সায়্যিদুনা সাহল বিন সাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর আক্বিদা


থুথু মুবারকঃ-

সায়্যিদুনা সাহল বিন সা’দ (رضي الله عنه) বলেন, খায়বার বিজয়ের দিন হযরত আলী (رضي الله عنه)’র চোখ অসুস্থ ছিল রাসূল (ﷺ) তাকে তালাশ করলেন। 


فَأُتِيَ بِهِ فَبَصَقَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي عَيْنَيْهِ وَدَعَا لَهُ، فَبَرَأَ حَتَّى كَأَنْ لَمْ يَكُنْ بِهِ وَجَعٌ


-‘‘রাসূল (ﷺ) তার নিকট এলেন এবং তাঁর থুথু মুবারক হযরত আলী (رضي الله عنه)’র চোখে দিলেন। তাঁর জন্য দু‘আ করলেন, তিনি এমন আরোগ্য লাভ করলেন যে, আর কোন দিন চোখ অসুস্থ হয়নি।’’ ২৮৪

{২৮৪. সহীহ বুখারী শরীফ, ৫/১৩৪ পৃ. হা/৪২১০, ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৭১৯ পৃ. হা/৬০৮৯, পরিচ্ছেদ;, بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/১৮৭২ পৃ. হা/২৪০৬, }


আক্বিদা

নবী কারিম (ﷺ) নিজের থুথু মুবারককে শেফা জানতেন, এ জন্য তিনি হযরত আলী (رضي الله عنه)’র চোখে দিয়েছেন। আর সাহাবায়ে কিরামগণও (رضي الله عنه) থুথু মুবারাককে আরোগ্য জানতেন, এ জন্যই হযরত বলেছেন যে, তাঁর এমন আরোগ্য লাভ করেছে যে, কোন দিনই তাঁর চোখ অসুস্থ হয়নি।






নামায অবস্থায় সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)’র মনে রাসূল (ﷺ)’র তা’যিম খেয়াল আসাঃ-

হযরত সাহাল বিন সা’দ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূলে পাক (ﷺ) বনূ ‘আমর বিন আউফের সাথে সন্ধি করার জন্য তাশরিফ নিলেন। নামাযের সময় হলে মুয়ায্যিন হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه)’র কাছে এসে বললেন, 


أَتُصَلِّي بِالنَّاسِ فَأُقِيمُ؟


-‘‘আপনি লোকদের নিয়ে নামায পড়ালে আমি ইকামত বলব।’’ 


হযরত সাহাল বিন সা‘দ (رضي الله عنه) বলেন, হযরত আবূ বাকর (رضي الله عنه) বললেন- হ্যাঁ, ঠিক আছে। এরপর তিনি জামাত শুরু করলেন। 


فَجَاءَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالنَّاسُ فِي الصَّلَاةِ فَتَخَلَّصَ حَتَّى وَقَفَ فِي الصَّفِّ


‘এরই মধ্যে রাসূলে পাক (ﷺ) তাশরীফ এনে প্রথম কাতারে গিয়ে দাঁড়ালেন।’ হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) যেহেতু নিমগ্ন হয়ে নামায পড়ছিলেন, এ জন্য তিনি বলতে পারেন না যে, নবী কারীম (ﷺ) তাশরীফ এনেছেন। আর তিনি তাঁর মতো করেই নামায পড়িয়ে যাচ্ছেন। 


فَصَفَّقَ النَّاسُ وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ لَا يَلْتَفِتُ فِي الصَّلَاةِ


সাহাবায়ে কেরাম যখন দেখলেন যে, রাসূল (ﷺ) এর আগমনের প্রতি আবু বকর (رضي الله عنه) এর মনোযোগ নেই, তখন সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) হাতের উপর হাত মেরে আওয়াজ তুললেন। 


فَلَمَّا أَكْثَرَ النَّاسُ التَّصْفِيقَ الْتَفَتَ فَرَأَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ


‘হাতের শব্দ ক্রমেই বেড়ে গেল হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) পেছনে ফিরে দেখেন রাসূল কারীম (ﷺ) নামাযে তাশরীফ এনেছেন।’ 


فَأَشَارَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنِ امْكُثْ مَكَانَكَ


‘রাসূল (ﷺ) তাঁকে নামায চালিয়ে নিতে ইশারা করলেন।’

 

فَرَفَعَ أَبُو بَكْرٍ يَدَيْهِ فَحَمِدَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى مَا أَمَرَهُ بِهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ ذَلِكَ


‘এরপর হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) তাঁর দুই হাত তুলে রাসূল (ﷺ) এর এই হুকুমের উপর আল্লাহর প্রশংসা করলেন।’ 


ثُمَّ اسْتَأْخَرَ أَبُو بَكْرٍ حَتَّى اسْتَوَى فِي الصَّفِّ، وَتَقَدَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى


-‘হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ইমামতি থেকে পেছনে চলে আসলেন আর রাসূলে কারিম (ﷺ) ইমামের স্থানে গিয়ে বাকি নামায সমাপ্ত করলেন।’


ثُمَّ انْصَرَفَ فَقَالَ: يَا أَبَا بَكْرٍ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَثْبُتَ إِذْ أَمَرْتُكَ


-‘সালাম ফিরানোর পর রাসূলে পাক (ﷺ) বললেন, আবু বকর (رضي الله عنه)! আমি আদেশ করার পরেও কোন বিষয়টি জামা‘আত চালিয়ে নিতে বাঁধা দিয়েছে?’ 


مَا كَانَ لِابْنِ أَبِي قُحَافَةَ أَنْ يُصَلِّيَ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ


-‘হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) বললেন, ইবনে কোহাফা (আবু বকর (رضي الله عنه)) এর পক্ষে সম্ভব নয় যে, রাসূল (ﷺ) এর সামনে ইমামতি করবেন।’ 


فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا لِي رَأَيْتُكُمْ أَكْثَرْتُمُ التَّصْفِيقَ؟


এরপর রাসূল (ﷺ) সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) কে বললেন, তোমরা হাতের উপর হাত কেন মেরেছো? 


مَنْ نَابَهُ شَيْءٌ فِي صَلَاتِهِ فَلْيُسَبِّحْ فَإِنَّهُ إِذَا سَبَّحَ الْتُفِتَ إِلَيْهِ وَإِنَّمَا التَّصْفِيحُ لِلنِّسَاءِ


-‘নামাযে যদি কোন কিছু সংঘঠিত হয়, তবে সুবহানাল্লাহ বলবে। সুবহানাল্লাহ বললে, ইমাম পেছনে ফিরবেন। তবে হ্যাঁ, মহিলারা হাতের উপর হাত মারবে।’ ২৮৫

{২৮৫. সহীহ মুসলিম, ১/৩১৬ পৃ. হা/৪২১, পরিচ্ছেদ: بَابُ تَقْدِيمِ الْجَمَاعَةِ مَنْ يُصَلِّي بِهِمْ إِذَا تَأَخَّرَ الْإِمَامُ وَلَمْ يَخَافُوا مَفْسَدَةً بِالتَّقْدِيمِ, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ১/২৪৭ পৃ. হা/৯৪০, ইমাম খুজায়মা, আস-সহীহ, ৩/৫৮ পৃ. হা/১৬২৩}


আক্বিদা

সরকারে সায়্যিদুনা আবূ বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) এর ফযিলত সূর্যের মতো স্পষ্ট, অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) এর আক্বিদাও স্পষ্ট যে, তারা নামাযের মধ্যেও রাসূল (ﷺ) এর খেয়াল রাখতেন। জামা‘আতে নামায পড়া অবস্থায় একাধিকবার হাতের উপর হাত মারা শুধুমাত্র রাসূল (ﷺ) এর সম্মানের জন্যই। নামাযে নবীর (ﷺ) খেয়াল আসা শিরক, গরু গাধা এবং ব্যভিচার করার খেয়াল থেকেও মারাত্মক বলে ফতোয়া দেয়া, বেআদবি এবং কুফরি।


রাসূল (ﷺ) এর ইশারা হযরত সিদ্দিক আকবর (رضي الله عنه) নামায অবস্থায় দেখেছেন। আর ইশারা দেখেছেন পেছনে ফিরে। নামাযও পূর্ণ করেছেন। সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)ও নামায অবস্থায় হাতের উপর হাত মারেন। সায়্যিদুনা সিদ্দিক আকবার (رضي الله عنه) মুসল্লা থেকে পেছনে চলে এসেছেন শুধুমাত্র রাসূল (ﷺ) এর তা’যিমের জন্য। 


❏কবি বলেন- 


شرك ٹهہر ےجس ميں تعظيم رسول

اس برے  مذہب  پہ لعنت كيبئ


-‘যে মাযহাবে রাসূলের তা‘যিমকে শিরক সাব্যস্ত করে,

ঐ মন্দ (এ রকম অভিসপ্ত) মাযহাবের উপর লা‘নত বর্ষিত হোক।’

 
Top