প্রমাণ পরিচ্ছেদ

শরয়ী হীলা জায়েয প্রসঙ্গে

   

প্রয়োজনবোধে শরয়ী হীলা জায়েয। কুরআন করীম, সহীহ হাদীছ ও ফকীহগণের বিভিন্ন উক্তিতে এর প্রমাণ রয়েছে। হযরত আয়ুব (عليه السلام) শপথ করেছিলেন যে তাঁর বিবিকে একশ দুর্রা মারবেন। তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন-একটি ঝাড়– নিয়ে ওকে মার এবং নিজের শপথ ভঙ্গ করো না। 


✧ কুরআন শরীফ এ কাহিনীটা সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন।

وَخُذْ بِيَدِكَ ضِغْثًا فَاضْرِبْ بِهِ وَلَا تَحْنَثْ

-তুমি নিজ হাতে ঝাড়– নিয়ে ওকে মার এবং শপথ ভঙ্গ করো না।’’ ৪৪১

➥441. সূূরা ছোয়াদ, আয়াত নং-৪৪।


✧ হযরত ইউসুফ (عليه السلام) মনস্থ করেছিলেন যে তাঁর ছোট ভাই বিনামিনকে তাঁর কাছে রাখতে এবং রহস্যও যেন উৎঘাটিত না হয়। এজন্য তিনি একটি হীলার আশ্রয় নিয়েছিলেন যার বিস্তারিত বর্ণনা সূরা ইউসুফে করা হয়েছে।  ৪৪২

➥442. সূরা ইউসুফ, আয়াত নং-৭৬।


✧ একবার হযরত সারা (رضي الله عنه) কসম করেছিলেন যদি আমি সুযোগ পাই, হযরত হাজরার (رضي الله عنه) কোন অঙ্গহানি ঘটাবো। হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) এর প্রতি ওহী নাযিল হলো “তাদের পরস্পরের মধ্যে আপোষ করে দাও।” হযরত সারা (رضي الله عنه) বললেন, ‘আমি যে কসম করেছি।’ তখন তাকে হযরত হাজেরা (رضي الله عنه) এর কর্ণ ছেদন করার পরামর্শ দেয়া হলো।


✧ মিশকাত শরীফের কিতাবুল বুযুর এর الربوا অধ্যায়ে বর্ণিত আছে- হযরত বিলাল (رضي الله عنه) হুযুর (ﷺ) এর খিদমতে ভাল খোরমা আনলেন। হুযুর (ﷺ) জানতে চাইলেন এগুলো কোথা থেকে আনা হয়েছে। আরয করলেন ‘আমার কাছে কিছু বাজে খোরমা ছিল, আমি এক জনকে ওখান থেকে দু’সায়া (প্রায় আট কেজি) দিয়ে এক সায়া ভাল খোরমা নিয়েছি। হুযুর (ﷺ) ইরশাদ ফরমালেন- এটা সুদ হয়ে গেছে। আগামীতে বাজে খোরমা গুলো পয়সার বিনিময়ে বিক্রি করবে এবং ওই পয়সা দিয়ে ভাল খোরমা ক্রয় করবে।  ৪৪৩

➥443. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৬, কাদীমী কুতুবখানা, আরামবাগ, করাচী, পাকিস্তান, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪০০, দারুল মা’রিফ, বয়রুত, লেবানন।


দেখুন, এটা সুদ থেকে রেহাই পাবার একটি হীলা (পন্থা)। 


✧ ফাতওয়ায়ে আলমগীরীতে হীলা সম্পর্কে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায় রচনা করা হয়েছে, যার নাম দেয়া হয়েছে كتاب الحيل অনুরূপ ‘আল আশবাহ ওয়ান নজায়েয’ কিতাবেও ‘কিতাবুল হাইল’ নামে একটি অধ্যায় রয়েছে। ফাতওয়ায়ে আলমগীরীর কিতাবুল হাইল অধ্যায়ে ও যাখীরা গ্রন্থে বর্ণিত আছে-

كُلَّ حِيلَةٍ يَحْتَالُ بِهَا الرَّجُلُ لِإِبْطَالِ حَقِّ الْغَيْرِ أَوْ لِإِدْخَالِ شُبْهَةٍ فِيهِ أَوْ لِتَمْوِيهِ بَاطِلٍ فَهِيَ مَكْرُوهَةٌ وَكُلُّ حِيلَةٍ يَحْتَالُ بِهَا الرَّجُلُ لِيَتَخَلَّصَ بِهَا عَنْ حَرَامٍ أَوْ لِيَتَوَصَّلَ بِهَا إلَى حَلَالٍ فَهِيَ حَسَنَةٌ، وَالْأَصْلُ فِي جَوَازِ هَذَا النَّوْعِ مِنْ الْحِيَلِ قَوْلُ اللَّهِ تَعَالَى {وَخُذْ بِيَدِكَ ضِغْثًا فَاضْرِبْ بِهِ وَلا تَحْنَثْ} وَهَذَا تَعْلِيمُ الْمَخْرَجِ لِأَيُّوبَ النَّبِيِّ - عَلَيْهِ وَعَلَى نَبِيِّنَا الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - ..... وَعَامَّةُ الْمَشَايِخِ عَلَى أَنَّ حُكْمَهَا لَيْسَ بِمَنْسُوخٍ وَهُوَ الصَّحِيحُ مِنْ الْمَذْهَبِ كَذَا فِي الذَّخِيرَةِ.

-যদি কারো হক আত্মসাৎ বা এ ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে বা অবৈধভাবে ধোঁকা দেয়ার জন্য হীলা করা হয়, তা মাকরূহ হবে। আর যে হীলা হারাম থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য বা হালালের উপর অটল থাকার জন্য করা হয়, তা ভাল। এ ধরনের হীলা জায়েয হওয়ার দলীল হচ্ছে আল্লাহর সেই বাণী وَخُذْ بِيَدِكَ ضِغْثًا (নিজের হাতে একটি ঝাড়– নিয়ে ওকে মার) হযরত আয়ুব (عليه السلام) কে শপথ রক্ষার জন্য এ পরামর্শটা দেয়া হয়েছিল। অধিকাংশ মাশায়েখের অভিমত হচ্ছে এ আয়াতের হুকুম রহিত হয়নি এবং এটাই সঠিক অভিমত।’’ ৪৪৪

➥444. নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩৯০।


حموى شرح اشباه এবং تتارخانية কিতাবদ্বয়ে হীলা সম্পর্কে খুবই সুন্দর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যেমন এ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এক জায়গায় বলা হয়েছে-

فخلفت سارة ان ظفرت بها قطعت عضوا منها فارسل الله جبريل الى ابراهيم عليه السلام ان يصلح بين هما فقالت سارت ما حيلة يمينى فاوحى الله الى ابراهيم عليه السلام ان يامر سارة ان تثقب اذنى هاجرة فمن ثم تثقب الاذن

-হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, একবার হযরত সারা (رضي الله عنه) ও হযরত হাজেরা (رضي الله عنه) এর মধ্যে কিছু একটা নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল। তখন হযরত সারা (رضي الله عنه) কসম খেয়েছিল- “যদি আমার সুযোগ মিলে, তাহলে হাজেরার কোন অঙ্গ কেটে দেব।” আল্লাহ তা’আলা হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) এর মারফৎ হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) কে নির্দেশ দিলেন যেন ওদের পরস্পরের মধ্যে আপোষ করে দেন। হযরত সারা (رضي الله عنه) আরয করলেন, তাহলে আমার কসমের কি সূরহা হবে? তখন হযরত ইব্রাহীমের উপর ওহী নাযিল হলো-হযরত সারা (رضي الله عنه)কে নির্দেশ দাও যেন সে হযরত হাজেরার (رضي الله عنه) কর্ণ ছেদন করে।’ এ সময় থেকে মহিলাদের কান ছেদন শুরু হয়। ৪৪৫

➥445. ফানু হিইলু হামভী আ’লা আশবাহ ওয়ান নাযায়ের, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৯১-২৯২, ইদারাতুল কোরআন ওয়াল উলূমুল ইসলামিয়্যাহ, করাচী, পাকিস্তান। 


উপরোক্ত কুরআনী আয়াত, সহীহ হাদীছ ও ফকীহ ইবারত সমূহ থেকে শরয়ী হীলা জায়েয বোঝা গেল।

 
Top