কোরবানীর বর্ণনা



মাসআলাঃ اِضحية ও اُضحية (উদ্ হিয়্যাতুন ও ইদ্হিয়্যাতুন) হামযা এর মধ্যে পেশ ও যের সহকারে উহার বহুবচন اَضَاحى (আদ্বাহী) আসে এবং উহাকে ضحية (দ্বাহিয়্যাতুন)ও বলা হয় যার বহুবচন ضحايا (দ্বাহায়া) আসে, আর উহাকে اَضْحاةٌ (আদ্বহাতুন)ও বলা হয়। হামযাতে যবরের সাথে উহার বহুবচন اضحٰى (আদ্বহা) عيد الاضحٰى (ঈদুল আদ্বহা) শব্দটি উহা থেকে সংগৃহীত। اضحية (উদ্বহিয়্যা) মূলত ঐ সমস্ত প্রাণীকে বলা হয় যা দ্বিপ্রহরের সময় যবেহ করা হয়, অতপর এ শব্দটি এত অধিক ব্যবহার হয় যে, ঐ সমস্ত প্রাণীদের নাম হয়ে গেছে যা কোরবানীর দিন সমূহের মধ্যে যে কোন সময়ে যবেহ করা হয়।


শরীয়তের পরিভাষায় ঐ নির্দিষ্ট প্রাণী যা নৈকট্য লাভের নিয়তে বিশেষ সময়ে যবেহ করা হয়। আর চতুষ্পদ প্রাণীর মধ্য থেকে ঐ প্রাণীগুলো হল- উট, গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি। আল ওয়াক্বিয়াত গ্রন্থে উল্লেখ আছে- দশ টাকা দিয়ে কোরবানীর জন্তু ক্রয় করা হাজার টাকা সাদক্বা, খায়রাত করা থেকে অধিক উত্তম। কেননা ঐ নৈকট্য যা রক্ত প্রবাহিত করে অর্জিত হয় তা সাদক্বা খায়রাত দ্বারা অর্জন করা যায়না। ১৩৭

➥১৩৭. ফিকহে হানাফী, ৩য় খণ্ড, ১৮৯ পৃষ্ঠা।



কোরবানীর হুকুম



মাসআলাঃ কোরবানী প্রত্যেক মুক্বীম সম্পদশালী মুসলমানের উপর কোরবানীর দিন সমূহের মধ্যে ওয়াজিব। এটা ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মুহাম্মদ, হযরত হাসান ও ইমাম এর অভিমত অনুযায়ী এবং ইমাম আবু ইউসুফ এর দুইটি রিওয়ায়াতের একটি অনুযায়ী। উহার দলীল এ যে, হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন যার কাছে সম্পদ থাকা স্বত্ত্বেও কোরবানী না করে সে যেন আমাদের ঈদগাহে কখনো না আসে।  ১৩৮

 ➥১৩৮.  আল মুসতাদরাক, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩২।


উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে, যারা কোরবানী করেন না তাদের উপর ধমকির কথা উল্লেখ আছে, আর ধমকির কথা আসে ওয়াজিব তরক করলে। ইমাম আবু ইউসুফ ও শাফী (رحمة الله) বলেন- কোরবানী সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কেননা হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- যখন তোমরা জিলহজ্বের চাঁদ দেখ এবং তোমাদের মধ্য থেকে কারো কোরবানী করার ইচ্ছা হয় তাহলে সে নিজ চুল ও নখ না কাটে।  ১৩৯

 ➥১৩৯.  সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫৬০।


উক্ত হাদীসে ইচ্ছা এর সাথে হুকুমকে মুতলাক (সাধারণ) রাখা হয়েছে। আর ইচ্ছা এর সাথে মুতলাক করা ওয়াজিব এর বিপরীত। জাহিরুর রিওয়ায়াতে আছে যে, কোরবানী প্রত্যেক ব্যক্তির উপর নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব এবং এর উপর ফতওয়া, সাদক্বায়ে ফিতরের মাসয়ালা- উহার বিপরীত, সাদক্বায়ে ফিতর তাঁর উপরও ওয়াজিব এবং তার অধিনস্থ পরিবার ও সন্তানের পক্ষ থেকেও ওয়াজিব।


ইমাম তিরমিযী হযরত আতা বিন ইয়াসার এর রিওয়ায়াত উল্লেখ করেছেন যে, হযরত আবু আইয়ুব (رضي الله عنه) বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ) এর যুগে প্রত্যেক ব্যক্তি, নিজের পক্ষ থেকে ও পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে ছাগল দিয়ে কোরবানী করতাম। আমরা নিজেরাও খেতাম এবং অন্যদেরকেও আহার করাইতাম। ১৪০

➥১৪০. সুনানে তিরমিযী, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১।

 

ইমামে আযম (رحمة الله) থেকে হাসান বিন যিয়াদের বর্ণনা এ যে, কোরবানী নিজের পক্ষ থেকেও এবং নিজ ছোট সন্তানের পক্ষ থেকেও ওয়াজিব। ছোট বাচ্চাদের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে একটি ছাগল বা সাত জনের পক্ষ থেকে উট কিংবা গরু যবেহ করবে।


মাসআলাঃ গাভী (গরু) ও উটের মধ্যে শরীক জায়েয হওয়ার দলীল হচ্ছে ঐ হাদীস শরীফ যা ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন, হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা হজ্বের ইহরাম বেঁধে রাসূল (ﷺ) এর সাথে বের হয়েছি, তখন রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, আমরা উট ও গাভীর মধ্যে শরীক হয়ে যাব। আমাদের মধ্য থেকে সাত ব্যক্তি বুদনা তথা উটের মধ্যে শরীক হব।  ১৪১

➥১৪১. সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৯৫৫।


আর সাত ব্যক্তি থেকে কম হলে উত্তমের ভিত্তিতে জায়েয হবে অবশ্য সাতের অধিক ব্যক্তি শরীক হওয়া জায়েয নেই। 


মাসআলাঃ যদি ছোট বাচ্চার সম্পদ থাকে তাহলে অধিক বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী ঐক্যমতের ভিত্তিতে তার সম্পদে কোরবানী ওয়াজিব নয় কেননা কোরবান একটি নৈকট্য লাভের ওয়াছিলা সে উহার সম্বোধীত ব্যক্তি হবেনা। ১৪২

 ➥১৪২. (ফিকহে হানীফী, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৯০ ।


মাসআলাঃ ফকীর ও মুসাফিরের উপর কোরবানী ওয়াজিব নয়, ফকীরের উপর কোরবানী ওয়াজিব না হওয়ার কারণ স্পষ্ট, মুসাফিরের উপর এ জন্য ওয়াজিব নয় যে, কোরবানী আদায় করা এমন আসবাব (কারণ সমূহ) এর সাথে নির্দিষ্ট যে আসবাব (কারণসমূহ) মুসাফিরের জন্য খুবই কষ্ট হবে, আর কোরবানীর সময় অতিবাহিত হলে আর কোরবানী দেয়া যায় না। হযরত সায়্যিদুনা আলী মারতুজা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, মুসাফিরের উপর জুমা ও কোরবানী ওয়াজিব নয়। ১৪৩

 ➥১৪৩. নাসর্রু রায়া, পৃষ্ঠা ২১১।

 
Top