তিলাওয়াতে সিজদার বর্ণনা



মাসআলাঃ পবিত্র কোরআন শরীফে সেজদার আয়াত ১৪টি। যে ব্যক্তি কোরআন শরীফের এ ১৪টি সেজদার আয়াত একই বৈঠকে পড়বে এবং সবগুলো সেজদাহ ঐ বৈঠকেই আদায় করবে। ১১০

 ➥১১০. আলমগীরী, তানবীর, দুররে মুখ্তার।


মাসআলাঃ প্রত্যেক মুসলমান, সুস্থ মস্তিস্কধারী এবং প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের উপর সেজদার আয়াত পড়লে ও শুনলে সেজদাহ ওয়াজিব হয়। ১১১

➥১১১. কবীরী, আলমগীরী।


মাসআলাঃ যদি কোনো হানাফী মাযহাবের লোক অন্য মাযহাব যেমন- শাফেয়ী, মালেকী বা হাম্বলী মাযহাবের ইমামের পিছনে ইক্তেদা করলে তখন যেখানে হানাফী মাযহাবে সেজদাহ রয়েছে সেখানে ঐ ইমাম সেজদাহ না করলে মুক্তাদিও সেজদা করবে না।  ১১২

 ➥১১২. গায়াতুল আওত্বার।


মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে মুসল্লী ব্যতীত অন্য কারো থেকে সিজদার আয়াত শ্রবণ করলে নামাযের পর সিজদা আদায় করবে, নামাযরত অবস্থায় তিলাওয়াতের সিজদা করবেনা, কেননা তা মুসল্লী ব্যতীত অন্য ব্যক্তি শ্রবণ করেছে। দুররে মুখতার গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে- যদি মুসল্লী অন্য কোন ব্যক্তি থেকে সিজদার আয়াত শ্রবণ করে তাহলে নামাযরত অবস্থায় তিলাওয়াতে সিজদা করবেনা কেননা উহা স্বীয় নামাযের অন্তর্ভূক্ত নয় বরং নামাযের পরে তিলাওয়াতে সিজদা করবে। ১১৩

 ➥১১৩. দুররে মুখতার, ২য় খণ্ড, ১১২পৃষ্ঠা।


মাসআলাঃ নামাযের মধ্যে আয়াতে সিজদার দরুণ তিলাওয়াতে সিজদা বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি আদায় করা জরুরী। সিজদার আয়াত পড়ার বা শ্রবণ করার পর দ্রুত তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়।  ১১৪

 ➥১১৪. ত্বাহত্বাভী আলা মারাকিয়িল ফালাহ।


মাসআলাঃ শুধুমাত্র সিজদার আয়াতের অনুবাদের দ্বারাও তিলাওয়াতে সিজদা আবশ্যক। কুরআন যেহেতু শব্দাবলী ও অর্থ সমূহের সমষ্টির নাম সেহেতু যদি কোন ব্যক্তি পূর্ণ আয়াতে সিজদার অনুবাদ পড়ে তাহলে তার উপর তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হয়ে যাবে, ‘‘কেননা উহা সিজদার আয়াত, সে বুঝতে সক্ষম হোক বা নাহোক যদিও ফার্সী ভাষায় তিলাওয়াত করে।”  ১১৫

 ➥১১৫. দুররে মুখতার।

 

“তিলাওয়াতকারী ও শ্রোতা উভয়ের উপর তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবে শ্রোতা বুঝুক বা নাবুঝুক।”  ১১৬

➥১১৬. ফতওয়ায়ে কাজী খান, ১ম খণ্ড, ১৫৬ পৃষ্ঠা; ফতাওয়ায়ে হক্কানীয়া, ২য় খণ্ড, ৩৪৪পৃষ্ঠা।


মাসআলাঃ শুধুমাত্র সিজদার আয়াত লিখলে তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হয় না। গ্রন্থকার যদি সিজদার আয়াত লিখে বা উহা বানান করে তাহলে তার উপর তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবে না। ১১৭

➥১১৭. শামী, বাবু সুজোদিত্ তিলাওয়াত, ২য় খণ্ড, ১০৩পৃষ্ঠা; কবীরী, পৃষ্ঠা-৪৬৪।


“অনুরূপভাবে লিখা বা উচ্চারণ ব্যতীত দৃষ্টিপাতের দরুণ তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবেনা।”


মাসআলাঃ পাগল থেকে সিজদার আয়াত শ্রবণ করলে তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হয় না, যেহেতু তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হওয়ার জন্য তিলাওয়াতকারী আহল (যোগ্য) ও মুকাল্লাফ (যার উপর শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য) হওয়া জরুরী। আর পাগল যেহেতু তিলাওয়াতের মুকাল্লাফ ও আহল নয় সেহেতু পাগল থেকে সিজদার আয়াত শ্রবণ করলে তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হয়না, অবশ্যই ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুমিয়ে থাকলে হাক্বীক্বতের দৃষ্টিতে মুকাল্লাফ, এজন্য ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে সিজদার আয়াত শ্রবণ করলে গ্রহণযোগ্য অভিমত অনুযায়ী তিলাওয়াতে সিজদা আবশ্যক। কিন্তু না জানার দরুণ স্বয়ং ঘুমন্ত ব্যক্তির উপর তিলাওয়াতে সিজদা আবশ্যক নয়। ১১৮

 ➥১১৮. আল আশবা ওয়ান্ নাযাযির, আলক্বায়িদা তুচ্ছানিয়া।


মাসআলাঃ আসর ও ফজরের সময় তিলাওয়াতে সিজদা জায়েয, যদিও উক্ত সময়ে নফল নামায সমূহ নিষিদ্ধ, কিন্তু কাযা নামায সমূহের ন্যায় উক্ত সময়ে তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা জায়েয।


মাসআলাঃ যে তিলাওয়াতে সিজদা নামাযে ওয়াজিব হয় তা নামাযেই আদায় করতে হবে স্বতন্ত্র সিজদা করে অবশিষ্ট নামায জারী রাখবে।


মাসআলাঃ রুকুতে যাওয়ার সময় তিলাওয়াতে সিজদার জন্য অন্তরে ইচ্ছা করাও শরীয়ত অনুমদিত তবে রুকুতে নামাযের সিজদা নিয়ত ব্যতীত আদায় হবেনা, কিন্তু রুকুতে তিলাওয়াতে সিজদার নিয়তের জন্য শর্ত হল-সিজদার আয়াত পড়ার পর রুকু করতে তিন আয়াতের অতিরিক্ত বিরতি হতে পারবে না নতুবা রুকুতে নিয়ত শুদ্ধ নয়। ১১৯

➥১১৯. ত্বাহত্বাভী আলা মারাকিয়িল ফালাহ্, বাবু সুজোদিত্ তিলাওয়াত, পৃষ্ঠা-২৬৪।

 

“নামাযের রুকুতে তিলাওয়াতের সিজদা যখন উহার নিয়ত করবে অর্থাৎ সে তিলাওয়াতের সিজদা আদায়ের নিয়ত করে উহাতে, সিজদার আয়াতের পর তিন আয়াতের অতিরিক্ত পাঠ করলে তা বাদ হয়ে যাবে ইজমা এর ভিত্তিতে।” বাদায়িয়ুস্ সানায়ি গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে- “যদি সূরার মধ্যভাগে সিজদার আয়াত থাকে তাহলে উহা সমাপ্ত করা উচিত।” ১২০

➥১২০. ফাসলুন ফী কাইফিয়তে আদায়িহা।

 

মাসআলাঃ ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে সিজদার আয়াত শ্রবণ করা অর্থাৎ- তিলাওয়াতের সিজদা প্রত্যেক ঐ সিজদার আয়াত শ্রবণে ওয়াজিব হয়ে যায় যা মুকাল্লাফ (যার উপর শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য) ব্যক্তি থেকে শুনা হয় চাই সে ব্যক্তি জাগ্রত হোক বা ঘুমন্ত হোক। তিলাওয়াতের সিজদা করা আবশ্যক। আল বাহর্রু রায়িক গ্রন্থে উল্লেখ আছে- “কোন ব্যক্তি ঘুমন্ত অবস্থায় সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করল অতঃপর তা অপর ব্যক্তি শ্রবণ করল তাহলে তার উপর সিজদা করা আবশ্যক হবে।”  ১২১

➥১২১. আল বার্হ্রুরায়িক, বাবু সিজদাতিত্ তিলাওয়াত, ১ম খণ্ড, ১১১পৃষ্ঠা; খুলাসাতুল ফতওয়া, ১ম খণ্ড, ১৮৪পৃষ্ঠা।

 

ফাউজূবিস্ সিজদাতিত্ তিলাওয়াত, ফতওয়ায়ে তাতারখানীয়া, ১ম খণ্ড, ৭৭৩পৃষ্ঠা “অথবা সুস্থ্য মস্তিষ্কের অধিকারী ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে নিশ্চয় সিজদা ওয়াজিব হবে যদি সিজদার আয়াত তার থেকে শ্রবণ করে।”


মাসআলাঃ যদি কোন ব্যক্তি তিলাওয়াতের সময় তিলাওয়াতে সিজদা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে সিজদার আয়াতকে বাদ দেয় তাহলে তা মাকরূহ হবে।  ১২২

➥১২২. কবীরী, ৪৭০ পৃষ্ঠা।

 

মাসআলাঃ নামাযের বাইরের ব্যক্তি সিজদার আয়াত পাঠ করা এবং নামাযী শ্রবণ করা অর্থাৎ কোন ব্যক্তি নামাযে লিপ্ত হয়ে হঠাৎ নামাযের বাইরের ব্যক্তি সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করল এবং নামাযী নামাযের মধ্যে শ্রবণ করল। তাহলে নামাযী অথবা মুসল্লী তথা শ্রোতা তিলাওয়াতে সিজদা নামাযের পরে আদায় করবে।


মাসআলাঃ সিজদার আয়াত তিলাওয়াতের পর পাঁচ, ছয় আয়াত পড়ে সিজদা করা:- সিজদার আয়াত তিলাওয়াতের পর দ্রুত সিজদা করে নেয়া উচিত, যদি নামাযে কোন কারণে দেরী হয়ে যায় এবং স্মরণ আসার পর সিজদা করে নেয় তাহলে নামায হয়ে যাবে। কিন্তু দেরী হওয়ার কারণে সাহু সিজদা করা আবশ্যক হবে। এজন্য যে, তিলাওয়াতের সিজদা করা ওয়াজিব হয়েছে। আর সাহু সিজদা না করলে নামায পূণরায় পড়া ওয়াজিব হবে।


মাসআলাঃ তিলাওয়াতে সিজদার ক্ষেত্রে আসরের পর যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য্য লাল বর্ণ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জায়েয। এরপর মাকরূহ।

 
Top