প্রথম অধ্যায়

নবীগণ যে নিষ্পাপ এর প্রমাণ



নবীগণ যে নিষ্পাপ, তা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত, বিশুদ্ধ হাদীছসমূহ, উম্মতের ঐক্যমত ও আকলী দলীলসমূহ দ্বারা প্রমাণিত আছে। একমাত্র সে অস্বীকার করতে পারে, যে মন মানসিকতার দিক দিয়ে অন্ধ।


কুরবানী আয়াতসমূহঃ


(১) আল্লাহ তা’আলা শয়তানকে বলেছেন- 

إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ

-‘‘ওহে ইবলীস, আমার বিশিষ্ট বান্দাদের উপর তোমার কোন কর্তৃত্ব নেই।’’ ৫৪৫

➥545. সূরা হিজর, আয়াত নং-৪২।


(২) শয়তান নিজেই স্বীকার করেছিল-

وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ (৩৯) إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ

-‘‘হে মওলা, তোমার বিশিষ্ট বান্দাগণ ব্যতীত বাকী সবাইকে বিপথগামী করবো।’’  ৫৪৬

➥546. সূরা হিজর, আয়াত নং- ৩৯-৪০।


এতে বোঝা গেল যে নবীগণ পর্যন্ত শয়তান যেতে পারে না। তাই সে তাঁদেরকে না পারে বিপথগামী করতে, না পারে কুপথে পরিচালনা করতে। তাহলে তাঁদের থেকে গুনাহ কি ভাবে প্রকাশ পেতে পারে? আশ্চর্যের বিষয় নবীদেরকে মাসুম স্বীকার করে শয়তান তাদেরকে বিপথগামী করার থেকে নিজের অপারগতা স্বীকার করছে। অথচ এ যুগের ধর্মদ্রোহীরা তাদেরকে গুনাহগার মনে করছে। বাস্তবিকই এরা শয়তান থেকেও নিকৃষ্ট।


(৩) হযরত ইউসুফ (عليه السلام) বলেছিলেন- 

مَا كَانَ لَنَا أَنْ نُشْرِكَ بِاللَّهِ مِنْ شَيْءٍ

-আমরা নবী সম্প্রদায়ের পক্ষে খোদার সাথে র্শিক করাটা অশোভনীয়।’’ ৫৪৭

➥547. সূরা ইউসুফ, আয়াত নং-৩৮।


(৪) হযরত শুয়াইব (عليه السلام) স্বীয় কউমকে বলেছিলেন-

وَمَا أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَى مَا أَنْهَاكُمْ

-‘‘যেটা তোমাদের নিষেধ করি, সেটা নিজের করবো, এ ধরনের ধারণা আমি করি না।’’  ৫৪৮

➥548. সূরা হুদ, আয়াত নং-৮৮।


বোঝা গেল যে নবীগণ র্শিক ও গুনাহ করার ধারণাও কখনো করেন না। এটাই হচ্ছে নিঙ্কলুষতার হাকীকাত।


(৫) হযরত ইউসুফ (عليه السلام) বলেছেন-

وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي

-‘‘আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না। মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্ম প্রবণ। তবে যার প্রতি আল্লাহর দয়া রয়েছে।’’ ৫৪৯

 ➥549. সূরা ইউসুফ, আয়াত নং-৫৩।


এখানে এ রকম বলা হয়নি যে, আমার আত্মা মন্দকর্মপ্রবণ, বরং বলেছেন- সাধারণ আত্মা জনসাধারণকে মন্দকর্মে অনুপ্রাণিত করে। কেবল ওসব আত্মাকে বিপথগামী করতে পারে না, যে গুলোর প্রতি খোদার বিশেষ রহমত রয়েছে। এ গুলো হচ্ছে নবীগণের আত্মা। তাঁদের আত্মা তাঁদেরকে ধোঁকা দিতে পারে না।


(৬) আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান-

إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى آدَمَ وَنُوحًا وَآلَ إِبْرَاهِيمَ وَآلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِينَ

-‘‘আদমকে, নুহকে, ইব্রাহীমের বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে আল্লাহ তা’আলা বিশ্বজগতে প্রাধান্য দিয়েছেন।’’  ৫৫০

➥550. সূরা আলে-ইমরান, আয়াত নং-৩৩।

এতে বোঝা গেল সমস্ত জগতের মধ্যে নবীগণ শ্রেষ্ঠ। জগতের মধ্যে নিষ্পাপ ফিরিশতাগণও রয়েছেন। আর ফিরিশতাদের বৈশিষ্ট হচ্ছে- 

لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ

তাঁরা কখনও নাফরমানী করেন না।’’  ৫৫১

➥551. সূরা তাহরীম, আয়াত নং-৬।


যদি নবীগণ গুণাহগার হন, তাহলে ফিরিশতাগণ নিশ্চয়ই নবীদের উর্ধ্বে স্থান পেতেন।


(৭) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ফরমান-

لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ

-‘‘আমার প্রতিশ্রুত নবুয়তের সিলসিলা জালিমদের অর্থাৎ ফাসিকদের সাথে সংমিশ্রিত হবে না।’’  ৫৫২

➥552. সূরা বাক্বারা, আয়াত নং-১২৪।


❏ এতে বোঝা গেল অনাচার ও নবুয়াত একত্রিত হতে পারে না। কুরআন করীম নবীদের উক্তি উদ্ধৃত করে ইরশাদ করেছেন-

قَالَ يَا قَوْمِ لَيْسَ بِي ضَلَالَةٌ وَلَكِنِّي رَسُولٌ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ

-‘‘হে আমার কউম, আমার কাছে গুমরাহী বলতে কিছু নেই, আমি আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ।’’ ৫৫৩

➥553. সূরা আ’রাফ, আয়াত নং-৬১।


 এ আয়াতে لَكِنِّي শব্দ থেকে বোঝা গেল যে, গুমরাহী ও নবুয়াত একত্রিত করা যায় না। কেননা নবুয়াত হচ্ছে নূর আলো আর গুমরাহী অন্ধকার। আলো-অন্ধকারের একত্রিকরণ অসম্ভব।


হাদীছ সমূহঃ


১। মিশ্কাত শরীফের الوسوسة অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে একজন শয়তান অবস্থান করে, যাকে ‘করীন’ বলা হয়। কিন্তু আমার হুযূর (ﷺ) করীন মুসলমান হয়ে গেছে। সে আমাকে সুপরামর্শই দিয়ে থাকে।  ৫৫৪

➥554. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, পৃষ্ঠা-১৮, হাদিস-


২। একই অধ্যায়ে, আরও বর্ণিত আছে যে, প্রত্যেক শিশুকে জন্মের সময় শয়তান মারে। কিন্তু হযরত ঈসা (عليه السلام) এর জন্মের সময় শয়তান ছুঁতেও পারেনি।  ৫৫৫

➥555. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, পৃষ্ঠা-১৮।


এ হাদীছদ্বয় থেকে জানা গেল যে উল্লে­খিত নবীদ্বয় শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্ত।


৩। মিশ্কাত শরীফের কিতাবুল গোসল থেকে জানা যায় যে, নবীদের স্বপ্নদোষ হয় না। কেননা এতে শয়তানী প্রভাব রয়েছে। এমনকি তাদের স্ত্রীগণও স্বপ্নদোষ থেকে পরিত্রাণ প্রাপ্ত। ৫৫৬

➥556. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, কিতাবুল গোসল, পৃষ্ঠা-৪৮, হাদিস-


৪। নবীগণের হাই আসে না। কেননা এতেও শয়তানী প্রভাব রয়েছে। এ জন্য তখন ‘লা হওলা’ বলা হয়।


৫। মিশ্কাত শরীফের ‘আলামাতে নবুয়াত’ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে- হুযূর (ﷺ) এর বক্ষ বিদীর্ণ করে এক টুক্রা মাংস বের করে ফেলে দেয়া হয় এবং বলা হয় যে, সেটা শয়তানী অংশ। অতঃপর তা যম্ যম্ কুপের পানি দিয়ে ধুয়ে দেয়া হয়।  ৫৫৭

➥557. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, কিতাবুল গোসল, পৃষ্ঠা-৫২৪


এতে বোঝা গেল হুযূর (ﷺ) এর আত্মা শয়তানী প্রভাব থেকে পবিত্র।


৬। মিশ্কাত শরীফের مناقب عمر শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে- হযরত উমর (رضي الله عنه) যে রাস্তা দিয়ে গমন করেন, তথা হতে শয়তান পালিয়ে যায়।  ৫৫৮

➥558. 

(১)ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ফাযায়েলে সাহাবা, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৩৪৭, হাদিস-৩৪৮০।

(২)ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ফাযায়েলে সাহাবা, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৮৬৩, হাদিস-২৩৯৬।

(৩)ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৪১, হাদিস-৮১৩০।


এতে বোঝা গেল, যাঁর প্রতি নবীদের সুদৃষ্টি রয়েছে, তিনিও শয়তান থেকে নিরাপদ থাকেন। তাই নবীদের প্রশ্নই আসে না।


উলামায়ে উম্মতের উক্তিসমূহঃ


নবীগণ যে নিষ্পাপ, এ ব্যাপারে সবসময় উম্মতে মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে। শয়তানী দল ছাড়া কেউ এটা অস্বীকার করে না। যেমন শরহে আকায়েদে নসফী, শরহে ফিক্হ আকবর, তফ্সীরাতে আহমদীয়া, তফসীরে রূহুল বয়ান, মদারেজুন নাবুয়াত, মওয়াহেবে লাদুনিয়া, শিফা শরীফ, নছিমে রেয়াজ ইত্যাদি কিতাবে এর বিবরণ রয়েছে। 


❏ তফ্সীরে রূহুল বয়ানে - 

مَا كُنْتَ تَدْرِي مَا الْكِتَابُ

আয়াতের  ৫৫৯ ব্যাখ্যায় উল্লে­খিত আছে-

فان اهل الوصول اجتمعوا على ان الرسل عليهم السلام كانوا مؤمنين قبل الوحى معصومين من الكبائر ومن الصغائر الموجبة لنفرة الناس عنهم قبل البعثة وبعدها قضلا عن الكفر

অর্থাৎ এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, নবীগণ ওহী প্রাপ্তির আগে মুমিন ছিলেন এবং গুনাহ কবীরা, এমন কি জিল­তীপূর্ণ সগীরা গুনাহ থেকেও পবিত্র ছিলেন। নবুয়াতের পরেও পবিত্র ছিলেন।  ৫৬০

➥559. সূরা আশ্-শূরা, আয়াত নং-৫২।

➥560. ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৪৭।


❏ তফ্সীরাতে আহমদীয়াতে বর্ণিত আছে-

انهم معصومون عن الكفر قبل الوحى وبعده بالاجماع وكذا عن تعمد الكبائر عند الجمهور

-‘‘নবীগণ ওহী প্রাপ্তির আগে এবং পরে সর্বসম্মতিক্রমে কুফরী থেকে নিষ্পাপ ছিলেন। অধিকাংশ আলিমদের মতে গুনাহে সগীরা থেকেও পবিত্র ছিলেন।’’  ৫৬১

➥561. আল্লামা মোল্লা জিওন, তাফসিরে আহমদিয়া, পৃষ্ঠা-৩৩।


মোট কথা হলো পরলোকগত উম্মতের সর্বসম্মত অভিমতে নবীগণ নিষ্পাপ এবং এটা এত সুষ্পষ্ট অভিমত যে এর জন্য অন্যান্য ইবারত উদ্ধৃত করার আদৌ প্রয়োজন নেই।


আকলী দলীল সমূহঃ


যুক্তিও বলে যে নবীগণ কুফরী ও পাপ থেকে সদা পবিত্র:


১। কুফরী, হয়তো আকায়েদ সম্পর্কে অজ্ঞতা, কিংবা আত্মার অবাধ্যতা অথবা শয়তানের কুমন্ত্রণায় প্রকাশ পায়। কিন্তু আমি প্রথম অধ্যায়ে প্রমাণ করেছি যে, নবীগণ আল্লাহ তায়ালা হয়েই জন্ম গ্রহণ করেন, অধিকন্তু তাদের আত্মাসমূহ পাক এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিরাপদ। যখন এ তিনটি কারণ অনুপস্থিত, তখন তাদের থেকে কুফরী ও পাপ কিভাবে প্রকাশ পেতে পারে?


২। পাপ নফ্সে আম্মারা ও শয়তানের প্রভাবে হয়ে থাকে। কিন্তু তারা এ দু’টো থেকে নিরাপদ।


৩। ফাসিকের বিরোধিতা করা প্রয়োজন, নবীর অনুসরণ করা ফরয। যে কোন অবস্থায় নবীদেরকে মান্য করতে হবে। যদি নবীও ফাসিক হয়, তাহলে অনুসরণও প্রয়োজন আবার ফাসিক হেতু বিরোধিতাও প্রয়োজন এবং এটা দু’টি বিপরীতধর্মী বস্তুকে একত্রিকরণের মত।


৪। ফাসিকের কথা যাচাই না করে গ্রহণ করতে নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ফরমান- 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا

-ফাসিক কোন সংবাদ আনলে তা যাচাই করে দেখবে।’’৫৬২

➥562. সূূরা হুজরাত, আয়াত নং-৬।


❏ কিন্তু নবীদের প্রত্যেক কথা বিনা বাক্যে গ্রহণ করা ফরয। যেমন- আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান-

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ

-‘‘আল্লাহ ও তার রসুল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে, কোন মুমিন পুরুষ বা নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণের অধিকার নেই।’’  ৫৬৩

➥563. সূরা আহযাব, আয়াত নং-৩৬।


নবী যদি ফাসিকও হয়ে থাকে, তাহলে বিনা বাক্যে তাঁদের নির্দেশ মান্য করাও প্রয়োজন, আবার মান্য না করাও প্রয়োজন। এতে দুটি বিপরীত বস্তু একত্রিকরণ বুঝায়।


৫। গুনাহগারের প্রতি শয়তান রাজি, তাই সে শয়তানের দলের অন্তর্ভুক্ত এবং নেক্কারের প্রতি আল্লাহ রাজি, তাই সে আল্লাহর দলভুক্ত। যদি কোন নবী এক মুহূর্তের জন্যেও গুনাহগার হয়, তাহলে মায়াজাল্লাম, তিনি শয়তানের দলভুক্ত হয়ে যান। কিন্তু তা কখনও সম্ভব নয়।


৬। ফাসিক থেকে মুত্তাকী আফযল। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান ➥564. সূরা ছোয়াদ, আয়াত নং-২৮।


أَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِينَ كَالْفُجَّارِ

যদি নবী কোন সময় গুনাহ লিপ্ত হন আর সে সময় যদি তার কোন উম্মত নেকীর কাজ করতে থাকে, তাহলে সেই সময়ের জন্য উম্মতকে নবী থেকে আফযল বলতে হয়। কিন্তু তা অসম্ভব। কেননা কোন অবস্থাতেই উম্মত নবীর বরাবর হতে পারে না।


৭। বদ আকীদা পোষণকারীর তাযীম হারাম। হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে- 

وَعَن إِبْرَاهِيم بن ميسرَة قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ وَقَّرَ صَاحِبَ بِدْعَةٍ فَقَدْ أَعَانَ عَلَى هَدْمِ الْإِسْلَامِ . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الايمان

যে ব্যক্তি বদ আকীদা পোষণকারীর সম্মান করলো, সে ইসলামকে ধ্বংস করতে সাহায্য করলো।’’ ৫৬৫ 

➥565. খতিব তিবরিযি, মিশকাত,  ১/৬৬ পৃ: হা/১৮৯, বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ১২/৫৭ পৃ: হা/৯০১৮


❏ আর নবীর প্রতি সম্মান করা হচ্ছে ওয়াজিব। যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান ➥566. সূূরা ফাতহ, আয়াত নং-৯।


وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ

যদি কোন নবী এক মুহূর্তের জন্যও ধর্মদ্রোহী হয়ে যায়, তখন তার তাযীমও ওয়াজিব আবার হারামও। এ রকম কি কখনও হতে পারে?


৮। গুনাহগারদের ক্ষমা হুযূর (ﷺ) এর ওসীলায় হবে, যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান ➥567. সূূরা নিসা, আয়াত নং-৬৪।


وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا

এ আয়াতে সাধারণ গুনাহগারদেরকে হুযূর পাকের সমীপে হাজির হয়ে তাঁর ওসীলায় ক্ষমা প্রার্থনা আহবান জানানো হয়েছে। যদি তিনি গুনাহে লিপ্ত হন, তার ওসীলা কে হবে? এবং কার বদৌলতে তাকে ক্ষমা করা হবে? যিনি সমস্ত গুনাহগারের মাগফিরাতের ওসীলা হবেন, তিনি স্বয়ং গুনাহ থেকে পাক হওয়াই চাই। যদি তিনিও গুনাহগার হন, তাহলে বিনা কারণে অগ্রাধিকারের প্রশ্ন আসবে।


৯। মূল্যবান জিনিস মূল্যবান পাত্রে রাখা হয়। মুক্তা যেমন মূল্যবান, তেমন বাক্সও মূল্যবান হয়ে থাকে। স্বর্ণ অলংকারের বাক্সও মূল্যবান হয়ে থাকে। দুধের পাত্র দুর্গন্ধ ও টক থেকে হিফাজত রাখতে হয়, নতুবা দুধ নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহর কুদরতী কারখানার মধ্যে নবুয়াত হচ্ছে অসাধারণ ও অনন্য নিয়ামত। তাই এর পাত্র অর্থাৎ নবীগণের আত্মা কুফরী, পাপ এবং সব রকমের নাপাকী থেকে পূতঃপবিত্র হওয়া চাই। এ জন্য আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান-

اللَّهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ

-‘‘ওসব আত্মা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা অবগত, যেগুলো রিসালতের উপযোগী।’’ ৫৬৮

➥568. সূরা আনআম, আয়াত নং-১২৪।


১০। ফাসিক-ফাজিরের খবর সাক্ষ্য ছাড়া গ্রহণযোগ্য নয়। যদি নবীগণ ফাসিক হতেন, তাহলে তাদের প্রত্যেক সংবাদের জন্য সাক্ষীর প্রয়োজন হতো। অথচ নবীদের প্রত্যেক বাণী শত শত সাক্ষ্য থেকেও উত্তম। হযরত আবু খজিমা আনসারী (رضي الله عنه) উট সম্পর্কে এটাইতো বলেছিলেন যে, হে আল্লাহর হাবীব, উটের ব্যবসা বেহেশত, দোযখ ও হাশর নশর থেকে বড় নয়। যখন আমরা আপনার থেকে এসব শুনে ঈমান এনেছি, তাই সে পবিত্র মুখ থেকে এটা শুনে কেন বিশ্বাস করবো না? বাস্তবিকই আপনি উট ক্রয় করেছেন। এর পুরস্কার স্বরূপ তার এক জনের সাক্ষ্য দু’জনের সাক্ষ্যের সমতুল্য করে দিয়েছেন।

 
Top