উলামায়ে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাত এর আকিদাঃ

––––––––––––––––––––––––––––––––


১: মহান আল্লাহ পাক এক মাত্র মাফাতিহুল গায়েব তথা সত্ত্বাগত গায়েব বা অদৃশ্যে জ্ঞানের মালিক।  


ইলমে গায়েব ➡ দু প্রকারঃ


(ক) মাফাতিহুল গায়েব বা (জাতী) সত্বাগত।


(খ) মত্ত্বালিয়ু আলাল গায়েব বা খোদা প্রদত্ত্ব ইলমে গায়েব।


২: মাফাতিহুল গায়েব আল্লাহ ছাড়া অন্য কার জানা আছে এ বিশ্বাস করা শিরিক। 


৩: মুত্ত্বালিয়ু আলাল গায়েব আল্লাহর জন্য হওয়া বিশ্বাস করা শিরিক।


ইলমে গায়েব

غیب

শব্দটি মাসদার বহুবচনে غیوب/غیاب উভয় শব্দ ব্যবহৃত হয়। আভিধানিক অর্থ পঞ্চ ইন্দ্রিয় বহির্ভূত গোপন বিষয়। (কুরতুবি ১/১৪৩)


◼ ইমাম নসফী তার আকাইদে নসফী কিতাবে গায়েবের সজ্ঞায় লিখেন—


وبالجماة العلم الغیب امر تفرد باللّٰه تعلی لا سبیل الیه للعباد الا باعلم منه او الهم یطریق المعجوة والکرامة او ارشاد الی الا ستدلال بالاشارة فیما یمکن فیه ذالك

     ইলমে গায়েব হল এমন একটি ইলম, যা আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। বান্দা কোন উপায়ে তা অর্জন করতে পারে না। তবে তিনি বান্দাহকে গায়েবের সংবাদ প্রদান করলে নবীগনের জন্য মুযেজা এবং আউলিয়ায়ে কেরামের জন্য কারামাত হিসাবে অথবা যে সকল বিষয় অবগত হওয়া যায় সে গুলোকে বিভিন্ন উপর্সগের মাধ্যমে জানিয়ে দিলে বান্দাহর পক্ষে তা অবগত হওয়া সম্ভব (শরহে আকাঈদে নসফী ১২২) 


◼ ইমাম বায়দ্বাবী (رحمة الله) গায়েবের সজ্ঞায় বলেন।


والمراد به الخفي لايدركه الحس ولا تقتضة بديهة العقل وهو قسمان قسم لا دليل عليه وهو المعنا بقوله تعلى وعنده مفاتح الغيب لايعلمها الا هو وقسم نصب عليه دليل كالصانع وصفاته واليوم الأخر و أحواله وهو المراد به في هذه الآية -

     অর্থ-গায়েব দ্বারা মুরাদ হচ্ছে এই সকল অদৃশ্য বস্তু যাকে পঞ্চ ইন্দ্রিয় তথা চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহবা ও ত্বক ইত্যাদি অনুভব শক্তি দ্বারা অর্জন করা যায় না। তা দু প্রকার 

১/ এক প্রকার গায়েব হল ।যার কোন দলিল প্রমান নাই। সেই অর্থে আল্লাহ তা'লার বাণী- وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الغَیبِ لاَیَعلَمُهَا اِلاَّ اللّٰهُ অর্থাৎ আল্লাহর নিকটই রয়েছে গায়েবের চাবি সমুহ।তিনি ব্যতীত উহা কেহ জানেনা 

২। অন্য প্রকারের গায়েব হল যার অবগতির জন্য দলীল প্রমাণ রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাকের সত্ত্বা ও তার গুনাবলী, পরকাল ও তার অবস্থাদি। یُومِنُونَ بِالغَیبِ (তারা গায়েবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে ) দ্বারা ঐপ্রকারের গায়েবকে বুঝানো হয়েছে ।(বায়দ্বাবী ১৮)। 


◼ ইমাম রাগেব ইসপাহানি বলেন,

গায়েব এমন এক বিষয় যা পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও সাধারণ জ্ঞান বুদ্ধি দ্বারা অর্জন করা যায়না। আর তা কেবল মাত্র নবীদের বলে দেয়ার মাধ্যমে জানা যায় ।(মুফরাদাত৩৭৩)।


ইলমে গায়েব আল্লাহর জন্য নির্ধারিত । তিনি সত্ত্বাগত ভাবেই জ্ঞানী। তার দেয়া ব্যতীত কেউ স্বাধীন ভাবে ইলমে গায়েব জানেন না । তবে তিনি তার মনোনিত রাসুলগনকে ইলমে গায়েব দান করেছেন । খাস করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে ইলমে গায়েব সম্পর্কে আল্লাহতালা অবগত করেছেন।

উলামায়ে কেরাম এ প্রকারের গায়েবকে مُغِیبَاتٍ عاطیة প্রদত্ত্ব গায়েব হিসাবে অভিহিত করেছেন। (দিয়াউছ ছুদুর ২১)


▪ মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

وَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيُطلِعَكُم عَليٰ الغَيبِ وَلَکِنَّ اللّٰهُ يَجتَبِي مِن رَّسُولِهِ مَن یَّشَاءُ

আল্লাহ এমন নন যে ,তোমাদেরকে গায়েব অবহিত করবেন। কিন্তু আল্লাহ স্বীয় রাসুল গনের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা গায়েবের জন্য মনোনিত করেছেন। (ইমরান ১৭৯) 


▪ এ আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে,

اَي اِنَّهُ تَعَالىٰ لاَ اِطِلاَعَ جَمِيعَكُم عَلىٰ ذٰالِكٰ بَل يَختَصُّ بِهٖ مَن اَرَادَ

আল্লাহ তোমাদের সকলকে গায়েব জানিয়ে দেননি বরং তিনি যাকে ইচ্ছা গায়েবের জন্য মনোনিত করেছেন । (রুহুল মায়ানী)। 


অন্যত্র বলেন-

فَاِنَّ الِاطِّلَاعَ عَلىٰ المُغنِياَتِ مُختَصُّ بَعضَ الرُّسُلِ

▪ গায়েব জানা কতিপয় রাসুলের জন্য খাস। (রুহুল মায়ানী)

االا الرسل فان فان يطلعهم على على الغيب

▪ আল্লাহ রাসুলগন ব্যতীত অন্য কাউকে ইলমে গায়েব  অবগত করেননি। (তাফসীরে সাবী ১/১৮১)।

فَيَطُلِعَهُ عَلىٰ بَعضِ عَلمِ المُغِيباَتِ

▪ আল্লাহ তার রাসুলগনকে ইলমে গায়েব অবহিত করেছেন। (মুয়ালিমুত তানযিল ১/৫৯২)

وَعَلَّمَكَ مَا لَم تَكُن تَعلَم وَكَانَ فَضلُ اللّٰهِ عَلَيكَ عَظِيماً

▪ হে মুহাম্মদ (ﷺ) ! আল্লাহ আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানতেননা । আপনার প্রতি আল্লাহর করুনা অসীম (সুরা নিছা -১১৪)

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যার মধ্যে বলা হয়-

اَو مِنَ الخَبرِ الأَوَّلِينَ وَالآَخِرِينَ

▪ আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না এর দ্বারা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী ইলম উদ্দেশ্য। (তাফসীরে রুহুল বয়ান ৫/১৪৪)।

وَعَلَّمَكَ مَا لَم تَکُن تَعلَم مِن عِلمِ الغَیب

▪ হে মুহাম্মদ (ﷺ) ! ইলমে গায়েব এর যে বিষয় আপনি জানতেননা আল্লাহ তালা তা আপনাকে অবগত করেছেন (মুয়ালিমুত তানযীল২/১৫৫)

 
Top