মুসলিম বিজ্ঞানী আল জাজারির যে আবিষ্কার বদলে দিয়েছিল সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিকে । 


যুগ শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ আল জাজারি জন্মগ্রহণ করেন দ্বাদশ শতাব্দীতে। উনাকে আধুনিক সেচ ব্যাবস্থার জনক বলা হয় । নদীর পানি উত্তোলনের জন্য সেই সময়কার উদ্ভাবক আল জাজারি পাঁচটি মেশিন নির্মাণ করেন। যার বর্ণনা রয়েছে তাঁর বিখ্যাত পুস্তক- ‘আল-জামি বাইন আল-ইলম ওয়া আল-আমল আল-নাফি ফি সিনা আত আল হিয়াল’ বা ‘দি বুক অফ নলেজ অফ ইনজেনিয়াস মেকানিকেল ডিভাইসেস’-এ। এটি ইসলামি প্রকৌশলের ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণামূলক পুস্তক । ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই প্রযুক্তির ইতিহাস রচনা করেন। তাঁর মৃত্যুর আটশ বছর পর বিজ্ঞানের আধুনিক ইতিহাসে তার কর্মের স্বীকৃতি দিয়ে তাকে সম্মান জানানো হয়েছে। আল-জাজারি রচিত এ গ্রন্থটি প্রযুক্তি এবং শিল্পকলার ঐতিহাসিকদের সবসময় পথ দেখিয়ে এসেছে।

আল জাজারির আবিষ্কারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অবাক করেছিল যে যন্ত্রটি সেটি হল যমজ সিলিন্ডার পাম্প। দুরকম নীতি অনুসরন করে দ্রুত কাজ করাই ছিল এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আল-জাজারি সর্বপ্রথম শোষণ নল, সাকশন-পাম্প এবং দ্বিগুণ কার্যকর পাম্পের নকশা বর্ণনা করে সর্বপ্রথম ভালব এবং ক্র্যাঙ্কশ্যাফট কানেকটিং রড ব্যবহার করেন। এছাড়া তিনি দুই সিলিন্ডারবিশিষ্ট পিস্টনের সাকশন-পাম্প উদ্ভাবন করেন। আধুনিক প্রকৌশল ব্যবস্থার উন্নতিতে এ পানি উত্তোলন যন্ত্রটির সরাসরি গুরুত্ব রয়েছে। ১৫ শতকে ইউরোপে প্রচলিত সাকশন-পাম্পের চেয়ে এটি অনেক উন্নত ছিল।

পূর্বে পানি উত্তলোনোর জন্যে চেইন পাম্প প্রচলিত ছিল। আল জাজারি একটি নয়, দুটি নয়, পাঁচটি ভিন্ন কৌশলের চেইন পাম্প তৈরি করলেন! তার তৈরি এই পাম্পগুলো একটি সাধারণ নাম, ‘সাকিয়া চেইন পাম্প’ নামে পরিচিত। 
চেইন পাম্পে ক্র্যাংকশ্যাফটের ব্যবহারও সর্বপ্রথম জাজারির যন্ত্রেই দেখা যায়। আর আধুনিক যুগের অত্যাধুনিক যন্ত্রগুলোতে প্রয়োগ করা ‘ইন্টারমিটেন্সি সিস্টেম’ এর ধারণাও প্রথম আসে জাজারির এই সাকিয়া পাম্প থেকেই। অন্যদিকে, ‘হাইড্রোপাওয়ার’ দ্বারা পরিচালিত একটি সাকিয়া পাম্পও তৈরি করেছিলেন জাজারি, যা দ্বারা পানি উত্তোলনে মানুষের কায়িক পরিশ্রমের কোনো প্রয়োজন ছিল না। পুরো মধ্যযুগ সহ বর্তমান আধুনিক যুগেও  আরবে সহ সমগ্র বিশ্বে আল জাজারির যন্ত্রগুলো পানি উত্তোলনে ব্যবহৃত হয়েছে। 
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের অনেক স্থানে এখনো এই যন্ত্র ব্যবহৃত হয়।
ইংরেজ ঐতিহাসিক ডোনাল্ড আর. হিল তার রচিত ‘স্টাডিস ইন মেডিয়েভল ইসলামিক টেকনলজি’ পুস্তকে উল্লেখ করেছে : ‘ প্রকৌশলের ইতিহাসে আল-জাজারির গুরুত্বকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আধুনিক কাল পর্যন্ত আর কোনো সভ্যতা থেকে এর তুলনীয় যন্ত্রের নকশা, উৎপাদন এবং বিভিন্ন নির্দেশমালা সংবলিত তেমন কোনো রচনা পাওয়া যায়নি।

IGSRC
 
Top