ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র উপর অর্পিত অভিযোগের জবাব


আবু আমর ইউসুফ ইবনে আব্দুল বার (رحمة الله) বলেন, যে সকল মুহাদ্দিসীনে কিরাম ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন এবং তাঁর ভূয়শী প্রশংসা করেছেন তাঁদের সংখ্যা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর সংখ্যার চেয়ে অনেক গুণ বেশী। কেবল আহলে হাদিসরাই তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাদের অভিযোগ হলো তিনি আহলে রায় তথা যুক্তিবাদী ছিলেন। একথা প্রসিদ্ধ আছে যে, কোন ব্যক্তি সম্পর্কে মানুষের বিভিন্ন মত থাকাটাই তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। যেমন হযরত আলী (رضي الله عنه) কে নিয়ে দু’টি দল সৃষ্টি হলো।

অতি মুহাব্বতের কারণে একদল সীমালঙ্ঘন করেছে আরেক দল তাঁর বিরোদ্ধাচারণ করেছে।  

 ➥  ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, উর্দু, পৃষ্ঠাঃ  ১৭৮, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ১৫৮

 

আল্লামা তাজউদ্দিন সুবকী (رحمة الله) বলেন অভিযোগ ও সমালোচনার উপরে প্রশংসার স্থান দিতে হবে। নতুবা আইম্মায়ে কিরামগণের মধ্যে কেউ বাঁচতে পারবে না। কোন ইমাম এরূপ নেই যে, যার বিরুদ্ধে কোন না কোন অভিযোগ নেই। ইবনে আব্দুল বার (رحمة الله) বলেন এ বিষয়ে অনেক বড় বড় ইমামগণেরও ভুল হয়েছে এবং অনেক মুর্খদল গোমরাহ হয়েছে। তারা জানেনা যে, এরূপ মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করা কতবড় গুনাহ। তারপর বলেন-যাকে অধিকাংশ লোকেরা নিজেদের ধর্মীয় ইমাম মেনে নিয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে মাত্র কয়েকজনের সমালোচনা গ্রহণযোগ্য নয়।  

➥  ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) আল খায়রাতুল হিসান, উর্দু, পৃষ্ঠাঃ ১৮০, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ১৫৮


এভাবে ইমাম মালিক (رحمة الله)’র বিরুদ্ধে ইবনে আবি যি’ব, ইমাম শাফেঈ’র বিরোদ্ধে ইবনে মুঈন, আহমদ ইবনে সালেহ’র বিরুদ্ধে ইমাম নাসাঈ এমনকি ইমাম বুখারী (رحمة الله)’র বিরুদ্ধেও খালিদ ইবনে আহমদ যুহলী অভিযোগ করেছিলেন। তাছাড়া ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মেধা, যোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা, নির্ভরযোগ্যতার প্রশংসা করে যারা তাঁর বিরুদ্ধবাদীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন তাদের অধিকাংশই হলেন অন্য মাযহাবের ইমাম। যেমন ইবনে আসীর জযরী, হাফিয যাহাবী, ইবনে হাজার আসকানী, আবু হাজ্জাজ আল মযযী, আব্দুল গণী মুক্দ্দসী, ইমাম নববী, ইবনে হাম্মাদ হাম্বলী, ইমাম শাফেঈ, আব্দুল ওহাব শা’রানী, ইবনে হাজার মক্কী ও জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) প্রমূখ। এদের অনেকেই তাঁর পৃথক জীবনী গ্রন্থও রচনা করেছেন।

আর খতীবে বাগদাদী (رحمة الله) তারীখে বাগদাদে ইমাম আ‘যমের বিরুদ্ধবাদীদের যেসব মত নকল করেছেন তা তিনি একজন ঐতিহাসিক হিসাবে করেছেন। নতুবা তিনি নিজেই এ মতের বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি তাঁর সম্পর্কে অনেক মনীষীদের কৃত প্রশংসা বর্ণনা করার পর বলেন-“আমরা (ঐতিহাসিকগণ) অন্যান্য আইম্মাদের বেলায় যেভাবে প্রশংসা ও অভিযোগ সম্পর্কীয় যাবতীয় মত বর্ণনা করি সেভাবে ইমাম আ‘যমের বেলায়ও তা বর্ণনা করেছি। অথচ আমি নিজেও তাঁর মহান মর্যাদার স্বীকৃতি প্রদানকারী। আর যারা এই মতগুলো পাঠ করে অসন্তুষ্ট হবেন আমি আমার কিতাবের নিয়ম-নীতির কারণে তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।” এতদ্বসত্ত্বেও অন্যান্য লিখকগণের মধ্যে কেউ ইমাম আ‘যমের বিরুদ্ধবাদীদের মতকে বর্ণনা করেননি বরং সেগুলোর যথাযথ জবাব দিয়ে তাঁকে অভিযোগ মুক্ত করেছেন।

 
Top