[মিসরীয় শায়খ আবদুল বা’সিত বিন ইঊসুফ আল-গারীব সাহেবের প্রণীত “আল-তাম্বীহাত আল-মালীহা ‘আলা মা’ তারা’জা’ আল-আল্লামা আল-মুহাদ্দীস আল-আলবানী মিন আল-আহা’দিস আল-দা’য়িফা ওয়াল-সাহিহা” শীর্ষক আরবী বইয়ের আংশিক ইংরেজি অনুবাদ। অনুবাদক: ড: সাআদী কোসে। বঙ্গানুবাদ: এডমিন]


[Bengali translation of Dr Sa’di Kose’s booklet “When Shaykh Albani disagrees with himself.” Translator: Admin]


সূচিপত্র


ভূমিকা

উদাহরণসমূহ

হাদীস নং ১-১০

হাদীস নং ১১-২০

হাদীস নং ২১-৩০

হাদীস নং ৩১-৪০

হাদীস নং ৪১-৫০


ভূমিকা


পরম করুণাময় আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। 


শায়খ আলবানীর বইপত্র যাঁরা আরবীতে পড়েছেন, তাঁদের মাঝে সার্বিক উপলব্ধি হলো তিনি অহরহ-ই স্ববিরোধিতায় লিপ্ত হয়েছেন। একটি বইয়ে যদি তিনি কোনো হাদীসকে সহীহ বলেছেন, তবে অপরটিতে তিনি সেই হাদীসকে যয়িফ তথা দুর্বল বলে রায় দিয়েছেন। তাঁর সমালোচকবৃন্দ বলেন, তাঁর বইপত্রে প্রাপ্ত অসঙ্গতির পরিমাণ এতো বেশি যে তাকে সাধারণ মানবীয় ভুলত্রুটিরও অতীত বলা চলে, যে ধরনের মানবীয় (ছোটখাটো) ত্রুটি পূর্ববর্তী হাদীসের বিশারদদের বইয়ে পাওয়া যেতো [নোট: মিসরীয় সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী ড: আলী জুমুআ’ সাহেব বলেন, “শায়খ আলবানী তাঁর বইপত্রে প্রাপ্ত হাদীসসমূহের ৮৬% সম্পর্কেই নিজের মত পরিবর্তন করেন” (ভিডিও লিঙ্ক: http://youtu.be/D9oxpuOvsz8 দেখুন)। আরো দেখুন শায়খ হাসান বিন আলী আল-সাক্বক্বাফ রচিত ও ৩ খণ্ডে সমাপ্ত “তানাক্বুদা’ত আল-আলবানী আল-ওয়া’দিহা’ত…(আলবানীর স্পষ্ট অসঙ্গতিসমূহ)” শিরোনামের কিতাবটি। এছাড়াও দেখুন ভারতীয় হাদীসবেত্তা হাবীব আল-রহমান আল-আ’দযা’মী লিখিত “আল-আলবানী: শুযুশুযুহু ওয়া আখতা’উহু (আলবানীর একান্ত নিজস্ব মতামত ও ভ্রান্তি)” শীর্ষক চার খণ্ডবিশিষ্ট পুস্তিকা]। এমতাবস্থায় আলবানীর বিজ্ঞ সমালোচকমণ্ডলী বলেন, আহাদীস সম্পর্কে তাঁর এসব স্পষ্ট স্ববিরোধিতা ও বিচার-বিবেচনা নির্ভরযোগ্য বা আস্থাপূর্ণ নয়। [নোট: ড: মুহাম্মদ সাঈদ মামদূহ সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হয়: “আলবানী কর্তৃক সহীহ বা যয়ীফ হাদীস নির্ধারণ করা নির্ভরযোগ্য কি না?” তিনি উত্তর দেন: “আমি একটি বই লিখেছি যার শিরোনাম ‘আল-তা’আরীফ বি-আওহামি মান ক্বাসসামা আল-সুনান ইলা’ সহীহিন ওয়া দাঈফ’ (সুনানকে সহীহ ও দুর্বলে বিভক্তকারীর খামখেয়ালিপনার মুখোশ উন্মোচন); আর তাতে (৮ খণ্ডে) আলবানীর প্রতিটি হাদীসের বিশ্লেষণ অধ্যয়ন করেছি...বহু ক্ষেত্রে তিনি হাদীসকে কেন যয়ীফ/দুর্বল বলেছেন, তা ব্যাখ্যা করেননি; এমতাবস্থায় তাঁকে (অন্ধ) অনুসরণ করা ছাড়া কারো আর গত্যন্তর থাকে না (মানে তাঁর কথা-ই হয় দলিল)।…আমরা জানি তিনি অন্ধ অনুসরণ (তাক্বলীদ) করতে মানুষকে বারণ করে থাকেন, অথচ স্ববিরোধিতার পরিহাস, তিনি যদিও সুনানের অনেক হাদীসের ব্যাপারে গভীর বিশ্লেষণ পেশ করেন না, তথাপিও তিনি সবাইকে তাঁরই (অন্ধ) অনুকরণ-অনুসরণ করতে বলেন এবং তাঁর কথাকেই দলিল হিসেবে গ্রহণ করতে বলেন।...কিন্তু প্রশ্ন হলো: ‘হাদীস সহীহ না যয়ীফ, তা শ্রেণিকরণ করার বেলায় আলবানী যোগ্য/দক্ষ কি না?’ আমার সিদ্ধান্ত হলো: আল্লাহর কসম! আমি তাঁকে (গত) ত্রিশ বছর যাবৎ পর্যবেক্ষণ করেছি; আর (অতিরঞ্জন ছাড়াই) আমি সেসব মানুষের একজন, যে তাঁকে সবচেয়ে ভালোভাবে চিনি-জানি। আমি বলবো তাঁর হাদীস শ্রেণিকরণ মোটেও নির্ভরযোগ্য নয়। এটা এ কারণে যে তিনি ঘনঘন তাঁর মতামত পরিবর্তন করেন, প্রচুর ভুল করেন এবং তাঁর কাজে অনেক অসঙ্গতি বিরাজমান...” (ভিডিও দেখুন - www.youtube.com/watch?v=trY3n2Zswfo)] 


বর্তমানে আরবী ভাষায় অন্ততঃ চারটি পুস্তক রচিত হয়েছে, যেগুলোতে আলবানীর বইপত্রে প্রাপ্ত অসামঞ্জস্য সম্পর্কে লেখালেখি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি তাঁর সমালোচকদের রচিত (ওপরের একটি নোটে উল্লেখিত), অপর দুটি তাঁরই পক্ষীয়দের লেখা। ইনশা’আল্লাহ, আমি ওই বইগুলোর একটি শায়খ আবদুল বা’সিত বিন ইঊসুফ আল-গারীব সাহেবের প্রণীত “আল-তাম্বীহাত আল-মালীহা ‘আলা মা’ তারা’জা’ আল-আল্লামা আল-মুহাদ্দীস আল-আলবানী মিন আল-আহা’দিস আল-দা’য়িফা ওয়াল-সাহিহা” (সহীহ ও যয়ীফ হাদীস সম্পর্কে আলবানীর মত পরিবর্তনের ব্যাপারে চরম সতর্কবাণী) পুস্তকটির কিয়দংশ এখানে অনুবাদ করবো। 


এই অনুবাদে দুটি উদ্দেশ্য নিহিত:


১/ শায়খ আলবানীর অন্ধ ভক্তদের এ মর্মে জানতে দেয়া যে, তিনি আহাদীসকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শ্রেণিকরণ করেছেন। ভক্তকুল তাঁর কথার ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট একটি হাদীসের দুর্বল হওয়া সম্পর্কে যখন কোনো বইয়ে পড়েন, তখন কিন্তু তা পুরো চিত্র না-ও হতে পারে। তিনি হয়তো তাঁরই অন্য আরেকটি বইয়ে ওই হাদীসকে সহীহ বলে থাকতে পারেন। অতএব, কোনো নির্দিষ্ট হাদীসের ব্যাপারে আলবানীর সিদ্ধান্ত বর্ণনা করার সময় সবাইকে সাবধান হতে হবে।


২/ মাযহাব অনুসারীদের এ কথা জানাতে যে, কোনো মসজিদের প্রবেশ দ্বারে তাঁদেরকে যখন শায়খ আলবানীর অনুসারীরা বলেন নামাযে অমুক-অমুক কাজ করা যাবে না; কেননা শায়খ আলবানী এতদসংক্রান্ত অমুক-অমুক হাদীসকে সহীহ বা যয়ীফ বলেছেন, তখন যেনো তাঁরা উত্তর দেন: “আপনারা কি নিশ্চিত যে এই হাদীসটি সম্পর্কে শায়খ আলবানীর এটাই চূড়ান্ত ফায়সালা? আমরা তো আপনাদেরকে দেড় শতাধিক হাদীস দেখাতে পারবো, যেখানে তিনি স্ববিরোধী সাব্যস্ত হয়েছেন।”


উপরন্তু, শায়খ আল-গারীব সাহেব আলবানীর যাবতীয় অসামঞ্জস্য ও স্ববিরোধিতার বেশ কয়েকটি শ্রেণিবিন্যাস করেন। এগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ওই সমস্ত হাদীস, যেগুলো সম্পর্কে আলবানী স্পষ্ট বলেন যে তিনি কোনো নির্দিষ্ট একটি হাদীসকে (ইতিপূর্বে) দুর্বল বিবেচনা করতেন, কিন্তু এখন নানা কারণে তিনি তাঁর মত পাল্টেছেন এবং ওই হাদীসটিকে সহীহ ঘোষণা করছেন [নোট: আলবানী কর্তৃক হাদীসচর্চায় নেয়া যত্ন সম্পর্কে সহানুভূতির অবকাশ থাকে না তাঁরই প্রদর্শিত কিছু কারণ দেখে। যেমন - ‘মিশকা’ত আল-মাসা’বিহ’ গ্রন্থের ব্যাখ্যামূলক পুস্তকে তিনি নিম্নবর্ণিত হাদীসটি দুর্বল ঘোষণা করেন - হযরত মা আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি বলে প্রিয়নবী (ﷺ) দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতেন, তাকে বিশ্বাস কোরো না; কেননা তিনি বসা ছাড়া প্রস্রাব করতেন না।” এরপর আলবানী এই হাদীসটিকে সহীহ বিবেচনা করেন এবং তাঁর লিখিত ‘আল-সিলসিলা আল-সহীহা’ পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেন। তাতে তিনি লেখেন: “আমি ‘মিশকা’তুল মাসা’বিহ’ সম্পাদনা করার সময় বিশেষ কিছু পরিস্থিতির কারণে তাড়াতাড়ি তা করেছিলাম; যার দরুন সম্পূর্ণ গবেষণা করা এবং হাদীসটির সমস্ত বিবরণ ও সংস্করণ সংগ্রহ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি, যেটা আমার স্বভাব” (আবূল হাসান মুহাম্মদ হাসান আল-শায়খ কৃত ‘আল-তারাজূ’, ১:১৮)। আলবানী কর্তৃক ওই ‘বিশেষ পরিস্থিতি’গুলো কী ছিলো তা উল্লেখ করলে ভালো হতো। গবেষণা শেষ না করা পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করেননি কেন? নির্দিষ্ট ওই হাদীসটি সম্পর্কে তিনি নিশ্চুপ থাকেননি কেন, যেমনটি পূর্ববর্তী হাদীসবেত্তাবৃন্দ নিশ্চুপ থাকতেন যখন-ই তাঁরা কোন্ পথ নেবেন সে ব্যাপারে পর্যাপ্ত প্রমাণ না পেতেন? হাদীসের শ্রেণিকরণ কি আমানাহ-এ-কুবরা তথা সবচেয়ে বড় আমানতগুলোর একটি নয়, যেখানে মুহাদ্দীসবৃন্দকে ফায়সালা দেয়ার আগে সর্বাত্মক চেষ্টা করা বাধ্যতামূলক?]  দ্বিতীয় যে ক্যাটাগরী শায়খ আল-গারীব উল্লেখ করেন তা হলো, আলবানী তাঁর কোনো একটি বইয়ে একটি হাদীসকে যেভাবে শ্রেণিকরণ করেন, তাঁরই পরবর্তী কোনো বইয়ে সেই হাদীসটিকেই ভিন্নভাবে শ্রেণিকরণ করে থাকেন। তবে তিনি ইতিপূর্বেকার শ্রেণিকরণের কোনো উল্লেখ (পরবর্তী বইটিতে) করেননি। শায়খ আল-গারীব দাবি করেন যে আলবানীর পরবর্তী ফায়সালা তাঁরই পূর্ববর্তী রায়কে রহিত করে দেয়; আর আমরা এটা দেখতে পাই আলবানীর বইগুলোর প্রকাশনা তারিখ যাচাই করে। দৃশ্যতঃ সবাই এই অপ্রকাশিত রহিতকরণের বিধান সম্পর্কে জানেন না [নোট: আলবানীভক্ত শায়খ আসিম সাহেব বেলাল ফিলিপসের সাথে আলোচনায় স্বীকার করেছিলেন: “হ্যাঁ, আমি (নির্দিষ্ট) হাদীসটি ’সহীহ আল-জা’মে’তে দেখেছি এবং শায়খ আলবানী এটাকে হাসান (নির্ভরযোগ্য) শ্রেণিভুক্ত করেছেন। আমি জানি না তিনি অন্যত্র এটাকে দুর্বল শ্রেণিভুক্ত করেছেন কি না, তবে ‘সহীহ আল-জা’মে’তে আমি এ-ই পেয়েছি।” এটা নিশ্চিত যে শায়খ আসিম রহিতকরণের এই গোপন বিধি সম্পর্কে অবগত নন। তাহলে সেসব সাধারণ লোকের কী অবস্থা হবে, যারা বগলের নিচে তাঁরই দুআ’র বই নিয়ে মানুষকে সংশোধনের উদ্দেশ্যে দুনিয়া চষে বেড়ান?]। 


আপনারা শায়খ আল-গারীবের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সাথে একমত হন বা না-ই হন, বাস্তবতা হলো শায়খ আলবানী অহরহ আহাদিসকে নিজের প্রস্ততকৃত বইগুলোতে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে শ্রেণিভুক্ত করেন এবং তিনি তাঁর পাঠকমণ্ডলীকে সে সম্পর্কে সতর্ক-ও করেননি। তাই হাদীস বিষয়ে তাঁর বিচার-বিশ্লেষণের ওপর নির্ভর করার সময় সবাইকে অত্যন্ত সাবধান হতে হবে; আর এই পুস্তিকায় আমরা দুই শতাধিক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করবো কেন সাবধান হতে হবে তা দেখাতে।


- ড: সাআদী কোসে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

২০১৭ সাল


উদাহরণসমূহ                   


হাদীস সহীহ না যয়ীফ, সে সম্পর্কে শায়খ আলবানীর স্ববিরোধিতার কিছু দৃষ্টান্ত নিচে পেশ করা হলো।


হাদীস নং ১    


عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ السَّمْنِ وَالْجُبْنِ وَالْفِرَاءِ. فَقَالَ " الحَلاَلُ مَا أَحَلَّ اللهُ فِي كِتَابِهِ  وَالْحَرَامُ مَا حَرَّمَ اللهُ فِي كِتَابِهِ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ مِمَّا عَفَا عَنْهُ ". قَالَ أَبُو عِيسَى وَفِي الْبَابِ عَنِ الْمُغِيرَةِ. وَهَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مَرْفُوعًا إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ        


অর্থ: মহানবী (ﷺ)’কে চর্বি, পনির ও (প্রাণির) লোমশ চামড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। অতঃপর তিনি বলেন, “হালাল হচ্ছে তা-ই, যা আল্লাহতা’লা তাঁর ঐশীগ্রন্থে বৈধ করেছেন; হারাম হচ্ছে তা-ই যা তিনি তাঁরই পবিত্র কিতাবে অবৈধ করেছেন; আর যা সম্পর্কে তিনি নীরব থেকেছেন, তা তাঁরই ক্ষমাকৃত বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত।” 


শায়খ আলবানী নিজ “গায়্যাত আল-মারা’ম” পুস্তকে বলেন, “আল-তিরমিযী বর্ণিত এই হাদীসটি যয়ীফ/দুর্বল।”


অথচ তিনি তাঁর প্রণীত “সহীহ সুনান আল-তিরমিযী” গ্রন্থে একই হাদীসকে হাসান/নির্ভরযোগ্য শ্রেণিভুক্ত করেন।


হাদীস নং ২


عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ مَنْ حَدَّثَكُمْ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَالَ قَائِمًا فَلاَ تُصَدِّقُوهُ مَا كَانَ يَبُولُ إِلاَّ جَالِسًا


অর্থ: হযরত মা আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি বলে প্রিয়নবী (ﷺ) দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতেন, তাকে বিশ্বাস কোরো না; কেননা তিনি বসা ছাড়া প্রস্রাব করতেন না।”


শায়খ আলবানী তাঁর ‘আল-মিশকাহ’ পুস্তকে বলেন, “এর সনদ যয়ীফ/দুর্বল।”


অথচ ‘আল-সিলসিলা আল-সহীহা’ কিতাবে তিনি এটাকে সহীহ/বিশুদ্ধ ঘোষণা করেন। [নোট: আমি (ড: সাআদী কোসে) Hadith - The Book of Purification - Sunan an-Nasa'i - Sunnah.com ওয়েবসাইটে এ হাদীসটি সম্পর্কে নিচের বক্তব্য পেয়েছি: “শ্রেণি: হাসান (দারুস্ সালাম)।” আমি নিশ্চিত নই দারুস্ সালাম কীভাবে এ হাদীসের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে এটা হাসান (নির্ভরযোগ্য)। তারা হয় শায়খ আলবানীর ওপর নির্ভর করে না, নতুবা শায়খ আল-গারীবের গোপন রহিতকরণ বিধি হতে আলাদা অন্য কোনো নিয়ম তারা মেনে চলে]


হাদীস নং ৩   


عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ، أَنَّهُ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ أُمَّ سَعْدٍ مَاتَتْ فَأَىُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: الْمَاءُ، قَالَ فَحَفَرَ بِئْرًا وَقَالَ هَذِهِ لأُمِّ سَعْدٍ


অর্থ: হযরত সাআদ ইবনে উবাদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’কে বলেন: হে আল্লাহর নবী (ﷺ)! আমার মাতা ইনতেক্বাল করেছেন; (তাঁর জন্যে) কোন্ (ধরনের) সাদাক্বাহ সেরা হবে? প্রিয়নবী (ﷺ) উত্তর দেন: “পানি।” অতঃপর তিনি একটি কূপ খনন করেন এবং বলেন: “এটা সাআদের মায়ের জন্যে।”


আলবানী নিজ ‘আল-মিশকাত’ কিতাবে বলেন, “এই হাদীসের সনদ দুর্বল।”


পক্ষান্তরে, সহীহ সুনানে আবী দাউদ পুস্তকে তিনি এটাকে হাসান ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ৪


عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ خَالِدٍ، قَالَ أَبُو دَاوُدَ قَالَ إِبْرَاهِيْمُ بْنُ مَهْدِيٍّ السُّلَمِيُّ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جِدِّهِ، وَكَانَتْ لَهُ صُحْبَةٌ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا سَبَقَتْ لَهُ مِنَ اللهِ مَنْزِلَةٌ لَمْ يَبْلُغْهَا بِعَمَلِهِ ابْتَلاَهُ اللهُ فِي جَسَدِهِ أَوْ فِي مَالِهِ أَوْ فِي وَلَدِهِ. قَالَ أَبُو دَاوُدَ زَادَ ابْنُ نُفَيْلٍ. ثُمَّ صَبَّرَهُ عَلَى ذَلِكَ. ثُمَّ اتَّفَقَا حَتَّى يُبُلِغَهُ الْمَنْزِلَةَ الَّتِي سَبَقَتْ لَهُ مِنَ اللهِ تَعَالَى   


অর্থ: হযরত মুহাম্মদ ইবনে খালিদ আস্ সুলামী (رضي الله عنه) কর্তৃক তাঁর পিতা হতে বর্ণিত; তিনি বর্ণনা করেন তাঁর পিতা হতে, যিনি রাসূলে পাক (ﷺ)’এর সাহাবী ছিলেন; তিনি বলেন: আমি প্রিয়নবী (ﷺ)’কে বলতে শুনেছি: “আল্লাহতা’লা তাঁর কোনো বান্দার জন্যে ইতিপূর্বে যদি কোনো মানযিল তথা উচ্চমর্যাদাপূর্ণ স্তর বিধান করেন, যা ওই বান্দা তাঁর আমল/পুণ্যদায়ক কর্মের অনুশীলন দ্বারা অর্জন করেননি, তবে তিনি তাঁকে তাঁর শরীর, অথবা তাঁর সম্পদ-সম্পত্তি কিংবা তাঁর আওলাদ-ফর্জন্দের ক্ষেত্রে আক্রান্ত করেন।” 


ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) বলেন: ইবনে নুফাইল (رحمة الله) তাঁর সংস্করণে যুক্ত করেন: “আল্লাহ এরপর তাঁকে তা সহ্য করার সামর্থ্য দান করেন।” সর্বসম্মত সংস্করণটিতে বর্ণিত হয়: “যাতে আল্লাহ পাক তাঁর ওই বান্দাকে ইতিপূর্বে তাঁরই বিধানকৃত উচ্চমর্যাদার স্তরে উন্নীত করতে পারেন।”


শায়খ আলবানী নিজ ‘আল-মিশকাত’ কিতাবে বলেন, “এর সনদ যয়ীফ/দুর্বল।”


অতঃপর আলবানী তাঁর ‘সহীহ সুনানে আবী দাউদ’ গ্রন্থে এই হাদীসটিকে সহীহ/বিশুদ্ধ বলে ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ৫


عن ابن عباس (رضى الله عنهما) ـ مرفوعا: شر البيوت الحمام، ترفع فيه الاصوات، وتكشف فيه العورات


অর্থাৎ, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে মারফু’ (উন্নীত) হাদীস হিসেবে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন: “বসতঘরের মাঝে হাম্মা’ম তথা গোসলখানা হচ্ছে সবচেয়ে মন্দ স্থান। সেখানেই উচ্চস্বরে কথা বলা (মানে তর্কাতর্কি) হয় এবং (দেহের) গোপন অঙ্গ উন্মুক্ত করা হয়।” 


শায়খ আলবানী তাঁর ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াল-তারহীব’ পুস্তকে এই হাদীসটিকে ‘হাসান’ (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন।


অথচ ‘দয়ীফ আল-জামে’ কিতাবে তিনি এটাকে ‘যয়ীফ’ (দুর্বল) ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ৬


عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: ثَلَاثَتٌ لاَ تَقْرَبُهُمُ الْمَلاَئِكَةُ جِيفَةُ الْكَافِرِ وَالْمُتَضَمِّخُ بِالْخَلُوقِ وَالْجُنُبُ إِلاَّ أَنْ يَتَوَضَّأَ 


অর্থাৎ, হযরত আম্মার ইবনে এয়াসির (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; প্রিয়নবী (ﷺ) ফরমান: “ফেরেশতাকুল তিন ধরনের মানুষের কাছে আসেন না - কাফেরের মৃতদেহ; সৃষ্টিকুল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যে লোক নিজেকে খাটো করে; এবং যে ব্যক্তি যৌনমিলনে অপবিত্র/নাপাক - যতোক্ষণ না সে অযূ করে।”


শায়খ আলবানী তাঁর ‘আল-মিশকাত’ গ্রন্থে বলেন, “এর বর্ণনাকারীবৃন্দ নির্ভরযোগ্য, তবে হযরত আল-হাসান আল-বসরী (رحمة الله) ও হযরত আম্মার (رضي الله عنه)’এর মাঝে (সনদে) একটি বিঘ্ন (মুনক্বাতেঈ’) ঘটেছে; কেননা প্রথমোক্ত জন শেষোক্ত জনের কাছ থেকে এটা শোনেন নি, যেমনটি আল-মুনযিরী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন।”


কিন্তু ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াল-তারহীব’ পুস্তকে তিনি এই হাদীসটিকে ‘হাসান’ (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ৭   


عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، قَالَ حَدَّثَنِي مَنْ، سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ قَالَ أَبُو الْقَاسِمِ (ﷺ): إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ فِي الشَّمْسِ. وَقَالَ مَخْلَدَ فِي الْفَىْءِ. فَقَلَصَ عَنْهُ الظِّلُّ وَصَارَ بَعْضُهُ فِي الشَّمْسِ وَبَعْضُهُ فِي الظِّلِّ فَلْيَقُمْ

 

অর্থাৎ, হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; আবূল ক্বাসিম (মানে নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন: “তোমাদের কেউ যখন সূর্যের (রশ্মির) মধ্যে থাকে (মাখলাদের সংস্করণে ‘ফায়ে’ বলা হয়েছে), তখন ছায়া তার কাছ থেকে সরে যায় আর সে আংশিক সূর্যে ও আংশিক ছায়াতে থাকে। এমতাবস্থায় তার উঠে পড়া উচিৎ।” 


শায়খ আলবানী নিজ ‘আল-মিশকাত’ গ্রন্থে বলেন: “এর সনদ দুর্বল।’


অথচ ‘আল-সিলসিলা আল-সহীহা’ পুস্তকে তিনি এটাকে সহীহ/বিশুদ্ধ ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ৮


عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ الْجُمُعَةُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فِي جَمَاعَةٍ إِلاَّ أَرْبَعَةً عَبْدٌ مَمْلُوكٌ أَوِ امْرَأَةٌ أَوْ صَبِيٌّ أَوْ مَرِيضٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ طَارِقُ بْنُ شِهَابٍ قَدْ رَأَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَلَمْ يَسْمَعْ مِنْهُ شَيْئًا 


অর্থ: হযরত তা‘রিক্ব ইবনে শিহা’ব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; প্রিয়নবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান: “জুমুআ’র নামায প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে অত্যাবশ্যক (ধর্মীয়) অনুশীলন, চারজন ব্যতিরেকে: গোলাম, নারী, ছেলে ও অসুস্থ ব্যক্তি।”


ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) বলেন, সাহাবী তা’রিক্ব বিন শিহা’ব (رضي الله عنه) মহানবী (ﷺ)‘কে দেখেছিলেন, কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কিছু শোনেন নি।


শায়খ আলবানী নিজ ‘আল-মিশকাত’ পুস্তকে বলেন, “এ হাদীসের বর্ণনাকারীবৃন্দ ‘সিক্বা’ত’ তথা আস্থাভাজন মুসলিম শরীফের বর্ণনাকারীদের হতে; ব্যতিক্রম এই যে আবূ দাউদ (رحمة الله) এটাকে ‘মুনক্বাতেঈ’ হাদীস বলে ইঙ্গিত করেছেন।”


অথচ শায়খ আলবানীর প্রণীত ‘সহীহ আল-জা’মে’ গ্রন্থে তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। 


হাদীস নং ৯


عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَهُ أَنْ يُجَهِّزَ جَيْشًا فَنَفِدَتِ الإِبِلُ فَأَمَرَهُ أَنْ يَأْخُذَ فِي قِلاَصِ الصَّدَقَةِ فَكَانَ يَأْخُذُ الْبَعِيرَ بِالْبَعِيرَيْنِ إِلَى إِبِلِ الصَّدَقَةِ


অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আল-’আস্ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত: নবী পাক (ﷺ) তাঁকে একটি (সৈন্য) বাহিনি প্রস্তুত করতে আদেশ করেন; কিন্তু তাতে উট অপর্যাপ্ত ছিলো। এমতাবস্থায় রাসূল (ﷺ) তাঁকে সাদাক্বাহ’র কম বয়সী উটগুলো রেখে দেয়ার নির্দেশ দেন; আর তিনি যখন একটি উটকে দুটি দ্বারা বদল করার জন্যে নিচ্ছিলেন, তৎক্ষণাৎ সাদাক্বার উটগুলো আগমন করে।


শায়খ আলবানী নিজ ’আল-মিশকাত’ বইয়ে বলেন, ”এর সনদ দুর্বল।”


অথচ তাঁর ‘ইরওয়া আল-গালীল’ পুস্তকে তিনি এটাকে ‘হাসান’ (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন এবং এই হাদীসটি যে দুটো ভিন্ন ভিন্ন সনদ তথা সূত্রে (তরীক্বাইন) বর্ণিত হয়েছে, তা প্রদর্শন করেন। [অনুবাদকের নোট: আমি https://sunnah.com/abudawud/23/32 শীর্ষক ওয়েবসাইটে এ হাদীস সম্পর্কে নিচের উক্তিটি পাই: “শ্রেণি: যয়ীফ (আলবানী)। দৃশ্যতঃ সুন্নাহ-ডট-কম শায়খ আলবানীর পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের বেলায় শায়খ আল-গারীবের গোপন রহিতকরণ নিয়ম মেনে চলে না]  


হাদীস নং ১০ 


عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا إِلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ


অর্থ: হযরত মা আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত: “সওয়ারীরা আমাদের অতিক্রম করতো যখন আমরা প্রিয়নবী (ﷺ)’র সাথে পবিত্র এহরাম বাঁধা অবস্থায় থাকতাম। তারা আমাদের সাথে চলতে থাকলে আমাদের (মানে হুজূরের বিবিবৃন্দের) মধ্যে কেউ একজন তাঁর বহিঃবস্ত্রাবরণ পবিত্র শির হতে মুখমণ্ডল অবধি নামিয়ে নিতেন, আর তারা অতিক্রম করে চলে গেলে আমরা আমাদের মুখ আবার অনাবৃত করতাম।”


শায়খ আলবানী নিজ ‘ইরওয়া’ গ্রন্থে এই বর্ণনাকে যয়ীফ/দুর্বল বলে অভিহিত করেন।


অথচ তাঁর ‘জিলবা’ব আল-মারাহ আল-মুসলিমা’ পুস্তকে তিনি এটাকে ‘হাসান’/নির্ভরযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ১১ 


عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ كُنَّا نَقُومُ فِي الصُّفُوفِ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم طَوِيلاً قَبْلَ أَنْ يُكَبِّرَ قَالَ وَقَالَ ”إِنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الَّذِيْنَ يَلُونَ الصُّفُوفَ الأُوَلَ وَمَا مِنْ خَطْوَةٍ اَحَبَّ إِلَى اللهِ مِنْ خَطْوَةٍ يَمْشِيهَا يَصِلُ بِهَا صَفًّا”.


অর্থ: হযরত বারাআ ইবনে আযিব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “আল্লাহতা’লা ও তাঁর ফেরেশতাকুল তাদেরই প্রতি শান্তি বর্ষণ করেন, যারা (নামাযে) প্রথম সারির (সবচেয়ে) কাছে থাকে। (নামাযের) সারিতে যোগ দেয়ার জন্যে একটি পদক্ষেপের চেয়ে আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় আর কোনো পদক্ষেপই নেই।” 


শায়খ আলবানী এই হাদীসটিকে শ্রেণিকরণ করা হতে (সাকাতা আনহু) বিরত থাকেন নিজ ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াল-তারহীব’ পুস্তকে। 


অথচ তাঁর ‘দয়ীফ আল-জা’মী’ বইয়ে তিনি এটাকে যয়ীফ তথা দুর্বল ঘোষণা করেন। [সুন্নাহ-ডট-কম বলে: ‘শ্রেণি হাসান (দারুস্ সালাম)’]


হাদীস নং ১২  


عن جابر بن عبد الله رضي الله عنه قال: سألت النبي صلى الله عليه وسلم عن مسح الحصى في الصلاة؛ فقال: ”واحدة، ولو تمسك عنها خير لك من مائة ناقة، كلها سود الحدق”.هـ


অর্থ: হযরত জাবের ইবনে আবদিল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: আমি মহানবী (ﷺ)’কে নামাযে নুড়িপাথর অপসারণের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেন, “স্রেফ একটি; আর যদি তুমি বিরত থাকো, তাহলে সেটা তোমার জন্যে ১০০টি মাদী উটের চেয়েও শ্রেয়তর হবে...।” 


শায়খ আলবানী নিজ ‘সহীহ ইবনে খুযায়মা’ পুস্তকের সংস্করণে বলেন, “এর সনদ দুর্বল (যয়ীফ)।”


অথচ তাঁর ‘তারগীব ওয়াল তারহীব’ গ্রন্থে তিনি এই হাদীসটিকে সহীহ/বিশুদ্ধ ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ১৩ 


عَنْ يَحْيَ بْنِ أَبِي إِسْحَاقَ الْهُنَائِيِّ، قَالَ سَأَلْتُ أَنَسَ بْنِ مَالِكٍ الرَّجُلً مِنَّا يُقْرِضُ أَخَاهُ الْمَالَ فَيُهْدِي لَهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ”إِذَا أَقْرَضَ أَحَدُكُمْ قَرْضًا فَأَهْدَى لَهُ أَوْ حَمَلَهُ عَلَى الدَّابَّةِ فَلاَ يَرْكَبْهَا وَلاَ يَقْبَلْهُ إِلاَّ أَنْ يَكُونَ جَرَى بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ قَبْلَ ذَلِكَ”


অর্থ: হযরত ইয়াহইয়া বিন আবী ইসহাক্ব (رحمة الله) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: আমি হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه)’কে জিজ্ঞেস করি, ‘কোনো ব্যক্তি তাঁর ভাইকে কর্জ দিলে এবং গ্রহীতা (এর বিপরীতে) তাঁকে কোনো উপহার দিলে কী হবে?’ তিনি উত্তরে বলেন, প্রিয়নবী (সাল্লাল্লািহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন: “তোমাদের মধ্যে কেউ কারো কাছ থেকে ধার-কর্জ নিয়ে কর্জদাতাকে কিছু উপহার দিলে বা নিজ সওয়ারের পশুর ওপর চড়তে দিলে কর্জদাতার উপহারটি গ্রহণ বা সওয়ারের পশুর ওপর চড়া উচিৎ হবে না, যদি না ইতিপূর্বে তাদের মধ্যে এ রকম আচার-আচরণ থেকে থাকে।”


শায়খ আলবানী নিজ ‘আল-মিশকাত’ কিতাবে বলেন, “এর সনদ জাইয়্যেদ তথা উত্তম। 


অথচ তাঁর কৃত ‘দায়ীফ আল-জামে’ পুস্তকে তিনি এই হাদীসকে দুর্বল ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ১৪


عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ، قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّا نَصِيدُ الصَّيْدَ فَلاَ نَجِْدُ سِكِّينًا إِلاَّ الظِّرَارَ وَشِقًَةَ الْعَصَا. قَالَ ”أَمْرِرِ الدَّمَ بِمَا شِئْتَ وَاذْكُرِ اسْمَ اللهِ عَلَيْهِ”.


অর্থ: হযরত আদী ইবনে হা’তিম (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’এর কাছে আরয করি, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমরা পশু/পাখি শিকার করি, কিন্তু পাথরের ধারালো দিক বা লাঠি ছাড়া কিছু পাই না সেটাকে হত্যা/জবাই করার ক্ষেত্রে।’ তিনি উত্তরে বলেন, “যে কোনো কিছু দ্বারা তুমি সেটার রক্ত প্রবাহিত কোরো এবং (ওই সময়) আল্লাহর নামের যিকর কোরো।”


শায়খ আলবানী নিজ ‘দয়ীফ আল-জামে’ পুস্তকে বলেন, “এটা যয়ীফ।”


অথচ তাঁর ‘সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ, গ্রন্থে তিনি এটাকে সহীহ বলেন।


হাদীস নং ১৫ 


عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ”الْجُمُعًةُ عَلَى كُلِّ مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ”. قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَى هَذَا الْحَدِيثَ جَمَاعَةٌ عَنْ سُفْيَانَ مَقْصُورًا عَلَى عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو لَمْ يَرْفَعُوهُ وَإِنَّمَا أَسْنَدَهُ قَبِيصَةُ 


অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: প্রিয়নবী (ﷺ) বলেন, “(শুক্রবারের) জুমুআ’র নামায সে ব্যক্তির প্রতি বিধেয় হয়, যে আযান শ্রবণ করে।” ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) বলেন, এই হাদীসখানি সুফিয়ান হতে এক দল বর্ণনাকারী রওয়ায়াত করেছেন। তাঁরা এটাকে মহানবী (ﷺ)’র বাণী হিসেবে বর্ণনা করেননি; শুধু ক্বাবীসাহ-ই এটাকে হাদীসে নববী (ﷺ) বলে বর্ণনা করেন। 


শায়খ আলবানী আপন ‘আল-মিশকাত’ পুস্তকে বলেন, “এটা দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে।”


অথচ তাঁর ‘সহীহ আল-জামি’ বইয়ে তিনি এটাকে হাসান বলেন। [সুন্নাহ-ডট-কম বলে: এটা দুর্বল এবং সঠিক মত হলো, এটা স্থগিতকৃত হাদীস এবং উন্নীত নয় (দায়ীফুন ওয়াল-সাহীহু ওয়াক্বফুহ)]


হাদীস নং ১৬ 


عن عبادة بن الصامت رضي الله عنه قَالَ: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ”أن أول ما خلق الله القلم؛ فقال له اكتب، فقال ما اكتب؟ قال: اكتب القدر؛ فكتب ما كان وما هو كائن إلى الأبد”. هـ


অর্থ: হযরত উবাদাহ ইবনে আল-সা’মিত (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, “নিশ্চয় আল্লাহ প্রথমে সৃষ্টি করেন কলম। অতঃপর তিনি বলেন, ‘লেখো তাক্বদীর সম্পর্কে, যা কিছু ঘটেছে এবং যা যা ঘটবে শেষ অবধি’।” [বঙ্গানুবাদকের নোট: এই হাদীসটি হযরত জাবের (رضي الله عنه)’এর বর্ণিত সৃষ্টির সূচনার বৃত্তান্তসম্বলিত মহানবী (ﷺ)’র নূর-বিষয়ক হাদীসটির আলোকে ব্যাখ্যা করতে হবে। নতুবা বিভ্রান্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে] 


শায়খ আলবানী বলেন, “এর এসনাদ গরীব (বিরল)।” 


অথচ আল-মিশকাত গ্রন্থে তিনি বলেন, “এই হাদীস নিঃসন্দেহে সহীহ (বিশুদ্ধ)।”


হাদীস নং ১৭


عن جابر رضي الله عنه قال: سألت رجل رسول الله صلى الله عليه وسلم: أينام أهل الجنة؟ قال: ”النوم اخو الموت، ولا يموت أهل الجنة” رواه البيهقي في شعب الإيمان.هـ 


অর্থ: হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত: জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’কে প্রশ্ন করেন, ‘বেহেশতবাসী মানুষ কি ঘুমোন?’ উত্তরে তিনি বলেন: “ঘুম হচ্ছে মৃত্যুর একটি আকার (আখ আল-মওত); আর বেহেশতবাসীরা মৃত্যু বরণ করে না।”


শায়খ আলবানী ‘আল-মিশকাত’ গ্রন্থে বলেন, “এর সনদ দুর্বল (দয়ীফ)।”


অথচ ‘সহীহ আল-জামে’ পুস্তকে তিনি এটাকে সহীহ (বিশুদ্ধ) ঘোষণা করেন। 


হাদীস নং ১৮ 


عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا اتَّبَعَ الْجَنَازَةَ لَمْ يَقْعُدْ حَتَّى تُوضَعَ فِي اللَّحْدِ فَعَرَضَ لَهُ حَبْرٌ فَقَالَ هَكَذَا نَصْنَعُ يَا مُحَمَّدُ. قَالَ فَجَلَسَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ ”خَالِفُوهُمْ”. قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ. وَبِشْرُ بْنُ رَافِعٍ لَيْسَ بِالْقَوِيِّ فِي الْحَدِيثِ. 


অর্থ: হযরত উবাদাহ ইবনে সা’মিত (رضي الله عنه) বলেন: “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন জানাযায় (তথা মুসলিম প্রথাগত শবযাত্রায়) যেতেন, তখন তিনি বসতেন না, যতোক্ষণ না ’লাহদ’ স্থানে মুর্দাকে স্থাপন করা হতো। জনৈক আরব তাঁর কাছে এসে আরয করেন, ‘এটাই আমরা করে থাকি, হে মুহাম্মদ (ﷺ)’।” তিনি (হযরত উবাদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: “অতঃপর মহানবী (ﷺ) উপবিষ্ট হন এবং বলেন, ‘তাদের সাথে মতপার্থক্য করো’(মানে যুক্তিতর্ক করে বোঝাও)।” 


ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেন: “এটা গরীব (বিরল) হাদীস এবং বিশর ইবনে রা’ফি’ কোনো নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী নয় (লাইসা বি ক্বাওয়ী)।”


শায়খ আলবানী ‘আল-মিশকাত’ গ্রন্থে বলেন, “তবে এটা ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) কর্তৃক একটি ভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে, যা’তে আবদুল্লাহ বিন সুলায়মান তার পিতা হতে বর্ণনা করেন; আর এদের দু জন-ই দুর্বল (বর্ণনাকারী)।”


অথচ ‘সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ’ পুস্তকে তিনি এর সনদকে হাসান (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন। [সুন্নাহ-ডট-কম বলে, শ্রেণি: দঈফ (দারুস্ সালাম)] 


হাদীস নং ১৯


عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ” كَفَى بِالْ مَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ “.


অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন রাসূলে করীম (ﷺ)’এর হাদীস, যিনি এরশাদ ফরমান: “কোনো ব্যক্তির জন্যে এটাই যথেষ্ট পাপ যে, সে যার দেখাশুনা করে তার প্রতি অবহেলা করে।” أخرجه أبو داود، كتاب الزكاة، باب في صلة الرحم، (3/ 118)، رقم: (1692)، وصححه الألباني في المشكاة، رقم: (3346)


শায়খ আলবানী ‘গায়্যাত আল-মারা’ম’ পুস্তকে বলেন, “এটা এর শব্দচয়নে দুর্বল।” 


অথচ ‘সহীহ সুনানে আবী দাউদ’ কিতাবে তিনি এটাকে হাসান (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ২০


 لا تجدون أولئك خياركم قاله في سائر من يضربون نسائهم


অর্থ: “তোমরা (এমন) পাবে না যে, (যারা আপন নারী/স্ত্রীদের আঘাত করে) তোমাদের মাঝে (তারা) সেরা....।” 


শায়খ আলবানী ‘গায়্যাত আল-মারা’ম’ বইয়ে বলেন, “এটা দুর্বল এবং সর্ব-হযরত আবূ দাউদ ও নাসাঈ (رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِمَا) নিজ ‘আল-কুবরা’ গ্রন্থে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন।”


অথচ ‘সহীহ সুনানে আবী দাউদ’ পুস্তকে তিনি এটাকে সহীহ ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ২১ 


عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ لَمَّا مَاتَ إِبْرَاهِيمُ ابْنُ رَسُولِ اللهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ صَلَّ عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ وَقَالَ: إِنَّ لَهُ مُرْضِعًا فِي الْجَنَّةِ وَلَوْ عَاشَ لَكَانَ صِدِّيقًا نَبِيًّا. وَلَو عَشَا لَعَتَقَتْ أَخْوَالُهُ الْقِبْطُ وَمَا اسْتُرِقَّ قِبْطِيٌّ 


অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’এর সাহেবজাদা হযরত ইবরাহীম (رضي الله عنه) বেসালপ্রাপ্ত হন, তখন তিনি দুআ করে বলেন, “জান্নাতে তার জন্যে একজন দুগ্ধ-মাতা রয়েছে; আর যদি সে বাঁচতো, তাহলে সিদ্দীক্ব (সত্যনিষ্ঠ বুযর্গ) ও নবী হতো। যদি সে বাঁচতো, তাহলে তার মিসরীয় খালুদের মুক্ত করে দেয়া হতো এবং কোনো মিসরীয়কেই আর কখনো দাসত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হতো না।”


শায়খ আলবানী ‘দায়ীফ আল-জামে’ কিতাবে বলেন, “এটা দুর্বল।” 


অথচ ‘সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে তিনি এটাকে সহীহ বলে ঘোষণা করেন। [সুন্নাহ-ডট-কম বলে: শ্রেণি - দয়ীফ (দারুস্ সালাম)]


হাদীস নং ২২


حديث نعيم الاشجعين ـ رضي الله عنه ـ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ”... فان الحرب خدعة” .هـ 


অর্থ: হযরত নাঈম আশজাঈন (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে প্রিয়নবী (ﷺ) বলেন: “নিশ্চয় যুদ্ধ হচ্ছে কৌশল।” 


শায়খ আলবানী ‘দায়ীফ আল-জামে’ পুস্তকে বলেন, “এটা দয়ীফ/দুর্বল।” 


অথচ ‘সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে তিনি এটাকে হাসান/নির্ভরযোগ্য ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ২৩


عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ قَالَ كَانَ بِالْمَدِينَةِ رَجُلاَنِ أَحَدُهُمَا يَلْحَدُ وَالآخَرُ لاَ يَلْحَدُ فَقَالُوا أَيُّهُمَا جَاءَ أَوَّلُ عَمِلَ عَمَلَهُ . فَجَاءَ الَّذِي يَلْحَدُ فَلَحَدَ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم


অর্থ: হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ (رضي الله عنه) বলেন: “মদীনা শরীফে দু জন ব্যক্তি ছিলেন, যাঁরা কবর খুঁড়তেন। তাঁদের একজন কবরের পার্শ্ব-দেয়ালে মরদেহের জন্যে একটি যথাযোগ্য স্থান রাখতেন, অপরজন তা রাখতেন না। আর তাঁরা বলেন, ‘যারটা প্রথমে আসে, তিনি কাজটি করতে পারবেন।’ এমতাবস্থায় যিনি যথাযোগ্য স্থানসহ কবর খুঁড়তেন, তাঁরটা প্রথমে আসে এবং তিনি রাসূলে পাক (ﷺ)’এর রওযা শরীফের মাটি খনন করেন।”


শায়খ আলবানী ‘আল-মিশকাত’ কিতাবে বলেন: “এর সনদ দুর্বল।”


অথচ ‘সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ’ পুস্তকে তিনি এটাকে হাসান/নির্ভরযোগ্য ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ২৪  


عن عائشة ـ رضي الله عنها ـ ، قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: الدواوين ثلاثة، ديوان لا يغفر لله؛ الاشتراك بالله.. هـ


অর্থ: হযরত আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন যে মহানবী (ﷺ) এরশাদ করেছেন: “গুনাহ-খাতা (যা লিপিবদ্ধ হয়) তিন ধরনের; প্রথমটি আল্লাহতা’লা ক্ষমা করেন না। তা হলো, আল্লাহতা’লার সাথে শরীক স্থাপন...।”


শায়খ আলবানী ‘আল-মিশকাত’ গ্রন্থে বলেন, “এটা দুর্বল সনদে ইমাম আহমদ (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন।” 


অথচ ‘আল-সিলসিলা আল-সহীহাহ’ পুস্তকে তিনি এটাকে হাসান ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ২৫  


عَنْ جَابِرٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ” إِذَا اسْتَهَلَّ الصَّبِيُّ صُلِّيَ عَلَيْهِ وَوَرِثَ “


অর্থ: হযরত জাবের (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে মহানবী (ﷺ) এরশাদ করেছেন: “শিশু যদি কেঁদে থাকে এবং (সে মারা গেলে) তার জন্যে (জানাযার) নামায পড়তে হবে; আর সে একজন ওয়ারিস্।”


শায়খ আলবানী নিজ ‘আহকাম আল-জানায়েয’ পুস্তকে এই হাদীসটিকে দুর্বল (যয়ীফ) ঘোষণা করেন।


অথচ ‘সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে তিনি এটাকে বিশুদ্ধ (সহীহ) বলেন।


হাদীস নং ২৬   


عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ” مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِيْ جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الأُولَى كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاقِ “.


অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে প্রিয়নবী (ﷺ) ফরমান: “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্যে জামাআতে চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীর ধরে নামায আদায় করবে, তার জন্যে দুটি পাপ মোচন করা হবে: পাপমুক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে এবং নেফাক্ব (মোনাফেক্বী) তথা কপটতা থেকেও।”


শায়খ আলবানী ‘আল-মিশকাত’ কিতাবে বলেন, “হাবীব বিন আবী সা’বেত, যিনি মুদাল্লিস তথা মিথ্যে বর্ণনাকারী, আর যিনি এই হাদীসকে ’আনআনা’ তথা পরোক্ষভাবে বর্ণনা করেছেন, তিনি না হলে আমরা এটাকে সহীহ হাদীস ঘোষণা করতাম।”


অথচ ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াল-তারহীব’ এবং ‘আল-সিলসিলা আল-সহীহা’ পুস্তক দুটোতে তিনি হাদীসটিকে হাসান (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন। 


হাদীস নং ২৭


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَنْ قَتَلَ مُعَاهِدًا لَهُ ذِمَّةُ اللهِ وَذِمَّةُ رَسُولِهِ لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ وَإِنْ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ سَبْعِينَ عَامًا “. 


অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে নবী পাক বলেন: “কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)’এর সুরক্ষাপ্রাপ্ত মু’আহিদকে হত্যা করলে বেহেশতের সুঘ্রাণ শুঁকতে পারবে না, যদিও এর সুগন্ধ সত্তর বছরের দূরত্ব হতে পাওয়া যেতে পারে।” 


শায়খ আলবানী ‘দায়ীফ আল-জামে’ পুস্তকে বলেন, “এটা দুর্বল।” 


অথচ তাঁর ‘সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে তিনি এটাকে বিশুদ্ধ (সহীহ) ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ২৮


عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ” لاَ يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِي الْمَاءِ النَّاقِعِ “.  


অর্থ: হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; প্রিয়নবী (ﷺ) বলেন: “তোমাদের মধ্যে কেউই স্থির পানিতে প্রস্রাব করবে না।”


শায়খ আলবানী ’দায়ীফ আল-জামে’ কিতাবে বলেন, “এটা ভীষণ দুর্বল (দায়ীফ জিদ্দান)।”


অথচ তাঁর ‘সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে তিনি এটাকে হাসান (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ২৯


عن أبي خراش حدرد بن أبي حدرد الأسلمي، ويقال السلمي الصحابي رضى الله عنه أنه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول: ” من هجر أخاه سنة فهو كسفك دمه “. هـ 


অর্থ: হযরত আবূ খিরাশ হাদরাদ বিন আবী হাদরাদ আল-আসলামী (رضي الله عنه) বলেন, আমি মহানবী (ﷺ)’কে শুনেছি এ কথা বলতে: “যে ব্যক্তি তার ভাইকে ছেড়ে এক বছর পর্যন্ত দূরে থাকলো, সে যেনো তারই রক্ত ঝরালো।” [আবূ দাউদ]


শায়খ আলবানী ‘আল-মিশকাত’ পুস্তকে বলেন, “এর সনদ ’লাইয়্যিন’ তথা বিশুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে প্রশ্নবিদ্ধ।” 


অথচ তাঁর ‘আল-সিলসিলা আল-সহীহা’ বইয়ে তিনি এ হাদীসটিকে সহীহ ঘোষণা করেন। [বঙ্গানুবাদকের নোট: ইমাম আবূ দাউদ  (رحمة الله) এটা সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন]


হাদীস নং ৩০


عَنِ الْبَرَاءِ، قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ ــ صلى الله عليه وسلم ــ فِي جِنَازَةٍ فَجَلَسَ عَلَى شَفِيرِ الْقَبْرِ فَبَكَى حَتَّى بَلَّ الثَّرى ثُمَّ قَالَ ” يَا إِخْوَانِي لِمِثْلِ هَذَا فَأَعِدُّوا “. 


অর্থ: হযরত বারা’আ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’এর সাথে এক জানাযায় (উপস্থিত) ছিলাম। এমতাবস্থায় তিনি কবরের ধারে বসেন এবং কান্নাকাটি করেন, যতোক্ষণ না মাটি ভিজে যায়। অতঃপর তিনি বলেন, “হে আমার ভাইয়েরা, এ রকম (দিনের মতো) কিছুর জন্যে তোমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করো।”


শায়খ আলবানী এ হাদীসকে প্রথমে দুর্বল (দয়ীফ) বলেন।


অথচ নিজ ‘আল-সিলসিলা আল-সহীহা’ গ্রন্থে তিনি এটাকে হাসান (নির্ভরযোগ্য) শ্রেণিভুক্ত করেন।


হাদীস নং ৩১


حَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنِ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنِي دَاوُدُ بْنُ سَوَّارٍ الْمُزَنِيُّ، بِإِسْنَادِهِ وَمَعْنَاهُ وَزَادَ ” وَإِذَا زَوَّجَ أَحَدُكُمْ خَادِمَهُ عَبْدَهُ أَوْ أَجِيرَهُ فَلَا يَنْظُرْ إِلَى مَا دُونَ السُّرَّةِ وَفَوْقَ الرُّكْبَةِ “. قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَهِمَ وَكِيعٌ فِي اسْمِهِ وَرَوَى عَنْهُ أَبُو دَاوُدَ الطَّيَالِسِيُّ هَذَا الْحَدِيثَ فَقَالَ حَدَّثَنَا أَبُو حَمْزَةَ سَوَّارٌ الصَّيْرَفِيُّ   


অর্থ: এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন হযরত দাউদ বিন সাওয়ার আল-মুযানী (رضي الله عنه) বর্ণনাকারীদের ভিন্ন এক এসনাদ সহকারে, তবে একই অর্থে। এই সংস্করণে যোগ হয়েছে নিম্নের বাণী: “তোমাদের মধ্যে কেউ আপন জারিয়া দাসীকে নিজ গোলামের সাথে বিয়ে দিলে সে যেনো নিজের জারিয়া দাসীর শরীরের নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত অঙ্গের দিকে না তাকায়।”


ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) বলেন: বর্ণনাকারী ওয়াকী’ (رحمة الله) হযরত দাউদ ইবনে সাওয়ার (رضي الله عنه)’র নামটিকে ভুল বুঝেছিলেন। আবূ দাউদ আল-তায়্যালিসী তাঁর কাছ থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: এটা বর্ণনা করেন আবূ হামযাহ সাওয়ার আল-সায়রাফী (রা:)। 


শায়খ আলবানী নিজ ‘আল-ইরওয়া’ পুস্তকে এ হাদীসকে হাসান (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন।


অথচ ‘দায়ীফ আল-জামে’ গ্রন্থে তিনি এটাকে দুর্বল (যয়ীফ) শ্রেণিভুক্ত করেন। [অনুবাদকের নোট: সুন্নাহ-ডট-কম বলে, শ্রেণি: ’হাসান’/নির্ভরযোগ্য (আলবানী)। দৃশ্যতঃ সাইটটি শায়খ আলবানীর ঘনঘন মত পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যর্থ হয়েছে]


হাদীস নং ৩৩


عن علي ــ رضي الله عنه ــ قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ” بادروا بالصدقة؛ فإن البلاء لا لا يتخطاها “. رواه آمين. هــ  


অর্থ: হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন যে প্রিয়নবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান: “দান-সদক্বাহ করতে ত্বরা করো; বালা-মুসীবত ওর আগে বাড়তে পারবে না।”


শায়খ আলবানী আপন ‘মিশকাত’ কিতাবে বলেন, “এই হাদীস আল-তাবারানী কর্তৃক বর্ণিত এবং এটার এসনাদ দুর্বল (যয়ীফ)।”


অথচ ’সহীহ আল-তারগীব ওয়াল-তারহীব’ পুস্তকে তিনি বলেন, “এটা ভীষণ দুর্বল (দায়ীফ জিদ্দান)।”


হাদীস নং ৩৪ 


عن أبي هريرة ــ رضي الله عنه ــ مرفوعا انه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ” ليس صدقة أعظم آخرا من ماء “. هــ 


অর্থ: হযরত আবূ হোরায়রাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন মরফু’ তথা উন্নীত হাদীস; রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: “নেই কোনো খায়র (পুরস্কার)-সম্পন্ন দান-সদক্বাহ পানির চেয়ে বড়।”


শায়খ আলবানী নিজ ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াল-তারহীব’ কিতাবে এটাকে হাসান (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন।


অথচ তাঁর ‘দায়ীফ আল-জামে’ পুস্তকে তিনি এটাকে দুর্বল (যয়ীফ) শ্রেণিভুক্ত করেন।


হাদীস নং ৩৫


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ” إِنَّ رَبَّكُمْ يَقُولُ كُلُّ حَسَنَةٍ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ وَالصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ الصَّوْمُ جُنَّةٌ مِنَ النَّارِ وَلَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ وَإِنْ جَهِلَ عَلَى أَحَدِكُمْ جَاهِلٌ وَهُوَ صَائِمٌ فَلْيَقُلْ إِنِّي صَائِمٌ ". 


অর্থ: হযরত আবূ হোরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন: “নিশ্চয় তোমাদের প্রভু (আল্লাহতা’লা) এরশাদ করেছেন, ‘প্রতিটি নেক/পুণ্যদায়ক কাজের পুরস্কার হচ্ছে অনুরূপ দশটি নেকি হতে সাত শত গুণ পর্যন্ত নেকি/সওয়াব। রোযা আমার জন্যেই (পালিত); আর আমি-ই তার পুরস্কার দেবো।’ রোযা (দোযখের) আগুন হতে রক্ষার একটি ঢাল। রোযাদার ব্যক্তির মুখ হতে বেরিয়ে আসা গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধির চেয়েও সুপ্রিয়। তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো অজ্ঞ লোকের দ্বারা নিগৃহীত হলে সে যেনো বলে: নিশ্চয় আমি রোযাদার।” 


শায়খ আলবানী নিজ ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াল-তারহীব’ পুস্তকে এ হাদীসকে হাসান (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন।


অথচ তিনি এটাকে তাঁর ‘দায়ীফ আল-জামে’ গ্রন্থে দুর্বল হাদীসের সংকলনে অন্তর্ভুক্ত করেন। [সুন্নাহ-ডট-কম বলে: শ্রেণি: সহীহ (দারুস্ সালাম)]


হাদীস নং ৩৬ 


حديث أبي الدرداء ــ رضي الله عنه ــ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ” الدنيا ملعونة ــ ملعون ما فيها، إلا ما ابتغينا به وجه الله ــ عز وجل ــ “. هــ


অর্থ: হযরত আবূ দারদা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে প্রিয়নবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান: “এই দুনিয়া ও এর ধারণকৃত সমস্ত কিছুই লা’নতপ্রাপ্ত/অভিশপ্ত; ব্যতিক্রম শুধু সর্বশক্তিমান ও মহানতম আল্লাহতা’লার সন্তুষ্টিসহ যা কিছু কেউ অর্জন করে থাকে।” 


শায়খ আলবানী নিজ ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াল-তারহীব’ কিতাবে এটাকে বিশুদ্ধ (সহীহ) বলেন। 


অথচ ‘দায়ীফ আল-জামে’ পুস্তকে তিনি এটাকে দুর্বল (যয়ীফ) শ্রেণিভুক্ত করেন।


হাদীস নং ৩৭


عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وَسلم ”.. إِنَّ الْمَسْأَلَةُ نُكْتَةً فِي وَجْهِكَ يَومَ الْقِيَامَةِ إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لاَ تَصْلُحُ إِلاَّ لِثَلاَثَةٍ لِذِي فَقْرٍ مُدْقِعٍ أَوْ لِذِي غُرْمٍ مُفْظِعٍ أَوْ لِذِي دَمٍ مُوجِعٍ “.


অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরমান: “ভিক্ষাবৃত্তি শুধু তিন ধরনের ব্যক্তির জন্যে সঠিক; যে ব্যক্তি দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত, বা দায়-দেনাগ্রস্ত, বা ক্ষতিপূরণের দায়গ্রস্ত অথচ অর্থ পরিশোধে অপারগ।” হাদীসটি সর্ব-ইমাম আহমদ ও আবূ দাউদ (রহমতুল্লাহি আলাইহিমা) বর্ণনা করেন।


শায়খ আলবানী নিজ ‘আল-ইরওয়া’ বইয়ে বলেন, “এটা দুর্বল (যয়ীফ)।

 

অথচ তাঁর ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াত্ তারহীব’ পুস্তকে তিনি এ হাদীসকে বিশুদ্ধ (সহীহ) ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ৩৮


عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قالَ ” مَا مِنْ إِنَْسَانٍ قَتَلَ عُصْفُورًا فَمَا فَوْقَهَا بِغَيْرِ حَقِّهَا إِلاَّ سَأَلَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عَنْهَا “ . قِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا حَقُّهَا قَالَ ” يَذْبَحُهَا فَيَأْكُلُهَا وَلاَ يَقْطَعُ رَأْسَهَا يَرْمِي بِهَا “.


অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত যে, মহানবী (ﷺ) বলেন: “কোনো ন্যায্য কারণ ছাড়া কেউ ছোট পাখি বা তার চেয়ে বড় কিছু হত্যা করলে সর্বশক্তিমান ও মহানতম আল্লাহতা’লা তাকে জবাবদিহি করতে বলবেন।” তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, “এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! ন্যায্য কারণ বলতে কী বোঝায়?” তিনি উত্তর দেন: “তুমি তা জবাই করবে এবং খাবে, আর তার মাথা কেটে এক পাশে ফেলে দেবে না।”


শায়খ আলবানী নিজ ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াত্ তারহীব’ কিতাবে বলেন, “এটা হাসান (নির্ভরযোগ্য)।” 


অথচ তাঁর ‘গায়্যাত আল-মারা’ম’ পুস্তকে তিনি এ হাদীসকে দুর্বল (দয়ীফ) ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ৩৯


عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَرْجِسَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى أَنْ يُبَالَ فِي الْجُحْرِ. قَالَ قَالُوا لِقَتَادَةَ مَا يُكْرَهُ مِنَ الْبَولِ فِي الْجُحْرِ قَالَ كَانَ يُقَالُ إِنَّهَا مَسَاكِنُ الْجِنِّ   


অর্থ: হযরত আবদৃল্লাহ ইবনে সারজিস্ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলােইহে ওয়া সাল্লাম) গর্তে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছিলেন।


হযরত ক্বাতাদাহ (رضي الله عنه)’কে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তর দেন: কথিত আছে যে এসব (মানে গর্ত) হচ্ছে জ্বিনের আবাসস্থল।


শায়খ আলবানী নিজ ‘আল-ইরওয়া’ পুস্তকে বলেন, “এটা দুর্বল (যয়ীফ)।”


অথচ তাঁর ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াল-তারহীব’ কিতাবে তিনি এটাকে বিশুদ্ধ (সহীহ) ঘোষণা করেন। [সুন্নাহ-ডট-কম বলে, যয়ীফ (আলবানী)]


হাদীস নং ৪০


عن عمر بن الخطاب ــ رضي الله عنه ــ قال: ذكر لي أن قائل يقول: ” أن الأعمال تتباهى فتقول الصدقة: انا افضلكم “ . هــ


অর্থ: হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: আমাকে বলা হয় যে কথিত আছে, “নেক আমল/পুণ্যদায়ক কর্মগুলো নিজেদের মধ্যে গর্ব করছিলো (এ মর্মে যে কে বড়)। এমতাবস্থায় দান-সদকাহ বলে, “আমি তোমাদের মধ্যে সেরা।” 


শায়খ আলবানী নিজ কৃত ‘সহীহ ইবনে খুযায়মা’ গ্রন্থের সংস্করণে বলেন, “এর এসনাদ দুর্বল (যয়ীফ), কেননা (রাবী/বর্ণনাকারীদের একজন) আবূ ফারওয়া হচ্ছেন মাজহূল তথা অপরিচিত; এবং আল-নাদর (নামে আরেকজন বর্ণনাকারী) দুর্বল (যয়ীফ)।”


অথচ তাঁর ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াত্ তারহীব’ পুস্তকে তিনি হাদীসটিকে বিশুদ্ধ (সহীহ) ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ৪১  


عن جابر بن عبد الله ــ رضي الله عنهما ــ عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ” إذا أديت زكاة مالك؛ فقد اذهب عنك شره “. هــ  


অর্থ: হযরত জাবের ইবনে আবদিল্লাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে প্রিয়নবী (ﷺ) ফরমান: “তুমি তোমার সম্পত্তি হতে (ফরয/বাধ্যতামূলক) যাকাত প্রদান করলে (সম্পত্তির) মন্দ দিকটি তোমার কাছ থেকে তিরোহিত হয়।”


শায়খ আলবানীর রচিত ‘সহীহ ইবনে খুযায়মা’ গ্রন্থের সংস্করণে তিনি বলেন, “এর এসনাদ দুর্বল। ইবনে জুরায়জ ও আবূ যুবায়র হলেন মুদাল্লিস (বিকৃতকারী) এবং তাঁরা হাদীসটিকে পরোক্ষভাবে (’আন’আনা) বর্ণনা করেছেন। আমি এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছি আমার ‘আল-দায়ীফা’ কিতাবে।”


অথচ তাঁর ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াল-তারহীব’ বইটিতে তিনি এটাকে বিশুদ্ধ (সহীহ) ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ৪২


عَنْ عُمَارَةَ بْنِ شَبِيبٍ السَّبَئِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ” مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ. عَشْرَ مَرَّاتٍ عَلَى إِثْرِ الْمَغْرِبِ بَعَثَ اللهُ لَهُ مَسْلَحَةً يَحْفَظُونَهُ مِنَ الشَّيْطَانِ حَتَّى يُصْبِحَ وَكَتَبَ اللهُ لَهُ بِهَا عَشْرَ حَسَنَاتٍ مُوجِبَاتٍ وَمَحَا عَنْهُ عَشْرَ سَيِّئَاتٍ مُوبِقَاتٍ وَكَانَتْ لَهُ بِعَدْلِ عَشْرِ رِقَابٍ مُؤْمِنَاتٍ “. قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ لَيْثِ بْنِ سَعْدٍ. وَلاَ نَعْرِفُ لِعُمَارَةَ بْنِ شَبِيبٍ سَمَاعًا عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم.  


অর্থ: হযরত উমারাহ বিন শাবীব আস্ সাবাঈ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’এর হাদীস, যিনি এরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি আল-মাগরেব শেষে ১০ বার বলে, ‘এক আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তাঁর কোনো অংশীদার নেই; জগতের যাবতীয় অস্তিত্বশীল বস্তু তাঁরই মালিকানাধীন; আর সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন এবং সব বিষয় বা বস্তুর ওপর ক্ষমতাবান’ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল-মুলকু ওয়া লাহুল-হামদু, ইউহ্-য়ি ওয়া ইউমীতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর), আল্লাহতা’লা তার কাছে শয়তানের (ক্ষতি) থেকে বাঁচবার জন্যে রক্ষাকারীবর্গ প্রেরণ করবেন, যতোক্ষণ না সে সকাল বেলা অবধি পৌঁছোয়; আর আল্লাহ পাক তার জন্যে মূজিবাত ১০টি নেকী লেখেন এবং ১০টি ক্ষতিকর মন্দকর্ম মুছে দেন; আর এটা হবে তার জন্যে দশজন ঈমানদার গোলাম মুক্ত করে দেয়ার মতোই (সওয়াবদায়ক)।”


শায়খ আলবানী নিজ ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াল-তারহীব’ পুস্তকে বলেন, “এটা হাসান (নির্ভরযোগ্য)।” 


অথচ তাঁর ‘দায়ীফ আল-জা’মে’ গ্রন্থে তিনি এ হাদীসকে দুর্বল (যয়ীফ) ঘোষণা করেন। [সুন্নাহ-ডট-কম বলে, শ্রেণি: হাসান (দারুস্ সালাম)]


হাদীস নং ৪৩        


عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا الأَحْوَصِ، يُحَدِّثُنَا فِي مَجْلِسِ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ قَالَ قَالَ أَبُو ذَرٍّ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى عليه وسلم ” لاَ يَزَالُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ مُقْبِلاً عَلَى الْعَبْدِ وَهُوَ فِي صَلاَتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ فَإِذَا الْتَفَتَ انْصَرَفَ عَنْهُ “.


অর্থ: হযরত আবূ যর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; প্রিয়নবী (ﷺ) বলেন: “মহানতম আল্লাহতা’লা তাঁর বান্দা যতোক্ষণ নামাযে নিবিষ্ট থাকে এবং অন্যত্র না ফিরে তাকায়, ততোক্ষণ তার প্রতি দয়াপরবশ হন; কিন্তু সে তা করলে তিনিও তার থেকে ফিরে যান।”


শায়খ আলবানী ‘সহীহ আল-তারগীব ওয়াত্ তারহীব’ পুস্তকে এটাকে হাসান (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন।


অথচ ‘দায়ীফ আল-জামে’ গ্রন্থে তিনি এটাকে দুর্বল (যয়ীফ) শ্রেণিভুক্ত করেন। [সুন্নাহ-ডট-কম বলে, যয়ীফ (আলবানী)]


হাদীস নং ৪৪


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ” ثَلَثةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ كُنْتُ خَصْمَهُ خَصَمْتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ أَعْطَى بِي ثُمَّ غَدَرَ وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُوفِهِ أَجْرَهُ “.


অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত যে, প্রিয়নবী (ﷺ) এরশাদ করেন: (আল্লাহ বলেন), “পুনরুত্থান দিবসে আমি তিন ধরনের লোকের প্রতিপক্ষ; আর আমি কারো প্রতিপক্ষ হলে তাকে আমি পরাভূত করবো-ই। ওরা হলো, যে ব্যক্তি আমার নামে অঙ্গীকার করে, কিন্তু (তা পূরণে) অবিশ্বস্ত প্রতিপন্ন হয়; যে ব্যক্তি মুক্ত/স্বাধীন কাউকে বিক্রি করে তার মূল্য হজম করে; আর যে ব্যক্তি কোনো কর্মীকে পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে কাজে নিযুক্ত করে, কিন্তু কাজশেষে পারিশ্রমিক দেয় না।”


শায়খ আলবানী নিজ ‘আল-ইরওয়া’ গ্রন্থে এটাকে হাসান (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন।


অথচ ‘দায়ীফ আল-জামে’ পুস্তকে তিনি এটাকে দুর্বল (যয়ীফ) শ্রেণিভুক্ত করেন। [সুন্নাহ-ডট-কম বলে, সহীহ (দারুস্ সালাম)]


হাদীস নং ৪৫


عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ فُضِّلَتْ سُورَةُ الْحَخِّ بِأَنَّ فِيْهَا سَجْدَتَيْنِ قَالَ ” نَعَمْ . وَمَنْ لَمْ يَسْجُدْهُمَا فَلاَ يَقْرَأْهُمَا “ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِذَاكَ الْقَوِيِّ


অর্থ: হযরত উক্ববাহ বিন আমির (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত: আমি বল্লাম, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! সূরাতুল হজ্জ্ব ফযীলত-মণ্ডিত এ কারণে যে এতে দুটো সেজদা রয়েছে? তিনি বল্লেন, “হ্যাঁ, আর যে ব্যক্তি সেগুলোর জন্যে সেজদা করে না, তার সেগুলো ক্বেরাত পড়া উচিৎ নয়।” 


সর্ব-ইমাম আবূ দাউদ ও তিরমিযী (رحمة الله عليهما)’এর বর্ণনায় আবূ ঈসা (رحمة الله) বলেন: এই হাদীসের এসনাদ শক্তিশালী নয়।


শায়খ আলবানী তাঁর ‘আল-মিশকাত’ পুস্তকে বলেন, “হাদীসটি বিশুদ্ধ (সহীহ)।”


অথচ ‘দায়ীফ আল-জামে’ গ্রন্থে তিনি এটাকে দুর্বল (যয়ীফ) ঘোষণা করেন।


হাদীস নং ৪৬


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا إِسمَاعِيلُ بْنُ أَبِي أُوَيْسٍ، حَدَّثَنِي كَثِيرُ بْنُ عَبدِ اللهِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ــ صلى الله عليه وسلم ــ يَقُولُ ” مَن أَحْيَا سُنَّةً مِنْ سُنَّتِي قَد أُمِيتَتْ بَعْدِي فَإِنَّ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلَ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنَ النَّاسِ لاَ يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِ النَّاسِ شَيْئًا وَمَنِ ابْتَدَعَ بِدْعَةً لاَ يَرْضَاهَا اللهُ وَرَسُولُهُ فَإِنَّ عَلَيْهِ مِثْلَ إِثْمِ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنَ النَّاسِ لاَ يَنْقُصُ مِنْ آثَامِ النَّاسِ شَيْئًا “ .  


অর্থ: হযরত কাসির ইবনে আব্দিল্লাহ (رضي الله عنه) তাঁর পিতা হতে, তিনি পিতামহ হতে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি আমার এমন সুন্নাত (রীতি)’কে পুনরুজ্জীবিত করে যা আমার পরে মৃত (তথা বিস্মৃত) হয়ে গিয়েছিলো, সে এমন পুরস্কার লাভ করবে যা ওই (বিস্মৃত) সুন্নাতের আমলকারীদের সমপরিমাণ হবে; অথচ তা তাদের পুরস্কারের অংশ হতে ন্যূনতম ভাগও কমাবে না। (পক্ষান্তরে,) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)’এর অসন্তুষ্টি আছে এমন বেদআত (তথা ধর্মে নতুন প্রচলন) যে ব্যক্তি পরিবেশন করবে, সে এমন পাপের ভাগী হবে যা ওই বেদআতের আমলকারীদের সমপরিমাণ হবে; অথচ তা তাদের পাপের অংশ হতে ন্যূনতম ভাগও কমাবে না।” 


শায়খ আলবানী নিজ ‘দায়ীফ আল-জামে’ কিতাবে বলেন, “এটা অত্যন্ত দুর্বল (যয়ীফ জিদ্দান)।”


অথচ তাঁর ‘সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ’ পুস্তকে তিনি এটাকে বিশুদ্ধ (সহীহ) শ্রেণিভুক্ত করেন। [সুন্নাহ-ডট-কম বলে, শ্রেণি: যয়ীফ (দারুস্ সালাম)]


হাদীস নং ৪৭


عن ابن عمر ــ رضي الله عنهما ــ قال: ” ما صلت امرأة من صلاة، احب الى الله من أشد مكان في بيتها ظلمة “ . هــ 


অর্থ: হযরত ইবনে উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন: “কোনো নারীর জন্যে সর্বোত্তম নামায সেটাই, যেটা সে নিজ ঘরের সবচেয়ে অন্ধকার কোণায় আদায় করে।”


শায়খ আলবানী তাঁর ‘সহীহুল তারগীব ওয়াত্ তারহীব’ গ্রন্থে এ বর্ণনাকে বিশুদ্ধ (সহীহ) ঘোষণা করেন। 


অথচ তাঁর ‘দায়ীফ আল-জামে’ শীর্ষক দুর্বল হাদীসের সংকলনে তিনি এটাকে অন্তর্ভুক্ত করেন।


হাদীস নং ৪৮


عن أنس بن مالك ــ رضي الله عنه ــ قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ” أن لله ملكا ينادي عند كل صلاة: يا بني آدم؛ قوموا إلى نيرانك التي اوقدتموها؛ فاطفئوها “. هــ


অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “আল্লাহতা’লা এমন একজন ফেরেশতাকে নিযুক্ত করেছেন, যিনি প্রতি নামাযের সময় ডেকে বলেন - ‘ওহে আদম সন্তান সকল, ওঠো তোমাদের প্রজ্জ্বলিত আগুনের মুখোমুখি হতে, এবং তা নির্বাপিত করো’।” 


শায়খ আলবানী নিজ ‘আল-তারগীব ওয়াল-তারহীব’ পুস্তকে এটাকে হাসান (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন।


অথচ ‘দায়ীফ আল-জামে’ বইয়ে তিনি এটাকে দুর্বল (যয়ীফ) শ্রেণিভুক্ত করেন।


হাদীস নং ৪৯


عن عثمان ــ رضي الله عنه ــ أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ”من علم أن الصلاة حق مكتوب واجب دخل الجنة  “. هــ


অর্থ: হযরত উসমান (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন:


প্রিয়নবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান, “যে ব্যক্তি জানে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায বাধ্যতামূলকভাবে বিধান করা হয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”


শায়খ আলবানী তাঁর ‘সহীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীব’ গ্রন্থে এটাকে হাসান (নির্ভরযোগ্য) ঘোষণা করেন।


অথচ তাঁর ‘দয়ীফ আল-জামে’ পুস্তকে তিনি এটাকে দুর্বল শ্রেণিভুক্ত করেন।


হাদীস নং ৫০


أَخْبَرَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ، عَنِ ابْنِ وَهْبٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي مَخْرَمَةُ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَمِعْتُ مَحْمُودَ بْنِ لَبِيدٍ، قَالَ أُخْبِرَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ رَجُلٍ، طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلَثَ تَطْلِيقَاتٍ جَمِيعًا فَقَامَ غَضْبَانًا ثُمَّ قَالَ ” أَيُلْعَبُ بِكِتَابِا اللهِ وَأَنَا بَيْنَ أَظْهُرِكُمْ “. حَتَّى قَامَ رَجُلٌ وَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَلاَ أَقْتُلُهُ . 


অর্থ: হযরত মাখরামা (رضي الله عنه) আপন পিতা হতে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: 


“আমি মাহমূদ বিন লাবীদকে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’কে জানানো হয় এমন ব্যক্তি সম্পর্কে, যে তার স্ত্রীকে তিনবার ‘তালাক্ব’ উচ্চারণ দ্বারা তালাক্ব দিয়েছিলো। প্রিয়নবী (ﷺ) রাগান্বিত হয়ে ওঠে দাঁড়ান এবং বলেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে প্রকাশ্যে থাকতে আল্লাহর কিতাব নিয়ে খেলা হচ্ছে কি?’ এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি ওঠে দাঁড়িয়ে বলেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি কি তাকে হত্যা করবো’?”


শায়খ আলবানী নিজ ‘আল-মিশক্বাত’ পুস্তকে বলেন, “এর বর্ণনাকারীবৃন্দ সবাই বিশ্বস্ত/আস্থাভাজন (সিক্বা’ত), ব্যতিক্রম শুধু মাখরামার পিতা হতে প্রাপ্ত তাঁর বর্ণনাটি। (কেননা) তিনি তাঁর পিতা হতে (হাদীস) শুনেননি (জাল)।”


অথচ তাঁর ‘গায়্যাতুল-মারা’ম’ গ্রন্থে তিনি এই হাদীসকে সহীহ (বিশুদ্ধ) বলে ঘোষণা করেন।    




 
Top