৬৮- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ سُنَّةِ الْفَجْرِ

١٧٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَلْقَمَةَ عَنِ ابْنِ الْأَقْمَرِ، عَنْ حُمْرَانَ ، قَالَ: مَا لُقِيَ ابْنُ عُمَرَ قَطُّ إِلَّا وَأَقْرَبُ النَّاسِ مَجْلِسًا حُمْرَانُ، فَقَالَ ذَاتَ يَوْمٍ: يَا حُمْرَانُ! أَلَا أَرَاكَ تُوَاظِبُنَا إِلَّا وَأَنْتَ تُرِيْدُ لِنَفْسِكَ خَيْرًا؟ فَقَالَ: أَجَلْ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ! قَالَ: أَمَّا اثْنَتَانِ، فَإِنِّيْ أَنْهَاكَ عَنْهُمَا، أَمَّا وَاحِدَةٌ، فَإِنِّيْ آمُرُكَ بِهَا، فَإِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ  يَأْمُرُ بِهَا، قَالَ: مَا هِيَ تِلْكَ الْـخِصَالُ الثَّلَاثَةُ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ؟ قَالَ: «لَا تَمُوْتَنَّ وَعَلَيْكَ دَيْنٌ إِلَّا دَيْنًا تَدَعُ لَهُ وَفَاءً، وَلَا تَسَّمَّعَنَّ مِنْ تِلَاوَةِ آيَةٍ، فَإِنَّهُ يَسَّمَّعُ بِكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَمَا سَمَّعْتَ بِهِ قِصَاصًا، وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا»، وَأَمَّا الَّذِيْ آمُرَكَ بِهِ كَمَا أَمَرَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ ، فَرَكْعَتَا الْفَجْرِ فَلَا تَدَعْهُمَا، فَإِنَّ فِيْهِمَا الرَّغَائِبَ.



বাব নং ৮০. ৬৮. ফজরের সুন্নতের গুরুত্ব


১৭৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আলকামা থেকে, তিনি ইবনে আকমার থেকে, তিনি হুমরান থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه)’র সাথে সাক্ষাত করতে গিয়ে দেখতে পায় যে, হুমরান (رضي الله عنه) মজলিসের মধ্যে হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه)’র নিকটবর্তী উপবিষ্ট। একদিন ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বললেন, হে হুমরান! আমি তোমাকে সর্বদা আমার সাহচর্যে থাকতে এইজন্য দেখতে পাচ্ছি যে, তুমি তোমার জীবনের কোন কল্যাণের আশা করছ? তখন উত্তরে বললেন, হে আবু আব্দুর রহমান! আপনি ঠিকই বলেছেন। ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বলেন, আমি তোমাকে দু’টি কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করছি এবং অপর একটি কাজ করার আদেশ করছি। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ  কে এই কাজ সম্পর্কে নির্দেশ দিতে শুনেছি। তখন হুমরান (رضي الله عنه) বললেন, হে আবু আব্দুর রহমান! ঐ কাজ তিনটি কি? তখন ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বলেন, তুমি ঋণ গ্রস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করনা। তবে এরূপ ঋণ গ্রহণ করতে পার যা তোমার মৃত্যুর পর পরিত্যক্ত সম্পত্তি দ্বারা পরিশোধ করা যায় এবং মানুষকে শুনানোর জন্য (লোক দেখানো) পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতও তিলাওয়াত করবে না। নতুবা কিয়ামতের দিন তোমার এই অপকর্ম প্রচার করে দেওয়া হবে। এটা তোমার অপকর্মের প্রতিদান স্বরূপ। কেননা আল্লাহ কারো উপর যুলুম করেন না।

এবার ঐ বিষয় সম্পর্কে তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছি, যে ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ   আমাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। তা হলো এই যে, ফজর নামাযে দু’রাকাত সুন্নত রয়েছে, তা কখনো পরিত্যাগ করবে না। কেননা এর মধ্যে অনেক ফযীলত ও বরকত রয়েছে।


ব্যাখ্যা: এ হাদিসটি মুআনআন রেওয়ায়েতের অন্তর্ভুক্ত। এতে লোক দেখানো কাজের নিন্দা করা হয়েছে। তাছাড়া উক্ত হাদিসে ফজরের সুন্নতের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।


١٧٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُميَرٍ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ: مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ  عَلَىٰ شَيْءٍ مِنَ النَّوَافِلِ أَشَدَّ مُعَاهَدَةً مِنْهُ عَلَىٰ رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ.


১৭৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) আতা থেকে, তিনি উবাইদ ইবনে উমাইর থেকে, তিনি হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরূপ কঠোর ভাবে অন্য কোন নফল (সুন্নাত) নামাযের গুরুত্বারোপ করতেন না যেরূপ ফজরের দু’রাকাতের সুন্নতের প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন। 

(বুখারী, ১/৩৯৩/১১১৬)


ব্যাখ্যা: কোথাও রাসূল (ﷺ)  বলেছেন ‘এই দু’রাকাত নামায আমার নিকট দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু রয়েছে এর চেয়ে অধিক পছন্দনীয়।” (মুসলিম)। 


কোথাও তিনি বলেছেন- কখনো এই সুন্নত পরিত্যাগ করনা, যদিও ঘোড়া তোমাকে পদদলিত করে।” 

(আবু দাউদ) 


❏তিবরানী গ্রন্থে বর্ণিত আছে, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেছেন- নবী করিম (ﷺ)  কখনো ফজরের সুন্নত পরিত্যাগ করেন নি। এমন কি ভ্রমণকালে, বাড়িতে এবং অসুখের সময়ও এই নামায ত্যাগ করেন নি।

এই গুরুত্ব বিবেচনায় হানাফী মাযহাবের অধিকাংশ ইমামগণের মতে সুন্নতে মুয়াক্কাদা হলো ৫টি। 

১. ফজর নামাযের দু’রাকাত সুন্নাত, 

২. যোহর নামাযের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত 

৩. যোহরের ফরযের পর দু’রাকাত সুন্নত, 

৪. মাগরিবের ফরযের পর দু’রাকাত সুন্নত এবং 

৫. ইশার নামাযের ফরযের পর দু’রাকাত সুন্নত।


١٧٦- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: رَمَقْتُ النَّبِيَّ  أَرْبَعِيْنَ يَوْمًا، أَوْ شَهْرًا، فَسَمِعْتُهُ يَقْرَأُ فِيْ رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ: بِقُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ، وَقُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ.


১৭৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা নাফে থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (ﷺ)  কে দেখেছি, তিনি চলি­শ দিন অথবা এক মাস পর্যন্ত ফজর নামাযের দু’রাকাতের সুন্নাতে قل هو الله احد ও قل يا ايها الكافرون তিলাওয়াত করেছেন। 

(মুসলিম, ২/১৬০/১৭২৩)


١٧٧- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ سِمَاكٍ، عَنْ جَابِرِ ابْنِ سَمُرَةَ ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ  إِذَا صَلَّى الصُّبْحَ، لَـمْ يَبْرَحْ عَنْ مَكَانِهِ حَتَّىٰ تَطْلُعَ الشَّمْسُ وَتَبْيَضَّ.


১৭৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা সিমাক থেকে, তিনি হযরত জাবির ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  ফজর নামায আদায় করার পর সূর্য উদিত হয়ে ফর্সা না হওয়া পর্যন্ত স্বীয় জায়গা থেকে প্রস্থান করতেন না। 

(শরহে সুন্নাহ্, ২/১০)


ব্যাখ্যা: অধিকাংশ সময় রাসূল (ﷺ)  নামায শেষে কিবলার দিক হয়ে বসতেন না; বরং ডানে-বামে কিংবা কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে মুসল­ীদের দিকে মুখ করে বসতেন। রাসূল (ﷺ)  থেকে এরূপ বর্ণিত আছে। কারো কারো মতে নামাযের পর কিবলার দিকে ফিরিয়ে থাকা মাকরূহ। রাসূল (ﷺ)  ফজরের নামাযের পর সূর্য উদিত হলে ইশরাকের নামায আদায় করতেন।
 
Top