আমিরুল মু’মিনীন সায়্যিদুনা ফারুকে আ‘যম (رضي الله عنه) এর আক্বিদা


খাবারে বারকাতের জন্য দো‘আ-


সায়্যিদুনা হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- দিনটি ছিল তাবূক যুদ্ধের। নবীজি (ﷺ) এর সাথে যুদ্ধ করতে যাওয়া সাহাবীদের প্রচন্ড খিদে পেয়েছে, তখন হযরত ওমর (رضي الله عنه) বলেন-


فَقَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُهُمْ بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ ثُمَّ ادْعُ اللَّهَ لَهُمْ عَلَيْهَا بِالْبَرَكَةِ فَقَالَ: نَعَمْ


-‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! সাহাবীগণের পক্ষ থেকে খাদ্য সম্ভারের আহ্বান করুন, আর বাকি অংশ আর তাতে প্রাচুর্যতার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করুন। নবীজি (ﷺ) ইরশাদ করেন হ্যাঁ, ঠিক আছে।’ 


মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) দস্তরখানা বিছিয়ে খাদ্যাংশগুলো এতে রাখার নির্দেশ দিলেন। তাঁর আদেশে সাহাবীগণের মধ্য হতে কেউ শস্যের সামান্য অংশ, কেউ মুষ্টি খেজুর আবার কেউ রুটির টুকরো দস্তরখানতে রাখতে শুরু করেন। এভাবে করতে করতে ঐ দস্তরখানতে কিছু পরিমাণ খাদ্য সঞ্চিত হলো। 


فَدَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَرَكَةِ


-‘অতঃপর নবীজি (ﷺ)-এ খাদ্যে বারকাতের জন্য দো‘আ করেন।’ এবং সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেন- তোমাদের খাদ্যপাত্রগুলো ভর্র্তি করে নাও। 


حَتَّى مَا تَرَكُوا فِي الْعَسْكَرِ وِعَاءً إِلَّا مَلَؤُوْهٌ قَالَ فَأَكَلُوْا حَتّٰى شَبِعُوا وَفَضَلَتْ فَضْلَةٌ


-‘সৈন্যদল তথা সাহাবীগণের মধ্যহতে খাদ্যপাত্র ভর্তি না করা কেউ ছিলেন না। অতঃপর নবীজি (ﷺ) (বললেন) অনুমতি দিলেন যে, এখন তোমরা ভক্ষণ করো। সবাই স্বাচ্ছন্দে খাবার গ্রহণ করার পরও খাদ্য অতিরিক্ত রয়ে গেল।’ 


খাবার শেষে হুযূর (ﷺ) ঘোষণা করলেন-


أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ


-“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই আর আমি আল্লাহর রাসূূল।” 


যে ব্যক্তি এই দুই সত্তাতে (আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূল  কে) সন্দেহাতীত ভাবে বিশ্বাস করে আল্লাহর নিকট আগমন করবে, তাকে বেহেশতে প্রবেশে বাঁধা দেয়া হবে না। ২০

{২০.খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬৬০ পৃ. হা/৫৯১২, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৫৬ পৃ. হা/২৭, আল্লামা ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৬/১১৮ পৃ. , ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৭/১৪০ পৃ. হা/১১০৮০, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, হা/১১৯৯, ইবনে আছির, জামেউল উসূল, হা/৮৯০৮}



‘আক্বীদা

সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) এর আক্বিদা ছিল খাদ্য কম থাকা সত্তে¡ও হুযূর আঁক্বা (ﷺ) এর দো‘আর বদৌলতে খাবারে প্রাচুর্যতা আসবে এবং অল্প খাবার অসংখ্য উপস্থিতির জন্যও যথেষ্ট হবে। 

অনুরূপভাবে খাবার সামনে রেখে দো‘আ করাটাও সাহাবায়ে কিরামের আক্বিদা। এজন্য আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর (رضي الله عنه) আবেদন করেছিলেন আর নবীজি (ﷺ) এ নিবেদন গ্রহণ করে দো‘আ করলেন। বাস্তবিকপক্ষে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের যতসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি হয়ে থাকে, তাতে কুর‘আন তিলাওয়াত করেই দো‘আ করা হয়। যা সম্পূর্ণ শরীয়াত সম্মত এবং বারকাতের অন্যতম ভিত্তি। 




পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা থেকে জান্নাত গমন পর্যন্ত সংবাদ দেয়া-


❏ হযরত ফারুকে আ‘যাম (رضي الله عنه) বলেন- 


قَامَ فِينَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا، فَأَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ الخَلْقِ، حَتَّى دَخَلَ أَهْلُ الجَنَّةِ مَنَازِلَهُمْ، وَأَهْلُ النَّارِ مَنَازِلَهُمْ، حَفِظَ ذَلِكَ مَنْ حَفِظَهُ، وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ


-‘‘একদা নবীজি (ﷺ) আমাদের মাঝে একজায়গায় দণ্ডায়মান হয়ে সৃষ্টির সূচনা সম্পর্র্কে আলোচনা শুরু করেন। তাঁর আলোচনা এতটুকু হলো যে, বেহেশতবাসীরা তাদের অবস্থানে প্রবেশ করল আর জাহান্নামীরা তাদের আপনস্থানে। এ বর্ণনা যারা পেরেছেন সংরক্ষণ করেছেন। আর যারা পারেননি তারা ভুলে গেলেন।’’ ২১

{২১.  ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৪/১০৬ পৃ. হা/৩১৯২, খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩/১৫৮৮ পৃ. হা/৫৬৯৯, তিরমিজীঃ আস-সুনানঃ ৪/৪১৯ হাদীসঃ ২১৯১, আবু দাউদঃ আস-সুনানঃ ৪/৪৪১পৃ. হাদীসঃ ৪২৪০, মুসলিমঃ আস-সহিহঃ কিতাবুল ফিতানঃ ২/৩৯০পৃ.}


‘আক্বিদা

মহান রাব্বুল ‘আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) কে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ অবধির যাবতীয় জ্ঞান দান করেছেন।  ২২

{২২ . উপরে উল্লেখিত সহীহ বুখারীর হযরত উমর (رضي الله عنه) এর হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন মাহমুদ আইনী (رحمة الله) {ওফাত.৮৫৫হি.} লিখেন-

فِيْهِ دَلاَلَةٌ عَلَى أَنَّهُ أَخْبَرَ فيِ الْمَجْلِسِ الْوَاحِدِ بِجَمِيْعِ أَحْوَالِ الْمَخْلُوقَاتِ مِنْ اِبْتِدَائِهَا إِلَى اِنْتِهَائِهَا وَفِي إِيْرَادِ ذَلِكَ كُلَّهُ فيِ مَجْلِسٍ وَاحِدٍ أَمْرٌ عَظِيْمٌ مِنْ خَوَارِقِ الْعَادَةِ وَكَيْفَ وَقَدْ أُعْطِيَ جَوَامِعُ الْكَلِمِ مَعَ ذَلِكَ.

-‘‘এ হাদিস দ্বারা বুঝা গেল, একই মজলিশ বা অবস্থানে রাসূল করীম (ﷺ) সৃষ্টিকুলের আদ্যোপান্ত যাবতীয় অবস্থার খবর দিয়েছিলেন। আর এক মসজলিশে সমস্ত কিছু বর্ণনা করা তাঁর একটি বড় মু’জিযা ছিল। তিনি পারবেন না কেন! তাকে جَوَامِعُ الْكَلِمِ (স্বল্প ভাষায় অধিক অর্থ) দ্বারা ভুষিত করা হয়েছে।’’ (আল্লামা আইনী : উমদাতুল ক্বারী: ১৫/১১০পৃ. দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় শুধু আইনী (رحمة الله) নয় যেমন আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন,

 أَيْ أَخْبَرَنَا عَنْ مُبْتَدَإِ الْخَلْقِ شَيْئًا بَعْدَ شَيْءٍ إِلَى أَنِ انْتَهَى الْإِخْبَارُ عَنْ حَالِ الِاسْتِقْرَارِ فِي الْجَنَّةِ وَالنَّارِ ----- إِيرَادِ ذَلِكَ كُلِّهِ فِي مَجْلِسٍ وَاحِدٍ مِنْ خَوَارِقِ الْعَادَةِ أَمْرٌ عَظِيمٌ             

-‘‘নবী করীম (ﷺ) সৃষ্টির শুরু থেকে একটি একটি করে সর্বশেষ জান্নাত ও জাহান্নামে অবস্থান করা পর্যন্ত বিস্তারিত বিষয় আমাদেরকে অবহিত করেছেন এবং এ বিষয়টি তাঁর একটি বড় মু’জিযা ছিল।’’ (ইবনে হাজার আসকালানী: ফতহুল বারী শরহে বুখারী: ৬/৩৬৭ পৃ.) উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন,

 أَيْ أَخْبَرَنَا عَنِ الْمَبْدَأِ شَيْئًا بَعْدَ شَيْءٍ إِلَى أَنِ انْتَهَى الْإِخْبَارُ عَنْ حَالِ الِاسْتِقْرَارِ فِي الْجَنَّةِ وَالنَّارِ، وَدَلَّ ذَلِكَ عَلَى أَنَّهُ أَخْبَرَ فِي الْمَجْلِسِ الْوَاحِدِ بِجَمِيعِ أَحْوَالِ الْمَخْلُوقَاتِ مِنَ الْمَبْدَأِ وَالْمَعَادِ وَالْمَعَاشِ، وَتَيْسِيرُ إِيرَادِ ذَلِكَ كُلِّهِ فِي مَجْلِسٍ وَاحِدٍ مِنْ خَوَارِقِ الْعَادَةِ أَمْرٌ عَظِيمٌ.

-‘‘এ হাদিস দ্বারা জানা যায় নবী করীম (ﷺ) একই অবস্থানে থেকে সমস্ত মাখলুকাতের সৃষ্টির শুরু, জীবন যাপন এবং মৃত্যুর পর পূণর্জীবিত হওয়া বা পরকাল ইত্যাদি বিষয়ে সংবাদ প্রদান করেছিলেন এবং এ বিষয়টি নবী করীম (ﷺ)-এর একটি বড় মু’জিযার অন্তর্ভূক্ত।’’(মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মিশকাত: ১১/৪ পৃ.)}


আর তিনি ঐসব জ্ঞানের কথা সাহাবায়ে কিরামের সামনে উপস্থাপনও করেছেন। যেমনটি- 


❏ দারুল উলূম দেওবন্দ-এর প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী কাশেম নানুতুবী স্বীয় গ্রন্থ ‘তাহযীরুন-নাস’ এ এ ধরণের একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, নবীজি (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- 


عَلِمْتُ عِلْمَ الأوَّلِيْنَ وَالْآخِرِيْنَ


-‘‘আমি সর্ব প্রাথমিকের এবং সর্বশেষের জ্ঞানে জ্ঞাত।’’ ২৩

{২৩.ইমাম ইবনে রযব হাম্বলী, তাফসিরে ইবনে রযব হাম্বলী, ২/৫৫৫ পৃ. }

 

خدا مطلع ساخت هر جمله غيب

على كل شىء خبر آمدى


“খোদা তা‘য়ালা দানিছে সবটুকু তাঁরে

সৃজনের লুকোচুরি বলে দিতে পারে।”




হযরত ওয়াইস ক্বারনি (رضي الله عنه) কে সনাক্তকরণ-

হযরত ওমাইর ইবন জাবির (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ সৈয়্যিদুনা হযরত উমর ইব্ন খাত্তাব (رضي الله عنه)’র নিকট যদি ইয়েমেনবাসীদের কোনো প্রতিনিধিদল আসত তখন তিনি জিজ্ঞাসা করতেন- 

তুমি কি ওয়াইস ইবনে আমির? এমনটি করতে করতে পরিশেষে একদিন হযরত ওয়াইস ক্বারনি (رضي الله عنه) তার নিকট উপনীত হলেন আর হযরত উমর (رضي الله عنه) জানতে চাইলেন- তুমি কি ওয়াইস ইবনু আমির? তিনি বলেন- হ্যাঁ। হযরত উমর (رضي الله عنه) জানতে চাইলেন- তুমি কি ‘মুরাদ’ গোত্রের? তিনি উত্তরে বললেন- হ্যাঁ!। হযরত উমার (رضي الله عنه) আরো জানতে চাইলেন- তোমার কি শ্বেত রোগ ছিল, যার এক দিরহাম পরিমাণ চিহ্ন এখনো রয়ে গেল? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আছে। তখন হযরত উমার (رضي الله عنه) বলেন- 


سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: يَأْتِي عَلَيْكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أَمْدَادِ أَهْلِ الْيَمَنِ مِنْ مُرَادٍ، ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ، كَانَ بِهِ بَرَصٌ فَبَرَأَ مِنْهُ، إِلَّا مَوْضِعَ دِرْهَمٍ لَهُ وَالِدَةٌ هُوَ بِهَا بَرٌّ، لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهُ، فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ فَافْعَلْ  فَاسْتَغْفَرَ لَهُ


-‘আমি প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি যে, (হে উমার! তোমার নিকট) ইয়ামানের ক্বারণ প্রদেশ হতে মুরাদ গোত্রের একজন লোক সেখানকার কিছু সংখ্যক অধিবাসীর সহায়তা নিয়ে তোমার নিকট আগমন করবে, যার নাম হবে ‘ওয়াইস ইবনু আমির’। তার শ্বেত রোগ থাকবে। পুরো শরীর এক দিরহাম সমপরিমাণ জায়গা ব্যতিত সুস্থ হয়ে গিয়েছে। তার মা থাকবে, যাঁর সাথে সে অনেক কল্যাণকর কাজ সাধন করেছে (সেবা করেছে)। তার মায়ের সাথে করা কল্যাণময় কাজগুলো এমন যে, যার দোহাই দিয়ে সে আল্লাহর নিকট কিছু চাইলে আল্লাহ অবশ্য তা পূরণ করেন। হে উমর! যদি তোমার সুযোগ হয় তাহলে তার নিকট দো‘আ চাইবে। হযরত উমার (رضي الله عنه) তাই করলেন। আর হযরত ওয়াইস ক্বারনি (رضي الله عنه) তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন।’’  ২৪

{২৪. মুসলিম শরীফ, ৪/১৯৬৯ পৃ. হা/২৫৪২, পরিচ্ছেদ: بَابُ مِنْ فَضَائِلِ أُوَيْسٍ الْقَرَنِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/৪৫৬ পৃ. হা/৫৭১৯, মুসনাদে বায্যার, ১/৪৭৯ পৃ. হা/৩৪২, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, হা/৬৮২৬, আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১৪/৩ পৃ. হা/৩৭৮২৩}


‘আক্বীদা

নাবীয়ে পাক (ﷺ) রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রোগ এবং তার নিরাময় সম্পর্কে ভবিষ্যবাণী করেছেন। কে কোন প্রান্ত থেকে এবং কোন অবস্থায় আগমন করবে- সে সম্পর্কেও অবগত। তার কার্যাবলিরও ভবিষ্যবাণী করেছেন। আর আউলিয়ায়ে কিরামের মধ্য হতে এমন কতিপয় ওলী আছেন, যাঁরা মহান আল্লাহর দরবারে যেমনটি করার নিবেদন করেন মহান আল্লাহ ঐরূপ করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের আবেদন-নিবেদন গ্রহণ করে থাকেন। আর তাঁদের (ওলীদের) নিকট গমন করে তাঁর মাধ্যমে দো‘আ করাটাও রাসূলে খোদা (ﷺ) এর শিক্ষা। তবে যে ব্যক্তি এ দৃষ্টিভঙ্গি এবং আক্বিদার অস্বীকার করবে মূলত সে নবীজি (ﷺ) এর শিক্ষার অস্বীকার করল।  ২৫

{২৫. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}




বহু দূরের বস্তু অবলোকন এবং সাহায্য করা-

মিশকাত শরীফের ২য় খণ্ডের بَابُ الْكَرَامَاتْ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছেঃ হযরত উমর (رضي الله عنه) হযরত সারিয়া (رضي الله عنه) কে এক সেনা বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে ‘নেহাওয়ানন্দ’ নামক স্থানে পাঠিয়েছিলেন। এরপর একদিন হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পাঠের সময় চিৎকার করে উঠলেন। 


❏ হাদিসের শব্দগুলো হলঃ


فَبَيْنَمَا عُمَرُ يَخْطُبُ، فَجَعَلَ يَصِيحُ: يَا سَارِيَ! الْجَبَلَ


-‘‘হযরত উমর (رضي الله عنه) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পড়ার সময় চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘ওহে সারিয়া! পাহাড়ের দিকে পিঠ দাও।’’ বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত সেনাবাহিনী থেকে বার্তা বাহক এসে জানানঃ আমাদিগকে শত্রুরা প্রায় পরাস্ত করে ফেলেছিল। এমন সময় কোন এক আহ্বানকারীর ডাক শুনতে পেলাম। উক্ত অদৃশ্য আহ্বানকারী বলেছিলেন, ‘সারিয়া! পাহাড়ের শরণাপন্ন হও।’ তখন আমরা পাহাড়কে পিঠের পেছনে রেখে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলাম। এরপর আল্লাহ আমাদের সহায় হলেন, ওদেরকে পর্যুদস্ত করে দিলেন।’’  ২৬

{২৬. খতিব তিবরিযী, মিশকাতঃ ৪/৪৪৬ পৃ. হা/৫৯৫৪, এ গ্রন্থের তাহকীকে আহলে হাদিস আলবানী এটিকে ‘হাসান’ বলে অভিহিত করেছেন। ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুল নবুয়ত, ৬/৩৭০ পৃ., শায়খ ইউসূফ নাবহানীঃ হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীনঃ ৬১২-৬১৩ পৃ., ইমাম আবু নাঈম ইস্পহানীঃ দালায়েলুল নবুয়তঃ পৃ. ৫১৮-৫১৯, মুত্তাকী হিন্দীঃ কানযুল উম্মালঃ ৫৭১ পৃ. হাদিসঃ ৩৫৭৮৮, ইমাম বায়হাকী, কিতাবুল ই’তিকাদঃ ২০৩ পৃ.}


আক্বিদা

সাহাবায়ে কেরামদের আক্বিদা ছিল আল্লাহর নৈকট্যবান বান্দারা অন্তরের দূরদৃষ্টি দ্বারা অনেক দূরের বস্তুকে চোখের সামনে দেখতে পেতেন এবং তারা কারামত দ্বারা বিপদে সাহায্যও করতে পারেন। যেমনটি যুদ্ধ ক্ষেত্রে জুম‘আর খুতবা চলাকালি সময়ে অসংখ্য মাইল দূর থেকে হযরত সারিয়া (رضي الله عنه) কে হযরত উমর (رضي الله عنه) করেছেন। 


❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেন-


فِيهِ أَنْوَاعٌ مِنَ الْكَرَامَةِ لِعُمَرَ: كَشْفُ الْمَعْرَكَةِ وَإِيصَالُ صَوْتِهِ وَسَمَاعُ كُلٍّ مِنْهُمْ لِصَيْحَتِهِ وَفَتْحُهُمْ وَنَصْرُهُمْ بِبَرَكَتِهِ


-‘‘এটি হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর কারামতের একটি, মহান রব তাঁর কাছে যুদ্ধের রণক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তাঁর আওয়াজকে তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধ ক্ষেত্রের সকলেই খুব ভালভাবেই তাঁর আওয়াজ শুনেছেন, মুসলমানগণ যুদ্ধে বিজয় লাভ করেছেন এবং আর যুদ্ধে সাহায্য প্রাপ্ত হয়েছেন হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর বারকতে।’’ ২৭ 

{২৭. খতিব মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত শরহে মিশকাতঃ ৯/৩৮৪২পৃ. হা/৫৯৫৪}

 

বুঝা গেল ওলীদের কারামত এবং কাশ্ফ প্রমাণিত। ২৮

{ ২৮. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}




সবচেয়ে বড় মুফাস্সির-


❏ ইমাম আহমদ (رحمة الله) সংকলন করেন-


عَنِ ابْنِ هُبَيْرَةَ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ كَانَ يَقُولُ: مَنْ كَانَ سَائِلًا عَنْ شَيْءٍ مِنَ الْقُرْآنِ، فَلْيَسْأَلْ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ


-‘‘হযরত ইবনু হুবায়রা (رحمة الله) বলেন, নিশ্চয়ই আমিরুল মু‘মিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) বলতেন, তোমাদের কোরআনের বিষয়ে কারও কোন প্রশ্ন থাকলে তোমরা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه)-এর কাছ থেকে জিজ্ঞাস করে নাও।’’  ২৯

{২৯. ইমাম আহমদ, ফাযায়েলুস সাহাবা, ২/৯৬৭পৃ. হাদিস নং.১৮৯৩, ইমাম ইবনে আসেম, আহাদ ওয়াল মাসানী, ১/২৮৬পৃ. হাদিস/৩৬০} 


আক্বিদা

তাই আমরা বুঝি সাহাবায়ে কিরামদের মাঝে এটা সুপ্রসিদ্ধ ছিল যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) হলেন সবচেয়ে বড় মুফাস্সির। ৩০

{ ৩০. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
 
Top