বিষয় নং-১০: উপকারকারী:


দেওবন্দী ওহাবীরা বলে নবী করিম (ﷺ) আতায়ী ভাবে লাভ-ক্ষতির মালিক নয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল সারকারে দুজাহান, শাফিয়ে মুজরিমা, হুযূর পুর নুর (ﷺ) কে আল্লাহ তায়ালা লাভ-ক্ষতির মালিক করেছেন। কুরআনে পাকে মহান আল্লাহ বলেন-

وَمَا نَقَمُوا إِلَّا أَنْ أَغْنَاهُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ مِنْ فَضْلِهِ

-“ কথাই নয় কি যে, আল্লাহ রাসূল তাদের নিজ কৃপায় অভাব মুক্ত করে দিয়েছেন? (সূরা তাওবা, আয়াত নং-৭৪) তিনি আরও ইরশাদ করেন-

وَلَوْ أَنَّهُمْ رَضُوا مَا آتَاهُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ سَيُؤْتِينَا اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَرَسُولُهُ إِنَّا إِلَى اللَّهِ رَاغِبُونَ

-‘‘এবং কতই ভাল হতো, যদি তারা তাতেই সুন্তুষ্ট হতো, যা আল্লাহ রাসূল তাদেরকে দিয়েছেন এবং বলতো, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, এখন আল্লাহ আমাদেরকে দিচ্ছেন আপন করুণা থেকে এবং আল্লাহ রাসূল; আমরা আল্লাহরই প্রতি আসক্ত।’’ ১২৪

  • ১২৪. সূরা তাওবা; আয়াত নং-৫৯


তিনি আরও ইরশাদ করেন-

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا

-‘‘এবং না কোন মুসলমান পুরুষ, না কোন মুসলমান নারীর জন্য শোভা পায় যে, যখন আল্লাহ রাসূল কোন র্নিদেশ দেন তখন তাদের স্বীয ব্যাপারে কোন ইখতিয়ার থাকবে। এবং যে কেউ নিদের্শ অমান্য করে আল্লাহ তাঁর রাসূলের, নিশ্চয় সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পথভ্রষ্ট হয়েছে।’’ ১২৫

  • ১২৫. ২২ পারা, ২য় রুকু, সূরা আহযাব, আয়াত নং-৩৬


 তিনি আরও ইরশাদ করেন-

وَإِذْ تَقُولُ لِلَّذِي أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِ وَأَنْعَمْتَ عَلَيْهِ

-‘‘এবং হে মাহবুব! স্মরণ করুন, যখন আপনি বলতেন তাকে, যাকে আল্লাহ অনুগ্রহ প্রদান করেছেন এবং আপনিও তাকে অনুগ্রহ প্রদান করেছেন।’’ ১২৬  

  • ১২৬. ২২ পারা, ২য় রুকু, সুরা আহযাব , আয়াত নং-৩৭


তিনি আরও ইরশাদ করেন-

وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللهَ تَوَّابًا رَحِيمًا

এবং যদি কখনো তারা নিজেদের আত্মার প্রতি যুলুম করে তখন, হে মাহবুব ! (তারা) আপনার দরবারে হাযির হয় এবং অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর রাসূল তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই আল্লাহকে অত্যন্ত তাওবা কবুলকারী, দয়ালু পাবে।’’  ১২৭

  • ১২৭. ৫ম পারা, ৬ রুকু, সুরা নিসা; আয়াত : ৬৪


তিনি আরও ইরশাদ করেন-

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَنْفَالِ قُلِ الْأَنْفَالُ لِلهِ وَالرَّسُولِ فَاتَّقُوا اللهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ وَأَطِيعُوا اللهَ وَرَسُولَهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ

-‘‘হে মাহবুব! আপনাকে গণীমতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে, আপনি বলুন, গণীমত সমূহের মালিক আল্লাহ তাঁর রাসূল; সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং পরস্পরের মধ্যে সদ্ভাব রাখো আর আল্লাহ রাসূলের নির্দেশ পালন করো; যদি ঈমান রাখো।’’  ১২৮

  • ১২৮. ৯ম পারা, ১৫ রকু, সূরা আনফাল: ১


প্রিয় পাঠক! পবিত্র এই আয়াতগুলো ছাড়াও আরো অনেক আয়াত রয়েছে, যে গুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় মহান আল্লাহর অনুগ্রহে রাসূলে কারিম (ﷺ) লাভ-ক্ষতির মালিক। আপনারা নিজেরাই চিন্ত করুন! কাউকে ধনী বানানো কাউকে দান করা, কাউকে দান করা, কাউকে অনুগ্রহ করা, কাউকে সুপারিশ করা, গণীমতের মালিক হওয়াই তো উপকারকারী হওয়া। অতঃপর সাহাবায়ে কেরাম রাসূলে কারিম (ﷺ)’ দরবার হতে ফয়েজ বরকত এবং উপকার লাভ করতেন। যেমনটি অসংখ্য হাদিস এসেছে। এরূপ কয়েকটি হাদিস বর্ণনা করা হবে। 

পবিত্র কুরআনের যে সব আয়াত লাভ ক্ষতির মালিক না হওয়ার বর্ণনা এসেছে, তা হল স্বত্ত্বাগত মালিক হওয়াকে নাফি (নিষেধ) করা হয়েছে। আতায়ী বা দানকৃত মালিক হওয়াকে নাফি করা হয়নি। যদি আতায়ী বা দানকৃত মালিক হওয়াকে নাফি করা হয়, তবে উপরে যে সব আয়াত আমরা উল্লেখ করেছি, সেগুলোর ব্যাপারে কী করা হবে? মসলাকে হক্ব তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পবিত্র কুরআনের প্রতিটি আয়াতের উপরই বিশ্বাস রাখে। যে আয়াতে নাফি করা হয়েছে তা সত্ত্বাগত, আর যেগুলো দ্বারা মালিক  সাব্যস্থ হয়েছে তা আতায়ী বা দানকৃত। এখন কুরআনে কারিমে অন্য যেসব আয়াতের মধ্যে অন্যান্য নবীগণ (عليه السلام) কে লাভ-ক্ষতির মালিক বলা হয়েছে তা আলোচনা করা হবে। হযরত ঈসা (عليه السلام)’ একটি ঘটনা পবিত্র কুরআনে এভাবে এসেছে।

হযরত ঈসা (عليه السلام) বলেন

أَنِّي أَخْلُقُ لَكُمْ مِنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَأَنْفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًا بِإِذْنِ اللَّهِ

-‘‘আমি তোমাদের জন্য মাটি দ্বারা পাখী সদৃশ আকৃতি গঠন করে থাকি, অতঃপর সেটার মধ্যে ফুৎকার করি। তখন সেটা তৎক্ষনাৎ পাখী  হয়ে যায় আল্লাহর নির্দেশে।’’  ১২৯

  • ১২৯. ৩য় পারা ১৩ রুকু, সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং-৪৯ 


এখন মাটি থেকে পাখির আকৃতি বানানো হযরত ঈসা (عليه السلام)’ কাজ, ফুৎকার করাও হযরত ঈসা (عليه السلام)’ কাজ। যখন ফুৎকার দেন তখন আল্লাহর হুকুমে তা উড়ে যায়। এর থেকে যদি হযরত ঈসা (عليه السلام)’ উপকার করার এবং পূর্ণতা অর্জনের বিষয় প্রমাণিত না হয় তবে কোথা হতে হবে? হযরত ঈসা (عليه السلام) উপকারের এই বিষয়টি পবিত্র কুরআন আল্লাহ বর্ণনা করে হযরত ঈসা (عليه السلام)’ মর্যাদা প্রকাশ করেছেন। আর এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি মর্যাদা বান হল আমার প্রিয় নবী (ﷺ)’ শান। নিন্মোক্ত আয়াত হতে হযরত ঈসা (عليه السلام)’ উপকারী হওয়ার বিষয়টি আরো বেশি প্রমাণিত।

وَأُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ وَأُحْيِ الْمَوْتَى بِإِذْنِ اللَّهِ

-‘‘এবং আমি নিরাময় করি জন্মান্ধ সাদা দাহা সম্পন্ন (কুষ্ঠ রোগী) কে আর আমি মৃতকে জীবিত করি আল্লাহর নির্দেশে।’’  ১৩০

  • ১৩০. ৩য় পারা, ১৩ রুকু, সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৪৯


হযরত ঈসা (عليه السلام)’ মাধ্যমে আল্লাহর হুকুমে আরোগ্য লাভ, কুষ্টরোগ ভাল এবং মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করার এসব বিষয় উপকারী না হলে আর কোন গুলো হবে?

এই সমস্ত দেওবন্দীরা কোন মুখে ঈসাইদের সামনে বলবে যে, নবী করিম (ﷺ) লাভ-ক্ষতির মালিক নয়। কুরআন পাকেই যখন তাদের নবী হযরত ঈসা (عليه السلام) লাভ-ক্ষতির মালিক হিসেবে প্রমাণিত? হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) যখন হযরত মারিয়াম (عليه السلام)’ সামনে এসে বললেন, আমি আপনাকে একটি সন্তান দিতে এসেছি; তবে কি জিবরাঈল (عليه السلام) উপকার দাতা নন?

শেষমেষ জিবরাঈল (عليه السلام) তো মাখলুক। পবিত্র কুরআনে তাঁর বর্ণনা এভাবে এসেছে যে

قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا

-“বললো, ‘আমি তো তোমার রবের প্রেরিত আমি তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করবো।’’ ১৩১

  • ১৩১. সূরা মারিয়াম, আয়াত নং-১৯ 


অনুরূপভাবে হযরত ইউসুফ (عليه السلام)’ বরকতে হযরত ইয়াকুব (عليه السلام)’ দৃষ্টি শক্তি ফিরে আসার বিষয়টিও পবিত্র কুরআনে এসেছে। দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসাটা কী উপকার নয়? অবশ্যই, তা উপকার। এখন কুরআনে পাকের উপর্যুক্ত আয়াত পেশ করা হবে যাতে উপরোক্ত বিষয়টি বিদ্যমান। হযরত ইউসুফ (عليه السلام) বলেন-

اذْهَبُوا بِقَمِيصِي هَذَا فَأَلْقُوهُ عَلَى وَجْهِ أَبِي يَأْتِ بَصِيرًا

-“আমার এই জামা নিয়ে যাও। এটা আমার পিতার মুখমন্ডল এর উপর রেখে দিও, তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। আর তোমাদের পরিবারের সকলকে আমার নিকট নিয়ে এসো।’’ ১৩২

  • ১৩২. ১৩ পারা, ৪ রুকু , সুরা ইউসুফ, আয়াত নং-৯৩


فَلَمَّا أَنْ جَاءَ الْبَشِيرُ أَلْقَاهُ عَلَى وَجْهِهِ فَارْتَدَّ بَصِيرًا

-“অতঃপর যখন সুসংবাদদাতা উপস্থিত হলো, তখন সে জামাটা ইয়াকুবের মুখের উপর রাখলো। তখনই তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে এলো।’’ ১৩৩

  • ১৩৩. ১৩ পারা, রুকু ৫, সুরা ইউসুফ, আয়াত নং-৯৬


প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আয়াতগুলোতে হযরত ঈসা (عليه السلام), হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এবং জিবরাঈল (عليه السلام) উপকারী হওয়ার বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। এখন সাধারণ কোন মুসলমানের কাছে জিজ্ঞাসা করুন যে, নবীগণের মধ্যে সবচেয়ে বড় কে? অবশ্যই উত্তরে তিনি বলবেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী রাসুলে কারিম (ﷺ) সবচেয়ে বড়। সুতরাং অন্যান্য নবীগণ যখন উপকার করতে পারেন তবে রাসূল করিম (ﷺ)’ ব্যাপারে কেন মুসলমানগণ অস্বীকার করবে? প্রকৃত মুসলমান তো সে ব্যক্তিই হবে যে রাসূলে করিম (ﷺ) কে উপকারী মনে করে। এবং হাজতপূর্ণকারী মানে। এজন্য লা হযরত আজিমুল বরকত শাহ আহমদ রেযা (رحمة الله) বলেন-

رافع نافع دافع شافع

كيا كيا رحمت لاتے يہ ہيں

‘‘উন্নত-হিতকর, বিতাড়ক-অনুরোধবর

কীরূপ আশিষ ত্রানে, বড়ই দয়াধর।’’

এখন এর সমর্থনে হাদীস শরীফ বর্ণনা করা হবে।

হযরত মাইজ (رضي الله عنه)‘ আকিদা

সাহাবী হযরত মাইজ ইবনে মালেক (رضي الله عنه) হতে একটি বড় পাপ প্রকাশ পেল। তখন তিনি রাসূল (ﷺ)’ দরবারে গিয়ে বলেন

يَا رَسُولَ اللهِ طَهِّرْنِي.

-‘‘হে রাসূল (ﷺ) আমাকে পবিত্র করুন।’’ ১৩৪

  • ১৩৪. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ২/১০৫৮ পৃ. হা/৩৫৬২, ইমাম মুসলিম,  আস-সহীহ, ৩/১৩২১ পৃ. হা/১৬৯৫


সাহাবী গুনাহ করেছেন আল্লাহর কাছে কিন্তু তিনি নবী করিম (ﷺ)’ দরবারে এসে আরয করলেনআমাকে পবিত্র করুনবুঝা গেল রাসূল (ﷺ) কে সাহাবায়ে কেরাম উপকার দাতা হিসেবে জানতেন। এজন্যই সাহাবী (رضي الله عنه) গণ এরূপ  আরয করছেন। রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন 

إِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَيُعْطِي اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ

-“নিশ্চয়ই আমি বন্টন করি, আর আল্লাহ আমাকে দান করেন।’’ ১৩৫

  • ১৩৫. বুখারী শরীফ ৪র্থ খণ্ড ৮৪ পৃ, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, ১০/২৩৮ পৃ. হা/৫৮৫৫, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৯/৩২৯ পৃ. হা/৭৫৫


হাদিস শরীফ হতে বুঝা গেল, রাসূলে করিম (ﷺ) সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে বন্টন কারী। আর যিনি বন্টনকারী হন, তিনি উপকারকারী  

সায়্যিদুনা রবী বিন মালেক (رضي الله عنه)’ আকিদা

হযরত রবী (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) দরবারে আরয করেন-

أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِي الْجَنَّةِ.

-“আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি জান্নাতে আমি আপনার সাথে থাকবো।’’ ১৩৬

  • ১৩৬. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (৮৬ পৃ.), ১/২৮১ পৃ. হা:৮৯৬, মুসলিম শরীফ, ১ম খণ্ড, ৩৫৩ পৃ. হা/৪৮৯, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৪৯ পৃ. হা/৬৫৫


প্রিয় পাঠক! কুরআন সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত হল নবী করিম (ﷺ) উপকার করার মালিক। এজন্য দেওবন্দী এবং গাইরে মুকাল্লিদ ওহাবীরা আ্হলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
 
Top