মুসাফিরের বর্ণনা



মাসআলাঃ মুসাফিরের উপর কসর (ফরযের ক্ষেত্রে চার রাকাতের দু’রাকাত পড়া) পড়ার তাকীদ (গুরুত্ব) রয়েছে, পূর্ণ নামায পড়া গুনাহ।


মাসআলাঃ যে মুসাফির ব্যক্তি ভুলে চার রাকাত পড়ে নেয় তার উচিত পূণরায় কসর পড়ে। রেলগাড়ী বা নৌকা যদি চলন্ত অবস্থায় থাকে তাহলে বসে বসে নামায পড়া জায়েয আছে।


মাসআলাঃ নৌকা বা রেলগাড়ীতে নামায শুরু করার সময় ক্বিবলার দিকে মুখ করে নিতে হবে। অতঃপর যেদিকে মুখ ফিরে যাক, ক্বিবলার দিকে মুখ ফিরানো ফরয নয়। ৯৫

➥৯৫. কুতুবে ফিকহি হানাফী।


মাসআলাঃ মুসাফিরদের জন্য সুন্নাত সমূহের হুকুম এ যে, যদি তাড়াহুড়া হয় তাহলে ফজরের সুন্নাত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নাত সমূহ ছেড়ে দেয়া জায়েয আছে, উহা ছেড়ে দেয়ার দরুণ কোন গুনাহ হবে না।


মাসআলাঃ যদি মুসাফিরের তাড়া না থাকে এবং সাথীদের থেকে পিছনে পড়ে যাওয়ার ভয় না থাকে তাহলে সুন্নাতসমূহ ছেড়ে দেবে না।


মাসআলাঃ সুন্নাতসমূহ সফরে পরিপূর্ণ ভাবে পড়বে, তাতে কম নেই (অর্থাৎ কসর নেই)।


মাসআলাঃ ফজর, মাগরিব ও বিতিরের নামাযেও কসর অর্থাৎ কম নেই।


মাসআলাঃ  সফরের দূরত্ব আনুমানিক ইংরেজি ৪৮ মাইল।


মাসআলাঃ হানাফী ফিক্হ এর দৃষ্টিতে সাধারণ সফরের দরুণ নামায কসর করা যাবেনা বরং কমপক্ষে তিন দিনের পরিমাণ সফর করা জরুরী, বর্তমান সময়ে ওলামায়ে কিরাম ৪৮ মাইল অথবা ৭২ কিলো মিটার পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।


মাসআলাঃ কসর ফরয নামায সমূহের জন্য নির্ধারিত, যদি সুন্নাত সমূহ পড়ার সুযোগ না হয় তাহলে পড়ার প্রয়োজন নেই তবে সময় পেলে সুন্নাত নামায পরিপূর্ণ ভাবে আদায় করতে হবে। র্দুরে মুখতার গ্রন্থে উল্লেখ আছে- সুন্নাত পরিপূর্ণভাবে আদায় করবে। যদি মুসাফির নিরাপদ ও আরামে অবস্থান করতে পারে নতুবা নয়, অনুরূপ ভাবে সুন্নাত ও নফল সমূহের মধ্যে কসর নেই।৯৬

➥৯৬. বাদায়িয়ুস্ সানায়ি, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯২।

 

মাসআলাঃ যদি কোন মুসাফির কসরের পরিবর্তে পূর্ণ নামায আদায় করে তাহলে জিম্মাদারী থেকে নিষ্কৃতি লাভ করবে কিনা?


যদি দ্বিতীয় রাকাতের পর বৈঠক করে থাকে তাহলে নামায শুদ্ধহয়ে জিম্মাদারী থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য যথেষ্ট অবশ্য সালাম দেরীতে করার কারণে গুনাহগার হবে। কিন্তু প্রথম বৈঠক ব্যতীত দাঁড়িয়ে মুসাফির চার রাকাত পড়ে নেয় তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে পূণরায় নামায পড়তে হবে। “অতপর যদি মুসাফির পূর্ণ নামায আদায় করে এবং সে যদি প্রথম বৈঠকে বসে থাকে তাহলে তার ফরয আদায় হয়ে যাবে কিন্তু উহা নিন্দনীয়।” ৯৭

➥৯৭. দুররে মুখতার সালাতুল মুসাফির।

 

ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, বাবুন ফী সালাতিল মুসাফির, ১ম খণ্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে- যদি মুসাফির চার রাকাত আদায় করে এবং দ্বিতীয় রাকাতের পর তাশাহুদের পরিমাণ বসে তাহলে জিম্মাদারী আদায় হয়ে যাবে এবং শেষ দুই রাকাত নফল হিসেবে গণ্য হবে সালাম দেরী করার কারণে গুনাহগার হবে আর যদি দ্বিতীয় রাকাতের পর তাশাহুদ পরিমাণ না বসে তা হলে নামায বাতিল হয়ে যাবে, এরূপ হিদায়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে।


মাসআলাঃ কসর নামাযের জন্য কষ্ট হওয়া জরুরী নয়, বিনা কষ্টে   গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায়। সফরের মধ্যে রুখসত এর বিধান কোন কষ্টের প্রতি দৃষ্টি রেখে করা হয়নি, বরং মূল সফরের জন্য রুখসত দেয়া হয়েছে, স্বয়ং সফর কষ্টের কারণ হওয়ার দরুণ বিধি-বিধান জারী হয়ে সফরের মধ্যে কসর করতে হবে।


মাসআলাঃ মুসাফির যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে উহার দূরত্ব ধর্তব্য হবে যেমন হিন্দিয়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে- যখন মুসাফির স্বীয় শহর থেকে সফরের ইচ্ছা করে এবং স্বীয় গন্তব্য স্থলের দিকে দুইটি রাস্তা থাকে তৎমধ্যে একটি তিন দিন তিন রাতের দূরত্বে। ৯৮

➥৯৮. হিন্দিয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩৮।

 

মাসআলাঃ অনাবাদী জায়গার মধ্যে ইক্বামতের নিয়তের জন্য স্থান উপযুক্ত হওয়া জরুরী, এমন অনাবাদী জায়গায় ইক্বামতের নিয়ত গ্রহণযোগ্য নয় এজন্য নিয়ত করার সত্বেও নামায কসর পড়তে হবে, “এমনকি মুসাফির স্থলভাগ বা জলভাগ এর মধ্যে ইক্বামতের নিয়ত করলে তা শুদ্ধ হবেনা।” ৯৯

➥৯৯. ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, সালাতুল মুসাফির।


মাসআলাঃ ইক্বামতের নিয়ত ব্যতীত কসর করা ওয়াজিব, অর্থাৎ কোন স্থানে পনের দিনের ইক্বামতের নিয়ত ব্যতীত এ ব্যক্তি মুসাফিরের হুকুমে থাকবে যার উপর নামায কসর করা ওয়াজিব, ইক্বামতের নিয়ত ব্যতীত সফরের হুকুমে থাকবে।  ১০০

➥১০০. হিদায়া, ১ম খণ্ড, ১৪৯পৃষ্ঠা।


মাসআলাঃ মুসাফির ইমামের ইক্বতিদার মধ্যে মুক্বীমের নামাযের জন্য অবশিষ্ট নামাযে ক্বিরাত নেই। অর্থাৎ- ইমাম অবসর হওয়ার পর মুক্বীম মুকতাদীর জন্য অবশিষ্ট নামায পড়া জরুরী কিন্তু যেহেতু এটা ইমামের পিছনে গণ্য এ জন্য মুকতাদীর যিম্মায় পরবর্তী রাকাতে ক্বিরাত জরুরী নয়, বরং সূরা ফাতিহার সমপরিমাণ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে রুকু করবে। “মুসাফিরের পিছনে মুক্বীমের ইক্বতিদা শুদ্ধ হবে ওয়াক্তিয়া ও কাযা উভয় ক্ষেত্রে, সুতরাং মুক্বীম যখন অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করার জন্য দাঁড়াবে সে ক্বিরাত পড়বেনা।” ১০১

➥১০১. দুররে মুখতার, বাবু সালাতিল মুসাফির।

 

মাসআলাঃ মুসাফির ইমামের ক্ষেত্রে পরবর্তী দুই রাকাত নফল হিসেবে গণ্য হবে পক্ষান্তরে মুক্বীম মুকতাদীর সম্পূর্ণ নামায ফরয, এজন্য ফরয আদায়কারীর ইক্বতিদা নফল আদায়কারীর পিছনে আবশ্যক হয়ে মুকতাদীদের নামায ভঙ্গ করে দেয়। এজন্য উহা পূণরায় পড়া জরুরী।  ১০২

➥১০২. ফতওয়ায়ে শামী, ২য় খণ্ড; বাবুস্ সালাতিল মুসাফির।


মাসআলাঃ ইমামের অবস্থা অবগত হওয়া জরুরী অর্থাৎ- কোন ইমামের সফর কিংবা ইক্বামতের ব্যাপারে যখন মুকতাদী জানবেনা তখন মুকতাদীকে সন্দেহের শিকার হতে হবে। এজন্য ইমামের অবস্থা অবগত হওয়া মুকতাদীর জন্য জরুরী। তাই মুকতাদী ইমামের সফর ও ইকামতের অবস্থা জেনে নেয়া উচিত, যাতে তার ইকতিদা শুদ্ধ হয়। নতুবা অজ্ঞতাবস্থায় ইক্বতিদা শুদ্ধ হবেনা। ফতওয়ায়ে শামীতে উল্লেখ আছে- ইমামের অবস্থা অবগত হওয়া শর্ত, তবে তার সারমর্ম হল ইমামের অবস্থা অবগত হওয়া শর্ত হিসেবে গণ্য হবে। ১০৩

➥১০৩. বাবুস্ সালাতিল মুসাফির, ২য় খণ্ড, ৫৩১পৃষ্ঠা।

 

আল বাহর্রু রায়িক, ২য় খণ্ড, ৩৫পৃষ্ঠা বাবুল মুসাফির এর মধ্যে উল্লেখ আছে- ফাতওয়া গ্রন্থে যা উল্লেখ আছে তা প্রযোজ্য হবে যখন সে ইকতিদা করে ইমামের পিছনে সে জানেনা- ইমাম মুসাফির  নাকি মুক্বীম তা হলে ইকতিদা শুদ্ধ হবেনা কেননা জামাতে নামায আদায়ের জন্য শর্ত হল- ইমামের অবস্থা অবগত হওয়া।


মাসআলাঃ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এর রাকাত সমূহে সমস্ত ফক্বীহ একমত, ফরয নামায ব্যতীত অন্যান্য নামাযে কসর নেই তবে উত্তম হল যদি সুযোগ হয় তাহলে পড়বে। মুহীতে সারখসী গ্রন্থে উল্লেখ আছে সুন্নাত সমূহে কসর নেই, কতিপয় আলেম মুসাফিরের জন্য সুন্নাত সমূহ তরক করাকে জায়েয বলেছেন।

 
Top