অধ্যায়ঃ কবীরা গুনাহসমূহ ও মুনাফিক্বীর আলামতসমূহ


□ ‘মুনাফিক-ই আমলী'র চিহ্নসমূহঃ 

❏ দরসে হাদীসঃ 【হাদীস নং- (৫০)】

○ অধ্যায়ঃ 【কবীরা গুনাহসমূহ ও মুনাফিক্বীর আলামতসমূহ】

[ﻭﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ‏[ﷺ ‏] ﺍﺭﺑﻊ ﻣﻦ ﻛﻦ ﻓﻴﻪ ﻛﺎﻥ ﻣﻨﺎﻓﻘﺎ ﺧﺎﻟﺼﺎ ﻭﻣﻦ ﻛﺎﻧﺖ ﻓﻴﻪ ﺧﺼﻠﺔ ﻣﻨﻬﻦ ﻛﺎﻧﺖ ﻓﻴﻪ ﺧﺼﻠﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﻔﺎﻕ ﺣﺘﯽ ﻳﺪﻋﻬﺎ ﺇﺫﺍ ﺍﺅﺗﻤﻦ ﺧﺎﻥ ﻭﺍﺫﺍ ﺣﺪﺙ ﻛﺬﺏ ﻭﺇﺫﺍ ﻋﺎﻫﺪ ﻏﺪﺭ ﻭﺍﺫﺍ ﺧﺎﺻﻢ ﻓﺠﺮ . : ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )]

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেনঃ

❝যার মধ্যে চারটি দূষণীয় স্বভাব থাকে (টীকাঃ ১) সে খাঁটি মুনাফিক,(টীকাঃ ২) এবং যার মধ্যে এর থেকে একটি দোষ থাকবে, তার মধ্যে মুনাফিক্বী’র একটি দোষ থাকবে। যতক্ষণ সে তা বর্জন না করে- যখন তার নিকট আমানত রাখা হবে তখন খিয়ানত করবে, যখন কথা বলবে তখন মিথ্যা বলবে, যখন ওয়াদা করবে তখন তা ভঙ্গ করবে এবং যখন ঝগড়া করবে তখন গালি দেবে।❞(টীকাঃ ৩)

【বােখারী, মুসলিম】

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


                                   

◇ টীকাঃ ১. এ হাদীস শরীফ পূর্ববর্তী হাদীসের বিরােধী নয়। একটি জিনিসের অনেকগুলো আলামত হয়ে থাকে। কখনও সবগুলাে বর্ণনা করে দেওয়া হয়, কখনাে কম-বেশি বর্ণনা করা হয়। ওই তিনটিও মুনাফিকীর আলামত ছিল, এ চারটিও মুনাফিকীর আলামত।

◇ টীকাঃ ২. ‘মুনাফিক-ই আমলী' অর্থাৎ মুনাফিকদের ন্যায় কর্মকাণ্ড সম্পাদনকারী। যেমন- মহান রব এরশাদ ফরমাচ্ছেন-

[ﺃَﻗِﻴﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ]

অর্থাৎ “নামায কায়েম করো এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়াে না" (৩০:৩১) অথবা হুযুর [ﷺ] এরশাদ ফরমাচ্ছেন-

[ﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻣﻌﺘﻤﺪﺍ ﻓﻘﺪ ﻛﻔﺮ]

“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায বর্জন করেছে, সে কাফির হয়ে গেছে।" অর্থাৎ 'বেনামাযী হওয়া' কাফিরসুলভ কাজ অর্থাৎ কাফিরদের কাজ।*

* আল্লামা ইব্রাহীম হালাভী ‘সগীরী' নামক কিতাবে আলােচ্য হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা এভাবে দিয়েছেন: ﺗﺮﻙ বা বর্জন করা মানে নামায ফরয হওয়াকে অস্বীকার করা বা এটাকে ফরয মনে না করা। অতএব, নামায না পড়াকে যদি জঘন্য পাপ মনে করে আল্লাহর কাছে বা মানুষের কাছে লজ্জাবােধ করে, কিংবা এমনটিকে গুনাহ বলে মেনে নেয়, তবে সে কাফির নয়, বরং ফাসিক্ব।

◇ টীকাঃ ৩. এ থেকে ওই সকল লােকের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, যাদের দৃষ্টিতে গালিগালাজ করা ইবাদত, বরং ঈমানের মূল। ইসলামে শয়তান, ফিরআউন ও হামানকে বিনা প্রয়ােজনে গালি দেওয়াও মন্দ কাজ। কেননা, এতে স্বীয় মুখই অপবিত্র হয়।

□ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ

f/Ishq-E-Mustafa ﷺ

【সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ১ম খন্ড, পৃ. ৭০, হাদীস নং-৫০ এবং টীকাঃ ২৬, ২৭ এবং ২৮ দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম।]


□ সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলা (সোলহে কুল্লী) ও তাক্বিয়্যাহ্বাজি মুনাফিক্বের আলামতঃ 

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৫১)]

○ অধ্যায়ঃ 【কবীরা গুনাহসমূহ ও মুনাফিক্বীর আলামতসমূহ】

[ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻣﺜﻞ ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻖ ﻛﺎﻟﺸﺎﺓ ﺍﻟﻌﺂﺋﺮﺓ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻐﻨﻤﻴﻦ ﺗﻌﻴﺮ ﺍﻟﻰ ﻫﺬﻩ ﻣﺮﺓ ﻭ ﺍﻟﻰ ﻫﺬﻩ ﻣﺮﺓ . : ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ]

হযরত ইবনে ওমর [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ

❝মুনাফিক্বের উপমা ছাগীর ন্যায়, যা দু’টি (পাঁঠা) ছাগলের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে, (টীকাঃ ১ দ্রব্যষ্ট) কখনও এ ছাগলের কাছে পৌঁছে, কখনাে অপর ছাগলের কাছে যায়।❞

【মুসলিম】

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


                                   

◇ টীকাঃ ১. দুটিকে রাজী করার এবং দু’টি থেকেই স্বাদ ও উপকার লাভ করার জন্য; যা দ্বারা তার বাচ্চা প্রজণনের ইচ্ছা বুঝা যায়।

সুর্তব্য যে, কাফির ও মু'মিন সকলকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টায় থাকা মারাত্মক ব্যাধি। যা করলে তার নিজের কোন দ্বীন থাকে না। এ জন্য এখানে এরূপ মন্দ জিনিসের সাথে উপমা দেওয়া হয়েছে। যাতে অন্তরে এর প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি হয়।

এই নিফাক্ব রােগে বর্তমানে অনেক বহুরূপী মসলমানও আক্রান্ত। কিছু কিছু জ্ঞানপাপীর দৃষ্টিতে, কৌশল অবলম্বন করে কাফির ও মু'মিন সকলকে সন্তুষ্ট করা এবং সকলের কাছ থেকে উপকৃত হওয়া ইবাদত।

আল্লাহ, আমাদেরকে এরূপ শয়তানী ইবাদত থেকে রক্ষা করুন!

□ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ

f/Ishq-E-Mustafa ﷺ

【সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ১ম খন্ড, পৃ. ৭০, হাদীস নং-৫১ এর টীকাঃ ২৯ দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম।


□ আক্বীদাগত মুনাফিক্বের চিহ্নসমূহঃ

# ব্যাখ্যাসহ

❏ দরসে হাদীসঃ 【হাদীস নং- (৪৯)】

○ অধ্যায়ঃ 【কবীরা গুনাহসমূহ ও মুনাফিক্বীর আলামতসমূহ】

[ﻭﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﺍﻳﺔ ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻖ ﺛﻠﺚ . ﺯﺍﺩ ﻣﺴﻠﻢ ﻭﺇﻥ ﺻﺎﻡ ﻭﺻﻠﻰ ﻭﺯﻋﻢ ﺃﻧﻪ ﻣﺴﻠﻢ ﺛﻢ ﺍﺗﻔﻘﺎ ﺇﺫﺍ ﺣﺪﺙ ﻛﺬﺏ ﻭﺇﺫﺍ ﻭﻋﺪ ﺃﺧﻠﻒ ﻭﺍﺫﺍ ﺍﺅﺗﻤﻦ ﺧﺎﻥ .]

হযরত আবু হােরায়রা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেন- "মুনাফিক্বের আলামত তিনটি। (টীকাঃ ১)

ইমাম মুসলিম [ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ] এ হাদীসকে বর্ধিত আকারে বর্ণনা করেছেন- “যদিও রােযা রাখে, নামায পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান বলে মনে করে।”

অতঃপর মুসলিম ও বােখারী ঐকমত্যের ভিত্তিতে বর্ণনা করেছেন- “যখন কথা বলে (তখন) মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে।” (টীকাঃ ২)

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


                                   

১. 【মুনাফিক্বের আলামত তিনটি।】

◇ টীকাঃ ১ ‘মুনাফিক্ব’ মানে ই'তিক্বাদী (বিশ্বাসগত) মুনাফিক্ব।

অর্থাৎ অন্তরের দিক দিয়ে কাফির এবং মুখে মুসলমান। এ দোষগুলাে তাদের আলামত; কিন্তু আলামতের সাথে আলামতধারী থাকা জরুরি নয়। কাকের চিহ্ন ‘কালাে হওয়া’; কিন্তু প্রতিটি কালাে জিনিস কাক নয়।

অর্থাৎ এ আলামতগুলাে মুনাফিক্ব'র। সুতরাং যাদের মধ্যে এ আলামতগুলাে পাওয়া যাবে তাদের প্রত্যেককে মুনাফিক্ব বলা যাবে না। মৌলিক ঈমান তার মধ্যে থাকলে এ সব আলামতরূপী দোষগুলাের কারণে গুনাহ্গার হবে মাত্র। সুতরাং বাতিল আক্বীদাসম্পন্ন ব্যক্তির মধ্যে এসব আলামতের সমন্বয় ঘটলে সে-ই প্রকৃত মুনাফিক্ব।

২. 【যখন কথা বলে (তখন) মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে।】

◇ টীকাঃ ২. অর্থাৎ এগুলাে মুনাফিক্বদের কাজ। মুসলমানকে এগুলাে থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এটা নয় যে, এ অপরাধগুলাে স্বয়ং নিফাক্ব। হযরত ইয়ূসুফ [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ]'র ভাইয়েরা এ তিন অপরাধই করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা মুনাফিক্ব সাব্যস্ত হননি কাফিরও নন। সুতরাং হাদীসের উপর কোন আপত্তি নেই।।

□ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ

f/Ishq-E-Mustafa ﷺ

【সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ১ম খন্ড, পৃ. ৬৯, হাদীস নং-৪৯ এবং টীকাঃ ২৪ এবং ২৫ দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম।

 
Top