নারীর ফেতনা ও বনি ইসরাঈল


নারীর ফেতনা সবচেয়ে ভয়ংকর ফেতনা। হাদীসে এসেছে-

عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ من النِّسَاء

“হযরত উসামা বিন যায়েদ  (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আমি আমার পর পুরুষের জন্য নারী সম্প্রদায় অপেক্ষা অধিক ফেতনার জিনিস আর কিছুই রেখে গেলাম না।” ২৮৭

২৮৭.বুখারী, হাদীস নং ৫০৯৬, মিশকাত, পৃষ্ঠা ২৬৭


স্বাভাবিকভাবেই পুরুষের অন্তর নারীর প্রতি ঝুঁকে পড়ে। ফলে তাদের কারণেই তারা হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে যায় এবং তাদের কারণেই যুদ্ধ বিগ্রহে জড়িয়ে পড়ে। আর এতদ্ব্যতীত অধিকাংশ নারী পুরুষদেরকে পার্থিব সম্পদের দিকে আকৃষ্ট করায়। আর দুনিয়ার আকর্ষণ ও মহব্বতের চেয়ে অন্য কোনো বস্তু ক্ষতিকারক হতে পারে না। তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দুনিয়ার মহব্বতই সকল গুনাহর উৎস। হাদীসে এসেছে-

 عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: ্রإِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّسَاء

“হযরত আবু সাঈদ খুদরী  (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, দুনিয়া মধুময় এবং সবুজের সমারোহে ভরপুর। আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের উত্তরসূরীরূপে প্রেরণ করেছেন। আর এতে করে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা নিতে চেয়েছেন যে, তোমরা কিরূপ আমল কর। অতএব, তোমরা দুনিয়ার মোহ হতে বেঁচে থাক এবং নারীদের ছলনা হতে বেঁচে থাক। কেননা বনি ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম নারী সংক্রান্ত ফেতনা আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল।”


দুনিয়া মধুময় সবুজের সমারোহ। মূলত মধু বা মিষ্টি স্বাভাবিক সুস্বাদু আর সবুজ জিনিস দৃশ্যত ভালো মনে হয়। তাই দুনিয়া-প্রীতি হতে বেঁচে থাকা উচিত। কেননা তা ধ্বংসশীল।


হাদীসে বলা হয়েছে, ‘নারীদের থেকে বেঁচে থাক।’ অর্থাৎ নারীদের মনতুষ্টির জন্য পার্থিব সম্পদের দিকে ঝুঁকে পড়ো না।


হাদীসে বলা হয়েছে যে, বনি ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফেতনা নারীদের কারণেই ঘটেছিল। আল্লামা তীবী (رحمة الله) বলেন, বনি ইসরাঈলের জনৈক ব্যক্তি ছিল। তার ভ্রাতুষ্পুত্র তার আপন মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। চাচা এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভ্রাতুষ্পুত্র তাকে হত্যা করল।  এ ঘটনা সম্পর্কেই সূরায়ে বাকারা তথা গাভীর কাহিনী অবতীর্ণ হয়েছে।


মুজাহেরে হক গ্রন্থে বাহরুল উলুমের উদ্ধৃতি দিয়ে বনি ইসরাঈলের সর্বপ্রথম ফেতনার ঘটনা নিম্নরূপ বর্ণনা করা হয়েছে-


হযরত মুসা আ -এর যুগে বলয়াম ইবনে বাউর নামী জনৈক ব্যক্তি বড়ই বুযুর্গ ছিলেন। তিনি ছিলেন ‘মুস্তাজাবুদ্দাওয়াত’ তথা তার দোয়া কবুল করা হতো। তার ইসমে আজম জানা ছিল। যখন হযরত মুসা আ সিরিয়া রাজ্যে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বনু কিনয়ানের নিকটে অবস্থান করলেন, তখন বলয়াম সম্প্রদায় তার নিকট এসে বলল যে, ‘হযরত মুসা আ অনেক সৈন্যবাহিনী সহকারে আমাদেরকে হত্যা করার জন্য এবং আমাদেরকে এ দেশ থেকে বের করে দেয়ার জন্য এসেছেন। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন, যাতে তিনি এখান থেকে চলে যান।’ জবাবে বলয়াম বললেন, ‘আমি যা কিছু জানি তোমরা তা জান না। আল্লাহর নবী এবং মুুমিনদের বিরুদ্ধে আমি কিভাবে বদদোয়া করি?  যদি আমি বদদোয়া করি তবে আমার দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই ধ্বংস হয়ে যাবে।’ কিন্তু তার সম্প্রদায় তাকে অনেক চাপ দিয়ে অতিষ্ঠ করে তুলল। ফলে বলয়াম বললেন, ‘আমি আল্লাহর দরবারে ইস্তেখারা করব, কী হুকুম হয় দেখব।’ বলয়াম ইস্তেখারা ব্যতীত কোনো কাজ করতেন না। ইস্তেখারা করলে স্বপ্নে দেখতে পেলেন যে তাকে বলা হলো, ‘হে বলয়াম! তুমি নবী ও মুমিনের বিরুদ্ধে বদদোয়া করো না।’ বলয়াম তার সম্প্রদায়কে উক্ত স্বপ্ন প্রকাশ করল। অতঃপর তার সম্প্রদায় তার জন্য হাদিয়া তোহফা নিয়ে আসল এবং অনেক আবেদন ও চাপে অতিষ্ঠ করে তুলল এবং কান্নাকাটি করল। 


এক পর্যায়ে তাকে ফেতনায় জড়িয়ে ফেলল। বলয়াম বদদোয়ার উদ্দেশ্যে নিজ গাধার উপর সাওয়ার হয়ে হিসবান নামক পর্বতে ছুটে গেলেন। এই পর্বত ছিল মুসা (আ)-এর বাহিনীর নিকটে। তিনি সেদিকে ছুটে গেলেন। পথিমধ্যে তার গাধা একাধিকবার মাটিতে লুটে পড়তে লাগল। আর সে অনেক প্রহার করে গাধাকে উঠাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমে গাধা বলে উঠল, “ধ্বংস হে বলয়াম! তুমি কি দেখছ না যে, ফেরেশতাগণ আমার সামনে এসে আমাকে বাধা দিচ্ছে!”


এবার বলয়াম গাধা রেখে পায়ে হেঁটে পাহাড়ের উপর উঠল এবং দোয়া করল। তবে দোয়ার মধ্যে যে খারাপ বাক্য বনি ইসরাঈলের বিরুদ্ধে মুখ থেকে বের করার ইচ্ছা করল তা আল্লাহর কুদরতে বনি ইসরাঈলের স্থলে বলয়াম সম্প্রদায়ের নামেই মুখ থেকে বের হয়ে পড়ল।


তার সম্প্রদায়ের লোকেরা বলল যে, ‘আমাদের উপর বদদোয়া করছ?’ জবাবে বলয়াম বলল, ‘এটি আমার অনিচ্ছায়। আল্লাহ এরূপে বের করাচ্ছেন’ পরবর্তীতে বলয়ামের জিহ্বা তার মুখ থেকে বের হয়ে বক্ষদেশে এসে পড়ল। বলয়াম বলল,“আমার তো দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই ধ্বংস হলো। তোমরা একটি কৌশল অবলম্বন কর। তাহলো, তোমাদের নারীদেরকে ফ্যাশন হালে সুসজ্জিত করে কিছু জিনিস তাদের হাতে দিয়ে ঐ বস্তুগুলো বিক্রির বাহানায় বনি ইসরাঈল বাহিনীতে প্রেরণ কর এবং নারীদেরকে বলে দিবে যে, বনি ইসলাঈলের কোনো লোক তাদের কাউকে ডাকলে যেন সাড়া দেয়। যদি তাদের একজনও যেনায় লিপ্ত হয় তবে তাতে তোমাদের সংকট নিরসন হয়ে যাবে।”


বলয়াম সম্প্রদায় তাই করল। অগণিত সুন্দরী ফ্যাশনী নারী বনি ইসরাঈলের বাহিনীতে ছড়িয়ে পড়ল। এদের মধ্যে একজনের নাম ছিল কুসসি বিনতে সুর। সে বনি ইসরাঈলের সর্দার যমযম ইবনে ছিমালুমের সামনে দিয়ে অতিক্রম করছিল। যমযম তাকে দেখে তার রূপের উপর আকৃষ্ট হয়ে পড়ল। তার হাত ধরে হযরত মুসা (আ)-এর নিকট নিয়ে গেল এবং বলল, “এই মহিলা কি আমার জন্য হারাম?” হযরত মুসা (আ) বললেন, “হ্যাঁ, কখনোই তার নিকট যেও না।”


যমযম বলল, “আমি আপনার এই হুকুমের বাধ্য হতে পারছি না।” অতঃপর সে উক্ত নারীকে তাঁবুর ভিতরে নিয়ে ব্যভিচারে লিপ্ত হলো। আল্লাহ তায়ালা তার এ অপরাধের কারণে বনি ইসরাঈলের সৈন্যদের উপর মহামারি প্রেরণ করেন। ফলে কিছু সময়ের মধ্যেই সত্তর হাজার বনি ইসরাঈল ধ্বংস হয়ে যায়। হযরত হারুন আ.-এর পুত্র ফাহাস এই সংবাদ পেয়ে নিজ অস্ত্র দিয়ে যমযমের তাঁবুর মধ্যে ঢুকে যমযম এবং উক্ত নারীকে হত্যা করলেন। আর বললেন, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এ ব্যক্তির গুনাহের কারণে ধ্বংস করছেন। তখনই মহামারি চলে গেল। বলা বাহুল্য, এ ঘটনাটিই হাদীসে বর্ণিত নারীদের কারণে বনি ইসরাঈলের সর্বপ্রথম ফেতনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

 
Top