নবীজির পবিত্র পস্রাব, পায়খানা ও রক্ত মুবারকঃ 


প্রিয় নবী (ﷺ) এর পস্রাব, পায়খানা ও রক্ত মুবারক পাক পবিত্র ছিল আর এটা এমন এক বৈশিষ্ট্য যা শুধু নবীজিকেই দান করা হয়েছে। 

আল্লামা কাসতুলানী (رحمة الله) তদীয় ‘মাওয়াহেবুল লাদুনিয়া’ তে একখানা হাদীস উল্লেখ করেন-

عَنْ اُمِّ اَيْمَنْ قَالَتْ قَامَ رَسُوْلُ الله صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ مِنَ اللَّيْلِ اِلَي فَخَّارَةِ فِي جَانِبِ الْبَيْتِ فَبَالَ فِيْهَا فَقُمْتُ مِنَ اللَّيْلِ وَاَنَا عَطْشَانَةُ فَشَرِبْتُ مَا فِيْهَا وَاَنَا لَا اَشْعُرُ فَلَمَّا اَصْبَحَ النَّبِيِّ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ قَالَ يَا اُمِّ اَيْمَنْ قَوْمِي فَاَهْرِيْقِيْ مَا فِي تِلْكَ الْفَخَّارَةِ فَقُلْتُ قَدْ وَاللهِ شَرِبْتُ مَا فِيْهَا قَالَتْ فَضَحِكَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ حَتَّي بَدَتْ ثُمَّ قَالَ اَمَا وَاللهِ لَا يُصِيْبُ بَطْنُكِ اَبَدًا

অর্থাৎ- “হযরত উম্মে আয়মান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এক রাত্রিতে ঘুম থেকে উঠে ঘরের পার্শে একটি মাটির পাত্রে প্রস্রাব মুবারক করলেন। আমি রাত্রে ঘুম থেকে উঠে খুব তৃষ্ণার্তবোধ করলাম। অতৎপর মাটির পাত্রে যা ছিল তা পান করে নিলাম। পাত্রে কী ছিল তা আমি মোটেই অবগত নই। তারপর সকালে নবী করি (ﷺ) আমাকে সম্বোধন করে বললেন হে উম্মে আয়মান! ঘুম থেকে উঠো আর মাটির পাত্রে যা আছে তা ফেলে দাও। অতঃপর আমি বললাম নিশ্চয় আল্লাহর কসম মাটির পাত্রে যা কিছু ছিল তা আমি পান করে ফেলেছি। তিনি বললেন (উম্মে আয়মান) তৎক্ষনাৎ আল্লাহর হাবীব (ﷺ) হেসে দিলেন এমনকি তাঁর প্রান্তসীমার দাঁত মুবারক প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর আল্লাহর হাবীব বললেন- আল্লাহর কসম তোমার পেটে কখনও পীড়া হবে না।” 


কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, “এক ব্যক্তি হুজুর (ﷺ) এর পেশাব মুবারক পান করেছিলেন। এর ফলে তার সমস্ত শরীর থেকে সারা জীবন সুঘ্রাণ ছড়াতে থাকতো। এমন কি তার বংশধরদের ভিতরেও কয়েক পুরুষ পর্যন্ত উক্ত সুঘ্রাণ পাওয়া যেতো।” (মাদারেজুন নবুওয়াত)


আল্লামা কাজী আয়াত (رحمة الله) তদীয় শিফা শরীফে উল্লেখ করেন- 

“অনেক বিজ্ঞ হাদীস বিশারদ উলামায়ে কেরাম, রাসুলে আকরাম (ﷺ) এর হাদীস শরীফ ও শামাঈল শরীফ বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর হাবীবের শান ছিল এই, যখন তিনি পায়খানা মুবারক করার ইচ্ছা করতেন, তখন মাটি বিদীর্ণ হয়ে যেতো এবং পায়খানা মুবারক ও প্রস্রাব মুবারক গিলে ফেলতো এবং সে স্থান উৎকৃষ্ট ও পবিত্র সুঘ্রাণে মুখরিত হয়ে যেতো।”


প্রিয় নবী (ﷺ) এর রক্ত মুবারক ছিলো পবিত্র ও বরকতময়। সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক নবীজির রক্ত মুবারক পান করার একাধিক ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। যে ব্যক্তি নবীজি (ﷺ) এর দেহে সিঙ্গা লাগাতেন তিনি সিঙ্গা দিয়ে টানা রক্ত মুবারক বের করে এনে অবলীলাক্রমে তা গলধঃকরণ করে নিতেন। হুজুর (ﷺ) একবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি রক্ত কি করেছো? লোকটি বললেন, আমি রক্ত বের করে আমার পেটের মধ্যেই রেখে দিয়েছি। আমি এটা কামনা করি না যে হুজুরের দেহ মুবারকের রক্ত মাটিতে পড়ুক। একথা শুনে নবীজি বললেন, নিঃসন্দেহে তুমি আপন আশ্রয় খুঁজে নিয়েছো এবং নিজেকে সুরক্ষিত করে নিয়েছো। অর্থাৎ এ উসিলায় তুমি রোগ ব্যাধি থেকে নিরাপদ হয়ে গেলে। 


উহুদের যুদ্ধের দিন হুজুর আকরাম (ﷺ) আহত হয়ে গেলেন, তখন হযরত আবু সাঈদ (رضي الله عنه)র পিতা হযরত মালেক ইবনে সিনান (رضي الله عنه) নিজের জিহবা দিয়ে হুজুরের যখম থেকে রক্ত চুষে চেটে যখমকে পরিস্কার করে দিয়েছিলেন। লোকেরা বললো, মুখ থেকে রক্ত বাইরে ফেলে দাও। তিনি এতে অসম্মতি প্রকাশ করে বললেন, আল্লাহ তায়ালার কসম, হুজুর পাক (ﷺ) এর রক্ত মুবারক আমি যমীনে পড়তে দেবোনা। তিনি রক্ত গিলে ফেললেন। তখন হুজুর আকরাম (ﷺ) বললেন, কেউ যদি এ মুহুর্তে কোনো জান্নাতী লোক দেখতে চায়, সে যেনো এই ব্যক্তিকে দেখে নেয়।


উক্ত ঘটনাগুলোতে আমরা দেখতে পাই যে, যারা নবীজি (ﷺ) এর প্রস্রাব মুবারক ও রক্ত মুবারক পান করেছেন, নবীজি (ﷺ) কিন্তু তাদেরকে ভবিষ্যতে আর কখনো পান করতে নিষেধ করেননি বরং আনন্দিত হয়েছিলেন। এবং তিনি তাদেরকে আজীবন পীড়ামুক্ত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। আবার রক্ত পানকারীকে জান্নাতী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে রাসুলে পাক (ﷺ) এর পবিত্র প্রস্রাব মুবারক ও রক্ত মুবারক পাক এবং বরকতময়।

 
Top