বিষয় নং-০৮: দূর এবং নিকট হতে শুনা:


দেওবন্দীদের আকিদা হল যে, হুযুর পুর নূর (ﷺ) কেবল মদীনা শরীফেই আমাদের আওয়াজ শুনেন। দূর দূরান্ত থেকে শুনেন না। এমন আকিদা রাখা শিরক।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল সরকারে কানেয়াত (ﷺ) মদিনা মুনাওয়ারা থেকে যেভাবে উম্মতের প্রার্থনা শুনেন, অনুরূপভাবে দূর দূরান্ত থেকেও শুনতে পান। 

লা হযরত (رحمة الله) বলেন-

دورد نزد يک کى سننے والے وه كان

كان لعل كرامت پر لاكهوں سلام

‘‘দূর-সামীপ্য শ্রাব্য নবুওয়তি কান

কারামাতপূর্ণ ভান্ডারে লাখো সালাম।’’

শাহেনশাহে আরব ওয়া আজম (ﷺ)’র মর্যাদাবান সাহাবায়ে কেরাম (রা:) গণ যেমনিভাবে মদিনা শরীফ হতে ডাকেন, অনুরূপভাবে দূরদূরান্ত এলাকা, এমন কী যুদ্ধের ময়দান হতেও আহ্বান সূচক হরফ (يا) দ্বারা ডাকেন। যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)’র ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) বলে ডাকা, অনুরূপভাবে যুদ্ধের ময়দান থেকে ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) বলে ডাকাও সাহাবায়ে কিরামগণ (রা:) অভ্যাস ছিল।

তেমনিভাবে হয়রত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং হয়রত উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه)ও ইয়া মুহাম্মদ (ﷺ) বলে প্রার্থনা করতেন। এসব বর্ণনা হতে প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবায়ে কিরাম (রা:) গণ দূর-কাছ থেকে রাসূল (ﷺ) কে ডেকে প্রার্থনা করতেন এর ফলে তাঁদের হাজতপূর্ণ হত। সাহাবায়ে কেরামগণ (রা:) দূরদূরান্ত থেকে আহ্বান করা দ্বারা বুঝা যায়, তাঁদের আকিদা ছিল যে, রাসূল (ﷺ) দূর-কাছ থেকে সমানভাবে শুনতেন।

শাফিয়ে মহাশর, ছাকিয়ে কাউসার (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ، وَأَسْمَعُ مَا لَا تَسْمَعُونَ

-“আমি তাই শুনি যা তোমরা শুনোনা।’’ ১০৮

টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ১০৮. সুনানে ইবনে মাযাহ, ২/১৪০২ পৃ. হা/৪১৯০, তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ৩/১৪৬৯ পৃ. হা/৫৩৪৭, ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৪/১৩৪ পৃ. হা/২৩১২, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/৮৩ পৃ. হা/১৩৩৩, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩৫/৪০৫ পৃ. হা/২১৫২৬, 

ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ২/৫৫৪ পৃ. হা/৩৮৮৩, তিনি বলেন-

 هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ -

‘‘এ হাদিসটির সনদ সহীহ, যদিওবা তাঁরা সংকলন করেননি।

━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━

দালায়েলুল খায়রাতের বরাত: 

দেওবন্দীদের আকাবের যেমন, দেওবন্দী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌলবী কাসেম নানুতবী, মৌলবী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, মৌলবী আশরাফ আলী থানবী, মওলবী খলীল আহমদ আম্বিটুবী প্রমুখগং তাদের স্বীয় পীর মুর্শিদ হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (رحمة الله) থেকে দালায়েলুল খায়রাত পাঠ করার সনদের অনুমতি প্রার্থনা করেন। যেমন: দেওবন্দীদের মৌলবী হোসাইন আহমদ সাহারানপুরী তারআল মুহান্নাদনামক গ্রন্থে লেখেন-

হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (رحمة الله) দেওবন্দীদের আকাবের কাশেম নানুতবী, রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, আশরাফ আলী থানবী প্রমুখদের দালায়েলুল খায়রাত শরীফ পাঠ করার অনুমতি দিতেন। (আল-মুহান্নাদ, ১৩ পৃ. দেওবন্দ হতে প্রকাশিত)

শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলবী (رحمة الله) দালায়েলুল খায়রাত শরীফ সম্পর্কে বলেন-দালায়েলুল খায়রাত শরীফ পাঠ করার জন্য আমরা অনুমতি পেয়েছি, শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলবী (رحمة الله) দালায়েলুল খায়রাত শরীফসম্পর্কে বলেন-দালায়েলুল খায়রাত শরীফপাঠ করার জন্য আমরা অনুমতি পেয়েছি, আমাদের শায়খ আবু তাহের থেকে, তিনি শায়খ আহমদ নাখঈ থেকে, তিনি সায়্যিদ আবদুর রহমান উরিস থেকে যিনি মাহযুব হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন, তিনি তধীয় পিতা আহমদ হতে, তিনি তাঁর দাদা মুহাম্মদ থেকে, তিনি তাঁর দাদা আহমদ থেকে, তিনি দালায়েলুল খায়রাতের সংকলক সায়্যিদ শরীফ মুহাম্মদ বিন সুলাইমান জাযুলী১০৯  (رحمة الله) থেকে অনুমতি লাভ করেন। (আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ উল্লাহ দেহলভী, ইনতিবাহু ফি সিলসিলাহু আউলিয়া, ১৪৩ পৃ.)


টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ১০৯.

❏ মৌলবী আশরাফ আলী থানবী লেখেন যে, তাঁর ইন্তেকালের ৭০ বছর পর বেলা উসুসে তাঁর কবর থেকে লাশ মুবারক পরিবর্তন করা হলে মনে হল তাকে এই মাত্র দাফন করা হল। মাটি তাঁর উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি এবং দীর্ঘ সময়ের ফলে তাঁর কোন পরিবর্তন হয়নি। এক ব্যক্তি তাঁর চেহারার উপর হাতের আঙ্গুল রাখরে সাথে সাথে জীবত ব্যক্তির ন্যায় রক্ত ঝরে। (জামেউল কারামতে আউলিয়া, ১৩৮-১৩৯ পৃ. আশরাফ আলী থানবী) 


❏ তাঁর কবর মুরাকশে, তাঁর কবরের উপর অনেকবার দালায়েলুল খায়রাত পড়া হয়। এখান থেকে দৃঢ় ভাবে প্রমাণিত হয় যে,  হুযুর পুর নুর (ﷺ) র উপর অধিকহারে দরুদ শরীফ পড়ার কারণে তার কবর থেকে মিশক আম্বরের খুশবু বের হয়। (জামালুল আউলিয়া. ফাযায়েলে দরুদ শরীফ, ৮৬ পৃ.)

━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━


মওলবী বাহাউল হক কাসেমী দেওবন্দী লেখেন যে, মওলবী ছানাউল্লাহ অমৃতসরী দেওবন্দী আলেমদের ব্যাপারে ভাল ধারণা পোষণ করতেন। তার জানা দরকার যে, দালায়েলুল খায়রাতের অজিফা দেওবন্দীদের অবগত ছিল। (দেখুন নজদী তাহরীক পর এক নযর)

এই দালায়েলুল খায়রাতের সংকলক রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র একটি হাদীস বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

اَسْمَعُ صَلَوٰةَ اَهْلِ مُحَبَّتِى وَ اعْرِفُهُمْ

-“আমি আমার প্রিয় উম্মত গণের দরুদ শরীফ শুনি এবং তাদেরকে চিনতে পাই। (সুলাইমান জাযুলী, দালায়েলুল খায়রাত শরীফ, ২২ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবাহানী, জাওয়াহিরুল বিহার, )


সত্যিকারের ঈমানদারগণ হুযুর (ﷺ) ইরশাদ মুবারককে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এবং এই আক্বিদা পোষণ করে যে, সারকারে দো আলম (ﷺ) দূর-কাছে থেকে আমাদের দরুদ শরীফ শুনেন এবং পাঠকারীকে চিনতে পারেন। রাসূলে পাক (ﷺ) এই হাদিস মুবারক দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনন্য একটি আকিদাও প্রমাণিত হল যে, সৃষ্টি জগত রাসূলে কারিম (ﷺ)’র দৃষ্টির মধ্যেই রয়েছে তিনি সবাইকে দেখেন এবং চেনেন। কবি বলেন-

نہ خدا ہى ملا نہ وصال صنم

نہ ادهر كے رہے  نہ ادهر كے رہے

‘‘না আল্লাহতে; না ভূতপ্রেতে

না একুলেতে; না আখিরাতে।’’

পাঠকবৃন্দ! দেখুন, দেওবন্দীরা রাসূলে পাক (ﷺ) র সাথে কিরূপ দুশমনি করছে। রাসূলে পাক (ﷺ)’র বলছেন, আমি শুনি এবং চিনি, অপর তারা বলে বেড়ায় শুনেন না, চিনেনও না।” 


তাবরানী শরীফে রয়েছে রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-

أَكْثرُوا الصَّلَاة عَليّ يَوْم الْجُمُعَة فَإِنَّهُ يَوْم مشهود تشهده الْمَلَائِكَة لَيْسَ من عبد يُصَلِّي عَليّ إِلَّا بَلغنِي صَوته حَيْثُ كَانَ

-“জুমআর দিনে তোমরা অধিকহারে দরুদ শরীফ পড়, কেননা এদিন হল ফেরেশতাদের উপস্থিতি এর দিন। এদিন আমার উম্মতের যে কেউ যে কোন স্থান থেকে দরুদ পড়লে তাদের আওয়াজ আমার কাছে পৌঁছানো হয়।’’ ১১০

  • ১১০. ইবনুল কাইয়্যুম জাওযী, জালাউল আফহাম, ১২৭ পৃ. 


রাসূলে কারিম (ﷺ) র উপর্যুক্ত বাণী থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এই আকিদা দিবালোকের ন্যায় প্রতিভাত হলো যে, যে কোন উম্মত যেখান হোক না কেন, দূরে হোক, কাছে হোক, মদীনা শরীফে হোক অথবা পাকিস্তান তথা যে কোন দেশ থেকে হোক তার দরুদ আমার নিকট পৌঁছানো হয়। 

সুতরাং বুঝা গেল দেওবন্দীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত নয় বরং তারাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত যাদের আকিদা হল রাসুলে করিম (ﷺ) দূরে-কাছে থেকে উম্মতের আর্তনাদ শুনেন এবং তাদেরকে চিনেন। দেওবন্দীদের আকিদা হল রাসূলে কারিম (ﷺ) র নিকট দরুদ শরীফ পৌঁছানো হয়, তিনি যদি শুনতে পান তবে কেন পৌঁছানো হয়?

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এই আকিদার শেষ তারা প্রতারণা এবং চাতুরীর পন্থা অবলম্বন করেছে! সাহাবায়ে কেরাম (রা:)র আকিদা কখনো এরূপ ছিল না যে, তিনি শুনেন না, এজন্য পেশ করা হয়। যে হাদীসে পেশ করার কথা আছে তা নিম্মরূপ-

এই হাদীস খানা দেওবন্দীদের মুজাদ্দিদ ইবনে কাইয়্যুম তারজালালুল আফহামএবং গাইয়ে মুকালিদগণের কাজী সুলাইমান মানসুরপুরী ‘‘আস-সালাত ওয়াস্সালামকিতাবে এভাবে এনেছেন-রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন- 

عَن عَائِشَة رَضِي الله عَنْهَا قَالَت قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم مَا مِنْ عَبْدٍ صَلَّى عَلَيّ صَلَاة إِلَّا عَرَجَ بِهَا مَلِكٌ حَتَّى يَجِيء بِهَا وَجْه الرَّحْمَن عَزَّ وَجَلَّ فَيَقُوْلُ رَبِّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى أِذْهَبُوْا بِهَا إِلَى قَبْرِ عَبْدِي تَسْتَغْفِرُ لِصَاحِبِهَا وَتَقَرُّ بِهَا عَيْنُهُ

-“হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের যে কেউ যখন আমার উপর দরুদ পড়ে, একজন ফেরেশতা তাকে আল্লাহর নিকট নিয়ে যায়, আর আল্লাহ ফেরেশতাকে বলেন, তাঁকে আমার হাবীব (ﷺ) কবরে নিয়ে যাও, যাতে তিনি দরুদ পাঠকারীর জন্য ইসতিগফার কামনা করেন এবং চক্ষু শীতল করেন।’’  ১১১

  • ১১১. ইবনুল কাইয়্যুম, জালালুল আফহাম, ১২৪ পৃ., ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৪/১০ পৃ. হা/৬০২৬, ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, ১৯/২২৫ পৃ. হা/২০৬২২, কাজী সুলাইমান মানসুরপুরী, আসসালাতু ওয়াস সালাম, ৫০ পৃ.


বর্ণিত হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফেরেশতা প্রথমত মহান আল্লাহর দরবারে দরুদ শরীফ নিয়ে আসেন এরপর মহান আল্লাহর নির্দেশেই রাসূল (ﷺ) দরবারে যান।

যদি শুনেন, তবে কেনো পেশ করা হয় বলে দেওবন্দীরা যে আপত্তি করে, তা দ্বারা কেবল রাসূল (ﷺ) শ্রবণ কেউ অস্বীকার করা হয় না বরং এর দ্বারা মহান আল্লাহর শ্রবণ শক্তিকে ও অস্বীকার করা হয়। কেননা ফেরেশতাগণ প্রথমে আল্লাহর দরবারেই দরুদ শরীফ নিয়ে আসেন।

দেখুন! দেওবন্দীদের আকিদা কত মারাত্মক! যা দ্বারা মহান আল্লাহর শানে আকদাসের হামলা করে। আপত্তি করার আর কোন স্থান অবশিষ্ট আছে? এসব বদ আকিদা এবং মাযহাব হতে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। আমিন!

ইমাম সাখাবী (رحمة الله) তাঁর অনবদ্য কিতাবআল-কাওলুল বদীএর মধ্যে একটি বর্ণনা এনেছেন। দেওবন্দীরা এটিও পেশ করেছে। তা হল-

হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন- 

إِنَّ لِلَّهِ- تَبَارَكَ وَتَعَالَى - مَلَكًا أَعْطَاهُ أَسْمَاعَ الْخَلَائِقِ فَهُوَ قَائِمٌ عَلَى قَبْرِي إِذَا مِتُّ، فَلَيْسَ أَحَدٌ يُصَلِّي عَلَيَّ صَلَاةً إِلَّا قَالَ: يَا مُحَمَّدُ، صَلَّى عَلَيْكَ فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ. قَالَ: فَيُصَلِّي الرَّبُّ- تَبَارَكَ وَتَعَالَى- عَلَى ذَلِكَ الرَّجُلِ بِكُلِّ وَاحِدَةٍ عَشْرًا

-“নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেশতাকে সমস্ত সৃষ্টি জগতের আওয়াজ  শুনার শক্তি দিয়েছেন। তিনি আমার রওজার পাশে দন্ডায়মান। আমার ইন্তেকালের পর কেউ যখন আমার উপর দরুদ শরীফ পাঠ করে, তখন ফেরেশতা আমাকে বলেন, হে রাসূল (ﷺ)! অমুকের পুত্র অমুক আপনার উপর দরুদ শরীফ পাঠ করেছে। তখন রাসূল (ﷺ) বলেন, যে আমার উপর একবার দরুদ শরীফ পাঠ করে, আল্লাহ তার উপর  দশবার রহমত অবর্তীণ করেন।” ➡ ১১২


টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ১১২. ইবনে হাজার আসকালানী, ইত্তিহাফুল খায়রাতুল মেহরাহ, ৬/৫০১ পৃ. হা/৬২৮৫, তিনি এটি ইমাম আবু শাইখ (رحمة الله)-এর সূত্রে সংকলন করেছেন। ইমাম সাখাভী, আল-কাউলুল বদী, পৃ. ১১৯, আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম জাওযিয়্যাহ, জালাউল আফহাম, ১০৭ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, ২৩/৩৪২ পৃ. হা/২৬১৮৪, ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১০/১৬২ পৃ. হা/১৭২৯২, 


এ হাদিসটির সনদের মান ‘হাসান। এমনকি আহলে হাদিস আলবানীও একে ‘হাসান’ বলেছেন। (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাসিস সহীহা, ৪/৪৪ পৃ. হা/১৫৩০) 

━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━


আহলে হাদিস মৌলভী ওয়াহিদুজ্জামানও তার কিতাবহাদীয়াতুল মাহদী১ম খন্ড ২৫ পৃষ্ঠার মধ্যে এ ধরনের একটি রেওয়াত এনেছেন।

এই হাদিসগুলো থেকে রাসূলে পাক (ﷺ) র শান শওকাত বুঝা যায়। কেননা দরুদ শরীফ পাঠ কারী দূরে হোক বা কাছে হোক আরবে হোক আজমে হোক, পূর্বে হোক আর পশ্চিমে হোক বরং পৃথিবীর যেখানেই হোক না কেনো? যে ফেরেশতা খাদেম এবং গোলাম হয়ে রাসূলে পাক (ﷺ) র দরোয়ান হয়ে দন্ডায়মান। তিনি তার আওয়াজ যথার্থ ভাবে শুনান। তিনি কেবল একজনের নয়। বরং সকলেরই আওয়াজ শুনেন। যে ফেরেশতা রাসূলে পাক (ﷺ)‘র দরবারে খাদেম হয়ে তার শ্রবণ শক্তির এই অবস্থা। তাহলে সে স্বত্তার শ্রবণ শক্তির অবস্থা কী হবে যিনি সমস্ত ফেরেশতা এবং সকল রাসূলগণের সর্দার! 

তাঁর শ্রবণ শক্তি নিশ্চয়ই তাঁর দরবারের খাদেমের শ্রবণ শক্তি থেকে অনেক বেশি হবে। কোন বিবেকবানই এ আকিদা গ্রহণ করবে না যে, রাসূলে পাক (ﷺ)’র গোলাম ফেরেশতা পুরো দুনিয়ার দরুদ পাঠকারীর দরুদ রওযা পাকের পাশে দাঁড়িয়ে শুনবেন আর স্বয়ং সে রওযা পাকে যিনি রয়েছেন তিনি শুনবেন না! 

এই বর্ণনা থেকে আরেকটি শান প্রকাশ পায় তা হল, ফেরেশতা প্রত্যেক দরুদ পাঠকারীর নাম এবং তার পিতার নাম জানেন। কেননা হাদীসের মধ্যে রয়েছে ফেরেশতা আরজ করেন, অমুকের পুত্র অমুক দরুদ পাঠ করেছেন। এটা প্রকাশ পায় যে, দরুদ পাঠ কারী দরুদ শরীফ পাঠ করার পূর্বে নিজের নাম এবং তার পিতার নাম বলেনি যে, আমি অমুকের পুত্র অমুক। এরপরেও ফেরেশতা মদিনা মুনাওয়াহা বসে প্রত্যেকের নাম এবং তার পিতার নাম জানেন। সুতরাং ফেরেশতার অবস্থা যখন এরূপ হল, সেই স্বত্তার শান কী হবে, ফেরেশতা যাঁর গোলাম? সেই আল্লাহর হাবীব তাঁর গোলাম এবং তাদের পিতার নাম কেনো জানবেন না, অবশ্যই রাসূলে পাক (ﷺ) তাঁর গোলামদের নাম জানেন। কবি বলেন-


بنده مٹ جاتے نہ آقا پہ وه بنده كيا ہے

بے خبر ہو جو غلاموں سے وه آقا كيا ہے

‘‘মুনিব-পালায়ন! এ কেমন অনুচর

ভৃত্যবার্তা রাখে না! সে কেমন ক্ষমতাধর!!

এজন্যই আল্লামা শাহ আব্দুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভী ➡১১৩  (رحمة الله) পবিত্র কুরআন মাজীদের আয়াত -

وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا

এর তাফসীরে বলেন-

-‘‘হুযুর করিম (ﷺ) নবুয়তের নূর দ্বারা দ্বীন ইসলামের মধ্যে প্রতিটি গোপন বিষয়ে খবর রাখেন। তিনি এটাও জানেন যে, আমার দ্বীনে সে কতটুকু পর্যন্ত পৌঁছেছে, তার ঈমানের প্রকৃতি কী, সে কোন পর্দায় রয়েছে, যে কারণে সে উন্নতি হতে বঞ্চিত হচ্ছে। সুতরাং রাসূল (ﷺ) উম্মতের পাপ, ইসলাম, নিফাক সম্পর্কে অবগত। এজন্যই দুনিয়া-আখেরাতে তাঁর পক্ষে গ্রহণীয় এবং এর উপর বিশ্বাস করা ওয়াজিব।’’ (শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলভী, তাফসিরে আযিযি, ৫১৮ পৃ.)

সুতরাং কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রতীয়মান হল দেওবন্দী এবং গাইরে মুকালিদ আহলে হাদিসরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত নয়।


টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ১১৩. ওহাবীদের ইমাম ইসমাঈল দেহলবী হযরত শাহ আব্দুল আজিজ দেহলবী (رحمة الله) সম্পর্কে নিম্মের কিতাবগুলো লেখেন ‘হেদায়তে মায়ার’ কুদওয়াতে আবরারে সিদ্ক ওয়াসফা, যুবদাহ আসহাবে ফানা-দানা, সায়্যিদুল উলামা, সায়্যিদুল আউলিয়া, হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, ওয়ারিছুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালিন, মারজা হার জলীল।

 
Top