ফতোয়ায়ে আজিজিয়া (১ম খন্ড) [অসম্পূর্ণ]

মূলঃ আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরী (رحمة الله)

টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

 

ঈমান ও আকীদার বিবরণ


❏ প্রশ্ন : মুমিন কে? তার পরিচয় কী?


✍ জবাব :  حامدا ومصليا ومسلماহাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

 الْمُؤْمِنُ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى دِمَائِهِمْ و أَمْوَالِهِمْ 

‘মুমিন ঐ ব্যক্তি, যার থেকে মানুষ জান, মাল ও ইজ্জত-সম্মানের ক্ষেত্রে নিরাপদ হয়ে যায়।’(এরা আমাদের জীবন কেড়ে নিতে পারে না, এটা মুসলমানদের উপর সুধারণা। এই মুসলমান আমাদের মাল নষ্ট করতে পারে না এবং ইজ্জত লুটে নিতে পারে না।) মানুষের এতটুকু আস্থা যখন সৃষ্টি হবে, তখন বুঝা যাবে, সে পরিপূর্ণ মুমিন। নতুবা নামধারী মুসলমান থেকে এসব আশা করা যায় না। বরং এমন মুসলমানের উপর আস্থা না থাকলে মনে করতে হবে, সে নামধারী মুনাফিক মুসলিম।


বরং ইদানিং মুসলমানদের মধ্যে মারামারি, কাটাকাটি, সন্ত্রাস ইত্যাদি মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। নামধারী মুসলমানদের একদল এই জাতীয় রোগে আক্রান্ত। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে হেফাযত করুন।


أَمِنَهُ النَّاسُ বাক্যে النَّاسُ তথা মানুষ শব্দটি ব্যাপক। মুসলিম অমুসলিম সকলে এর অন্তর্ভুক্ত। সকলে আস্থাশীল হতে হবে যে, ভাই সে মুমিন। মারামারি করা বা ইজ্জত নষ্ট করা তার কাজ নয়। পুরা নিরাপদ থাকবে যে, এই লোক সৎ। তার থেকে কোনো প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

(খুতুবাতে হাকীমুল ইসলাম : ৩/২৩৪)


খালেস মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো, মানুষ তো দূরের কথা পশু পাখি পর্যন্ত মুমিন থেকে নিরাপদ থাকবে।


উল্লিখিত হাদীস থেকে জানা যায়, কোনো সৃষ্টিকে কষ্ট দেওয়া মুমিনের নীতি থেকে অনেক দূরে। مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ ‘প্রকৃত মুমিন হলো, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মানুষ ও সৃষ্টি নিরাপদ থাকে।’ কোনো প্রকার কর্ম দ্বারা অন্যের কষ্ট ও বিরক্তি হবে না।


❏ প্রশ্ন : لا إله الا الله محمد رسول الله এটা জুমলা খবরিয়া ইসমিয়া বা দুটি ইসম দ্বারা গঠিত খবরবাচক বাক্য। আর জুমলা খবরিয়া ইসমিয়া হোক কিংবা ফে‘লিয়া হোক তার বক্তাকে সত্য বা মিথ্যা বলা যেতে পারে। لا إله الا الله محمد رسول الله এর ক্ষেত্রেও এই ধারণা হতে পারে। অমুসলিমরা বলতে পারে যে, لا إله الا الله محمد رسول الله এই বাক্যের মধ্যেও সত্য মিথ্যার সম্ভাবনা রয়েছে। তাহলে মুমিনের ঈমান দৃঢ় ও অটল থাকলো না। সন্দেহযুক্ত হয়ে গেলো। খালেস ঈমান চলে গেলো। এর সমাধান কী?


✍ জবাব : وبه المستعان وعليه التكلان প্রচুর মাখলুক যাদের সত্যতার উপর পুরা দুনিয়া একমত, তাদের গ্রহণের কারণে উল্লিখিত কালিমা দৃঢ় ও অটল হয়ে গেছে। তাছাড়া ব্যাপকভাবে গ্রহণের কারণে সংশয় ও সন্দেহ সব কিছু চলে গেছে। এখন এই বাক্য অকাট্য ও নিশ্চিতে পরিণত হয়েছে। এটাকে খবরিয়া বা খবরবাচক বলা বোকামী ও মূর্খতা বৈ কিছুই নয়। শক্তি থাকা বাস্তবায়নকে আবশ্যক করে না। মিথ্যা যেহেতু মূলেই খারাপ, তাই তা আল্লাহ তা‘আলা থেকে কখনো প্রকাশ পায়নি, পাবেও না। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা থেকে মিথ্যা প্রকাশ পাওয়ার প্রবক্তা সে কাফের। আল্লাহ তা‘আলার কুদরত থেকে উদ্দেশ্য, আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ও সন্তুষ্টিতে যা হয়। প্রকাশ পাওয়া বা ঘটা উদ্দেশ্য নয়। আল্লাহ তা‘আল থেকে যাই হবে তা সত্য, মিথ্যা নয়। السماء فوقنا والأرض تحتنا এটা খবরবাচক বাক্য। এর মধ্যে সত্যতা প্রকাশ্য, মিথ্যার লেশমাত্র নেই। মিথ্যার সম্ভাবনার কথা বললে সেটা বিজ্ঞানীদের কথা নয়, বরং মূর্খ নির্বোধের সন্দেহ মাত্র। তাই এটা জুমলা ইসমিয়া কতইয়াও খবরিয়া ইয়াকিনিয়া। সন্দেহযুক্ত বাক্য নয়। এর প্রবক্তা শত্রু-বন্ধু সকলে কাছে সত্যবাদী মুসলিম।


অনেক আলেম আল্লাহ তা‘আলা থেকে মিথ্যা প্রকাশ পাওয়াকে মুমকিন বিযযাত বা মূলে সম্ভব এবং মুমতানা‘ বিলগায়র বা ভিন্ন কারণে না জায়েয বলেছেন। অথচ কদীম, চিরঞ্জীব ও অতুলনীয় সত্তার সাথে মিথ্যাকে মুমকিন বিযযাত মুমতানি‘ বিল গায়র হিসেবে সম্পৃক্ত করা দলীল ও যুক্তি উভয় দিক দিয়ে অসম্ভব। খারাপ মূলে খারাপ। পৃথিবীর সকল বৈশিষ্ট্য অস্থায়ী ও নি¤œমানের। অতএব এটা কদীম সত্তার সাথে এর সম্পৃক্ততা হারাম, কুফুরী ও ঈমানের বক্রতার পরিচয়। আল্লাহ তা‘আলা সত্তাগতভাবে সত্যবাদীই সত্যবাদী। এটা কদীম সত্তার গুন। আল্লাহর সত্তা ঊর্দ্ধজগতের সাথে সম্পৃক্ত। অস্থায়ী পৃথিবীর সাথে সম্পর্ক রাখেন না। এমনকি এই গুনের সাথে ফেরেশতা জগত ও আখেরাতের জগতের সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই। সেখানে ঊর্দ্ধ জগতের সাথে কিভাবে সম্পর্ক রাখবে।


ফতোয়া মাহমুদিয়াতে আছে, কিযব বিযযাত মুমতানা‘ বিল গায়র যেহেতু খারাপ, তাই আল্লাহ তা‘আলা থেকে কখনো প্রকাশ পায়নি পাবেও না। যে ব্যক্তি মিথ্যা প্রকাশ পাওয়ার প্রবক্তার সে কাফের। যেমন ফতোয়া রশিদিয়াতে আছে, কিন্তু প্রকাশ না হওয়া কুদরতকে না বলা আবশ্যক করে না। কুদরত না মানলে অক্ষমতাকে আবশ্যক করে। যা إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ এর বিপরীত। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসায় বলেন,   وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلًا এর দ্বারা বুঝা যায় সত্যের বিপরীতের উপর শক্তি অবশ্যই আছে। আর তা হলো, মিথ্যা। কারণ কুদরত না থাকলে তিনি সত্যের উপর বাধ্য হবেন। সুতরাং এমন জিনিসও কি প্রশংসার যোগ্য হতে পারে যার উপর বাধ্য এবং যার বিপরীতের শক্তি রাখে না? খারাপ কাজ খারাপ, তবে খারাপ কাজের উপর শক্তি রাখা খারাপ হয় না যে, তা দুই দিকের বৈশিষ্ট্য ও বাহ্যিক দলিলের থেকে মুক্ত হবে। যদি দলিলের দ্বারা এক দিক নির্দিষ্ট হয়ে যায় যেমন, السماء فوقنا والأرض تحتنا তাহলে এই জুমলা খবরিয়া। কারণ দলিলের আলোকে একদিকের সত্যতা নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। অপর দিকের সম্ভাবনা থাকেনি।


জুমলা খবরিয়ার ব্যাখ্যা মূলত ইনশা তথা সৃষ্টিশীল থেকে আলাদা করার জন্য। যে, তার মধ্যে সত্য মিথ্যার অবকাশ নেই। কারণ ওখানে তো কোনো বিবরণ হয়নি। এখানে বিবরণ আছে তাই উভয় দিকের সম্ভাবনা থাকে। যার বিবরণ তার পক্ষে হবে অথবা তার বিপক্ষে হবে। প্রথমটা সত্য, দ্বিতীয়টা মিথ্যা। দলিলের দ্বারা যেমন মিথ্যা নির্দিষ্ট হয়, তেমনি দলিলের দ্বারা সত্যতাও নির্দিষ্ট হয় এবং মিথ্যার সম্ভাবনা থাকে। তবে জুমলা খবরিয়া থেকে বেরিয়ে যায় না। কারণ খবরের ভিত্তি বিবরণের উপর। তাতে দুটি সম্ভাবনা থাকে। কোনো একটি দিক নির্দিষ্ট হয়ে গেলে বিবরণ বাতিল হয়ে যায় না। সুতরাং খবর বহাল থাকবে। (লিখেছে, বান্দা মাহমুদ গাঙ্গুহী)


আল্লাহর কথায় কি মিথ্যার অবকাশ আছে? কখনো নয়। কারণ মিথ্যা দোষ ও ত্রুটি। আল্লাহ তা‘আলার সত্তা দোষ ও ত্রুটি থেকে পবিত্র।


অনেকে বলে, মিথ্যা দোষ ও ত্রুটি তখন, যখন বাস্তবায়ন হয়। কুদরতের মধ্যে থাকা দোষ ও ত্রুটি নয়।


إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ এই আয়াত থেকে কুদরত হওয়া প্রমাণিত, একথা দলিল ও বিবেকের বিপরীত। এই আয়াতে যে, شَيْءٍ আছে তা মাকদুর এবং মাকদুর বস্তু মুমকিন, হাদেস বা অস্থায়ী হওয়ার কারণে চিরস্থায়ী সত্তার গুণ কিভাবে হতে পারে? তাফসীরে জালালাঈন ও জামাল ইত্যাদিতে شاءه  এর অধীনে উল্লেখ আছে, فالمراد لقوله شائه إن يشاء وذلك هو الممكن সুতরাং কুদরতের অধীনে যে মিথ্যা আছে তা মাকদুর হওয়ার কারণে চিরস্থায়ী সত্তার সাথে কখনো যুক্ত হতে পারে না। সম্ভাবনার পদ্ধতিতেও নয়, বাস্তবায়নের পদ্ধতিতেও নয়। মিথ্যা বাস্তবায়ন হওয়া সবার জন্য, কিন্তু তার জন্য সম্ভাবনার পদ্ধতিতে এই দোষের সাথে সম্পৃক্ত হওয়াও দোষ। এটাই কারণ যে, তিনি নিজের ক্ষেত্রে (প্রশংসার স্থানে) أَصْدَقُ ব্যবহার করেছেন, যা ইসমে তাফযীল বা অগ্রাধিকার বিশেষণ। অথবা গুণবাচক শব্দ। যেমন أكبر শব্দ। وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلًا ‘কথার ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে আছে?’ যাতে আলেমরা জেনে নেয় যে, তার কথার মধ্যে মিথ্যার অন্তর্ভুক্তি সম্ভাবনার পদ্ধতিতেও নেই। أكبر শব্দটি অগ্রাধিকার বিশেষণ। মূলনীতি আছে, মুফায্যাল (যাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলো) মুফায্যাল মিনহু (যার উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হলো)র অন্তর্ভুক্ত হয়। তাহলে অর্থ দাড়াবে, আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। এতে আরো বড় থাকাকে আবশ্যক করে। অথচ আল্লাহই বড়। সবার চেয়ে বড় বললে, শিরক করা হলো। আর আল্লাহই বড় এটা গুন।


অথবা আল্লাহ তা‘আলা চিরস্থায়ী। চিরস্থায়ী হওয়াই সত্তাগত সত্যতা। যার মধ্যে সম্ভাবনা ইত্যাদির অন্তর্ভুক্তি নেই। যদি এই মিথ্যা ভিন্ন কারণে অসম্ভব হয় তাহলে ক্ষতি কী? কারণ বাস্তবায়ন না হওয়ার ক্ষেত্রে মোমতানা‘ বিযযাত যেটাকে সত্তাগত অসম্ভব বলে এবং মোমতানা‘ বিল গায়রকে ভিন্ন কারণে অসম্ভব বলে। আর দুটিই সমান।


এই বর্ণনার দ্বারা ক্ষতি হলো, তিনি সম্ভাবনার পদ্ধতিতে এই দোষের সাথে অভিযুক্ত হবে। অর্থাৎ একথা বলা হবে যে, চিরস্থায়ী সত্তা আল্লাহ তা‘আলা মিথ্যা বলতে পারে। যদি বলবেন না। এমন বলা কি তার শানে মানায়? নাউযুবিল্লাহ। যুক্তির আলোকে যদি এমন অভিযোগ জায়েয হয়, তাহলে সকল দোষের সাথে এই ভাবে অভিযুক্ত হয়ে যাবে। অর্থাৎ ঐ সত্তা খেতে পান করতে পারে। কিন্তু খাবেন না। মিলন করতে পারেন। কিন্তু করবেন না। অন্ধ বধীর হতে পারে। কিন্তু হবে না। নাউযুবিল্লাহ।


দ্বিতীয়ত এটা কিভাবে জানা গেলো যে, মিথ্যা মাকদুর হওয়া সত্তে¡ও বাস্তবায়ন হবে না। কারণ অসম্ভব তো থাকলো না। এরপর বাস্তবায়ন না হওয়ার দিকটা প্রাধান্য দেওয়া হলে মাকদুরের মধ্যে থাকলো কিভাবে। দলিলের আলোকে অসম্ভব এই কথা থেকে হবে যে, যার মধ্যে মিথ্যা সম্ভব। এবার এটা কোন ধরণের অসম্ভব, যার দ্বারা মিথ্যা বাস্তবায়ন না হওয়া নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত। কেউ যদি বলে যে, ইচ্ছার গুণ এই মিথ্যার ক্ষেত্রে নেই যে, বাস্তবায়ন হবে। সুতরাং এর দ্বারা ভিন্ন কারণে অসম্ভব প্রমাণিত হয়ে গেলো।


ভাই বন্ধুগণ, এই গুণের উপর অবগতির মাধ্যম একমাত্র কালাম। কারণ আল্লাহর ইচ্ছা উপলব্দি করার জন্য বিবেকের কোনো দখলই নেই। কালাম হলো সেটা যার মধ্যে মিথ্যা সম্ভব। সুতরাং নির্দি¦ধায় প্রমাণ হলো যে, চিরস্থায়ী সত্তার ক্ষেত্রে মিথ্যা দলিল ও যুক্তির আলোকে সত্তাগতভাবে অসম্ভব।


যদি কেউ বলে যে, কালামে নফসী বা আসল কালামের মধ্যে দলিল ও যুক্তির আলোকে কোনোভাবে মিথ্যা সম্ভব নয়। তবে কালামে লফযী বা শাব্দিক কালামের মধ্যে যদি মিথ্যা মেনে নেওয়া হয় তাহলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোনো ক্ষতি মনে হয় না। এমন আকীদা কি ঠিক? এটা একটা আশ্চর্য ধরণের প্রশ্ন। এই আকীদা এর চেয়ে আরো খারাপ।


বন্ধুরা শোনো, সত্য মিথ্যা কালামে নফসীরই গুণ হয়ে আসে। শুধু কালামে লফযীর নয়। কারণ কালাম শুধু শাব্দিক হলে, অর্থ কোনো জিনিস না হলে এটা অর্থহীন কালাম বলে। চিরস্থায়ী সত্তা আল্লাহর কালামকে কোনো ঈমানদার কোনো সময় অর্থহীন ধারণা করতে পারে? শাব্দিক কালামের মধ্যে যখন মিথ্যা মেনে নিলে, তাহলে আসল কালামের মধ্যে মিথ্যা আগে মেনে নিলে। নাউযুবিল্লাহ। অথবা আল্লাহর কালামকে অর্থহীন সাব্যস্ত করলে যা কুফর।


বন্ধুরা, মিথ্যা বলে সত্যে না থাকাকে। আর আল্লাহর ক্ষেত্রে না থাকার কোনোভাবেই পথ নেই। সম্ভাবনার পদ্ধতিতেও না, বাস্তবায়নের পদ্ধতিতেও না।


❏ প্রশ্ন : আপনার উল্লিখিত আলোচনা থেকে জানা গেলো, মিথ্যা সত্তাগতভাবে অসম্ভব। তাহলে এরপরও পথিবীতে মিথ্যার অস্থিত্ব কেন?


✍ জবাব : যেই মিথ্যা সত্তাগতভাবে অসম্ভব তার তো অস্থিত্বই নেই। নতুবা সত্তাগতভাবে অসম্ভব হলো কিভাবে? আর সেটা চিরস্থায়ী সত্তার মিথ্যা। আর যে মিথ্যার অস্থিত্ব আছে, সেটা অন্যের দ্বারা অস্থিত্ববানের জন্য সম্ভব। সঅস্থিত্বে অস্থিত্ববান এবং খালেকের জন্য নয়। এরপর এর দ্বারা এটা প্রমাণ হলো যে, নবীগণের সা. ক্ষেত্রে মিথ্যা সম্ভব। কারণ তারাও মোমকেনাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। অথচ তাদের থেকে মিথ্যা অসম্ভব।


এর জবাব হলো, ভাইসব, এসব কিছু ভিন্ন কারণে অসম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ সত্তাগতভাবে সম্ভব হয়ে বাস্তবায়ন অসম্ভব। এই মিথ্যার বাস্তবায়ন অসম্ভবের পিছনে আল্লাহর কালাম কারণ। যার মধ্যে মিথ্যা সত্তাগত অসম্ভব। নতুবা যদি মুমকিন বা সম্ভব হয়, তাহলে আরেক মুমকিনকে মুমতানা‘ বা অনম্ভব কিভাবে বানাবে। এ কারণে নবীগণকে সিদ্দীক গুণে ভূষিত করছেন। যা আসদাক বা অধিক সত্যবাদীর চেয়ে কম স্তরের। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,  وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَبِيًّا ‘তুমি কিতাবের মধ্যে ইবরাহীমের কথা স্মরণ করো। নিশ্চয় সে সত্য নবী ছিলো।’ وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِسْمَاعِيلَ إِنَّهُ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُولًا نَبِيًّا ‘তুমি কিতাবের মধ্যে ইসমাঈলকে স্মরণ করো। নিশ্চয় সে প্রতিশ্রæতিতে সত্য ও রাসূল নবী ছিলো।’


উক্ত আলোচনার দ্বারা জানা গেলো, এই কালামের কারণে যার মধ্যে মিথ্যার অবকাশ সম্ভাবনা হিসেবেও নেই, ঐ মিথ্যার বাস্তবায়ন এবং প্রকাশ মুমতানা‘ বিল গায়র বা ভিন্ন কারণে অসম্ভব হয়ে গেলো।


এখন বোঝা গেলো, মিথ্যা তিন প্রকার।

১। যে মিথ্যা কুদরতের অধীনে নেই। এটা চিরস্থায়ী সত্তার মিথ্যা এবং সত্তাগতভাবে অসম্ভব।

২। যে মিথ্যা কুদরতের আওতাধীন। তবে তার সাথে ইচ্ছা সম্পৃক্ত নয় যে, তার বাস্থবায়ন হবে। এটা নবীগণ ও ফেরেশতাগণের মিথ্যা। যাদের শান হলো মা‘সুম বা নিস্পাপ। তাদের এই নিস্পাপত্ব ঐ কালামের কারণে হয়েছে, যার মধ্যে মিথ্যা সত্তাগত অসম্ভব। তাই এই মিথ্যা অন্যের কারণে অসম্ভব হলো।

৩। ঐ মিথ্যা যা কুদরতের আওতাধীন হওয়ার পাশাপাশি ইচ্ছা সংগঠনেরও আওতাধীন। এটা নবীগণ ও ফেরেশতা ছাড়া অন্যদের মিথ্যা। এই মিথ্যা বাস্তবায়ন সম্ভব। এ কারণে পৃথিবীতে এর অস্থিত্ব আছে।

বুঝো, মুর্খদের অন্তর্ভুক্ত হও না।


❏ প্রশ্ন : সত্তাগত অসম্ভবের উপর শক্তিমান না হওয়ায় সে অক্ষম সাব্যস্ত হবে কি না?


✍ জবাব : সত্তাগত অসম্ভবের উপর শক্তিমান না হলে তাকে অক্ষম মনে করা পূর্ণ বোকামী ও হতবুদ্ধিতা। কারণ সত্তাগত অসম্ভব মাকদুর হওয়ার যোগ্যতা না রাখার কারণে কুদরত এর সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রই নয়। তাই কোনো ত্রুটি বা ক্ষতি সম্পৃক্ত হবে না। এ কারণে এটাও বলা উচিত নয় যে, তিনি শক্তি রাখেন না। এটা আদবের পরিপন্থি এবং ঐ জিনিসের অস্বীকার যা তার কাছে আছে। বরং এ কথা বলা উচিত যে, সত্তাগত অসম্ভব কুদরতের অধীনে নয়। যাতে অসম্ভব বস্তু হওয়া বাতেল হয়ে যায়। কুদরতের মধ্যে যেন ত্রুটি না আসে। (এই ব্যাখ্যা পেশ করেছেন, শায়খে মুহাক্কিক সায়্যিদ শাহ আহমদ সাঈদ কাযেমী তার বয়ানে এবং আল্লামা শাহ মুহাম্মাদ রোকনুদ্দীন সাহেব নকশবন্দী মাসউদী তার কিতাব আল আকায়েদে লিখেছেন।)


টিকা : আল্লাহ তা‘আলা কাদেরে মতলক বা সর্বশক্তিমান। অনাদী, অনন্ত, চিরস্থায়ী, কখনো ধ্বংস নেই। সত্যতা তার সাথে সত্তাগতভাবে যুক্ত। কখনো ছিন্ন হয় না। মিথ্যা সত্তাগত খারাপ। খারাপই খারাপ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, الكذب أم الذنوب ‘মিথ্যা সকল গুনাহের মূল।’ আরো বলেন, الكذب أكبر الكبائر ‘মিথ্যা বড় কবীরা গুনাহ।’ আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। সব কিছুর উপর শক্তি রাখেন। খারাপ জিনিস তখন খারাপ, যখন অস্থিত্ব লাভ করে। কোনো খারাপ কাজ মানুষের মনে আসে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না, তাহলে এটা খারাপ নয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, الكذب يهلك والصدك ينجي ‘মিথ্যা ধ্বংস করে। সত্য মুক্তি দেয়।’ খারাপের সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করার দিক দিয়ে খারাপ নয়। গ্রহণকারীর হিসেবে খারাপ। সকল জিনিস সৃষ্টির সময় তা ভালো থাকে। যখন অস্থিত্ব লাভ করে, তখন যেটা খারাপ সেটা খারাপ, আর যেটা ভালো সেটা ভালো হয়। নতুবা ভালোর সৃষ্টিকর্তা ও খারাপের সৃষ্টিকর্তা দুইজন হওয়া আবশ্যক হবে। যা হিন্দুদের আকীদা।


অথচ কর্মীর কারণে ভালো খারাপ হয়। যেমন, তরবারী বানানো খারাপ নয়। তবে এটা ব্যবহার করা হিসেবে ভালো খারাপ হয়। ঐ তরবারী দ্বারা যদি উপকারী জিনিস অর্জন করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তাহলে ভালো হবে। আর এর দ্বারা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করলে এটা খারাপ। ব্যবহারকারী এর শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, والله خلق لكم ما في الأرض جميعا ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য জমিনের সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।’ সৃষ্টির সময় সব জিনিস ভালো। কর্মের কারণে ভালো খারাপ হবে। এটা কর্মীর কারণে। নতুবা প্রশ্ন আসবে যে, কুফর ও হারাম কাজের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলা, তাহলে আযাব ও কাফের বলার হুকুম কিভাবে? কেউ তো জাহান্নামে যাবে না? এটা কোনো জিনিস বাস্তবায়ন ও প্রকাশের হিসেবে। আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও শক্তিমান, এর অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা উপস্থিত ও অনুপস্থিত সকল জিনিসের সৃষ্টিকর্তা। তিনি প্রত্যেক বস্তুর উদ্দেশ্য ও চাওয়ার উপর সার্বিক দিক থেকে শক্তিমান। আল্লাহ তা‘আলার কোনো গুণ সম্ভাব্য পর্যায়ের নেই। প্রত্যেক জিনিস বাস্তবায়ন ও প্রকাশের হিসেবে হারাম ও হালাল হয়। সৃষ্টিগত দিক দিয়ে নয়। সম্ভাব্য পদ্ধতিতে কোনো খারাপ জিনিস মেনে নিবে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলার সুবহান গুণের সাথে গুণান্বিত থাকবে না। এই গুণ ঘোষণা দিচ্ছে আল্লাহ তা‘আলা বাস্তব ও সম্ভাব্য সকল দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র। সম্ভাবনা সত্তার সাথে সম্পৃক্ত ও যুক্ত হওয়া এটা সোবহান গুণের বিপরীত। আল্লাহ সকল উপস্থিত অনুপস্থিতের উপর শক্তিমান। সম্ভাব্য খারাপের উপর নয়। কর্মীর কর্ম হিসেবে আমল খারাপ হয়। যেমন আগে আলোচনা করা হয়েছে।


কিছু জিনিস উপাদান হিসেবে পবিত্র ও হালাল। কিন্তু বাস্তবায়ন ও প্রকাশের পরে কিছু হালাল ও কিছু হারাম এবং কিছু ব্যবহারযোগ্য ও কিছু ব্যবহার অযোগ্য হয়। এই সব কিছু প্রকাশের পরে হয়। কিন্তু মূল উপাদান হিসেবে হালাল ও ব্যবহারযোগ্য থাকে। প্রকাশের পরে পার্থক্য হয়ে গেছে। এটাকে হিসেবি পার্থক্য বলে। বাস্তব সত্য চিরস্থায়ী সত্তার গুণ। রূপক সত্য অস্থায়ী ও মাখলুকের সম্ভাব্য গুণ। মিথ্যা সত্তাগত খারাপ। একারণে মিথ্যা সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ ও সকক গুনাহের মূল সাব্যস্ত হয়েছে।


সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার ক্ষেত্রে সত্তাগত অসম্ভব। তাই অন্য কারণে অসম্ভব বলে সত্তাগত অসম্ভবকে না মানা, সত্তাগত অসম্ভবকে নাকচ করার শামিল। যার থেকে সম্ভাব্য মিথ্যার পদ্ধতি বের হয়েছে। এরা নামধারী মুসলমান হয়ে সম্ভাব্য মিথ্যা পবিত্র সত্তার জন্য জায়েয মনে করেছে। এই পদ্ধতির ভিত্তির উপর ইসলাম অস্বীকারকারী বাস্তব মিথ্যার স্বীকার হয়ে যাবে। যার ফলাফল প্রকাশ্য যে, কদীম কুরআনকে মিথ্যা প্রমাণ করার দুসাহস দেখাবে। নাউযুবিল্লাহ। এটা আল্লাহ তা‘আলার উপর বড় একটি দোষ চাপানো। যেই ইসলামের বিধিবিধান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণকৃত তার ঠিক থাকবে না। নাউযুবিল্লাহ। আমি পূর্বে এ ব্যাপারে আলোচনা করেছি।


সত্যতা আল্লাহ তা‘আলার একটি গুণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلًا আল্লাহই সত্য ও সঠিক। আর মাখলুকের জন্য সত্যতার গুণ আল্লাহ তা‘আলার তাজাল্লি ও দানের কারণে। আর তা অস্থায়ী।

আল্লাহ তা‘আলার কানুন চালু আছে যে, কাদের ও মাকদুরের মাঝে উপযুক্ত শর্ত আবশ্যক। সুতরাং কাদের ও মাকদুরের মাঝে শর্ত হলো বিদ্যমান থাকা, আর সেটা স্পষ্ট। কিন্তু কাদের ও সম্ভবের মাঝে কোন আল্লাহর বিধান উপযুক্ত শর্ত আছে? আর তা কী?


যদি কোনো উপযুক্ত শর্ত না থাকে, তাহলে অর্থহীন ও অনর্থক হবে। আর একটি অর্থহীন ও অনর্থক জিনিস আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করা কোন ধরণের একাত্ববাদ?


বুঝো, ভয় করো, ধ্বংসদের অন্তর্ভুক্ত হও না।


❏ প্রশ্ন : ঈমান কতভাবে আসতে পারে?


✍ জবাব : ঈমান তিনভাবে আসতে পারে।

১। ঈমানী বিষয় শুনে মান্য করা।

২। দেখে মান্য করা।

৩। তার মধ্যে প্রবেশ করে মান্য করা।


❏ প্রশ্ন : ঈমান ও আল্লাহর কালাম মাখলুক, নাকি মাখলুক নয়? যৌথ, নাকি একক? যারা বলে ঈমান মাখলুক তাদের পিছনে নামায পড়া জায়েয আছে কি না?


✍ জবাব : وبه نستعين وهو المستعان ঈমানকে মাখলুক বলার প্রবক্তা কাফের। এভাবে কুরআনকে মাখলুক বলার প্রবক্তাও কাফের।


ফতোয়া তাতার খানিয়াতে আছে,

من قال بخلق الإيمان فهو كافر وكذا من قال بخلق القران فهو كافر

‘যে ব্যক্তি বলবে ঈমান মাখলুক, সে কাফের। এভাবে যে বলবে কোরআন মাখলুক সে কাফের।’


ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) থেকে বর্ণিত আছে,

إن الإيمان غير مخلوق، اى توفيق الله و هدايته، فالله تعالى بجميع افعاله غير مخلوق

‘ঈমান মাখলুক নয়। অর্থাৎ আল্লাহর তাওফীক ও হেদায়াত। আল্লাহ তা‘আলা সকল কর্মসহ গায়রে মাখলুক।’


ঈমানের তাওফীক আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর এটা মাখলুক নয়। অর্থাৎ যা আল্লাহর পক্ষ থেকে হবে সেটা মাখলুক হবে না। আর যা বান্দার পক্ষ থেকে হবে সেটা মাখলুক।

وأما التصديق والإقرار من العبد، فالعبد بجميع أفعاله مخلوق

‘আর বিশ্বাস ও স্বীকারোক্তিবান্দার পক্ষ থেকে। বান্দা তার সকল কর্মসহ মাখলুক।’ শুধু ঈমান একক, যৌথ নয়।


ইমাম যাহেদী (رحمة الله) বলেন,

إن أردت بالإيمان التصديق والإقرار فهذا فعل العبد العبد بجميع أفعاله مخلوق .

‘ঈমানের দ্বারা যদি বিশ্বাস ও স¦ীকারোক্তি উদ্দেশ্য নাও, তাহলে এটা বান্দার কর্ম। বান্দা তার সকল কর্মসহ মাখলুক।’


বিশ্বাস ও স্বীকারোক্তি যা বান্দার কাজ তার মাখলুক। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে যে তাওফীক ও হেদায়াত আসে তা মাখলুক নয়।

وإن أردت توفيق الله وهدايته على اتيان الإيمان بالله تعالى فالله بجميع أفعاله غير مخلوق

‘যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার জন্য আল্লাহর তাওফীক ও হেদায়াত উদ্দেশ্য নাও, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার সকল কর্মসহ গায়রে মাখলুক।’

(ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ৩৭১, কতরুল গইস ফি মাসায়িলি ফকীহ আবিল লাইস সমরকন্দি)


হযরত শায়খ আবু সাহল বলেন, অনেক পূর্ববর্তী ইমামগণ বলেছেন,

إن من قال القران مخلوق فهو كافر ومن قال الإيمان مخلوق فهو كافر

‘যে বলেছে, কোরআন মাখলুক সে কাফের। যে বলেছে, ঈমান মাখলুক সেও কাফের।’


হযরত শায়খ আবু বকর বিন হামেদ, শায়খুল ইমাম আবু হাফস ও শায়খুল ইসলাম আবু ইসহাক আযযরীর, শায়খুল ইমাম আবু বকর ইসমাঈল থেকে বর্ণিত।

 الإيمان غير مخلوق ومن قال بخلقه فهو كافر ‘

"ঈমান মাখলুক নয়। যে মাখলুক বলবে সে কাফের।’


কোরআন মাজীদ গায়রে মাখলুক। অর্থাৎ আসল কালাম গায়রে মাখলুক ও কদীম। যা আল্লাহ তা‘আলার থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। ছাপা, শব্দ ও আওয়াজ নয়। এসব কিছু বান্দার পক্ষ থেকে।


শায়খ মুহাম্মাদ বিন ফযল বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানকে মাখলুক বলবে তার পিছনে নামায জায়েয নেই। من يقول بخلق الإيمان فقال لا تصلوا خلفه

‘যে ব্যক্তি বলবে ঈমান মাখলুক তার পিছনে নামায পড়ো না।’


মুস্তফা (ﷺ) এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের বিবরণ


❏ প্রশ্ন : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কতগুলি স্থান আছে?


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাতটি স্থান আছে। (১) তারকা (২) হযরত আদম আ.র পিঠ, (৩) পিতা আব্দুল্লাহর পিঠ, (৪) মা আমেনার পেট, (৫) সর্বোচ্চ জান্নাত, (৬) সাগরের ফল, (৭) প্রত্যেক মুসলমানের অন্তর।

প্রেমাষ্পদ থাকে প্রত্যেক প্রেমিকের অন্তরে। (হুজ্জাতুল ইসলাম : ৮)


স্মার্তব্য, মাজলিসে মুহাম্মাদী (ﷺ) এর দ্বারা নয়টি স্তর অর্জন হয়। (১) আযল, (২) আবদ, (৩) দুনিয়া। এরপর দুনিয়াতে চারটি স্তর অর্জন হবে। (১) মদীনার হেরেমে পবিত্র রওযার মজলিসে। (২) কা‘বার হেরেমে। আর দুটি স্তর আসমানের উপর। আরশের মজলিসের উপস্থিতির ক্ষেত্রে পরপূর্ণ হলো ঐ ব্যক্তি যে, মুহাম্মাদী সংশ্রবের সঙ্গি।


আরেকটি গভীর সাগরে। যাকে তাওহীদের সাগর বলে। যা খোদাই নূরে পরিপূর্ণ। আরেকটি মাজলিসে মুহাম্মাদী (ﷺ) লা মাকানে (স্থান বিহীন) আছে। যার দৃষ্টান্ত পেশ করা যাবে না। এটা لا إله الا الله محمد رسول الله এর অযিফা আদায়ের দ্বারা অর্জন হয়। এর মধ্যে বান্দা এমন বিলীন হয়ে যায়, কেমন যেন মৃত। সারকথা উল্লিখিত স্তর একের পর এক মাজলিসে মুহাম্মাদী অর্জন হয়।


হারামে মদীনা, পবিত্র হারামে কা‘বা বা আরাফার পাহাড়, যা লাব্বাইক কবুল হওয়ার স্থান। আরশের উপর আরেকটি। অর্থাৎ যা দুই কামানের দুরত্ব। জান্নাত, যেখানে পবিত্র হাতে হাউযে কাওসার পান করতে থাকবে। সব্বোর্চ স্তর হলো, আল্লাহর দীদারের নূরের মধ্যে ডুব দেওয়া। যে নিজে নিজে বিলীন হয়ে যাবে। পরিপূর্ণ মুরশিদের মাধ্যমে মাজলিসে মুহাম্মাদী অর্জন হয়। তাদের অন্তর মোস্তফা (ﷺ) এর স্থান। (শামসুল আরেফীন : ৫৪)


❏ প্রশ্ন : রাসূল (ﷺ) এর জন্মের মাস কোনটি? এবং কোন তারিখে জন্ম গ্রহণ করেন?


✍ জবাব : ইতিহাস বিশেষাজ্ঞদের ঐক্যমত্য সিদ্ধান্ত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পবিত্র জন্ম হস্তি বাহিনীর ঘটনার ২৪ বছর পর রবিউল আওয়াল মাসের সোমবার হয়েছে। তবে তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে চার পাঁচটি উক্তি রয়েছে। তার মধ্যে চারটি ঐতিহাসিক উক্তি। আরেকটি মাহমুদ পাশা মিসরীর হিসাবী উক্তি।


ঐতিহাসিক চারটি উক্তি প্রসিদ্ধ। (১) রবিউল আওয়াল মাসের দুই তারিখ, (২) আট তারিখ, (৩) দশম তারিখ, (৪) বারো তারিখ। হাফেয মোগরতায়ী (رحمة الله) দুই তারিখকে প্রধান্য দিয়েছেন। অন্য উক্তিগুলিকে প্রত্যাখ্যাত বলেছেন। তবে প্রসিদ্ধ উক্তি বারো রবিউল আওয়াল। এটাকে কামেল ফিত তারিখ, ইবনে আসীর গ্রহণ করেছেন।

قال ابن إسحاق ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم الإثنين لاثني عشرة ليلة مضت من ربيع الأول

‘ইবনে ইসহাক বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ শেষ রাতে জন্ম গ্রহণ করেন।’

(তারিখে কামেল : ১/৪৫৮)


আল্লামা মুফতী শফী‘ (رحمة الله) বলেন, রবিউল আউয়াল মাসের  বারো তারিখ সোমবার দুনিয়ার বয়সে একটি চমৎকার দিন। (আওজাযুস সিয়ার)


তিনি টিকাতে বলেন, রাসূল (ﷺ) এর বরকতময় জন্ম বারো তারিখ হওয়ার বিষয়টির উপর ইবনুল জায্যার ঐক্যমত্য উদ্ধৃত করেছেন। মাহমুদ পাশা মিসরী যে, হিসাবের মাধ্যমে নয় তারিখকে গ্রহণ করেছেন, এটা জামহুরের বিরুদ্ধে সনদবিহীন উক্তি। ইখতিলাফী বিষয়ে এমন হিসাবের উপর নির্ভর করা যায় না যে, তার উপর ভিত্তি করে জামহুরের বিরোধিতা করা হবে। (আওজাযুস সিয়ার টিকাসহ : ১১)


❏ প্রশ্ন : এদেশে একটি বর্ণনা হাদীসে কুদসী হিসেবে প্রসিদ্ধ আছে। অনেক আলেমকে দেখা খেছে খুতবার মধ্যে পাঠ করে। শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (رحمة الله) লিখিত কিতাব তাকমীলুল ঈমান কিতাবেও উল্লেখ আছে।

كلهم يطلبون رضائي وأنا أطلب رضاك يا محمد

‘সকলে আমার সন্তুষ্টি চায়। আমি তোমার সন্তুষ্টি চাই, হে মুহাম্মাদ।’


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما এর শুদ্ধতাও সনদ সম্পর্কে আমার জানা নেই। এর অর্থ ولسوف يعطيك ربك فترضى ‘অতিসত্ত্বর আপনার বর আপনাকে দান করবেন। ফলে আপনি সন্তুষ্ট হবেন।’ এই আয়াতের অর্থ উদ্দেশ্য হলে ঠিক আছে। (ফতোয়া রশিদিয়া, পূর্ণ : ৩৭৪)


উক্ত হাদীসটি শায়খ আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (رحمة الله) উদ্ধৃত করেছন। যার অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে মুহাম্মাদ, সকলে আমার সন্তুষ্টির প্রত্যাশী। আর আমি তোমার সন্তুষ্টির প্রত্যাশী। (তাকমীলুল ঈমান : ৩২) 


শায়খ আব্দুর রহমান সফুরী আল্লামা ইবনুল জাওযী (رحمة الله) থেকে উদ্ধৃত করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কাছে অহী পাঠিয়েছেন যে, হে মুহাম্মাদ, সকলে আমার সন্তুষ্টি চায়। আমি তোমার সন্তুষ্টি চাই। (নুযহাতুল মাজালিস : ২/১৩)


আহলে হাদীসের নেতা মৌলবী সানাউল্লাহ আমার তাসরীর উস্তাদ মৌলবী মাহমুদ হাসানের উস্তাদ মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীর ফতোয়ার প্রশ্ন ও জবাব দ্রষ্টাব্য।


ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله)ও উল্লিখিত বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। এরপর লিখেছেন, 

أنه تعالى يفعل كل ما يرضاه الرسول 

‘আল্লাহ তা‘আলা সেটাই করেন, যা তার রাসূল চায়।’ (তাফসীরে কাবীর : ৪/১০৬)


হযরত খাজা মা‘সুম কাইয়ুমী বিন ইমামে রব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানী (رحمة الله) লিখেছেন, হাদীসে কুদসীতে আছে, 

 أنا أطلب رضاك يا محمد صلى الله عليه وسلم  

(হে মুহাম্মাদ, আমি তোমার সন্তুষ্টি চাচ্ছি।)

(মাকতুবাতে খাজা কাইয়ূমী : ৩৭)


ইমাম নাসাফী (رحمة الله) হাদীস উদ্ধৃত করেছেন, হযরত মূসা আ. কালীমুল্লাহ ও হাবীবুল্লাহর মাঝে পার্থক্য জিজ্ঞাসা করলে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 الكليم يعمل برضاءمولاه والحبيب يعمل المولى برضاه‘

কালীম নিজ মাওলার সন্তুষ্টি মোতাবেক আমল করে। আর আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাবীবের সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ করে।’ (নুযহাতুল মাজালিস : ২/১৩৫)


মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) খলীল ও হাবীবের মাঝে পার্থক্য বর্ণনা করেছেন, খলীরেল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়। আল্লাহর কাছ তার হাবীবের সন্তুষ্টির জন্য হয়। والحبيب يكون فعل الله برضاه (‘হাবীব হলো তিনি, আল্লাহর কাজ যার সন্তুষ্টিতে মোতাবেক হয়।’) (মেরকাত : ৫/৩৬৯)


এমনকি আল্লাহ তা‘আলা তার হাবীবের সন্তুষ্ট এতই চান যে, অনেক সময় আল্লাহ তা‘আলা তার হাবীবের সাথে পরামর্শ করেন।

إني أنا النبي استشار ربي في أمتي ماذا أفعل بهم

‘আমার রব আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছেন, আমি তাদের সাথে কি আচরণ করবো।’ (হযরত হুসাইফা রাযি. থেকে বর্ণিত, ইমাম আহমদ বিন আসাকের)


মুহাদ্দিসীন ও মুফাসসিরীনের এই স্পষ্ট ব্যাখ্যার পর কেউ যদি মুহাম্মাদী স্তর এবং মুস্তফাবী সন্তুষ্টির মর্যাদা না বুঝবে তাহলে সে জানে।

তার কামও এমন যে, যার মন মতো হবে না সে জাল বলবে।

সুবহানাল্লাহ, শানে মুহাম্মাদী, মাকামে আহমদী ও মুস্তফাবী সন্তুষ্টির কি কথা। কিন্তু যেই বেদীন ও বেআদব মানুষের ভ্রান্ত আকীদা হবে যে, নবী (ﷺ) আমদের মানুষ। বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করতে হবে। রাসূলের চাওয়ার দ্বারা কিছুই হয় না। তার মনের ইচ্ছা চলে না ইত্যাদি। এই সব কিছু ভ্রান্ত আকীদা। এমন মানুষ শানে মুহাম্মাদী কি বুঝবে। নাউযুবিল্লাহ।

(মাসিক রেযায়ে মোস্তফা, গুজরা নেওয়ালা, পাকিস্তান, জামাদাল ঊলা : ১৪১০ হিজরী পৃ. ৬)


❏ প্রশ্ন : রাসূল (ﷺ)কে কুরআনে বাশার হেকমত কী?


✍ জবাব : عليه التكلان وهو المستعان  আল্লাহ তা‘আলা إنما أنا بشر (আমি হলাম মানুষ) বলার হেকমত হলো, যেহেতু আমি মানুষের হেদায়াতের জন্য আল্লাহর হেকমতে মানুষের আকৃতিতে দুনিয়াতে এসেছি। যাতে মানুষ আমার অনুসরণ করে। তাই আমি দুই পক্ষের বর্ণনা ও দাবীর প্রমাণের উপর যে সমাধান সত্য মনে তা করবো। আমার বাতেনী ইলমের আলোকে সমাধান করি না। কারণ আমার উম্মাতের বিচারকগণের বাতেনী থাকবেও না এবং শরয়ী ইরমের উপর বাতেনী ইলম দলিলও হবে না। তাই তারা বাহ্যিক প্রমাণের উপর সমাধান করবে। আর উভয় পক্ষ এই সমাধান মানতে বাধ্য। এখন আমি যদি বাতেনী ইলম অনুযায়ী বাহ্যিক বিবরণ ও প্রমাণের বিপরীত সমাধান করি তাহলে হতে পারে, আল্লাহকে ভয় করে না এমন বিচারকদের জন্য জুলুম নির্যাতন এবং হকের বিরুদ্ধে সমাধান করার জন্য এটা একটা বাহানা হয়ে যাবে। একারণে আমি মানুষ হিসেবে বাহ্যিক প্রমাণ ও বিবরণের উপর সমাধান দিয়ে থাকি।


ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) বলেন, কাজীর বিচার শুধু বাহ্যিকভাবে বাস্তবায়ন হয়। অভ্যন্তরে বাস্তবায়ন হয় না। হযরত উম্মে সালমা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, একবার রাসূল (ﷺ) তার কামরার সামনে ঝগড়া শুনতে পেলেন। তিনি ঝগড়াকারীদের কাছে গেলেন। আর বলেন, আমি মানুষ। আমার কাছে ঝগড়াকারীরা আসে। তোমাদের মধ্যে অনেকে বেশি বাগ্মি হয়। (অর্থাৎ মনের কথা সুন্দর করে উপযুক্ত শব্দ দিয়ে মুগ্ধকর ভঙ্গিতে দলিল উপস্থাপন করতে পারে। তার কথা শুনে সত্য মনে হয়।) আমি মনে করি সে সত্য বলছে। তখন তার পক্ষে সমাধান দিয়ে দেই। যার জন্য কোনো মুসলমানের হকের ফয়সালা করবো এটা আগুনের টুকরা। মনে চাইলে নিতে পারে। মনে না চাইলে ছেড়ে দিতে পারে। (বুখারী) অথচ আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ﷺ)কে খায়রে কাসীর অর্থাৎ গায়বী জ্ঞান দান করেছেন। এমন মানুষ হিসেবে ঘটে যাওয়া ঘটনার কারণে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ﷺ)কে সর্তকও করেছেনأن جاءه الأعمى এই আয়াতে। এই জাতীয় সতর্ক কুরআনে আরো উল্লেখ আছে। এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন আলোচনা করেছেন।


ড. ইমাদ আশশারবিনী খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন,

 إن عتاب الأنبياء عليهم السلام الواردة في القران الكريم هو في الظاهر عتاب وفي الحقيقة كرامة وقربة لله عز وجل وتنبيه لغيرهم ممن ليس في درجتهم من البشر

‘নবীগণ সম্পর্কে কোরআনের মধ্যে যে নিন্দা এসেছে তা প্রকাশ্য দৃষ্টিতে নিন্দা। আর বাস্তবে তা সম্মান, আল্লাহর নৈকট্য এবং অন্যদের জন্য সতর্কতা, যারা তাদের স্তরে নয়।’


الكوثر هو الخير الذي أعطاه الله إياه ‘আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ﷺ)কে প্রচুর কল্যাণ দান করেছেন। অর্থাৎ সকল কল্যাণ আল্লাহ তা‘আলা আপন হাবীবকে দান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,ويعلم الحكمة হিকমতের মুআল্লিম রাসূল (ﷺ)। যিনি হেকমতের ঝর্না। যাকে হেকমত দান করা হয় তাকে প্রচুর কল্যাণ দান করা হয়। অন্য জায়গায় বলেন, ومن يؤتى الحكمة فقد اوتي خيرا كثيرا ‘আর যাকে হেকমত দান করা হয়েছে, তাকে প্রচুর কল্যাণ দান করা হয়েছে।’ রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়রে কাসীরের বাহক ও মালিক। কুরআনের আরেক জায়গায় বর্ণিত আছে, لو كنت أعلم الغيب لاستكثرت من الخير ‘আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে খায়রে কাসীর জমা করে ফেলতাম।’ জানা গেলো, গায়েব না থাকলে খায়রে কাসীরও নেই।


এই আয়াত দ্বারা গায়েব ও খায়রে কাসীর প্রমাণ ও স্পষ্ট হয়। কারণ এটা শর্ত প্রকাশক বাক্য। এখানে لو শর্তের শব্দ এসেছে। বাক্যের প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় উভয়টি হাঁ বাচক। সুতরাং ফলাফল না বাচক হবে। শর্ত প্রকাশক বাক্যে দ্বিতীয় বাক্য না করা হলে প্রথম বাক্যও না হয়ে যায়। আরেক জায়গায় এসেছে, لا يظهر على غيبه أحدا الا من ارتضى من رسله ‘আল্লাহর গায়েব সম্পর্কে কেউ জানে না তবে তার রাসূলদের মধ্যে তাকে জানান।’ আল্লাহ তা‘আলা রাসূলকে গায়েবের বিষয় জানান। সরাসরি গায়েবের বিষয় জানেন আল্লাহ তা‘আলা। নবীগণ আল্লাহ তা‘আলা জানানোর দ্বারা গায়েব জানেন।


❏ প্রশ্ন : অনেকে বলে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইন্তেকালের পর যখন যেখানে ইচ্ছা চলে যাওয়া, চাই কোনো মাহফিলে হোক, কিংবা কোনো দোকানে হোক, অথবা তার কোনো খাটি আশেককে দীদারের দ্বারা ভূষিত করতে ইচ্ছুক, চাই সে প্রথিবীর পূর্ব প্রান্তে হোক বা পশ্চিম প্রান্তে হোক, এমন কখনোই পারে না। মৃত্যুর আগে ও পরে উভয়ের হুকুম কি এক? 


কিছু বেআদব তো এমনও বলে যা অশোভনীয় শব্দ ও ভঙ্গি যে, মাজলিসে রাসূল (ﷺ) কোথায় আছে? চেয়ার, চৌকি, নীচে উপরে এদিক সেদিক তালাশ করে। (নাউযুবিল্লাহ) এমন ঠাট্টা বিদ্রুপ রাসূল (ﷺ) এর শানে করাটা কেমন? কোনো আহলে ঈমান মুসমান আলেম বলেত পারে? গোমরাহরা ছাড়া কেউ কখনো বলতে পারে না। এমন মানুষের শেষ পরিণাম খারাপ হওয়ার খুবই আশঙ্কা?


✍ জবাব : وبه نستعين حامدا ومصليا ومسلما বন্ধুরা শোনো, রাসূল (ﷺ) এর দুনিয়াবী জীবন অহী ও তাবলীগের সময় ছিলো। যা সৃষ্টির জগতের সাথে সম্পৃক্ত। যা স্থান ও কালের সাথে, প্রয়োজন ও শরীরের সাথে সম্পৃক্ত। মৃত্যুর পরে আল্লাহর সামনে হাজেরীর সময়। যা আল্লাহর দীদারের মধ্যে ডুবে আছে। যার মধ্যে বিচ্ছিন্নতা নেই। যা নির্দেশ জগতের সাথে সম্পৃক্ত। যার মধ্যে সময়, স্থান ও দিক ইত্যাদি কোনো জিনিসের বন্ধন নেই। তিন যুগের সাথে সম্পর্ক রাখে না। বরং এখন নুরানী সুক্ষ্ম শরীরের সাথে সম্পৃক্ত। যা ঘনত্ব থেকে পবিত্র। যখন সেখানে মানবিক চিন্তা ধারণার দখল নেই, মানুষের বিবেক বুদ্ধিও সেখানে আল্লাহর শক্তিদান ছাড়া সেখানে পৌছতে পারে না। বরং তার মধ্যে আপত্তি করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। মুমিন মুসলিম হওয়ার জন্য অদৃশ্যের উপর ঈমান প্রথম শর্ত। অতএব সুক্ষ্ম জগতের দৃষ্টান্ত ঘনত্বপূর্ণ জগতে তালাশ করা এবং সৃষ্টির জগতকে নির্দেশের জগতের উপর কিয়াস করা বোকামী ও মূর্খতা। রাসূল (ﷺ) বরং সকল নবীগণ মৃত্যুর পরে নির্দেশের জগতের সাথে সম্পর্ক রাখে। যা অনেক হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত। এক মুহূর্তে সারা পৃথিবী ভ্রমণ করা প্রমান্য বিষয়। যেমন, ফেরেশতারা নির্দেশের জগতে সম্পর্ক তারা এক মুহূর্তে সারা পৃথিবী ভ্রমণ করতে পারে। এমনি সকল নবীগণ ভ্রমণ করা নিশ্চিত বিষয় । وللأخرة خير لك من الأولى (আপনার জন্য দুনিয়া থেকে আখেরাত উত্তম)এই আয়াত থেকেও কিছুটা ইঙ্গিত মিলে।


পরিপূর্ণ বুযুর্গদের ঘটনাবলী দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত। বোখারী ও মুসলিমের হাদীসে বর্ণিত আছে। রাসূল (ﷺ) বলেন, من رأني في المنام فسيراني في اليقظة ولا يتمثل الشيطان بي  ‘যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখেছে, সে আমাকে জাগ্রত অবস্থায় দেখবে। শয়তান আমার সাদৃশ্য অবলম্বন করতে পারে না।’


ওলামায়ে কেরামের মাঝে এই হাদীসের মধ্যে মতানক্য আছে। কেউ বলে, কেয়ামতের দিন দেখবে। এই ব্যাখ্যার উপর আপত্তি রয়েছে। কারণ সকল মুমিনই কেয়ামতের দিন রাসূল (ﷺ) এর দীদার লাভ করবে। এরপর فسيراني في اليقظة (অতি সত্ত্বর আমাকে জাগ্রত অবস্থায় দেখবে।) এর উদ্দেশ্য কী?


কেউ কেউ বলে, এই হাদীস নববী যুগের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ যে নববী যুগে না দেখে ঈমান এনেছে এবং রাসূল (ﷺ)কে স্বপ্নে দেখেছে, সে সোহবাতের দৌলত অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যেও আপত্তি রয়েছে। কারণ হাদীসের শব্দ নববী যুগ বুঝাতে হবে। অথচ নববী যুগ খাস করা ঠিক নয়। রাসূলের ইন্তেকালের পর তার দীদার অসম্ভব মনে করার কোনো কারণ নেই।


আর অনেকে বলে, এই বিধান তার জন্য বিশেষভাবে, যে রাসূল (ﷺ)কে দেখার যোগ্যতা রাখে। তারা হলেন, অলিগণ। এই বিশেষত্বেও হাদীসের উদ্দেশ্যের বিপরীত।


সবচেয়ে উত্তম ও উপযুক্ত ব্যাখ্যা হলো, এই হাদীসটি তার ব্যাপকতার উপর স্থির রাখবে। তখন উদ্দেশ্য হবে, যে ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)কে স্বপ্নে দেখবে, সে জাগ্রত অবস্থায়ও দেখবে। সর্ব সাধারণ মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুর শয্যায় দেখবে। যতক্ষণ পর্যন্ত জগত সাজানো সৌন্দর্য দ্বারা ভূষিত না হবে, রূহ শরীর থেকে বের হবে না। এটা রাসূল (ﷺ) এর ওয়াদা পূর্ণ হওয়ার জন্য। আর বিশেষ ব্যক্তিরা কম বেশি সারা জীবন সুন্তরের অনুসরণ অনুপাতে দেখবে। কিছু বিশ্লেষকরা বলেছে, হাদীসের চাহিদা হলো, জাগ্রত অবস্থায় দেখবে বাহ্যিক চোখ দিয়ে নয়। অলিগণ জাগ্রত অবস্থায় অন্তর দৃষ্টি দিয়ে দেখেন। অনেক সময় অন্তর দৃষ্টি এতই প্রখর হয় যে, বাহ্যিক দৃষ্টি লুকিয়ে যায়। মনে হয় যেন, বাহ্যিক চোখ দিয়েই দেখছে। যে ব্যক্তি এই দৌলত অর্জন করতে পারছে, সে বড় ভাগ্যবান। যে এমন দৌলত থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে পোড়াকপাল। এই মাসআলা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করা ঈমানের চাহিদা নয়। বরং ঈমানের বক্রতা। কারণ এমন দৌলত থেকে বঞ্চিত থাকলে ঠাট্টা নয়, বরং লজ্জিত ও আফসোস করা উচিত। এটা একটা নাজুক মাসআলা। যা ঈমানের মাপকাঠি নষ্ট করে ফেলে। এমন সুক্ষ্ম মাসআলা নিয়ে ঠাট্টা করা ঈমানের শান নয়। বুঝে না আসলে চুপ থাকা উচিত।


আল্লামা সুয়ূতী (رحمة الله) বর্ণনা করেন। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে স্বপ্নে দেখেন। এরপর জাগ্রত অবস্থায় হযরত মায়মুনা রাযি.র মাধ্যমে দেখেন।


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অহী ও তাবলীগের যুগে মানবিক আকৃতিতে থাকাটা আবশ্যক ছিলো। মৃত্যুর পরে যখন অহী ও তাবলীগের যুগ শেষ হয়ে গেলো, তখন মানবিক আকৃতিও শেষ হয়ে গেছে। এখন যে, মানবিক আকৃতির সাথে আছেন, তা খুবই সুক্ষ্ম ও নুরানী। যা মানবিক প্রয়োজন থেকে একেবারে পবিত্র।


বনি আদমকে এজন্য মানুষ বলা হয়, বাহ্যিক চামড়ার কারণে তাকে প্রকাশ করা হয়।  سموا بذلك لبدو بشرتهم التي هي ظاهر الجلد(جوهرة)

‘তাদের এই নামকরণ করা হয়েছে তাদের চামড়ার কারণে, যা চামড়ার উপরিভাগ।’ (জাওহারাহ)


এভাবে সম্মানিত ফেরেশতা যারা সুক্ষ্ম জগতের সৃষ্টি। যাদের বৈশিষ্ট্য হলো, বিভিন্ন আকৃতিতে যেখানে চায় যখন চায় আল্লাহর নির্দেশে ভ্রমণ করে। মুসলিম বিন এমরান বিন হাসীন থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ফেরেশতা আমার কাছে সালাম দিতো এবং সাক্ষাৎ করতো।


এখন প্রশ্ন হলো, রাসূল (ﷺ) যিনি শরীর ও রূহ দ্বারা গঠিত, তাকে কি দেখা যেতে পারে? নাকি রূপক আকৃতি? এর জবাবে অধিকাংশ জ্ঞানীরা যেমন ইমাম গযালী (رحمة الله) প্রমুখ বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে রূপক আকৃতিতে দেখে। এভাবে যারা আল্লাহ তা‘আলাকে স্বপ্নে দেখে তাও এমনি।


আবু বকর ইবনে আরবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে পরিচিত বৈশিষ্ট্যে দেখা সরাসরি দেখা। আর অপরিচিত বৈশিষ্ট্যে দেখা রূপক আকৃতিতে দেখা।


হাফেয সুয়ূতী (رحمة الله) এটাকে পছন্দনীয় বলেছেন। তিনি একথাও বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পবিত্র ব্যক্তিত্ব শরীর আত্মাসহ দেখা অসম্ভব নয়। কারণ নবীগণ জীবিত। ইন্তেকালের পর তাদের পবিত্র রূহ তাদের মোবারক শরীর সমাহিত হওয়ার পর আবার তাদের শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। নুরানী জগতে সুক্ষ্ম বস্তুর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর তো يذهبون حيث يشاءون (তারা যেখানে যায় সেখানে যায়) এর পর্যায়ে চলে যায়। অর্থাৎ তাদের ইন্তেকালের পর তাদের সুক্ষ্ম শরীরে চলে যায়। শারিরিক এই স্থানান্তরের কারণে তাদের উপর মৃত্যু শব্দ ব্যবহার করা হয়। সাধারণ মানুষের বাহ্যিক চোখের সামনে পর্দা থাকার কারণও এটা। হাফেয আবু মানসুর বাগদাদী বলেন, ধর্মতত্ত্ববিদগণ বলেন, নবীগণ জীবিত, নিজ উম্মাতের নেক আমলের কথা শুনে খুশি হন। উম্মাতের দুরূদ শরীফ তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। নবীগণের মৃত্যু নেই। তবে মানুষের চোখের আড়ালে চলে যান। তারা ফেরেশতাদের মতো বিদ্যমান আছে। তাদেরকে দেখা যায় না। যেমন ফেরেশতাদেরকে দেখা যায় না। তবে বিদ্যমান আছে। তবে আল্লাহর দয়ায় যার নসীব হয়, তার কথা ভিন্ন। ذلك فضل الله يؤتيه من يشاء ‘সেটা আল্লাহর দান, যাতে চান তাকে দেন।’


এই উক্তির পক্ষে আবু লায়লা বায়হাকী কর্তৃক উদ্ধৃত, হযরত আনাস রাযি. কর্তৃক বর্ণিত হাদীস সহায়ক। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, إن الأنبياء لا يتركون في قبورهم بعد أربعين ليلة ولكنهم يصلون بين يدي الله تعالى حتى تنفخ في الصور  ‘নবীগণকে চল্লিশ দিন পরে কবরে রাখা হয় না। তবে তারা আল্লাহর তা‘আলার সামনে কেয়ামত পর্যন্ত নামায আদায় করবে।’


এভাবে ইবনে হিব্বান তারীখের কিতাবে, তবরানী কাবীর কিতাবে, আবু নোআইম হিলিয়া কিতাবে, আবুল হাসান রা‘ওয়ানী কোনো কিতাবে বর্ণনা করেন। إن الله لا يترك نبيا في قبره أكثر من نصف يوم ‘আল্লাহ তা‘আলা কোনো নবীকে তার কবরে অর্ধ দিনের চেয়ে বেশি রাখেন না।’ এরপর তাফরীহুল আযকিয়ার প্রণেতা বলেন, মানসুর বাগদাদী বলেছেন, এই সকল হাদীস ও উক্তির সমষ্টি থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জীবিত। যখন চান কোথাও চলে যান। ভ্রমণ করেন। যা ইচ্ছা করেন।


আল্লামা সুয়ূতী (رحمة الله) অধিকাংশ অলীগণ থেকে রাসূল (ﷺ)কে দেখার কথা নকল করেন। অন্যান্য নবী ও ফেরেশতাদের জাগ্রত অবস্থায় দেখার কথাও বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইয়াফিয়ী লিখেছেন, এক বার মিসরে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। আবু আব্দুল্লাহ কোরাশী দো‘আ করতে চাইলেন। কিন্তু তাকে নিষেধ করা হলো। তখন তিনি সিরিয়ার দিকে চলে যান। হযরত ইবরাহীম আ.র সাথে সাক্ষাৎ হলো। তখন দুর্ভিক্ষ দূর হওয়ার দো‘আ চাইলেন। তিনি দো‘আ করলেন, দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেলো। ইমাম ইয়াফিয়ী (رحمة الله) আরো বলেন, হযরত আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, আমি যোহরের আগে মুহাম্মাদ (ﷺ)কে দেখেছি। তিনি আমার মুখে থুথু দিয়েছেন। এরপর হযরত আলী রাযি.কে দেখেছি। তিনি ছয় বার আমার মুখে থুথু দেন। খলীফা ইবনে মুসা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি অধিকাংশ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে স্বপ্নে ও জাগ্রত অবস্থায় দেখতেন। এক রাতে তিনি সতের বার দেখেন। 


হযরত শায়েখ আবুল আব্বাস মুসা থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, এক মুহূর্তের জন্য যদি রাসূল (ﷺ)কে আমার সামনে থেকে অদৃশ্য দেখতাম, তাহলে নিজেকে মুসলমানদের অন্তর্ভ্ক্তু মনে করতাম না।


এই জাতীয় অনেক বর্ণনা ইমাম মাযুরী তাওসীকু আরিইয়িল ঈমান কিতাবে, আব্দুল্লাহ বিন আবি জামরা বাহজাতুন নুফুস কিতাবে, শায়খ সফি উদ্দিন আবু মানসুর তার কিতাবে বর্ণনা করেন। আবু আব্দুল্লাহ বলেন, এটা অস্বীকারকারী অলিদের কারামাতকে অস্বীকারকারী। অলিদের কারামাত অস্বীকারকারীদের সাথে কোনো কথা নেই। যে ব্যক্তি কারামাতে বিশ্বাসী তার উচিত, এটা বিশ্বাষ করা যে, كرامات الأولياء حق ‘অলিদের কারামাত সত্য।’


এই একটি সন্দেহ ও প্রশ্ন আছে যে, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা জান যায়, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীন থেকে এমন দেখা প্রমাণিত নেই। এমনি অনেক বিষয় সাহাবা তাবেয়ী যারা হাদীস ও সুন্নাত সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী স্বর্ণ যুগের পবিত্র ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাদের যুগে পাওয়া যায় না। পরবর্তী যুগে প্রকাশ পেয়েছে। যদিও তা রাসূলের ভালোবাসার প্রমাণ বা নববী সুন্নাতের মোকাদ্দামা অথবা ভালো কাজ হোক। কেন নতুন আবিস্কার ও বিদআতের কারণে গোমরাহী ও না জায়েয হবে? যেমন মীলাদে মোস্তফা, কিয়ামে তা‘যীম, মীলাদ, ফাতেহা, মাসজিদের মধ্যে সাজ সজ্জা, বিছানা, মিনার ও মেহরব ইত্যাদি ইত্যাদি।


বন্ধুরা, বিদআত ও না জায়েয উচ্চরণ করা যতই সহজ, সেভাবে বাস্তব বিদআত যা আল্লাহ ও রাসূলের কাছে খারাপ তা প্রমাণ করা বড়ই কঠিন। যেখানে সেখানে না জায়েয ও বিদআত শব্দ ব্যবহার করা না আলেমের শান নয়। এটা একটা অনেক বড় সুক্ষ্ম মাসআলা। দীনি ইলমে পূর্ণ গভীরতা ছাড়া এই মাসআলার সমাধান দেওয়া অনেক কঠিন। যেই বিষয় কোরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস এই চার দলিলের বিপরীত হবে তা বিদআত ও না জায়েয। সব জিনিস নয়। জাওহারা কিতাবে আছে, إن كل ما وافق الكتاب أو السنة أو الإجماع أو القياس فهو سنة ‘যে সব জিনিস কোরআন বা হাদীস বা ইজমা বা কিয়াসের সাথে মিল হবে তা সুন্নাত।’

সুতরাং নিজের মনের ইচ্ছা মতো শরয়ী কোনো বিষয়কে বিদআত ও না জায়েয বলা বড় দুঃসাহস ও বানোয়াট।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের শরীয়াতের মধ্যে নতুন কিছু আবিস্কার করবে, কমিয়ে হোক কিংবা বাড়িয়ে হোক যেমন, পাঁচ ওয়াক্ত নামায বাদ দিয়ে দশ ওয়াক্ত বলা। বা দুই তিন ওয়াক্ত বলা। অথবা ত্রিশ রোযার জায়গায় বিশটা বা চল্লিশটি বলা। এমন নির্ধারিত শরয়ী বিষয়ে বেশি কম করা প্রত্যাখ্যাত ও বাতিল। দীনি কাজের মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার জন্য কোনো উপায় উপকরণ নয়। নতুবা বর্তমান যুগের অধিকাংশ জিনিস বেদআত ও না জায়েয হয়ে যাবে। যেমন, মাসজিদ, মাদরাসা ও অধিকাংশ ইবাদাতের বিষয়ও বিদআত হয়ে যাবে। অথচ নতুন আবিস্কৃত বিষয়কে কেউ বেদআত বলেনি। في أمرنا এর মধ্যে শব্দটি ব্যাপক রাখা হয়েছে। দুনিয়া ও দীনি কোনো কিছুর কথা নেই। লেনদেন বা ইবাদাত কোনোটাই নির্দিষ্ট করা হয়নি।অতএব এর ব্যাপকতার উপর ভিত্তি করে দীনি, দুনিয়াবী, লেনদেন ও ইবাদাত সবই এর অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। দীনি বিষয় ও দুনিয়াবী বিষয় আলাদা করা এবং লেনদেনকে ইবাদাত থেকে আলাদা করা খ্রিস্টানদের ধর্ম। মুহাম্মাদী শরীআতে দীনি ও দুনিয়াবী উভয় বিষয়ের হুকুম সেটাই যেটা রাসূল (ﷺ) চালু করেছেন। মুসলমান একথা বলা যে, দুনিয়াবী বিষয়ে নতুন আবিস্কার জায়েয ও মোবাহ, দীনি বিষয়ে না জায়েয, অর্থাৎ নতুন আবিস্কারকে দীনি বিষয়ের সাথে বিশেষায়িত করা জায়েয নেই। বরং এটা খ্রিস্ট দর্শন। তারা গীর্যা ও রাজনীতি আলাদা করে ফেলেছে। আমাদের শরীয়াতে রাজনীতি, ইবাদাত ও রাষ্ট্র পরিচালনা সব কিছুই দীন। সুতরাং দীনি ও দুনিয়াবী বিষয়কে আলাদা করা আমাদের ধর্মে নেই। সুতরাং ফি আমরিনা বলতে দীনি দুনিয়াবী সকল বিষয়ই এর অন্তর্ভুক্ত। মুসলমানদের মধ্যে যারা খ্রিস্টানদের সমমতের তারা এই পার্থক্য মানে। হাঁ, যারা দুনিয়ার স্বাদ, লেনদেন, দুনিয়ার উপকরণ ও দুনিয়া অর্জন সব কিছু ছেড়ে দিয়েছে তাদের বিষয়টি ভিন্ন। তারা দীনের গন্ডি থেকে বেরিয়ে বিলীনের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এটা ভিন্ন বিষয়।


বিদআত ও সুন্নাতের আরো বিশ্লেষণ ও পরিচিতি এবং من أحدث في أمرنا..  এই হাদীসের পূর্ণ ব্যাখ্যা অধমের লেখা কিতাব তা‘রীফুল বিদআতে উল্লেখ আছে। সেখানে দেখে নিবে।


উল্লিখিত সন্দেহ ও প্রশ্নের জবাব হলো, সাহাবা ও তাবেয়ীদের যুগ রাসূল (ﷺ) এর যুগের কাছে হওয়ার কারণে অলৌকিক ঘটনার প্রকাশ খুব কম ছিলো। সম্মানের বিভিন্ন উপায় উপকরণের প্রকাশ কম ছিলো। রাসূলের যুগের কাছে হওয়ার বরকতে সকলের অন্তরে মর্যাদা ও আগ্রহ বেশি ছিলো। নববী যুগ থেকে যখন মানুষ দূরে যেতে থাকে মানুষের অন্তর থেকে দীনের মর্যাদা, নবীর সম্মান ও ইবাদাতের আগ্রহ অনেক কমে যেতে থাকে। এ কারণে পরবর্তী ওলামায়ে কেরাম দীনের প্রতি আগ্রহ, তাওহীদ, রেসালাত ও শরীয়াতের শান বুঝানোর জন্য বিভিন্ন উপকরণ নতুন নতুন আবিস্কার করেছেন। এই দৌলত ও নেআমত পরবর্তী ওলামা ও অলিদের ভাগ্যে লেখে দিয়েছেন। কে এটার অস্বীকার করতে পারে। যখন এর উপর প্রচুর সাক্ষ্য ও মুতাওয়াতির ঘটনা অস্বীকারের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। وللأخرة خير لك من الأولى এই আয়াত এর সমর্থক।


ইমাম গযালী (رحمة الله) বলেন, অন্তর সম্পন্ন ব্যক্তিরা ফেরেশতা ও নবীগণের রূহ দেখেন। তাদের আওয়াজ শুনেন। ফায়েদা উপভোগ করেন। শায়খ জালালুদ্দীন সুয়ূতী (رحمة الله) সত্তর বারেরও বেশি এই দৌলত অর্জন করেছেন। শেষ কথা হলো, এই নেআমত অর্জনের পরিপূর্ণতা যদিও ঘুমের মধ্যে ছিলো, কিন্তু জাগ্রত অবস্থায় দেখার পথে কোনো বাধা নেই। কারণ জাগ্রত অবস্থায় ফেরেশতাদেরকে দেখা সর্ব সম্মতক্রমে জায়েয এবং বাস্তব। এরপর নবীগণকে দেখার মধ্যে কোন বাধা রয়েছে? রাসূল (ﷺ)কে স্বপ্ন বা জাগ্রত অবস্থায় দেখা এক ও অভিন্ন বিষয়। যেমন জিবরাঈল আ.কে কখনো আসল আকৃতিতে, কখনো দাহিয়া কালবীল আকৃতিতে দেখা গিয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, উভয় আকৃতিতে জিবরাঈলকেই দেখা যেত। এ কথার দ্বারা এই সন্দেহও দূর হয়ে গেলো, সারা পৃথবীতে হাজার হাজার মানুষ কিভাবে দেখে। কারণ এক সময়ে রাসূল (ﷺ) এর রূপক আকৃতি হাজার আয়নায় দেখিয়ে দেওয়া জায়েয ও সম্ভব।


কাযী আয়ায (رحمة الله) বলেন, যে ব্যক্তি রাসূল্লাহ (ﷺ)কে এই আকৃতি ও গুণের সাথে দেখেছে, সে সত্যই দেখেছে। ইমাম নভভী (رحمة الله) বলেন, উভয় রকম দেখা বাস্তবতা। কারণ তার উপযুক্ত পদও এটাই।


রাসূল (ﷺ) দুনিয়াতে নবুয়াতের পদের দায়িত্বে ছিলেন। একারণে মানব পোশাকে আবৃত ছিলেন। এক দিকে নবুয়াতের পদের দায়িত্ব, অপর দিকে খোদাই বেলায়েতের মধ্যে লিপ্ত। যখন নবুয়াতের দায়িত্ব থেকে ফারেগ হয়েছেন, সর্বদার জন্য খোদাই বেলায়েতের মধ্যে লিপ্ত আছেন। মানব জামা খুলে ফেলা হয়েছে।


কাযী আবু বিন আওল বলেন, রাসূল (ﷺ)কে এই গুণে দেখা নবীর বাস্তবতা। নতুবা রূপক দেখা।


আমাদের আকীদা হলো, রাসূল (ﷺ) সশরীরে পবিত্র রওজায় অবস্থান করছেন। সকল প্রথিবী তার সামনে উপস্থিত। যা তিনি দেখছেন। তিনি যখন যেখানে ইচ্ছা চলে যান। যদি এক সময়ে বিভিন্ন জায়গায় যেতে চান তাও সম্ভব। এটাই হাজির নাজিরের অর্থ। এটা নয় যে, তিনি বিশেষ শরীরে সর্ব জায়গা সর্বদা উপস্থিত। যেভাবে অনেকে আহলে সুন্নাতের উপর আপত্তি করে। এই উপর ভিত্তি করে বাজে ও অনর্থক আপত্তির দ্বারা শুরু করে দেয়।


হাজির নাজির প্রমাণ করার জন্য তার জীবন ও জীবনের আনুসাঙ্গিক বিষয় কার্য ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হওয়া এবং একি সময়ে একাধিক জায়গায় উপস্থিত হওয়ার প্রমাণ জরুরী।


মাওলানা কাসেম নানুতুবী (رحمة الله) লাতায়েফে কাসেমিয়াতে বলেন, সকল নবীগণ বিশেষভাবে রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে মৃত্যুর বিশ্বাস জরুরী। তবে এই পদ্ধতিতে মৃত্যু ও জীবিত থাকার একত্র হওয়া এভাবে হবে, যেমন নৌকা নড়লে বসা ব্যক্তিও নড়ে। এখানে যেমন থেমে থাকা আসল এবং নড়া প্রাসঙ্গিক। তেমনি ওখানেও জীবিত আসল ও মৃত্যু প্রাসঙ্গিক। অন্য জায়গায় বলেন, অন্তরের আকীদা থেকে জানিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে কোনো দলিল বা দৃষ্টান্তের দিকে ইঙ্গিতও হয়ে যাবে। নবীগণকে তাদের দুনিয়াবী শরীরের সম্পর্কের দিক থেকে বেশি বুঝি।


অন্যত্র বলেন, নবীগণের মৃত্যু ও সাধারণের মৃত্যুর মাঝে এভাবে পার্থক্য হবে, বাতি স্বর্ণের পাত্রে ঢেকে যাওয়া এবং মাটি হয়ে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য।


এই কথার দ্বারা জানা যায়, কাসেম নানুতুবীর মতে রাসূল (ﷺ) এর সাথে মৃত্যু যুক্ত হওয়া রূপক অর্থে। বাস্তবে নয়। যেভাবে নৌকায় বসা ব্যক্তির সাথে নড়া যুক্ত হওয়া রূপক, বাস্তবে নয়। এভাবে নবীগণের সাথে জীবনের বাতি সর্বদা আলোকিত থাকে। কখনো নিভে না। সাধারণের মৃত্যুতো এমনি যে, তাদের মৃত্যুতে জীবনের বাতি নিভে যায়। নবীগণের জীবনের বাতি আগের চেয়ে বেড়ে যায়।


যখন একথা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, নবী (ﷺ) দুনিয়াবী হায়াতের সাথে জীবিত এবং দুনিয়াবী জীবনে তার দৃষ্টির পরিধি এতই বেশি যে, সারা পৃথিবীকে হাতের তালুর মতো দেখো। হাদীসে এসেছে, رفعت لي الدنيا فإنا انظر فيها كما انظر إلى كفي هذه ‘সারা পৃথিবী আমার সামনে পেশ করা হয়েছে। তা আমি হাতের তালুর মতো দেখি।’


❏ প্রশ্ন : উল্লিখিত মর্যাদা দুনিয়াতে অর্জিত ছিলো, মৃত্যুর পরে নয়?


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما উপরোক্ত হাদীসেفإنا انظر বাক্যটি মোবতাদা খবর মিলে ইসমিয়া বাক্য হয়েছে। খবরের انظر শব্দটি ফে‘লে মুজারে‘। আর যেই জুমলায়ে ইসমিয়ার খবর ফে‘লে মুজারে হবে সেটা নতুন স্থয়ীত্বের ফায়েদা দিবে। অতএব মৃত্যুর আগে ও পরে উভয়টি সমান।


যদি মেনে নেওয়া হয় যে, দুনিয়াতে রাসূল (ﷺ) এর প্রখর দৃষ্টি অর্জন ছিলো। আখেরাতে এই নেআমত নিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাহলে তার আখেরাত দুনিয়া থেকে ভালো থাকবে না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وللأخرة خير لك من الأولى ‘আপনার আখেরাত দুনিয়া থেকে ভালো।’

 

যখন একথা প্রমাণ হলো যে, কবরে দুনিয়াবী হায়াত, তাহলে দুনিয়াবী হায়াতের আনুসাঙ্গিক বিষয় প্রমাণিত হবে। إذا ثبت الشئ ثبت بلوازمه ‘বস্তু তার প্রসঙ্গিক বিষয় নিয়েই প্রমাণিত হয়।’ দৃষ্টির প্রশস্ততা যেহেতু দুনিয়াতে প্রমাণিত, তাই কবরেও প্রমাণিত হবে।


মাওলানা কাসেম নানুতুবী (رحمة الله) লতায়েফে কাসেমিয়াতে বলেন, মৃত্যুর সময় নবীগণের হায়াত আরো কঠিন হয়ে যায়। কারণ, হায়াত যখন মূল, তাহলে এই অবস্থায় কখনো কবরে থাকেন, কখনো মি‘রাজের কারণে আসমানে চলে যান।


এই সকল দলিলের আলোকে প্রমাণিত হয়ে গেলো, রাসূল (ﷺ) কবরে বসে সব কিছু দেখছেন। যখন যেখানে চান চলে যান। একই সময় একাধিক জায়গায় চলে যেতে চাইলে তাও সম্ভব।


রাসূল (ﷺ) কি হাজির নাজির?


❏ প্রশ্ন : রাসূল (ﷺ) সরাসরি যদি একাধিক জায়গায় উপস্থিত থাকেন, তা এর দ্বারা একক বস্তু একাধিক হওয়া আবশ্যক হচ্ছে। আর যদি সেখানে রূপক আকৃতি থাকে তাহলে বস্তুর রূপ বস্তুর থেকে ভিন্ন হয়। অতএব প্রমাণ হলো, তিনি বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যমান নয়।


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما এক রূহের সাথে সম্পৃক্ত রূপক একাধিক শরীর বিভিন্ন জায়গায় উপস্থিত হতে পারে। এটা একক বস্তু একাধিক হওয়া নয়। কারণ শরীরগুলির মধ্যে এক ধরণের ভিন্নতা বিদ্যমান আছে। এমন শরীর রাসূল (ﷺ) থেকে ভিন্নও নয়। কারণ সকল শরীরে সাথে তার রূহ সম্পৃক্ত থাকবে। নির্দিষ্ট করণের ভিত্তি রূহ এক হওয়ার উপর, শরীর এক হওয়ার উপর নয়।


ইমাম মালেক (رحمة الله) বলেন, إن الروح صورة كصورة الجسد ‘রূহও একটি আকৃতি, শরীরের আকৃতির মতো।’  (নোখবাতুল লায়ী : ১৩৬)


কেউ যদি বলে, রাসূল (ﷺ) এর আগমন হলেও আমরা তো দেখি না। এটা আকীদা ও আমলের ত্রুটি। চোখের দেখা না হলে এটা আবশ্যক নয় যে, রাসূল (ﷺ) আসেন না। বরং এটা নিজের দুর্বলতা। এর কারণে লজ্জিত হওয়া উচিত। ঠাট্টা করে কথা বলা নয়। কোনো জিনিস কোথাও কেউ না দেখলে এটা আবশ্যক হয় না যে, ঐ জিনিস ওখানে নেই। বরং এটা নিজের দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা ও অসর্তকতার প্রমাণ।

একথাও স্মরণ রাখতে হবে যে, এমন কথা বা আচরণ রাসূল (ﷺ) এর রূহের সাথে বে আদবী। যা বড় মারত্মক। যদিও এটা তার শরীরের সাথে বেআদবী নয়। শরীরের তুলনায় রূহের সাথে বেআদবী করা মারত্মক বেশি। যেমন ফেরেশতাদেরকে নৈকট্যপ্রাপ্ত ও বিশেষ মানুষরা ছাড়া কেউ দেখতে পায় না। এর দ্বারা এটা আবশ্যক নয় যে, ফেরেশতা সব জায়গাতে নেই। ফেরেশতা সব জায়গায় নেই একথা বলা বোকামীর প্রমাণ এবং ফেরেশতাদের সাথে বেআদবী। অথচ ফেরেশতারা তো সর্ব জায়গায় বিদ্যমান আছে। যা সাধারণদের দৃষ্টি থেকে উপরে। ফেরেশতা কখনো মানুষের আকৃতি ধারণ করে।


শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (رحمة الله) জাযবুল কুলুব কিতাবে বলেন, শায়খ আলাউদ্দিন কাওনুবী বলেছেন, একথা অসম্ভব নয় যে, নবীগণের পবিত্র রূহ শরীর থেকে পৃথক হওয়ার পর ফেরেশতাদের শরীরের মতো হয়ে যায়। বরং তাদের চেয়েও উত্তম হয়ে যায়। ফেরেশতারা যেমন বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারে, তেমনি পবিত্র রূহও বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারে। এটাও হতে পারে যে, আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের এই মর্যাদা দুনিয়ার মধ্যে অর্জন হবে এবং এক আত্মা নির্দিষ্ট শরীর ছাড়া বিভিন্ন শরীরে সচল থাকবে। যেমন, কোনো কোনো বিশেষাজ্ঞ আবদালের নাম করণের কারণ বর্ণনা করেন, তারা যখন কোনো জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা করে, তখন প্রথম জায়গায় তার রূপ রেখে চলে যায়।


সুফিদের মতে আলমে আজসাদ, আলমে আরওয়াহের মতো একটি আলমে মেসাল আছে। যা আলমে আজসাদ থেকে সুক্ষ্ম ও আলমে আরওয়াহ থেকে ঘন হয়। আর রূহ বিভিন্ন আকৃতিতে রূপান্তর হওয়া এই আলমের উপর ভিত্তি করে। হযরত জিবরাঈল আ. দাহিয়া কালবীর আকৃতিতে এবং হযরত মারিয়াম আ.র কাছে পূর্ণ মানবাকৃতিতে যাওয়া এই আলমের থেকে। এর কারণে জায়েয আছে যে, মূসা আ. ষষ্ঠ আসমানে অবস্থান করছে এবং তখন কবরেও রূপ রেখে এসেছেন। রাসূল (ﷺ) তাকে দুই জায়গাতেই দেখেছেন। এই আলম বা জগতের প্রামাণিকতার দ্বারা অনেক মাসআলার সমাধান হয়ে যায়। যেমন, জান্নাত এত বড় প্রশস্ত হওয়া সত্তে¡ও দেয়ালের মধ্যে দেখা যাওয়া ইত্যাদি।

এভাবে ইমাম গযালী (رحمة الله) ও মাওলানা আসগর আলী কনুজী লাতায়েফে ইলমিয়াতে অনেক দৃষ্টান্ত ও বিশ্লেষণের সাথে এই বাস্তবতা বর্ণনা করেছেন যে, নবীগণ মৃত্যুর পরে বিভিন্ন আকৃতিতে রূপান্তর হয়ে প্রথিবীর আনাচে কানাচে ভ্রমণ করেন। দৃষ্টিসম্পন্নরা দেখে। বরং এটা ইসলামের সত্যতা ও তাওহীদ ও রেসালাতের উপর চূড়ান্ত বিশ্বাস।


উল্লিখিত আলোচনা নবীগণ বিশেষভাবে নবীগণের সর্দার (ﷺ) সম্পর্কে। ইমাম মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) এমনকি অলিগণ সম্পর্কে কি বলেন মেরকাত কিতাবে দেখুন। যখন আল্লাহর অলিদের জন্য জমিন সংকোচিত করে দেওয়া হয়, حصل لهم ابدان مكتبة متعددة وجدوها في أماكن مختلفة في أن واحدঅর্থাৎ তাদের জন্য বিভিন্ন শরীর অর্জন হয়। এই রূপক বিভিন্ন শরীরের কারণে আল্লাহর অলিদের একই সময় বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়। দুনিয়াতে এই বিষয়টি বেশিরভাগ অলিদের জন্য সাধারণ বিষয়। (তাওযীহুল বয়ান, আল্লামা সাঈদী)


সুবহানাল্লাহ, মোল্লা আলী আলকারী (رحمة الله) যখন আল্লাহর অলিদের জন্য এই বিষয়টি সাধারণ বলেছেন, তাহলে নবীগণ বিশেষভাবে আমাদের নবী (ﷺ) এর পবিত্র শানে নিশ্বাস ফেলানোর সুযোগ কিসের। একারণে হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মাক্কী (رحمة الله) বলেছেন, রাসূল (ﷺ) এক সময়ে কয়েক জায়গায় কিভাবে যেতে পারে। তার কিভাবে ইলম হলো। এমন ধারণা দুর্বল ধারণা। রাসূল (ﷺ) এর ইলম ও আধ্যাত্মিকতার ব্যাপ্তি যা দলিল দ্বারা প্রমাণিত, তার সামনে এটা একটা সাধারণ বিষয় বিষয়। আর আল্লাহ তা‘আলার কুদরতের উপর কোনো কথাই নেই।


আরো স্পষ্ট হওয়ার জন্য এখানে একটি হাদীস পেশ করছি। যাতে শিক্ষা গ্রহণ করার লোকেরা ফিকিরের দৃষ্টিতে দেখে বিশ্বাস করে নেয়। জিদ করে ঈমান ধ্বংসের জালে আটকে না যায়।


মেশকাত শরীফে আছে, রাসূল (ﷺ) একজন চিন্তিত মানুষকে দেখলেন। যার সন্তান মারা গিয়েছে। তখন তিনি বলেন,

أما تحب ان لا تاتي بابا من أبواب الجنة الا وجدته ينتظرك فقال يا رسول الله اخاصة له الكلنا قال لكلكم

‘তুমি কি এটা পছন্দ করবে না যে, তুমি জান্নাতের যে কোনো দরজায় গেলে দেখবে সেখানে তোমার ছেলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে? কেউ বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ এটা কি তার জন্য বিশেষভাবে। নাকি আমাদের সকলের জন্য? তিনি বললেন, তোমাদের সকলের জন্য।’


এই হাদীসে باب শব্দটি নাকেরা তথা অনির্দিষ্ট এবং খবর না বাচকের পরে এসেছে। নাকেরা না বাচকের পরে আসলে ব্যাপকতার অর্থ দেয়। জানা গেলো, জান্নাতের প্রত্যেক দরজার এই গুণ থাকবে। প্রত্যেক দরজাতে ঐ ছেলে উপস্থিত থাকবে। প্রমাণ হলো, এক ব্যক্তি একই সময়ে বিভিন্ন জায়গায় থাকা শুধু সম্ভব নয়, বরং বাস্তব বিষয়।


শায়খ আবু সাঈদ কিলবী (رحمة الله) বলেন, হযরত শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله)র মাজলিসে আমি বহু বার রাসূল (ﷺ) এবং অন্যান্য নবীদেরকে দেখেছি। (সাকীনা : ২৬)


মোটকথা এখানে দেখাটা রূপক আকৃতিতে হোক বা রূহ শরীরসহ হোক আমরা দুটিই সম্ভব মনে করি। কারণ নবীগণের শরীর রূপক আকৃতির মতো সুক্ষ্ম শরীর। অন্য মানুষের শরীর এমন নয়। তা ঘন। সুক্ষ্ম শরীর ঘন শরীরের সাথে তুলনা করা যায় না।


আল ইউওয়াকীত কিতাবে হযরত শায়খ কাসেম মাগরিবী (رحمة الله) বর্ণনা করেন,

ليست رؤية النبي صلى الله عليه وسلم كرؤية الناس بعضهم بعضا وإنها هي جمعية خيالية وحالة برزخية وأمر وجداني لا يدرك حقيقة الا من باشره

‘রাসূল (ﷺ)কে দেখা মানুষ একে অপরকে দেখার মতো নয়। বরং এটা একটা খেয়ালিয়া ও বারযাখী বিষয়। উপলব্দির বিষয়, যা একমাত্র সেই উপলব্দি করতে পারে যে এই মর্যাদা অর্জন করেছে।’

وحينئذ فما رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم الا بروحه المتشكلة يتشكل الأشباح من غير انتقال ذاته الشريفة ومجيئها من البرزخ إلى مكان هذا الرائي

‘মোটকথা যখন রাসূল (ﷺ) এর দেখা হয় তার রূহ দেখা হয়। যা বিভিন্ন রূপে পরিবর্তন হয়। তার সত্তা বারযাখের জগত থেকে স্থানান্তর হয়ে আগমন করে না।’ (ইউওয়াকীত)


ফাতহুল মুলহিম কিতাবে মাওলানা শাব্বির আহমদ ওসমানী (رحمة الله) বলেন,

يجعل الله لروحه مثالا فيرى في اليقظة كما يرى في النوم

‘আল্লাহ তা‘আলা তার রূহের রূপ সৃষ্টি করে দেন। ফলে তা জাগ্রত অবস্থায় দেখে, যেভাবে ঘুমের মধ্যে দেখে।’ (১/২৩০)


শায়খ আকবর (رحمة الله) বলেন,

إن من أهل البرزخ من يخلق الله تعالى من همته من يعمل في قبره بعمله الذي كان يعمله في دار الدنيا

‘বারযাখবাসীদের মধ্যে এমন কিছু অলিরাও আছে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের শক্তি সাহস সৃষ্টি করে দেন। ফলে তারা দুনিয়াতে যেই আমল করতো সেগুলি তারা করে।’ (আলইউওয়াকীত)


র্সিরুল আসরার কিতাবে আছে, الأولياء يصلون في قبورهم كما يصلون في بيوتهم

‘অলিগণ তাদের কবরের মধ্যে সেভাবেই নামায আদায় করে, যেভাবে তারা তাদের ঘরে করতো।’


আসলে এই রক্ত মাংসের শরীরের নাম মানুষ নয়। বরং মানুষ সেউ সুক্ষ্ম নুরানী শরীরের নাম যা এই শরীরের জীবনের উৎস। এই শরীরের মধ্যে তা এভাবে সচল আছে, যেভাবে গোলাপ ফুলে পানি, যায়তুনে তেল ও কয়লার মধ্যে আগুন। যতক্ষণ পর্যন্ত রক্ত মাংসের শরীর এর প্রভাব গ্রহন করার যোগ্যতা থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই সুক্ষ্ম শরীর এই শরীরে বিদ্যমান থাকবে। যখন সে এই যোগ্যতা হারিয়ে ফেলবে তখন এই সুক্ষ্ম শরীর রক্ত মাংসের শরীর থেকে পৃথক হয়ে বারযাখ জগতে চলে যাবে। (কিতাবুর রূহ, ইবনুল কইয়ূম)


এখন এই মাসআলার বিশ্লেষণ হলো, ইন্তেকালের পরে রাসূল (ﷺ) এর পবিত্র শরীর বারযাখ জগতে অর্থাৎ কবরে রূহের সাথে সম্পর্ক আছে। এই হায়াতের কারণে পবিত্র রওযাতে উপস্থিতিদেরকে দেখেন এবং শুনেন। সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কোরআন ও হাদীসের আলোকে এটা ইজমায়ী আকীদা। হুযুর (ﷺ) এবং অন্যান্য নবীগণও দুনিয়াবী শরীরের হায়াতে আছেন এবং এটা দুনিয়াবী জীবন থেকে কম নয়। স্বাদ উপভোগ ও অন্যান্য ইবাদাতে লিপ্ত আছেন। নিঃসন্দেহে এটা অনুভূত ও শারিরিক জীবন। রূহানী ও রূপক হায়াত তো সাধারণ মুমিন বরং কাফেরদেরও অর্জিত আছে। উম্মতের এই ইজামায়ী আকীদা শরীআতের মূলনীতি কিতাব, সুন্নাত উম্মাতের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং এই ইজমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া নিছক জিদ।


কুরআন কারীমে আছে, واسئل من أرسلنا من قبلك ‘তুমি জিজ্ঞাসা করো, যাদেরকে তোমার পূর্বে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা যুখরুফ) এই আয়াতের ইঙ্গিত, বর্ণনা ও চাহিদা থেকে প্রমাণ হয়। মুফাসসিরীন বলেন,يسند به على حياة الأنبياء ‘হায়াতুল আম্বিয়ার পক্ষে এটা দিয়ে দলিল দেয়া যাবে।’ (মুশকিলাতুল কোরআন, দুররে মানসূর, রূহুল মা‘আনী, জামাল, সাবী, শায়খ যাদা, খফাযী)


সূরা আলিফ লাম সাজদাতে আছে, ولقد أتينا موسى الكتاب  ‘আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি।’ শাহ আব্দুল কাদের এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, মে‘রাজের রাতে তার সাথে সাক্ষাত করে ছিলেন। আরো কয়েক বার সাক্ষাত করে ছিলেন। (মুযিহুল কুরআন) সাক্ষাত হায়াত ছাড়া সম্ভব নয়। সুতরাং আয়াতের চাহিদা থেকে নবীগণের হায়াত প্রমাণিত হয়।


মূলনীতি আছে, যেই বিধান চাহিদা থেকে প্রমাণিত হয় তা এককভাবে শক্তি ও গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে সরাসরি বিবরণের মতো হয়।

ولا تقولن لمن يقتل في سبيل الله أموات بل أحياء ولكن لا تشعرون.

‘যারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেয় তাদেরকে মৃত্যু বলো না, তারা জীবিত। তবে তোমরা বুঝো না।’

ولا تحسبن الذين قتلوا في سبيل الله أمواتا، بل أحياء عند ربهم يرزقون

‘যারা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছে, তাদেরকে মৃত্যু ভেবো না। তারা জীবিত। তাদের রবের কাছে রিযিক পাচ্ছে।’


এই দুই আয়াতের সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন,

كون الشهداء أحياء بنص القرأن والأنبياء أفضل من الشهداء

‘কুরআনের বর্ণনার দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, শহীদগণ জীবিত। আর নবীগণ শহীদগণের তুলনায় উত্তম।’ (ফাতহুল বারী)


হাফেয আসকালানী আয়াত থেকে দালালাতুন নস বা বিবরণ ভঙ্গি থেকে হায়াতুন নবী প্রমাণ করলেন।’

হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত। الأنياء في قبورهم يصلون ‘নবীগণ তাদের কবরে নামায পড়ছে।’ (হায়াতুল আম্বিয়া, বায়হাকী)


আল্লামা সুবকী (رحمة الله) এই হাদীসের সনদ উল্লেখ করে তার রাবীদেরকে ছেকাহ ও সহীহ সাব্যস্ত করেছেন। খাসায়েস, ফাতহুল বারী, ফাতহুল মুলহিম কিতাবেও প্রথম রাবী ছাড়া বাকি রাবীদের সাথে উল্লেখ করেছেন।


আল্লামা হাইতামী (رحمة الله) বলেন, আবি ইয়ালার সনদের সকল রাবী ছেকাহ। আসসিরাজুম মুনির কিতাবে আছে, এই হাদীসটি সহীহ।


মোল্লা আলী আল কারী (رحمة الله) মেরকাতে বলেন, صح خبر الأنبياء أحياء في قبورهم ‘নবীগণ কবরে জীবিত থাকার হাদীস সহীহ।’ ফয়যুল কাদীরে আছে, এই হাদীস সহীহ।


শায়খ মুহাক্কিক দেহলবী (رحمة الله) মাদারেজুন নুবুওয়াত কিতাবে বলেন, ইমাম আবু ইয়ালা ছেকাহ রাবীদের মধ্যস্ততায় হযরত আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণনা করেন।


কাযী শাওকানী বলেন, أنه صلى الله عليه وسلم حي في قبره وروحه لا تفارقه كما صح أن الأنبياء أحياء في قبورهم

‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার কবরে জীবিত। তার রূহ তার থেকে বিচ্ছেদ হয় না। যেমন অন্যান্য নবীগণ তাদের কবরে জীবিত।’

(তোহফাতুয যাকেরীন)


নায়লুল আওতার কিতাবেও শাওকানী বলেন,

 وقد ثبت في الحديث أن الأنبياء أحياء في قبورهم

‘নিঃসন্দেহে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, নবীগণ তাদের কবরে জীবিত।’ 

(ইমাম মুনজিরী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বায়হাকী সহীহ বলেছেন।)


অফাউল অফা কিতাবে আছে, আবু ইয়ালা ছোকাহ রাবীদের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বায়হাকী সহীহ বলেছেন।


মাওলানা যাকারিয়া খান দেহলবী (رحمة الله) ফাযায়েলে দুরূদে লিখেছেন, নবীগণ কবরে নামায পড়ছেন, এই হাদীস সহীহ।


জামহুর মুহাদ্দিস এই হাদীসের শুদ্ধতার উপর একমত হয়েছে। হাদীসের মূলনীতিতে এর চেয়ে মজবুত দলিল আর কি হতে পারে। ফাতহুল মুলহিম কিতাবে আছে, دلت النصوص الصحيحة على حياة الأنبياء ‘সহীহ বর্ণনা একথা বুঝায় যে, নবীগণ কবরে জীবিত।’ অন্য জায়গায় আরো বলেন, أن النبي صلى الله عليه وسلم حي كما تقرر وأنه يصلي في قبره بأذان وإقامة ‘রাসূল (ﷺ) জীবিত যেমনটি প্রমাণিত আছে। তিনি তার কবরে আযান ও ইকামাতের সাথে নামায আদায় করেন।’(ফাতহুল মুলহিম : ৩/৪১৯)


ইমাম আবু দাউদ এবং ইমাম আহমদ (رحمة الله) হযরত আবু হোরায়রা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, ما من أحد يسلم علي الا رد الله علي روحي حتى أرد عليه السلام ‘কোনো মানুষ আমাকে সালাম দিলে আল্লাহ তা‘আলা আমার রূহকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন। আমি তার সালামের জবাব দেই।’


ইমাম তাকী উদ্দীন সুবকী (رحمة الله) বলেন, ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম আহমদ (رحمة الله)র হাদীসের উপর যে নির্ভর কররো, সে ঠিক করলো। হাফেয ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, তার সকল রাবী ছেকাহ।


সিরাজুম মুনির- ইমাম নভভী, কিতাবুল আযকার- ইবনে কাসীর। ইবনে তায়মিয়া (رحمة الله) বলেন, হাদীসটি উত্তম। ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়া, যুরকানী ও ইমাম সাখাবী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ এই হাদীসটি হাসান ও সহীহ বলেছেন।


উসূলে হাদীসের আলোকে এই হাদীস একেবারে হাসান ও সহীহ। এর সকল রাবী ছেকাহ। মুহাদ্দিসগণের বিশেষ জামাত এই হাদীসকে সহীহ ও হাসান বলেছেন।


ইমাম আবু দাউদ, ইমাম দারেমী, ইমাম নাসায়ী, ইমাম হাকেম, ইমাম ইবনে মাজাহ, ইমাম নাসায়ী, ইমাম ইবনে শায়বা প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ আওস বিন আওস থেকে বর্ণনা করেছেন, তোমাদের উত্তম দিনগুলির মধ্যে একটি জুমা। এই দিন হযরত আদম আ.কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে তাদের ইন্তেকাল হয়েছে। এই দিনে প্রথম ও দ্বিতীয় বার সিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। সুতরাং তোমরা জুমার দিন বেশি বেশি আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করো। কারণ তোমাদের দুরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।


সাহাবায়ে কেরাম বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ কিভাবে আমাদের দুরূদ আপনার সামনে পেশ করা হবে? আপনি তো টুকরা টুকরা হয়ে যাবেন। রাসূল (ﷺ) বলেন,

إن الله حرم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء

‘আল্লাহ তা‘আলা জমিনের উপর হারাম করে দিয়েছেন যে, নবীগণের শরীর খেতে পারবে না।’


মুহাদ্দিসগণ এই হাদীস সম্পর্কে বলেন, ফাতহুল বারী কিতাবে আছে, হাফেয ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, এই হাদীস ইবনে খোযায়মা প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ সহীহ বলেছেন। ইবনে কাইয়ূম (رحمة الله) জিলাউল আফহাম কিতাবে বলেন, এই হাদীসের শুদ্ধতা ও রাবীগণ ছেকাহ হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।


আল্লামা আইনী (رحمة الله) ওমদাতুল কারী কিতাবে বলেন, صح عنه صلى الله عليه وسلم أن الأرض لا تأكل أجساد الأنبياء  ‘রাসূল (ﷺ) থেকে এই হাদীস সহীহ সনদে পৌঁছেছে।’

ইবনে কাইয়ূম (رحمة الله) কিতাবুর রূহতে বলেন,

أن الأرض لا تأكل أجساد الأنبياء قد صح عن النبي صلى الله عليه وسلم

‘রাসূল (ﷺ) থেকে এই হাদীস সহীহ সনদে পৌঁছেছে যে, মাটি নবীগণের শরীর খাবে না।’


কওলুল বাদী‘তে আল্লামা মুনজিরী থেকে বর্ণিত আছে, এই হাদীস হাসান।


আল্লামা আব্দুল গনী নাবলুসী (رحمة الله) বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। শায়খ মুহাক্কিক (رحمة الله) মাদারেজুন নুবুওয়াতে বলেন, হাদীসটি সহীহ। উসূলে হাদীসের আলোকে এই হাদীসও একে বারে সহীহ। বরং ইমাম হাকেম ও আল্লামা যাহাবী এই হাদীসকে বোখারীর শর্তের পর্যায়ের বলেছেন। মোস্তাদরাকে হাকেমেও এই দুই হাদীস বোখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন।


ইবনে মাজাহ ১১৯ নং পৃষ্ঠায় হযরত আবু দারদা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, فنبي الله حي يرزق ‘আল্লাহর নবী জীবিত। তাদেরকে রিযিক দেওয়া হয়।’ এই হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণের উক্তি হলো, হাফেয মুনজিরী (رحمة الله) বলেন, সনদ সুন্দর। সিরাজে মুনীরে বলেন, এর রাবীরা ছেকাহ। ফাতহুল কাদীরে আল্লামা মানাবী বলেন, দিমইয়ারী বলেন, এর রাবীরা ছেকাহ।


হাফেয ইবনে হাজার (رحمة الله) তাহযীবুত তাহযীব কিতাবে বলেন, আমি বলি এর রাবীরা ছেকাহ। আল্লামা সামহুদী বলেন, এই হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ সুন্দর সনদে বর্ণনা করেছেন।


মেরকাত কিতাবে আল্লামা মোল্লা আলী আল কারী (رحمة الله) বলেন,

باسناد جيد نقله ميرك عن المنذري وله طرق كثيرة

‘মুনজিরী থেকে মীরক সুন্দর সনদে উদ্ধৃত করেছেন। এর অনেক সনদ রয়েছে।’ (২/১১২)


নায়লুল আওতার কিতাবে শাওকানী (رحمة الله) বলেন, সনদ সুন্দর। আবু দাউদ শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আওনুল কা‘বুদ কিতাবে আছে, এর সনদ ভালো। (১/৪০৫)


 মেশকাত, নাসায়ী, মুসনাদে আহমদ, ইবনে আমি শায়বা, আল বেদায় ওয়ান নেহায়া, আল জামেউস সগীর, দারেমী ও খাসায়েসে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, إن لله ملائكة سياحين في الأرض يبلغوني من أمتي السلام ‘আল্লাহর তা‘আলার পক্ষ থেকে কিছু ফেরেশতা নিযুক্ত আছে। যারা জমিনে ঘোরে এবং আমার উম্মাতে সাল্লাম আমার কাছে পৌঁছায়।’


এই হাদীস সম্পর্কে সিরাজুম মুনির কিতাবে আল্লামা আযীযি বলেন, হাদীসটি সহীহ। মাজমাউয যাওয়ায়েদ কিতাবে আল্লামা হাইসামী বলেন, এই হাদীসের রাবীরা সহীহ।


মোস্তাদরাকে হাকেমে আছে, ইমাম হাকেম ও ইমাম যাহাবী দুজনই সহীহ  বলেছেন। ইমাম সাখাবী (رحمة الله) কওলুল বাদী‘ কিতাবে এর সনদ সহীহ বলেছেন। সাহমুদী (رحمة الله) অফাউল অফা কিতাবে সহীহ সনদে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দেসে দেহলবী (رحمة الله) মুতাওয়াতির বলেছেন। (ফাতাওয়া আযীযি : ২/৬৯)


জিলাউল আফহাম কিতাবে হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে।

من صلى عند قبري سمعته ومن صلى علي من بعيد علمته

‘যে ব্যক্তি আমার কবরের কাছে দুরূদ পাঠ করে আমি তা শুনি। যে দূর থেকে দুরূদ পাঠ করে তা আমাকে জানানো হয়।’


এই হাদীস সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) হাদীসের সনদ আবুশ শায়খের ধারা সম্পর্কে বলেন, সুন্দর সনদ।

আল কাওলুল বাদী‘তে আল্লামা সাখাবী (رحمة الله) বলেন, সনদটি ভালো। মোল্লা আলী আল কারী (رحمة الله) মেরকাতে বলেন, সনদ ভালো। (২/১০) আল্লামা শাব্বীর আহমদ ওসমানী (رحمة الله)ও সনদ ভালো বলেছেন। (১/৩৩০)


এই মুহাদ্দিসগণ বিশেষভাবে ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله)র বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, এই বর্ণনা ভালো ও সহীহ। স্মরণ রাখতে হবে, মুহাদ্দিসগণের মতে জায়্যিদ তথা ভালো ও সহীহের মাঝে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। শাব্দিক কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।


তাদরীবুর রাবী কিতাবে ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) বলেন, إن ابن الصلاح يرى التسوية بين الجيد والصحيح ‘ইবনে সালাহ (رحمة الله) জায়্যিদ ও সহীহ এক মনে করেন।’


মোটকথা এই সকল হাদীস ও কোরআনের আয়াতের দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেলো যে, নবীগণের হায়াতের ব্যাপারে কারো কোনো ইখতিলাফ নাই। সায়্যিদুল আম্বিয়ার ব্যাপারে তো হতেই পারে না। উম্মাতের প্রত্যেক স্তরে নবীগণের হায়াতকে মেনে নেওয়া হয়েছে। ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) এই সকল আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করে নবীগণের হায়াত বিশেষভাবে শেষ নবীর হায়াতকে মুতাওয়াতির বলেছেন।

إن من جملة ما تواترت عن النبي صلى الله عليه وسلم حياة الأنبياء في قبورهم . وأيضا حياة النبي صلى الله عليه وسلم في قبره وسائر الأنبياء معلومة عندنا علما قطعيا لما قام عندنا من الأدلة في ذلك وتواترت به الأخبار الدالة على ذلك

‘নবীগণ তাদের কবরে জীবিত থাকা সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) থেকে মুতাওয়াতির বর্ণনা রয়েছে। নবী (ﷺ) ও অন্যান্য নবীগণ কবরে জীবিত থাকার বিষয়টি আমাদের কাছে অকাট্য বিশ্বাস। কারণ এব্যাপারে মুতাওয়াতির বিবরণ রয়েছে।’

(ফাতাওয়া ইমাম সুয়ূতী : ২/১৪)


সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ঐকমত্য আকীদা হলো, রাসূল (ﷺ) ও অন্যান্য নবীগণ কবরে সশরীর বিদ্যমান ও জীবিত।


এখন মুহাদ্দিস, ধর্মতত্ত্ববিদ ও ফোকাহায়ে কেরামের উক্তি পেশ করা হচ্ছে। হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন,

إن حياته صلى الله عليه وسلم في قبري لا يعقبها موت بل يستمر حيا والأنبياء في قبورهم

‘রাসূল (ﷺ) তার কবরে জীবিত। আর মৃত্যু আসবে না। বরং সর্বদা জীকিত থাকবেন। কারণ নবীগণ কবরে জীবিত। (ফাতহুল বারী)


জানা গেলো, এই জীবন স্থায়ী ও চিরদিনের। এর উপর মৃত্যু আসে না। আল্লামা আইনী (رحمة الله) বলেন,فإنهم لا يموتون في قبورهم بل هم أحياء‘নবীগণ কবরে মারা যান না; বরং জীবিত থাকেন।’

ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন,إن الله جل ثناءه رد إلى الأنبياء أرواحهم أحياء عند ربهم 

‘আল্লাহ তা‘আলা নবীগণের রূহকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তারা তাদের রবের কাছে জীবিত।’


মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) শরহে শেফা কিতাবে বলেন,

المعتقد المعتمد أنه صلى الله عليه وسلم حي في قبره كسائر الأنبياء في قبورهم وهم أحياء عند ربهم أن لأرواههم تعلقا بالعالم العلى والسفلى كما كانوا في الحال الدنيوي فهم بحسب القلب عرشيون وباعتبار القالب فرشيون

‘নির্ভরযোগ্য আকীদা হলো, রাসূল (ﷺ) তার কবরে জীবিত। যেমন অন্যান্য নবীগণ তাদের কবরে তাদের কাছে জীবিত। তাদের রূহ ঊর্ধ্ব জগত ও নি¤œ জগত উভয়ের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন দুনিয়াতে ছিলেন। তারা অন্তরের দিক দিয়ে আলশওয়ালা। শরীরের হিসেবে ফরশওয়ালা।’


জানা গেলো, নবীগণের জীবন নির্ভরযোগ্য আকীদা। আল্লামা সাহমুদী (رحمة الله) বলেন, لا شك في حياته صلى الله عليه وسلم بعد وفاته –أكمل من الشهداء ‘ইন্তেকালের পর রাসূল (ﷺ) এর হায়াতের মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। এই জীবন শহীদদের জীবনের চেয়েও পূর্ণ।


অফাউল অফা প্রণেতা অন্য এক জায়গায় বলেন,

وأما أدلة حياة الأنبياء فمقتضاها حياة الأبدان كحالة الدنيا مع الاستغناء عن الغذاء

‘মোটকথা নবীগণের হায়াতে দলিলের চাহিদা হলো, এই হায়াত শরীরের সাথে থাকবে। যেমন দুনিয়াতে ছিলেন। তবে খানা পিনা থেকে অমুখাপেক্ষী।’


দুনিয়াতে শরীর স্বভাবগতভাবে খাবারের মোখাপেক্ষী হয়। নবীগণের শরীর দুনিয়াবী খাবারের মোখাপেক্ষী নয়।


মুহাদ্দিস নূরুল হক দেহলবী (رحمة الله) বলেন, পছন্দনীয় ও নিশ্চিত উক্তি হলো, নবীগণ মৃত্যুর পরে দুনিয়াবী হায়াতে জীবিত। আরো বলেন, নবীগণ মৃত্যুর পরে কবরে অনুভূত হায়াতে জীবিত। তাদের শরীর ও হায়াত দুনিয়াবী হায়াতের মতো হবে না, যদিও তারা খাবারের মোখাপেক্ষী নয়।


জানা গেলো, দুনিয়াবী জীবনে তাদের যেমন আয়াত্ব করা ও অনুভব করার ক্ষমতা ছিলো, বারযাখী জীবনেও তা বহাল রয়েছে। সুতরাং সেটা দুনিয়াবী শারিরিক জীবনের মতো। ইবনে আকীল হাম্বলীর উক্তি হলো, هو حي في قبره يصلي ‘রাসূল (ﷺ) তার কবরে জীবিত, নামায পড়ছেন।’


বদরুদ্দীন হাম্বলী (رحمة الله) বলেন, الأنبياء أحياء في قبورهم قد يصلون ‘নবীগণ তাদের কবরে জীবিত। সর্বদা নামায আদায় করে।’


তবকাতে শাফেয়্যিয়াতে আছে,

لأن عندنا رسول الله صلى الله عليه وسلم حي يحس ويعلم وتعرض عليه أعمال الأمة ويبلغ الصلاة والسلام

‘আমাদের মতে রাসূল (ﷺ) জীবিত অনুভুতিশীল এবং জানেন। তার কাছে উম্মতের আমল পেশ করা হয় এবং সালাত ও সালাম পৌঁছানো হয়।’

আসসিরাজুম মুনীরে বলেন,ردالله علي روحي ‘আল্লাহ তা‘আলা আমার রূহ ফিরিয়ে দিয়েছেন।’ কারণ রাসূল (ﷺ) সর্বদা জীবিত। তার রূহ তার থেকে পৃথক হয় না। ردالله علي روحي উদ্দেশ্য হলো,

رد علي نطفي لأن روحه دائما وروحه لا تفارقه 

আল্লামা খফাযী হানাফী (رحمة الله) বলেন, أنه صلى الله عليه وسلم حي حياة مستمرة ‘রাসূল (ﷺ) সর্বদা জীবিত।’ (নাসীমুর রিয়ায : ৩/৪৯৯)

আশায়েরাদের আকীদা হলো, নবীগণ কবরে জীবিত। ইমাম আবুল কাসেম কোশায়রী রেসালায়ে কোশায়রিয়াতে বলেন, وعندهم محمد صلى الله عليه وسلم حي في قبره  ‘আশায়েরাদের মতে রাসূল (ﷺ) নিজ কবরে জীবিত।’ ইমাম আবুল হাসান আশআরী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমাম এবং ইমাম আবু মানসুর মাতুরিদীও।

ইমাম তাহের বাগদাদী (رحمة الله) বলেন, أن نبينا صلى الله عليه وسلم حي بعد وفاته يسر بطاعات أمته ‘আমাদের নবী (ﷺ) মৃত্যুর পর জীবিত। তার উম্মাতের আমলে খুশি হন।’


নূরুল ঈযাহতে আল্লামা শরনবুলালী বলেন, বিশেষাজ্ঞদের মতে একথা চূড়ান্ত যে, রাসূল (ﷺ) জীবিত। يرزق متمتع بجميع الملاذ والعبادات غير أنه حجب عن البضائر القاصرين عن شريف المقامات

‘তাকে রিযিক দেওয়া হয়। তিনি সকল স্বাদ ও ইবাদাতের থেকে উপকৃত হন। তবে এই উচ্চ মর্যাদা সংকীর্ণ চোখে দেখা যায় না।’

স্মরণ রাখতে হবে, এই রিযিক ও স্বাদ দুনিয়াবী ও অনুভূত নয়। বরং অদৃশ্য জগত ও ভিন্ন জগতের।


বোখারী শরীফের ঠিকায় মাওলানা আহমদ আলী সাহারানপুরী বলেন, إن حياته صلى الله عليه وسلم لا يتعقبها موت بل يستمر حيا ‘তার হায়াতের পরে মৃত্যু আসবে না। সর্বদা জীবিত থাকবে।’ (১/৫১৭)


নবীগণের শরীর কবরে সম্পূর্ণ রক্ষিত আছে। শরীরের সাথে রূহের সম্পর্ক আছে। যার কারণে হায়াত আছে।


আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি (رحمة الله) ফয়যুল বারীতে বলেন, إن كثيرا من الأعمال قد ثبت في القبور كالأذان والإقامة-عند الدارمي وقرأة القرأن عند الترمذي

‘কবরে অনেক আমলের প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন আযান ইকামাতের প্রমাণ দারেমী শরীফে আছে। কোরআন পাঠের প্রমাণ তিরমিযী শরীফে আছে। (১/১৮৩)


সুতরাং জানা গেলো, নবীগণ নিজ শরীরের সাথে কবরের মধ্যে জীবিত অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছেন। নামায, তেলাওয়াতে কোরআন, আযান, ইকামাত সক কিছু প্রমাণিত।


নশরুত্তীব কিতাবে মাওলানা থানভী (رحمة الله) বলেন, রাসূল (ﷺ) কবরে জীবিত থাকা প্রমাণিত। এই রিযিক সেই জগতের উপযুক্ত।


মাওলানা নানুতুবী (رحمة الله) বলেন, নবীগণ জীবিত। তাদের মৃত্যু তাদের জীবনের জন্য আড়ালকারী। হায়াত দূরকারী ও প্রতিহতকারী নয়। তিনি এটাও লিখিছেন যে, আমি নবীগণকে তাদের দুনিয়াবী শরীরের সম্পর্কের দিক থেকে জীবিত মনে করি। তবে كل نفس ذائقة الموت(প্রত্যেক প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করবে।) এবং إنك ميت وإنهم ميتون  (তুমি মৃত্যু বরণ করবে, তারাও মৃত্যু বরণ করেছে) এই দুই আয়াতের দাবি হিসেবে সকল নবীগণের দিকে মৃত্যুর সম্পর্ক বিশ্বাস করাও জরুরী।এই বাহ্য দিক দিয়ে নবীগণ কবরের মধ্যে লুকিয়ে যাওয়া চিল্লাকাশী, নির্জনতা ও একা থাকা মনে করা হবে। তবে মৃত্যুর পর্দার আড়ালে নবীগণের জীবন বাহ্য দৃষ্টিধারীদের চোখের প্রতিকূলে। সাধারণ উম্মতের মতো তাদের মৃত্যুতে ধ্বংস নেই। (লাতায়েফে কাসেমী)


মাওলানা দলিল দিতে গিয়ে বলেন,

(১)    নবীগণের মুবারক শরীর আগের মতো সংরক্ষিত ও নিখুত এবং জমিনের পরিবর্তন থেকে মুক্ত।

(২)    সর্বদার জন্য তাদের স্ত্রীদের সাথে বিবাহ হারাম হওয়া।

(৩)    তাদের মালে মীরাস জারী না হওয়া। এই তিনটি বিষয়ের প্রত্যেকটি নবীগণের জীবনের উপর সাক্ষী। এই কথার স্পষ্ট দলিল, পবিত্র রূহ মোবারক শরীর থেকে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয় না। বরং মৃত্যুর পরেও নবীগণ নিজ শরীরের সাথে তেমনি সম্পর্ক রাখেন, যেমন আগে ছিলো। (আবে হায়াত)

মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী (رحمة الله) বলেন, রাসূল (ﷺ) এর হায়াত শুধু রূহানী নয়। যেটা সাধারণ শহীদদের আছে। বরং শারিরিকও এবং দুনিয়াবী হায়াতের অংশ। বরং অনেক দিক থেকে এর চেয়ে শক্তিশালী। (মাকতুবাত) এর উদ্দেশ্য হলো, তার মোবারক রূহের সম্পর্ক রূপক শরীরের সাথে স্থির হয় না। যেমন অনেক মানুষের ধারণা। বরং রূহের সম্পর্ক দুনিয়াবী শরীরের সাথে সম্পৃক্ত হয়। এই অর্থে এই জীবন শারিরিক ও দুনিয়াবী।


মাওলানা নানুতুবী (رحمة الله) বলেন, নবীগণকে দুনিয়ার শরীরের হিসেবে জীবিত মনে করবে। (লতায়েফ) দেওবন্দ মাদরাসার মুফতী মাওলানা মাহদী হাসান বলেন, রাসূল (ﷺ) নিজ মাযারে সশরীরে বিদ্যমান আছেন। এবং জীবিত আছেন।


ইমাম তহাবী (رحمة الله) নবীগণের হায়াতের উপর ইজমার কথা বলেছেন। والاجماع على هذا.. ‘নবীগণের হায়াতের উপর ইজমা হয়েছে।’ স্মরণ রাখতে হবে, উম্মাতে মুহাম্মাদিয়ার ইজমা শরয়ী দলিলের মধ্যে একটি ওজনি দলিল।

মাওলানা মুহাম্মাদ আবেদ রেসালায়ে মাদীনাতে লেখেন, أما هم فحياتهم لا شك فيها ولا خلاف لأحد من العلماء في ذلك ‘নবীগণের হায়াতের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কারো মতবিরোধ নেই। বুঝা গেলো, কারো মতবিরোধ না থাকাটা নীরবতার ইজমা।


শায়খ মুহাক্কিক দেহলবী (رحمة الله) বলেন, নবীগণের হায়াতের মাসআলা সর্বসম্মত। তাতে কারো ইখতিলাফ নেই। অর্থাৎ নবীগণের হায়াত ইজমায়ী। তাতে কারো ইখতিলাফ নেই। (আশিয়াতুল লোমআত : ১/৬১)


মোযাহেরে হকের মধ্যে স্পষ্ট বলেছেন, নবীগণ কবরে জীবিত। এই মাসআলায় সকলে একমত। কারো মতবিরোধ নেই। সেখানের হায়াত বাস্তব শারিরিক এবং দুনিয়াবীর মতো। খাওয়া পান করার প্রয়োজন নেই। যেভাবে দুনিয়াতে প্রয়োজন হয়। দুনিয়াবী অন্যান্য গুণাগুণ যেমন ইলম, অনুভুতি ও ধারণ ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ততা দৃঢ়।


আল্লামা দাউদ বিন সোলায়মান বলেন, إن حياة الأنبياء ثابتة بالاجماع ‘নবীগণের জীবন ইজমার দ্বারা প্রমাণিত। আবু দাউদ শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আনোয়ারুল মাহমুদে আছে, إنهم اتفقوا على حياتهم صلى الله عليه وسلم لا خلاف فيه لأحد ‘মুহাদ্দিসীনে কেরাম একথার উপর একমত হয়েছে যে, রাসূল (ﷺ) জীবিত। এতে কারো কোনো ইখতিলাফ নেই। (পৃ. ৬১০)


মাওলানা ইদরীস খান দেহলবী (رحمة الله) বলেন, আত্মিক ও রূপক হায়াত তো সাধারণ মুমিন বরং কাফেরদেরও অর্জিত আছে। সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ঐক্যবদ্ধ আকীদা, নবীগণ ইন্তেকালের পরে নিজ কবরে জীবিত। নামায ও ইবাদাতে লিপ্ত আছে। যদিও আমরা উপলব্দি করি না। তবে নিঃসন্দেহে এই হায়াত অনুভূত ও শারিরিক।


জেনে রাখতে হবে, সর্ব প্রথম হাজ্জাজ বিন ইউসুফ হায়াতে আম্বিয়ার আকীদা অস্বীকার করেছে। যে সব কারণে ফোকাহায়ে কেরাম হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে কুফরের ফতোয়া দিয়েছিলেন, তার মধ্যে এটাও একটা ছিলো। হাজ্জাজ যখন মদীনাতে আসলো এবং রওযা পাকের যেয়ারতকারীদেরকে দেখলো, তারা রওযার আশ পাশে একত্রিত হচ্ছে। তখন হাজ্জাজ বললো, তোমরা খড়ি ও গলে যাওয়া গাড্ডির তাওয়াফ করছো। এ কারণে ওলামায়ে কেরাম কুফরের ফতোয়া দিলেন। (রহমাতে কায়েনাত : ৫)


এভাবে র্কারামিয়া, কিছু মো‘তাযালা ও রাফেযীদের আকীদা হলো, নবীগণ জীবিত নন।


খায়রুল ফাতাওয়াতে আছে, নবীগণের হায়াতকে অস্বীকারকারীর পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরিমী। (১/১২০)


❏ প্রশ্ন : কোনো বিবেকবান ব্যক্তি যদি রাসূল (ﷺ) এর শানে অপমানজনক একথা বলে যে, কোনো ভালো মজলিসে আগমনের ব্যাপারে বললো, রাসূল কোথায় বসেছে? কোথায় শুয়েছে? কোথায় দাড়িয়েছে? আমরা তো দেখছি না। কোনো মানুষ কি দেখছে? রাসূল (ﷺ) হাজির নাজির নয়। এমন আকীদা রাখা শিরক ছাড়া আর কী? ইত্যাদি ।

এমন কথা বললে কি রাসূল (ﷺ)কে অপমান করা আবশ্যক হয়?


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে এমন আকীদা রাখা এবং বয়ান করা বে আদবী মনে হয়। এটা একটা রুহানিয়াত ও ঈমানিয়াতের মাসআলা। প্রশ্নে উল্লিখিত বিবরণে নবীর অপমানের গন্ধ পাওয়া যায়। যা স্পষ্ট কুফরী ছাড়া আর কী? চাই সে আকীদা নববী ইলম সম্পর্কীয় হোক, বা আল্লাহ প্রদত্ত মুস্তফাবী অধিকারের সাথে সম্পৃক্ত হোক। সর্বাবস্থায় কুফরী।

من استخف بجنابه صلى الله عليه وسلم فهو كافر ملعون مردود في الدنيا والأخرة

‘যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হালকা মনে করবে, সে কাফের অভশপ্ত দুনিয়া আখেরাতে প্রত্যাখ্যাত।’ (তাফসীরে সাবী)

বরং কেউ যদি রাসূল (ﷺ) এর শাআর (চুল) কে ছোট করার জন্য শোআইর ( ছোট চুল) বলে তাহলে কাফের হয়ে যাবে।

ولو قال لشعر النبي صلى الله عليه وسلم الشعير يكفر ولو عاب النبي صلى الله عليه وسلم بشئ من العيوب يكفر ولو قال لا أدري ان النبي صلى الله عليه وسلم كان انسيا او جنيا يكفر أو عاب نبيا بشئ او لم يرض بسنته من سنن المرسلين عليهم السلام فقد كفر

‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শাআরকে যদি শোআইর বলে, কাফের হয়ে যাবে। যদি রাসূল (ﷺ) এর উপর কোনো দোষ চাপায় তাহলে কাফের হয়ে যাবে। কেউ যদি বলে, আমি জানি না যে, রাসূল মানুষ ছিলেন নাকি জিন ছিলেন, তাহলে কাফের যাবে। অথবা কোনো নবীর উপর দোষ দিলো। বা কোনো নবীর কোনো সুন্নাতকে পছন্দ করলো না তাহলে কাফের হয়ে যাবে।’ (ফতোয়া তাতারখানিয়া : ২/৩২৬)


❏ প্রশ্ন : নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবারের মতো নারায়ে রেসালাত ইয়া রাসূলাল্লাহ বলা কেমন? অনেকে এটাকে বিদআত ও শিরক বলে। এটার বৈধতার উপর কোনো প্রমাণ আছে কি?


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما প্রচলিত নারায়ে তাকবীর যেভাবে সুন্নাত, নারায়ে রেসালাতও সুন্নাত। যেমন ফুহুহুশ শাম কিতাবে আছে, হযরত কা‘আব বিন হামযা রাযি. যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুদ্ধের ময়দানে ডাকছিলো, ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া রাসূলাল্লাহ বলে।


ফুহুহুশ শাম কিতাবে একথাও উল্লেখ আছে, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত আছে। ফারুকে আযমের যুগে সাহাবায়ে কেরাম যুদ্ধের ময়দানে ইয়া রাসূলাল্লাহ বলে না‘রা দিতো। সহীহ মুসলিম দ্বিতীয় খন্ড হিজরত অধ্যায়ে হযরত বারা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে। হযরত রাসূল (ﷺ) যখন হিজরত করে মদীনায় প্রবেশ করলেন, فصعد الرجال والنساء فوق البيوت وتفرق الغلمان والخدام في الطرق ينادون يا محمد يا رسول الله ‘পুরুষ মহিলারা ঘরের উপর উঠলো। বাচ্চা ও খাদেমরা রাস্তার মধ্যে ছড়িয়ে ডাকছে, ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তাদের এই ডাক খুশির কারণে ছিলো।


এই হাদীস হাদীস থেকে স্পষ্ট না‘রায়ে রেসালাত প্রমাণ হলো। সকল সাহাবায়ে কেরাম না‘রায়ে রেসালাত লাগাতো। কোনো জিনিস প্রমাণিত হলে তার প্রাসঙ্গিক বিষয়সহ প্রমাণিত হয়। إذا ثبت الشئ ثبت بلوازمه


শরয়ী মূলনীতি : কোনো হুকুম ইল্লাত ছাড়া হয় না। উসূলে ফেকাহতে এটাও আছে যে, একটি হুকুমের অনেকগুলি কারণ থাকে।


কোরআন হাদীসের স্পষ্ট বিবরণ দ্বারা প্রমাণিত নয় এমন বিধানের মধ্যে যদি কোনো ইল্লত পাওয়া যায়, তাহলে এই হুকুম জারি হবে। كما صرح به الأصوليون ‘যেমন উসূলবিদরা স্পষ্ট বলেছেন।’ এর দ্বারা জানা গেলো, আমাদের আহলে সুন্নাত আলেমদের আলোচনার ফাকে যখন শানে রেসালত, শানে গওসিয়াত ও শানে বেলায়াতের ক্ষেত্রে সুন্দর আলোচনা করে তখন শ্রতারা উচ্চ আওয়াজে না‘রায়ে তাকবীর, না‘রায়ে রেসালাত, না‘রায়ে গওসিয়া, না‘রায়ে হায়দারী বলে। খুশি প্রকাশ করার জন্য নিজ মুরশিদ হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) এর না‘রা লাগায়। খারেজীদের মুখ বন্ধ করার জন্য হায়দারী না‘রা লাগায়। (অর্থাৎ হযরত আলী রাযি.র না‘রা লাগায়।) অহ্হাবী নজদীদেরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য না‘রায়ে গওসিয়া বলে। হযরত গওসে আযম প্রতি ভালোবাসা ও আস্থা প্রকাশ করে। আল্লামা শামী (رحمة الله) হাউজে উযু করা মোস্তাহাব বলেছেন। শিআদেরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। এই কারণ হিজরতের হাদীসে ব্যাখ্যাকারগণ বর্ণনা করেছেন। যেখানে ডাকা নিষেধ এসেছে, সেখানে ব্যাপকভাবে নিষেধ না। বরং সেটা নিষেধ যে, কাউকে মা‘বুদ ও খোদা মনে ডাকে। আর যদি ব্যাপকভাবে ডাকা নিষেধ হয়, তাহলে হযরত ইবরাহীম আ. মৃত পাখিকে ডেকেছেন। নাউযুুবিল্লাহ তিনি কি শিরক করেছেন? যদি দূর থেকে ডাকা উদ্দেশ্য হয় তাহলে হযরত ফারুকে আযম রাযি. দূর থেকে ইয়া সারিয়াল জাবাল বলেছেন। এই ডাককে সাহায্য চাওয়ার ডাক বলা হয়, তাহলে হাদীসের মধ্যে يا عباد الله أعينوني এই হাদীস শিরকের শিক্ষা দিচ্ছে বলতে হবে। আর যদি হাজের নাজির জেনে ডাকা নিষেধ উদ্দেশ্য নেওয়া হয়, তাহলেالنبي اولى بالمؤمنين من أنفسهم এর বিপরীত আবশ্যক হবে। যার অর্থ হলো, নবী মুমিনদের জানের চেয়েও নিকটতম। আর যেখানে تدع من دون اللهএবং تدع مع الله আছে সেখানে দোআ অর্থ ইবাদাত।


জালালাঈন শরীফ, বায়যাবী শরীফ, রূহুল বয়ান, রূহুল মা‘আনী ইত্যাদি মুফাসসিরগণ এই অর্থ উদ্দেশ্য নিয়েছে।  যেমন আমার উস্তাদ আল্লামা ফয়েয আহমদ আওসী রেযবী (رحمة الله) বলেছেন)


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি মানুষের ইয়া রাসূলাল্লাহর না‘রার আওয়াজ শুনতে পান? হাঁ, শুনেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উম্মাতের ডাক দূর থেকে শুনেন। হযরত মাওলানা আব্দুল হাই লাখনৌভী (رحمة الله) তার ফাতাওয়ায় (১/৪৩) একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। লাউহে মাহফূহে কলম চলছিলো। অথচ আমি মাতৃ উদরে ছিলাম। যখন মাতৃ উদরে ফেরেশতাদের তাসবীহের আওয়াজ শুনছিলেন, তাহলে আমাদের ডাকও শোনেন। এভাবে তার উম্মাতের অনেক অলি তার গোলামের গোলাম আল্লাহর মাখলুকের আওয়াজ দূর থেকে শুনতে পায়। হযরত সোলায়মান আ. যখন দূর থেকে পিপড়ার আওয়াজ শুনতে পারতেন, প্রিয় নবী (ﷺ) দূর থেকে উম্মতের ডাকও শুনেন।


নববী যুগ থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত কালের পরিবর্তনের সাথে প্রচলিত নিয়মে না‘রায়ে রেসালাত ইয়া রাসূলাল্লাহ পবিত্র বাক্য চালু আছে। যখন নববী যুগে মদীনা বাসী খুশিতে ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া মুহাম্মাদ ডাকছিলো, তাহলে জানা গেলো ইয়া রাসূলাল্লাহ ডাক নববী যুগেও চালু ছিলো। لا ترفع أصواتكم فوق صوت النبي এই আয়াত থেকে কেউ এটা যেন মনে না করে যে, না‘রা উচু আওয়াজে হয়। গলা ফাটিয়ে আওয়াজ করে। এতে আমল নষ্ট হয় এবং বেআদবী হয়।


হাঁ, আয়াতের মধ্যে নিষেধ শারিরিক নিকটবর্তীর জন্য। আত্মিক নিকটবর্তীর জন্য নয়। আয়াতের মধ্যে নবীর আওয়াজের উপর বলা হয়েছে। যার অর্থ হলো, যখন রাসূল (ﷺ) কথা বলে তখন তোমরা নিজেদের আওয়াজকে তাদের আওয়াজ থেকে উচু করো না। নতুবা সাহাবায়ে কেরাম রাসূলের উপস্থিতিতে উচু আওয়াজে না‘রা দিতেন না। মিম্বরের উপর দাড়িয়ে হযরত বেলাল আযান দিতেন না। হযরত হাস্সান রাযি. মেম্বরের উপর দাড়িয়ে না‘ত পড়তেন না। এই সকল ক্ষেত্রে আওয়াজ বড় করা নিষেধ নয়। মদীনাবাসী হিজরতের সময় রাসূল (ﷺ) এর আগমণের উপর না‘রা ধ্বনি লাগিয়েছিলেন।


অমুক মৌলবী, অমুক নেতা, অমুক মাদরাসা, অমুক মন্ত্রি জিন্দাবাদ, চিৎকার দিয়ে না‘রায়ে তাকবীল বলা বিদআত নয়?


❏ প্রশ্ন : রাসূল (ﷺ) নবীগণের নবী কিনা? بعثت إلى الناس كافة (আমি সকল মানুষের কাছে প্রেরিত হয়েছি) এর দ্বারা কী উদ্দেশ্য? রাসূলের যুগ থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত মানুষ উদ্দেশ্য, নাকি আগের নবী রাসূলের যুগের লোকও উদ্দেশ্য? এমন হলে শাখা মাসআলায় ইখতিলাফ কেন?


✍ জবাব : وبه نستعين হাফেয আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (رحمة الله) বলেন, নবুওয়াতে মোস্তফাবিয়া ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক বড়। মৌলিক বিষয়ের ক্ষেত্রে অন্য নবীগণের শরীয়াতের থেকে ভিন্নতা নেই। বরং তাদের সাথে মিল আছে। কিছু শাখাগত মাসআলার মধ্যে যে ইখতেলাফ রয়েছে, তা হয়তো বিশেষত্বের, নতুবা রহিতের কারণে। অথবা একথা মনে করতে হবে যে, সেই উম্মতের জন্য আমাদের নবীর সেই শরীয়াত ছিলো। যা তাদের কাছে তাদের নবীগণ নিয়ে এসেছে। আর আমাদের জন্য এই শরীয়াত। যা রাসূল (ﷺ) নিজে নিয়ে এসেছেন। শাখাগত ইখতিলাফের একটি বাস্তবতা হলো, সময় ও ব্যক্তির পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তন হয়। এই ব্যাখ্যার দ্বারা দুটি হাদীসের ব্যাখ্যাও স্পষ্ট হয়ে গেলো। যা আগে আমাদের থেকে গোপন ছিলো। প্রথমে ঐ হাদীস, بعثت إلى الناس كافة প্রথমে আমাদের ধারণা ছিলো, রাসূল (ﷺ) এর যুগ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষ। কিন্তু এখন জানা গেলো, এর আগে ও পরের সকল মানুষ।


অন্য হাদীস كنت نبيا وأدم بين الروح والجسد ‘আমি তখনো নবী ছিলাম, যখন হযরত আদম আ. রূহ শরীরের মাছে ছিলেন।’ আগে আমাদের ধারণা ছিলো, এর দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর ইলমে তার নবী হওয়ার উদ্দেশ্য। কিন্তু এখন জানতে পারলাম যে, এর অর্থ অনেক ব্যাপক। সুতরাং রাসূল (ﷺ) এর অস্থিত্বের প্রকাশ এবং চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত পৌঁছার পরে এবং তার আগের অবস্থা ও পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য হলো, তাদের কাছে প্রেরিত করা এবং তার নববী বাণী শ্রবণের যোগ্যতার দিক থেকে। তিনি নবী হওয়া ও তারা উম্মাত হওয়ার দিক থেকে কোনো পার্থক্য নেই। তারা এর আগে নববী বাণী শ্রবণের যোগ্য হতো তাহলে তাকে আগেই প্রেরণ করা হতো। বিধান শর্তযুক্ত হওয়া কখনো পরিবেশের কারণে হয়। কখনো ব্যক্তির কারণে হয়। এখনে শর্ত পরিবেশের কারণে। আর সে পরিবেশ হলো, তিনি লোকদের দিকে প্রেরিত হওয়া এবং তার কথা শ্রবণকে গ্রহণ করা। এই পবিত্র শরীরের হাত তারা গ্রহণ করা। যখন তিনি তাদের সাথে মিষ্টি মুখে কথা বলবে।


এর দৃষ্টান্ত হলো এমন, কোনো পিতা কাউকে এই কথা উকিল বানালো যে, তার জন্য যখন উপযুক্ত পাত্র পাওয়া যাবে তার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিবে। তার উকিল বানানো ঠিক আছে। লোকটা উকিল হওয়ার যোগ্য হয়ে যাবে। তার উকিল হওয়া প্রমাণিতহয়ে যাবে। এবার তার কার্যক্ষমতা উপযুক্ত পাত্র পাওয়ার উপর স্থগিত থাকবে। আর একথা স্পষ্ট যে, উপযুক্ত পাত্র কিছু দিন পরেই পাওয়া যাবে। এই বিলম্ব উকিল শুদ্ধ হওয়া ও উকিল হওয়ার যোগ্যতার মাঝে বৈপরিত্ব নেই। যেমনটি বলেছেন, ইমাম তাকী উদ্দীন সুবকী। শায়খ জালাল উদ্দীন সুয়ূতী এমনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। (খাসায়েসে কোবরা প্রথম খন্ড)


❏ প্রশ্ন : কোনো কোনো আলেম বলেন, গুনাহে কবীরা কুফর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। একথা কি ঠিক? সুপারিশের দ্বারা কি ফায়েদা হবে না?


✍ জবাব : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, شفاعتي لأهل الكبائر من أمتي আমার সুপারিশ আমাদের উম্মাতের কবীরা গুনাহকারীদের জন্য। অর্থাৎ এই গুনাহকারীদের জন্য হবে। সুতরাং কবীরা গুনাহকারীদের জন্য রাসূলের সুপারিশ প্রমাণিত। অর্থাৎ যার কোনো কথা আল্লাহ তা‘আলার দরবারে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাহলো لا إله الا الله محمد رسول الله কারণ لا إله الا الله محمد رسول الله না হলে কুফর হয়ে যাবে। কুফর বা তার উপর ভিত্তি কোনো কথা পছন্দ হবে না। সে কথাই আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য যা  ঈমানের ভিত্তির উপর হবে। শব্দ এসেছে قولا  যা একটি কথার উপর বুঝায়। একটি কথা পছন্দ হবে। আর لا إله الا اللهও একটি কথা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يومئذ لا تنفع الشفاعة الا من أذن له الرحمن ورضي له قولا ‘সে দিন কোনো সুপারিশ উপকারে আসবে না। তবে যার জন্য রহমান অনুমতি দিবেন এবং তার একটি কথা পছন্দ করেছেন।’


সুতরাং যে ব্যক্তি সত্য মনে لا إله الا الله বলবে তার ক্ষেত্রে সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা তার একটি কথা পছন্দ করেছেন, অতএব সে সুপারিশের উপযুক্ত। সেই দিক থেকে এখানে দলিল পরিষ্কার হয়ে গেলো যে, যে ব্যক্তি শুধু لا إله الا الله বলেছে এবং তার থেকে গুনাহ পাওয়া গিয়েছে। যেটাকে গুনাহ মনে করতো। এমন ব্যক্তি ফাসেক ও গুনাহে লিপ্ত। এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে সুপারিশ উপকারী হবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তার একটি কথা পছন্দ করেছেন। এমন ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেন, شفاعتي لأهل الكبائر من أمتي এখন এতে কোনো সন্দেহ থাকলো না যে, কবীরা গুনাহকারী শাফাআতের যোগ্য। গুনাহগার লোকদের জন্য এটা অনেক বড় আশার আলো।


তবে ভয় এখানে আছে যে, গুনাহের প্রভাবে বিশেষভাবে কবীরা গুনাহের প্রভাবে অন্ধকার ও নাপাকীর কারণে আশার নিশ্চয়তা চলে যায়। لا إله الا الله এর বিশ্বাস থাকে না। বরং সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে যায়। এতে মোনাফেকী ও কুফর হয়ে যায়। 


সুতরাং গুনাহের উপর লজ্জিত হওয়া ও অনুতপ্ত হওয়া এবং গুনাহকে গুনাহ মনে করা জরুরী। যদিও গুনাহ হয়ে যায়। ওলামায়ে কেরাম এখান থেকে বলেছেন, যে ব্যক্তি গুনাহে কবীরার উপর বাড়াবাড়ি করে এটা কুফর। 

(তাফসীরে মাওয়াহেবুর রহমান : সূরা তহা, পৃ. ৩৫৪)


❏ প্রশ্ন : মাদীনা তয়্যিবায় যাওয়ার সময় মাসজিদে নববীর যেয়ারতের নিয়ত করবে, নাকি পবিত্র রওযা যেয়ারতের ইচ্ছাকে আগে রাখবে?


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما রওযায়ে আতহারের যেয়ারতের ইচ্ছা আগে রাখা উত্তম। এটাকে আগে রাখবে। তাহহতাবী কিতাবে ৯১২ পৃষ্ঠায় আছে, والأولى في الزيارة تجريد النية لزيارة قبره صلى الله عليه وسلم ‘যেয়ারতের ক্ষেত্রে একমাত্র তার কবর যেয়ারতের নিয়ত রাখাই উত্তম।’ (শামী : ২/২৫৭, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ৩/১৭৭)


❏ প্রশ্ন : হুযুর (ﷺ) এর পবিত্র রাওযার কাছে কিভাবে দো‘আ করা উচিত? কোন দিকে মুখ করে সালাম দেওয়া উচিত?


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما যদিও সাধারণ দোআর আদব হলো, কেবলামুখী হয়ে দোআ করা। কিন্তু রওযায়ে আতহারের মধ্যে কেবলামুখী হতে গেলে রাসূল (ﷺ) এর দিকে পিছ দেওয়া হয়। যা আদবের খেলাফ। বরং পরিপূর্ণ বে আদবী। এ কারণে তার দিকে মুখ করে দোয়া করবে। (ফাযায়েলে হজ্জ, আল্লামা মুহাদ্দিস যাকারিয়া : ২২৩)


ইমাম আযম (رحمة الله) তার কবিতার মধ্যে বলেছেন,

أنت الذي لولاك ما خلق * كلا ولا خلق الورى لولاك

‘ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনি তিনি, যিনি না হলে কোনো মানুষ সৃষ্টি হতো না। বরং আপনি না হলে সারা পৃথিবী সৃষ্টি হতো না।


ইবনে আসাকের হযরত সালমান ফারসী রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা‘আলা তার হাবীব মোস্তফা (ﷺ) এর উপর অহি পাঠিয়েছেন।

ولقد خلقت الدنيا وأهلها لأعرفهم كرامتك ومنزلتك عندي ولولاك ما خلقت الدنيا

‘আমি দুনিয়া ও দুনিয়াবাসীকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, আমার কাছে যে আপনার ইজ্জত মর্যাদা আছে তা তাদের সামনে প্রকাশ করবো। আপনি যদি না হতেন, আমি দুনিয়া সৃষ্টি করতাম না।’


হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া বলেন,

أتاني جبرائيل عليه السلام فقال إن الله يقول لولاك ما خلقت الجنة ولولاك ما خلقت النار

‘হযরত জিবরাঈল আমার কাছে এসে বললো, আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, আপনি না হলে আমি জান্নাত সৃষ্টি করতাম না। আপনি না হলে জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না।’

سبحان الله والحمد لله الهم صل وسلم وتارك على سيدنا محمد وأله وأصحابه أجمعين


❏ প্রশ্ন :  لو لاك لما خلقت الأفلاك  এই হাদীসের সনদে সমস্যা আছে। এর সনদ সহীহ না। এর জবাব কী? এ ক্ষেত্রে ওলামাদের মত কী?


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما   হযরত মোল্লা আলী আল কারী হানাফী (رحمة الله) মাওযুআতে কাবীর কিতাবে বলেন, موضوع لكن معناه صحيح এই হাদীস যদিও সনদের দিক দিয়ে জাল, তবে অর্থ সহীহ। এই বর্ণনা বছর বছর ধরে উম্মাতের ওলামায়ে কেরাম রাসূলের মর্যাদা ও মাহাত্ত্বর উপর দলিল দিয়ে থাকেন। যা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সুতরাং সহীহ হওয়ার জন্য এই দলিলই যথেষ্ট। কিছু গায়রে মুকাল্লিদরা এই হাদীস মাওজু হওয়ার কথা বলেছে। এই ফিতনাপূর্ণ যুগে বেকার লোকদের একটি ব্যস্ততা হয়ে গেছে। পূর্বের ওলামায়ে কেরাম সকলে কি জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন?

মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (رحمة الله) এবং দেওবন্দ মাদরাসার মুহতামিম কারী তৈয়ব সাহেবও মর্যাদার অন্যান্য হাদীসের সাথে দৃঢ়তার জন্য এই হাদীসটির অর্থ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মাওলানা আলহাজ হাফেয ইলিয়াস (رحمة الله) ফাযায়েলে হজের মধ্যে জোর দিয়েছেন।

وفي الشرف معناه ثابت ويؤيد الأول ما ورد في غير رواية من أنه مكتوب على العرش وأوراق الجنة لا إله الله محمد رسول الله كما بسط طرقه السيوطي في مناقب اللالي في غير موضع وبسط له شواهد أيضا في تفسيره في سورة الم نشرح


ইমাম শাহ আহমদ রেযা খা বেরলবী (رحمة الله)  এর গ্রহণযোগ্যতার উপর অনেক দলিল পেশ করেছেন।


টিকা : হাদীস শরীফে এসেছে,

 أول ما خلق الله نوري ، أول ما خلق الله القلم ، أول ما خلق الله العقل، أول ما خلق الله الماءو أول ما خلق الله العرش

এখানে সকগুলি প্রথম হওয়ার অধিকার রাখে। তবে বাস্তব প্রথম একটিই হতে পারে। বেশি নয়। তবে তুলনামূলক ও ধর্তব্যের দিক দিয়ে একাধিক হতে পারে। যার এই হাদীসগুলি থেকে স্পষ্ট হয়।


❏ প্রশ্ন : রাসূল (ﷺ) আমাদের দুরূদ সরাসরি শুনেন, নাকি ফেরেশতাদের মাধ্যমে পৌঁছানো হয়?


✍ জবাব :  আল্লাহ তা‘আলা কোরআনের মধ্যে কোনো ধরণের সময় ও স্থানের সাথে বিশেষায়িত না করে কাছে দূরের কথা না বলে দুরূদ ও সালামের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা নিজ বান্দাদেরকে সম্বোধন করে বলেন, إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا এই আয়াতের মধ্যে জুমলা ইসমিয়া إِنَّ দ্বারা জোর দিয়ে বলেছেন। দ্বিতীয়তো এই বাক্যে খবর যেটা তা ফেয়েলে মুজারে। যা দুই কালের উপর বুঝায়। স্থায়ী নতুন অর্থও দেয়। তৃতীয়ত আল্লাহ তাআলা দুরূদের গুরুত্ব মর্যাদা ও ফযিলাত সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রমাণ করার জন্য সরাসরি নিজের এবং ফেরেশতাদের সালাতের কথা ঘোষণা দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবীর উপর সালাত পাঠায়। হে ঈমানদানগণ তোমরাও তার উপর দুরূদ পাঠ করো ও সালাম পাঠাও।

এবার বুঝা গেলো সর্ব প্রকার জোর দিয়ে বলেছেন, এবার এর মধ্যে কোনো প্রকার আপত্তি থাকতে পারে না। আল্লাহর ইরশাদকে চিরস্থায়ী কাদীম কালামের মধ্যে সংরক্ষণ করেছেন। যাতে কোনো মানুষ কোনো প্রকার পরিবর্তন ঘটাতে না পারে। নিজস্ব কোনো ফায়দার কথা এতে সংযোজন করতে না পারে। এই এরশাদের ক্ষেত্রে কাফের, মুশরিক ও মুনাফিক এর আওতাধীন নয়। ওরা নাপাক ও খারাপ তারা কিভাবে আল্লাহ ও ফেরেশতাদের দলে শরিক হতে পারে? তাই ওরা সকলে এই নির্দেশ থেকে বাহিরে।


এই আয়াতে খবর ও ইনশা দুটিই বিদ্যমান আছে।  আমি বরকত ও ফয়েয পাওয়ার আশায় একটি বর্ণনার উপর ক্ষান্ত করছি। 

عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من صل علي عند قبري سمعته و من صلى علي نائيا اكفى دنياه و آخرته و كنت له شهيدا أو شفيعا يوم القيامة


‘রাসূল (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি আমার কবরের কাছে দাড়িয়ে দুরূদ পাঠ করে তা আমি শুনি। আর যে দূরে থেকে দুরূদ শরীফ পাঠ করে তার দুনিয়া ও আখেরাতের প্রয়োজন পূরণ করা হয়। আমি কেয়ামতের দিন তার সাক্ষি ও সুপারিশকারী হবো। (বায়হাকী, খতীব, ইবনে আসাকের, ইমাম তাকী উদ্দীন সুবকী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)


আরো বহু হাদীসে আছে, রাসূল (ﷺ) বলেন, দূর থেকে যে দুরূদ পাঠ করে এর জন্য আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। সে ফেরেশতা দুরূদ আমার কাছে পৌছে দেয়। আমি তারও সাক্ষি হই।


উল্লিখিত হাদীসে কবরের কাছে দুরূদ শরীফ পাঠ কতো ফযিলাত যে, রাসূল যেখানে নিজে শোনেন। এই পবিত্র শহরের বাসিন্দারা বড়ই সৌভাগ্যবান। তারা কোনো মাধ্যম বিনে রাসূলকে দুরূদ শরীফ শোনাতে পারে।


হযরত সোলায়মান বিন নুজাইম রাযি. বর্ণনা করেন, আমি স্বপ্নে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি। আমি দো জাহানের সরদারকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ যারা আপনার কাছে এসে দুরূদ শরীফ পাঠ করে আপনি কি জানতে পারেন? তিনি বলেন, হাঁ আমি জানি। আমি তার সালামের জবাব দেই। (সাঈদ বিন মানসূর বর্ণনা করেছেন, যেমনটি আল ইতহাফে আছে।)

عن نافع عن ابن عمر رضي الله عنهما قال من السنة أن تأتي قبر النبي صلى الله عليه وسلم من قبل القبلة ويجعل ظهرك إلى القبلة وتستقبل القبر بوجهك ثم تقول السلام عليك أيها النبي صلى الله عليه وسلم ورحمة الله وبركاته


মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمة الله)তে আছে, হযরত ইবনে ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এর কবর যেয়ারতের সুন্নাত পদ্ধতি হলো, তার কবরে কেবলার দিক থেকে আসবে। কেবলার দিকে পিঠ দিয়ে এবং কবরের দিকে মুখ করে  السلام عليك أيها النبي صلى الله عليه وسلم ورحمة الله وبركاته বলে সালাম দিবে।


হযরত ইমাম (رحمة الله) মোআত্তাতে হযরত আব্দুল্লাহ বিন দীনার রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ইবনে ওমর রাযি. যখন সফর করার ইচ্ছা করতেন বা সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন রাসূল (ﷺ) এর কবরের কাছে আসতেন। দুরূদ শরীফ পাঠ করে এবং দোআ করে তারপর ফিরে যেতেন।


❏ প্রশ্ন : আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকেরা দোআ করার সময় রাসূল (ﷺ) এর অসিলা দিয়ে দোআ করি। এটা জায়েয আছে কিনা? অথচ ইমাম ইবনে তাইমিয়া (رحمة الله) তার আলঅসিলা কিতাবে লিখেছেন, আল্লাহ তা‘আলার সিফাতী নামের অসিলা ছাড়া অন্য অসিলা না জায়েয। দলিল হিসেবে হযরত ওমর রাযি.র হাদীস যিনি রাসূল (ﷺ) এর চাচা আব্বাসের অসিলা দিয়ে বৃষ্টির দোআ করা করেছেন। রাসূলের ইন্তেকালের পরে এই হাদীস পেশ করে। এই দলিলের আলোকে রাসূল (ﷺ) এর অসিলা দিয়ে দোআ করা না জায়েয হবে কি না?


✍ জবাব : হে আল্লাহ তোমার হাবীব মুহাম্মাদ (ﷺ) এর অসিলায় অমুক কাজ করে দিন। আমাদেরকে গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে নিন। আমাদেরকে ভালো কাজের তাওফীক দান করুন। এমন দোআ করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতে জায়েয আছে।

ইবনে তাইমিয়া (رحمة الله)র দৃষ্টিতে রাসূলের চাচার অসিলা দিয়ে দোআ করা জায়েয আছে, তাহলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে সরাসরি রাসূল (ﷺ) এর অসিলা দিয়ে দোআ করা অবশ্যই জায়েয হবে।


এই মাসআলার উপর ইবনে তাইমিয়া (رحمة الله)কে খন্ডন করার জন্য তার সমকালীন আলেম ইমাম তাকী উদ্দীন সুবকী সতন্ত্র কিতাব লিখে যথেষ্ট জবাব দিয়েছেন। তবকাতে সুবকিতে একটি সতন্ত্র কিতাব এর খন্ডনের জন্য আছে। আল্লাম ইমাম ইয়াফিয়ী (رحمة الله) মিরআতুল জিনান কিতাবে বহু আলেম থেকে কঠিন প্রতিবাদ উদ্ধৃত করেছেন। আল্লামা ইবনে হাজার মাক্কী (رحمة الله) ফাতাওয়ায়ে হাদীসিয়াতে কঠিনভাবে খন্ডন করেছেন। তাযকেরাতুল হুফ্ফাযেও খন্ডন রয়েছে। হযরত ওমর রাযি. হযরত আব্বাস রাযি.র অসিলা দিয়ে দোআ করা এটা একথার দলিল নয় যে, রাসূল (ﷺ) এর অসিলা দিয়ে দোআ করা যাবে না।


রাসূল (ﷺ) এর কবর যিয়ারতের জন্য যাওয়া ইবনে তাইমিয়া (رحمة الله) হারাম বলেন। এর উপর ইমাম তাকী উদ্দীন সুবকী (رحمة الله) শিফউল আসকাম নামক কিতাব লিখেছেন। যার মধ্যে তিনি এটাকে নৈকট্য লাভের বড় লাভের উপায়, মোস্তাহাব ও সাওয়াবের কারণ বলেছেন। আরো অনেক কিতাব ও রেসালা রয়েছে। হযরত আল্লামা ইউসুফ নাবহানীও শাওয়াহেদুল হক এবং আরো অন্য কিতাব লিখেছেন।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া কুরুনে ছালাছার ইমাম নয়। বরং ফিতনা ও হিংসায় পূর্ণ যুগের ইমাম। যার কথা তার অনুসারী ও ছাত্র ছাড়া অন্যদের জন্য অটল দলিল নয়। তিনি পাচ ছয় হিজরী পরের ইমাম। রাসূল (ﷺ) এর কবর যিয়ারত করা এবং তার অসিলার উপর পূর্বের ওলাম, মুহাদ্দিস, ইমাম ও মুজতাহিদ প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় যুগের সাহাবা তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের থেকে আমল চলে আসছে। শেষ যুগে এসে ইসলামে মর্যাদা ও দীন ইসলামের নাম দিয়ে মুত্তাকীদেরকে গোমরাহ বলা এবং তাদের আমলকে বেদআত  ও গোমরাহী বলা কিভাবে মেনে নেওয়া যেতে পারে। এখন কি কোনো নবী আসবে যে, যার অনুসরণ করা হবে? এই সব কিছু কিয়ামতের আলামত। আগের উম্মাতে মুসলিমাকে গোমরাহ বলে নিজেকে হেদায়াতপ্রাপ্ত বলা এবং মুসলমান বলা কেয়ামতে আলামত।


বিশেষভাবে এই যুগটা হলো, টাকা পয়সা ছড়াছড়ির যুগ এবং অতি লোভের যুগ। دينهم دينارهم ونسائهم قبلتهم وهمتهم بطونهم ‘তাদের ধর্ম হলো টাকা, তাদের কেবলা হলো নারী, তাদের টার্গেট হলো পেট।’ এর বস্তব রূপ হবে। আল্লাহ তাআলা পরিষ্কার বলেছেন, يضل به كثيرا ويهدي به كثيرا  ‘তার দ্বারা গোমরাহ হয় অনেকে, হেদায়াত পায় অনেকে।’


আজকাল ইসলাম ও দাওয়াতে ঠিকাদাররা ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। আল্লাহ তা‘আলা নির্ভেজাল তাওহীদধারীদেরকে হেফাযত করুন। দুনিয়াদারদের থেকে হেফাযত করুন। এটা ক্ষমতা ও পদের লোভীদের যুগ। যত বাতেল ফেরকার জন্ম হয়েছে, সব এই লোভে জন্ম হয়েছে। যাদের পর্দার আড়ালে ইন্ধন জোগানোর জন্য ইহুদী খ্রিস্টান রয়েছে। তারাও সব তাওহীদবাদী। পার্থক্য শুধু নবুওয়াত নিয়ে। হযরত মুসা, হযরত ঈসা ও নবী মুহাম্মাদের মধ্যে কে হবে?


❏ প্রশ্ন : أول ما خلق الله نوري এটা হাদীস কিনা? অনেকে এটাকে মাওজু বলে।


✍ জবাব : মাজমাউল বিহারের টিকাতে এই হাদীসটি উল্লেখ রয়েছে। ইমাম আব্দুল ওহ্হাব শা‘রানী আল ইয়াকীত অলজাওয়াহীর কিতাবের ১০নং পৃষ্ঠায় এই হাদীস শরীফটি লিখেছেন। ইবনে হাজার মাক্কী (رحمة الله) ফাতাওয়ায়ে হাদীসিয়াতে ৪৪ নং পৃষ্ঠায় এবং ২০৬ নং পৃষ্ঠায় এই বিষয়টিকে মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক থেকে হাদীস হওয়া বর্ণনা করেছেন।


❏ প্রশ্ন : রাসূল (ﷺ) এর নূর হওয়া ও মানুষ হওয়া সম্পর্কে হুকুম কী? قل إنما أنا بشر ও قد جائكم من الله نور আয়াতদুটির শানে নুযুল কী?


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما   মুহাম্মাদ (ﷺ) এর বাস্তবতা সম্পর্কে মানুষের বিবেক ও আদম সন্তানের ইলম সংকীর্ণ ও অক্ষম। আল্লাহ তা‘আলা জানেন। রাসূল (ﷺ) নুরানিয়াত ও বশরিয়াত উভয় গুণের সমন্বয়কারী। রাসূল (ﷺ) ফেরেশতাদের সরদার এজন্য নুরী বলে, মানুষের সরদার এই জন্য মানুষ বলে।


শুধু মানুষ মানুষ বলা কুফুরী ও কাফেরদের অভ্যাস এবং নবুওয়াতে বিপরীত। আবার শুধু নূর বলাও রেসালত ও তাবলীগের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক। রাসূল (ﷺ) নূরও। قد جائكم من الله نور  ইবাদাতের দিক থেকে নূর। আবার قل إنما أنا بشر অভ্যাস ও তাবলীগ রেসালাতের দিক থেকে মানুষও। শুধু মানুষ বলা হারাম।


قل إنما أنا بشر এই আয়াত কাফেরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। যারা বলতো যে মানুষ সে নবী কিভাবে হবে? কারণ মানুষ মানবিক প্রয়োজন পূরণের পিছনে ব্যস্ত থাকে। রাসূল তো তা পবিত্র হওয়া উচিত। সুতরাং সেও আমাদের মতো মানুষ। তাদের প্রতিবাদের জন্য এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।


قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ আপনি কাফের মোশরেকদেরকে বলে দিন, আমি তো মানুষ আমার সাথেও মানবিক প্রয়োজন আছে। তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী প্রাপ্ত। অতুলনীয় দৃষ্টান্তহীন মানুষ। জিনও নই, ফেরেশতাও নই। কথা এতটুকু যে, আমার কাছে অহী আসে। তোমাদের মাবুদ শুধু একজন, তার সাথে কাউকে শরীক করো না।


ইয়াহুহীরা তাদের কিতাব তাওরাতের কিছু আয়াত গোপন করতো, কিছু প্রকাশ করতো। আল্লাহ তা‘আলা এবিষয়টি রাসূল (ﷺ)কে জানালেন। তার নূর নবুওয়াতের দ্বারা তার এই বিষয়টি খুব স্পষ্ট হয়ে গেলো। এ বিষয়টি এই আয়াতে বলেন, আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে রাসূলের আগমন ঘটেছে। কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। ইহুদীদের বাস্তবতা জানা হয়েছে।


আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সম্মানিত নূর এসেছে। সংরক্ষিত কালাম কোরআনও অবতীর্ণ হয়েছে। চিরস্থায়ী সত্তার চিরস্থায়ী কালাম বোঝা মানব সাধ্যের বাহিরে। কারণ মানুষ তো অস্থায়ী। কিভাবে কদীম কালাম বুঝবে। তাই এটা বুঝা ও বুঝানোর জন্য নূরে নবুওয়াতের পয়োজন আছে।

সুতরাং সেই সম্মানিত নবুওয়াতী নূর পাঠালেন, এরপর চিরস্থায়ী কালাম অবতীর্ণ করলেন। আল্লাহ তা‘আলা লাতিফ। আর মানুষ ঘন। অতএব লাতিফ যাত থেকে ঘন যাত ফয়য, বরকত ও রহমত পাওয়ার জন্য নূর নবুওয়াতের মাধ্যম প্রয়োজন। সেদিকে ইঙ্গিত করে বলেন, قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ আসল কিতাবের বাহক সেই হয় যে সকল নবীগণের সরদার হয় এবং যার সাথে খালেকের সাথে সম্পর্ক থাকে এবং মাখলুকের অন্তর্ভূক্ত হয়। এমন ব্যক্তি চিরস্থায়ী কালাম বুঝে ও বুঝায়।


সুতরাং রাসূল (ﷺ) নূরও মানুষও। এর বাস্তবতা ও ধরণ আল্লাহ তা‘আলা জানেন। মানুষ এর থেকে অক্ষম।


❏ প্রশ্ন : রাসূল (ﷺ) এর জন্ম রবিউল আওয়াল মাসের ৯ তারিখ নাকি ১২ হয়েছে? অনেকে বলে ৯ তারিখে হয়েছে।


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما   শরীয়াতের বহু বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের ইখতিলাফ আছে। তবে এর মধ্যে সহীহ ও নির্ভযোগ্য  জামহুর ওলামায়ে কেরামের উক্তিই গ্রহণযোগ্য। রাসূল (ﷺ) এর জন্মের ক্ষেত্রে সাতটি উক্তি আছে। ২ রবিউল আওয়াল, ৮ রবিউল আওয়াল, ১০ রবিউল আওয়াল, ৭ রবিউল আওয়াল, ১২ রবিউল আওয়াল, ১৮ রবিউল আওয়াল, ২২ রবিউল আওয়াল। তবে এর মধ্যে ১২ রবিউল আওয়াল উক্তিটি সহীহ ও গ্রহণযোগ্য। ৯ রবিউল আওয়ালের কথা কোনো নির্ভরযোগ্য কিতাবে আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। (মুফতীয়ে হিন্দ জালালুদ্দীন আহমদ আল আমজাদী, ফাতাওয়া ফয়েযুর রাসূল : ১/২৫২)


❏ প্রশ্ন : রাসূল (ﷺ) এর মে‘রাজ করানোর উদ্দেশ্য কী?


✍ জবাব : রাসূল (ﷺ) এর মে‘রাজ করানোর উদ্দেশ্য হলো, সারা দুনিয়ার ঈমান থেকে রাসূল (ﷺ) এর ঈমান ভিন্ন হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলাকে রাসূল (ﷺ) ছাড়া কোনো ফেরেশতাও দেখেনি, কোনো নবীও দেখেনি। এই এক সত্তাকে এই এক ব্যক্তি দেখেছে। ঈমান শব্দ একটি। তবে এর বাস্তবতার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যে জিনিস রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য ঈমান সে জিনিস আমাদের জন্য সরাসরি কুফর। রাসূল (ﷺ) এর কালিমা ছিলো, لا إله الا الله أني رسول الله  তার আযান ছিলো, أشهد أني رسوالله তার দুরূদ ছিলো,  صلى الله علي وعلى الي و أصحابي আমরা এমন বললে কাফের হয়ে যাবো।


❏ প্রশ্ন : কোরআনের মধ্যে يا أيها الذين أمنوا  এই আয়াতের মধ্যে আমরা ঈমানের উপাধীধারী উদ্দেশ্য হয়। এর মধ্যে রসূল (ﷺ) অন্তর্ভুক্ত আছে কিনা?


✍ জবাব : এই আয়াতের মধ্যে রাসূল (ﷺ) অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাবীবকে  الذين أمنوا বলে সম্বোধন করেননি। বরং তার হাবীবকে يا أيها الرسول ইত্যাদি শব্দ দ্বারা ডেকেছেন।يا أيها الذين أمنوا لا تقدموا بين يدي الله ورسوله  হে ঈমানদারগণ আল্লাহ এবং রাসূলের আগে অগ্রসর হও না। يا أيها الذين أمنوا لا ترفعوا أصواتكم فوق صوت النبي   হে ঈমানদারগণ তোমার আওয়াজ নবীর আওয়াজের উপর উঁচু করো না। يا أيها الذين أمنوا لا تدخلوا بيوت النبي হে ঈমানদারগণ নবীর ঘওে প্রবেশ করো না। يا أيها الذين أمنوا لا تقولوا راعنا হে ঈমানদারগণ রায়ীনা বলো না। لا تجعلوا دعاء الرسول হে ঈমানদারগণ রাসূলকে তোমাদের মতো করো ডাকো না।


এই আয়াতগুলির মধ্য রাসূল (ﷺ) একে বারে অন্তর্ভুক্ত নয়। الذين أمنوا উল্লেখ থাকলেও রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্তর্ভুক্ত নয়।


❏ প্রশ্ন : যেই আয়াতের মধ্যে الذين أمنوا আছে এবং তাতে নামায, রোযা, হজ যাকাত, সবর, কেসাস ইত্যাদির বিধান রয়েছে, রাসূল (ﷺ) তারও কি অন্তর্ভুক্ত নয়?


✍ জবাব : সহীহ ও সত্য কথা হলো, তাতেও রাসূল (ﷺ) অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ এই আয়াতগুলি নবুওয়াত প্রকাশ পাওয়ার চৌদ্দ পনের বছর পরে অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু রাসূল (ﷺ) এর আগেও আবেদ, আরেফ ও সাজেদ ছিলেন।


হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নাঈমী (رحمة الله) গবেষণামূলক বিবরণ দিয়েছেন যে, রাসূল (ﷺ) 

الذين أمنوا এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।

(দুরূসুল কোরআন : পৃ. ৫৮)


❏ প্রশ্ন : রাসূল (ﷺ) এর বিশেষ আমল কী?


✍ জবাব : রাসূল (ﷺ) এর বিশেষ আমল হলো, যাকাত ওয়াজিব না হওয়া, এক সাথে নয় স্ত্রী রাখা, উটের উপর সাওয়ার হয়ে কা‘বা তাওয়াফ করা। মেম্বরের উপর দাড়িয়ে নামায আদায় করা। এর মধ্যে অনুসরণ করা যাবে না। কারণ এই আমলগুলি অনুসরণযোগ্য নয়।


❏ প্রশ্ন : রাসূলগণের শানে আজে বাজে কথা যারা বলে এবং শানে রেসালাতকে ছোট যারা করে তাদের ব্যাপারে শরীয়াতের হুকুম কী? যে ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) এর নাআল শরীফকে ছোট করে জুতা বললো, তার হুকুম কী? এসব তো শানে রেসালাতে বেআদবী শব্দ। এরপর তাওবা করলে কবুল হবে কিনা?


✍ জবাব : من لم يقر ببعض الأنبياء عليهم السلام أو عاب نبيا بشئ او لم يرض بسنته من سنن المرسلين عليهم السلام فقد كفر

 যে ব্যক্তি কোনো নবীকে মানলো না, অথবা আমাদের নবীর কোনো জিনিসে দোষ বের করলো, রাসূলের সুন্নাতের মধ্যে কোনো একটিকে পছন্দ করলো না, সুতরাং সে কাফের। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ৫/৩২৫)


كل من أراد بقلبه بغض النبي صلى الله عليه وسلم فقد كفرঅর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তি অন্তরে রাসূল (ﷺ) এর অপমান ও মর্যাদা ছোট করার ইচ্ছা করে তাহলে সে ইসলামী শরীয়াতের বিধান মতে কাফের। (ফাতাওয়া তারার খানিয়া : ৫/৩২৫)

 ولو قال لشعر النبي صلى الله عليه وسلم الشعير.....إذا قال بطريق الإهانة يكفر بكل ذلك 

যদি কোনো ব্যক্তি নবীর চুলকে শুআইর বলে, ... যখন এইসব অপমান করার জন্য বলবে সক কিছুর দ্বারা কাফের হয়ে যাবে।

(ফাতাওয়া তাতার খানিয়া : ৫/৩৩৬)

ولو عاب النبي صلى الله عليه وسلم بشئ من العيوب يكفر أو قال قد كان طويل ظفر فقد يكفر مطلقا قال على وجه الإهانة

যদি রাসূল (ﷺ) এর কোনো দোষ বের করা হয় তাহলে কাফের হয়ে যাবে। যদি বলে লম্বা নক বিশিষ্ট ছিলো, তাহলে কাফের হয়ে যাবে। যদি অপমান করার জন্য বলে।

(ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ৫/৩৩৬)


কিতাবের উদ্ধৃতি দ্বারা জানা যায় যে, পছন্দনীয় মাযহাব হলো, সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে এমন কথা বের করবে, যা রাসূল (ﷺ) এর পবিত্র শানে অশোভনীয়, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। তার তাওবা এই অর্থে গ্রহণযোগ্য হবে না যে, হত্যা থেকে বেঁচে যাবে। যদিও সে দুই কালিমা পাঠ করেছে। যদি এই মারাত্মক অপরাধ থেকে তাওবা করে এবং এরপর মারা যায়, অথবা এই অপরাধের কারণে হত্যা করা হয় তাহলে তার মুসলমানের মতো মৃত্যু ধরা হবে। গোসল, জানাযা, কাফন, দাফন সব কিছু মুসলমানদের মতো হবে। তাওবার আগে মারা গেলে কাফেরের মৃত্যু হবে। তার সাথে মুসলমানের মতো আচরণ করা যাবে না।


শরহে বেকায়ার আল্লামা চলপীর টিকাতে আছে,

قد اجتمعت الأمة على أن الاستخفاف نبيا صلى الله عليه وسلم وبأي نبي من الأنبياء كان كفرا سواء فعله فاعل ذلك استحلالا ام فعله معتقدا بحرمته وليس بين العلماء خلاف في ذلك الذين نقلوا لاجماع فيه أكثر من أن تحصى

সকল মুসলিম উম্মাহ এর উপর একমত হয়েছে যে, নবী কারীম অথবা অন্য কোনো নবীর শান ছোট করা কুফুরী। সে এটাকে হালাল মনে করুক, অথবা হারাম মনে করুক। এই মাসআলায় ওলামায়ে কেরামের কোনো ইখতিলাফ নেই। এবং এই মাসআলার উপর ইজমার কথা অগণিত আলেম উদ্ধৃত করেছেন।


❏ প্রশ্ন : মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী?


✍ জবাব : মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য এক মাত্র আল্লাহর ইবাদাত ও তার পরিচয় লাভ করা। আর এমনি হওয়া উচিত। কারণ এর সৃষ্টি কেবল এর জন্য হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, وما خلقت الجن والإنس الا ليعبدون জিন ও মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা আমার ইবাদাত করে। কোনো কোনো মুফাসসিরীন ليعبدون এর অনুবাদ করেছে ليعرفونঅর্থাৎ তাদের আল্লাহর পরিচয় লাভ করার জন্য সৃষ্টি করেছি। কিন্তু ঐ সত্তার পরিচয় কিভাবে হবে? ঐ সত্তা কাদীস আয়াত্তের বাহিরে। আর অন্য সব অস্থায়ী ও সীমিত। আল্লাহ তা‘আলা নিজে তার পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لا تدركه الأبصارকোনো চোখ তাকে আয়াত্ব করতে পারে না।

এর জববা হলো, আল্লাহর পরিচয় লাভের মাত্র একটি পদ্ধতি। তা আমরা লাভ করার জন্য আমাদের এমন ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন, যাদেরকে আমরা পাবো। যার মাধ্যমে আমরা আসল মালিক পর্যন্ত পৌঁছতে পারবো। সে মাধ্যম হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قل إن كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله অর্থাৎ হে নবী আপনী বলুন, তোমরা যদি আল্লাহ তা‘আলাকে ভালো বাসো, তাহলে আমার আনুগত্য করো। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে ভালো বাসবেন।


হযরত ঈমান শা‘রানী (رحمة الله) তার কিতাব লাওয়াকিহুল আনোয়ারিল কুদসিয়ার ১৬ নং পৃষ্ঠায় আপন শায়খ আলী আলখওয়াস (رحمة الله)র উক্তি উদ্ধৃত করেন। لا يكمل عبد في مقام العرفان حتي يصير مجتمع বান্দা আল্লাহর পরিচয়ে পরিপূর্ণ হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সর্বদা রাসূল (ﷺ)কে জাগ্রত অবস্থায় যেয়ারতের মর্যাদা অর্জন না করবে।


❏ প্রশ্ন : স্বভাবগতভাবে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়, যখন আল্লাহর তা‘আলার পরিচয়ের মাধ্যম এক মাত্র রাসূল (ﷺ), তাহলে তার পর্যন্ত আমরা পৌঁছা সম্ভব নয়। কারণ তিনি বারযাখ জগতে, আর আমরা দুনিয়াতে। দুনিয়ায় অবস্থানকারী বারযাখে অবস্থানকারীর সাথে কিভাবে মিলবে?


✍ জবাব : এই প্রশ্ন এ কারণে সৃষ্টি হতে পারে যে, আমরা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর বাস্তবতা সম্পর্কে অজ্ঞ। নতুবা কথা পরিস্কার। রাসূল (ﷺ) এর জগত পরিবর্তন নবুওয়াত চালু থাকার জন্য আড়াল নয়। ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত, রাসূল (ﷺ) এর নবুওয়াত কেয়ামত পর্যন্ত চলবে। তাই যদিও তিনি বারযাখ জগতে আছেন, তবুও তিনি আমাদের জন্য জীবিত বিদ্যমান আছেন। যদি আমাদের চোখের আড়ালে।


ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) তার কিতাব আলহাবী লিল ফাতাওয়ার ৪৫৩ নং পৃষ্ঠায় বলেন,

إن رسول الله صلى الله عليه وسلم حي بجسده وروحه وأنه يتصرف ويسير حيث شاء في أقطار الأرض رفي الملكوت وهو بهية التي كان عليها قبل وفاته لم يبدل منه شئ وأنه مغيب عن الأبصار كما غابت الملائكة مع كونهم أحياء بأجسادهم فإذا اراد الله رفع الحجاب عمن أراد كرامه برؤيته رأه على هية التي هو علىها لا مانع من ذلك ولاداعي إلى التخصيص برؤية المثال

আল্লাহ তা‘আলার প্রিয় রাসূল পবিত্র শরীর ও রূহের সাথে জীবিত। আসমান জমিনের যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যায়। তিনি মৃত্যুর পূর্বে যেমন ছিলেন, এখনো সেই অবস্থায় আছেন। কোনো প্রকার পরিবর্তন হয়নি। তিনি আমাদের চোখের আড়ালে, যেমন ফেরেশতারা আমার চোখের আড়ালে। তবে সশরীরে জীবিত। তবে আল্লাহ যাকে রাসূলের দীদার দ্বারা সম্মানিত করতে চান, পর্দা সরিয়ে সেই অবস্থায় দীদার করান, যে অবস্থায় আছেন। এর জন্য কোন বাধা নেই। আবার রূপক আকৃতির দীদারেরও কোনো কারণ নেই।


রাসূল (ﷺ) সারা পৃথিবীর, এমনকি সকল নবীগণেরও। এহিসেবে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন প্রকার হওয়া আমাদের জন্য। তার জন্য সারা জগত এক সমান। কারণ তিনি তো রহমাতুল লিল আলামিন।

স্বপ্ন ও জাগ্রত অবস্থায় রাসূল (ﷺ) এর সাথে সাক্ষাতের অনেক পদ্ধতি বিশেষাজ্ঞ আলেম বুযুর্গরা নিজ নিজ কিতাবে বর্ণনা করেছেন।

রাসূল (ﷺ) এর উপর অগণিত অনির্দিষ্ট পরিমাণে দুরূদ পাঠ করবে। কপাল ভালো হলে তাড়াতাড়ি হয়। কোনো বদ আমলী থাকলে বহু দিন লেগে যায়। তবে সাক্ষাৎ হবেই।


হযরত আব্দুল আযীয দাব্বগ (رحمة الله) বলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দা আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত রাসূল (ﷺ) এর পরিচয় লাভ না করে। তিনি বলেন,

 إن العبد لا ينال معرفة الله تعالى حتى يعرف سيد الوجود صلى الله عليه وسلم

‘বান্দা আল্লাহর পরিচয় পায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত রাসূল (ﷺ) এর পরিচয় লাভ না করবে।’ (আল আবরিয : ৩২)

এর ব্যাখ্যায় মাওলানা আশেকে এলাহী মিরাঠী লিখেন, যেহেতু দীন ও দুনিয়ার সকল নেক কাজ বরং সত্য বলতে ঈমানও এই পরিচয়। এ কারণে নিজ বুঝ মতো প্রয়োজন মাফিক ব্যাখ্যা করছি।


ঘটনা :  হযরত আহমদ যাওয়াদী (رحمة الله) বলেন, আমি পূর্ণ এক বছর পর্যন্ত রাত দিনে পঞ্চাশ হাজার বার দুরূদ শরীফ পাঠ করেছি। দুরূদ শরীফের বরকতে জাগ্রত অবস্থায় রাসূল (ﷺ) এর সাক্ষাৎ লাভ করেছি। (তাকরিয : ১/৩৭)


ঘটনা : হযরত নূরুদ্দীন শা‘রানী (رحمة الله) বলেন, সারা বছর প্রতিদিন ৩৩ হাজার বার দুরূদ শরীফ পাঠ করেছি। আমিও এই মর্যাদা লাভ করেছি। (লাওয়াকেহুল আনোয়ারিল কুদসিয়া : ১৬)


ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাল্লামকে জাগ্রত অবস্থায় সত্তর বার দেখেছি। (তানবীরুল মুলক ফি রুইয়াতিন নবী ওয়াল মালিক)


হযরত শায়খ ইবরাহীম মাকবুলী (رحمة الله)র সামান্য মুহূর্ত রাসূল (ﷺ) এর দীদার থেকে খালি যেতো না।


হযরত আবুল আব্বাস মারুসী (رحمة الله) বলেন,

 لو احتجب عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ساعة ما عددت من جملة المسلمين

যদি আমার থেকে রাসূল (ﷺ)  সামান্য মুহূর্তের জন্য আড়াল হয়, তাহলে আমি নিজেকে মুসলমান করি না।

এই ব্যাপারে  ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله)র তানবীরুল মুলক দেখুন। উল্লিখিত ঘটনাগুলি দ্বারা হাজির নাজিরের মাসআলা খুব স্পষ্ট হয়।


রাসূল (ﷺ) এর বাতলানো রাস্তা যা একজন পূর্ণ মুরশিদ হিসেবে নিজ উম্মতকে বুঝিয়ে গেছেন। তার উপর দৃঢ়তার সাথে আমল করলে আল্লাহর পরিচয় লাভ হবে। তবে এতে কামেল মুরশিদের তত্তাবধান জরুরী।


হযরত আব্দুল আজীজ দাব্বাগ (رحمة الله) বলেন,

لا يعرف سيد الوجود صلى الله عليه وسلم حتى يعرف شيخه

যতক্ষণ পর্যন্ত নিজ শায়েখের পরিচয় অর্জন না হবে রাসূল (ﷺ) এর পরিচয় অর্জন হবে না। (আলআবরিয)

আত্মিক চুক্তি করে নেওয়া উচিত। রোগীর জন্য যেমন উচিত শারিরিক রোগ নির্মুল করা, আরগ্য লাভ করার পর উন্নত খাবার খাওয়ানো, তেমনি আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য জরুরী হলো, রোগ দূর করে সে সব আমল করবে যা রব্বানী দীদাদের যোগ্য বানায়। 



 
Top