7 - بَابُ مَا جَاءَ فِيْ عَدَمِ خُلُوْدِ الْـمُؤْمِنِيْنَ فِي النَّارِ

10 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ حَبِيْبَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا الدَّرْدَاءِ صَاحِبَ رَسُوْلِ اللهِ ، قَالَ: بَيْنَا أَنَا رَدِيْفُ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ: «يَا أَبَا الدَّرْدَاءِ! مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ وَجَبَتْ لَهُ الْـجَنَّةُ». قُلْتُ: وَإِنْ زَنَىٰ، وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: فَسَكَتَ عَنِّيْ سَاعَةً، ثُمَّ سَارَ سَاعَةً، فَقَالَ: «مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ وَجَبَتْ لَهُ الْـجِنَّةُ».

قُلْتُ: وَإِنْ زَنَىٰ، وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: فَكَسَتَ عَنِّيْ سَاعَةً، ثُمَّ سَارَ سَاعَةً، ثُمَّ قَالَ: «مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ وَجَبَتْ لَهُ الْـجَنَّةُ».

قَالَ: قُلْتُ: وَإِنْ زَنَىٰ، وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: «وَإِنْ زَنَىٰ، وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ رَغِمَ أَنْفُ أَبِي الدَّرْدَاءِ»، قَالَ: فَكَأَنِّيْ أَنْظُرُ إِلَىٰ أُصْبُعِ أَبِي الدَّرْدَاءِ السَّبَّابَةِ يُوْمِئُ إِلَىٰ أَرْنَبَتِهِ.


বাব নং ৭ : মু’মিন স্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে না


১০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবদুল্লাহ ইবনে আবি হাবীবাহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলের সাহাবী হযরত আবুদ দারদা (رضي الله عنه)কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (ﷺ) ’র সাথে এক সাওয়ারীতে আরোহণ ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে আবুদ দারদা! যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই আর আমি আল্লাহর রাসূল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। আমি বললাম, সে যদি চুরি ও যেনা করে তবুও কি জান্নাত আবশ্যক হবে? তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন এবং কিছুপথ অতিক্রম করে বললেন, যে কেউ যদি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আর আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। তিনি বলেন, আমি পুনরায় বললাম চুরি ও যেনা করলেও? তিনি তখনও চুপ রইলেন এবং কিছুপথ অতিক্রম করলেন। অতঃপর বললেন, যে কেউ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই আর আমি আল্লাহর রাসূল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। আমি আবার বললাম, চুরি ও যেনা করলেও? এবার তিনি বললেন, হ্যাঁ, যদিও সে চুরি করে, যেনা করে যদিও আবুদ দারদার নাসিকা ধুলি মলিন হোক। রাবী বলেন আমি যেন দেখতেছি যে, আবু দারদা (رضي الله عنه) স্বীয় শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে স্বীয় নাকের অগ্রভাগের দিকে ইঙ্গিত করতেছেন। (নাসাঈ কুবরা ৬/২৭৭/১০৯৬৫)

ব্যাখ্যা: হাদিসটি আবুদ দারদা (رضي الله عنه) থেকে বুখারী ও মুসলিমেও বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদিস দ্বারাও খারেজী ও মুতাযিলা সম্প্রদায়ের মত বাতিল সাব্যস্ত হয় এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা সুদৃঢ় ও মজবুত হয়। উক্ত হাদিসের সারকথা হল কোন ব্যক্তি ঈমান গ্রহণ করে অন্যন্যা গুনাহ থেকে যদি বিরত থাকে তবে তিনি প্রথম থেকেই জান্নাতী হবে। পক্ষান্তরে ঈমান গ্রহণ করে যদি অন্যান্য করীরা কিংবা সগীরা গুনাহ করে, তবে ঐসব গুনাহের শাস্তিভোগ করার পর সে জান্নাতে যাবে। অর্থাৎ কোন মু’মিন চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। 


11- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـحَارِثِ، عَنْ أَبِيْ مُسْلِمٍ الْـخَوْلَانِيِّ، قَالَ: لَـمَّا نَزَلَ مُعَاذٌ حِمْصَ، أَتَاهُ رَجُلٌ شَابٌّ، فَقَالَ: مَا تَرَىٰ فِيْ رَجُلٍ وَصَلَ الرَّحِمَ، وَبَرَّ، وَصَدَقَ الْـحَدِيْثَ، وَأَدَّى الْأَمَانَةَ، وَعَفَّ بَطْنَهُ وَفَرْجَهُ، وَعَمِلَ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ خَيْرٍ، غَيْرَ أَنَّهُ شَكَّ فِي اللهِ وَرَسُوْلِهِ، قَالَ: إِنَّهَا تُحْبِطُ مَا كَانَ مَعَهَا مِنَ الْأَعْمَالِ.  قَالَ: فَمَا تَرَىٰ فِيْ رَجُلٍ رَكِبَ الْمَعَاصِيَ، وَسَفَكَ الدِّمَاءَ، وَاسْتَحَلَّ الْفُرُوْجَ وَالْأَمْوَالَ، غَيْرَ أَنَّهُ شَهِدَ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ مُخْلِصًا، قَالَ مُعَاذٌ: أَرْجُوْ، وَأَخَافُ عَلَيْهِ، قَالَ الْفَتَي: وَاللهِ، إِنْ كَانَتْ هِيَ الَّتِيْ أَحْبَطَتْ مَا مَعَهَا مِنْ عَمَلٍ، مَا تَضُرُّ هَذِهِ مَا عَمِلَ مَعَهَا، ثُمَّ انْصَرَفَ، فَقَالَ مُعَاذٌ: مَا أَزْعُمُ أَنَّ رَجُلًا أَفْقَهُ بِالسُّنَةِ مِنْ هَذَا.


১১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হারেস থেকে, তিনি আবু মুসলিম খাওলানী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত মুয়ায (رضي الله عنه) যখন হিম্স শরহে আগমণ করেন তখন জনৈক ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বলল হে মুয়ায! এমন ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার মতামত কি? যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে মানুষের সাথে সদাচরণ করে, সত্যি কথার আমানত আদায় করে, স্বীয় উদর ও লজ্জাস্থানকে সংযত রেখেছে এবং সাধ্যানুযায়ী সৎকাজ করে কিন্তু আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (ﷺ)সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে। হযরত মুয়ায (رضي الله عنه) বলেন, তার এই সন্দেহ তার যাবতীয় ভাল আমলগুলোকে নষ্ট করে ফেলবে।

লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করল এমন ব্যক্তির ব্যাপারে আপনার মত কি? যে গুনাহ করে, খুন-খারাপী করে, যেনা করে এবং অপরের সম্পদকে হালাল মনে করে কিন্তু আল্লাহর একত্বাবাদে ও রাসূলের রেসালতে আন্তরিকতার সহিত সাক্ষ্য দেয়। উত্তরে মুয়ায (رضي الله عنه) বলেন, তার ব্যাপারে আমি আশা রাখি যে, সে মুক্তি পাবে, আবার ভয়ও করি যে (সে শাস্তি পাবে)।

এরপর লোকটি বলল, যদি তার সন্দেহ তার যাবতীয় পূণ্য কাজ সমূহকে নষ্ট করে ফেলে তবে তার খারাপ আমল তথা কবীরা গুনাহ তার আন্তরিক একত্ববাদের সাক্ষ্যকে নষ্ট করতে পারবে না। অর্থাৎ গুনাহ ঈমানের কোন ক্ষতি করতে পারে না। একথা বলে লোকটি চলে গেল আর মুয়ায (رضي الله عنه) বলেন, আমার ধারণায় ওর চেয়ে বেশী সুন্নাত জানা ব্যক্তি কেউ নেই।

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদিস দ্বারা দু’টি আকীদা সাব্যস্ত হয়। এক. আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ)  এর উপর পূর্ণ ঈমান আনা ব্যতীত আমলের কোন সওয়াব বা প্রতিদান পাওয়া যাবে না। দ্ইু. শিরক ব্যতীত অন্যান্য গুনাহ মূল ঈমানের কোন ক্ষতি করতে পারে না। 


12 – حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْ حَنِيْفَةَ، عَنْ أَبِيْ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيِّ، عَنْ رِبْعِيِّ بْنِ خِرَاشٍ، عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: يَدْرُسُ الْإِسْلَامُ كَمَا يَدْرُسُ وَشْيُ الثَّوْبِ، وَلَا يَبْقَىٰ إِلَّا شَيْخٌ كَبِيْرٌ، أَوْ عَجُوْزٌ فَانِيَةٌ، يَقُوْلُوْنَ: قَدْ كَانَ قَوْمٌ يَقُوْلُوْنَ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، وَهُمْ مَا يَقُوْلُوْنَ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، قَالَ: فَقَالَ صِلَةُ بْنُ زَيْدٍ: فَمَا يُغْنِيْ عَنْهُمْ يَا عَبْدَ اللهِ! لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، وَهُمْ لَا يَصُوْمُوْنَ، وَلَا يُصَلُّوْنَ، وَلَا يَحُجُّوْنَ، وَلَا يَتَصَدَّقُوْنَ، قَالَ: يَنْجُوْنَ بِهَا مِنَ النَّارِ.


১২. অনুবাদ: হযরত হাম্মাদ আবু হানিফা থেকে, তিনি আবু মালেক আশজাঈ থেকে, তিনি রিবঈ ইবনে খিরাশ থেকে, তিনি হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ইসলাম এমনভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে যেমনভাবে কাপড় থেকে নকশা বিলুপ্ত হয়ে যায়। (শেষ যামানায়) একজন অতিশয় বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধা ছাড়া কেউ থাকবে না। তারা বলবে যে, পূর্ববর্তী যামানায় এক সম্প্রদায় ছিল যারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলত অথচ তারা নিজেরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে না।

তখন উপস্থিতগণের মধ্যে সিলাহ ইবনে যায়েদ বলল, হে আবদুল্লাহ! তাদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলাতে কোন লাভ হবে? অথচ তারা নামায পড়ত না, রোযা রাখত না, হজ্ব আদায় করত না এবং যাকাতও দিত না। তখন হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) উত্তর দিলেন, তারা এর (তাওহীদের স্বীকারোক্তি) দ্বারা দোযখের আযাব থেকে রক্ষা পাবে। (ইবনে মাজাহ, ২/১৩৪৪/৮০৮৯)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদিসে কিয়ামতের পূর্বের কথা বলা হয়েছে। যখন মানুষ শুধু ঈমান আনবে কিন্তু কোন আমল করবে না। আর অন্তরে ঈমান থাকার কারণে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। যেমন বিশুদ্ধ হাদিসে আছে যার অন্তরে সরিষা পরিমাণও ঈমান থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

১৩ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ وَالْـمِسْعَرُ: عَنْ يَزِيْدَ، قَالَ: كُنْتُ أَرَىٰ رَأْيَ الْـخَوَارِجِ، فَسَأَلْتُ بَعْضَ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ، فَأَخْبَرَنِيْ: أَنَّ النَّبِيَّ  قَالَ بِخِلَافِ مَا كُنْتُ أَقُوْلُ، فَأَنْقَذَنِي اللهُ تَعَالَىٰ بِهِ.

১৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ও মিসআর ইয়াযিদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি প্রথমে খারেজীদের আকীদা পোষণ করতাম । অর্থাৎ আমি বিশ্বাস করতাম যে, কবীরাহ গুনাহকারী কাফের ও চিরস্থায়ী জাহান্নামী। অতঃপর আমি কোন কোন সাহাবীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা আমাকে অবহিত করলেন যে, রাসূল (ﷺ) এর বাণী আমি যা বলতেছি তার বিপরীত। এরপর থেকে আল্লাহ তায়ালা আমাকে ভ্রান্তবিশ্বাস থেকে মুক্তি দিয়েছেন। (অর্থাৎ আমি সেই ভ্রান্তআকীদা পরিত্যাগ করি)।


১৪ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: قَالَ: كُنَّا مَعَ عَلْقَمَةَ، وَعَطَاءِ بْنِ أَبِيْ رَبَاحٍ، فَسَأَلَهُ عَلْقَمَةُ، فَقَالَ: يَا أَبَا مُحَمَّدٍ! إِنَّ بِبِلَادِنَا قَوْمًا لَا يُثْبِتُوْنَ لِأَنْفُسِهِمْ الْإِيْمَانَ، وَيَكْرَهُوْنَ أَنْ يَقُوْلُوْا: إِنَّا مُؤْمِنُوْنَ، بَلْ يَقُوْلُوْنَ: إِنَّا مُؤْمِنُوْنَ إِنْ شَاءَ اللهُ تَعَالَىٰ، فَقَالَ: وَمَا لَـهُمْ لَا يَقُوْلُوْنَ؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: إِذَا أَثْبَتْنَا لِأَنْفُسِنَا الْإِيْمَانَ، جَعَلْنَا لِأَنْفُسِنَا الْـجَنَّةَ، قَالَ: سُبْحَانَ اللهِ، هَذَا مِنْ خِدَعِ الشَّيْطَانِ وَحَبَائِلِهِ، وَحِيَلِهِ أَلْـجَأَهُمْ إِلَىٰ أَنْ دَفَعُوْا أَعْظَمَ مِنَّةِ اللهِ تَعَالَىٰ عَلَيْهِمْ، وَهُوَ الْإِسْلَامُ، وَخَالَفُوْا سُنَّةَ رَسُوْلِ اللهِ ، رَأَيْتُ أَصْحَابَ رَسُوْلِ اللهِ ، وَرَضِيَ عَنْهُمْ، يُثْبِتُوْنَ الْإِيْمَانَ لِأَنْفُسِهِمْ، وَيَذْكُرُوْنَ ذَلِكَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ: إِنَّهُمْ يَقُوْلُوْنَ: إِنَّا مُؤْمِنُوْنَ، وَلَا يَقُوْلُوْا: إِنَّا مِنْ أَهْلِ الْـجَنَّةِ، فَإِنَّ اللهَ تَعَالَىٰ لَوْ عَذَّبَ أَهْلَ سَمَاوَاتِهِ وَأَهْلَ أَرْضِهِ لَعَذَّبَهُمْ، وَهُوَ غَيْرُ ظَالِـمٍ لَـهُمْ، فَقَالَ لَهُ عَلْقَمَةُ: يَا أَبَا مُحَمَّدٍ! إِنَّ اللهَ تَعَالَىٰ لَوْ عَذَّبَ الْـمَلَائِكَةَ الَّذِيْنَ لَـمْ يَعْصُوْهُ طَرْفَةَ عَيْنٍ عَذَّبَهُمْ وَهُوَ غَيْرُ ظَالِـمٍ لَـهُمْ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: هَذَا عِنْدَنَا عَظِيْمٌ، فَكَيْفَ نَعْرِفُ هَذَا؟ فَقَالَ لَهُ: يَا بْنَ أَخِيْ! مِنْ هَا هُنَا ضَلَّ أَهْلُ الْقَدْرِ، فَإِيَّاكَ أَنْ تَقُوْلَ بِقَوْلِـهِمْ، فَإِنَّهُمْ أَعْدَاءُ اللهِ تَعَالَى الرَّادُّوْنَ عَلَى اللهِ تَعَالَىٰ، أَلَيْسَ يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَىٰ لِنَبِيِّهِ : [قُلْ فَلِلّٰهِ الْـحُجَّةُ الْبَالِغَةُ فَلَوْ شَاءَ لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِيْنَ] {الأنعام: ১৪৯}، فَقَالَ لَهُ عَلْقَمَةُ: اشْرَحْ يَا أبَا مُحَمَّدٍ! شَرْحًا يُذِهْبُ عَنْ قُلُوْبِنَا هَذِهِ الشُّبْهَةَ، فَقَالَ: أَلَيْسَ اللهُ  دَلَّ الْـمَلَائِكَةَ عَلَىٰ تِلْكَ الطَّاعَةِ، وَأَلْـهَمَهُمْ إِيَّاهَا، وَعَزَّمَهُمْ عَلَيْهَا، وَجَبَرَهُمْ عَلَىٰ ذَلِكَ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَقَالَ: وَهَذِهِ نِعَمٌ أَنْعَمَ اللهُ تَعَالَىٰ بِهَا عَلَيْهِمْ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَلَوْ طَالَبَهُمْ بِشُكْرِ هَذِهِ النِّعَمِ مَا قَدَرُوْا عَلَىٰ ذَلِكَ وَقَصَّرُوْا، وَكَانَ لَهُ أَنْ يُعَذِّبَهُمْ بِتَقْصِيْرِ الشُّكْرِ، وَهُوَ غَيْرُ ظَالِـمٍ لَـهُمْ.


১৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) বলেন, আমরা আলকামা এবং আতা ইবনে আবি রাবাহ (رحمة الله)’র সাথে বসা ছিলাম। হযরত আলকামা হযরত আতাকে জিজ্ঞাসা করলেন হে আবু মুহাম্মদ! আমাদের শহরে (কূফা ও ইরাকে) এমন লোক আছে যারা নিজেদের জন্য নিশ্চিত ঈমান সাব্যস্ত করে না এবং “আমরা নিশ্চিত ও নিঃসন্দেহে মু’মিন” এরূপ বলাও খারাপ মনে করে। বরং তারা বলে, আমরা মু’মিন ইনশাল্লাহ। আতা বললেন, তাদের কি হল, তারা ঐরূপ না বলে এরূপ কেন বলে? উত্তরে আলকামা বলেন, তারা বলে যখন আমরা আমাদের জন্য নিশ্চিত ঈমান সাব্যস্ত করবো তখন নিজেরা জান্নাতী বলে দাবী সাব্যস্ত হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মু’মিন নর-নারীর উপর জান্নাতের অঙ্গীকার করেছেন। আর ওয়াদা খেলাফী তাঁর জন্য দোষণীয়। তিনি সমস্ত দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত।

তখন হযরত আতা বললেন, সুবহানাল্লাহ! এটাতো শয়তানের ধোঁকা ও প্রতারণা। শয়তান তাদেরকে বাধ্য করেছে যে, আল্লাহর সবচেয়ে বড় এহসান তথা ইসলামকে অমান্য করতে এবং সুন্নতে রাসূল (ﷺ)  এর বিরোধীতা করতে। আমি সাহাবায়ে কেরামকে দেখেছি যে, তাঁরা নিজেদের জন্য নিশ্চিত ঈমান সাব্যস্ত করতেন এবং এ ব্যাপারে রাসূল (ﷺ)  এর হাদিস বর্ণনা করতেন। আতা আরো বলেন, তারা তো বলতেন আমরা মু’মিন, আমরা জান্নাতী এরূপ বলতেন না। কেননা আল্লাহ তা’আলা যদি আসমান ও জমিনবাসী সকলকে আযাব দেন তবুও তাঁকে জালিম বলা যাবে না।

তখন আলকামা হযরত আতাকে বললেন, হে আবু মুহাম্মদ! আল্লাহ যদি ফেরেস্তাদেরকে আযাব দেন যারা মুহুর্তের জন্যও আল্লাহর নাফরমানী করেননি তাঁকে জালিম বলা যাবে না? উত্তরে আতা বললেন, না। তখন আলকামা বললেন- তবে এটাতো অত্যন্ত গভীর ও সূ² কথা, আমরা এটাকে সহজে কিভাবে বুঝব? তখন আতা বললেন হে ভাতিজা! মু’তাযালাহ তো ভ্রান্ত দল। তাদের ন্যায় কথা বলা থেকে বিরত থাক। কেননা মু’তাযালাহ সম্প্রদায় হল আল্লাহর শত্রু এবং আল্লাহর কালামকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী। আল্লাহ কি তার নবীকে বলেননি? হে নবী! আপনি বলুন, আল্লাহর কাছে রয়েছে সুস্পষ্ট দলীল। যদি তিনি চান তবে সকলকে হেদায়েত করতে পারেন।

তখন আলকামা বললেন, হে আবু মুহাম্মদ! এটাকে আরো বিস্তারিতভাবে বলুন যাতে আমাদের অন্তর এরূপ সন্দেহ তথা ভ্রান্ত আকীদা থেকে ম্ক্তু হয়ে যায়। তখন হযরত আতা (رحمة الله) বলেন, আল্লাহ তায়ালা কি ফেরেস্তাগণকে তাঁর আনুগত্যের প্রতি হেদায়েত করেন নি, তিনি কি তাদেরকে আনুগত্যের পন্থা শিখিয়ে দেন নি এবং তাদের অন্তরে স্বীয় মহত্ত্ব স্থাপন করে তাতে অটুট রাখেন নি? আলকামা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, রেখেছেন। তখন আতা বললেন, এগুলো এমন নিয়ামত যা আল্লাহ তায়ালা ফেরেস্তাগণকে দান করেছেন। যদি আল্লাহ তায়ালা তাদের থেকে ঐসব নিয়ামতের হিসাব নেন তবে তারা হিসাব দিতে অক্ষম হবেন। সুতরাং এর হিসাব দিতে অক্ষম হওয়ার কারণে যদি আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে শাস্তি দেন তবে আল্লাহকে জালিম সাব্যস্ত করা যাবে না। 

ব্যাখ্যা: প্রথমত, হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে, ঈমানের বেলায় সন্দেহভাজন শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ ‘আমি মু‘মিন ইনশাল্লাহ’ এরূপ বলা যাবে না। কেননা রাসূল (ﷺ)  থেকে এর পক্ষে কোন হাদিস বর্ণিত হয়নি। তাছাড়া কুরআনে করিমে মু‘মিনের প্রশংসায় বলা হয়েছে اولئك هم المؤمنون حقًّا 

“তারাই নিশ্চিত মু‘মিন।” কেউ কালিমা পাঠ করলেই তাকে মু‘মিন বলা যাবে এবং মুমিনের যাবতীয় বিধান তার উপর প্রয়োগ হবে।

দ্বিতীয়ত, ইনশাল্লাহ শব্দটি সাধারণত সন্দেহভাজন স্থানে ব্যবহার হয়। আর ঈমানের বেলায় সন্দেহ করা কুফুরী। আর যদি ইনশাল্লাহ শব্দটি আদবের উদ্দেশ্যে কিংবা অহংকার মুক্ত ভদ্রতা ও নম্রতার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে তবুও জায়েয নেই। কেননা এতে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। সুতরাং একজন নিষ্ঠাবান মু’মিনের ঈমানে সন্দেহ পোষণ করা উচিত নয়।

 
Top