্যাঁ যদি এর দ্বারা মসজিদের কোন উপকার হয় তাতে কোন অসুবিধা নাই।

ويكره غرس الشجر فى المسجد الا ان يكون له منفعة للمسجد  
➠হাদিস শরীফে মসজিদের সৌন্দর্যের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে হুজুর (ﷺ) এরশাদ করেছেন- মসজিদ সমূহকে সৌন্দর্যমন্ডিত ও শোভা বর্ধনের জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়নি।

➠ফতোয়ায়ে শামী গ্রন্থে উলে­খ আছে- মসজিদের দেয়ালে কোরআন শরীফের আয়াত লেখা মাকরূহ বলেছে। এ জন্য যে কোন সময় মসজিদের দেয়াল শহীদ (ভেঙ্গে) হয়ে গেলে আয়াতে কোরআনের অসম্মানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এজন্যই মাকরূহ। উলে­খিত হাদিস শরীফের আলোকে সমস্ত ইমামগণ ঐকমত্য পোষণ করেছে যে- মসজিদে নক্শা তথা কারুকার্য করা মাকরূহ।

➠ফতোয়ায়ে আলমগীরি গ্রন্থে বর্ণিত আছে: 
والاولى ان تـكون حيـطان الـمسجد الابيض غير منقوشة ولا مكتوب عليه 
উত্তম হচ্ছে যে- মসজিদের দেয়াল সাদা রাখা এবং সমস্ত কারুকার্য ও নক্শা ও কোন কিছু লেখা হতে মুক্ত রাখা। কেননা হুজুর (ﷺ) মসজিদে কারুকার্য করা নিষেধ করেছেন।

➠ফতোয়ায়ে আলমগীরি গ্রন্থে এটিও বর্ণিত আছে যে- 
ولا يكره نقش الـمسجد بالجص ومأه الذهاب 
অর্থাৎ: স্বর্ণ ইত্যাদি দ্বারা যদি মসজিদে বিভিন্ন প্রকার কারুকার্য কিংবা ফুলদানি বানানো কিংবা স্বর্ণের পানি লেপন করা হয় তা মাকরূহ নয়, ফোক্হায়ে কেরামগণ এর অনুমতি প্রদান করেছেন। কেননা, এটি দেয়াল পাকা-পোক্ত ও মজবুতের খেয়ালে করা হয়। শোভা বর্ধনের উদ্দেশ্যে নয়। আর আয়াতে কোরআন ইত্যাদি পাঠ করার উদ্দেশ্যে লেখা হয়ে থাকে। এ জন্য তা মাকরূহ।

❏ মাছআলা: (৮৫)
➠ইমাম ওয়াহেদ বলেন: إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ الخ আয়াত দ্বারা প্রতিয়মান হয়েছে যে- কাফেরগণ মুসলমানদের মসজিদ তৈরী করে না এবং মসজিদের জন্য চাঁদাও প্রদান করে না। বরং এ রকম হতে পারে যে- কোন মুসলমান কাফেরগণ হতে মসজিদ তৈরীর জন্য ঋণ ও কর্জ নিয়ে এবং তা মসজিদের জন্য খরচ ও ব্যয় করে ছিল অতঃপর কাফের উক্ত ঋণ মাফ ও ক্ষমা করে দিল, তা জায়েজ হবে।

❏ মাছআলা: (৮৬)
যদি কোন কাফের মৃত্যু মুহূর্তে ওসিয়ত করে যে- আমার সম্পদ হতে মসজিদ তৈরী করিও, এ ক্ষেত্রে তার ওসিয়ত পূরণ যোগ্য নয়। এর উপর হানাফীগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।  

❏ মাছআলা: (৮৭)
সর্বদা মসজিদের আজমতে শান তথা বুজুর্গী ও শান-শওকতের দিকে খেয়াল রাখা আবশ্যক। মসজিদে কাফের এবং অপরাপর ইসলামের দুশমনদের প্রবেশ করতে না দেওয়াই উত্তম।

❏ মাছআলা: (৮৮)
বিশ্বের সকল মসজিদ মাজাজী তথা রূপক, না হয় প্রকৃত মসজিদ হচ্ছে আউলিয়ায়ে কেরামদের ক্বলব ও অন্তর। যা সকল প্রকার শিরক হতে পাক-পবিত্র।

আর সেটিই হচ্ছে প্রকৃত মসজিদ, যা আউলিয়ায়ে কেরামদের অন্তরে বিদ্যমান, এ জন্যই সেটি আল্লাহর প্রকৃত ও খাছ ঘর। আল্লাহর অলীদের ক্বলব (অন্তর) ব্যতীত আর কোন মসজিদ নাই। বিশ্বে বিদ্যমান মসজিদ সমূহ হচ্ছে মাজাজী (রূপক)। পক্ষান্তরে হাকীকি মসজিদ সেটি যা আউলিয়াদের ক্বলবে রয়েছে।  

❏ মাছআলা: (৮৯)
মসজিদে পা মোচার জন্য পাপোশ রাখা মাকরূহ। 

➠মুহীত গ্রন্থে আছে:
ما يفعل في زماننا من وضع البواري فى المسجد ومسح الاقدام عليها فهو مكروه عند الائمة اجمع -
আমাদের বর্তমান সময়ে যে রেওয়াজ হয়ে গেছে যে মসজিদে পাপোশ রাখা হয় পা  মোচার জন্য তা মাকরুহ।

❏ মাছআলা: (৯০)
আহলে মসজিদ তথা মসজিদে ইবাদতকারীদের জন্য মসজিদের দরজা বন্ধ করে রাখা মাকরূহ।
ويكره لاهل المسجد ان يغلقوا باب المسجد
➠আমাদের হানাফী ইমামগণ বলেন: এটি পূর্ববতী তথা তখনকার সময়ের জন্য প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু আমাদের বর্তমান সময়ে নামাজের সময় ব্যতীত মসজিদের দরজা বন্ধ রাখা দোষণীয় নয়।

وهذا فى زمانهم امّا فى زماننا فلا بأس باغلاق ابواب المساجد فى غير اذان الصلواة لانه يؤمن من على مناع المسجد وبنائه ويصره من قبل السارق لانّه الغلبة فى زماننا لاهل الفسق, والحكم يختلف باختلاف احوال الناس الاترى ان النساء كن يحضرن الجماعة فى عهد رسول الله صلي الله عليه وسلم ثم منعن ذلك لفساد احوال الناس وهو الصواب فى مرأتنا-
অর্থাৎ মসজিদ সমূহের দরজা নামাজের জামাতের সময় ব্যতীত বন্ধ রাখা মাকরূহ নয়। কেননা মসজিদের মাল তথা আসবাবপত্র, জায়নামাজ ইত্যাদি চুরি হওয়ার খুবই আশংকা। নামাজী সেজে এই গুলো চুরি করাটা অসম্ভব কিছু নয়। কেননা লোকগণের অন্তর হতে মহান আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি ভক্তি মুহাব্বত ও মহান প্রভূর ভয় ভীতি হ্রাস পাচ্ছে, এবং মানুষ পাপাচার ও অন্যায়াচারণে অধীকভাবে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। শরীয়তের বিধি নিষেধ লোকদের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিত পাল্টে যাচ্ছে। যেমন হুজুর (ﷺ)-এর যুগে মহিলাগণ মসজিদে আসার অনুমতি ছিল, পরবর্তীতে তা নিষেধ করা হয়েছে। লোকদের মধ্যে ফিতনা ফ্যাসাদের কারণে এ ধরনের অনেক মাছআলা রয়েছে যার হুকুম এভাবে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যেমন তারাহবীর খতমে কোরআনের সময় কিংবা স্বতন্ত্র খতমে কোরআন শরীফ, খতমে বুখারী শরীফ ও অপরাপর বিভিন্ন খতমসমূহের সময় সংবদ্ধ তথা ইজতেমায়ী অবস্থায় দোয়া প্রার্থনার ব্যবস্থা করা তাতে অসুবিধার কিছু নাই। বরং লোকদের অন্তরে সামান্য পরিমাণ আল্লাহর ভয় ভীতি সৃষ্টি হবে। কাজেই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটি জায়েজ রাখা হয়েছে। কেননা হয়তবা আল্লাহ তা’য়ালার দয়ায় মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় এবং ধর্মীয় কর্মকান্ডের প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। কেননা বর্তমান মানুষের অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে দুনিয়ার কাজ কর্ম ও দুনিয়ার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেড়ে গেছে এবং অলসতা ও গাফলতি অধিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, কাজেই মাহফিলের ব্যবস্থার মাধ্যমে লোক জমায়েত করে দোয়া করা এবং খতম তারাহবীর পরে দোয়া করা, জানাযার নামাজের পর দোয়া করা, মৃতকে নিয়ে যাওয়ার সময় যিকিরে এলাহী করা এবং দোয়ার মাহফিলের ব্যবস্থা করা, যিকিরের মাহফিল করা, তাকবীর বলা ইত্যাদি ইত্যাদি জায়েজ। বরং মুস্তাহাসন, 

➠যেমন পবিত্র হাদীস শরীফে আছে :
من راه المسلمون حسنًا فهو عند الله حسن
অর্থাৎ মুসলমানগণ যা ভাল ও নেক কাজ মনে করে তা আল্লাহ তা’য়ালার নিকটও ভাল ও উত্তম। বর্তমান ফিতনা ফ্যাসাদ ও অলসতা এবং দুনিয়ার প্রতি মানুষ খুবই আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। আল্লাহ পাক মানুষদেরকে ভাল কাজ করার তৌফিক দান করুন।

❏ মাছআলা: (৯১)
মসজিদের ছাদ মসজিদের হুকুমভূক্ত।
سطع المسجد حكم المسجد
 
Top