অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (১৬০২)]

○ অধ্যায়ঃ [মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা]

[ﻭﻋﻦ ﺳﻔﻴﻦ ﺍﻟﺘﻤﺎﺭ ﺍﻧﻪ ﺭﺃﻯ ﻗﺒﺮ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﷺ ﻣﺴﻨﻤﺎ . ‏] - ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ )

হযরত সূফিয়ান তাম্মার [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলে করীম [ﷺ] -এর কবর শরীফকে উটের কোহানের মতো দেখেছেন। (টীকাঃ ১)

[বোখারী]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


                                   

◇ টীকাঃ ১.

অর্থাৎ ঢালু, যেমনঃ উটের পিটের কোহান ও পিঠ। এ হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ বলেন, "কবরকে ঢালু করে বানানো উত্তম।" ইমাম শাফে'ঈর মতে, চার কোণ্ বিশিষ্ট বানানো উত্তম। এ হাদীস শরীফ ওই তিন ইমামের দলীল। খুব সম্ভব, হযরত সুফিয়ান তাম্মার প্রারম্ভিককালেই ক্ববর-ই আন্ওয়ারের যিয়ারত করেছেন। হুযূর [ﷺ] এর কবর শরীফ শুরু থেকেই এমন ছিলো। কেননা, সাহাবা-ই কেরামের যুগে হুজুরা শরীফ খোলা থাকতো এবং রওযা-ই আন্ওয়ারের যিয়ারত সর্বদা অব্যাহত ছিলো।

কেউ কেউ বলেছেন, প্রথমে ক্ববর শরীফ চার কোণ বিশিষ্ট (সমতল) ছিলো। তারপর ঢালু করা হয়েছে; কিন্তু এ অভিমতের পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। যাঁরা দেখেছেন তাঁরা সবাই বলেছেন যে, ক্ববর শরীফ ঢালুই ছিলো।


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (১৬০১)]

○ অধ্যায়ঃ [মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা]

[ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﺟﻌﻞ ﻓﻰ ﻗﺒﺮ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻗﻄﻴﻔﺔ ﺣﻤﺮﺁﺀ . ‏] : ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ )

হযরত ইবনে আব্বাস [ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "রাসূলাল্লাহ [ﷺ] -এর কবর-ই আন্ওয়ারে লাল কম্বল রাখা হয়েছে।" (টীকাঃ ১)

[মুসলিম]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ

                                   

◇ টীকাঃ ১.

এভাবে যে, হযরত শাক্বরান, রাসূল [ﷺ] -এর ক্রীতদাস বলেছেন, "এখন থেকে আমি এ কম্বল গায়ে কাকে দেখবো? হুযূরের বিচ্ছেদ-বেদনা সহ্য করতে না পেরে তিনি কবর-ই আন্ওয়ারে লাফিয়ে পড়লেন এবং বিছানার মতো সেটাকে মাটির উপর বিছিয়ে দিলেন।

'লাল' মানে লাল বর্ণের রেখা বিশিষ্ট; নিরেট লাল বর্ণের নয়। স্মর্তব্য যে, এ পবিত্র আমল সমস্ত সাহাবীর উপস্থিতিতে হয়েছে; কিন্তু কেউ তা'তে বাধা দেন নি। সুতরাং এ পবিত্র কাজটি একেবারে জায়েয হলো।

বিজ্ঞ আলিমগণ বলেছেন, এটা হুযূর [ﷺ] -এর বৈশিষ্ট্যাদির অন্যতম। অন্য কারো জন্য কবরে কিছু বিছানো জায়েয নয়। কেননা, যমীন না পয়গাম্বরের শরীর মুবারক গ্রাস করতে পারে, না তাঁর কাফন ও বিছানা। সুতরাং এটা সম্পদ বিনষ্ট করা নয়; দেখুন, হযরত সুলায়মান [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ] ওফাতের পর এক বছর কিংবা ছয় মাস লাঠির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারপর উই পোকা তাঁর লাঠি মুবারক খেয়ে ফেললো; কিন্তু তাঁর ক্বদম শরীফ খায় নি। আর না তাঁর পোষাক জীর্ণশীর্ণ হয়েছে, না অপরিচ্ছন্ন হয়েছে।


□ বুযুর্গের কবরের পাশে মসজিদ বানানো সুন্নাতঃ

□ কবরগুলোকে মসজিদ বানানোর অর্থ কি�


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৬৬০)]

○ অধ্যায়ঃ [মসজিদগুলো ও নামাযের স্থানসমূহ]

[ﻭﻋﻦ ﻋﺂﺋﺸﺔ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻗﺎﻝ ﻓﻰ ﻣﺮﺿﻪ ﺍﻟﺬﻯ ﻟﻢ ﻳﻘﻢ ﻣﻨﻪ ﻟﻌﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻴﻬﻮﺩ ﻭﺍﻟﻨﺼﺎﺭﻯ ﺍﺗﺨﺬﻭﺍ ﻗﺒﻮﺭ ﺍﻧﺒﻴﺂﺋﻬﻢ ﻣﺴﺎﺟﺪ . ‏] : ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )

অর্থাৎঃ হযরত আয়েশা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﯽٰ ﻋﻨﻬﺎ] থেকে বর্ণিত, রাসূলাল্লাহ্ [ﷺ] হুযূরের ওই রোগের সময় এরশাদ করেছেন, যা থেকে তিনি ওঠেন নি, (টীকাঃ ৪৯) ইহুদী ও খৃষ্টানদের উপর আল্লাহ্ অভিসম্পাত করুন! তারা তাদের পয়গাম্বরদের কবরগুলোকে সাজদার স্থান করে নিয়েছে।" (টীকাঃ ৫০)

[মুসলিম, বোখারী]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ

                                   

◇ টীকাঃ ৪৯.

অর্থাৎ ওফাত শরীফের অসুস্থতায়। সুতরাং এ হাদীস মুহকাম বা বলবৎ হলো; মানসুখ বা রহিত হলো না।

◇ টীকাঃ ৫০.

এভাবে যে, তাঁদের কবরগুলোর দিকে সাজদা করতে লাগলো; বরং কেউ কেউ ওই কবরগুলোর পূজা করতে আরম্ভ করেছিলো। এ উভয় কাজ শির্ক। অথবা তাঁদের কবরগুলোকে ধূলিসাৎ করে মসজিদের ফরশের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে এবং সেটার উপর দাঁড়িয়ে নামায পড়তে শুরু করেছে। এটাও হারাম। কারণ এটা কবরের অবমাননার সামিল।

স্মর্তব্য যে, বুযুর্গের আস্তানাগুলোর পাশাপাশি মসজিদ বানানো এবং বরকতের জন্য তাতে নামায পড়া ক্বোরআন শরীফ ও বহু হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণিত সূরা 'কাহফ' -এ এরশাদ হয়েছে-

[ﻟَﻨَﺘَّﺨِﺬَﻥَّ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﻣَّﺴْﺠِﺪًﺍ]

অর্থাৎ মুসলমানগণ বলেছে আমরা 'আসহাব-ই কাহফ' -এর গুহার পাশে মসজিদ নির্মাণ করবো। (১৮:২১) হুযূর [ﷺ] -এর রওযা-ই আন্ওয়ার এবং বেশীরভাগ সাহাবীর মাযারগুলোর পাশে মসজিদ রয়েছে। এগুলো খোদ্ সাহাবীগণ কিংবা নেককার লোকেরা নির্মাণ করেছেন। এখন আল্লাহ্'র ওলীগণের মাযারের পাশে মুসলিম সাধারণ মসজিদ নির্মাণ করে থাকে। মাক্ববূল বান্দাদের নিকটে নামায বেশী ক্ববূল হয়। মসজিদ-ই নববী শরীফে এক নামাযের সাওয়াব পঞ্চাশ হাজার। তাও হুযূর-ই আন্ওয়ার [ﷺ] -এর নৈকট্যের কারণে। মহান রব ইস্রাঈলী পাপীদেরকে বলেছিলেন-

[ﺍﺩْﺧُﻠُﻮﺍ ﺍﻟْﺒَﺎﺏَ ﺳُﺠَّﺪًﺍ ﻭَﻗُﻮﻟُﻮﺍ ﺣِﻄَّﺔٌ]

অর্থাৎ তোমরা বায়তুল মুক্বাদ্দাসের দরজায় সাজদারত অবস্থায় প্রবেশ করো এবং সেখানে গিয়ে তওবা করো (২:৫৮)। নবীগণ [ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺍﻟﺴﻼﻡ] -এর কবর শরীফগুলোর বরকতে তাওবা ক্ববূল হবে। হযরত যাকারিয়া [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ] -এর ঘটনা বর্ণনা করেছেন-

[ﻫُﻨَﺎﻟِﻚَ ﺩَﻋَﺎ ﺯَﻛَﺮِﻳَّﺎ ﺭَﺑَّﻪُ]

অর্থাৎ সেখানে বিবি মরিয়মের পাশে দাঁড়িয়ে যাকারিয়া [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ] পুত্র-সন্তানের জন্য দো'আ করলেন (৩:৩৮)।

এ আয়াতগুলো থেকে বুঝা গেলো যে, বুযুর্গের নৈকট্যে তাওবা ও দো'আ বেশী ক্ববূল হয়। এটাও স্মরণযোগ্য যে, কবরের উপর দাঁড়িয়ে নামায পড়া নিষিদ্ধ; কিন্তু যদি কবরের কিছুটা উপরে পিলার তৈরী করে ফরশ বানানো হয় তবে সেখানে নামায পড়া জায়েয- মাকরুহও নয়। সুতরাং কা'বাতুল্লাহ্'র মাতাফ (তাওয়াফের জন্য নির্ধারিত জায়গা) -এর মধ্যে ৭০ জন নবী মাযার রয়েছে, যেগুলোর উপর তাওয়াফ ও নামায চলছেই। তাছাড়া, কা'বার ছাদের নালার (মীযাব) নিচে হযরত ইসমাঈল [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ] -এর মাযার শরীফ রয়েছে, যেখানে দিন-রাত নামায পড়া হচ্ছে। সেখানেও কারণ এটাই। [মিরক্বাত ও আশি'আহ্]


'আমার কবরকে বোত্ বানিয়ো না' -এর উৎকৃষ্ট ব্যাখ্যাঃ

                                       

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৬৯৫)]

○ অধ্যায়ঃ [মসজিদগুলো ও নামাযের স্থানসমূহ]

[ﻭﻋﻦ ﻋﻄﺎﺀ ﺑﻦ ﻳﺴﺎﺭ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻻ ﺗﺠﻌﻞ ﻗﺒﺮﻯ ﻭﺛﻨﺎ ﻳﻌﺒﺪ ﺍﺷﺘﺪ ﻏﻀﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻗﻮﻡ ﺍﺗﺨﺬﻭﺍ ﻗﺒﻮﺭ ﺍﻧﺒﻴﺂﺀ ﻫﻢ ﻣﺴﺎﺟﺪ . ‏] ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺎﻟﻚ ﻣﺮﺳﻼ )

হযরত আত্বা ইবনে ইয়াসার (টীকাঃ ১) [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [ﷺ] এরশাদ ফরমানঃ "হে আল্লাহ্! আমার কবরকে বোত্ বানিয়ো না, যাকে পূজা করা হয়। (টীকাঃ ২) ওই সম্প্রদায়ের উপর আল্লাহ্'র কঠোর ক্রোধ আপতিত হয়েছে, যারা তাদের নবীগণের কবরকে সাজদার জায়গায় পরিণত করেছে।" (টীকাঃ ২)

[ইমাম মালিক এটা 'মুরসাল' সূত্রে বর্ণনা করেছেন]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


                                   

◇ টীকাঃ ১.

তিনি প্রসিদ্ধ তাবে'ঈ, হযরত উম্মুল মু'মিনীন মায়মুনা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﯽٰ ﻋﻨﻬﺎ]'র আযাকৃত ক্রীতদাস। ৮৪ বছর জীবদ্দশায় ছিলেন। ৯৪ হিজরীতে ওফাত পান।

◇ টীকাঃ ২.

সুবহা-নাল্লাহ্! হুযূরের এ দো'আ এমনিভাবে ক্ববূল হয়েছে যে, প্রতি বছর লাখো মূর্খ ও জ্ঞানী লোক যিয়ারতের জন্য যায়, কিন্তু না কেউ ক্ববর-ই আনওয়ারকে সাজদা করে, না কেউ সেটার দিকে নামায পড়ে, এটা এ-ই দো'আর প্রভাব।

স্মর্তব্য যে, ইহুদী ও খৃষ্টানরা হযরত ওযায়র ও হযরত ঈসা [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ]-এর দু'একটি মু'জিজা শুনে তাঁদেরকে খোদা কিংবা খোদার পুত্র বলে বসেছে এবং তাঁদের উপাসনা করতে আরম্ভ করেছে। কিন্তু মুসলমান হাজার হাজার মু'জিজা শুনে বরং স্বচক্ষে দেখেও হুযূরকে না খোদা বলেন, না খোদার পুত্র। মুর্খ মুসলমানদেরও এই আক্বীদা বা বিশ্বাস যে, ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ (তিনি আল্লাহ্'র খাস বান্দা ও তাঁর রাসূল)। এটা হুযূরের ওই দো'আরই বরকত।

মজার বিষয় যে, কেউ কেউ এ হাদীসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এ কথা বলে বেড়ায় যে, কবরগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো, বছর বছর সেখানে যাওয়া, সমবেত হয়ে সেগুলোর যিয়ারত করা, সেখানে আলোকসজ্জা করা সবই শির্ক। কেননা, তা নাকি ক্ববরপূজা ও ক্ববরকে বোত বানানো। কিন্তু এটা একেবারে ভুল কথা। কেননা, এসব দীর্ঘ ১৩০০ বছরাধিক কাল থেকে হুযূর [ﷺ] -এর রওযা-ই আন্ওয়ারেও হয়ে আসছে। সেখানে প্রতি বছর যিয়ারতকারীদের ভিড় জমে যায়। হাত বেঁধে মাথা ঝুঁকিয়ে সালাম পড়া হয়। রাতের বেলায় ঈমান তাজাকারী আলো জ্বলে। সমস্ত বিজ্ঞ আলিম, নেককার বুযুর্গ লোকই এসব কাজ করেন। ফক্বীহ্'গণ বলেন, রওযা-ই আন্ওয়ারে সালাম পাঠ করার জন্য এভাবে হাত বেঁধে দাঁড়াবে, যেভাবে নামাযে দন্ডায়মান হয়। যদি এগুলোর মধ্যে কোন কাজ শির্ক হতো, তবে হুযূরের রওযা-ই আক্বদাসের নিকট তা কখনো সম্পন্ন হতো না। কেননা, হুযূরের দো'আ ক্ববূল হয়েছে।

পক্ষান্তরে, ওইসব মুর্খের কথিত ব্যাখ্যায় একথা অনিবার্য হয়ে যাবে যে, হুযূরের দো'আ মহান রব একেবারে না-মঞ্জুর করে দিয়েছেন। সুতরাং আলোচ্য হাদীস শরীফ ওরস জায়েয হওয়া সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের পক্ষে মজবুত দলীলই। বস্তুতঃ হাদীস শরীফ বুঝার জন্য প্রয়োজন জ্ঞান, বিবেক ও ইশক্ব-মুহাব্বত।

◇ টীকাঃ ৩.

এভাবে যে, তারা ওইসব কবরের উপাসনা করতে থাকে, কিংবা সেগুলোর প্রতি নামায পড়তে আরম্ভ করে। প্রথমোক্ত কাজটি শির্ক, আর শেষোক্তটা হারাম।

স্মর্তব্য যে, যদি ঘটনাচক্রে মসজিদের ভিতর কবর থেকে যায়, তাহলে নামাযী ও কবরের মধ্যভাগে পূর্ণাঙ্গ অন্তরাল থাকা চাই; যেমন- মসজিদ-ই নববী শরীফে রওযা-ই আত্বহার রয়েছে; যার চতুর্পাশে নামায সম্পন্ন করা হয়। অথচ রওযা-ই আন্ওয়ার-এর চতুর্পাশে দেওয়ালের অন্তরাল রয়েছে। এর পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ ইতোপূর্বে করা হয়েছে।


□ ফারুকে আযমের দাফনের পর থেকে উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা সিদ্দীক্বা চাদর মুড়ি দিয়ে রওযা-ই আক্বদাসে প্রবেশ করতেন কেন�


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (১৬৭৭)]


○ অধ্যায়ঃ [কবরগুলোর যিয়ারত]

[ﻭﻋﻦ ﻋﺂﺋﺸﺔ ﻗﺎﻟﺖ ﻛﻨﺖ ﺍﺩﺧﻞ ﺑﻴﺘﻰ ﺍﻟﺬﻯ ﻓﻴﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻭﺍﻧﻰ ﻭﺍﺿﻊ ﺛﻮﺑﻰ ﻭﺍﻗﻮﻝ ﺍﻧﻤﺎ ﻫﻮ ﺯﻭﺟﻰ ﻭﺍﺑﻰ ﻓﻠﻤﺎ ﺩﻓﻦ ﻋﻤﺮ ﻣﻌﻬﻢ ﻓﻮﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﺩﺧﻠﺘﻪ ﺍﻻ ﻭﺍﻧﺎ ﻣﺸﺪﻭﺩﺓ ﻋﻠﻰ ﺛﻴﺎﺑﻰ ﺣﻴﺎﺀ ﻣﻦ ﻋﻤﺮ . ‏] ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ )

হযরত আয়েশা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﯽٰ ﻋﻨﻬﺎ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আপন ঘরে, যাতে রসূলুল্লাহ্ [ﷺ]'কে দাফন দাফন করা হয়েছে, এভাবে চাদর পরে চলে যেতাম, (টীকাঃ ১) আর বলতাম (এখানে) একজন আমার স্বামী, আরেকজন আমার পিতা। অতঃপর যখন হযরত ওমরকে দাফন করা হয়েছে, তখন মহান রবেরই শপথ! হযরত ওমরের প্রতি লজ্জাবোধের কারণে কাপড় জড়ানো ব্যতীত ওই ঘরে যাই নি।" (টীকাঃ ২)

[আহমদ]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


                                  

◇ টীকাঃ ১.

অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত আমার হুজুরার মধ্যে রসূলুল্লাহ্ [ﷺ] ও হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব দাফনকৃত থাকেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি মাথা খোলা কিংবা ঢাকা- উভয় অবস্থায়ই হুজুরা শরীফে চলে যেতাম। কারণ, না স্বামী থেকে পর্দা করতে হয়, না পিতা থেকে।

◇ টীকাঃ ২.

অর্থাৎ যখন থেকে হযরত ওমরকে আমার হুজুরায় দাফন করা হয়েছে, তখন থেকে আমি চাদর মুড়ি দেওয়া এবং পর্দার প্রতি পূর্ণ গুরুত্ব দেওয়া ব্যতীত হুজুরা শরীফে যাই নি। হযরত ওমরের প্রতি লজ্জাবোধ করতে থাকি।

এ হাদীস শরীফ থেকে বহু মাস্'আলা অনুমতি হতে পারে-

এক. মৃতকে মৃত্যুর পরেও সম্মান করা চাই। ফক্বীহগণ বলেন, মৃতকে তেমনি সম্মান করবে, যেমন তার জীবদ্দশায় করেছিলে।

দুই. বুযুর্গদের কবরগুলোর প্রতিও সম্মান প্রদর্শন এবং তাঁদের প্রতিও লজ্জাবোধ থাকা চাই।

তিন. মৃত ব্যক্তি কবরের ভিতর থেকে বাইরের লোকদেরকে দেখে এবং তাদেরকে চিনতে পারে, জানে। দেখুন, হযরত ওমরের প্রতি হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা তাঁর ওফাতের পর লজ্জাবোধ করছেন। যদি তিনি বাইরের কোন কিছু না দেখতেন, তাহলে এ লজ্জাবোধ করার অর্থই বা কি?

চার. কবরের মাটি ও তক্তা ইত্যাদি মৃতের চোখের সামনে হিজাব বা অন্তরাল হতে পারে না; কিন্তু যিয়ারতকারীর গায়ের পোশাক তাদের জন্য সত্যি আড়াল। সুতরাং মৃতের সামনে তার যিয়ারতকারীকে উলঙ্গ দেখা যায় না। অন্যথায় হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বার চাদর মুড়ি দিয়ে সেখানে যাবার অর্থই বা কি ছিলো? এটা মহান আল্লাহ্ পাকের বিধান। সুতরাং হাদীস শরীফের বিপক্ষে এ আপত্তি উত্থাপন করার অবকাশ নেই যে, 'যখন হযরত ওমর কবরের ভিতর থেকে যিয়ারতকারীকে দেখছেন, তখন যিয়ারতকারীর কাপড়ের ভিতরের দেহাংশ দেখছেন না তো?

পাচ. বুযুর্গের কবরগুলোর প্রতিবেশে কারো অবস্থান করা দুরস্ত। হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﯽٰ ﻋﻨﻬﺎ] রওযা-ই আত্বহারের প্রতিবেশে অবস্থান করতেন।

ছয়. কবরের প্রতিবেশে নারীও থাকতে পারে; কিন্তু পর্দা ও লজ্জাবোধ সহকারে।

সাত. প্রতিবেশে অবস্থানকারীনীর জন্য কবরের যিয়ারত করা বৈধ, কেননা, সে তো সেখানেই থাকে।


□ কবর যিয়ারতের জন্য সফর করা এবং নিষেধের হাদীসের উৎকৃষ্ট বিশ্লেষণঃ


❏ দরসে হাদীসঃ 【হাদীস নং- (৬৪২)】


○ অধ্যায়ঃ 【মসজিদগুলো ও নামাযের স্থানসমূহ】

【 ﻭﻋﻦ ﺍﺑﯽ ﺳﻌﯿﺪﻥ ﺍﻟﺨﺪﺭﻱ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻻ ﺗﺸﺪ ﺍﻟﺮﺣﺎﻝ ﺍﻻ ﺍﻟﻰ ﺛﻼﺛﺔ ﻣﺴﺎﺟﺪ ﻣﺴﺠﺪ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﻭﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺍﻻﻗﺼﯽ ﻭﻣﺴﺠﺪﻯ ﻫﺬﺍ . ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )】

হযরত আবু সা'ঈদ খুদরী [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [ﷺ] এরশাদ ফরমায়েছেনঃ

❝তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনটির দিকে হাওদা বাঁধা যাবে না- এক. মসজিদে হারাম, দুই. মসজিদে আক্বসা এবং তিন. আমার এ মসজিদ।❞ (টীকাঃ১)

【মুসলিম, বােখারী】

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


                                   

◇ টীকাঃ ১. অর্থাৎ এ মসজিদগুলাে ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের দিকে এজন্য সফর করে যাওয়া যে, সেখানে নামাযের সাওয়াব বেশী, নিষিদ্ধ; যেমন কেউ কেউ জুমু'আহ্ পড়ার জন্য বদায়ূন থেকে দিল্লী যেতাে, যাতে সেখানকার জামে মসজিদে সাওয়াব বেশী পায়। এটা ভুল। প্রত্যেক জায়গার মসজিদগুলাে সাওয়াবের মধ্যে সমান। এ ব্যাখ্যার ভিত্তিতে হাদীস শরীফ একেবারে স্পষ্ট।

ওহাবীরা এর অর্থ এটা মনে করেছে যে, এ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন স্থানের দিকে সফর করাই হারাম; সুতরাং ওরস, কবর-যিয়ারত ইত্যাদির জন্য সফর হরা হারাম। যদি এ অর্থ হয়, তবে ব্যবসায়, চিকিৎসা, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সাক্ষাৎ ও ইলমে দ্বীন শিক্ষা ইত্যাদি কাজের জন্য সফর করা হারাম হবে এবং রেলওয়ে (ইত্যাদি)'র বিভাগগুলাে অকেজো হয়ে যাবে আর এ হাদীস শরীফও ক্বোরআনের পরিপন্থী হয়ে যাবে এবং অন্যান্য হাদীসেরও। মহান রব এরশাদ ফরমাচ্ছেন-

[ﻓَﺴِﻴﺮُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻓَﺎﻧﻈُﺮُﻭﺍ ﻛَﻴْﻒَ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﺎﻗِﺒَﺔُ ﺍﻟْﻤُﻜَﺬِّﺑِﻴﻦَ]

[অর্থাৎ সুতরাং পৃথিবীর মধ্যে ভ্রমণ করে দেখাে, কী পরিণাম হয়েছে অস্বীকারকারীদের; (৩:১৩৭, তরজমা- কানযুল ঈমান)] 'মিরক্বাত’ প্রণেতা এখানে এবং আল্লামা শামী 'ক্ববরসমূহের যিয়ারত' শীর্ষক অধ্যায়ে বলেছেন, যেহেতু এ তিন মসজিদ ব্যতীত সমস্ত মসজিদ সমান, সেহেতু অন্যান্য মসজিদের দিকে সফর করা নিষিদ্ধ। অবশ্য, আল্লাহর ওলীগণের কবরগুলাে ফুয়ূয ও বরকাতের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন।

সুতরাং কবরসমূহের যিয়ারতের জন্য সফর করা জায়েয। এ মূর্খ অজ্ঞ লােকেরা কি সম্মানিত নবীগণের ক্ববর শরীফগুলাের দিকে সফর করতেও নিষেধ করবে?



উঁচু কবর মাটির সাথে সমান করে দেয়ার ব্যাখ্যাঃ

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (১৬০৩)]


○ অধ্যায়ঃ [মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা]

[ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺍﻟﻬﻴﺎﺝ ﺍﻻﺳﺪﻯ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﻟﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻻ ﺍﺑﻌﺜﻚ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﺑﻌﺜﻨﻰ ﻋﻠﻴﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﺍﻥ ﻻ ﺗﺪﻉ ﺗﻤﺜﺎﻻ ﺍﻻ ﻃﻤﺴﺘﻪ ﻭﻻ ﻗﺒﺮﺍ ﻣﺸﺮﻓﺎ ﺍﻻ ﺳﻮﻳﺘﻪ . ‏] - ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ )

হযরত আবূ হাইয়্যাজ আসাদী [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] (টীকাঃ ১) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে হযরত আলী বলেছেন, "আমি কি তোমাকে ওই কাজে প্রেরণ করবো না, যে কাজে আমাকে রাসূলাল্লাহ [ﷺ] প্রেরণ করেছিলেন?" তা হচ্ছে তুমি কোন প্রতিমা (তাস্ভীর) দেখতেই তা বিলীন করে ফেলবে. আর কোন উঁচু কবর দেখতেই সেটাকে মাটির সমান করে দেবে। (টীকাঃ ২)

[মুসলিম]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


                                   

◇ টীকাঃ ১.

তাঁর নাম হাইয়্যান ইবনে হুসাঈন। উপনাম আবুল হাইয়াজ। বণূ আসাদ গোত্রের লোক। তিনি হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরের কেরানী ছিলেন। তিনি প্রসিদ্ধ তাবে'ঈ। মানসূর ইবনে হাইয়্যানের পিতা।

◇ টীকাঃ ২.

অর্থাৎ যে কাজের জন্য নবী করীম [ﷺ] আমাকে প্রেরণ করেছিলেন, ওই কাজের জন্য আমি তোমাকে পাঠাচ্ছি। 'তাসভীর' (ফটো) ও 'মূর্তিগুলোকে নিশ্চিহ্ন করবে, উঁচু উঁচু কবরগুলোকে ভেঙ্গে মাটির সমান করে দেবে। স্মর্তব্য যে, # এখানে কবরগুলো দ্বারা ইহুদী ও খ

ৃষ্টানদের কবর বুঝায় , # মুসলমানদের নয় । এটাও এ কয়েকটা কারণে-

এক. হুযূর-ই আন্ওয়ার [ﷺ] -এর পবিত্র যুগে সাহাবা-ই কেরামের # ক্ববরগুলো উঁচু 

কিভাবে হয়ে গেলো , # যেগুলো ভেঙ্গে স

মতল করার জন্য হুযূর [ﷺ] হযরত আলীকে প্রেরণ করেছেন? কেননা, ওইসব বুযুর্গের কাফন-দাফন হুযূর [ﷺ] -এর উপস্থিতিতে এবং তাঁরই অনুমতিক্রমে সম্পন্ন হতো।

দুই. ক্ববরের সাথে ফটো এবং মুর্তির কিসের সম্পর্ক? # মুসলমানদের ক্ববরের উপর না ফটো 

থাকে , # না প্রতিমা । অবশ্য খৃষ্টানদের কবর অতি উঁচু হয় এবং সেগুলোর উপর মৃতের মূর্তি এবং ফটোও থাকে।

তিন. মুসলমানদের ক্ববর মাটির সমান করা যেতে পারে না; # বরং এক বিঘত পরি

মাণ কিংবা এক হাত উঁচু রাখা হয় । আর এখানে তো সমান করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চার. একথার সমর্থন বোখারী শরীফের ওই হাদীস শরীফ দ্বারা হয়, যা মসজিদে নববী শরীফের নির্মাণ কাজের বর্ণনা সম্বলিত অধ্যায়ে রয়েছে। তাতে বর্ণিত হয়েছে যে,

# হুযূর  ﷺ  মুশরিকদের ক্ববরগুলোকে

# উপড়ে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন । অতঃপর উপড়ে ফেলা হয়েছে। ওই কাজের জন্য হযরত আলী মুরতাদ্বাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো।

পাঁচ. বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'ফাত্হুল বারী'তে এ হাদীসের উপর শিরোনাম স্থির করা হয়েছে- 'জাহিলী যুগের মুশরিকদের ক্ববরগুলোকে কি উপড়ে ফেলা যায়? অর্থাৎ তাদের ব্যতীত, নবীগণ [ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺍﻟﺴﻼﻡ] ও তাঁদের অনুসারীদেরও নয়। কেননা, তাঁদেরকে তাঁদের ক্ববর থেকে উপড়ে ফেলে দেওয়ার মধ্যে তাঁদের প্রতি অসম্মান দেখানো হয়।

ছয়. ওই 'ফাত্হুল বারী'তে একটু দূরে (পরে) গিয়ে উল্লেখ করেছেন-- হাদীস শরীফ থেবে বুঝা গেলো যে, মালিকানাধীন কবরস্থানে 'ক্ষমতা প্রয়োগ করা' (সংস্কারমূলক কাজ করা) জায়েয; আর পুরানা কবর উপড়ে ফেলাও জায়েয, এ শর্তে যে, যদি ওই ক্ববরগুলো সম্মাণিত না হয়।

সাত. মুসলমানদের কবরকে উঁচু করে তৈরী করা নিষিদ্ধ। কিন্তু যদি তৈরী করে ফেলা হয়,

# তবে সেটাকে ভেঙ্গে ফেলা নাজায়েয । কারণ, তাতে ক্ববর ও ক্ববরবাসীর প্রতি অবমাননা করা হয়। যখন মুসলমানদের ক্ববরে হেলান দেওয়া, সেটার উপর চলাফেরা নিষেধ,

# তখন সেটার উপর কোদাল ইত্যাদি

# চালনা করা কিভাবে জায়েয হবে ? যেমনঃ ছোট সাইজের ক্বোরআন শরীফ ও (ছোট করে) কপিসমূহ ছাপানো নিষিদ্ধ। কিন্তু যদি ছেপে যায়, তবে সেগুলো জ্বালিয়ে ফেলা হারাম।

আট. এটা বোখারী শরীফে 'জানা-ইয' শীর্ষক পর্বে 'আল-জারীদ আলাল ক্ববর' নামক পরিচ্ছেদে 'তা'লীক্ব' (সনদবিহীন অবস্থায়) রয়েছে। হযরত খা-রিজাহ্ বলেছেন, আমরা হযরত ওসমান [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ]'র যুগে ছিলাম। আমাদের মধ্যে বড় বাহাদুর ছিলেন ওই ব্যক্তি, যে হযরত ওসমান ইবনে মায্'ঊনের ক্ববরের উপর লাফিয়ে পার হতে পারতো। বুঝা গেলো যে, ওই ক্ববর এত উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছিলো যে, সেটা লাফিয়ে পার হওয়া কঠিন ছিলো। আর এ কবর হুযূর [ﷺ] নিজেই তৈরী করেছিলেন।

নয়. এখন মিশকাত শরীফে হাদীস আসবে, নবী করিম [ﷺ] হযরত ওসমান ইবনে মায্'ঊনের ক্ববরের

# মাথার দিকে একটি উঁচু পাথর স্থাপন করেন , যার ব্যাখা হযরত খারিজার বর্ণিত হাদীস করে দিয়েছে। অর্থাৎ সেটা এতো উঁচু ছিলো যে, সেটার উপর দিয়ে লাফিয়ে পার হওয়া কঠিন ছিলো।

যে কোন অবস্থায়, এখানে যদি মুসলমানদের ক্ববর বুঝানো হয়, তবে এ হাদীস বহু হাদীসের পরিপন্থী হবে। আর তাতে এমন সব সমস্যা সৃষ্টি হবে, যেগুলোর সমাধান করা যাবে না।

আফসোস! নজদীরা এ হাদীস শরীফকে আড়াল করে পবিত্র দু'হেরেমে শীর্ষস্থানীয় সাহাবা-ই কেরাম ও পবিত্র আহলে বায়তের ক্ববরগুলোকে পর্যন্ত ভেঙ্গে ফেলেছে; কিন্তু ওই অঞ্চলে আমেরিকার তেল কোম্পানীর, যাদেরকে ওই নজদীরা তেলের ঠিকাদারী দিয়েছে, তাদের মধ্যে যারা ওখানে মারা গিয়েছে, তাদের (ওইসব ইংরেজ) বড় বড়, উঁচু উঁচু ক্ববর রয়েছে, কিন্তু সেগুলোতে এরা হাতও লাগায় নি। অর্থাৎ যা ভাঙ্গার জন্য হাদীস ছিলো, তজ্জন্য হাদীস অনুসারে আমল করা হয় নি, বরং মুসলমানদের কবরের উপর যুলম্ করা হয়েছে।

● হাদীস শরীফের এর ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ

f/Ishq-E-Mustafa ﷺ

page link:- facebook.com/SunniAqidah

[সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ২য় খন্ড, পৃ. ৫৯৯, ৬০০ হাদীস নং-১৬০৩ এর টীকাঃ ৫,৬ দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম।


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (১৬০৪)]

○ অধ্যায়ঃ [মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা]


[ﻭﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﻗﺎﻝ ﻧﻬﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﺍﻥ ﻳﺠﺼﺺ ﺍﻟﻘﺒﺮ ﻭﺍﻥ ﻳﺒﻨﻰ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍﻥ ﻳﻘﻌﺪ ﻋﻠﻴﻪ . ‏] - ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ )

হযরত জাবির [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "রাসূলাল্লাহ [ﷺ] ক্ববরে চুনার কাজ করতে (টীকাঃ ১) ও সেটার উপর কিছু নির্মাণ করতে (টীকাঃ ২) নিষেধ করেছেন এবং সেটার উপর বসতেও (নিষেধ করেছেন)।" (টীকাঃ ৩)

[মুসলিম]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


◇ টীকাঃ ১.

স্মর্তব্য যে, কবরের মধ্যে তিনটি জিনিস রয়েছেঃ

এক. সেটার আভ্যন্তরীণ অংশ, যা মৃতের শরীরের সাথে মিলিত থাকে। সেটা পাকা করা, তাতে কাঠ কিংবা পাকা ইট লাগানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ; চাই তা ওলীর ক্ববর হোক, কিংবা সাধারণ মুসলমানের (ক্ববর হোক). মৃতের দেহ মাটির সাথে থাকা চাই। এমনকি যদি কখনো বাধ্য হয়ে মৃতকে তাবূত কিংবা সিন্দুকে দাফন করতে হয়, তবুও সেটার ভিতরের অংশে মাটি লেপন করে দিতে হবে।

দুই. ক্ববরের বাহ্যিক অংশ, যা মানুষের নজরে পড়ে, সেটা পাকা করা-- সাধারণ লোকের ক্ববর হলে নিষিদ্ধ; কিন্তু আউলিয়া, মাশা-ইখ ও আলিমগণের ক্ববর হলে জায়েয। কেননা, সাধারণ মানুষের জন্য এটা করা নিষ্ফল; আর বিশেষ বিশেষ ক্ববরগুলোর মর্যাদা ও সম্মানের কারণ হয়। এটা অনুসারে মুসলমানদের আমল হয়ে আসছে এবং এখনও হচ্ছে। খোদ্ হুযূর [ﷺ] হযরত ওসমান ইবনে মায্'ঊনের ক্ববরের শিরপ্রান্তে পাথর স্থাপন করেছেন।

তিন. ক্ববরের আশে পাশে-- চত্বরটুকু পাকা করা আর মূল ক্ববরটি কাঁচা রাখা। এটা যে কোন অবস্থাতেই জায়েয। সুতরাং এখানে (আলোচ্য হাদীস শরীফে) 'ক্ববর' মানে ক্ববরের আভ্যন্তরীণ অংশ। এ কারণে ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﺒﺮ (ক্ববরের উপর) এরশাদ হয় নি। অথবা 'সাধারণ ক্ববর' বুঝানো হয়েছে, যা থেকে মাশাইখ ও ওলামা-ই কেরামের ক্ববরগুলো স্বতন্ত্র। এখনি এ অধ্যায়ে আসবে যে, নবী করীম [ﷺ] এবং হযরত সিদ্দীক্ব ও হযরত ফারুকের ক্ববরের উপর সম্মাণিত সাহাবীদের যুগে লাল রংয়ের পাথর বিছিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, একেবারে কাঁচা রাখা হয় নি।

◇ টীকাঃ ২.

এভাবে যে, ক্ববরের উপর দেওয়াল বানানো হবে আর ক্ববর দেওয়ালের ভিতর এসে যায়-- এটা হারাম। কারণ এতে কবরের অবমাননা করা হয়। এ কারণেই এখানে ﻋﻠﻴﻪ (সেটার উপর) বলেছেন, ﺣﻮﻟﻪ (সেটার চতুর্দিকে) বলেন নি।

অথবা এভাবে যে, ক্ববরের আশেপাশে ইমারত কিংবা গম্বুজ বানানো হবে। এটা সাধারণ মানুষের কবরের উপর না-জায়েয। কারণ-- এতে কোন লাভ নেই। ওলামা-মাশাইখের ক্ববরের উপর, যেখানে যিয়ারতকারীদের ভিড় থাকে, জায়েয; যাতে লোকেরা সেটার ছায়ায় সহজে ফাতিহা পড়তে পারে। সুতরাং হুযূর [ﷺ] *এর ক্ববর-ই আন্ওয়ারের উপর ইমারত প্রথম থেকে ছিলো। আর যখন ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালিকের যুগে সেটার দেওয়াল পড়ে গিয়েছিলো; তখন সাহাবীগণ তা পুনরায় নির্মাণ করে দিয়েছিলেন।

তাছাড়া, হযরত ওমর হযরত যয়নব বিনতে জাহ্শের ক্ববরের উপর, হযরত আয়েশা তাঁর ভাই আব্দুর রহমানের ক্ববরের উপর, মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়্যাহ্ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাসের ক্ববরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করেছেন। দেখুন-- খোলাসাতুল ওয়াসা এবং 'মুন্তাক্বা শরহে মুআত্তা।'

'মিরক্বাত' এখানে এবং 'শামী' মৃতকে দাফনের আলোচনা শীর্ষক পরিচ্ছেদে বলেছেন- প্রসিদ্ধ ওলামা-মাশাইখের কবরের উপর গম্বুজ বানানো জায়েয।

◇ টীকাঃ ৩.

অর্থাৎ কবরের উপর চড়ে বসে যাওয়া। এটা হারাম। কেননা, এতে কবরের অবমাননা হয়। কিন্তু কবরের পাশে ক্বোরআন তিলাওয়াত করার জন্য বসা কিংবা সেখানকার ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিবেশী হয়ে বসা একেবারে জায়েয। সুতরাং হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা হুযূর [ﷺ] -এর রওযা-ই আন্ওয়ারের পাশেই অবস্থান করতেন এবং চাবি সংরক্ষণ করতেন। আর লোকেরা তাঁর মাধ্যমে হুজুরা শরীফ খুলিয়ে রওযা-ই আন্ওয়ারের যিয়ারত করতেন।

এ মিশকাতেই এর পরবর্তী অধ্যায়ে বোখারী শরীফের বর্ণনার বরাতে আসছে যে, হযরত হাসান ইবনে আলীর কবরের উপর তাঁর বিবি সাহেবা গম্বুজ নির্মাণ করেছেন। আর সেখানে এক বছর যাবৎ সেটার পাশেই অবস্থান করেছেন। এখনও হুযূর [ﷺ] -এর রওযা শরীফের পাশে বহু বহু লোক (প্রতিবেশীর ন্যায়) থাকেন, তাঁদেরকে 'আগওয়াস্' ﺍﻏﻮﺍﺙ বলা হয়। তাঁদের একজন সর্দার থাকেন। তাঁকে 'শায়খুল আগ্ওয়াস' খলীল আবদুস্ সালাম সাহেবের ক্বদম বুচি করেছি। আর তৃতীয় হজ্জের সময় 'শায়খুল আস্ওয়াস' খাজা ইলিয়াসের। ওই প্রতিবেশীকে নজদী সরকারও সরাতে পারে নি।

'মিরক্বাত' প্রণেতা বলেছেন, এখানে 'বসা' মানে 'ইস্তিন্জা'র জন্য বসা। অর্থাৎ কবরের উপর পায়খানা প্রস্রাব করো না।

[সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ২য় খন্ড, পৃ. ৬০১,৬০২, হাদীস নং-১৬০৪ এর টীকাঃ ৭,৮,৯ দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম।


ক্ববরের পাশে চেরাগ জ্বালানো এবং ক্বেবলার দিক থেকে মৃতকে কবরে নামানো প্রসঙ্গঃ


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (১৬১২)]


○ অধ্যায়ঃ [মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা]

[ﻭﻋﻦ ﺍﻥ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﷺ ﺩﺧﻞ ﻗﺒﺮﺍ ﻟﻴﻼ ﻓﺎﺳﺮﺝ ﻟﻪ ﺑﺴﺮﺍﺝ ﻓﺎﺧﺬ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﻭﻗﺎﻝ ﺭﺣﻤﻚ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻥ ﻛﻨﺖ ﻻﻭﺍﻫﺎ ﺗﻼﺀ ﻟﻠﻘﺮﺍﻥ . ‏] : ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻭﻗﺎﻝ ﻓﻰ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﺳﻨﺎﺩﻩ ﺿﻌﻴﻒ )

তাঁরই (হযরত ইবনে আব্বাস) থেকে বর্ণিত, নবী করীম [ﷺ] রাতের বেলায় একটি ক্ববরের নিকট তাশরীফ নিয়ে গেলেন। তখন তাঁর জন্য চেরাগ জ্বালানো হয়েছিলো। (টীকাঃ ১) হুযূর মৃতকে কেবলার দিক থেকে নিয়েছেন। (টীকাঃ ২) আর এরশাদ করেছেন- "আল্লাহ্ তোমার উপর দয়া করুন! তুমি খুব কান্নাকারী এবং ক্বোরআন তিলাওয়াতকারী ছিলে।" (টীকাঃ ৩)

[তিরমিযী]

'শরহে সুন্নাহ'র প্রণেতা বলেছেন, সেটার সনদ 'দুর্বল পর্যায়ের। (টীকাঃ ৪)

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


                                   

১. (নবী করীম [ﷺ] রাতের বেলায় একটি ক্ববরের নিকট তাশরীফ নিয়ে গেলেন। তখন তাঁর জন্য চেরাগ জ্বালানো হয়েছিলো।)

◇ টীকাঃ ১.

অর্থাৎ রাতে মৃতকে দাফন করা হয়েছে বিধায় মৃতের জন্য কিংবা হুযূরের জন্য চেরাগ দ্বারা আলোকিত করা হয়েছিলো। এ থেকে দু'টি মাস্'আলা জানা গেলোঃ

● এক. কবরের উপর আগুন নিয়ে যাওয়া নিষেধ। কিন্তু চেরাগ (প্রদীপ) নিয়ে যাওয়া জায়েয। কেননা, # এটা আলোর জন্য , # মুশরিকদের সাথে 

সাজূয্যের # জন্য নয় । মুশরিকগণ মৃতের সাথে আগুন নিয়ে যায়- আগুনকে পূজা করা কিংবা মৃতকে জ্বালানোর জন্য। সুতরাং বুযুর্গের মাযারের পাশে লোবান কিংবা আগর বাতি জ্বালানো জায়েয; যাতে মৃতের মনে শান্তি পায় এবং যিয়ারতকারীগণ আরাম পায়। এ কারণে মৃতের কাফনে খুশবু দেওয়া সুন্নাত যাকে ফক্বীহগণ 'ইস্তিজ্মার' বলেন।

● দুই. প্রয়োজন হলে কবরের পাশে চেরাগ জ্বালানো জায়েয। সুতরাং যেসব বুযুর্গের মাযারে দিনরাত যিয়ারতকারীদের ভিড় ও ক্বোরআন তেলাওয়াত অব্যাহত থাকে, সেখানে প্রয়োজন অনুসারে আলো জ্বালানো যাবে। এর দলীল হচ্ছে- এ হাদীস। হুযূর-ই আনওয়ার [ﷺ] -এর রওযা-ই আনওয়ারের উপর সব সময়, এখন নজদীদের যুগে আরো বেশী উন্নতমানের ব্যবস্থায় আলো জ্বালানো হয়। বিশেষ করে গম্বুজ শরীফের উপর অন্তত: বিশটি বাল্ব লাগানো হয়েছে। যেসব হাদীস শরীফে কবরের উপর চেরাগ জ্বালানোর নিষেধ এসেছে, সেগুলোতে # বিনা প্রয়োজনে কবরের উপর # চেরাগ রেখে আসার কথা

# বুঝানো হয়েছে । কারণ, তাতে অপচয় করা হয়।

স্মর্তব্য যে, বুযুর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্যও আলো জ্বালানো যায়। যেমনঃ কা'বা মু'আয্যামার প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য সেটার উপর হিলাফ থাকে এবং কা'বা শরীফের দরজার উপর অত্যন্ত মূল্যবান শম'ই কাফূরী (অত্যুজ্জ্বল প্রদীপ বিশেষ) জ্বালানো হয়। রমযান মাসে মসজিদগুলোতে আলোকসজ্জা করার পক্ষে দলীলও এখান থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। [দেখুন- জা'আল হক্বঃ প্রথম খন্ড]

২. (হুযূর মৃতকে কেবলার দিক থেকে নিয়েছেন।)

◇ টীকাঃ ২.

অর্থাৎ মৃতকে কবরে ক্বেবলার দিক থেকে নামিয়েছেন। এটাই ইমাম আযমের অভিমত। আর এ হাদীস শরীফ এর পক্ষে দলীল। এর পূর্ণাঙ্গ আলোচনা আমি এক্ষুনি পূর্ববর্তী হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় করেছি।

৩. (এরশাদ করেছেন- "আল্লাহ্ তোমার উপর দয়া করুন! তুমি খুব কান্নাকারী এবং ক্বোরআন তিলাওয়াতকারী ছিলে।)

◇ টীকাঃ ৩.

অর্থাৎ হুযূর [ﷺ] মৃতকে এ সম্বোধন করতে করতে দাফন করেছেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, মুমিনের মৃত্যুর পর প্রশংসা করা চাই। তাছাড়া মৃতরা শুনতে পায়। জীবিতরা তাদেরকে সালামও করে, বরং তাদেরকে সম্বোধন করে কথাবার্তাও বলে। মৃতদের শ্রবণ করা ও তাদেরকে সম্বোধন করে কথা বলা সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ ও বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত। এর পূর্ণাঙ্গ আলোচনা আমার কিতাব 'ইলমুল ক্বোরআন' -এ দেখুন। ক্বোরআন পাকে যা এরশাদ হয়েছে - 'হে হাবীব! আপনি অন্ধদের হিদায়ত করতে পারবেন না এবং মৃতদের শোনাতে পারবেন না।' - # তাতে হৃদয়ের অন্

ধ ও মৃতদের কথা বুঝানো উদ্দেশ্য । অর্থাৎ কাফিরগণ। এ কারণেই সেখানে মৃতদের বিপরীতের মু'মিনের কথা বলা হয়েছে। যেমনঃ এরশাদ হয়েছে- [ﺇِﻥ ﺗُﺴْﻤِﻊُ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻦ ﻳُﺆْﻣِﻦُ ﺑِﺂﻳَﺎﺗِﻨَﺎ]

[আপনি শুনাবেন না, কিন্তু (তাকে) যে আমার আয়াতগুলোর উপর ঈমান আনে; (২৭:৮১)]

স্মর্তব্য যে, এ মাইয়্যেত সাইয়্যেদুনা আব্দুল্লাহ্ ইয়াজাওয়াঈন। [মিরক্বাত]

৪. ('শরহে সুন্নাহ'র প্রণেতা বলেছেন, সেটার সনদ 'দুর্বল পর্যায়ের।)

◇ টীকাঃ ৪.

কিন্তু তিরমিযী এ হাদীসকে 'হাসান' পর্যায়ের বলেছেন। কেননা, সেটার সনদের মধ্যে 'মিনহাল ইবনে খলীফা আছেন, যাঁকে ইবনে মা'ঈন 'দুর্বল' বলেছেন। কিন্তু অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ 'সিক্বাহ্' (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন; যাঁদের কারণে এ হাদীস 'হাসান' (উত্তম) হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে শাফে'ঈগণ ইমাম তিরমিযীর 'হাসান' বলে মন্তব্যটি উল্লেখ করেন না; কিন্তু শরহে সুন্নাহ্'র দুর্বল বলে মন্তব্যটা উল্লেখ করে থাকেন। এটাও আশ্চর্যের বিষয় যে, এ হাদীস শরীফ 'হাসান' হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা গ্রহণ করেন না। আর পূর্ববর্তী হাদীস; যা এক্ষুনি উল্লেখ করা হয়েছে, যা সর্বসম্মতভাবে 'দুর্বল', (সেটা) অনুসারে কাজ করেন। ইমাম সুয়ূতী [ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ] বলেন, # এ হাদীস শরীফ বহু সনদ সহকারে 'হযরত ইবনে মাস্'ঊদ' থেকে # বর্ণিত হয়েছে । তিনি বলেন, আমি যেনো দেখছি যে, তাবূকের যুদ্ধে নবী করিম [ﷺ] এবং হযরত সিদ্দীক্ব ও হযরত ফারুক্ব, আব্দুল্লাহ্ যুল ইয়াজাওয়াঈনের দাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন। আর হুযূর [ﷺ] তাঁকে ক্বেবলার দিক থেকে ক্ববরে নামাচ্ছেন এবং একথা বলছিলেন। তাছাড়া দাফনের পরক্ষণে বলেছেন, 'হে আল্লাহ্! আমি তার উপর সন্তুষ্ট। তুমিও তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। এমনকি আমি আরজু করেছিলাম, 'আহা! যদি এ মাইয়্যেত আমি হতাম! [মিরক্বাত]


❏ রাসূলাল্লাহ্ [ﷺ] যখন মৃতকে কবরে নামাতেন তখন কি দো'আ পড়তেন�

                           


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (১৬১৩)]


○ অধ্যায়ঃ [মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা]

[ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺍﻥ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﷺ ﻛﺎﻥ ﺍﺫﺍ ﺍﺩﺧﻞ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﺍﻟﻘﺒﺮ ﻗﺎﻝ ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻪ ﻭﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﻋﻠﻰ ﻣﻠﺔ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻓﻰ ﺭﻭﻳﺔ ﻭﻋﻠﻰ ﺳﻨﺔ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ . ‏]

: ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﻭﺭﻭﻯ ﺍﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ )

হযরত ইবনে ওমর [ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ] থেকে বর্ণিত, নবী করীম [ﷺ] যখন মৃতকে কবরে নামাতেন, তখন এরশাদ করতেন, "আল্লাহ্'র নামে আল্লাহ্'রই সাহায্যক্রমে এবং আল্লাহ্'র রাসূলের দ্বীনের উপর।" অন্য এক বর্ণনায় আছে- 'আল্লাহ্'র রাসূলের সুন্নাতের উপর।' (টীকাঃ ১)

[আহমদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্] ইমাম আবূ দাঊদ দ্বিতীয় বর্ণনাটা করেছেন।

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


                                   

◇ টীকাঃ ১.

অর্থাৎ নামানোর সময় এ কলেমাগুলো বলছিলেন।

স্মর্তব্য যে, সরকার-ই মদীনা এ কয়েকজন উত্তম সাহাবীকেই কবরে নামিয়েছেন। কিন্তু এ কলেমাগুলো সবার দাফনের সময় সব সময় বলতেন। সুতরাং ﺍﺩﺧﻞ (প্রবেশ করিয়েছেন) -এর অর্থ প্রত্যক্ষভাবে, কিংবা পরোক্ষভাবে কবরে নামানো।



ক্ববরের পাশে চেরাগ জ্বালানো এবং ক্বেবলার দিক থেকে মৃতকে কবরে নামানো প্রসঙ্গঃ


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (১৬১২)]


○ অধ্যায়ঃ [মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা]

[ﻭﻋﻦ ﺍﻥ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﷺ ﺩﺧﻞ ﻗﺒﺮﺍ ﻟﻴﻼ ﻓﺎﺳﺮﺝ ﻟﻪ ﺑﺴﺮﺍﺝ ﻓﺎﺧﺬ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﻭﻗﺎﻝ ﺭﺣﻤﻚ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻥ ﻛﻨﺖ ﻻﻭﺍﻫﺎ ﺗﻼﺀ ﻟﻠﻘﺮﺍﻥ . ‏] : ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻭﻗﺎﻝ ﻓﻰ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﺳﻨﺎﺩﻩ ﺿﻌﻴﻒ )

তাঁরই (হযরত ইবনে আব্বাস) থেকে বর্ণিত, নবী করীম [ﷺ] রাতের বেলায় একটি ক্ববরের নিকট তাশরীফ নিয়ে গেলেন। তখন তাঁর জন্য চেরাগ জ্বালানো হয়েছিলো। (টীকাঃ ১) হুযূর মৃতকে কেবলার দিক থেকে নিয়েছেন। (টীকাঃ ২) আর এরশাদ করেছেন- "আল্লাহ্ তোমার উপর দয়া করুন! তুমি খুব কান্নাকারী এবং ক্বোরআন তিলাওয়াতকারী ছিলে।" (টীকাঃ ৩)

[তিরমিযী]

'শরহে সুন্নাহ'র প্রণেতা বলেছেন, সেটার সনদ 'দুর্বল পর্যায়ের। (টীকাঃ ৪)

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


                                   

১. (নবী করীম [ﷺ] রাতের বেলায় একটি ক্ববরের নিকট তাশরীফ নিয়ে গেলেন। তখন তাঁর জন্য চেরাগ জ্বালানো হয়েছিলো।)

◇ টীকাঃ ১.

অর্থাৎ রাতে মৃতকে দাফন করা হয়েছে বিধায় মৃতের জন্য কিংবা হুযূরের জন্য চেরাগ দ্বারা আলোকিত করা হয়েছিলো। এ থেকে দু'টি মাস্'আলা জানা গেলোঃ

● এক. কবরের উপর আগুন নিয়ে যাওয়া নিষেধ। কিন্তু চেরাগ (প্রদীপ) নিয়ে যাওয়া জায়েয। কেননা, # এটা আলোর জন্য , # মুশরিকদের সাথে 

সাজূয্যের # জন্য নয় । মুশরিকগণ মৃতের সাথে আগুন নিয়ে যায়- আগুনকে পূজা করা কিংবা মৃতকে জ্বালানোর জন্য। সুতরাং বুযুর্গের মাযারের পাশে লোবান কিংবা আগর বাতি জ্বালানো জায়েয; যাতে মৃতের মনে শান্তি পায় এবং যিয়ারতকারীগণ আরাম পায়। এ কারণে মৃতের কাফনে খুশবু দেওয়া সুন্নাত যাকে ফক্বীহগণ 'ইস্তিজ্মার' বলেন।

● দুই. প্রয়োজন হলে কবরের পাশে চেরাগ জ্বালানো জায়েয। সুতরাং যেসব বুযুর্গের মাযারে দিনরাত যিয়ারতকারীদের ভিড় ও ক্বোরআন তেলাওয়াত অব্যাহত থাকে, সেখানে প্রয়োজন অনুসারে আলো জ্বালানো যাবে। এর দলীল হচ্ছে- এ হাদীস। হুযূর-ই আনওয়ার [ﷺ] -এর রওযা-ই আনওয়ারের উপর সব সময়, এখন নজদীদের যুগে আরো বেশী উন্নতমানের ব্যবস্থায় আলো জ্বালানো হয়। বিশেষ করে গম্বুজ শরীফের উপর অন্তত: বিশটি বাল্ব লাগানো হয়েছে। যেসব হাদীস শরীফে কবরের উপর চেরাগ জ্বালানোর নিষেধ এসেছে, সেগুলোতে # বিনা প্রয়োজনে কবরের উপর # চেরাগ রেখে আসার কথা

# বুঝানো হয়েছে । কারণ, তাতে অপচয় করা হয়।

স্মর্তব্য যে, বুযুর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্যও আলো জ্বালানো যায়। যেমনঃ কা'বা মু'আয্যামার প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য সেটার উপর হিলাফ থাকে এবং কা'বা শরীফের দরজার উপর অত্যন্ত মূল্যবান শম'ই কাফূরী (অত্যুজ্জ্বল প্রদীপ বিশেষ) জ্বালানো হয়। রমযান মাসে মসজিদগুলোতে আলোকসজ্জা করার পক্ষে দলীলও এখান থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। [দেখুন- জা'আল হক্বঃ প্রথম খন্ড]

২. (হুযূর মৃতকে কেবলার দিক থেকে নিয়েছেন।)

◇ টীকাঃ ২.

অর্থাৎ মৃতকে কবরে ক্বেবলার দিক থেকে নামিয়েছেন। এটাই ইমাম আযমের অভিমত। আর এ হাদীস শরীফ এর পক্ষে দলীল। এর পূর্ণাঙ্গ আলোচনা আমি এক্ষুনি পূর্ববর্তী হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় করেছি।

৩. (এরশাদ করেছেন- "আল্লাহ্ তোমার উপর দয়া করুন! তুমি খুব কান্নাকারী এবং ক্বোরআন তিলাওয়াতকারী ছিলে।)

◇ টীকাঃ ৩.

অর্থাৎ হুযূর [ﷺ] মৃতকে এ সম্বোধন করতে করতে দাফন করেছেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, মুমিনের মৃত্যুর পর প্রশংসা করা চাই। তাছাড়া মৃতরা শুনতে পায়। জীবিতরা তাদেরকে সালামও করে, বরং তাদেরকে সম্বোধন করে কথাবার্তাও বলে। মৃতদের শ্রবণ করা ও তাদেরকে সম্বোধন করে কথা বলা সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ ও বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত। এর পূর্ণাঙ্গ আলোচনা আমার কিতাব 'ইলমুল ক্বোরআন' -এ দেখুন। ক্বোরআন পাকে যা এরশাদ হয়েছে - 'হে হাবীব! আপনি অন্ধদের হিদায়ত করতে পারবেন না এবং মৃতদের শোনাতে পারবেন না।' - # তাতে হৃদয়ের অন্

ধ ও মৃতদের কথা বুঝানো উদ্দেশ্য । অর্থাৎ কাফিরগণ। এ কারণেই সেখানে মৃতদের বিপরীতের মু'মিনের কথা বলা হয়েছে। যেমনঃ এরশাদ হয়েছে- [ﺇِﻥ ﺗُﺴْﻤِﻊُ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻦ ﻳُﺆْﻣِﻦُ ﺑِﺂﻳَﺎﺗِﻨَﺎ]

[আপনি শুনাবেন না, কিন্তু (তাকে) যে আমার আয়াতগুলোর উপর ঈমান আনে; (২৭:৮১)]

স্মর্তব্য যে, এ মাইয়্যেত সাইয়্যেদুনা আব্দুল্লাহ্ ইয়াজাওয়াঈন। [মিরক্বাত]

৪. ('শরহে সুন্নাহ'র প্রণেতা বলেছেন, সেটার সনদ 'দুর্বল পর্যায়ের।)

◇ টীকাঃ ৪.

কিন্তু তিরমিযী এ হাদীসকে 'হাসান' পর্যায়ের বলেছেন। কেননা, সেটার সনদের মধ্যে 'মিনহাল ইবনে খলীফা আছেন, যাঁকে ইবনে মা'ঈন 'দুর্বল' বলেছেন। কিন্তু অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ 'সিক্বাহ্' (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন; যাঁদের কারণে এ হাদীস 'হাসান' (উত্তম) হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে শাফে'ঈগণ ইমাম তিরমিযীর 'হাসান' বলে মন্তব্যটি উল্লেখ করেন না; কিন্তু শরহে সুন্নাহ্'র দুর্বল বলে মন্তব্যটা উল্লেখ করে থাকেন। এটাও আশ্চর্যের বিষয় যে, এ হাদীস শরীফ 'হাসান' হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা গ্রহণ করেন না। আর পূর্ববর্তী হাদীস; যা এক্ষুনি উল্লেখ করা হয়েছে, যা সর্বসম্মতভাবে 'দুর্বল', (সেটা) অনুসারে কাজ করেন। ইমাম সুয়ূতী [ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ] বলেন, # এ হাদীস শরীফ বহু সনদ সহকারে 'হযরত ইবনে মাস্'ঊদ' থেকে # বর্ণিত হয়েছে । তিনি বলেন, আমি যেনো দেখছি যে, তাবূকের যুদ্ধে নবী করিম [ﷺ] এবং হযরত সিদ্দীক্ব ও হযরত ফারুক্ব, আব্দুল্লাহ্ যুল ইয়াজাওয়াঈনের দাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন। আর হুযূর [ﷺ] তাঁকে ক্বেবলার দিক থেকে ক্ববরে নামাচ্ছেন এবং একথা বলছিলেন। তাছাড়া দাফনের পরক্ষণে বলেছেন, 'হে আল্লাহ্! আমি তার উপর সন্তুষ্ট। তুমিও তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। এমনকি আমি আরজু করেছিলাম, 'আহা! যদি এ মাইয়্যেত আমি হতাম! [মিরক্বাত]


❏ রাসূলাল্লাহ্ [ﷺ] যখন মৃতকে কবরে নামাতেন তখন কি দো'আ পড়তেন�

                           


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (১৬১৩)]


○ অধ্যায়ঃ [মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা]

[ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺍﻥ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﷺ ﻛﺎﻥ ﺍﺫﺍ ﺍﺩﺧﻞ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﺍﻟﻘﺒﺮ ﻗﺎﻝ ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻪ ﻭﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﻋﻠﻰ ﻣﻠﺔ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻓﻰ ﺭﻭﻳﺔ ﻭﻋﻠﻰ ﺳﻨﺔ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ . ‏]

: ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﻭﺭﻭﻯ ﺍﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ )

হযরত ইবনে ওমর [ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ] থেকে বর্ণিত, নবী করীম [ﷺ] যখন মৃতকে কবরে নামাতেন, তখন এরশাদ করতেন, "আল্লাহ্'র নামে আল্লাহ্'রই সাহায্যক্রমে এবং আল্লাহ্'র রাসূলের দ্বীনের উপর।" অন্য এক বর্ণনায় আছে- 'আল্লাহ্'র রাসূলের সুন্নাতের উপর।' (টীকাঃ ১)

[আহমদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্] ইমাম আবূ দাঊদ দ্বিতীয় বর্ণনাটা করেছেন।

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


                                   

◇ টীকাঃ ১.

অর্থাৎ নামানোর সময় এ কলেমাগুলো বলছিলেন।

স্মর্তব্য যে, সরকার-ই মদীনা এ কয়েকজন উত্তম সাহাবীকেই কবরে নামিয়েছেন। কিন্তু এ কলেমাগুলো সবার দাফনের সময় সব সময় বলতেন। সুতরাং ﺍﺩﺧﻞ (প্রবেশ করিয়েছেন) -এর অর্থ প্রত্যক্ষভাবে, কিংবা পরোক্ষভাবে কবরে নামানো।


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (১৬১৮)]


○ অধ্যায়ঃ [মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা]

[ﻭﻋﻦ ﺍﻟﻘﺎﺳﻢ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﻗﺎﻝ ﺩﺧﻠﺖ ﻋﻠﻰ ﻋﺂﺋﺸﺔ ﻓﻘﻠﺖ ﻳﺎ ﺍﻣﺎﻩ ﺍﻛﺸﻔﻰ ﻋﻦ ﻗﺒﺮ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﷺ ﻭﺻﺎﺣﺒﻴﻪ ﻓﻜﺸﻔﺖ ﻟﻰ ﻋﻦ ﺛﻠﺜﺔ ﻗﺒﻮﺭ ﻻ ﻣﺸﺮﻓﺔ ﻭﻻ ﻻﻃﺌﺔ ﻣﻄﺒﻮﺣﺔ ﺑﺒﻄﺤﺎﺀ ﺍﻟﻌﺮﺻﺔ ﺍﻟﺤﻤﺮﺍﺀ . ‏] : ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ )

হযরত ক্বাসেম ইবনে মুহাম্মদ [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] (টীকাঃ ১) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আয়েশার নিকট গেলাম এবং আরয করলাম, "আম্মাজান! আমাকে নবী করীম [ﷺ] ও তাঁর দু'সাথীর কবর খুলে দেখিয়ে দিন। (টীকাঃ ২) তিনি আমার সামনে কবর তিনটি খুললেন, যেগুলো না বেশী উঁচু ছিলো, না মাটির সমান, যেগুলোর উপর ময়দানের লাল বড় পাথর বিছানো ছিলো।" (টীকাঃ ৩)

[আবূ দাঊদ]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


                                   

১। (হযরত ক্বাসেম ইবনে মুহাম্মদ [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ])

◇ টীকাঃ ১.

তিনি হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্বের পৌত্র। অর্থাৎ মুহাম্মদ ইবনে আবূ বকরের পুত্র।

২। (তিনি বলেন, আমি হযরত আয়েশার নিকট গেলাম এবং আরয করলাম, "আম্মাজান! আমাকে নবী করীম [ﷺ] ও তাঁর দু'সাথীর কবর খুলে দেখিয়ে দিন।)

◇ টীকাঃ ২.

হুজুরা শরীফ বন্ধ থাকতো, যা'তে নুবূয়তের সমুজ্জ্বল সূর্যের পাশে দু'টি আলোকোজ্জ্বল পূর্ণিমার চাঁদ শু'য়ে আছেন। এর চাবি হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বার নিকট থাকতো। যে কারো যিয়ারত করার ইচ্ছা হতো, তাঁর দ্বারা হুজুরা শরীফ খুলিয়ে যিয়ারত করতেন।

এ থেকে বুঝা গেলো যে, বুযুর্গদের কবরের পাশে অবস্থানকারী থাকা, ওখানে কবরের ব্যবস্থাপনা করা, চাবি নিজের নিকট রাখা- সবই সুন্নাত-ই সাহাবা। এ হাদীস শরীফ বহু মাস্'আলার উৎস দলীল।

৩। (তিনি আমার সামনে কবর তিনটি খুললেন, যেগুলো না বেশী উঁচু ছিলো, না মাটির সমান, যেগুলোর উপর ময়দানের লাল বড় পাথর বিছানো ছিলো।)

◇ টীকাঃ ৩.

এ থেকে বুঝা গেলো যে, প্রথম থেকেই তাঁর কবর শরীফ নিরেট কাঁচা ছিলো না; বরং সেটার উপর লাল রংয়ের পাথর বিছানো ছিলো। সমস্ত দর্শক লাল পাথরের কথাই বর্ণনা করেছেন।


□ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ

f/Ishq-E-Mustafa ﷺ

[সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ২য় খন্ড, পৃ. ৬১০, হাদীস নং-১৬১৮ এর টীকাঃ ৩৫, ৩৬, ৩৭ দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম।]

 
Top