গোসলের বর্ণনা



মাসআলাঃ গোসল করার প্রারম্ভে যদি প্রয়োজন হয় তবে প্রথমে ইস্তিঞ্জা করে নিবে। অতঃপর শরীরে যে অপবিত্র লেগেছে তা ধুয়ে নিবে। তারপর সমস্ত শরীর ঘষা-মাজা করে তিনবার পানি প্রবাহিত করবে, যদি ঘষা-মাজা করা না হয় তাহলে হয়তো বা শরীরের কোন অংশ কিংবা চুল পানিতে ভিজবে না। স্মরণ রাখতে হবে ওযুর মধ্যে নাকের ভিতর পানি দেয়া এবং কুলি করা সুন্নাত। কিন্তু গোসলের মধ্যে তা ফরয, যদি গোসল ফরয হয়।


মাসআলাঃ গোসল চার প্রকার। যথা- (১) ফরয (২) ওয়াজিব (৩) সুন্নাত (৪) মুস্তাহাব।  ১৯

 ➥১৯. ফতোয়ায়ে আলমগীরী


মাসআলাঃ ফরয গোসল সমূহ হচ্ছে- যথা: (১) সহবাসের পরের গোসল। (২) ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পরের গোসল, (৩) নেফাসের রক্ত বন্ধ হওয়ার পরের গোসল।


মাসআলাঃ ওয়াজিব গোসল-যথা: (১) জীবিতদের উপর মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো ওয়াজিব। কিতাবে জীবিতদের উপর মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো ওয়াজিব বলেছেন। কিন্তু আসলে এ গোসল আমলী ফরযে কেফায়া এটা নিম্ন স্তরের হওয়ার কারণে ফিকাহ বিশেষজ্ঞগণ ওয়াজিব শব্দটি প্রয়োগ করেছেন।  ২০

➥২০. ফতোয়ায়ে শামী


(২) সমস্ত শরীরে নাপাকী লেগেছে অথবা শরীরের অংশ বিশেষে নাফাকী লেগেছে কিন্তু নাফাকীর স্থান লুকায়িত অর্থাৎ নাজাসাতে হাকীকী নির্দিষ্ট কোন স্থানে লেগেছে তা জানা নেই। এমতাবস্থায় সমস্ত শরীর ধৌত করা ওয়াজিব।২১

➥২১. ফতোয়ায়ে আলমগীরী, দুররে মুখতার।

 

দুররে মুখতার কিতাবে উপরোলে­খিত অবস্থায় সমস্ত শরীর ধৌত করা অর্থাৎ গোসল করাকে ওয়াজিবই লিখেছেন। কিন্তু গ্রহণযোগ্য মত হল এই যে, এর এক অংশকে ধুয়ে নেয়াই যথেষ্ট। তবে গোসল করে নেয়া মুস্তাহাব।


মাসআলাঃ সুন্নাত গোসল। যথা: (১) জুমআর নামাজের জন্য গোসল করা। (২) উভয় ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা। (৩) এহরামের আগে গোসল করা। (৪) হজ্ব অথবা উমরাহের জন্য গোসল করা। (৫) আরাফার মাঠে অবস্থানের জন্য গোসল করা। ২২

➥২২.  আলমগীরী, দুররে মুখতার, শামী। 


মাসআলাঃ মুস্তাহাব গোসল ২৫টি। যা নিম্নে প্রদত্ত হল। 


(১) মস্তিষ্ক বিকৃতি ও বেহুশী দূর হওয়ার পর গোসল করা।


(২) সিংগা লাগানোর পর গোসল করা।


(৩) শবে বরাতে গোসল করা অর্থাৎ শা’বান মাসের ১৫ তারিখের রাতে গোসল করা। (উল্লেখ্য যে, ইসলামের দৃষ্টিতে রাত আগে আসে, দিন পরে আসে)।


(৪) আরফার রাতে অর্থাৎ জিলহজ্ব মাসের নবম তারিখের রাতে।


(৫) ক্বদরের রাতে গোসল করা।


(৬) মুযদালিফায় অবস্থানের পূর্ববর্তী সময়ে গোসল করা।


(৭) কোরবানীর দিন সকালে গোসল করা।


(৮) মিনায় প্রবেশের পূর্ববর্তী সময়ে গোসল করা।


(৯) মিনায় পাথর নিক্ষেপের পূর্বে গোসল করা।


(১০) তাওয়াফে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কায় প্রবেশের পূর্ববর্তী সময়ে গোসল করা।


(১১) সূর্যগ্রহণের সময় নামায পড়ার জন্য গোসল করা।


(১২) চন্দ্রগ্রহণ ধরলে নামায পড়ার জন্য গোসল করা।


(১৩) ভয়ের সময় নামাজের জন্য গোসল করা।


(১৪) বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নামায, তাস্বীহ, তাহলীল ইত্যাদির পূর্বে গোসল করা। 


(১৫) রাসূলে করীম (ﷺ)-এর সম্মানার্থে মদীনা শরীফে প্রবেশ করার সময় গোসল করা।


(১৬) নতুন কাপড় পরিধান করার সময় গোসল করা।


(১৭) মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পর গোসল করা।


(১৮) হত্যা করার সময় হত্যাকৃত ব্যক্তির উপর গোসল করা। এ হত্যা, যে কোন রকমেরই হোক না কেন।


(১৯) সফর থেকে ফিরে আসার পর গোসল করা।


(২০) মহিলাদের ইস্তেহাজার খুন বন্ধ হওয়ার পর গোসল করা।


(২১) অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের উপর গোসল করা। যখন সে বয়সের দিক দিয়ে বালেগ হবে।


(২২) ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সময় গোসল করা।


(২৩) মানুষের মাহফিলে উপস্থিত হওয়ার জন্য গোসল করা।


(২৪) গোনাহ থেকে তাওবা করার পূর্বে গোসল করা।


(২৫) স্বপ্নদোষের পর স্ত্রীর নিকট গমনের ইচ্ছা করলে প্রথমে গোসল করা। ২৩

➥২৩. তান্বীরুল আবছার, দুররে মুখতার, পৃষ্ঠা-১১৪, শামী, পৃষ্ঠা-১১৫।

 

মাসআলাঃ নাকের ভিতরের শুষ্ক ময়লা-আবর্জনার পরত তথা ছিলকা নিঃসন্দেহে পবিত্রতা অর্জনে প্রতিবন্ধক। এভাবে খামিকৃত আটা নখে লেগে থাকাও পবিত্রতা অর্জনে প্রতিবন্ধক। প্রথমে নাকের ভিতরের ময়লা-আবর্জনার শুষ্ক পরত ও আটাকে দূর করে পরে গোসল করবে। নতুবা গোসল হবে না। ২৪

➥২৪. দুররে মুখতার, ফতোয়ায়ে শামী।

 

মাসআলাঃ যদি কারো শরীর অথবা চুলের মধ্যে মেহেদী কিংবা তৈল লাগানো হয় তবে এই মেহদী কিংবা তৈল পবিত্রতা অর্জনে প্রতিবন্ধক নয়। টিক তেমনিভাবে নখের ভিতরে মাটি জাতীয় ময়লা যদি পাক হয় তা প্রতিবন্ধক নয়।  ২৫

➥২৫. তানবীরুল আবছার, দুররে মুখতার।

 

মাসআলাঃ দাঁতের ফাঁকে গোশতের ছোট টুকরা অথবা অন্য কোন খাবার আটকে থেকে গেলে গোসল আদায় শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে যদি কোন শক্ত বস্তু হয়, যার কারণে পানি পৌঁছতে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে গোসল শুদ্ধ হবেনা।২৬

➥২৬. দুররে মুখতার।

 

মাসআলাঃ আংটি অথবা কানের বালী বা দুল যদি এমন শক্ত ভাবে আটকে থাকে যে তার ভিতর পানি পৌঁছানে সম্ভব নয় তাহলে গোসলের সময় তা খুলে নেয়া ওয়াজিব হবে। নতুবা নাড়াচাড়া করাই যথেষ্ট। ২৭

➥২৭. তানবীরুল আবছার।


মাসআলাঃ  এক সময়ে কয়েকজন স্ত্রীর সাথে কিংবা একই স্ত্রীর সাথে একাধিকবার সহবাস করলে একবার গোসলই ওয়াজিব।


মাসআলাঃ গোসল করার সময় একটি চুলও যদি শুকনা থেকে যায় তাহলে পূনরায় গোসল করতে হবে। হ্যাঁ যদি কিছু শরীর শুকনা থেকে যায় এবং নামাযের পূর্বে স্বীয় ভিজা হাত উহার উপর দিয়ে ফিরিয়ে নেয় তাহলে এ গোসল যথেষ্ট হবে।


মাসআলাঃ মহিলা ফরয গোসলের জন্য চুলের খোঁপা খোলা জরুরী নয়, শুধু চুলের গোড়া ভিজানো যথেষ্ট।


মাসআলাঃ উন্মুক্ত ময়দানে যেখানে আবাদী থাকবে সেখানে উলঙ্গ গোসল করা হারাম। তবে গোসলখানাতে বা কোন আড়ালে বা বাউন্ডারীতে উলঙ্গ গোসল করাতে ক্ষতি নেই। গোসলের মধ্যে চার, পাঁচ সেরের অধিক পানি খরচ করবে না।


মাসআলাঃ গোসলের মধ্যে মালিশ করা শর্ত নয়, যদি এক চুলের পরিমাণও কোন জায়গা শুকনা থেকে যায় তাহলে গোসল হবে না।


মাসআলাঃ কুফরী থেকে ইসলামে প্রবেশ করার সময় গোসল করা ওয়াজিব।


মাসআলাঃ মানুষের শরীর হুকমী নাপাকের দরুণ নাপাক হয়েছে, তখন চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো শরীয়তের বিধান মতে ফরয। যেমন- গোসল ফরয হওয়া অবস্থায়, বা হায়েয (মাসিক) বা নিফাসের (সন্তান প্রসবের পর যে রক্ত বের হয়) রক্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর।


মাসআলাঃ নাকে পানি দেয়া ও কুলি করা যানাবাতের গোসল (ফরয গোসল) ইত্যাদিতে ফরয। কিন্তু অযুতে সুন্নাত।


মাসআলাঃ ফরয গোসলের মধ্যে মাথার চুলসমূহ খিলাল করা ওয়াজিব, অযুর মধ্যে ওয়াজিব নয়।  ২৮

➥২৮. তাফহীম, পৃষ্ঠা-৫৫৯।

 
Top