জানাযার নামাযের পর দুআ প্রসঙ্গে আলোচনা


এ আলোচনাটা দু’টি অথ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে এ দুআর প্রমাণ এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে এ প্রসঙ্গে উত্থাপিত আপত্তিসমূহ ও এর জবাবসমূহ দেয়া হয়েছে। 



প্রথম অধ্যায়

জানাযার নামাযের পর দুআ করার প্রমাণ


মুসলমান মারা যাবার তিন পর অবস্থায় থাকে। 

(১) জানাযার নামাযের আগে, 

(২) জানাযার নামাযের পর ও দাফনের আগে এবং 

(৩) দাফনের পর। এ তিন অবস্থায় মৃতব্যক্তির জন্য দুআ ও ঈসালে ছওয়াব করা জায়েয এবং উত্তম। অবশ্য মৃতব্যক্তির গোসলের আগে এর পার্শ্বে বসে কেউ যদি কুরআন পড়তে চান, তাহলে লাশকে ঢেকে রাখবেন, কেননা তখন তা নাপাক। গোসলের পর যে কোন অবস্থায় কুরআন ইত্যাদি পড়তে পারেন। বিরোধিতাকারীরা নামাযের আগে ও দাফনের পরে দুআ ইত্যাদি জায়েয মনে করে। কিন্তু নামাযের পর ও দাফনের আগে দুআ করাকে নাজায়েয, হারাম, বিদ্আত, শিরক আরও কত কিছুইনা বলে। এ অধ্যায়ে এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং দুআ করার সমথর্নে প্রমাণ দেয়া হয়েছে। 


❏ মিশকাত শরীফের صلوة الجنازة অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে- 


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقُولُ: إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَ.


-‘‘যখন তোমরা মৃতব্যক্তির জানাযা পড়ে ফেল, তখন তার জন্য আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করবে।’’  ১২৫

➥{সুনানে আবি দাউদ, ৩/২১০ পৃঃ  হা/৩১৯৯, সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৪৮০ পৃঃ  হা/১৪৯৭, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৫২৭ পৃঃ  হা/১৬৭৪, এ ৩ টি গ্রন্থের তাহকীকে আলবানী এটির সনদকে ‘হাসান’ বলেছেন।}


এখানে ف এর দ্বারা বোঝা যায় যে নামাযের পর যেন অনতিবিলম্বে দুআ করা হয়। যারা উপরোক্ত বাক্যের এ অর্থ করে-‘নামাযের মধ্যে এর জন্য দুআ কর, তারা ف (ফা) এর অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞ। আরবী ব্যকারণ অনুযায়ী صَلَّيْتُمْ হচ্ছে শর্ত এবং فَأَخْلِصُوا এর জযা। শর্ত ও জযার মধ্যে প্রভেদ থাকা প্রয়োজন; একটা অন্যটার অন্তর্ভুক্ত নয়। আর صَلَّيْتُمْ হলো অতীথ কাল জ্ঞাপন ক্রিয়া এবং فَأَخْلِصُوا হলো নির্দেশাত্মক ক্রিয়া। তাই বোঝা গেল, নামায পড়ার পরই দুআর নিদের্শ রয়েছে। যেমন-


فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانْتَشِرُوا


-‘‘যখন খাওয়া শেষ হবে, তখন ছড়িয়ে পড়।’’  ১২৬

➥{সূূরা আহযাব, আয়াত নং-৫৩}


এতে খাওয়ার পর যেতে বলা হয়েছে, খাওয়ার মাঝখানে নয়। এবং


إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ


-‘‘যখন নামাযের জন্য দাঁড়াবে, তখন তোমাদের মুখ ধৌত কর।’’১২৭  

➥{ সূরা মায়েদা, আয়াত নং-৬}


এতে নামাযের জন্য তৈরী হওয়াকে বোঝানো হয়েছে। নামাযের কিয়ামের কথা বলা হয়নি, যা إِلَى অব্যয় দ্বারা প্রতীয়মান হলো। আর এখানে নামায পড়ার ইচ্ছা পোষণ করার পরই ওযুর কথা বলা হয়েছে। তাই ف (ফা) দ্বারা বিলম্ব অর্থই প্রকাশ পায়। বিনা করণে আসল অর্থ বাদ দিয়ে রুপক অর্থ গ্রহণ করা নাজায়েয। 


❏ মিশকাত শরীফের একই জায়গায় আরও উলে­খিত আছে-


عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ عَلَى الجَنَازَةِ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ.


-‘‘হুযুর আলাইহিস সালাম জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন।’’  ১২৮

➥{টিকাঃ

ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ২/৩৩৬ পৃঃ  হা/১০২৬, ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, হা/১৪৯৫, 


☞ইমাম তিরমিযি এ হাদিস সংকলন করে বলেন-

حَدِيثُ ابْنِ عَبَّاسٍ حَدِيثٌ لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِذَاكَ الْقَوِيِّ، إِبْرَاهِيمُ بْنُ عُثْمَانَ هُوَ أَبُو شَيْبَةَ الوَاسِطِيُّ مُنْكَرُ الحَدِيثِ

-‘‘ইবনে আব্বাসের এ হাদিসটির সনদ শক্তিশালী নয়, কেননা এ সনদে ইবরাহিম ইবনু উসমান যিনি আবু শায়বাহ আল-ওয়াসেতী নামে পরিচিত তিনি মুনকারুল হাদিস বা আপত্তিকর হাদিস বর্ণনাকারী।’’(ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ২/৩৩৬ পৃঃ  হা/১০২৬) 

☞তাই আহলে হাদিসরা এ হাদিস দিয়ে দলিল দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।}


❏ এর  ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আশআতুল লুমআত গ্রন্থে উলে­খিত আছে -


واحتمال دارد كه برجنازه بعد از نماز ياپيش ازاں بقصد تبرك خوانده باشد چنانكه آلاں متعارف است.


-‘‘সম্ভবতঃ হুযুর আলাইহিস সালাম নামাযের পর বা আগে বরকতের জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করেছন। যেমন আজকাল এর প্রচলন দেখা যায়।’’  ১২৯

➥{শায়খ আব্দুল হক মুুহাদ্দিসে দেহলভী, আশিয়াতুল লুম’আত (ফারসী), খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৭৩১, মাকতাবায়ে হাক্কানীয়া, পেশওয়ার, পাকিস্তান।}


এর থেকে বোঝা গেল, শেখ আবদুল হক (رحمة الله) এর যুগেও জানাযার নামাযের আগে ও পরে বরকতের  চন্য সূরা পাঠ প্রচলন ছিল। তিনি একে নিষেধ করেননি, বরং এটাকে হাদীছের অনুসরণই বলতে চেয়েছেন। 


❏ প্রসিদ্ধ ‘ফতহুল কাদির’ গ্রন্থের ‘কিতাবুল জানায়েয’ এর জানাযার নামায পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে, হুযুর আলাইহিস সালাম মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে মুতা যুদ্ধের খবর দিলেন। এর মধ্যে হযরত জাফর ইবনে আবি তালিব (رضي الله عنه) এর শাহাদাতের খবরও দিলেন।


فَصَلَّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَدَعَا لَهُ وَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لَهُ.


-‘‘অতঃপর তার জানাযার নামায পড়লেন এবং তার জন্য দুআ করলেন এবং লোকদেরকে বললেন তোমরাও তার মাগফিরাতের দুআ কর।’’  ১৩০

➥{টিকাঃ

ক. আল্লামা ইমাম কামালুদ্দীন ইবনে হুমাম : ফাতহুল ক্বাদীর : কিতাবুয জানাইয : ২/১১৭ পৃঃ , 

খ. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী : উমদাদুল ক্বারী : ৮/২২ পৃঃ , 

গ.আল্লামা ওয়াকেদী : কিতাবুযল মাগাজী : ২/২১০-২১১ পৃঃ }


উলে­খিত ইবারতে دَعَا শব্দের আগে ব্যবহৃত وَ অব্যয় দ্বারা বোঝা যায় যে, এ দুআ নামাযের পরেই করা হয়েছিল। 


❏ বিখ্যাত সিরাতবিদ ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী (رحمة الله) ➥{ওফাত ৯২৩ হি.} তাঁর বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থ ‘মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া’ الفصل الثالث فى إنبائه ص بالأنباء المغيبات অধ্যায়ে এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেন-  


جلس النبى- صلى الله عليه وسلم- على المنبر، فكشف له حتى نظر إلى معركتهم فقال: ্রأخذ الراية زيد بن حارثة حتى استشهد ، فصلى عليه ثم قال: استغفرو له، ثم أخذ الراية جعفر بن أبى طالب حتى استشهد ، فصلى عليه ثم قال: استغفروا لأخيكم جعفر، ثم أخذ الراية عبد الله بن رواحة فاستشهد فصلى عليه، ثم قال:استغفروا لأخيكم ----- الخ.


-‘‘রাসুল (ﷺ) মিম্বার শরীফে আরোহণ করলেন অতঃপর আল্লাহ তা‘য়ালা মুতার যুদ্ধের চিত্র তাঁর হাবীবের নিকট প্রকাশিত করলেন; তিনি যুদ্ধের অবস্থা দেখতে লাগলেন। অতঃপর বললেন এখন যায়েদ বিন হারেসা (رضي الله عنه) শহীদ হয়েছেন; অত:পর রাসূল (ﷺ) সহ আমরা তাঁর জানাযার নামাজ পড়লাম তারপর বললেন তোমরা তাঁর জন্য দোয়া ইস্তেগফার কর। তারপর বললেন এখন যাফর বিন আবি তালেব (رضي الله عنه) ঝান্ডা হাতে নিয়েছেন এবং তিনি শহীদ হয়েগেছেন; অত:পর রাসূল (ﷺ) সহ আমরা তাঁর জানাযার নামায পড়লাম তারপর বললেন তোমরা তোমাদের ভাই যাফরের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া ইস্তেগফার কর। তারপর বললেন এখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (رضي الله عنه) ঝান্ডা হাতে নিয়েছেন এবং তিনি শহীদ হয়েগেছেন; অত:পর রাসূল (ﷺ) সহ আমরা তাঁর জানাযার নামাজ পড়লাম তারপর বললেন তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া ইস্তেগফার কর।’’  ১৩১

➥{ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, ৩/১৩২পৃঃ  মাকতুবাতুত তাওফিকহিয়্যাহ, কায়রু, মিশর, বায়হাকী , দালায়েলুল নবুয়ত :- ৪/৩৬৮-৩৬৯পৃঃ }


একই রকম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রওয়াহা (رضي الله عنه) জানাযার পর দুআ করেছিলেন। সুতরাং প্রমাণিত হলো ওয, জানাযার পর মাগফিরাতের জন্য দুআ করা জায়েয। 


❏ কানযুল উম্মাল নামক কিতাবে জানায়েয শীর্ষক অধ্যায়ে (এছাড়া ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তাদের হাদিস গ্রন্থে বর্ণনা করেন)-


عَنْ إِبْرَاهِيمَ الْهَجَرِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى، قَالَ: تُوُفِّيَتْ بِنْتٌ لَهُ فَتَبِعَهَا عَلَى بَغْلَةٍ يَمْشِي خَلْفَ الْجِنَازَةِ، وَنِسَاءٌ يَرْثِينَهَا، فَقَالَ: يَرْثِينَ، أَوْ لَا يَرْثِينَ، فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الْمَرَاثِي .وَلْتُفِضْ إِحْدَاكُنَّ مِنْ عَبْرَتِهَا مَا شَاءَتْ، ثُمَّ ্রصَلَّى عَلَيْهَا فَكَبَّرَ عَلَيْهَا أَرْبَعًا، ثُمَّ قَامَ بَعْدَ الرَّابِعَةِ قَدْرَ مَا بَيْنَ التَّكْبِيرَتَيْنِ يَسْتَغْفِرُ لَهَا وَيَدْعُوগ্ধ وَقَالَ: ্রكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ هَكَذَاগ্ধ هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ.


-‘‘তাবেয়ী হযরত ইব্রাহিম হাজরী (رحمة الله) বলেন আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আওফা (رضي الله عنه) যিনি বাইতুর রিদওয়ানে উপস্থিত ছিলেন। তার কন্যার ওফাত হলে তিনি তার মেয়ের কফিনের পিছনে একটি খচরের উপর সাওয়ার হয়ে যাচ্ছেন। তখন মহিলারা কান্না করতে ছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেন তোমরা মর্সিয়া করো না, যেহেতু হুযুর (ﷺ) মর্সিয়া থেকে নিষেধ করেছেন। তবে তোমাদের মধ্যে যে কেউ চায় অশ্রম্ন ঝরাতে পারবে। এরপর জানাযার নামায চারটি তাকবীরের মধ্যে সম্পন্ন করলেন। চতুর্থ তাকবীরের পর, দুই তাকবীরের মধ্যেখানের  সময় পরিমাণ দোয়া করতেছিলেন এবং তিনি (সাহাবী) বললেন অনুরূপ হুযুর (ﷺ) জানাযায় করতেন।’’  ১৩২

➥{আহমদ : আল-মুসনাদ : ৫/৪৭৪-৪৭৫পৃঃ  হাদিস : ১৮৩৫১; ইমাম বায্যার : আল-মুসনাদ : ৮/২৮৭পৃঃ হাদিস : ৩৩৫৫; ইমাম বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা : ৪/৭০পৃঃ  হাদিস : ১৫৮১; ইমাম জালালুদ্দিন সূয়তি : জামিউল জাওয়ামে : ১৪/৪৯৩ পৃঃ  হাদিস : ১১৫৫৪; সুয়ূতি : জামিউল আহাদিস :১৭/১৪৫-১৪৬পৃঃ  হাদিস ঃ ৯৫০৯, দারুল ফিকর ইলমিয়াহ, বয়রুত, লেবানন। সুয়ূতি : জামিউল আহাদিস : ২০/২২৭ পৃঃ  হাদিস ঃ ১৬৪৬৮; সুয়ূতি : জামিউস সগীর, ২/৫৬০ পৃঃ  হাদিস: ৯৩৮৫; শায়খ ইউসূফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর : ৩/২৬৬পৃঃ  হাদিস : ১২৮৬৫; আহলে হাদিস নাসিরুদ্দিন আলবানী : সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বইফাহ, হাদিস নং-৪৭২৪; ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল-মুসনাদ : হাদিস : ১৮৬০২; ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক, হাদিস : ১২৭৭; আল্লামা মুত্তাকী হিন্দি : কানযুল উম্মাল, ১৫/৬৫০পৃঃ  হাদিস নং : ৪২৪৪৬।}


❏ বায়হাকী শরীফে বর্ণিত আছে-


عَنِ الْمُسْتَظِلِّ، أَنَّ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ:  صَلَّى عَلَى جِنَازَةٍ بَعْدَ مَا صُلِّيَ عَلَيْهَا.


-‘‘হযরত মুসতাজিল ইবনে হুসাইন থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত আলী একবার এক জানাযা নামাযের পর দুআ প্রার্থনা করেছিলেন।’’  

➥{বায়হাকী, আস-সুনানিল কোবরা, ৪/৭৪পৃঃ  হাদিস নং-৬৯৯৬।}


❏ ইমাম মালেক (رحمة الله) এর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মুদুনাতুল কোবরা’ গ্রন্থে উলে­খিত আছে-


يَقُولُ هَذَا كُلَّمَا كَبَّرَ، وَإِذَا كَانَتْ التَّكْبِيرَةُ الْآخِرَةُ قَالَ مِثْلُ ذَلِكَ ثُمَّ يَقُولُ: اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ.


-‘‘প্রত্যেক তাক্বীরে এ রকম বলবে। যখন শেষ তাকবীর হবে, তখনও অনুরূপ বলবে। অতঃপর বলবে আল্লাহুম্মা সালি­আলা মুহাম্মদ।’’  ১৩৪

➥{ইমাম মালেক, আল-মুদুনাত, ১/২৫২ পৃঃ}


এর থেকে বোঝা গেল, জানাযার নামাযের পর দরূদ শরীফ পাঠ করা যাবে। 


❏ কাশফূল ইজা নামক গ্রন্থে বর্ণিত আছে-


فاتحه ودعا برائے ميت   پيش از دفن درست است وهميں است روايت معمو  له كذا فى خلاصة الفتح.


-‘‘দাফন করার পূর্বে মৃতব্যক্তির জন্য ফাতিহা ও দুআ প্রার্থনা করা বৈধ। এ রেওয়ায়েত অনুযায়ী আমল করা হয়েছে। ‘খুলাসাতুল ফতেহ’ কিতাবেও অনুরূপ বর্ণিত আছে।’’  ১৩৫

➥{ ইমাম মালেক, আল-মুদুনাত, ১/২৫২ পৃঃ} 


❏ শামসুল আয়িম্মা ইমাম সারখসী (رحمة الله) ➥{ওফাত.৪৮৩হি.} তাঁর বিখ্যাত ‘মবসুত শরীফে’ “মাইয়্যাতের গোসল” শীর্ষক অধ্যায়ে একটি হাদিস সংকলন করেন-


مَا رُوِيَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا - وَابْنِ عُمَرَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - أَنَّهُمَا فَاتَتْهُمَا الصَّلَاةُ عَلَى جِنَازَةٍ فَلَمَّا حَضَرَا مَا زَادَا عَلَى الِاسْتِغْفَارِ لَهُ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - فَاتَتْهُ الصَّلَاةُ عَلَى جِنَازَةِ عُمَرَ فَلَمَّا حَضَرَ قَالَ: إنْ سَبَقْتُمُونِي بِالصَّلَاةِ عَلَيْهِ فَلَا تَسْبِقُونِي بِالدُّعَاءِ لَهُ. 


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে উভয়ে এক জানাযায় গিয়ে জানাযার নামায না পেয়ে মায়্যিতের জন্য ইস্তাগফার পড়লেন বা দোয়া করলেন। একদা হযরত উমর (رضي الله عنه) এর জানাযা যখনই শেষ হয়ে গেল তখন হযরত আবদুল্লাহ বিন সালাম (رحمة الله) আসলেন তিনি বললেন হে আমার সাথীরা ! তোমরা আমাকে নামাজে মাসবুক করেছো তবে জানাযার পর দোয়াতে আমাকে মাসবুক (বাদ দিয়ে) করো না (এসো আমরা সবাই মিলে দোয়া করি)।’’  ১৩৬

➥{ইমাম সারাখ্সী , আল-মবসুত , ২/৬৭পৃঃ ।}


উপরোক্ত হাদীসে فَلَا تَسْبِقُونِي এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে ওই দুআর উপর সাহাবায়ে কিরাম আমল করতেন। 


❏ মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ ছাহেব বুরহানপুরী তাঁর রচিত ‘মিফতাহুল সালাত’ গ্রন্থের ১১২ পৃষ্ঠায় উলে­খ করেছেন -


چوں از نماز فارغ شوند مستحب است كه امام ياصالح ديگر فاتحه بقرتا مفلحون طرف سر جنازة وخاتمه بقرا من الرسول طرف بائيں بخواند كه در حديث وارد است ودر بعض حديث بعد از دفن واقع شده هردو وقت كه ميسر شود مجوز است.


-‘‘যখন জানাযার নামায শেষ হবে, তখন এটা মুস্তাহাব যে ইমাম বা অন্য কোন নেককার ব্যক্তি সূরা বাকারার প্রথম রুকু مُفْلِحُوْنَ পর্যন্ত মইয়তের শিয়রে এবং শেষ আয়াত اَمَنَ الرَّسُوْل মৃতব্যক্তির বাম পার্শে পাঠ করবেন। কেননা এ রকম হাদীচ শরীফে বর্ণিত আছে। কতেক হাদীছ দাফনের পরে এ রকম করার কথা উলে­খ এছ। সম্ভব হলে উভয় সময় পড়া জায়েয আছে।’’ 


❏ ‘যাদুল আািখরাত’ গ্রন্থে নাহারুল ফায়েক কনযুদ ও  বাহরে জুখখার থেকে উদ্ধৃতি করেছেন - 


بَعد از سَلام بخواند اللهم لَا تَحْرِمْنَا اجره وَلَا تَفْتِنَا بَعْدَهُ وَاَغْفِرْلَنَا وَلَهُ 


সালাম ফিরানোর পর এ দুআটা পড়বেন اللهم لَا تَحْرِمْنَا اجره وَلَا تَفْتِنَا بَعْدَهُ وَاَغْفِرْلَنَا وَلَهُ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদেরকে এর ছওয়াব থেকে বঞ্চিত করো না এবং এরপরে আমাদেরকে ফিৎনা ফ্যাসাদে ফেলো না। আমাদেরকে ও তাকে ক্ষমা করুন।  ১৩৭

➥{নাহরুল ফায়েক শরহে কানযুদ দাখায়েক, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৯৪, কাযীমী কুতুবখানা, করাচী, পাকিস্তান।}


❏ তাহতাবি শরীফে বর্ণিত আছে-


وَاِنَّ اَبَا حَنِيْفَةَ لَمَّا مَاتَ فَخَتِمَ عَلَيْهِ سَبْعُوْنَ اَلْفَا قَبْلَ الدَّفْنِ.


-‘‘যখন ইমাম আবু হানীফা (رضي الله عنه) ইন্তিকাল ফরমান, তখন দাফনের আগে তাঁর জন্য সত্তর হাজারবার কুরআন খতম করা হয়।’’ ১৩৮

➥{ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা,}


❏ কাশফুল গুম্মা, ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরী ও ফাত্ওয়ায়ে শামীর الدفن অধ্যায়ে تعزيت শীর্ষক আলোচনায় উলে­খিত আছে - 


وَهِيَ بَعْدَ الدَّفْنِ أَوْلَى مِنْهَا قَبْلَهُ .


-‘‘দাফনের আগের চেয়ে পরে শোক প্রকাশ করাটা উত্তম।’’  ১৩৯

➥{নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৬৭।}


❏ একই  জায়গায় শামী ও আলমগীরীতে আরও উলে­খ আছে-


وَهَذَا إذَا لَمْ يُرَ مِنْهُمْ جَزَعٌ شَدِيدٌ، وَإِلَّا قُدِّمَتْ.


-‘‘এটা যেহেতু এ জন্য যে ওর পরিবার পরিজনের মন যাতে খুব বেশী রকম ভেংগে না পড়ে। অন্যথায় দাফনের আগে শোক প্রকাশ যেতে পারে।’’  ১৪০

➥{নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৬৭, ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুহতার, ২/২৪১ পৃঃ  পরিচ্ছেদ: مطلب فِي الثَّوَاب عَلَى المصيبة}


❏ হুসনে জাহিরিয়্যাতে বর্ণিত আছে-


وَهِيَ بَعْدَ الدَّفْنِ أَوْلَى مِنْهَا قَبْلَهُ .


-‘‘দাফনের আগের থেকে পরে সমবেদনা জ্ঞাপন করা উত্তম।’’  ১৪১

➥{নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৬৭, ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুহতার, ২/২৪১ পৃঃ  পরিচ্ছেদ: مطلب فِي الثَّوَاب عَلَى المصيبة, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৩৪}


❏ বিখ্যাত ইমাম শা‘রানী (رحمة الله) লিখেন-


وَمِنْ ذَلِكَ قَوْلُ اَبِى حَنِيْفَةَ : اِنَّ التَعْزِيَةِ سُنَّة قَبْلُ الدَّفْنِ لَا بَعْدَ وَبِهِ قَالَ الثَّوْرِى مَعَ قَوْلِ الشَّافِعِى وَ اَحْمَد اَنَّهَا تسن قَبْلَه وَبَعَد اِلَى ثَلاَثَة اَيَّام ......ان شدة الحزن انما تكون قَبْلَ الدَّفن فيعزى ويدعى له بتخفيف الحزن-


-‘‘আর এমনিভাবে ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর বক্তব্য হচ্ছে : দাফনের পূর্বে শোক প্রকাশ করা সুন্নাত, পরে নয়। তারই সাথে সাথে ইমাম সুফিয়ান সাওরী (رحمة الله) এবং তাঁর সাথে ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) ও ইমাম আহমদ (رحمة الله) বলেছেন যে, নিশ্চয় দাফনের পূর্বেই পেরেশানী বেশী থাকে। ফলে সে সময় মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশ করবে ও দোয়া করবে।’’  ১৪২

➥{ইমাম শা‘রানী, মিযানুল কোবরা, ১/১৫৩পৃঃ  দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}


উপরোক্ত ভাষ্য থেকে প্রমাণিত হলো যে, দাফনের আগে, নামাযের আগে বা পরে হোক, শোক প্রকাশ করা জায়েয এবং সুন্নাত। আর সমবেদনায় মৃতব্যক্তি ও তার উত্তরাধিকারীর জন্য যথাক্রমে ছওয়াব ও ধৈর্যের জন্যইতো দুআ করা। কেননা নামাযে জানাযা এক হিসেবে দুআ বিশেষ, কারণ এতে রুকু সিজ্দা তাশাহুদ ইত্যাদি নেই। আবার আর এক হিসেবে নামাযও বলা যায়, কারণ এর জন্য গোসল, ওযু, সতর ডাকা, কিবলামুখী হওয়া, জায়গা ও কাপড় পাক হওয়া বাঞ্চনীয় এবং জামাত সহকারে পড়া সুন্নাত। যদি এটা কেবল দুআই হতো, তাহলে নামাযের মত এসব শর্তসমূহ কেন আরোপ হলো? দুআর মত যে কোন প্রকারে আদায় করলেই হয়ে যেত। তাই স্বীকার করতেই হবে যে এটা এক হিসেবে নামাযও এবং প্রত্যেক নামাযের পর দুআ প্রার্থনা করা সুন্নাত ও কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। 


❏ যেমন-মিশকাত শরীফে بَاب الذّكر بعد الصَّلَاة অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى الثَّقَفِيُّ الْمَرْوَزِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَابِطٍ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ رضى الله عنه، قَالَ: قِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ: أَيُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ؟ قَالَ: جَوْفَ اللَّيْلِ الآخِرِ، وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ.    


-“হজরত আবু উমামা বাহেলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলে পাক (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, কোন দোয়া তাড়াতাড়ি কবুল হয়? প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেন: নিশির শেষ ভাগে এবং প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে দোয়া তাড়াতাড়ি কবুল হয়।” ১৪৩

➥{টিকাঃ

তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৩৪৯৯; সুনানে কুবরা লিন-নাসাঈ, হাদিস নং ৯৮৫৬; মিশকাত শরীফ, ৮৯ পৃঃ ; মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩য় খন্ড, ৪৩ পৃঃ ; মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ৪র্থ খন্ড, ১৫৬ পৃঃ ; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, হাদিস নং ২৫৫০; মুগলতাঈ, শরহে ইবনে মাজাহ লিল-মুগলতাঈ, ইবনে রযব, জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম, ২য় খন্ড, ১৪৩ পৃঃ ; ফাতহুল বারী লি’ইবনে রজব, ১১তম খন্ড, ১৩৪ পৃঃ ; ইমাম নববী, আল-আযকার, হাদিস নং ১৮০; রিয়াদুস ছালেহীন, হাদিস নং ১৫০০; ফাতওয়ায়ে কুবরা লি’ইবনে তাইমিয়া, ২য় খন্ড, ২০৫ পৃঃ ; ইবনে তাইমিয়া, মাজমাউল ফাতওয়া, ২২তম খন্ড, ৪৯২ পৃঃ ; মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩০০ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; নাইলুল আওতার, হাদিস নং ৮০৯) ছহীহ্ হাদিস। 


☞এই হাদিস সম্পর্কে হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) ও আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) বলেন, أَنَّهُ صَحِيحٌ لِغَيْرِهِ. -“নিশ্চয় এই হাদিস ছহীহ্ লি’গাইরিহী। (মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত শরহে মিশকাত, ৩/৪৩ পৃঃ ) 


☞এই হাদিস উল্লেখ করে ইমাম তিরমিজি (رحمة الله) বলেন,

هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ -“এই হাদিস ‘হাসান’। (সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ৩৪৯৯) নাছিরুদ্দিন আলবানী হাদিসটিকে صحيح لغيره (ছহীহ্ লি’গারিহী) বলেছেন। (ছহীহ্ তারগীব ওয়া তারহীব, হাদিস নং ১৬৪৮)}


❏ জানাযার নামাযও ফরয। তাই এরপর দুআ কেন করা যাবে না? অধিকন্তু যে কোন সময় দুআ পার্থনা করার অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং অনেক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।  ১৪৪

➥{টিকাঃ

☞ইমাম বুখারী (رحمة الله) সংবলন করেন-

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ، حَدَّثَنَا عِمْرَانُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي الْحَسَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللَّهِ مِنَ الدُّعَاءِ

-“হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানী কিছুই নেই।’’ 

(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৭১২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৮৭৪৮; মেশকাত শরীফ, ১৯৫ পৃঃ ; মুসনাদে বায্যার, হাদিস/৯৫৫৫; ছহীহ্ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৮৭০; মু’জামুল আওছাত, হাদিস নং ৩৭০৬; হাকেম, হাদিস নং ১৮০১; বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, হাদিস নং ৩; বায়হাকী, শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ১০৭১; মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫ম খন্ড, ১২০ পৃঃ ; তিরমিজি শরীফ; ইবনে মাজাহ, ২৭৫ পৃঃ )।) 


☞এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হাকেম (رحمة الله) বলেন, هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ، -“এই হাদিসের সনদ ছহীহ্।”


এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানী বিষয় হল আল্লাহর কাছে দোয়া করা। তাই আমাদের বেশী বেশী দোয়া করা উচিৎ। এছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে।}


❏ মিশকাত শরীফের কিতাবুল দাওয়াতে বর্ণিত আছে হাদিসে আছে-


حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الْأَعْمَشِ، وَمَنْصُورٍ، عَنْ ذَرٍّ، عَنْ يُسَيْعٍ الْكِنْدِيِّ عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ.


-“হজরত নুমান ইবনে বাশির (رضي الله عنه) নবী করিম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেছেন: দোয়া একটি ইবাদত।” ১৪৫

➥{মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালসী, হাদিস/৮৩৮; মুসনাদে আহমদ, হাদিস/১৮৩৫২ ও ১৮৩৮৬; আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৭১৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৮২৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস/১৪৭৯; তিরমিজি শরীফ, হাদিস/২৯৬৯; মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস/৩২৪৩; সুনানে কুবরা লিন-নাসাঈ, হাদিস নং ১১৪০০; সহীহ্ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৮৯০; আদ-দোয়া লিত্ তাবারানী, হাদিস নং ২; মু’জামুছ ছাগীর, হাদিস নং ১০৪১; মু’জামুল কবীর, হাদিস নং ১৯১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ১৮০২।}


❏ একই জায়গায় এটাও বর্ণিত আছে নবীজি (ﷺ) বলেছেন-


عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الدُّعَاءُ مُخُّ العِبَادَةِ.


-“হজরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: সকল এবাদতের মগজ হল দোয়া।”  ১৪৬

➥{খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদিস/; মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫ম খন্ড, ১২০ পৃঃ ; তিরমিজি শরীফ, হাদিস/৩৩৭১; আদ-দোয়া লিত্ তাবারানী, হাদিস নং ৮; মু’জামুল আওছাত, হাদিস নং ৩১৯৬; জামেউল উছুল, হাদিস নং ৭২৩৭; তুহফাতুল আশরাফ, হাদিস নং ১৬৫; ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৬৩৮৬; কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩১১৪; কাশফুল খাফা, হাদিস নং ১২৯৪)।}


দুআ প্রার্থনা করার জন্য সময় কালের কোন বিধি নিষেধ নাই। তাহলে এটার কি কারণ থাকতে পারে ওয জানাযার আগে ও দাফনের আগে হারাম? জানাযার নামায কোন যাদুমন্ত্র যে এটি পড়ার সাথে দুআ ও ঈসালে ছওয়াব হারাম হয়ে গেল এবং দাফনের পর ওই যাদু অপসারিত হলো ও সব কিছু হালাল হয়ে গেল। যে কোন সময় দুআ প্রার্থনা ও ঈসালে ছওয়াব জায়েয, এর জন্য কোন সময়ের বিধি নিষেধ নেই।  ১৪৭

➥{টিকাঃ

☞আমাদের নবী রাসূলে পাক ﷺ বলেছেন:

 حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا حَاتِمُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ لَا يَدْعُو اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ

-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহর হাবীব ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করেনা তার উপর আল্লাহ রাগ করেন।’’

(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৬৫৮; তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৩৩৭৩; মেসকাত শরীফ, ১৯৫ পৃঃ ; ইবনে মাজাহ শরীফ, ২৭১ পৃঃ ; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৯৭০১; মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস নং ৯৪২৫; আদ-দোয়া লিত্ তাবারানী, হাদিস নং ২৩; মু’জামুল আওছাত, হাদিস নং ২৪৩১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ১৮০৬; বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, হাদিস নং ২২; বায়হাকী, শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ১০৬৫; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং ৬৬৫৫; মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫ম খন্ড, ১২৩ পৃঃ )।) 


☞আল্লাহর নবী (ﷺ) আরো বলেছেন-

حَدَّثَنَاهُ أَبُو بَكْرِ بْنُ إِسْحَاقَ، أَنْبَأَ أَبُو الْمُثَنَّى، ثنا مُسَدَّدٌ، ثنا عَبْدُ الْوَاحِدِ بْنُ زِيَادٍ، ثنا هِلَالُ بْنُ خَبَّابٍ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِعَمِّهِ الْعَبَّاسِ: يَا عَمِّ أَكْثِرِ الدُّعَاءَ

-“হজরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাঁর চাচাকে বললেন: ওহে চাচা! আপনি অধিক পরিমাণে দোয়া করুন।’’(ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, হাদিস/১৯৩৯।) 


☞এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হাকেম নিছাপুরী  বলেন-

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الْبُخَارِيِّ

-“ইমাম বুখারীর শর্তে এই হাদিস সহীহ্।’’}




দ্বিতীয় অধ্যায়

এ দুআ প্রসঙ্গে আপত্তি ও এর জবাবসমূহ



জানাযার পর দুআ প্রসঙ্গে চারটি আপত্তি আছে- তিনটি আকলী (যুক্ত ভিত্তিক) ও একটি নকলী (কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক)। এগুলো ব্যতীত আর কোন আপত্তি নেই। 


১ নং আপত্তি: সেই পুরানো মুখস্থ করা বুলি-এ দুআ বিদ্আত এবং প্রত্যেক বিদ্আত যেহেতু হারাম, সেহেতু এ দুআও হারাম, শিরক ও অনৈসলামিক। 


উত্তর: এ দুআ বিদ্আত নয়, হুযুর আলাইহিস সালামের পবিত্র বাণী ও কর্মে এর প্রমাণ রয়েছে। সাহাবায়ে কিরামও এর উপর আমল করেছেন। ফকীহগণও এর অনুমতি দিয়েছেন। যেমন প্রথম অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। আর দি একে বিদ্আত বলে মেনেও নেয়া হয়, তাতে কোন ক্ষতি নেই। কেননা এবং প্রত্যেক বিদ্আত হারাম নয়। পাঁচ প্রকারের বিদ্আত রয়েছে। (বিদ্আত শীর্ষক আলোচনায় দেখুন)।


২ নং আপত্তি: জানাযার নামায হচ্ছে দুআ। পুনরায় দ্বিতীয়বার দুআ প্রার্থনা করা জায়েয নেই। প্রথম দুআই যথেষ্ট।


উত্তর: এ আপত্তিটা একেবারে মামুলী। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মথ্যে দুআ আছে। ইসতাহারা, চন্দ্র গ্রহণ ও বৃষ্টির জন্য নামায সবই দুআর উদ্দেশ্যেই পড়া হয়। কিন্তু এসবের  পরেও দুআ প্রার্থনা করা জায়েয বরং সুন্নাত। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ-‘‘অতঃপর তোমরা বেশী বেশী করে দোয়া কর।’’ ১৪৮

➥{ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৫/২৭৪পৃঃ  হাদিস নং- ৯৪৬১, মুসলিম, আস্-সহিহ, ১/৩৫০পৃঃ  হাদিস নং- ৪৮২, আবু দাউদ, আস্-সুনান, ১/২৩১পৃঃ  হাদিস নং- ৮৭৫, নাসাঈ, আস্-সুনান, ১/২২৬পৃঃ  হাদিস নং- ১১৩৭, ও আস্-সুনানিল কোবরা, ১/৩৬৪পৃঃ  হাদিস নং- ৭২৭, ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, ৫/২৫৪পৃঃ  হাদিস নং- ১৯২৮, বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ২/১৫৮পৃঃ  হাদিস নং- ২৬৮৬ }


দুআর পরে দুআ প্রার্থনা করাটাই হচ্ছে অতিরিক্ত দুআ। এটাতো কেবল দুআ মাত্র। অথচ কোন কোন অবস্থায় জানাযার নামায দ্বিতীয়বারও হয়ে থাকে। যেমন যদি মৃতব্যক্তির ওলিকে (উত্তরসূরী) বাদ দিয়ে অন্যরা নামায পড়ে ফেলেছেন, তখন তিনি দ্বিতীয়বার নামায পড়তে পারবেন। সোমবার হুযুর আলাইহিস সালামের তিরোধান হয়েছিল এবং বুধবারে দাফন করা হয়েছিল। (শামী কিতাবুস সালাত الامامت অধ্যায়ে দ্রষ্টব্য) এ দু’দিন দলে দলে মানুষ আসতে থাকে ও জানাযার নামায আদায় করতে থাকে, কেননা তখন পর্যন্ত হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক আকবর (যিনি ওলি ছিলেন) নামায পড়েননি। অতঃপর যখন হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক (رضي الله عنه) শেষ দিন নামায পড়ে নিলেন, এরপর কিয়অমত পর্যন্ত তা আর কারো জন্য বৈধ রইলো না। (ফত্ওয়ায়ে শামীর صلواة الجنازة بحث: ومن احق  بالامامت শীর্ষক অধ্যায়ে দেখুন) এখন বলুন এ নামাযতো দুআই ছিল। এটা আদায়ও হয়ে গিয়েছিল। তবুও দ্বিতীয়বার নামায কিভাবে হলো? এ প্রশ্নটা যেন এ রকম-কেউ বললেন খানা খাওয়ার পর পানি পান করো না। কেননা খাবারে পানি মওজুদ রয়েছে, তা পানি দ্বারা রান্না হয়েছে। 



৩নং আপত্তি: দুআ প্রার্থনা করার কারণে দাফন কার্যে দেরী হয় এবং এটা হারাম। 


উত্তর: এ আপত্তিটাও ভিত্তিহীন। 

প্রথমত. আপনারা এ দুআকে যে কোন অবস্থায় নিষেধ করে থাকেন। এবং উপরোক্ত আপত্তি থেকে বোঝা গেল যে দাফন কার্যে যদি দেরী হয়, তাহলে নিষেধ, অন্যথায় নয়। তাহলে বলুন, যদি এখনও কবর তৈরী হতে দেরী আছে অথচ নামাযে জানাযা হয়ে গেছে। তাহলে এ অবস্থায় দুআ ইত্যাদি পাঠ করবে কিনা? কেননা এখানে দাফন কার্যে বিলম্বটা দুআর জন্য নয় বরং করব তৈরীতে বিলম্ব হেতু। 

দ্বিতীয়ত. দুআ করতে বেশী দেরী হয় না। বেশী হলে দু-তিন মিনিট লাগে। এরকম ক্ষীণ বিলম্বটা আদৌ ধর্তব্য নয়। এ রকম দেরী বরং এর থেকে আরও বেশী দেরী হয় আস্তে আস্তে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতে, ধীরে সুস্থে গোসলের কাজ সমাধা করতে এবং ধৈর্য সহকারে কবর খনন করতে। যদি এতটুকু দেরীও হারাম হয়, তাহলে গোসল ও কাফনদাতাকে বিদ্যুৎ গতিতে গোসল ও কাফনের কাজ সমাধা করতে হবে, কবর খননকারীদেরকে মেশিনের মত চটপট কবর খনন করতে হবে, কফিন বহন কারীদের ইঞ্জনের মত দৌড়ে যেতে হবে এবং সাথে সাথে কবরের মধ্যে নিক্ষেপ করতে হবে। 

তৃতীয়তঃ আমি প্রথম অধ্যায়ে উদ্ধৃতি সহকারে বর্ণনা করেছি যে, দাফনের আগে মৃতব্যক্তির পরিবার পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন, তাদেরকে সান্তনা ও প্রবোধ দেয়া জায়েয বরং সুন্নাত। তাহলে নামাযের আগে হোক বা পরে সমবেদনা জ্ঞাপন ও সান্তনা দিতে সময় লাগবে কিনা? নিশ্চয় লাগবে। কিন্তু ধর্মীয় কাজ হেতু এটা জায়েয। 

চতুর্থতঃ আমি একটু আগেই উলে­খ করেছি যে, হুযুর আলাইহিস সালামের ওফাত শরীফ সোমবার এবং দাফন করা হয়েছে বুধবার। 


❏ আল্লামা শামী (رحمة الله) ফত্ওয়ায়ে শামীর কিতাবুস সালাতেরبَابُ الْإِمَامَةِ  শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণনা করার পর বলেছেন-


وَهَذِهِ السُّنَّةُ بَاقِيَةٌ إلَى الْآنَ لَمْ يُدْفَنْ خَلِيفَةٌ حَتَّى يُوَلَّى غَيْرُهُ.


-‘‘এ সুন্নাত এখনও বলবৎ আছে। কোন খলীফা ততক্ষণ পর্যন্ত দাফন করা হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন খলীফা মনোনীত না হয়।’’  ১৪৯

➥{ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুহতার, ১/৫৪৮ পৃঃ  পরিচ্ছেদ: بَابُ الْإِمَامَةِ}


এর থেকে বোঝা গেল, দুনিয়াবী কারণে দাফনকার্যে দেরী করা মাকরূহ কিন্তু ধর্মীয় কারণে জায়েয। এ জন্য দাফনকার্যে দেরী করার কথা বলা হয়েছে। দুআ প্রার্থনা করাও ধর্মীয় কাজ। যদি কেউ নামাযের শেষ মুহুর্তে শামিল হয়, তাহলে সে দুআ পড়ে সালাম ফিরাতে পারবে। কিন্তু যদি নামাযের পরে সংগে সংগে লাশ উঠিয়ে ফেলে, তাহলে সে লোকটি দুআ শেষ করতে পারবে না। কেননা উঠানো জানাযার নামায হয় না। সুতরাং পরে আসা নামাযীদের জন্যও জানাযার নামাযের পর দুআ করার ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে। যদি দেরীটা আঁচ করার মত হয়, তাহলে জায়েয। পঞ্চমতঃ শর্তহীনভাবে দাফনকার্যে দেরী করাটা যে হারাম, কোন্ কিতাবে আছে? ফকীহগণ বলেন, জুমাবার কেউ মারা গেলে, জুমার নামায পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই বরং সম্ভব হলে জুমার আগেই দাফন করবেন। কিন্তু এটা বলেননি যে অপেক্ষা করাটা হারাম, শিরক, কুফরী। আল্লাহ মাফ করুন। 



৪ নং আপত্তি: ফকিহগণ জানাযার পর দুআ করা নিষেধ বলেন। 


❏ যেমন ‘জামেউর রমুজ’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে,


لَايَقَوْمُ دَاعِيًا لَهُ.


-‘‘জানাযার নামাযের পর দুআর জন্য দাঁড়িয়ে থাকবেন না।’’

 

❏ যখিরাতুল কুবরা ও ‘মুহিত’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে


لَايَقَوْمُ بِالدُّعَاءِ بَعْدَ صَلَوةِ الجَنَازَةِ .


-‘‘জানাযার নামাযের পর দুআর জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে না।’’ 


❏ ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরীতে উলে­খিত আছে - 


لَا يَدْعُوْا بَعْدَهُ فِى ظَاهِرِ الْمَذْهَبِ.

-‘‘মাযহাবের প্রকাশ্য অভিমত হচ্ছে, এরপর দুআ না করা।’’ 


❏ মিরকাত শরহে মিশকাতে বর্ণিত আছে- 


وَلَا يَدْعُو لِلْمَيِّتِ بَعْدَ صَلَاةِ الْجَنَازَةِ لِأَنَّهُ يُشْبِهُ الزِّيَادَةَ فِي صَلَاةِ الْجَنَازَةِ.


-‘‘জানাযার নামাযের পর মৃতব্যক্তির জন্য দুআ করবেন না।’’  ১৫০

➥{মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৩/১২১৩পৃঃ  হাদিস নং- ১৬৮৭, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- ১৪২২হিঃ}


কেননা, এটা নামাযে জানাযার পরিবর্ধনের মত।


❏ কাশফুল গিতারে বর্ণিত আছে-


قائم نه شود از نماز برائے دعا.

-‘‘জানাযার নামাযের পর দুআর জন্য দাঁড়িয়ে থাকবেন না।’’ 


❏ জামেউর রমুযে আছে- 


وَلَايَقَوْمُ بِالدُّعَاءِ بَعْدَ صَلَوةِ الجَنَازَةِ المَكْرُوْة.


-‘‘জানাযার নামাযের পর দুআ করা মাকরূহ। কেননা এটা পরিবর্তন সাদৃশ্য।’’ 


❏ ইবনে হামিদ থেকে বর্ণিত আছে-


اِنَّ الدُّعَاءِ بَعْدَ صَلَوةِ الجَنَازَةِ المَكْرُوْة.


-‘‘জানাযার নামাযের পর দুআর করা মাকরূহ।’’


উপরোলি­খিত ভাষ্য সমূহ থেকে বোঝা গেল, জানাযার নামাযের পর দুআ ইত্যাদি নাজায়েয।


উত্তর: এ আপত্তির দুঃরকমের উত্তর দেয়া যায়-সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে। সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো, এ দুআ নিষেধ করার পিছনে তিনটি কারণ আছে। 

প্রথমতঃ চতুর্থ তকবীরের পর সালামের আগে যদি দুআ করা হয়, 

দ্বিতীয়তঃ দুআটা যদি দীর্ঘক্ষণ হয়, যার ফলে দাফনে দেরী হয়। এজন্যে জুমআর অপক্ষোয় দাফনকার্যে দেরী করা নিষেধ। 

তৃতীয়তঃ যদি নামাযের মত কাতারবন্দী অবস্থায় এভাবে দুআ করা হয় যে, দর্শকরা নামায হচ্ছে বলে মনে করে। কেননা এটা পরিবর্ধন সদৃশ। সুতরাং যদি সালাম ফিরানোর পর বসে কিংবা কাতার ভেংগে মাত্র অল্পক্ষণ দুআ করা হয়, তাহলে মাকরূহহীনভাবে জায়েয। এ কারণ সমূহ এ জন্যই বের করা হয়েছে, যাতে ফকীহগণের ইবারতসমূহে পরষ্পর দ্বন্ধ সৃষ্টি না হয় এবং উপরোক্ত উক্তিসমূহ যেন প্রথম অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছসমূহের ও সাহাবায়ে কিরামের উক্তি ও আমলের বিপরীত না হয়। 


বিশ্লেষণমূলক উত্তর হচ্ছে উপরোক্ত ইবারত সমূহের মধ্যে জামেউল রুমুয, যখিরা, মুহিত ও কাশফুল গিতারের ইবারত সমূহে দুআ করা সম্পর্কে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই বরং দাঁড়িয়ে দুআ করাকে নিষেধ বলেছেন। আমরাও সেটা নিষেধ করি। মিরকাত ও জামেউল রুমুযে এটাও উলে­খিত আছে لِأَنَّهُ يُشْبِهُ الزِّيَادَةَ এটা অতিরিক্ত সদৃশ অর্থাৎ যে দুআর ফলে নামাযের জানাযার মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে বলে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়। এর থেকে বোঝা গেল এভাবে দুআ করা নিষেধ, যেখানে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থাকে। যেমন কাতার বন্দী অবস্থায় দাঁড়িয়ে দুআ করা। যদি কাতার ভেংগে ফেলে বা বসে পড়ে, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। ফরয জামাতের পর নির্দেশ আছে যে মুসলি­গণ যেন কাতার ভেংগে দিয়ে সুন্নাত পড়ে, যাতে জামাত হচ্ছে বলে কারও সন্দেহ না হয়। (ফাত্ওয়ায়ে শামী ও মিশকাত শরীফের السنن অধ্যায় দেখুন) এর থেকে এটা প্রকাশ পায় না যে ফরযের পরে সুন্নাত পড়া নিষেধ বরং ফরযের সাথে মিলিয়ে পড়াটাই নিষেধ। জানাযার পর দুআটাও তথৈবচ। 


❏ আলমগীরীর যে ইবারত উদ্ধৃত করা হয়েছে তা ভুল। এর আসল ইবারত হচ্ছে


وَلَيْسَ بَعْدَ التَّكْبِيرَةِ الرَّابِعَةِ قَبْلَ السَّلَامِ دُعَاءٌ هَكَذَا فِي شَرْحِ الْجَامِعِ الصَّغِيرِ لِقَاضِي خَانْ. وَهُوَ ظَاهِرُ الْمَذْهَبِ.


-‘‘চতুর্থ তকবীরের পর সালামের আগে কোন দুআ নেই।’’  ১৫১

➥{নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৬৪, পরিচ্ছেদ: الْفَصْلُ الرَّابِعُ فِي حَمْلِ الْجِنَازَةِ, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ শরহে কুদুরী, পৃষ্ঠা-১৩৮}


অর্থাৎ জানাযার নামাযে প্রথম তিন তকবীরের পর কিছু না কিছু পাঠ করা হয় কিন্তু তকবীরের পর কিছুই পাঠ করা যাবে না, যেমন আমি প্রথমে উলে­খ করেছি। 


❏ বাদাইয়া, কেফাইয়া ও এনায়া গ্রন্থে উলে­খিত আছে-


وَلَيْسَ بَعْدَ التَّكْبِيرَةِ الرَّابِعَةِ قَبْلَ السَّلَامِ دُعَاءٌ.


-‘‘চতুর্থ তকবীরের পর সালামের আগে কোন দুআ নেই।’’ ১৫২

➥{আল্লামা আইনী, বেনায়া শরহে হেদায়া, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-২৫৩}


ইবনে হামিদের নামে যে ইবারত উদ্ধৃত করা হয়েছে, এটা আসলে কুনিয়া গ্রন্থের ইবারত। কিন্তু কুনিয়া কোন গ্রহনযোগ্য কিতাব নয়। এর থেকে ফাত্ওয়া দেয়া যায় না। মুকাদ্দামায়ে শামীর رسم المفتى শীর্ষক আলোচনায় বর্ণিত আছে যে, কুনিয়া গ্রন্থের রচয়িতা দুর্বল রিওয়ায়েতও গ্রহণ করে। তাই ওই গ্রন্থ থেকে ফত্ওয়া দেয়া জায়েয হবে না। 


❏ শামীর ইবারতটা হচ্ছে এ রকম -


أَوْ لِنَقْلِ الْأَقْوَالِ الضَّعِيفَةِ فِيهَا كَالْقُنْيَةِ لِلزَّاهِدِيِّ، فَلَا يَجُوزُ الْإِفْتَاءُ مِنْ هَذِهِ.


-‘‘......তেমনিভাবে দুর্বল মতের কিতাব দ্বারা ফাতওয়া দেয়া যেমন জাহেদীর কুনিয়া কিতাব। আর এ ধরনের কিতাব দ্বারা ফাতওয়া দেওয়া বৈধ নয়।’’ ১৫৩

➥{ইবনে আবেদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ১/৭০পৃঃ } 


❏ আলা হযরত (رحمة الله) ‘বজলুল জওয়ায়ে’ গ্রন্থে উলে­খ করেছেন যে, কুনিয়া গ্রন্থের রচয়িতা হচ্ছে মুতাযলী। 


এবং যদি কুনিয়ার এ ইবারত সঠিকও মেনে নেয়া হয়, তা স্বয়ং বিরোধিতাকারীদেরও বিপরীত হবে, কেননা ছাহেবে কুনিয়া বলেন যে জানাযার পর দুআ করা নিষেধ; তাহলে দাফনের পরও দুআ নাজায়েয হওয়া উচিত। কারণ এ সময়টা নামাযে জানাযার আগে নয়। মোটকথা কোন ইবারতই আপনাদের অনুকূলে নয়। জানাযার নামাযের পর দুআ জায়েয বরং সুন্নাত। 

 
Top