বিবাহের বর্ণনা



মাসআলাঃ স্ত্রীর ভরণ-পোষণ ও পোষাক দিতে অক্ষম হলে বিয়ে করা মাকরূহ। ২১৭

➥২১৭. কিফায়া, আয়নী, জামিউর রুমুয।


মাসআলাঃ বিয়ের মধ্যে রুকন দুইটি আর শর্ত তিনটি। 


মাসআলাঃ যা না হলে বিয়ে হয়না- উহাকে বিয়ের রুকুন বলা হয়, আর রুকন বিয়ের মধ্যে হয়।


মাসআলাঃ যা নাহলে বিয়ে শুদ্ধ হয়না উহাকে বিয়ের শর্ত বলে।


মাসআলাঃ শত বিয়ের বাইরে হয়।


মাসআলাঃ বিয়ের রুকন হল- ইজাব ও কবুল।


মাসআলাঃ আকদ এর ক্ষেত্রে প্রথম বাণীকে ইজাব বলা হয়। তা ছেলের পক্ষ থেকে হোক বা মেয়ের পক্ষ থেকে হোক। পরবর্তী বাণীকে কবুল বলা হয় তা ছেলের পক্ষ থেকে হোক বা মেয়ের পক্ষ থেকে হোক।


প্রশ্নঃ বিয়ের শর্ত কয়টি ও কি কি? এ মাসয়ালার ক্ষেত্রে ওলামায়ে দ্বীনের মন্তব্য কি?


উত্তরঃ বিয়ের শর্ত দশটি, আর উহা হল- প্রথম শর্ত হল- আকদ সমপাদনকারী উভয়, জ্ঞানবান, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ও স্বাধীন হওয়া কেননা জ্ঞান ও প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ব্যতীত ইজাব ও কবুলে নিক্বাহ শুদ্ধ হয়না। আর স্বাধীন হওয়া এজন্য যে, মুনীবের অনুমতি ছাড়া দাসী ও দাসের বিয়ে করার অধিকার নেই। দ্বিতীয়ত শর্ত হল- স্থান উপযুক্ত হওয়া, অর্থাৎ- দুই জনের একজন মহিলা হওয়া যাতে বিয়ের দরুণ তার সাথে সহবাস করা হালাল হয়। 


তৃতীয় শর্ত হল- বর ও কনে ইজাব ও কবুল শ্রবণ করা অর্থাৎ যখন পুরুষ ইজাব তথা প্রস্তাব দিবে তখন মহিলা তার ইজাব শ্রবণ করা, আর যদি মহিলা ইজাব করে তাহলে পুরুষ তার ইজাব শ্রবণ করা, অনুরূপভাবে যখন পুরুষ কবুল করবে তখন মহিলা তার কবুল শ্রবণ করা আর যদি মহিলা কবুল করে তাহলে পুরুষ তার কবুল শ্রবণ করা। এটা ঐ অবস্থার মধ্যে যখন আকদ সম্পাদনকারী উভয়ে নিজে নিজে ইজাব ও কবুল সম্পাদন করে এবং অভিভাবক ও উকিলের মাধ্যমে হলে আকদ সম্পাদনকারী পুরুষ ও মহিলা শুনা জরুরী নয়।


চতুর্থ শর্ত হল- দুইজন পুরুষ সাক্ষী হওয়া, উভয় সাক্ষী স্বাধীন হওয়া, গোলাম না হওয়া এবং জ্ঞানবান হওয়া, পাগল না হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান হওয়া, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও কাফের না হওয়া। আর যদি উভয় সাক্ষী ফাসিক হয় বা গালি দেয়ার দরুণ র্দুরা মারা হয়েছে বা উভয় বা বর ও কনের আগের পক্ষের ছেলে হওয়া তাহলে উভয়ের সামনে বিয়ে করা শুদ্ধ।


পঞ্চম শর্ত হল- মহিলা রাজি হওয়া যদি মহিলা প্রাপ্ত বয়স্ক হয় বাকিরা না হয় ছায়্যিবা হয়।


ছায়্যিবা ঐ মহিলাকে বলে যে, বিয়ের সহিত তার স্বামী তার সাথে মিলন করেছে আর বাকিরা ঐ মহিলাকে বলে যে, বিয়ের সহিত তার স্বামী তার সাথে মিলন করেনি। 


৬ষ্ঠ শর্ত হল- ইজাব ও কবুল একই মজলিসে হওয়া।


৭ম শর্ত হল- ইজাব কবুলের বিপরীত না হওয়া অর্থাৎ- যদি মহিলা বলে আমি তোমাকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে তোমাকে বিয়ে করলাম, অতএব যদি পুরুষ বলে- আমি এক হাজার টাকার বিনিময়ে তোমাকে স্বীয় বিয়েতে কবুল করলাম, তাহলে শুদ্ধ হবে। আর যদি পুরুষ বলে আমি বিয়ে কবুল করলাম, আর মোহর কবুল করলাম না। তাহলে এমতাবস্থায় বিয়ে শুদ্ধ হবেনা। কেননা এ কবুল ইজাবের বিপরীত। আর যদি বিয়ে কবুল করে এবং মোহরের বিষয়ে চুপ থাকে অর্থাৎ মোহর কবুল করেছে কিনা সে ব্যাপারে কিছু না বলে। তাহলে বিয়ে শুদ্ধ হবে।


৮ম শর্ত হল- সাক্ষীগণ আক্দ সম্পাদনকারী দ্বয়ের ইজাব ও কবুলকে শুনা, অর্থাৎ যখন আক্দ সম্পাদনকারী দ্বয় ইজাব ও কবুল করে তখন উভয় সাক্ষী একসাথে শুনা আর যদি পৃথক পৃথক ভাবে শুনে তাহলে বিয়ে শুদ্ধ হবে না। 


৯ম শর্ত হল- বিয়েকে সম্পর্কিত করবে মহিলার সমস্ত অঙ্গের প্রতি অর্থাৎ বর বলবে আমি তোমাকে বিয়ে করলাম বা বিয়েকে সম্পর্কিত করবে এমন অঙ্গের প্রতি যা দ্বারা পূর্ণ শরীর উদ্দেশ্য করা যায় যেমন মাথা, ঘাড়, অর্থাৎ পুরুষ বলবে আমি তোমার মাথা বা ঘাড়কে বিয়ে করলাম। 


১০ম শর্ত হল- সাক্ষীদ্বয়কে জানতে হবে বর ও কনে কে, কে কাকে বিয়ে করছে। ২১৮

 ➥২১৮. ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী।


মাসআলাঃ একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষীর সামনে বিয়ে করা জায়েয আছে। ২১৯

➥২১৯. হিদায়া।

 

মাসআলাঃ আরবী শব্দ দ্বারা বিয়ে সহী হয় অর্থাৎ ইজাব ও কবুল, অনুরূপভাবে হিন্দি, ফার্সি, বাংলা ইত্যাদি শব্দ দ্বারাও বিয়ে শুদ্ধ হয়, যদি আক্দ সম্পাদনকারীদ্বয় উহার অর্থ নাও বুঝে। ২২০

➥২২০. শরহে বিকায়া।


মাসআলাঃ যদি বর ও কনে উভয় অপ্রাপ্ত বয়স্ক হয় বা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক অন্যজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হয় বা উভয় পাগল হয় বা একজন পাগল হয় তাহলে উক্ত বর্ণিত প্রত্যেক অবস্থায় অভিভাবক ব্যতীত বিয়ে শুদ্ধ হবেনা।২২১

➥২২১. শরহে বিকায়া, হিদায়া, খুলাসাতুল মাসায়িল।

 

মাসআলাঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে বংশ প্রমাণ করার জন্য কমপক্ষে ছয় মাস আর বেশীর মধ্য দুই বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ যদি বিবাহের পর কোন স্ত্রীর ছয় মাসের পর ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে তাহলে ঐ ছেলে সন্তান তার বংশধর হিসাবে প্রমাণিত হবে অর্থাৎ উক্ত সন্তানকে তার স্বামীর ছেলে হিসাবে প্রমাণিত হবে, যে ছয় মাস পূর্বে শাদী করেছে।


মাসআলাঃ কাযী সাহেব মোহর নির্ধারণ করতে পারবে, কাযী সাহেবের উপর ইখতিয়ার তথা অধিকার রয়েছে যে, যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ই কারো মোহরের উপর সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে এক্ষেত্রে কাযী তার পক্ষ হতে মোহর নির্ধারণ করে দেবে। ২২২

➥২২২. বাহরুর রায়েক, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৫৯।


মাসআলাঃ বংশ জারী থাকার জন্য সন্তান হওয়া এটা আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নিয়ামত। 


মাসআলাঃ যেহেতু মানুষের বংশ অবশিষ্ট থাকা বিয়ের উপর নির্ভরশীল এবং মানুষের স্বভাবগত ইচ্ছাও এজন্য আল্লাহ্ তায়ালা বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন।


মাসআলাঃ বোবা ব্যক্তি বলে দেয়া ও ইশারা করা মাথা বা চোখ বা হাত দ্বারা, সে বিয়ে, তালাক, বেচা-কেনা জায়েয হবে।


মাসআলাঃ মুবাহ কথাও মসজিদে অনুমতি নেই। আওয়াজ উচ্চ করাও জায়েয নেই। ২২৩

➥২২৩.  দুররে মুখতার, সাগীরী।

 

মাসআলাঃ কোন্ কোন্ ব্যক্তির উচ্ছিষ্ট পবিত্রঃ জুনুবী ব্যক্তি যার উপর গোসল ফরয হয়েছে হায়েজ মাসিক ঋতুস্রাব ও নিফাস সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যে রক্ত বের হয়, বিশিষ্ট মহিলার উচ্ছিষ্ট পবিত্র। (কাজী খান) কাফিরের উচ্ছিষ্টও পবিত্র তবে উহা থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা লোকজন উহা ঘৃণা করে। এজন্য উহা থেকে বিরত থাকবে। 


মাসআলাঃ জেনে রাখা উচিত বা দরকার যে, কামভাব দমন করতে পারলে বিয়ে করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। 


মাসআলাঃ যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশংকা হয় তাহলে বিয়ে করা ওয়াজিব।


মাসআলাঃ যদি কেউ নিজের স্ত্রীকে বলে ‘আগামী কাল তুমি তালাক’ তাহলে আগামী কাল সোবহে সাদিক হওয়ার সাথে সাথে সে স্ত্রী তালাকপ্রাপ্ত হয়ে যাবে। ২২৪

➥২২৪.  খোলাসাতুল মাসায়িল, ২৩ পৃষ্ঠা।


প্রশ্নঃ অবাধ্য স্ত্রীর খরচা দেয়া জরুরী কিনা? বর্ণনা করুন প্রতিদান পাবেন। অর্থাৎ তিনি মহা জ্ঞানী ও অধিক খবর রাখেন এবং তাঁরই নিকট সাহায্য প্রার্থী। মুছাম্মৎ হিন্দা নিজ স্বামীর ঘর থেকে স্বয়ং নিজেই বের হয়ে অন্য জায়গায় চলে গেছে এবং স্বামীর কাছে থাকতে অস্বীকার করছে, স্বামীর ঘরে না আসা অবস্থায় খরচার হক্বদার হবে কিনা?


উত্তরঃ যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে সীমালঙ্গন হয় তাহলে শরীয়তের বিধান মতে স্বামীর জিম্মায় খরচা দেয়া ওয়াজিব নয়। হিদায়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, যদি মহিলা অবাধ্য হয় তাহলে স্বামীর ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত তার জন্য খরচা নেই। ২২৫

➥২২৫. হিদায়া, ২য় খণ্ড, ৪১ পৃষ্ঠা; আলমগীরী, ১ম খণ্ড, ৫৪৫ পৃষ্ঠা; বাবুন্ নাফকাত।

 
Top