শরীয়তের আদিষ্ট বিষয়াবলীর বর্ণনা



মাসআলাঃ শরীয়তের আদিষ্ট বিষয়াবলী চার প্রকার। যথা- ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাব।


ফরয তাকেই বলে, যা অকাট্য দলিল দ্বারা আবশ্যিক হিসেবে প্রমাণিত। ওয়াজিব তাকেই বলে, যা অকাট্য দলিল থেকে অপেক্ষাকৃত দূর্বল দলিল তথা দলিলে যান্নী দ্বারা আবশ্যিক হিসেবে প্রমাণিত।


সুন্নাত দু’প্রকার। (১) সুন্নাতে মুআক্কাদাহ- যা নবী করীম (ﷺ) সদা সর্বদা পালন করেছেন এবং যা পালন না করলে গোনাহ অবধারিত। (২) সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদাহ- যা বর্জন করা অপছন্দনীয় হলেও অপরাধযোগ্য নয় বিধায় গোনাহ লাযিম হবে না।


আর মুস্তাহাব তাকেই বলে যা নবী করিম (ﷺ) কোন সময় পালন করেছেন। আবার কোন সময় বর্জনও করেছেন। তবে সলফে সালিহীন তা পছন্দ করেছেন।


এগুলোর হুকুম এই যে, ফরয পালনকারী সওয়াব পাবে এবং বর্জনকারী শাস্তি পাবে। আর অস্বীকারকারী কাফির হবে। ওয়াজিব পালনকারী সওয়াব পাবে এবং বর্জনকারী শাস্তি পাবে। তবে তা অস্বীকারকারী কাফির হবে না।


সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পালনকারী সওয়াব পাবে এবং বর্জনকারী তিরস্কারের যোগ্য হবে। তবে বর্জনে অভ্যস্থ ব্যক্তি শাস্তির যোগ্য হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তাকে হালকা তথা গুরুত্বহীন মনে করবে সে কাফির হবে। আর সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদাহ পালনকারী সওয়াব পাবে এবং তা না করলে শাস্তির যোগ্য হবেনা। মুস্তাহাব পালনকারী ফজিলত অর্জনকারী হবে। অর্থাৎ সাওয়াব পাবে। কিন্তু বর্জনকারী তিরস্কার ও শাস্তির যোগ্য হবে না।  ১

➥১. দুররে মুখতার, শামী ইত্যাদি।

 

মাসআলাঃ মান্হিয়াত তথা নিষিদ্ধ বিষয়াবলী সমূহ হচ্ছে- হারাম, মাকরূহে তাহরীমী, এসাআত, মাকরূহ ও মাকরূহে তানযিহী। 


হারাম তাকেই বলে- যার নিষিদ্ধতা অকাট্য দলিল দ্বারা আবশ্যিক ভাবে প্রমাণিত। 


মাকরূহে তাহরীমী তাকে বলে, যার নিষিদ্ধতা দলিলে যান্নী তথা খবরে ওয়াহেদ দ্বারা আবশ্যিকভাবে প্রমাণিত।


এসাআত তাকেই বলে, যার নিষিদ্ধতার আবশ্যিকতা হারাম ও মাকরূহে তাহরীমীর মত হয় না।


মাকরূহে তানযীহি তাকে বলে, যার নিষিদ্ধকরণ স্নেহ ও শিষ্টাচারের আলোকে করা হয়েছে। এগুলোর হুকুম এই যে, হারাম কাজ বর্জনকারী সওয়াব পাবে এবং সম্পাদনকারী শাস্তি পাবে। আর অবৈধতা অস্বীকারকারী কাফির হবে।


মাকরূহে তাহরীমী বর্জনকারী সওয়াব পাবে এবং পালনকারী শাস্তি পাবে। এসাআত জাতীয় কাজ সম্পাদনকারী তিরস্কারের যোগ্য হবে। আর অভ্যাসে পরিণত করে নিলে শাস্তির যোগ্য হবে। মাকরূহে তান্যীহী বর্জনকারী ফজিলত লাভ করবে। কিন্তু সম্পাদনকারী শাস্তি বা তিরস্কারের যোগ্য হবেনা। 


মাসআলাঃ ফরয ও হারাম দু’প্রকার। যথা-(১) এ’তেক্বাদী (২) আমলী।


এ’তেক্বাদী ঐ ফরয ও হারামকে বলে, যা পালন করা ফরয ও হারাম হওয়ার সাথে সাথে ঐ ফরয ও হারামের উপর বিশ্বাস স্থাপন করাও ফরয।


যেমন সাধারণ মাথা মাসেহ। এটা চার ইমামের ঐক্যমতে ফরয। যদি কেউ সাধারণ মাথা মাসেহকে অস্বীকার করে তবে সবার ঐক্যমতে সে কাফির হবে। সুতরাং যে ফরয ও হারামের অস্বীকৃতির উপর কুফরীর হুকুম দেয়া হয়েছে তথায় এ’তেক্বাদী বুঝানো হয়েছে। আর আমলী ফরয তাকেই বলে যা কেবল পালন করাই ফরয। তার সাথে এ’তেক্বাদের কোন সম্পর্ক নেই।


যেমন মাথা মাসেহের পরিমানের মধ্যে ইমামগণের মতবিরোধ। হানাফী মাযহাবে এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা ফরয। সুতরাং এর চেয়ে কম হলে অযু হবেনা। হাম্বলী মাযহাব অনুসারে সমস্ত মাথা মাসেহ করা ফরয। এর চেয়ে কম করলে অযু শুদ্ধ হবে না। এখন যদি কোন হানাফী মাযহাবের লোক হাম্বলী মতবাদ কিংবা কোন হাম্বলী হানফী মতবাদ অস্বীকার করে তবে কাফির হবেনা। হাঁ কেউ সাধারণ মাথা মাসেহকে অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে।


মাসআলাঃ এমন কাজও আছে যার ব্যাপারে আদেশ নিষেধ কিছুই নেই। এগুলো মুবাহ নামে পরিচিত।


 
Top