সূরা ইখলাস

সূরা ইখলাস


৪ আয়াতবিশিষ্ট এই সুরাখানিও অবতীর্ণ হয়েছে মহিমময় পুণ্যতীর্থ ‘মক্কায়’।
হজরত উবাই ইবনে কা’ব থেকে আবুল আলিয়া বর্ণনা করেছেন, পৌত্তলিকেরা একবার রসুল স. এর কাছে আল্লাহ্‌র বংশপরিচয় জানতে চায়। তখন অবতীর্ণ হয় এই সুরা। তিরমিজি, হাকেম, ইবনে মাজা। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ্‌ থেকে তিবরানী এবং ইবনে জারীরও এরকম বর্ণনা করেছেন।
ইবনে আবী হাতেমের বর্ণনায় এসেছে, হজরত ইবনে আব্বাস বলেছেন, একবার কা’ব ইবনে আশরাফ, হুয়াই ইবনে আখতাব এবং আরো কয়েকজন ইহুদী রসুল স. এর মহান সংসর্গে উপস্থিত হয়ে বললো, যে আল্লাহ্‌ আপনাকে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কিছু গুণ বর্ণনা করুন। তখন অবতীর্ণ হয় এই সুরা। সাঈদ ইবনে যোবায়েরের বরাত দিয়ে ইবনে জারীর, কাতাদা এবং ইবনে মুনজিরও
তাফসীরে মাযহারী/৬৩৫
এরকম বলেছেন। জুহাক, কাতাদা ও মুকাতিল সূত্রে বাগবী উল্লেখ করেছেন, একবার কিছুসংখ্যক ইহুদী পণ্ডিত রসুল স. এর সুমহান সাহচর্যে উপস্থিত হয়ে বললো, ‘আল্লাহ্‌র গুণাবলী সম্পর্কে কিছু বলুন। হতে পারে, আমরা ইমান গ্রহণ করবো। তওরাত কিতাবে তো আল্লাহ্‌ তাঁর অনেক গুণের উল্লেখ করেছেন। বলুন, তিনি কিসের তৈরী? তিনি কী আহার করেন, না করেন না? কেউ তার অংশীদার কিনা। যদি থাকে, তবে সে কে? তাদের এমতো অপবচনের প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয় সুরা ইখলাস।
আবান সূত্রে আবু শায়েখ বর্ণনা করেছেন, হজরত আনাস বলেছেন, খায়বরের কতিপয় ইহুদী একবার রসুল স. সকাশে উপস্থিত হয়ে বললো, আবুল কাসেম! আল্লাহ্‌পাক তাঁর অন্তরালবর্তী জ্যোতি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন ফেরেশতামণ্ডলীকে, আসমানকে সৃষ্টি করেছেন গলিত কর্দম দ্বারা, আগুনের স্ফুলিঙ্গ দ্বারা ইবলিসকে। তেমনি ধোঁয়া থেকে আকাশ এবং পানির বুদ্বুদ থেকে পৃথিবীকে। এখন বলুন, আপনার পালনকর্তা কিসের তৈরী? রসুল স. নীরব হয়ে রইলেন। তখন সুরা ইখলাস নিয়ে আবির্ভূত হলেন হজরত জিবরাইল। এ সকল বর্ণনা দৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, সুরা ইখলাস অবতীর্ণ হয়েছে মদীনায়।
ইবনে জারীরের বর্ণনায় এসেছে, আবুল আলিয়া বলেছেন, বিভিন্ন গোত্রের গোত্রপ্রধানেরা একবার রসুল স. এর পবিত্র সংসর্গে উপস্থিত হয়ে বললো, আপনি আমাদের কাছে আপনার প্রভুপালকের বংশপরিচয় প্রকাশ করুন। তাদের এরকম অপবিত্র উক্তির প্রেক্ষিতে হজরত জিবরাইল আনেন এই সুরাখানি। এই বর্ণনাটিও একথা প্রমাণ করে যে, সুরাখানির অবতরণস্থল মদীনা। ইতোপূর্বে হজরত উবাই ইবনে কা’ব কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে যে অংশীবাদীদের কথা বলা হয়েছে, সম্ভবত তারাই বিভিন্ন গোত্রের গোত্রপ্রধান। আর এরকমও হতে পারে যে, অংশীবাদী ও ইহুদী উভয় গোত্রের গোত্রপ্রধানেরা তখন একসঙ্গে উপস্থিত হয়ে রসুল স.কে এরকম অপপ্রশ্ন করেছিলো।
আবু জুবিয়ান ও আবু সালেহ সূত্রে বাগবী বর্ণনা করেছেন, হজরত ইবনে আব্বাস বলেছেন, একবার আমের ইবনে তোফায়েল ও আব্বাদ ইবনে রবীয়া রসুল স. এর সুমহান সান্নিধ্যে উপস্থিত হলো। আমের বললো, মোহাম্মদ! তুমি আমাদেরকে কার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে? তিনি স. জবাব দিলেন, মহান আল্লাহ্‌র প্রতি। আমের পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, আল্লাহ্‌ কীভাবে সৃষ্ট হলেন, সে সম্পর্কে কিছু বলো। তিনি সোনার, না রূপার? না কাষ্ঠনির্মিত? তাদের এরকম মন্দ উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয় সুরা ইখলাস। আব্বাদ ভস্মীভূত হয়েছিলো বজ্রাঘাতে এবং আমের ধ্বস হয়েছিলো মহামারীতে।
সূরা ইখলাসঃ আয়াত ১, ২, ৩, ৪

তাফসীরে মাযহারী/৬৩৬
* বল, ‘তিনিই আল্লাহ্‌, এক-অদ্বিতীয়,
* ‘আল্লাহ্‌ কাহারও মুখাপেক্ষী নহেন, সকলেই তাঁহার মুখাপেক্ষী;
* ‘তিনি কাহাকেও জন্ম দেন নাই এবং তাঁহাকেও জন্ম দেওয়া হয় নাই,
* ‘এবং তাঁহার সমতুল্য কেহই নাই।’
প্রথমে বলা হয়েছে ‘ক্বুল হুয়াল্লহু আহাদ’ (বলো, তিনিই আল্লাহ্‌, এক-অদ্বিতীয়)। এখানকার ‘হুয়া’ (তিনি) সর্বনামটি অভিজাত শ্রেণীর। এখানে ‘তিনি’ উদ্দেশ্য এবং বিধেয় এর পরের বাক্যটি। অথবা এখানকার ‘হুয়া’ একটি সাধারণ সর্বনাম; যা সম্পর্কযুক্ত হবে সেই প্রভুপালনকর্তার সঙ্গে, যার সম্পর্কে করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ। এভাবে বক্তব্যটি দাঁড়ায় হে আমার প্রিয়তম বাণীবাহক! আপনি তাদেরকে বলুন, হে অংশীবাদীর দল! তোমরা আমার নিকট যাঁর পরিচয় জানতে চেয়েছো, জেনে রাখো তিনি এক-একক-অদ্বিতীয়’। এখানকার ‘আহাদুন’ ‘আল্লাহ্‌র’ অনুবর্তী। অথবা বলা যায়, ‘আহাদুন’ এখানে বিধেয় হয়েছে ‘হুয়া’ সর্বনাম থেকে। আর এখানকার ‘আহাদুন’এর মূলরূপ ছিলো ‘ওয়াহাদা’। ‘ওয়াহাদা’ এবং ‘ওয়াহিদ’ সমার্থক। হজরত ইবনে মাসউদের ক্বেরাতে ‘হুয়াল্লহু আহাদ’ স্থলে রয়েছে ‘লাওয়াহিদ’। হজরত ওমরের ক্বেরাতেও তা-ই।
যদি ‘হুয়া’ সর্বনামকে অভিজাত সর্বনাম ধরে নেওয়া হয়, ‘আল্লাহ্‌’কে ধরে নেওয়া হয় উদ্দেশ্য এবং ‘আহাদ’কে বিধেয়, তাহলে বাক্যের বিশুদ্ধ মর্মার্থ প্রকাশ্য অর্থে হবে না। কারণ একটি অবিভাজ্য প্রকৃত সত্তার নাম আল্লাহ্‌। আর যা অবিভাজ্য, তাতে একাধিকতা অসম্ভব। যেমন জায়েদ একজনের নাম, যা একজনকেই বুঝায় এবং নাকচ করে দেয় একাধিকতাকে। আর তা কোনোকিছুর সমষ্টিও নয়। কেননা এখানে বিদ্যমান সামষ্টিকতার একক। এরপর পুনরায় তাকে এক বলা সঙ্গত নয়। তাই ‘আল্লাহ্‌’ পদটির দ্বারা এমন এক সাধারণ সত্তাকে মেনে নিতে হয়, যিনি একক উপাস্য হওয়ার প্রকৃত যোগ্য। কারো উপাস্য হওয়ার যোগ্য হতে পারেন কেবল তিনিই, যিনি তাকে অনস্তিত্ব থেকে আনেন অস্তিত্বে এবং সেই সঙ্গে পূর্ণ করে দেন তার স্থিতিলাভের প্রয়োজনসমূহকে। আর যিনি স্বয়ম্ভু, তিনিই অপরকে অস্তিত্ব দান করতে সক্ষম। সেই অবিভাজ্য সত্তার গুণাবলীও পূর্ণ ও পরিণত, নশ্বরতা ও অসম্পূর্ণতা থেকে চিরপবিত্র। সৃষ্টি তাঁর সত্তা ও গুণবত্তা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। তিনিও সৃষ্টির সত্তা ও গুণবত্তা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। সৃষ্টির সত্তা ও গুণবত্তার সঙ্গে তাঁর সত্তা ও গুণবত্তার কোনো সংযোগই নেই। যা স্বয়ম্ভু ও স্বাধিষ্ঠ নয়, তা অপরকে অধিষ্ঠিত করতে পারবে কীভাবে? বরং তার নিজের বিদ্যমানতাই তো সেই স্বয়ম্ভু সত্তা ও গুণবত্তার প্রতিবিম্ব, শাখা-প্রশাখা কদাচ নয়। কেননা শাখা-প্রশাখার সংযোগ থাকে মূলের সঙ্গে। কিন্তু সৃষ্টির সঙ্গে সত্তার এমতো সম্পর্ক কল্পনা করা যায় না। সুতরাং সৃষ্টি কেবলই প্রতিবিম্ব, যে প্রতিবিম্বে আল্লাহ্‌ই দয়া করে দান করেছেন অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব। সুতরাং আল্লাহ্‌ই কেবল আনুরূপ্যবিহীন, এক-একক-অবিভাজ্য-অসমকক্ষ ও অংশীবিহীন এরকম ব্যাখ্যাই
তাফসীরে মাযহারী/৬৩৭
অধিক ফলপ্রসূ সঙ্গতিপূর্ণ ও সমীচীন। কিন্তু এরকম ব্যাখ্যা আবার অংশীবাদী ও ইহুদীদের প্রশ্নের যথাযথ জবাবও নয়। কেননা তারা প্রশ্ন করেছিলো ভিন্নভাবে। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র এককত্বের স্বরূপ জানতে চেয়ে তারা কিছু বলেনি। কারণ রসুল স. তাদেরকে প্রথম থেকেই একটি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কলেমার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। সে কলেমা হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লহ’ (আল্লাহ্‌ ভিন্ন অন্য কোনো উপাস্যই নেই)। তাদের প্রশ্ন ছিলো অত্যন্ত অযথার্থ ও স্থুল। তারা বলেছিলো, যিনি তোমাকে প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপাদানগত বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করুন। বলো তিনি কিসের তৈরী সোনা, রূপা, লোহার, না কাঠের।
যদি এখানকার ‘হুয়া’ (তিনি) সর্বনামকে ওই অবিভাজ্য সত্তার স্থলাভিষিক্তও ধরা হয়, যেরূপ উল্লেখ করা হয়েছিলো প্রশ্নকারীদের প্রশ্নে, তবুও এ বাক্যটি তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর হবে না। অর্থাৎ কথাটি তাদের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর নয়। আল্লাহ্‌র এককত্ব সম্পর্কে তারা তো প্রশ্নই করেনি। বরং নবী প্রেরণকারী ওই সত্তার যৌগিক তত্ত্ব সম্পর্কে তারা প্রশ্ন তুলেছিলো। একারণেই উভয় অবস্থায় আল্লাহ্‌ হবেন যাবতীয় সংযোজন, বিয়োজন, পরিযোজন, পরিবর্ধন, এক কথায় সকল যৌগিকত্বের যাবতীয় অনিবার্যতা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত, পবিত্র। অর্থাৎ তিনি চির অমুখাপেক্ষী আকার-নিরাকার, প্রকার-প্রকৃতি থেকে। তাঁর সাত্তিক তত্ত্ব চির অসমকক্ষ। গুণবত্তার ক্ষেত্রেও কেউ অথবা কোনোকিছু তাঁর তুল্য নয়। অংশীদার তো নয়ই। সুতরাং কেউ অথবা কোনোকিছুই তাঁর মতো নয়। তিনি যে অনুরূপ্যবিহীন। একারণেই আল্লাহ্‌র পরিচয় ধন্য সুফী-আউলিয়াগণ বলেন, আল্লাহ্‌র সত্তা-গুণবত্তা ও কার্যকলাপে কারো অথবা কোনোকিছুর কোনোই অংশ নেই। তাঁর অবোধ্য সত্তা তাঁরই গুণবত্তার সমাহার, কিন্তু তাঁর ভিত্তি নয়। বরং তিনি তাঁর গুণরাজিরও ভিত্তি। আর তাঁর গুণরাজির মূল হচ্ছে তাঁরই চিরজীবিতা (হায়াত) গুণ (সিফাত)। ওই হায়াত সিফাতের ভিত্তিতেই দাঁড়িয়ে আছে তাঁর অন্যান্য গুণ জ্ঞান (এলেম) শক্তিমত্তা (কুদরত) অভিপ্রায় (এরাদা) বাণী (কালাম) দর্শন (বাসার) শ্রবণ (সামা) ইত্যাদি। আর হায়াত হচ্ছে তাঁরই সত্তার শাখা বা ভিত্তি। অর্থাৎ তাঁর সত্তা (জাত) যেনো মৌলিক অসমাধ্য একটি বিষয়, যার উৎস হচ্ছে তাঁরই অস্তিত্ব। সেকারণেই সুফি-সাধকগণ বলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লহ্‌ অর্থ লা মাওজুদা ইল্লাল্লহ্‌ (তাঁর বিদ্যমানতা ছাড়া আর কারো বিদ্যমানতাই নেই)। কেননা প্রকৃত বিদ্যমানতা রয়েছে কেবল আল্লাহ্‌র। সমগ্র বিশ্বজগত যেনো ওই বিদ্যমানতারই ছায়া-প্রচ্ছায়া। যেমন এক আয়াতে বলা হয়েছে ‘আল্লাহ্‌ই চিরস্থায়ী, মৌলিক মহাসত্য। যারা তাঁকে ছাড়া অন্যকে ডাকে তারা মিথ্যা’। আর এক আয়াতে বলা হয়েছে ‘তিনি ব্যতীত অন্য সকল কিছুই ধ্বংসশীল’। অর্থাৎ সকলকিছুই নশ্বর, অনশ্বর কেবল আল্লাহ্‌। সুতরাং প্রকৃত কথা এই যে, আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব ও গুণবত্তার সঙ্গে সৃষ্টির অস্তিত্ত্ব ও গুণবত্তার সাদৃশ্য রয়েছে কেবল নামত। প্রকৃতপ্রস্তাবে স্রষ্টা ও সৃষ্টি মিলিত বা পরস্পর সম্পৃক্ত নয়। যারা এমতো ব্যাখ্যা বুঝতে অক্ষম, তাদের উচিত, তারা যেনো
তাফসীরে মাযহারী/৬৩৮
সুফি-আউলিয়াগণের সাহচর্য-সম্পৃক্ত হয়। তাহলে হয়তো তাদের সম্মুখে উন্মুক্ত হতে পারে তত্ত্বজ্ঞানের দুয়ার। আল্লাহ্‌তায়ালার আনুরূপ্যহীন এককত্বই কি তাঁর চিরবিদ্যমানতা ও তাঁর প্রতিপালনযোগ্যতার জন্য যথেষ্ট নয়? সকল কিছুই যে তাঁর জ্ঞানগোচর। অথচ অজ্ঞ সত্যপ্রত্যাখ্যানকারীরা এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে। এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে না যে, তাঁর আনুরূপ্যহীন জ্ঞান ও ক্ষমতা সকল কিছুকেই আনুরূপ্যবিহীন ভাবে সতত পরিবেষ্টন করে রয়েছে। আর এই আয়াতটি তাঁর পরিপূর্ণ সত্তা ও গুণবত্তার প্রতি ইঙ্গিতবহ।
‘ক্বুল’ অর্থ বলো। অর্থাৎ হে আমার প্রিয়তম রসুল! আপনি তাদেরকে বলুন। ‘ক্বুল হুয়াল্লহু আহাদ’ অর্থ তিনিই আল্লাহ্‌, এক-অদ্বিতীয়। এই বাক্যটিতে প্রকাশ পেয়েছে নবী-রসুলগণ কর্তৃক প্রচারিত বাণীর সারমর্ম। আর এই বাণীটি এমন এক জ্ঞানগর্ভ ও মহান বাণী যে, বিশাল বিশাল গ্রনে'র বক্তব্যাবলী যেনো এর কাছে কিছুই নয়। আর এই মহান বাণীর জটিল জটিলতর ব্যাখ্যার আবশ্যকও কিন্তু নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌র অবোধ্য সত্তা ও গুণবত্তার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম আলোচনা অবশেষে অন্তর্ভূত হয় যুক্তিবিদ্যাতেই। যারা প্রজ্ঞার ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত, তাদের কাছে বরং এরকম জটিল আলোচনা ধ্বংসাত্মক। যেমন এক আয়াতে বলা হয়েছে ‘আপনাকে তারা রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, আপনি তাদেরকে বলুন, রূহ হচ্ছে আমার প্রভুপালকের পক্ষে থেকে একটি আদেশ’। রূহও আল্লাহ্‌র সৃষ্টি। সেই রূহের রহস্যোদ্ধারই যখন নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে, তখন রূহের স্রষ্টার সত্তাগুণবত্তার রহস্যোদ্ধারকর্মও নিশ্চয় সাধারণভাবে নিষিদ্ধ। বরং বুঝতে হবে, এ প্রসঙ্গে যে ব্যক্তি তার অক্ষমতার পরিচয় পায়, সে-ই আসলে জ্ঞানী। আর এ জ্ঞান লাভ হতে পারে কেবল তাদের, যারা পায় তাঁর ব্যবধানরহিত আনুরূপ্যহীন সামীপ্য ও সান্নিধ্য। হজরত আবু হোরায়রা বর্ণনা করেছেন, একবার আমরা নিয়তি সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এমন সময় রসুল স. সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের কথা শুনলেন। দেখলাম, তিনি রোষতপ্ত। মুখমণ্ডল রক্তিমাভ। মনে হচ্ছিলো, তাঁর পবিত্র মুখাবয়বে ঘষে দেওয়া হয়েছে আনারের লাল দানা। বললেন, এ প্রসঙ্গে আলোচনা করার জন্য কি তোমরা আদেশপ্রাপ্ত? এজন্যই কি তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে আমাকে? এ সম্পর্কে তর্কাতর্কি করতে গিয়েই তো তোমাদের পূর্ববর্তীরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সাবধান! এ প্রসঙ্গে আর আলোচনায় প্রবৃত্ত হয়ো না। তিরমিজি, ইবনে মাজা, শোয়ায়েব থেকে আমর ইবনে শোয়ায়েব।
পরের আয়াতে (২) বলা হয়েছে ‘আল্লহুস্‌ সমাদ’ (আল্লাহ্‌ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী)। হজরত ইবনে আব্বাস, হাসান বসরী এবং সাঈদ ইবনে যোবায়ের বলেছেন, ‘সমাদ’ অর্থ নির্ভীক, বেপরোয়া। হজরত বুরাইদা এবং ইবনে জারীরও এরকম বলেছেন। আমার ধারণা, সম্ভবত বর্ণনাটি সুপরিণত সূত্রজাত। আর কথাটি রূপকার্থক। কেননা তিনি জ্ঞানাতীত, বোধ্য গুণাতীত, ধারণা-কল্পনার অতীত।
তাফসীরে মাযহারী/৬৩৯
শা’বী বলেছেন, তিনিই ‘সমাদ’ যিনি পানাহারের প্রয়োজন থেকে মুক্ত। কেউ কেউ বলেছেন, শব্দটির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে পরবর্তী বাক্যে। এরকম বলেছেন হজরত উবাই ইবনে কা’ব থেকে আবুল আলিয়া। আবু ওয়াইল শাকিক ইবনে সালমা বলেছেন ‘সমাদ’ অর্থ সর্বদিক দিয়ে যার কর্তৃত্ব শিখরস্পর্শী। আবু তালহা সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, হজরত ইবনে আব্বাস শব্দটির এরূপই মর্মার্থ করেছেন। সাঈদ ইবনে যোবায়ের বলেছেন, যিনি যাবতীয় গুণে ও কর্মে পরিপূর্ণ, তিনিই ‘সমাদ’। কেউ কেউ বলেছেন, প্রতিটি কর্মের যিনি মূল উদ্দেশ্য, প্রতিটি প্রয়োজন যার উপরে নির্ভরশীল, তিনিই ‘সমাদ’। আবার কেউ কেউ বলেছেন, ‘সমাদ’ ওই অধিপতি, যাঁর কাছে রয়েছে সকলের চাওয়া ও পাওয়া। তাই মানুষ প্রয়োজনে তাঁর কাছেই হাত পাতে এবং সাহায্য চায়। সুতরাং তিনিই সকলের একমাত্র উদ্দেশ্য। যেমন আরবী প্রবাদে বলা হয় ‘সমাদতুহু’ (আমি তাকেই উদ্দেশ্য করেছি)।
কাতাদা বলেছেন, সৃষ্টি লয় হওয়ার পর যিনি অবশিষ্ট থাকবেন, তিনিই সমাদ। হজরত আলী বলেছেন, তিনিই সমাদ, যার উপরে আর কেউ নেই। এরকম বর্ণনা করেছেন ইকরামা। রবী ইবনে আনাস বলেছেন, তিনিই সমাদ, বিপদ যাকে স্পর্শ করতে পারে না। মুকাতিল বলেছেন, সমাদ অর্থ নির্দোষ।
আমার মতে সমাদ এর প্রকৃত অর্থ লক্ষ্যস্থল। ‘কামুস’ অভিধানে লেখা রয়েছে, সমাদ অর্থ ইচ্ছাময়। যবরযুক্ত ‘মীম’ দ্বারা গঠিত ‘সমাদ’ অর্থ অধিপতি। কেননা তাঁর দাসগণের প্রতিটি কর্মের লক্ষ্যস্থল তিনিই। আর এখানকার ‘আস্‌সমাদ’ পদের ‘আলিফ লাম’ তাই প্রমাণ করে যে, তিনি অমুখাপেক্ষিতার চরম শিখরে আরুঢ়। সাধারণ মানুষের বুদ্ধি-বিবেক দুর্দশায়িত। প্রকৃত বিশ্বাস থেকে তাদের অবস্থান অনেক দূরে। পার্থিবতাকেই তারা বানিয়ে নিয়েছে তাদের লক্ষ্যস্থল। কিন্তু সৃষ্ট কোনোকিছু লক্ষ্যস্থল হওয়ার অযোগ্য। লক্ষ্যযোগ্য কেবল তিনিই।
উপর্যুক্ত ব্যাখ্যাসমূহের কোনোটাই শব্দটির প্রকৃত অর্থ নয়। বরং ওগুলো আনুসাঙ্গিক। কেননা সামগ্রিকরূপে লক্ষ্যস্থল কেবল তিনিই, যিনি কারোই মুখাপেক্ষী নন, অথচ সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। সন্দেহাতীতরূপে সকল উৎকর্ষ ও পূর্ণত্ব কেবল তাঁর মধ্যেই বর্তমান। সর্বপ্রকার আধিপত্য তাঁরই কর্তৃত্বাগত। আর তিনি চিরমুক্ত ও চিরপবিত্র সকল ধরনের দোষক্রটি, ক্ষতি-বিনষ্টি ও পানাহার থেকে। তিনি অনাদি। তাঁর স্বামী-ভার্যা-পিতা-সন্তান-বংশধর হওয়া অচিন্তনীয়। কেউই তাঁর সমান্তরাল, সমকক্ষ বা অংশীদার নয়। তিনি আনুরূপ্যবিহীন এক একক-আবিভাজ্য এমন এক সত্তা, যা জ্ঞান-ধারণা-কল্পনার অতীত।
উল্লেখ্য, ‘আল্লহু আহাদ’ বলার পর ‘আল্লহুস্‌ সমাদ’ বলার প্রয়োজন ছিলো না। কিন্তু তবু এরকম বলা হয়েছে একারণে যে, তাঁর সম্পর্কে তথাকথিত বিভিন্ন মতের লোক বিভিন্ন কথা বলে, যার কোনোটাই তাঁর আনুরূপ্যবিহীন একক সত্তার উপযুক্ত নয়। যেমন কেউ বলে, তিনি এক নন। কেউ বলে, তিনি কারো জনক,
তাফসীরে মাযহারী/৬৪০
অথবা জাত, অথবা কারো বংশসম্ভূত। এ সকল অপউক্তির মূলোৎপাটনার্থেই প্রথমে বক্তব্যটি প্রকাশ করা হয়েছে সংক্ষিপ্তভাবে। পরে করা হয়েছে সে সংক্ষিপ্তির বিস্তারণ। আর সে কারণেই ‘আল্লহুস্‌ সমাদ’ এর পরের বাক্যগুলো উপস্থাপনা করা হয়েছে যোজক অব্যয় ব্যতিরেকেই। ‘আল্লহু আহাদ’ বলার পর ‘আল্লহুস্‌ সমাদ’ বলার আর একটি উদ্দেশ্য একথা জানিয়ে দেওয়া যে, যে সত্তা সকলকিছু থেকে চিরঅমুখাপেক্ষী নন, তিনি ইবাদতেরও যোগ্য নন। আর যিনি অমুখাপেক্ষী, তিনিই মানুষের একমাত্র লক্ষ্যস্থল ও একমাত্র উপাস্য। তাঁর এমতো অমুখাপেক্ষিতা দর্শনেই তো মানুষকে বিনয়াবনতচিত্তে মেনে নিতে হয় তার একান্ত আনুগত্য। সুফী-সাধকগণ তাই লা ইলাহা ইল্লাল্লহ্‌ জিকির করার সময় বিলোপ করতে থাকেন তিনি ব্যতীত অন্য সকলকিছুকে। এটাই তাঁদের মূল সাধনা। বিষয়টি অতীব জটিল। এমতো জাটিল্যের অবসান ঘটাতে পারেন কেবল আল্লাহ্‌।
এরপরের আয়াতে (৩) বলা হয়েছে ‘লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ’ (তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি)।
মক্কার পৌত্তলিকেরা বলতো, ফেরেশতারা আল্লাহ্‌র কন্যা। ইহুদীরা বলতো, আল্লাহ্‌ নবী উযায়েরের জনক। আর খৃষ্টানেরা বলতো, আল্লাহ্‌ হচ্ছেন নবী ঈসার পিতা। এ সকল অপবিত্র উক্তির মূলোৎপাটনার্থেই এখানে বলা হয়েছে ‘তিনি কাউকে জন্ম দেননি’। এমতো কর্ম তাঁর জন্য অসম্ভব। কেননা তিনি কারো সমগোত্রীয় নন, নন সমকক্ষ, সমজাতীয় বা সমান্তরাল। পিতা-পুত্র-স্বামী-ভার্যা-বংশধর তো হয় সমজাতীয়রা। আর তিনি কোনো বিষয়েই অপারগ নন যে, তাঁকে পুত্রের সাহায্য গ্রহণ করতে হবে। আর ক্ষয়-বিলয় হওয়াও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় যে, প্রতিনিধি হিসেবে তাঁকে স্থলাভিষিক্ত করতে হবে পুত্রকে।
‘তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি’ অর্থ তাঁর কোনো জনক হওয়াও অসম্ভব। কেননা এ ক্ষেত্রেও সমগোত্রীয়তা ও অমুখাপেক্ষিতা হচ্ছে অনপনেয় বাধা। তাছাড়া জাত সকল কিছুই নশ্বর। কিন্তু তিনি তো অনশ্বর। আর নশ্বরতা তো উপাস্য হওয়ারও অন্তরায়। এখন কথা হচ্ছে, এখানে অতীতকালবোধক ক্রিয়া ব্যবহার করা হলো কেনো? এর জবাবে বলা যেতে পারে যে, সত্যপ্রত্যাখ্যানকারীদের অপউক্তিগুলো ছিলো অতীতকালবোধক। তাই অতীতকালবোধক ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে এখানে প্রশ্নোত্তরের সঙ্গতি রক্ষার্থে। অথবা বলা যায়, অতীতকালজ্ঞাপক ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়েছে পরের বাক্যে। তাই এভাবে এখানে রক্ষা করা হয়েছে ক্রিয়ার কালগত সাযুজ্য।
শেষোক্ত বাক্যে বলা হয়েছে ‘ওয়া লাম ইয়াকুল্‌ লাহু কুফুওয়ান আহাদ’ (এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই)। এখানে ‘লাম ইয়াকুন’ এর বিধেয় ‘কুফুওয়ান’। এর উদ্দেশ্য ‘আহাদুন’। আর ‘লাহু’ পদটি এখানে সম্পর্কযুক্ত হয়েছে ‘কুফুওয়ান’ এর সঙ্গে। এভাবে বক্তব্যটি দাঁড়িয়েছে আল্লাহ্‌পাকের পবিত্রতাও
তাফসীরে মাযহারী/৬৪১
অতুলনীয়, নিরূপম। একারণেই এখানে সম্পর্ককে উল্লেখ করা হয়েছে সম্পর্কযুক্ততার অগ্রে। শেষোক্ত তিনটি বাক্যই এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে যোজক অব্যয় সহকারে। এরকম করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, পৃথক পৃথক প্রত্যেক ধরনের অপমন্তব্যের মূলোৎপাটন করা।
হজরত আবু হোরায়রা কর্তৃক বর্ণিত একটি সুপরিণত সূত্রসম্ভূত হাদিসে কুদসীতে বলা হয়েছে, আল্লাহ্‌ বলেন, আদমসন্তানেরা আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে। অথচ এরকম করা তাদের জন্য বৈধ নয়। তারা আমাকে গালি দেয়। এটাও অবৈধ। তার মিথ্যারোপের নমুনা হচ্ছে, তারা বলে, আল্লাহ্‌ প্রথমবার যা সৃষ্টি করেছেন, পুনর্বার তা করতে সক্ষম হবেন না। অথচ দ্বিতীয় সৃষ্টি প্রথম সৃষ্টি অপেক্ষা সহজতর। আর তাদের গালি হচ্ছে, তারা বলে, আল্লাহ্‌র সন্তান-সন্ততি আছে। অথচ আমি চির-অসমকক্ষ, এক-একক-অদ্বিতীয়, অমুখাপেক্ষী। আমি না জাতক, না জাত। আমি তো আনুরূপ্যবিহীন।
পরিচ্ছেদঃ হজরত আবু দারদা বর্ণনা করেছেন, রসুল স. একবার বললেন, তোমরা কি প্রতি রাতে এক তৃতীয়াংশ কোরআন পাঠ করতে পারো না? আমরা বললাম, তা কী করে সম্ভব? তিনি স. বললেন, সুরা ইখলাস পুণ্যের দিক দিয়ে এক তৃতীয়াংশ কোরআনের সমতুল। হজরত আবু সাঈদ খুদরী থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন বোখারী। এরকম বর্ণনা এসেছে হজরত ইবনে আব্বাস এবং হজরত আনাস থেকেও।
মাতা মহোদয়া আয়েশা বর্ণনা করেছেন, একবার রসুল স. এক লোককে কিছুসংখ্যক সৈন্যসহ এক অভিযানে প্রেরণ করলেন। তিনি তাঁর সৈন্যদেরকে নিয়ে নামাজ পাঠকালে প্রায়শ সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করতেন। দলটি ফিরে এলে রসুল স. সমীপে সৈন্যরা বললো, তিনি এভাবে নামাজ পড়ালেন কেনো? রসুল স. বললেন, তাকেই জিজ্ঞেস করে দ্যাখো না, সে কী বলে। সৈন্যরা তাদের দলপতিকে যখন একথা বললো, তখন দলপতি বললো, এতে রয়েছে আল্লাহ্‌র সত্তা ও গুণবত্তার অতুলনীয় বিবরণ। তাই আমি এ সুরাটিকে ভালোবাসি এবং অধিকাংশ সময় এই সুরা দিয়ে নামাজ পাঠ করি। রসুল স. এর কানে যখন তারা এ জবাব পৌঁছালো, তখন তিনি বললেন, তাকে বলে দিয়ো, আল্লাহ্‌ তাকে ভালোবাসেন। বোখারী, মুসলিম।
হজরত আনাস বর্ণনা করেছেন, একবার এক লোক রসুল স. এর সুমহান সন্নিধানে উপস্থিত হয়ে বললো, সুরাটি আমার খুব ভালো লাগে। তিনি স. বললেন, এই ভাল লাগাই তোমাকে নিয়ে যাবে জান্নাতে। তিরমিজি। বোখারীও এর সমার্থক হাদিস বর্ণনা করেছেন।
হজরত আবু হোরায়রা বর্ণনা করেছেন, রসুল স. একবার এক ব্যক্তিকে সুরা ইখলাস পাঠ করতে শুনে বললেন, অপরিহার্য হয়ে গেলো। আমরা সবিনয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসুল! কী অপরিহার্য হয়ে গেলো? তিনি স. বললেন, জান্নাত। মালেক, তিরমিজি, নাসাঈ। হজরত আনাস থেকে তিরমিজি কর্তৃক
তাফসীরে মাযহারী/৬৪২
বর্ণিত এবং উত্তম ও বিরল শ্রেণীর আখ্যায়িত এক বর্ণনায় এসেছে, রসুল স. বলেছেন, যে ব্যক্তি শয়নকালে ডান কাতে শুয়ে একশত বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে, মহাবিচারের দিবসে আল্লাহ্‌ তাকে বলবেন, হে আমার বান্দা! ডান দিক দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো। তিরমিজি ও দারেমী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, রসুল স. বলেছেন, যে ব্যক্তি দৈনিক একশতবার সুরা ইখলাস পাঠ করবে, আল্লাহ্‌পাক ক্ষমা করে দিবেন তার পঞ্চাশ বছরের পাপ। তবে তার ঋণের বোঝার ব্যাপারটি স্বতন্ত্র। অপর এক বর্ণনাতেও পঞ্চাশ বছরের পাপ মাফ করার কথা বলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে ঋণের উল্লেখ নেই। হজরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব থেকে অপরিণত সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রসুল স. একবার বললেন, যে ব্যক্তি এগারো বার ‘ক্বুল হুয়াল্লহু আহাদ’ পাঠ করবে, তার জন্য বেহেশতে নির্মাণ করা হবে একটি গৃহ। আর কুড়িবার পাঠ করলে সেখানে নির্মিত হবে দু’টি প্রাসাদ। একথা শুনে হজরত ওমর নিবেদন করলেন, হে আল্লাহ্‌র প্রিয়তম প্রত্যাদেশবাহক! তা হলে তো আমাদের জন্য বেহেশতে প্রাসাদ নির্মিত হবে অনেক। তিনি স. বললেন, আল্লাহ্‌র দান এর চেয়েও অধিক সুপ্রশস্ত। আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞাত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ