"ফতোয়াবাজী রেখে এবার একটু ভালোবাসার পথে আসি!"
-------------------
🖋সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারি

আমরা নিজেদের আত্মসমালোচনা আমরা নিজেরা করি না। জ্ঞানার্জনেও খুব একটা উৎসাহীত নই। জানতে চেষ্টা করি কম। নিজের বিচার করতে চেষ্টা করি কম৷ কিন্তু অপরের উপরে ফতোয়া দিতে খুব সচেষ্ট। মানুষকে দ্বীনের নামে আমরা ভয় দেখাতে খুব পারদর্শী। ত্রাস সৃষ্টি করছি মানুষের মনে ধর্মের নামে৷ হ্যাঁ, এই ভয় দেখিয়ে হয়ত এক দুই জনকে আমরা দ্বীনের পথে কাবু করতে পারছি, কিন্তু শতজনকে দ্বীন থেকে সড়িয়ে দিচ্ছি। নফরত সৃষ্টি করছি তাদের মনে। 

শায়খ আব্দুল হাকিম মুরাদ একটা ঘটনা বর্ণনা করছিলেন, "ইংল্যান্ডের এক খ্রীষ্টান মহিলা একজন মিশরির প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করে মুসলমান হয়ে যান। ইসলামের প্রতি ঐ মহিলার আগ্রহ বাড়তে থাকে। তিনি ইসলাম সম্পর্কে জানতে থাকেন। তিনি একাবার মিশরে তার ঘরে বসে আছেন। কেউ একজন নওমুসলিম হিসেবে তাকে একটা "তসবিহ দানা" গিফট করেছিলেন। ঐ ভদ্রমহিলা সেই "তসবিহ দানা" হাতে নিয়ে জিকির করছেন। একজন তথাকথিত "সহিহ আকিদা"র লোক মেহমান হিসেবে ঐ ভদ্রমহিলার ঘরে আসল। ঐ সহিহ আকিদার লোকটি হঠাৎ খুব কর্কশ ভাষায় চেচিয়ে ওঠল সেই নওমুসলিম মহিলার প্রতি, " আপনি জানেন এটা আপনি কি করছেন?"

ঐ মহিলা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললেন, "কী করছি?"

তথাকথিত "সহিহ আকিদা"র লোকটা বলল, "এই তাসবিহ দানা ব্যবহার করা যে শিরক, আপনি জানেন?" 

লোকটার কথাগুলো এতই কর্কশ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ ছিল যে, ঐ নওমুসলিম মহিলা যিনি ইসলাম শিখতে ও জানতে শুরু করেছিলেন, তিনি তসবিহ দানাটি ছিড়ে ফেলে দিলেন। দানাগুলো সব ছুড়ে ফেলে দিয়ে বললেন, "আমি আর কোনদিন ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানতে চাই না। যথেষ্ট হয়েছে।"

এরপর থেকে ঐ মহিলা আর কোনদিন ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানতে আগ্রহী হন নি।  

শায়খ আব্দুল হাকিম মুরাদ যখন এই ঘটনাটি বর্ণনা করছিলেন, আমি তখন ঐ খ্রীষ্টান থেকে মুসলমান হওয়া ভদ্রমহিলার কষ্টটা যেন অনুভব করতে পারছিলাম। 

ভাই, ঐ সহিহ আকিদার লোকটা হয়ত সালাফি/ আহলে হাদিস ছিল। এটা ভেবে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন না। আর এটা ভাববেন না যে, আমরা তো এরকম না। ফতোয়াবাজিতে আমরাও কম যাই না। মুস্তাহাব কাজকর্মকে আমরা ফরজ ওয়াজিবের মত মানুষের উপরে চাপিয়ে দিচ্ছি। তুচ্ছ বিষয়ে আমরা মানুষকে কাফির বলছি৷ আমলের কারণে কেউ কোনদিন কাফির হয় না এটা আমাদের মাথায়ও নেই। তুচ্ছ কারণে মানুষকে দ্বীন থেকে বের করে দিচ্ছি। ভাই আমরা কাউকে দ্বীন থেকে বের করে দেয়ার কে? কে দিয়েছে নবির দ্বীন থেকে কাউকে বের করে দেয়ার অধিকার? কে বানিয়েছে আমাদেরকে দ্বীনের রক্ষক? So called self proclaimed defenders of deen. 

আসুন এখন মদিনা মনিবের ﷺ (আমার ভাই মাহদি গালিবের এই টার্মটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে) আখলাক দেখি।

মসজিদে নববীতে হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺ বসে আছেন। চারদিকে সাহাবায়ে কেরাম। এক যুবক আসলেন। এসে বললেন, "ইয়া রাসুলাল্লাহ  ﷺ! আমি ইসলাম গ্রহণ করতে চাই। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।"
 
হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, কী শর্ত?

ঐ যুবক বললেন, "আমি ইসলাম গ্রহণ করব কিন্তু জিনা করা ছাড়তে পারব না।"

প্রিয় ভাই ও বোনেরা! একবার চিন্তা করুন, আল্লাহর ঘর মসজিদে, তাও মসজিদে নববিতে। সাহাবায়ে কেরামের মাঝখানে এক যুবক হুজুর রাসুলুল্লাহর ﷺ কাছে জিনা করার পার্মিশন চাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে আমরা থাকলে কী করতাম?
 
কিন্তু হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺ একটুও রাগ করলেন না। বললেন না, এই বেয়াদব গুস্তাখ নাপাককে বের করে দাও মসজিদ থেকে। না, কিছুই না। চীৎকার চেচামেচির তো প্রশ্নই আসে না। খুবই ঠান্ডা মাথায় হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺ যুবকটির বুকে হাত রাখলেন, রেখে বললেন, "তুমি কী চাও কেউ তোমার বোনের সাথে জিনা করুক? তুমি কি এটা পছন্দ করবে?" যুবকটি বলল,  না। নবিজি ﷺ আবার জিজ্ঞেস করলেন, "তোমার ফুফুর সাথে যদি কেউ জিনা করে তুমি কি এটা পছন্দ করবে?" যুবকটি আবারো বলল, না। এবার আবার নবিজি ﷺ বললেন, "তোমার মেয়ের সাথে, মায়ের সাথে, খালার সাথে যদি কেউ জিনা করে তুমি কী এটাকে পছন্দ করবে?" যুবকটি আবারো নেতিবাচক মাথা নাড়ল। বলল, না। 

হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, "তাহলে তুমি যার সাথে জিনা করার অনুমতি চাচ্ছ সেও তো কারো না কারো মা, বোন, স্ত্রী, খালা, ফুফু অথবা মেয়ে।"

যুবকটি নিজের ভুল বুঝতে পেরে সাথে সাথে হুজুর রাসুলুল্লাহর ﷺ হাতে হাত রেখে বিনা বাক্যব্যয়ে কালিমাহ পড়ে মুসলমান হয়ে গেলেন। 

প্রিয় ভাই ও বোনেরা! আমাদেরকে এই ভালোবাসার রাস্তায় ফিরে আসা প্রয়োজন। ন্যস্তি নম্রতার রাস্তায় ফিরে আসা প্রয়োজন। সহজ রাস্তায় ফিরে আসা প্রয়োজন। আর মানুষকে জাজ করা বন্ধ করা প্রয়োজন। যে যেভাবে আছে তাকে সেভাবেই গ্রহণ করুন। আস্তে আস্তে সে হেদায়াতের রাস্তায় আসবে ইন শা আল্লাহ। তার জন্য দোয়া করুন। 

পিক পরিচিতিঃ বামে শায়খ হাবিব আলি জিফরি ডানে শায়খ আব্দুল হাকিম মুরাদ।
 
Top