দ্বিতীয় অধ্যায়

মীলাদ শরীফ প্রসঙ্গে আপত্তি ও জবাবসমূহ


বিরোধিতাকারীগণের উত্থাপিত আপত্তি সমূহ এবং এর জবাবসমূহ নিম্নে প্রদত্ত হলো। 


১ নং আপিত্ত: মাহফিলে মীলাদ হচ্ছে বিদ্আত। কেননা এটি হুযুর আলাইহিস সালামের যুগে, সাহাবার যুগে, বা তাবেয়ীদের যুগে হয়নি। প্রত্যেক বিদ্আতই হারাম। অতএব, মীলাদও হারাম। 


উত্তর: মীলাদ শরীফকে বিদ্আত বলাটা অজ্ঞতার পরিচায়ক। আমি প্রথম অধ্যায়ে উলে­খ কিেছ, মূল মীলাদ শরীফ আল্লাহর, নবীগণের, ফিরিশতাগণের, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামের, সাহাবায়ে কিরামের ও পূর্বসূরী পুণ্যাত্মা মনীষীদের সুন্নাত এবং সাধারণ মুসলমানগণের অনুসূত আমল। এর পরও বিদ্আত কিভাবে হতে পারে? আর যদি বিদ্আতই হয়ে থাকে, প্রত্যেক বিদ্আতই তো হারাম নয়। আমি বিদ্আতের আলোচনায় বর্ণনা করেছি যে, বিদ্আত ওয়াজিবও হতে পারে, মুস্তাহাব ও জায়েযও হতে পারে, আবার মাকরূহ ও হারামও হতে পারে। অধিকন্তু প্রথম অধ্যায়ে তাফসীরে রূহুল বয়ানের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছি যে, এ মাহফিলে মীলাদ হচ্ছে বিদ্আতে হাসানা ও মুস্তাহাব। হুযুর আলাইহিস সালাম প্রসংগে বর্ণনা কিভাবে হারাম হতে পারে? 



২ নং আপিত্ত: এ ধরনের মাহফিলে হারাম কাজ হয়ে থাকে। যেমন নারী-পুরুষের অবাধ মেলা মেশা, দাঁড়িবিহীন ব্যক্তি কর্তৃক না’ত পাঠে, ভুল রেওয়ায়েত বর্ণনা, মোট কথা, এ ধরনের মাহফিল হচ্ছে হারাম কাজের ডিপো। সুতরাং, এটা হারাম। 


আপত্তির নিষ্পত্তি: প্রথমত: এসব হারাম কাজ প্রত্যেক মীলাদ মাহফিলে হয় না। বরং অধিকাংশ মীলাদে এ রকম হয় না। মেয়েরা পর্দার আড়ালে পৃথক বসেন আর পুরুষেরাও পৃথক বসেন। মীলাদ পাঠকারী শরীয়তের অনুসারী হয়ে থাকেন এবং সহীহ রেওয়ায়েতও বর্ণনা করেন। বরঞ্চ, আমি নিজেই দেখেছি যে, মীলাদ পাঠকারী ও শ্রোতাগণ ওযু সহকারে বসেন এবং একটা ভাবগম্ভির পরিবেশ সৃষ্টি হয়; মাঝে মধ্যে চোখের পানিও দেখা যায়। এ ধরনের মাহফিলে হুযুর আলাইহিস সাল্লামের পবিত্র বর্ণনা হয়ে থাকে। 


لذت باده عشقش زمن مست مپرس

ذوق ايں مے نه شناسى بخدا تانه چشى


-‘‘আল্লাহর প্রেমের শরাবে কি স্বাদ তোমাকে আমি কিভাবে বুঝাবো? যতক্ষণ না এ শরাব পান করবে, ততক্ষণ কিছুই উপলব্দি করতে পারবে না।’’  


هاے كمبخت تونے چى هى نهيں


-‘‘হায়রে অভাগা! তুমিতো পান করতে পারলে না।’’


যদি কোন জায়গায় আপত্তিকারীর কথা অনুযায়ী ওই ধরনের হয়েও থাকে, তাহলে নিশ্চয় হারাম হবে। কিন্তু আসল মীলাদ শরীফ অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সাল্লামের পবিত্র বেলাদতের বর্ণনা হারাম হবে কেন? উরস বিষয়ক আলোচনায় আমি আরয করবো যে, হারাম বিষয়ের অনুপ্রবেশ ঘটলে কোন সুন্নাত বা বৈধ কাজ হারাম হয়ে যায় না। তা যদি না হয় সর্ব প্রথমে ধর্মীয় মাদ্রাসাসমূহ হারাম হয়ে যাবে। কেননা ওখানে প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্র দাঁড়িবিহীন শিশু ও যুবকের সাথে উঠা বসা করে, তাদের মধ্যে পরষ্পর সম্পর্ক গড়ে উঠে। কোন কোন সময় এর খারাপ পরিণতিও প্রকাশ পায়। ওখানে তিরমিযী, বুখারী, ইবনে মাজা ইত্যাদি কিতাব ও তাফসীর পড়ানো হয়। ওসবের সমস্ত রেওয়ায়েতই বিশুদ্ধ নয়, কোন কোন রেওয়ায়েত জঈফ (দুর্বল) এমনকি মওযুও (মনগড়া) হয়ে থাকে। কতেক ছাত্র এমনকি কতেক শিক্ষকও দাড়িঁমুন্ডানো থাকে। তাহলে কি এর জন্য মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়া হবে? কখনই নয়, বরং ওইসব হারাম কাজই প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হবে। বলূন, যদি দাঁড়িমুন্ডানো ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে, তাহলে কি রকম হবে? কুরআন শরীফ তিলাওয়াত কি বন্ধ করে দেয়া হবে? কখনই নয়, তাহলে দাঁড়িমুন্ডনো ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ করলে, কেন নিষেধ করবেন? 



৩ নং আপিত্ত: মাহ্ফিলে মীলাদের কারণে রাতে দেরীতে শোয়া হয়, ফলে ফজরের নামায কাযা হয়। তাই যেটার জন্য ফরয বাদ পড়ে, সেটা হারাম। অতএব, মীলাদও হারাম। 


উত্তর: মীলাদ শরীফ তো সব সময় রাতে হয় না। অনেক সময় দিনেও হয়ে থাকে। যেখানে রাতে হয়, সেখানেও বেশী রাত হয় না, ১১/১২ টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। যারা জামাত সহকারে নামায আদায় করেন, তাঁরা ফজরের নামাযের সময় ঠিকই জেগে যান। এর ভুরি ভুরি প্রমাণ রয়েছে। সুতরাং, এ ধরনের আপত্তি কেবল রসূল আলাইহিস সালামের শানমান বর্ণনা থেকে বাধা দেয়ার অজুহাত মাত্র। যদি কোন সময় মীলাদ শরীফ দেরিতে শেষ হলো এবং এর কারণে নামাযের সময় চোখ খুলতে পারলো না, তাহলে কি এর জন্য মীলাদ শরীফ হারাম হয়ে গেল? ধর্মীয় মাদ্রাসার বার্ষিক সভা ও অন্যান্য ধর্মীয় ও জাতীয় সভা অনেক রাত পর্যন্ত হয়ে থাকে। অনেক জায়গায় বিবাহের অনুষ্টানও শেষ রাত হয়, মাঝে মধ্যে রাতের বেলা ভ্রমণ করতে হয়, তাতে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে হয়। তাহলে এখন বলুন, এসব সভা, বিবাহ অনুষ্টান, রেলে ভ্রমণ হালাল, না হারাম? যখন এসব কিছু হালাল, তাহলে মাহফিলে মীলাদ পাক কেন হারাম হবে? অন্যথায় এ পার্থক্যের কারণ বর্ণনা করা প্রয়োজন। 


৪ নং আপত্তি: আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) ফাত্ওয়ায়ে শামীর দ্বিতীয় খন্ডে কিতাবুস সওমের نذر اموات শীর্ষক আলোচনায় বলেছেন যে, মীলাদ শরীফ হচ্ছে নিকৃষ্ট জিনিস। অনুরূপ তাফ্সীরাতে আহ্মদীয়া শরীফে মীলাদ মাহফিলকে হারাম বলা হয়েছে এবং একে যারা হালাল মনে করে, তাদেরকে কাফির বলা হয়েছে। এ থেকে বোঝা গেল মীলাদ শরীফ খুবই খারাপ জিনিস। 


উত্তর: আল্লামা শামী (رحمة الله) মীলাদ শরীফকে হারাম বলেননি বরং যে মাহফিলে গান-বাজনা ও খেল-তামাশা হয় এবং মানুষ একে মীলাদ বলে আখ্যায়িত করে ও ছওয়াবের কাজ মনে করে, তাকেই নিষেধ করেছন- যেমন সেই একই পরিচ্ছেদে তিনি বলেন- 


وَأَقْبَحُ مِنْهُ النَّذْرُ بِقِرَاءَةِ الْمَوْلِدِ فِي الْمَنَابِرِ وَمَعَ اشْتِمَالِهِ عَلَى الْغِنَاءِ وَاللَّعِبِ وَإِيهَابِ ثَوَابِ ذَلِكَ إلَى حَضْرَةِ الْمُصْطَفَى - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ


-‘‘মিনারসমূহে মীলাদ পড়ার মানত করা এর থেকেও নিকৃষ্ট। কেননা ওই ধরনের মাহফিলে গান-বাজনা ও খেল-তামাশা হয়ে থাকে এবং এর ছওয়াব হুযুর আলাইহিস সালামকে বখশিশ করা হয়।’’

(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ২/৪৪০ পৃ.) 


অনুরূপ, তাফ্সীরাতে আহ্মদীয়ায় এ ধরনের গানের মজলিসকে নিষেধ করা হয়েছে, যেখানে খেল-তামাশা, এমনকি শরাব পানও হয়ে থাকে এবং সাধারণ লোক একে সেমার অনুষ্টান অখ্যায়িত করে ছওয়াবের কাজ মনে করে। তাফ্সীরাতে আহ্মদীয়ায় এসব নিন্দনীয় কজের ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছে। যেমন- উক্ত তাফসীরে সূরা লুকমানের ৬ নং আয়াতের وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ ব্যাখ্যা দেখুন। আমিও শুরুতে উলে­খ করেছি যে মীলাদ মাহফিলে যেন খেল-তামাশা জাতীয় কিছু না হয়। আমি করাচিতে নিজেই দেখেছি, কোন কোন জায়গায় বাদ্যযন্ত্র সহকারে না’ত পাঠ করে এবং একে মীলাদ শরীফ বলে আখ্যায়িত করে। এক সময় বদায়ুন জেলার সাহসওয়ানের কাছে কোন এক গ্রামের জনৈক ব্যক্তি তার পিতার ফাতিহা দেয়। সে কুরআন তিলওয়াতের পরিবর্তে গ্রামোফোনে সূরা ইয়অসিনের রেকর্ড বাজিয়ে এর ছওয়াব বাপের রূহের প্রতি বকশিশ করে দেয়। এ ধরনের বেহুদা ও হারাম কাজকে কে জায়েয বলে? সম্ভবতঃ তাঁদের যুগে এর রকম খেল-তামাশা ও বাজে অনুষ্টান হত। তাঁরা এগুলোকে নিষেধ করেছেন। যদি বিনা শর্তে মীলাদ শরীফকে জায়েয মনে করাটা কুফরী হয়, তাহলে হাজী ইমদাদুল্লাহ সাহেবও (যিনি তাঁদের পীর ও মুর্শিদ) এর মধ্যে গণ্য হয়ে যায়। 


৫ নং আপত্তি: না’ত পাঠ করা উত্তম ইবাদত। সমগ্র কুরআন শরীফ হুযুর আলাইহিস সালামের না’ত। (আমার রচিত ‘শানে হাবীবুর রহমান’ কিতাবে এর বিশ্লেষণ দেখুন।) বিগত নবীগণ হুযুর আলাইহিস সালামের না’ত পাঠ করেছেন। সাহাবায়ে কিরাম এবং সমস্ত মুসলমান না’ত শরীফকে মুস্তাহাব মনে করে থাকেন। স্বয়ং হুযুর আলাইহিস সালাম নিজেই না’ত শরীফকে মুস্তাহাব মনে করে থাকেন। স্বয়ং হুযুর আলাইহিস সালাম নিজেই না’ত শুনেছেন এবং না’ত পাঠকারীদেরকে দু’আ করেছন। হযরত হাসসান (رضي الله عنه) হুযুর আলাইহিস সালামের প্রশংসা এবং কাফিরদের প্রতি তিরষ্কার সূচক কবিতা রচনা করে হুযুর আলাইহিস সালামের খেদমতে পেশ করতেন। হুযুর আলাইহিস সালাম তাঁর জন্য মসজিদে মিম্বর (আসন) বিছিয়ে দিতেন। 


❏ হযরত হাসসান এর উপর- 


اللَّهمَّ أيِّدْه بروحِ الْقُدس


-‘‘হে আল্লাহ হাসসানকে রুহুল কুদ্দুস দ্বারা সাহায্য করুন।’’ ৫৬

➥〈 খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ৩/১৩৫১ পৃঃ  হা/৪৭৮৯, শে’র بَاب الْبَيَان وَالشعر অধ্যায়, বুখারী মুসলিমের সূত্রে দেখুন। 〉


 এ হাদীস থেকে এটি বোঝা গেল যে, না’ত বলা বা পাঠ করা এমন উচ্চ ইবদত যে, এর কারনে হযরত হাসসান (رضي الله عنه) কে মজলিসে মুস্তফার (ﷺ) মিম্বর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হযরত আবু তালিব না’ত লিখেছেন। কসীদা বুর্দার শরাহ ‘খরফূতী’ গ্রন্থে উলে­খিত আছে –কসীদায়ে বুর্দার লিখকের অর্ধাঙ্গ রোগ হয়েছিল। কোন চিকিৎসায় উপকার হচ্ছিল না। অবশেষে তিনি কসীদায়ে বুর্দা রচনা করেন। রাতে স্বপ্নের মধ্যে তিনি হুযুর আলাইহিস সালামের খিদমতে দাড়িঁয়ে শোনালেন। এতে তিনি আরোগ্যও লাভ করলেন এবং  চাদে মুবারকও পুরষ্কার পেলেন। এতে বোঝা গেল না’ত শরীফ দ্বারা দ্বীন-দুনিয়অ উভয় জাহানে পুরষ্কার পাওয়া যায়। আল্লামা জামী (رحمة الله), ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) হুযুরে গাউছে পাক (رحمة الله) মোট কথা সমস্ত ওলী ও আলিমগণ না’ত রচনা ও পাঠ করেছেন। উপরোক্ত মনীষীদের না’ত ও কসীদা সুপ্রসিদ্ধ। হাদীছ ও ফিক্হ গ্রন্থে গান-বাজনারই ক্ষতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে, না’তের নয়। যেসব গানে চরিত্র বিনষ্টকারী বক্তব্য রয়েছে-মেয়েলোকেরা ও শরাবের প্রশংসা করা হয়, বাস্তবিকই সে ধরনের গান নাজায়েয। এর পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতের ما يقال بعد التكبير অধ্যায়ে এবং الشعر অধ্যায়ে দেখুন। 


ফিক্হ শাস্ত্রবিদগণ কাব্যলঙ্কার সমূহ কবিতা শিখানো ফরযে কিফায়া বলেছেন যদিও বা এর বিষয়বস্তু দুষণীয় হয়। কেননা, এসব কবিতার শব্দ থেকে জ্ঞান লাভ করা যায়। এজন্যই দেওয়ানে মুতনবী ও এ জাতীয় অন্যান্য কাব্য গ্রন্থ ধর্মীয় মাদ্রাসার সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত। অথচ এগুলোর বিষয়বস্তু খুবই নোংরা। তাহলে না’ত শিখা, মুখস্থ করা ও পাঠ করা এবং যার বিষয়বস্তও উন্নতমানের ও পবিত্র শব্দ ভান্ডারে ভরপুর, কিভাবে নাজায়েয হতে পারে? 


❏ ফত্ওয়ায়ে শামীর ভূমিকায় الشعر শীর্ষক আলোচনায় উলি­খিত আছে- 


وَمَعْرِفَةُ شِعْرِهِمْ رِوَايَةً وَدِرَايَةً عِنْدَ فُقَهَاءِ الْإِسْلَامِ فَرْضُ كِفَايَةٍ؛ لِأَنَّهُ بِهِ تَثْبُتُ قَوَاعِدُ الْعَرَبِيَّةِ الَّتِي بِهَا يُعْلَمُ الْكِتَابُ وَالسُّنَّةُ الْمُتَوَقِّفُ عَلَى مَعْرِفَتِهِمَا الْأَحْكَامُ الَّتِي يَتَمَيَّزُ بِهَا الْحَلَالُ مِنْ الْحَرَامِ. وَكَلَامُهُمْ وَإِنْ جَازَ فِيهِ الْخَطَأُ فِي الْمَعَانِي فَلَا يَجُوزُ فِيهِ الْخَطَأُ فِي الْأَلْفَاظِ


-‘‘জাহেলিয়াত যুগের কবিদের কবিতা শিখা, বোঝা ও বর্ণনা করা উসলামী ফকীহগণের মতে ফরযে কিফায়া। কেননা, এর দ্বারা আরবী নিয়ম-কানুন প্রমাণ করা যায় এবং ওদের কাব্যে যদিও অর্থগত ভুল থাকা সম্ভব কিন্তু শব্দগত ভুল হয় না।’’ 

(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ১/৪৬ পৃ.)  


‘উরস’ শীর্ষক আলোচনায় ‘কাউয়ালী’ পরিচেছদে গানের পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ করা হবে, ইনশাআল্লাহ। 

শিরনী বিতরণ খুব ভাল কাজ। আনন্দের সময় খানা-খাওয়ানো, মিষ্টি বিতরণ করা হাদীচ দ্বারা প্রমাণিত আছে। আকীকা, ওলীমা ইত্যাদিতে খানার দাওয়াত করা সুন্নাত কেন জানেন? এজন্যে যে, এটা আনন্দের সময়। ঠিক বিবাহের সময় খুরমা বিতরণ এমনকি ছিটিয়ে দেয়া সুন্নাত। মাহবুবে পাকের আলোচনা সভায় মুসলমানগণ আনন্দ প্রকাশার্থে দাওয়াত করেন, দান-খয়রাত করেন এবং র্শিনী বিতরণ করেন। এ রকম উস্তাদগণের একটা নিয়ম আছে যে দ্বীনি কিতাব শুরু ও শেষ করার সময় ছাত্রের দ্বারা র্শিনী বিতরণ করানো হয়। আমি আলীগড় জিলার মিন্ডাতে কিছুদিন লেখাপড়া করেছি। ওখানে দেওবন্দীদের মাদ্রাসা ছিল। সেখানে কিতাব শুরু করার সময় র্শিনী বন্টন করা হতো। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার প্রারম্ভে এবং শেষান্তে র্শিনী বিতরণ ভূতপূর্ব নেকবান্দাগণের সুন্নাত। মীলাদ মাহফিলও গুরুত্বর্পূণ ধর্মীয় অনুষ্টাত হেতু এর প্রারম্ভে প্রতিবেশী, মীলাদ পাঠকারী ও মেহমানগণকে খানা খাওয়ানো এবং পরে উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে র্শিনী বিতরণ ঐটার পর্যায়ভুক্ত। এ র্শিনী বিতরণের মূল কুরআন হাদীছে পাওয়া যায়। যেমন 


❏ সূরা মুজাদিলার ১২ নং আয়াতে কুরআন ইরশাদ ফরমান-


يا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نَاجَيْتُمُ الرَّسُولَ فَقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيْ نَجْوَاكُمْ صَدَقَةً ذَلِكَ خَيْرٌ لَكُمْ وَأَطْهَرُ


-‘‘হে ঈমানদ্বারগণ, যখন তোমরা রসূলের কাছে কিছু আরয করতে চাও, তাহলে এর আগে কিছু হাদিয়া দিয়া দাও। এটি তোমাদের জন্য ভাল ও অনেক পবিত্র।’’ 


এ আয়াত থেকে প্রমাণ মিলে ইসলামের প্রাথমিক যুগে ধনীদের উপর এটি জরুরী ছিল যে হুযুর আলাইহিস সালাম থেকে কোন জরুরী পরার্মম নিতে চাইলে প্রথমে যেন কিছু হাদিয়া পেশ করেন। যেমন হযরত আলী (رضي الله عنه) এক দিনার হাদিয়া দিয়ে হুযুর আলাইহিস সালাম থেকে দশটি মাসায়েল জিজ্ঞাসা করেছিলেন। অবশ্য পরে এর বাধ্যবাধকতা রহিত হয়ে গেছে (তাফসীরে খাযায়েনুল ইরফান, খাযেন ও মাদারেকে দেখুন।) তবে যদিওবা বাধ্যবাধকতা রহিত হয়ে গেছে, কিন্তু মুবাহ ও মুস্তাহাব হিসেবে এখনও বলবৎ রয়েছে। এর থেকে বোঝা গেল যে, আল্লাহর ওলীদের মাযারে র্শিনী নিয়ে যাওয়া, মুর্শিদ ও নেকবান্দাদের সমীপে কিছু পেশ করা মুস্তাহাব। অনুরূপ, হাদীছ কুরআন ও দ্বীনি কিতাববাদি শুরু করার সময় সাদ্কা করা ভাল। মীলাদ শরীফ পাঠের প্রারম্ভেও কিছু দান করা পুণ্যের কাজ। কেননা এসবই আসলে হুযুর আলাইহিস সালামের সাথে কথা বলার মত। 


❏ তাফসীরে ফতহুল আযীযের ৮৬ পৃষ্ঠায় শাহ আবদুল আযীয সাহেব একটি হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন-


وبيهقى در شعب الايمان از ابن عمر روايت كرده كه عمر ابن الخطاب سوره بقرا باحقائق آں در مدت دوازده سال خودانده فارغ شد دردزے ختم شترى راكه كشته طعام وافر چخته ياران حضرت پيغمبر را خودا نيد-


-‘‘ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) শুয়াবুল ঈমান কিতাবে হযরত ইবনে উমর থেকে রেওয়ায়েত করেছেন যে, হযরত ফারুক (رضي الله عنه) বারো বছর সূরা বাকারা ভাবার্থ সহকারে পড়েছেন। যেদিন সমাপ্ত করলেন, সেদিন একটি উট যবেহ করে অনেক খানার ব্যবস্থা করে সাহাবায়ে কিরামকে খাইয়েছেন।’’ অতএব গুরুত্বর্পূণ ভাল কাজ সমাধা করার পর র্শিনী বিতরণ ও খানা পরিবেশন প্রমাণিত হলো। মীলাদে পাকও নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বুযুর্গানে দ্বীন বলেন, যে কোন নিকট আত্মীয়ের কাছে যেতে হলে খালি হাতে যেওনা, কিছু নিয়ে যেও- تَهَادَوْا تَحَابُّوا -‘‘একে অপরকে হাদিয়া দিন, এতে মুহাব্বত বৃদ্ধি পাবে।’’

(ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৭/১৯০ পৃ. হা/৭২৪০ হযরদ আয়েশা (رضي الله عنه) এর সূত্রে, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৬/২৮০ পৃ. হা/১১৯৪৬ তিনি হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সূত্রে) 


ফকীহগণ বলেন যখন দেয়ারে মাহবুব অর্থাৎ মদীনা পাকে যাবেন, তখন ওখানকার গরীবদেরকে দান করবেন। কেননা তারা রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতিবেশী। আল্লাহর দরবারেও প্রথম প্রশ্ন হবে আমার জন্য কি হাদিয়া এনেছ? 


حق بفر مايد چه آوردى مرا- اندراں مهلت كه من دادم ترا


-‘‘আমি তোমাকে পৃথিবীতে কিছূ সময় দিয়েছিলাম, আমার জন্য কি এনেছ?’’


❏ এ ধরনের শিরনী বিতরণ কোন অপব্যয় নয়। জনৈক ব্যক্তি সৈয়্যদেনা ইবনে উমর (رضي الله عنه) কে বললেন


لاخير فى السرف


-‘‘অপব্যয়ে কোন লাভ নেই।’’ তিনি এ প্রসংগে সংগে উত্তর দিলেন-


لاسرف فى الخير


-‘‘ভাল কাজে খরচ করলে তা অপব্যয় নয়।’’



৬নং আপত্তি: মীলাদ মাহফিলে একে অপরকে আহবান করা হারাম। দেখুন, লোকদেরকে ডেকে নফল নামাযের জামাত পড়াও নিষেধ। তাহলে কি মীলাদ এর থেকেও বড়? (বারাহিন) 


উত্তর: ওয়াজ মাহফিল, ওলিমার দাওয়াত, বিবাহ ও আকীকা ইত্যাদি অনুষ্টানে জনগণকে ডাকা হয়। বলুন, এসব কাজ হারাম হবে, না কি হালাল থাকেব? যদি বলেন বিবাহ ও ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদি ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় বিষয়হেতু এসবের জন্য জমায়েত হালাল, তাহলে জনাব রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর তাযীম অতি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ের অর্ন্তভুক্তহেতু এর জন্যও জমায়েত হওয়া হালাল। নামাযের সাথে অন্যান্য বিষয়ের অনুমান করা বড় বোকামী। যদি কেউ বলে যে নামায যেহেতু ওযু ছাড়া নিষেধ সেহেতু কুরআন তিলাওয়াতও ওযু ছাড়া নিষেধ হওয়া দরকার, সে বোকা। কেননা এটা অসামাঞ্জ্য অনুমান। 



৭নং আপত্তি: কারো স্মৃতি অনুষ্টান করা এবং এর জন্য দিন তারিখ নির্ধারণ করা র্শিক। মীলাদ শরীফে এ দুটি পাওয়া যায়। সুতরাং এ-ও র্শিক। 


উত্তরঃ আনন্দঘন বিষয়ের স্বরণীয় অনুষ্টান করা সুন্নাত এবং এর জন্য দিন তারিখ নির্ধারণ করাটা উত্তম। একে র্শিকত বলাটা শেষ সীমার বোকামী ও ধর্মহীনতার নামান্তর। 


❏ আল্লাহ তায়া’লা হযরত মুসা (عليه السلام) কে হুকুম দিলেন-


وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللَّهِ


-‘‘বণী ইসরাইলকে সে দিনের কথাও স্বরণ করিয়ে দাও।’’

(সূরা ইবরাহিম, আয়াত, ৫) 


অর্থাৎ যখন আল্লাহ তা’য়ালা তাদের প্রতি নিয়ামত সমূহ অবতীর্ণ করেছিলেন-যেমন: ফিরাউনের নিমজ্জন, মান্না-সালওয়ার অবতরণ ইত্যাদি (খাযায়েনুল ইরফান।) এর থেকে বোঝা গেল, যে সব দিন যখন আল্লাহ তা’আলা স্বীয় বান্দাদেরকে নিয়ামত দান করেছেন, একে স্বরণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 


❏ মিশকাত শরীফ কিতাবুস সাওম صوم التطوع অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে উলে­খিত আছে- 


عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ، قَالَ: هُوَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ


-‘‘হুযুর আলাইহিস সালামকে সোমবারের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তখন তিনি ইরশাদ ফরমান, ওইদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং ওই দিন আমার উপর ওহী নাযিলের সূচনা হয়েছিল।’’  ৫৭

➥〈 সহীহ মুসলিম, ২/৮১৯ পৃঃ  হা/১১৬২, ইমাম  বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৪/২৮৬ পৃঃ  হা/৩৮১৮২, নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, হা/২৭৭৭, মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, ৪/২৯২ পৃঃ  হা/৭৮৬৫ 〉


প্রমাণিত হলো যে সোমবারের রোযা এ জন্যই সুন্নাত, যেহেতু এ তিনই হুযুর আলাইহিস সালামের জন্মদিন। এর থেকে তিনটা বিষয় জানা গেল- স্মৃতিচারণ করা, এর জন্য দিন তারিখ নির্ধারণ করা এবং হুযুর আলাইহিস সালামের পবিত্র জন্মের খুশি উদ্যাপনার্থে ইবাদত করা সুন্নাত। ইবাদত শারীরিক হতে পারে, যেমন-রোযা, নফল নামায ইত্যাদি বা আর্থিকও হতে পারে, যেমন-সাদাকা, দান খয়রাত, র্শিনী বিতরণ ইত্যাদি। মিশকাত শরীফের একই অধ্যায়ের তৃতীয় পরিচ্ছেদে আছে যে, যখন হুযুর আলাইহিস সালাম মদীনা শরীফে তশরীফ আনলেন, তখন ওখানে ইহুদীদেরকে আশুরার দিন রোযা রাথকে দেখলেন। এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা আরয করলেন এদিন হযরদ মুসা (عليه السلام) কে আল্লাহ তা’আলা ফিরআউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন; আমরা এর শুকরিয়া স্বরূপ রোখা রাখি। তখন হুযুর আলাইহিস সালাম ফরমালেন-


فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ


-‘‘আমরা তোমাদের থেকে মুসা (عليه السلام) এর বেশী হকদার ও নিকটতর।’’ 


فَصَامَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَرَ بصيامه


-‘‘অতঃপর তিনি (ﷺ) নিজে রোযা রাখলেন এবং লোকদেরকে আশুরার রোযার নির্দেশ দিলেন।’’  ৫৮

➥〈 খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৬৩৮ পৃঃ  হা/২০৬৭, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, হা/১১৩০ 〉


উলে­খ্য যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ রোযা আত্যাবশ্যক ছিল। এখন অত্যাবশ্যকতা রহিত হয়ে গেছে কিন্তু মুস্তাহাব হিসেবে তা স্থিত আছে। মিশকাত শরীফের একই অধ্যায়ে আরোও আছে যে, আশুরার রোযা প্রসংগে কেউ হুযুর আলাইহিস সালামের সমীপে আওয বরলেন যে, এতে ইহুদীদের সাদৃশ্য রয়েছে। তখন তিনি (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, ঠিক আছে, বেঁচে থাকলে আগামী বছর দু’টি রোযা রাখবো অর্থাৎ বর্জন করেননি বরং বৃদ্ধি করে ওদের সাদৃশ্য থেকে রক্ষা পেলেন। আমি ‘শানে হাবীবুর রহমান’ কিতাবে বিভিন্ন কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছি যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের রাকাআত বিভিন্ন কেন অর্থাৎ ফজরের দুই, মাগরিবে তিন, আসরে চার রাকাআত কেন? ওখানে উত্তর দেয়া হয়েছে যে এ নামায সমূহ হচ্ছে বিগত নবীগণের স্মৃতি। যেমন হযরত আদম (عليه السلام) পৃথিবীতে এসে রাত দেখে মনঃক্ষুন্ন হয়েছিলেন। ভোর বেলায় দু’রাকাত শুকরিয়া নামায আদায় করলেন; হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) স্বীয় সন্তান হযরত ইসমাঈল (عليه السلام) এর ফিদ্য়া হিসেবে দুম্বা লাভ করলেন; প্রাণপ্রিয় সন্তানের প্রাণ বেঁচে গেল এবং কুরবনীও মঞ্জুর হলো। তখন তিনি চার রাকআত শুকরিয়া নামায আদায় করলেন। তা’যুহর হিসেবে ঠিক হলো। অন্যান্য গুলোও এভাবে ঠিক হয়েছে। বোঝা গেল যে নামাযের রাকাআতও অন্যান্য নবীগণের স্মৃতি বহন করে। পবিত্র হজ্জ্ব প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত হযরত হাজেরা, ইসমাঈল ও হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)-এর স্মৃতিরূপে বিদ্যমান। এখান ওখানে না পানির অভাবে আছে, না কুরবানীর ব্যাপারে শয়তানের পক্ষে কোন বাধা আছে। তবুও সাফা-মারওয়ার মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করা, মিনাতে পাথর নিক্ষেপ আগের মত যথারীতি বলবৎ রয়েছে। এসব কেবল স্মৃতি রক্ষার জন্য। এর সুক্ষ্ম আলোচনা ‘শানে হাবীবুর রহমান’ কিতাবে দেখুন। 


মাহে রমাযান বিশেষ করে শবে কদর এ জন্যই আফযল, যেহেতু কুরআন করীম নাযিল হয়েছে। 


❏ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান-


شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ


-‘‘রমযান মাস, যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।’’ 

(সূরা বাক্বারা, আয়াত, ১৮৫) 


❏ আরও ইরশাদ ফরমান-


إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ


-‘‘নিশ্চয় আমি এটি (কুরআন) পবিত্র কদর রাত্রে অবর্তীণ করেছি।’’ 

(সূরা কদর, ১) 


যখন কুরআন অবর্তীণের কারণে এ মাস ও রাত কিয়ামত পর্যন্ত উচ্চ মর্যাদাশীল হয়ে গেল, তাহলে সাহেবে কুরআন (ﷺ) এর পবিত্র বেলাদতের কারণে কিয়ামত পর্যন্ত রবিউল আউয়াল মাস এবং এর ১২ তারিখ কেন উচ্চ মর্যাদাশীল ও আফযল হবে না? হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামের কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। বোঝা গেল যে, যে দিন বা তারিখ আল্লাহর প্রিয় বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত নাযিল হয়, সেই দিন ও তারিখ কিয়ামত পর্যন্ত রহমতের দিন হয়ে যায়। দেখুন জুমআর দিন এ জন্যই আফযল যেহেতু এ দিনে আম্বিয়া কিরামের প্রতি খোদায়ী অবদান রেখেছেন- যেমন, হযরত নূহ (عليه السلام) ফিরাউন থেকে নাজাত লাভ এবং আগামীতে কিয়ামতও হবে জুমআর দিন। তাই জুমআবার সর্বশ্রেষ্ট দিন হিসেবে গণ্য। 


আবার এর বিপরীত অর্থাৎ যেসব জায়গায় ও যেসব তারিখে বিভিন্ন কাউমের প্রতি খোদায়ী গযব নাযিল হয়েছে, এর থেকে সজাগ থাকুন। মঙ্গলবার রক্তমোক্ষণ করো না, কেননা, এটা খূন খারাবীর দিন। এ দিনেই হাবিল খুন হয়েছিল। এ দিনই হযরত হাওয়া (عليه السلام)-এর ঋতুস্রাব শুরু হয়েছিল। দেখুন উলে­খিত দিন সমূহে এসব ঘটনা কোন সময়ে মাত্র একবার সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু সেসব ঘটনার কারণে উলে­খিত দিন সমূহ চিরদিনের জন্য মর্যাদাবান বা মর্যাদাহীন হয়ে গেল। 


প্রতীয়মান হলো যে, বুযুর্গানে কিরামের আনন্দঘন মুহুর্ত ও ইবাদতের স্মৃতিচারণও ইবাদত। এখনও বিরোধিতাকারীগণ নিজেরাই ঈসমাইল শহীদ দিবস ও মৌলানা কাসেম দিবস পালন করে থাকে। যদি কোন দিন তারিখ নির্ধারণ করা র্শিক হয়ে যায়, তাহলে দেওবন্দ মাদ্রাসার পরীক্ষার তারিথ, ছুটির চজন্য রমযান মাস, দস্তারবন্দীর জন্য ওলীমা ও আকীকার জন্য তারিখ ঠিক করা র্শিক হবে। জোশের বশবর্তী হয়ে মীলাদ শরীফকে র্শিক বলে নিজ ঘরে আগুন লাগাবেন না। এসব তারিখ সমূহ কেবল অভ্যাস হিসেবে করা হয়। একথা কেউ মনে করে না যে ওই নির্ধারিত তারিখ ব্যতীত অন্য তারিখে মীলাদ মাহফিল জায়েয নয়। এ জন্য আমাদের উত্তর প্রদেশে প্রত্যেক বিপদাপদের সময় এবং কারো উন্তিকালের পরে মীলাদ শরীফের আয়োজন করা হয়। কাথিয়া ওর্য়াড নামক স্থানে ঠিক বিবাহের দিন, কুলখানি, দশম ও চালি­শার দিন মীলাদ মাহফিল করা হয়। আবার রবিউল আউয়াল মাসে সারা মাসব্যাপী মীলাদ শরীফ হয়ে থাকে। দেওবন্দ ব্যতীত প্রত্যেক জায়গায় নিয়শ হচ্ছে এরূপ। এমনকি এটা শোনা যায় যে দেওবন্দের সাধারণ বাসিন্দারাও নিয়মিত মীলাদ শরীফ করে থাকেন। 


স্বরণ রাখা দরকার যে দিন বা স্থান নির্ধারনকরণ কয়েকটি কারনে নিষেধ। প্রথমতঃ ঐদিন বা জায়গা কোন মূর্তির সাথে সম্পর্কিত হলে, যেমন হোলী ও দেওয়ালীর দিন এবং এর সম্মানার্থে খানাপিনার ব্যবস্থা করা বা মন্দিরে গিয়ে কিছু দান-দক্ষিনা করা। এ জন্য মিশকাত শরীফের সাওম অধ্যায়ে উলে­খিত আছে কেউ বয়ানাতে উট যবেহ করার মানত করলো। তখন হুযুর আলাইহিস সালাম ইরশাদ ফরমালেন-ওখানে কি কোন মূর্তি বা কাফিরদের মেলা ছিল? আরয করলেন, না। ইরশাদ ফরমালেন, যাও, নিজের মানত পূর্ণ কর। অথবা এ ধরনের নির্ধারণের দ্বারা যদি কাফিরদের সাদৃশ্য বোঝায় বা এ নির্ধারণকে অত্যাবশ্যক মনে করে। এ জন্যে মিশকাত শরীফের صوم النفل অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে শুধু জুমআবার রোযা রাখা নিষেধ ফরমায়েছেন। কেননা এতে ইহুদীদের সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে। বা একে আবশ্যক মনে করাটা নিষেধ বা জুমআবার হচ্ছে ঈদের দিন। একে রোযার দিন হিসেবে পরিণত করো না।


এসব আপত্তি সমূহ থেকে বোঝা গেল যে, নিষেধকারীদের কাছে হারাম সাব্যস্ত করার কোন দলীল মওজুত নেই। এ হচ্ছে এক প্রকার মানসিক বিকার। এজন্য নিছক মনগড়া অনুমানের দ্বারা হারাম বলে। কিন্তু স্বরণ থাকে যেন-


مٹ گئے مٹتے  هيں مٹ جائنگے اعداتيرے

نه مٹاهے نه مٹے گا كبهى چرچا تيرا


-‘‘হে মাহবুব (ﷺ)! আপনার শত্ররা ধ্বংস হয়ে গেছে, হয়ে যাচ্ছে ও হয়ে যাবে। কিন্তু আপনার মীলাদ মাহফিল বন্ধ হয়নি, বন্ধ হবেও না।’’

 
Top