ঊনবিংশ অধ্যায়


সুন্নাত সালাতসমূহ



১। রাওয়াতিব সুন্নাত সালাত (পাচ ওয়াক্ত ফরজের আগে পরের সুন্নাত সালাত সমূহ):-


 ‘যে ব্যক্তি বার রাকা'য়াত সালাত আদায় করবে ফরহ ব্যতীত তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মান করা হবে।’


 এই সালাতগুলো হচ্ছে-


 ‣ যোহরের আগে চার রাকা'য়াত এবং পরে দুই রাকা'য়াত।


 ‣ মাগরিবের পর দুই রাকা'য়াত।


 ‣ সালাতুল এশার পর দুই রাকা'য়াত এবং


 ‣ ফাজরের সালাতের আগে দুই রাকা'য়াত।


 ২। সালাতুত দোহাঃ


 প্রত্যেক সকালে একজন ব্যক্তির সমস্ত জোড়ার উপর (৩৬০টি) সাদাকাহ পরিশোধনীয় হয়ে যায়, প্রত্যেক তাসবীহ একটি সাদাকাহ, সৎ কাজের আদেশ দেয়া একটি সাদাকাহ এবং মন্দ থেকে বারণ করা একটি সাদাকাহ। এই সব কিছু দুই রাকাআহ সালাত আদ দোহা পড়ার মাধ্যেমে যথেষ্ট হয়ে যায়। 


حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا عَبَّاسٌ الْجُرَيْرِيُّ ـ هُوَ ابْنُ فَرُّوخَ ـ عَنْ أَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رضى الله عنه قَالَ أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلاَثٍ لاَ أَدَعُهُنَّ حَتَّى أَمُوتَ صَوْمِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَصَلاَةِ الضُّحَى، وَنَوْمٍ عَلَى وِتْرٍ‏.


আবূ হুরায়রা رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, আমার খলীল ও বন্ধু (নবী ﷺ ) আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যাত (বিশেষ আদেশ) করেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। (তা হল) ১. প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম পালন করা। ২. সালাতুয-দোহা (চাশত এর সালাত আদায় করা)। ৩. বিত্‌র (সালাত) আদায় করে শয়ন করা।

 

(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১১৭৮)


বুরাইদা رضي الله عنه বলেন: রাসুলুল্লাহ‌ ﷺ বলেছেন, “মানুষের শরীরে ৩৬০ টি জোড় রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হল প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে সদাকা করা।” সাহাবায়ে কেরাম رضي الله عنه বললেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ‌! কার শক্তি আছে এই কাজ করার?” তিনি ﷺ বললেন, “মসজিদে কোথাও কারোর থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোন ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকা’আত সালাতই এর জন্য যথেষ্ট।” 


[আবু দাউদ; কিতাবুল ‘আদাব’, অধ্যায়ঃ ৪১, হাদীস নং:৫২২২]


 এর সময় শুরু হয় আনুমানিক সুর্য উদয়ের ১৫ মিনিট পর থেকে এবং যোহরের সালাত এর ১৫ মিনিট আগ পর্যন্ত সময় থাকে। উত্তম সময় হচ্ছে যখন পূর্ণ গরম হয়ে গেলে। এর সর্বনিন্ম রাকা'য়াত হচ্ছে দুই, আর সর্বোচ্চ আট। এটাও বলা হয়ে থাকে এর কোন নির্দষ্ট সীমা নেই।


 ৩। আসরের সালাতের সুন্নাতঃ


  আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর দয়া করুন যে সালাত আল-আসরের আগে দুই রাকাআত সালাত আদায় করে। 


أَخْبَرَنَا أَبُو الْأَزْهَرِ أَحْمَدُ بْنُ الْأَزْهَرِ النَّيْسَابُورِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ، عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي إِسْحَقَ، عَنْ الْمُسَيَّبِ، عَنْ عَنْبَسَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ، عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَاثْنَتَيْنِ بَعْدَهَا، وَاثْنَتَيْنِ قَبْلَ الْعَصْرِ، وَاثْنَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ، وَاثْنَتَيْنِ قَبْلَ الصُّبْحِ» قَالَ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ: «فُلَيْحُ بْنُ سُلَيْمَانَ لَيْسَ بِالْقَوِيِّ»


উম্মে হাবীবা رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা) সালাত আদায় করবে আল্লাহ‌ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। চার রাকআত জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে, দু’রাকআত ফরযের পরে, দু’রাকআত আসরের ফরয সালাতের পূর্বে, দু’রাকআত মাগরিবের ফরয সালাতের পরে এবং দু’রাকআত ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে।

  

(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১৮০২)



 ৪। মাগরিবের পরের সুন্নাতঃ


 ‘মাগরিবের ফরজের আগে সালাত আদায় কর’, তিনি এটি তিনবার বলেন এবং তৃতীয়বার বলেন, ‘তার জন্য যে ইচ্ছা করে।’ 


أَخْبَرَنَا أَبُو الْأَزْهَرِ أَحْمَدُ بْنُ الْأَزْهَرِ النَّيْسَابُورِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ، عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي إِسْحَقَ، عَنْ الْمُسَيَّبِ، عَنْ عَنْبَسَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ، عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَاثْنَتَيْنِ بَعْدَهَا، وَاثْنَتَيْنِ قَبْلَ الْعَصْرِ، وَاثْنَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ، وَاثْنَتَيْنِ قَبْلَ الصُّبْحِ» قَالَ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ: «فُلَيْحُ بْنُ سُلَيْمَانَ لَيْسَ بِالْقَوِيِّ»


উম্মে হাবীবা رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি বার রাকআত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা) সালাত আদায় করবে আল্লাহ‌ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। চার রাকআত জোহরের ফরয সালাতের পূর্বে, দু’রাকআত ফরযের পরে, দু’রাকআত আসরের ফরয সালাতের পূর্বে, দু’রাকআত মাগরিবের ফরয সালাতের পরে এবং দু’রাকআত ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে।

  

(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১৮০২)



 ৫। এশার সুন্নাতঃ


 ‘প্রত্যেক দুই সালাতের আযানের মধ্যে সালাত রয়েছে’, তিনি এটি তিনবার বলেন, তৃতীয়বার বলেন, বলেন, ‘তার জন্য যে ইচ্ছা করে।’ 

  

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: مَنْ ثَابَرَ عَلَى اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بَنَى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْفَجْرِ.


আয়িশা رضي الله عنها থেকে বর্ণিত, 


রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দিবা-রাত্র বার রাকাত (সুন্নাতে মুআক্কাদা) আদায়ে অভ্যস্ত হয়ে যায় আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে রাখেন। চার রাকাত জোহরের ফরয নামাযের পূর্বে এবং দু’রাকাত জোহরের ফরয নামাজের পরে, দু’রাকাত মাগরিবের ফরয নামাজের পরে, দু’রাকআত ইশার ফরয নামাজের পরে এবং দু’রাকআত ফজরের ফরয নামাজের পূর্বে। 


(সুনানে নাসায়ী ১৭৯৫)

 
Top