নামাজে তাকবীরে তাহরিমায় (পুরুষ) কানের উপর পর্যন্ত হাত উঠানোর বিধানঃ-

=====================================================

১) হাদীস শরীফঃ-

حَدّثَنَا أبُو الْعبّاسِ بْنُ محمّدٍ الدوري الْعَلَاءِ بْنِ إسْمَاعِيلَ الْعَطَّارِ ثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ عَنْ عَاصِمٍ الْأَحْوَلِ عَنْ أَنَسٍ قَالَ: رَأَيْت رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَبَّرَ فَحَاذَى بِإِبْهَامَيْهِ أُذُنَيْهِ، ثُمَّ رَكَعَ حَتَّى اسْتَقَرَّ كُلُّ مَفْصِلٍ مِنْهُ، وَانْحَطَّ بِالتَّكْبِيرِ حَتَّى سَبَقَتْ رُكْبَتَاهُ يَدَيْهِ هذَا إسْنَادٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ وَلَا أَعْلَمُ لَهُ عِلَّةً وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ

অনুবাদ : হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি তিনি তাকবীর বলার সময়ে উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল কান বরাবর উঠিয়েছেন। অতঃপর তিনি এমনভাবে রুকু করলেন যে, তাঁর প্রতিটি জোড়া স্থির হয়ে গেলো। আর তাকবীর বলে (সিজদার জন্য) নীচু হলেন এবং সিজদায় যাওয়ার সময় উভয় হাঁটু  হাতের আগে রাখলেন।

✔ হাদীসটির স্তর : সহীহ। হাকেম বলেন: صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ “এ হাদীসের সনদ বুখারী-মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ”। ইমাম জাহাবী রহ. তাঁর তালখীস কিতাবেও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। (মুসতাদরাকে হাকেম: ৮২২)

২) হাদীস শরীফঃ-

وَحَدَّثَنَاهُ مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنْ سَعِيدٍ، عَنْ قَتَادَةَ، بِهَذَا الإِسْنَادِ (عَنْ نَصْرِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ) أَنَّهُ رَأَى نَبِيَّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ (كَانَ إِذَا كَبَّرَ رَفَعَ يَدَيْهِ) حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا فُرُوعَ أُذُنَيْهِ (رَوَاه مُسْلِمٌ فِىْ بَابِ اسْتِحْبَابِ رَفْعِ الْيَدَيْنِ حَذْوَ الْمَنْكِبَيْنِ مَعَ تَكْبِيرَةِ الْإِحْرَامِ)

অনুবাদ : হযরত মালেক বিন হুওয়াইরিস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামাযের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন: তিনি যখন তাকবীর দিতেন তখন উভয় হাত কানের উপরিভাগ পর্যন্ত উঠাতেন। (মুসলিম: ৭৫২)

উল্লেখ্য : ইমাম মুসলিম রহ. بهذا الإسناد বলে যে সনদ বুঝাতে চেয়েছেন তা বন্ধনির মাঝে দেয়া হয়েছে।

✅ হাদীসটির স্তর : সহীহ। শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহ শরীফেও শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামিউল উসূল: ৩৩৯২)

➡ সারসংক্ষেপ : উপরোক্ত হাদীসদু’টি দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, তাকবীরে তাহরিমার সময়ে উভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠাতে হবে। তবে কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠানোর কথাও অন্যান্য সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আমরা এসব হাদীসের সমন্বয়ে এভাবে আমল করে থাকি যে, উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল উভয় কানের লতি পর্যন্ত পৌঁছাবে যেন হাতের অনান্য আঙ্গুলের মাথা কানের উপর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আর হাতের পাঞ্জা কান বরাবর এবং কব্জি কাঁধ বরাবর থাকে। এ নিয়ম অনুসরণ করলে এ বিষয়ক সবগুলো হাদীসের ওপরই একত্রে আমল হয়ে যায়।

(ফাতহুল কদীর: সিফাতুস সলাত অধ্যায়)


✔ নারীগণ তাহরিমার সময়ে কাঁধ পর্যন্ত হাত উঁচু করবে:

=====================================================


৩) হাদীস শরীফঃ-

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَكْرٍ ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ ، قَالَ : قُلْتُ لِعَطَاءٍ تُشِيرُ الْمَرْأَةُ بِيَدَيْهَا بِالتَّكْبِيرِ كَالرَّجُلِ ؟ قَالَ : لاَ تَرْفَعُ بِذَلِكَ يَدَيْهَا كَالرَّجُلِ ، وَأَشَارَ فَخَفَضَ يَدَيْهِ جِدًّا ، وَجَمَعَهُمَا إلَيْهِ جِدًّا وَقَالَ: إنَّ لِلْمَرْأَةِ هَيْئَةً لَيْسَتْ لِلرَّجُلِ ، وَإِنْ تَرَكَتْ ذَلِكَ فَلاَ حَرَجَ

অনুবাদ : হযরত ইবনে জুরাইয বলেন: আমি হযরত আতা বিন আবী রবাহকে জিজ্ঞেস করলাম: নারীগণ তাকবীরের সময়ে কি পুরুষের মতো হাত ইশারা করবে? তিনি বললেন: না, পুরুষের মতো করবে না। অতঃপর তিনি নিজে হাত ইশারা করে দেখালেন আর দুই হাত খুব নীচু করলেন এবং শরীরের সাথে মিলিয়ে রাখলেন। অতঃপর বললেন: মহিলাদের নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে যা পুরুষের মতো নয়। তবে এটা পরিত্যাগ করলেও সমস্যা নেই। (ইবনে আবী শাইবা: ২৪৮৯)

হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাকতু’। এ হাদীসটির রাবীগণ সবাই-ই ثقة “নির্ভরযোগ্য” ও বুখারী-মুসলিমের রাবী। অতএব, সনদের বিবেচনায় হাদীসটি সহীহ।

হাদীসের নীতিমালা অনুযায়ী এটা মাকতু’ হাদীস বা ‘আছারে তাবিঈ’।

 যুক্তিগ্রাহ্য নয় এমন সব কথা বা কাজ তাবিঈদের থেকে বর্ণিত হলে তা সাহাবায়ে কিরামকে করতে দেখে বা তাদের থেকে শুনে বলে থাকেন। আর সাহাবায়ে কিরামের ভিত্তি হলো রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লা)। এ হিসেবে বর্ণনাটি শরীআতের দলীল; যদিও অবশ্য পালনীয় নয়।

 হাদীসের কিতাবের লেখকগণ সবাই-ই নিজ নিজ কিতাবে প্রয়োজন অনুসারে তাবিঈদের এ জাতীয় উক্তি বর্ণনা করেছেন।

যেমন ইমাম বুখারী রহ. ‘আমীন’ বলার অধ্যায়ে হযরত আতা রহ থেকেই এ উক্তি উল্লেখ করেছেন যে, قَالَ عَطَاءٌ: «آمِينَ دُعَاءٌ» “হযরত আতা রহ. বলেন: ‘আমীন’ একটি দুআ। হযরত আতা বিন আবী রবাহ রহ. থেকে বর্ণিত এ আমলকে আমরা মহিলাদের জন্য উত্তম মনে করি। আর সহীহ মারফু’ হাদীসেও কাঁধ পর্যন্ত হাত উত্তোলনের আমল বর্ণিত হয়েছে। (বুখারী: ৭০০) সুতরাং হযরত আতা রহ.-এর মন্তব্য দ্বারা হাত উত্তোলনের ব্যাপারে বর্ণিত একাধিক সহীহ হাদীসের মধ্যে কেবল একটি হাদীসকে মহিলাদের জন্য প্রাধান্য দেয়া হলো মাত্র। নতুন কোন বিধান প্রমাণিত হলো না। উপরন্তু, এ পদ্ধতির অনুসরণ মহিলাদের রূপ-সৌন্দর্য অন্যের দৃষ্টি থেকে আড়াল করার বেশী উপযোগী। সুতরাং পর্দার প্রতি লক্ষ্য রেখে তাদের জন্য এ আমলটিকে আমরা প্রাধান্য দিয়ে থাকি।


 
Top