মহানবী (ﷺ)-এর কতিপয় সাহাবীর ব্যাপারে তাঁর ব্যক্ত ইলমে গায়ব


  • হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)


❏ হাদিস ১৬:


আল-বুখারী (رحمة الله) ও মুসলিম (رحمة الله) হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণনা করেন যে হুযূর পূর নূর (ﷺ) তাঁকে বলেন:

ادْعِي لِي أَبَاكِ وَأَخَاكِ , حَتَّى أَكْتُبَ لِأَبِي بَكْرٍ كِتَابًا , فَإِنِّي أَخَافُ أَنْ يَتَمَنَّى مُتَمَنٍّ , وَيَقُولُ قَائِلٌ , وَيَأْبَى اللهُ وَالْمُؤْمِنُونَ إِلَّا أَبَا بَكْرٍ..

– “তোমার বাবা ও ভাই (আবদুর রহমান)-কে এখানে ডাকো যাতে আমি কিছু একটা লিখে দিতে পারি, কেননা, আমি আশংকা করি যে কেউ হয়তো কোনো দাবি উত্থাপন অথবা কোনো উচ্চাভিলাষ পোষণ করতে পারে; আর যাতে (ওই লেখার দরুণ) আল্লাহ ও ঈমানদাররা আবু বকর (رضي الله عنه) ছাড়া অন্য কাউকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন।” [২৩]

🔺২৩. [নোট-১: মহানবী (ﷺ) এর পবিত্র হায়াতে জিন্দেগীর শেষ দিনগুলোতে ব্যক্ত হাদীস। এটি হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার কাছ থেকে ইমাম মুসলিম (رحمة الله), ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) ও ইমাম আহমদ (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন।]


❏ হাদিস ১৭:


আল-হাকিম সহীহ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান:

يَطْلُعُ عَلَيْكُمْ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَأَطْلَعَ أَبُو بَكْرٍ ، فَسَلَّمَ ثُمَّ جَلَسَ..

জান্নাতের বাসিন্দা এক ব্যক্তি এখনি তোমাদের সামনে দৃশ্যমান হতে যাচ্ছেন।” অতঃপর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) আগমন করেন এবং তাঁদের মাঝে বসেন।[২৪] 

🔺২৪. [নোট-২: হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে ইমাম তিরমিযী (গরিব হিসেবে) এবং আল-হাকিম (৩:১৩৬=১৯৯০ সংস্করণ ৩:১৪৬) এটাকে সহীহ সনদ ঘোষণা করে বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ বর্ণনায় এর সমর্থন পাওয়া যায় – (১) হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে চারটি সহীহ সনদে ইমাম আহমদ (رحمة الله); ইমাম তাবারানী – দেখুন আল-হায়তামী (৯:৫৭-৫৮; ৯:১১৬-১১৭); বেশ কয়েকটি সনদে ‘আল-আওসাত’ পুস্তকে (৭:১১০ #৭০০২; ৮:৪১ #৭৮৯৭); ‘মুসনাদ আল-শামিয়্যীন’ (১:৩৭৫ #৬৫১); ‘আল-মু’জাম আল-কবীর’ (১০:১৬৭ #১০৩৪৩); আল-হারিস নিজ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে’ (২:৮৮৯ #৯৬১); আল-তায়ালিসী তাঁর ‘মুসনাদ’ কিতাবে (পৃষ্ঠা ২৩৪ #১৬৭৪); ইবনে আবি আসিম নিজ ‘আল-সুন্নাহ’ পুস্তকে (২:৬২৪ #১৪৫৩); ইমাম আহমদ (رحمة الله) স্বরচিত ‘ফাযাইলুস্ সাহাবা’ বইয়ে (১:২০৯ #২৩৩; ২:৫৭৭ #৯৭৭) এবং আল-মুহিব্বুল তাবারী তাঁর ’আল-রিয়াদুন্ নাদিরা’ গ্রন্থে’ (১:৩০১ #১৪৬); (২) হযরত আবু মাসউদ (رضي الله عنه) হতে ইমাম তাবারানী আপন ‘আল-মু’জামুল কবীর’ কিতাবে (১৭:২৫০ #৬৯৫); এবং (৩) হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) তাঁর ‘ফযাইলুস্ সাহাবা’ গ্রন্থে’ (১:১০৪ #৭৬)। শেষোক্ত বই ও তিরমিযীতে আরও বর্ণিত আছে, “অতঃপর মহানবী (ﷺ) ওই একই কথা আবার বলেন এবং হযরত উমর (رضي الله عنه) আগমন করেন; সকল বর্ণনাকারী এই ক্রমানুসারে হযরত আলী (رضي الله عنه)কে তৃতীয় আগমনকারী বলে ও ইমাম তাবারানী একটি বর্ণনায় হযরত উসমান (رضي الله عنه)র নাম উল্লেখ করেছেন, যদিও তাঁর অন্যান্য সব বর্ণনায় শুধু হযরত আলী (رضي الله عنه)র নামই এসেছে; দেখুন – হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)-এর সূত্রে ‘আল-মু’জামুল কবীর’ (১০:১৬৬-১৬৭ #১০৩৪২, #১০৩৪৪), উম্মে মারসাদ হতে ‘আল-আহাদ ওয়াল মাসানী (৬:২৩৪ #৩৪৬৭) এবং ‘আল-কবীর’ (২৪:৩০১ #৭৬৪); দেখুন – ইবনে আব্দিল বারর, ‘আল-এস্তিয়াব’ (৪:১৯৫৭ #৪২০৯), এবং হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর ‘ফযাইলে সাহাবা’ (২:৬০৮ #১০৩৮); শেষোক্ত বইয়ে (১:৪৫৪ #৭৩২) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে একটি বর্ণনায় শুধু হযরত উসমান (رضي الله عنه)র নাম উল্লেখিত হয়েছে, দেখুন-‘কানযুল উম্মাল’ (#৩৬২১১)। নবী পাক (ﷺ) বেহেশতী হিসেবে আরও যাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন তাঁরা হলেন, দশ জন বেহেশতী সাহাবী; হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (رضي الله عنه); বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাবৃন্দ; সুনির্দিষ্ট কয়েকজন যেমন হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসের (رضي الله عنه); হুদায়বিয়াতে প্রতিশ্রুতি প্রদানকারীগণ; হযরত জাফর ইবনে তাইয়ার (رضي الله عنه); হযরত বেলাল ইবনে রাবাহ (رضي الله عنه); ইসলামের পাঁচ স্তম্ভে কোনো কিছু যোগ না করার বা তা থেকে কোনো কিছু বাদ না দেয়ার অঙ্গীকারকারী এক বেদুঈন; হিংসা থেকে মুক্ত আনসার সাহাবী; ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) ও তাঁর ভাই ইমাম হাসান (رضي الله عنه); হযরত সাবেত ইবনে কায়েস (رضي الله عنه); হযরত মালেক (رضي الله عنه); হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رحمة الله)র সম্মানিত পিতা; হযরত মুআবিয়া (‘আল-ফেরদৌস’ ৫:৪৮২ #৮৮৩০ এবং ‘মিযানুল এ’তেদাল’ ২:২৪৩, ৪:৩৫৯); হযরত হেলাল হাবাশী (মওলা আল-মুগিরাহ ইবনে শু’বা হতে ‘আল-এসাবা’ ৬:৫৫০ #৮৯৯৬, দেখুন – ‘নওয়াদিরুল উসূল’ #১২৩ এবং ‘হিলইয়াত আল-আউলিয়া’ ১৯৮৫ সংস্করণ ২:৮১, শেষোক্ত বইয়ে হযরত উয়াইস করনীর নামও উল্লেখিত হয়েছে); হযরত জারির (’নওয়াদির’ #১২৮); হযরত শারিক ইবনে খুবাশা আল-নুমাইরী (এসাবা ৩:৩৮৪ #৩৯৮৭); এবং আল-দাহহাক ইবনে খলীফা আল-আনসারী (প্রাগুক্ত ‘নওয়াদির’ ৩:৪৭৫ #৪১৬৬)।]


❏ হাদিস ১৮:


এ ঘটনার আগে মহানবী (ﷺ) ইতোমধ্যেই হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)কে বেহেশতী হবার সুসংবাদ দিয়েছিলেন যখন তিনি এরশাদ করেছিলেন: “আবু বকর জান্নাতী, উমরও তাই, উসমানও, আলীও; তালহা, যুবাইর (ইবনে আওয়াম), আবদুর রহমান ইবনে আউফ, সা’আদ (ইবনে আবি ওয়াক্কাস), সাঈদ (ইবনে যায়দ ইবনে আমর) এবং আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ সবাই জান্নাতী।”[২৫]

🔺২৫. [নোট-৩: হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (رحمة الله) ও হযরত সাঈদ ইবনে যায়দ (رضي الله عنه) হতে ‘সুনান’ ও ইমাম আহমদে বর্ণিত।]


❏ হাদিস ১৯:


হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه) হযরত হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (رضي الله عنه) থেকে ইমাম ইবনে মাজাহ (رحمة الله) ও আল-হাকিম বর্ণনা করেন যে রাসূলে খোদা (ﷺ) এরশাদ ফরমান:

اقْتَدُوا بِاللَّذَيْنِ مِنْ بَعْدِي : أَبِي بَكْرٍ ، وَعُمَرَ..

আমার (প্রকাশ্য জিন্দেগীর) পরে আসা দু’জন – আবু বকর ও উমরকে তোমরা তোমাদের খলীফা হিসেবে মান্য করবে। [২৬]

🔺২৬. [নোট-৪: এটা একটা দীর্ঘতর হাদীসের অংশ যা হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) থেকে ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন (হাসান গরিব হিসেবে); ইমাম আহমদ তাঁর কৃত ‘মুসনাদ’ কিতাবে যা আল-যাইনের মতে সহীহ সনদে (১৬:৬১১ #২৩২৭৯), এবং ইমাম আহমদের ‘ফযাইলে সাহাবা’ গ্রন্থে’ও (১:১৮৭); বেশ কয়েকটি সহীহ ও নির্ভরযোগ্য সনদে ইমাম তাহাভী এটা বর্ণনা করেছেন যা উদ্ধৃত হয়েছে আল-আরনা’ওত-এর ‘শরহে মুশকিল আল-আসার’ পুস্তকে (৩:২৫৬-২৫৭ #১২২৪-১২২৬, ৩:২৫৯ #১২৩৩); ইবনে আবি শায়বা (১২:১১); আল-হাকিম (৩:৭৫-৭৬=১১৯০ সংস্করণ ৩:৭৯-৮০) তিনটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যা তাঁর দ্বারা এবং আল-যাহাবী কর্তৃক নির্ভরযোগ্য বলে সমর্থিত; আর ওই তিনটি রওয়ায়াতের সমর্থন রয়েছে আল-বায়হাকীর ‘সুনানে কুবরা’ (৮:১৫৩ #১৬৩৫২), ‘আল-মাদখাল’ (১২২ পৃষ্ঠা) এবং ‘আল-এ’তেকাদ’ (৩৪০-৩৪১) গ্রন্থগুলোতে। ইমাম ইবনে হাজর নিজ ‘তালখিস আল-হাবির’ পুস্তকে (৪:১৯০) এই হাদীসের সনদগুলোকে নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য হিসেবে স্বীকৃত বলে জানিয়েছেন।]


 
Top