বিদ্আতের প্রকারভেদ


ইতিপূর্বে জানা গেছে যে, বিদ্আত দু’রকম- বিদ্আতে হাসানা ও বিদ্আতে সাইয়্যা। 

➥〈 প্রথমত বিদ‘আত দুই প্রকার; আর এই দুই প্রকার আবার ৫ প্রকার। ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) বলেন-

والبدعة لُغَة: كل شَيْء عمل عَليّ غير مِثَال سَابق، وَشرعا إِحْدَاث مَا لم يكن لَهُ أصل فِي عهد رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم، وَهِي عل قسمَيْنِ: بِدعَة ضَلَالَة، وَهِي الَّتِي ذكرنَا، وبدعة حَسَنَة: وَهِي مَا رَآهُ الْمُؤْمِنُونَ حسنا وَلَا يكون مُخَالفا للْكتاب أَو السّنة أَو الْأَثر أَو الْإِجْمَاع، وَالْمرَاد هُنَا الْبِدْعَة: الضَّلَالَة.

-‘‘বিদ‘আত হলো এমন সব আমল যার দৃষ্টান্ত পূর্বে পাওয়া যায় না। ইসলামী শরীয়তে বিদ‘আত হল যে কাজের ভিত্তি রাসূল (ﷺ)-এর যামানায় ছিল না। আর এটি (বিদ‘আত) দুই প্রকার। একটি হল বিদ‘আতে দালালাহ, যার ব্যাপারে আমি ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। আর দ্বিতীয় প্রকার হলো বিদ‘আতে হাসানা যেটাকে মুসলমানগণ ভাল মনে করে থাকেন। আর এটি কিতাবুল্লাহ অথবা সুন্নাহ অথবা আছার (সাহাবী ও তাবেয়ীদের কর্ম বাণী) অথবা ইজমায়ে উম্মতের বিরোধী হবে না।’’(আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৫/২৩০পৃ:) 〉


এখন স্বরণ রাখতে হবে যে, বিদ্আতে হাসানা তিন প্রকার- জায়েয, মুস্তাহাব ও ওয়াজিব এবং বিদ্আতে সাইয়া দু’রকম- মাকরূহ ও হারাম। এ প্রকারভেদের প্রমাণ দেখুন। 


❏ মিরকাত গ্রন্থ কিতাবুল ইা‘তিসাম অধ্যায়ে আছে-


قَالَ الشَّيْخُ عِزُّ الدِّينِ بْنُ عَبْدِ السَّلَامِ فِي آخِرِ كِتَابِ الْقَوَاعِدِ: الْبِدْعَةُ إِمَّا وَاجِبَةٌ كَتَعَلُّمِ النَّحْوِ لِفَهْمِ كَلَامِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَكَتَدْوِينِ أُصُولِ الْفِقْهِ وَالْكَلَامِ فِي الْجَرْحِ وَالتَّعْدِيلِ، وَإِمَّا مُحَرَّمَةٌ كَمَذْهَبِ الْجَبْرِيَّةِ وَالْقَدَرِيَّةِ وَالْمُرْجِئَةِ وَالْمُجَسِّمَةِ، وَالرَّدُّ عَلَى هَؤُلَاءِ مِنَ الْبِدَعِ الْوَاجِبَةِ لِأَنَّ حِفْظَ الشَّرِيعَةِ مِنْ هَذِهِ الْبِدَعِ فَرْضُ كِفَايَةٍ، وَإِمَّا مَنْدُوبَةٌ كَإِحْدَاثِ الرُّبُطِ وَالْمَدَارِسِ، وَكُلُّ إِحْسَانٍ لَمْ يُعْهَدْ فِي الصَّدْرِ الْأَوَّلِ، وَكَالتَّرَاوِيحِ أَيْ بِالْجَمَاعَةِ الْعَامَّةِ وَالْكَلَامُ فِي دَقَائِقِ الصُّوفِيَّةِ، وَإِمَّا مَكْرُوهَةٌ كَزَخْرَفَةِ الْمَسَاجِدِ وَتَزْوِيقِ الْمَصَاحِفِ يَعْنِي عِنْدَ الشَّافِعِيَّةِ وَأَمَّا عِنْدَ الْحَنَفِيَّةِ فَمُبَاحٌ، إِمَّا مُبَاحَةٌ كَالْمُصَافَحَةِ عَقِيبِ الصُّبْحِ وَالْعَصْرِ أَيْ عِنْدَ الشَّافِعِيَّةِ أَيْضًا، وَإِلَّا فَعِنْدَ الْحَنَفِيَّةِ مَكْرُوهٌ، وَالتَّوَسُّعُ فِي لَذَائِذِ الْمَآكِلِ وَالْمَشَارِبِ.


-‘‘ইমাম ইযুদ্দীন বিন আব্দুস সালাম (رحمة الله) তাঁর কাওয়াদে গ্রন্থে লিখেন, বিদ্আত হয়তো ওয়াজিব, যেমন-আরবি ব্যাকারণ শিখা এবং ফিকহ শাস্ত্রের মূলনীতিসমুহকে একত্রিত করা, অথবা হারাম, যেমন- জবরীয়া সম্প্রদায় বা মুস্তাহাব, যেমন মুসাফিরখানা ও মাদ্রাসাসমূহ তৈরী করা এবং প্রত্যেক ভাল কাজ, যা আগের যুগে ছিল না, যেমন- জামাআত সহকারে তারাবীর নামায পড়া অথবা মাকরূহ, যেমন মসজিদসমূহে গৌরব বোধক কারুকার্য করা, অথবা জায়েজ, যেমন-ফজরের নামাযের পর মুসাফাহ করা ও ভাল ভাল খানাপিনার ব্যাপারে উদারতা দেখানো।’’ 

➥〈 মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/২২৩-২২৪পৃ: হা/১৪১ এর আলোচনা। 〉


❏ ফাত্ওয়ায়ে শামীর প্রথম খন্ডের কিতাবুস সালাতের বাবুল ইমামত অধ্যায়ে উলি­খিত আছে 


الْبِدْعَةُ خَمْسَةُ أَقْسَامٍ (قَوْلُهُ أَيْ صَاحِبُ بِدْعَةٍ) أَيْ مُحَرَّمَةٍ، وَإِلَّا فَقَدْ تَكُونُ وَاجِبَةً، كَنَصْبِ الْأَدِلَّةِ لِلرَّدِّ عَلَى أَهْلِ الْفِرَقِ الضَّالَّةِ، وَتَعَلُّمِ النَّحْوِ الْمُفْهِمِ لِلْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ وَمَنْدُوبَةً كَإِحْدَاثِ نَحْوِ رِبَاطٍ وَمَدْرَسَةٍ وَكُلِّ إحْسَانٍ لَمْ يَكُنْ فِي الصَّدْرِ الْأَوَّلِ، وَمَكْرُوهَةٍ كَزَخْرَفَةِ الْمَسَاجِدِ. وَمُبَاحَةٍ كَالتَّوَسُّعِ بِلَذِيذِ الْمَآكِلِ وَالْمَشَارِبِ وَالثِّيَابِ كَمَا فِي شَرْحِ الْجَامِعِ الصَّغِيرِ لِلْمُنَاوِيِّ


-‘‘বিদ‘আত পাঁচ প্রকার। হারাম বিদ্আতীর পিছনে নামায পড়া মাকরূহ। অন্যথায় কোন কোন বিদ্আত ওয়াজিব পরিণত হয়, যেমন-প্রমাণাদি উপস্থাপন, ইলমে নাহু (আরবী ব্যাকারণ) শিখা, কোন কোন সময় মুস্তাহাব, যথা-মুসাফিরখানা মাদ্রাসা এবং সে সব ভাল কাজ যা আগের যুগে ছিল না, প্রচলন করা, আবার কোন কোন সময় মাকরূহ, যেমন-মসজিদসমূহে গৌরব বোধক কারুকার্য করা এবং কোন কোন সময় মুবাহ, যেমন-ভাল ভাল খানাপিনা ও পোশাক পরিচ্ছেদের ব্যাপারে উদারতা প্রদর্শন করা। ইমাম মানাভী (رحمة الله) ‘জামেসগীর’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায়ও অনুরূপ উলে­খ করেছেন।’’ 

➥〈 ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুহতার, ১/৫৬০পৃ: কিতাবুল ইমামমত। 〉


উপরোক্ত ভাষ্য থেকে সুষ্পষ্ঠভাবে পাচঁ প্রকার বিদ্আতের পরিচয় পাওয়া গেল। 

➥〈 প্রথমত বিদ‘আত দুই প্রকার; আর এই দুই প্রকার আবার ৫ প্রকার।  〉


সুতরাং, বোঝা গেল যে প্রত্যেক বিদ্আত হারাম নয়। 

➥〈 ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-

قَالَ الشَّافِعِيُّ رَحِمَهُ اللَّهُ: مَا أُحْدِثَ مِمَّا يُخَالِفُ الْكِتَابَ أَوِ السُّنَّةَ أَوِ الْأَثَرَ أَوِ الْإِجْمَاعَ فَهُوَ ضَلَالَةٌ.

-‘‘ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন, যেই বিদ‘আতটি আল্লাহর কিতাব, নবীজীর সুন্নাহ, আছার (সাহাবী, তাবেয়ীদের কথা ও কর্মের) এবং ইজমার বিরোধী হবে সেটিই হল বিদ‘আতে দালালাহ বা মন্দ বিদ‘আত।’’ (মিরকাত, ১/২২৪পৃ: হা/১৪১) 〉


বরং কতক বিদ্আত অত্যাবশকও হয়ে থাকে, যেমন-ফিক্হ, উসূলে ফিক্হ, কুরআন করীমকে একত্রিত করা বা কুরআনে এরার (যের, যবর, পেশ ইত্যাদি) দেয়া, আধুনিক পদ্ধতিতে কুরআন ছাপানো এবং মাদ্রাসায় শিক্ষা দেয়ার জন্য  পাঠ্যসূচি  প্রনয়ন ইত্যাদি।   

➥〈 ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন-

قَالَ الْعُلَمَاءُ الْبِدْعَةُ خَمْسَةُ أَقْسَامٍ وَاجِبَةٌ وَمَنْدُوبَةٌ وَمُحَرَّمَةٌ وَمَكْرُوهَةٌ وَمُبَاحَةٌ.

-‘‘আলেমগণ বলেন, বিদ‘আত পাঁচ প্রকার, 

১. ওয়াজিব, ২. মুস্তাহাব, ৩.হারাম, ৪. মাকরুহ, ৫. মুবাহ।’’ (ইমাম নববী, শরহে মুসলিম, ৬/১৫৪পৃ:) 〉

 
Top