❏ 'বিদ'আত কাকে বলে� 
❏ 'লাইসা মিনহু'র উৎকৃষ্ট ব্যাখ্যা, দ্বীন মানে কি�
__________________________________________

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (১৩৩)]
○ অধ্যায়ঃ [ (باب الاعتصام بالكتاب والسنة) : ক্বোরআন ও সুন্নাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা] (টীকাঃ ১)

[ عن عئشة قالت قال رسول الله ﷺ من احدث فى امرنا هذا ماليس منه فهو رد .] - (متفق عليه)

হযরত আয়েশা [رضي الله ﺗﻌﺎﻟﯽٰ عنها] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেনঃ 

"যে ব্যক্তি আমার দ্বীনে এমন রীতি উদ্ভাবন করে, যা এ দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখানযোগ্য।" (টীকাঃ ২) 
[ বোখারী, মুসলিম ]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ #MustShAre 
    ___________________________________
 ১. [(باب الاعتصام بالكتاب والسنة) : ক্বোরআন ও সুন্নাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা]

◇ টীকাঃ ১. عصم) ,(اعتصام)) হতে গঠিত। এর অর্থ নিষেধ করা, বিরত রাখা। পূতঃপবিত্র হওয়াকে এ জন্যই (عصمت) বলা হয়, যেহেতু তা গুনাহ থেকে বিরত রাখে। সেটার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- শক্তভাবে ধরা, ছুটে যাওয়া ও পালিয়ে যাওয়া, রুখে রাখা। শরীয়তের পরিভাষায়, সত্যতার উপর বিশ্বাস এবং সেটা অনুসারে নিয়মিতভাবে আমল করাকে (اعتصام) বলা হয়। এখানে (كتاب) মানে 'ক্বোরআন-শরীফ' এবং 'সুন্নাহ্' মানে হুযূর [ﷺ]'র ওই সব পবিত্র বাণী, বরকতময় আমল ও অবস্থা, যেগুলো মুসলমানদের জন্য আমলের উপযোগী। হুযূরের এসব কর্মকে শরীয়ত বলা হয় এবং পুণ্যময় অবস্থাকে তরীক্বত বলা হয়। সূফীদের দৃষ্টিতে হুযূরের শরীর মুবারকের অবস্থাদি হল শরীয়ত, ক্বলবের অবস্থাদি হচ্ছে তরীক্বত, রুহের অবস্থাদি হাক্বীক্বত এবং 'সির্' (একটি বাত্বেনী স্তরের অবস্থা)কে মা'রিফাত। 'সুন্নাত' এর মধ্যে এ সবই অন্তর্ভুক্ত। 

স্মর্তব্য যে, হুযূরের বৈশিষ্ট্যাবলী (خصوصيات) 'সুন্নাহ্' নয়। সুতরাং নয়(০৯) জন স্ত্রী বিবাহাধীন রাখা, উটের উপর আরোহন করে তাওয়াফ করা, মিম্বরের উপর নামায পড়ানো ইত্যাদি যদিও হুযূরের পূণ্যময় কার্যাবলী; কিন্তু আমাদের জন্য এইগুলো অনুসারে আমল করার বিধান নেই। প্রত্যেক 'সুন্নাহ' হাদিস; কিন্তু প্রত্যেক 'হাদিস' সুন্নাহ নয়। এজন্য গ্রন্থকার [رحمه الله عليه] এখানে 'সুন্নাহ্' বলেছেন, 'হাদীস' বলেন নি এবং নবী করিম [ﷺ] এরশাদ করেছেন (عليكم بسنتى) (আমার সুন্নাহ্'কে আঁকড়ে ধরো), (بحديثى) (আমার হাদিসকে) বলেন নি। তাছাড়া আমাদের নাম, আল্লাহর প্রশংসাক্রমে, 'আহলে সুন্নাত' অর্থাৎ সমস্ত সুন্নাত অনুসারে আমলকারী, 'আহলে হাদিস' নয়। কেননা, সমস্ত হাদিসের উপর কেউ আমল করতে পারে না এবং কেউ 'আহলে হাদিসও হতে পারে না।

এটাও স্মর্তব্য যে, শরীয়তের দলীল চারটিঃ 'কিতাবুল্লাহ্' (ক্বোরআন), সুন্নাহ্, ইজমা'-ই উম্মত এবং মুজতাহিদীনের ক্বিয়াস। কিন্তু কিতাব ও সুন্নাহ্ হচ্ছে সব দলীলের মূল আর ইজমা ও ক্বিয়াস ওইগুলোর পরে। কেননা, যদি কোন মাসআলা প্রথমোক্ত দু'টিতে পাওয়া না যায়, তখনই এ শেষোক্ত দু'টির দিকে মনোনিবেশ করবে। তাছাড়া, ক্বিয়াস হচ্ছে, ক্বোরআন-সুন্নাহ্'র মর্মার্থ প্রকাশকারী। এ কারণে গ্রন্থকার (মিশকাত প্রণেতা) শুধু কিতাব ও সুন্নাহ্'রই উল্লেখ করেছেন। অপর দু'টির উল্লেখ করেন নি। নতুবা এ দুটিও অত্যন্ত জরুরী। সিদ্দীক্ব-ই আকবর ও ফারুক্ব-ই আ'যমের খিলাফত উম্মতের ইজমা' বা ঐক্যমতের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তাঁদের খিলাফতকে অস্বীকার করা কুফর। বাজরা এবং চাউলের মধ্যে সূদ হারাম; কিন্তু কিতাব ও সুন্নাহ্'তে এর স্পষ্ট উল্লেখ নেই। ক্বিয়াস দ্বারাই ওইগুলো হারাম হওয়া প্রমাণিত। এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ আমার কিতাব 'জা-আল্ হক্ব' প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ডে দেখুন। কিতাব ও সুন্নাহ্ হচ্ছে সমুদ্র; কোন ইমামের জাহাজে বসে সেটা অতিক্রম করো। কিতাব ও সুন্নাহ্ ঈমানী চিকিৎসার ঔষধ। কোন রুহানী চিকিৎসক অর্থাৎ মুজতাহিদ ইমামের পরামর্শক্রমে সেগুলো ব্যবহার করো। 

২. [(من احدث فى امرنا هذا ماليس منه فهورد) : (যে ব্যক্তি আমার দ্বীনে এমন রীতি উদ্ভাবন করে, যা এ দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখানযোগ্য।)]

◇ টীকাঃ ২.
অর্থাৎ এ উদ্ভাবনকারী প্রত্যাখ্যাত (মরদূদ্দ) অথবা তার এ উদ্ভাবন প্রত্যাখানযোগ্য। স্মর্তব্য যে, (امر) মানে দ্বীন-ইসলাম এবং (ما) মানে আক্বাইদ। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইসলামে ইসলাম বিরোধী আক্বীদা উদ্ভাবন করে- সেও প্রত্যাখ্যাত আর ওই আক্বাইদও বাতিল। 

সুতরাং রাফেযী, ক্বাদিয়ানী এবং ওহাবী ইত্যাদি বাহাত্তর ফির্কা, যাদের আক্বাইদ ইসলাম বিরোধী, সবই বাতিল। 

অথবা (امر) দ্বারা দ্বীন বুঝায় এবং (ما) দ্বারা আমলসমূহ বুঝায়। আর (ليس منه) -এর মর্মার্থ হচ্ছে- 'ক্বোরআন ও হাদীসের বিরোধী।' অর্থাৎ যে কেউ দ্বীনে এমন আমল উদ্ভাবন করে, যা দ্বীন অর্থাৎ কিতাব ও সুন্নাহ্'র বিপরীত হবে, যা দ্বারা সুন্নাত উঠে যায়, ওই উদ্ভাবনকারীও মরদূদ এবং এরুপ আমলও বাতিল। 

যেমনঃ উদূর্তে কিংবা বাংলায় খোতবাহ্ ও নামায পড়া, ফার্সীতে আযান দেওয়া ইত্যাদি। এর ব্যাখ্যা হচ্ছে ওই হাদীস, যা সামনে আসছে। তা হচ্ছে যে কেউ বিদ্'আত সৃষ্টি করে, তখন আল্লাহ্ সুন্নাতকে উঠিয়ে নেন। 

আমার এ ব্যাখ্যার ভিত্তিতে এ হাদীস স্বীয় ব্যাপকতার উপর প্রযোজ্য হবে। এতে কোন শর্তারোপের প্রয়োজন নেই। মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, (ليس منه) দ্বারা বুঝা গেল যে, দ্বীনের মধ্যে এমন কাজের উদ্ভাবন করা, যা কিতাব ও সুন্নাহ্'র বিরোধী নয়, তাবে মন্দ বলা যাবে না। 

প্রচারেঃ Ishq-E-Mustafa ﷺ
● হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ
📚f/Ishq-E-Mustafa ﷺ 

[সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ১ম খন্ড, পৃ. ১৪৮, হাদীস নং-১৩৩ এর টীকাঃ ১,২ দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম। সবুজ ভবন, খাজা রোড, কুলগাঁও, ডাকঘর-জালালাবাদ-৪২১৪, বায়েজীদ, চট্টগ্রাম। ফোনঃ ০৩১-৬৮৪২২৪, মোবাইলঃ ০১১৯৯-২২৪৪০৩, ০১৮৬৮-০৩১৬২১]
 
Top