বিষয় নং-১৭: লাশ দাফনের পর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তালকীন করা


❏ ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا أَبُو عَقِيلٍ أَنَسُ بْنُ سَلْمٍ الْخَوْلَانِيُّ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ الْعَلَاءِ الْحِمْصِيُّ، ثنا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَيَّاشٍ، ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ الْقُرَشِيُّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَوْدِيِّ، قَالَ: شَهِدْتُ أَبَا أُمَامَةَ وَهُوَ فِي النَّزْعِ، فَقَالَ: إِذَا أَنَا مُتُّ، فَاصْنَعُوا بِي كَمَا أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ أَنْ نصْنَعَ بِمَوْتَانَا، أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ فَقَالَ: إِذَا مَاتَ أَحَدٌ مِنْ إِخْوَانِكُمْ، فَسَوَّيْتُمِ التُّرَابَ عَلَى قَبْرِهِ، فَلْيَقُمْ أَحَدُكُمْ عَلَى رَأْسِ قَبْرِهِ، ثُمَّ لِيَقُلْ: يَا فُلَانَ بْنَ فُلَانَةَ، فَإِنَّهُ يَسْمَعُهُ وَلَا يُجِيبُ، ثُمَّ يَقُولُ: يَا فُلَانَ بْنَ فُلَانَةَ، فَإِنَّهُ يَسْتَوِي قَاعِدًا، ثُمَّ يَقُولُ: يَا فُلَانَ بْنَ فُلَانَةَ، فَإِنَّهُ يَقُولُ: أَرْشِدْنَا رَحِمَكَ اللهُ، وَلَكِنْ لَا تَشْعُرُونَ. فَلْيَقُلْ: اذْكُرْ مَا خَرَجْتَ عَلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا شَهَادَةَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَأَنَّكَ رَضِيتَ بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا، وَبِالْقُرْآنِ إِمَامًا، فَإِنَّ مُنْكَرًا وَنَكِيرًا يَأْخُذُ وَاحِدٌ مِنْهُمْا بِيَدِ صَاحِبِهِ وَيَقُولُ: انْطَلِقْ بِنَا مَا نَقْعُدُ عِنْدَ مَنْ قَدْ لُقِّنَ حُجَّتَهُ، فَيَكُونُ اللهُ حَجِيجَهُ دُونَهُمَا . فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ، فَإِنْ لَمْ يَعْرِفْ أُمَّهُ؟ قَالَ: فَيَنْسُبُهُ إِلَى حَوَّاءَ، يَا فُلَانَ بْنَ حَوَّاءَ


-‘‘হযরত সাইদ বিন আব্দুল্লাহ আওয়াদী (رحمة الله) তাবেয়ী বলেন, আমি একদিন সাহাবী হযরত আবু উমামা  এর মুমূর্ষ অবস্থায় তার নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি বলেন, আমি যখন মারা যাব, তখন তোমরা আমার সাথে সে ধরণের আচরণই করবে, আমাদের মৃতদের সাথে যে রূপ আচরণ করতে রাসূল  আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কোনো মুসলমান ভাই মারা গেলে তাকে কবরস্থ করে উপরে মাটি  ঠিকঠাক করে দিয়ে তোমাদের কেউ যেন তার শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে এভাবে আহবান করে বলে,  হে অমুক মহিলার পুত্র অমুক! (লোকটির মায়ের নাম এবং তার নাম ধরে ডাক দিবে।) তখন মৃত লোকটি ঐ আওয়াজ শুনতে পাবে। একইভাবে দ্বিতীয় বার ডাক দিবে। তখন সে সোজা হয়ে বসবে। তারপরে আবার ডাক দিলে সে কবরের ভিতর থেকে বলবে, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাকে রহম করুন। নবীজী (ﷺ) ইরশাদ করেন,  যদিও তোমরা তা বুঝতে পারবে না। অতঃপর শিয়রের কাছে দাঁড়ানো ব্যক্তি যেন বলে, তুমি দুনিয়া থেকে যে কালিমায় শাহাদাত নিয়ে বিদায় নিয়েছ তা স্মরণ কর। আর স্মরণ কর ঐ কথা যে আমার রব হিসেবে আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট এবং দ্বীন হিসেবে ইসলামের উপর রাজি; নবী হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর সন্তুষ্ট এবং পথ প্রদর্শক হিসেবে পবিত্র কুরআনের উপর সন্তুষ্ট। নবীজী (ﷺ) ইরশাদ করেন, তালকীনের পর মুনকার-নাকীর ফেরেশতাদ্বয় একে অপরের হাত ধরে বলাবলি করে চলো। যাকে নাজাতের দলীল শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তার কাছে বসে থেকে লাভ নেই। জনৈক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি মৃত ব্যক্তির মায়ের নাম জানা না থাকে তবে কার পুত্র বলবো? হুযূর (ﷺ) বললেন,  সকলের মা হযরত হাওয়া () এর দিকে সম্পর্ক করেই বলবে হে হাওয়ার পুত্র অমুক।’’   ১৭১

➥{ইমাম তাবরানী, মু’জামুল কাবীর ঃ ৮/২৪৯ পৃ. হা/৭৯০৬ (২) ইমাম সাখাভী, আল-মাকাসিদুল হাসানা, ১৯১ পৃ. হা/৩৪৫ (৩) আল্লামা আজলূনী: কাশফুল খাফা ঃ ১/২৮২ পৃ. হা/১০১৪ (৪) ইবনে হাজার আসকালানী, তালখিসুল হুবাইর, (৫) ইমাম তাবরানী ঃ আদ্ব-দোয়াতুল কাবীর, ২/১৪২ পৃ. (৬) ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ২/৩২৪ পৃ. হা/৩৯১৮, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, শরহুস সুদুর ঃ ১৩৯ পৃ. মাকতাবাতুত তাওফিকিয়্যাহ, কায়রো, মিশর। (৭) আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী ঃ কানযুল উম্মাল ঃ ১৫/৭৩৭ পৃ. হাদিস ঃ ৪২৯৩৪ (৮) আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামীঃ মাযমাউদ যাওয়াইদ, ১/৪৬৭ পৃ. (৯) ইবনুল কাইয়্যুম, যা আ’দুল মা’আদ, ১/৫০২ পৃ. (১০) আল্লামা সান’আনী, সুবুলুস সালাম, ৩/১৫৬ পৃ. (১১) ইবনু কুদামা, আশ-শরহুল কাবীর, ২/৩৮৫ পৃ. (১২) ইবনু কুদামা, আল-মুগনী, ৪/৪৬৫ পৃ. (১৩) ইবনুল মুফলিহ, আল-ফুরূ, ৩/৩১৮পৃ. (১৪) ইবনে কাসীর : জামিউল মাসানীদ ওয়াল সুনান : ৮/৫৫৩ পৃ. হাদিস:১০৮৮১}




সনদ পর্যালোচনা: 


❏ ‘বিদ‘আত’ নামক গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের ১২০-১২২ পৃষ্ঠায় ড. আহমদ আলী নামক এক লিখক এ হাদিসকে জাল প্রমাণের অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছেন। অথচ তার ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানীও এটিকে সাধারণ যঈফ বলেছেন মাত্র। 


(আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ৩/২০৩ পৃ. হা/৭৫৩) 


বুঝা গেল সে ভুয়া তাহকীকে আলবানীকেও ছাড়িয়ে গেছেন। 


❏ ইমাম হাইসামী (رحمة الله) এ সনদ প্রসঙ্গে লিখেন-


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَفِيهِ مَنْ لَمْ أَعْرِفْهُ، جَمَاعَةٌ.


-‘‘ইমাম তাবরানী (رحمة الله) এ হাদিসটি তার মু‘জামুল কাবীরে সংকলন করেছেন, সনদে এমন অনেকেই রয়েছেন যাদেরকে আমি চিনি না।’’ 


(ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ২/৩২৪ পৃ. হা/৩৯১৮) 


বাস্তবতার কথা হলো এ সনদে কোনো রাবী মাজহুল নেই, এটি ইমাম হাইসামীর ভুল সিদ্ধান্ত। 


❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এ হাদিসের সনদ গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে লিখেন-


وَإِسْنَادُهُ صَالِحٌ وَقَدْ قَوَّاهُ الضِّيَاءُ فِي أَحْكَامِهِ


-‘‘এ হাদিসের সনদটি সঠিক, ইমাম যিয়া মুকাদ্দাসী (رحمة الله) তার ‘আহকাম’ গ্রন্থে এটিকে শক্তিশালী বলেছেন।’’ 


(ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তালখিসুল হুবাইর, ২/৩১০ পৃ. হা/৭৯৬)


❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) ইমাম হাইসামী (رحمة الله) থেকেও বড় তাহকীককারী ও হাদিসের হাফেয এবং বহু আসমাউর রিজাল প্রণেতা। এমনকি আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী এ হাদিসের সনদ বিষয়ে লিখেন-


وقواه الضياء، وابن حجر في بعض كتبه، بكثرة شواهده.


-‘‘ইমাম যিয়া মুকাদ্দাসী (رحمة الله) এটিকে শক্তিশালী বলেছেন, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার কিতাবে এটির অনেক শাওয়াহেদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।’’ 


(শাওকানী, ফাওয়াইদুল মাজমূআহ, ২৬৮ পৃ. হা/১৯০)


❏ ইমাম নববী (رحمة الله) এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-


ولكن اعتضد بشواهد، وبعمل أهل الشام به قديما.


-‘‘শাওয়াহেদ থাকায় হাদিসটিকে শক্তিশালী করে, পূর্ববর্তী সিরিয়াবাসীর এর উপর আমল ছিল।’’ 


(ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ১৬৩ পৃ. হা/৪৭১)


❏ ইমাম সাখাভী  আরো বলেন- 


قواه الضياء فى احكامه ، ثم شيخنا بما له من الشواهد


-‘‘ইমাম যিয়া মুকাদ্দাসী  এর ‘আহকাম’ গ্রন্থে এটিকে শক্তিশালী বলেছেন, তারপর আমার শায়খ (ইবনে হাজার) বলেন, উক্ত বিষয়ে অপর হাদিস দ্বারা সাক্ষ্য পাওয়া যায়।’’  ১৭২ 

➥{ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ১৯১ পৃ. হা/৩৪৫, আল্লামা আজলূনী: কাশফুল খাফা, ১/২৮২ পৃ. হা/১০১৪}



❏ আল্লামা সায়্যিদ সাবেক লিখেন-


قال الحافظ في التلخيص: واسناده صالح، وقد قواه الضياء في أحكامه.


-‘‘ইমাম হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার তালখিসুল হুবাইর গ্রন্থে বলেন, সনদটি ভাল, ইমাম যিয়া মুকাদ্দাসী (رحمة الله) তার আহকাম গ্রন্থে এটিকে শক্তিশালী সনদ বলেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।’’ 


(ফিকহুস সুন্নাহ, ৫৪৭ পৃ. )


❏ আল্লামা ইবনুল মুলাক্কীন (رحمة الله) এ হাদিস সংকলন করেন লিখেন-


إِسْنَاده لَا أعلم بِهِ بَأْسا، وَذكره الْحَافِظ أَبُو مَنْصُور فِي جَامع الدُّعَاء الصَّحِيح


-‘‘এ সনদে কোনো অসুবিধা আছে বলে আমি জানি না, হাফেযুল হাদিস আবুল মানসূর (رحمة الله) তার জামেউদ দোয়া গ্রন্থে একে সহীহ বলেছেন।’’ 


(ইবনুল মুলাক্কীন, বদরুল মুনীর, ৫/৩৩৪ পৃ.) 


❏ একজন মুহাদ্দিস সনদের একজন রাবীকে মাজহুল বলায় তিনি এর জবাবে বলেন-


قلت: لَكِن حَدِيثه هَذَا لَهُ شَوَاهِد يعتضد بهَا


-‘‘আমি বলি, তবে এ হাদিসটির শাওয়াহেদ থাকায় এটিকে শক্তিশালী করেছে।’’ 


(ইবনুল মুলাক্কীন, বদরুল মুনীর, ৫/৩৩৫ পৃ.)


❏ আহলে হাদিস মুফতি শাইখ উসাইমীন লিখেন-


لأن الحديث الوارد في التلقين حديث ضعيف.


-‘‘নিশ্চয় দাফনের পরে তলকীনের বিষয়ে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।’’ 


(মাজমূআয়ে ফাতওয়া ওয়া রসায়েলে ইবনে উছাইমীন, ১৭/২১৭ পৃ.)


উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, এ হাদিসটির মর্যাদা কমপক্ষে ‘হাসান’ স্তরের এবং পূর্বসূরিদের এ হাদিসের উপর আমল ছিল।



দাফনের পরে তলকীনের বিষয়ে ইমাম মণিষীদের অভিমত:


১. অপরদিকে ইমাম সাখাভী  এবং আল্লামা আজলূনী  বলেন,  


وعزى الإمام أحمد العمل به لأهل الشام، وابن العربي لأهل المدينة وغيرهما، كقرطبة وغيرها


-‘‘ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর মতে শাম দেশের লোকদের এ বিষয়ের আমল জারি থাকায় এবং ইবনে আরাবী (رحمة الله)’র মতে মদিনাবাসীদের আমল অব্যাহত থাকায় এবং অন্যান্য শহরের আমল দ্বারা বিষয়টিকে শক্তিশালী করেছে।’’  ১৭৩

➥{ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ১৯১ পৃ. হা/৩৪৫, আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা, ১/২৮২ পৃ. হা/১০১৪}



২. অপরদিকে ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) লিখেন-


وَقَدْ رُوِيَ عَنْهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - أَنَّهُ أَمَرَ بِالتَّلْقِينِ بَعْدَ الدَّفْنِ فَيَقُولُ: يَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ اُذْكُرْ دِينَك الَّذِي كُنْت عَلَيْهِ مِنْ شَهَادَةِ أَنْ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ.......


-‘‘রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি দাফনের পরে তলকীন করতে আদেশ করেছেন, অতঃপর সে যখন কবরের নিকট গমন করবে তখন বলবে, হে অমুকের ছেলে অমুক! তুমি তোমার দ্বীনকে স্মরণ কর যে দ্বীনের উপরে তুমি ছিলে, তারপর কালেমায়ে শাহাদাত বলবে।’’ 


(ফতোয়ায়ে শামী, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৯১ পৃ., সলাতুল জানাইয)



৩. ইমাম নববী  তার রাওজাতুত ত্বালেবীন কিতাবে লিখেন-


ويستحب أن يلقن الميت بعد الدفن


-‘‘দাফনের পরে তালকীন করা মুস্তাহাব।’’ 


(ইমাম নববী, রাওজাতুত ত্বালেবীন ১/৬৫৪ পৃ.) 


❏ ইমাম নববী (رحمة الله) তার বিখ্যাত কিতাব “কিতাবুল আযকার” গ্রন্থে লিখেন-


وأما تلقين الميت بعد الدفن، فقد قال جماعة كثيرون من أصحابنا باستحبابه


-‘‘দাফনের পরে তালকীন করার বিষয়ে এক জামাত ফকীহগণ মত প্রকাশ করেছেন, আমাদের শাফেয়ী ফকীহগণ এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন।’  ১৭৪ 

➥{ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ১৬২ পৃ. }



❏ অপরদিকে ইমাম নববী  তাঁর আরেক গ্রন্থে লিখেন-


قَالَ جَمَاعَاتٌ مِنْ أَصْحَابِنَا يُسْتَحَبُّ تَلْقِينُ


-‘‘আমাদের এক জামাত শাফেয়ী ফকীহ দাফনের পরে তালকীন করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। 


(ইমাম নববী, আল-মাজমূ, ৫/৩০৩ পৃ.)



৪. আল্লামা আজলূনী  আরো বলেন-


وقد اتفق علماء الحديث على المسامحة في أحاديث الفضائل والترغيب والترهيب


 -‘‘উলামায়ে কেরামগণ ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন যে, উক্ত তালকীনের হাদিসের উপর ভয়ভীতি সতর্কতার জন্য আমল করা মুস্তাহাব।’’  ১৭৫

➥{আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা, ১/২৮২ পৃ. হা/১০১৪}



৫. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন-


وَيُسْتَحَبُّ أَنْ يُلَقَّنَ الْمَيِّتُ بَعْدَ الدَّفْنِ


-‘‘মায়্যিতকে দাফনের পরে আযান দেয়া মুস্তাহাব।’’ 


(ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তালখিসুল হুবাইর, ২/৩১০ পৃ. হা/৭৯৬) 



৬. আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী  বলেন- يستحب تلقين -‘‘দাফনের পর তালকীন করা মুস্তাহাব।’’  ১৭৬

➥{আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা, ১/২৮২ পৃ. হা/১০১৪}



৭. আল্লামা ইবনুল মুলাক্কীন (رحمة الله) লিখেন-


قَالَ الرَّافِعِيّ: وَيسْتَحب أَن يلقن الْمَيِّت بعد الدّفن


-‘‘ইমাম রা‘ফেয়ী (رحمة الله) বলেন, লাশ দাফনের পরে তলকীন করা মুস্তাহাব।’’ 


(ইবনুল মুলাক্কীন, বদরুল মুনীর, ৫/৩৩৩ পৃ.)



৮. আল্লামা গারনাতী আল-মালেকী (ওফাত. ৮৯৭হি.) লিখেন-


قَالَ أَبُو حَامِدٍ: وَيُسْتَحَبُّ تَلْقِينُ الْمَيِّتِ بَعْدَ الدَّفْنِ.


-‘‘ইমাম আবূ হামেদ গায্যালী (رحمة الله) বলেছেন, দাফনের পরে তলকীন করা মুস্তাহাব।’’ 


(তাজু ওয়াল ওয়াকিল লিমুখতাছারুল খলীল, ৩/৫২ পৃ.) 


❏ তিনি আরও লিখেন-


وَقَالَ ابْنُ الْعَرَبِيِّ فِي مَسَالِكِهِ: إذَا أُدْخِلَ الْمَيِّتُ قَبْرَهُ فَإِنَّهُ يُسْتَحَبُّ تَلْقِينُهُ فِي تِلْكَ السَّاعَةِ وَهُوَ فِعْلُ أَهْلِ الْمَدِينَةِ الصَّالِحِينَ مِنْ الْأَخْيَارِ


-‘‘ইমাম ইবনে আরাবী (رحمة الله) তার মাসালক নামক কিতাবে লিখেছেন, যখন মায়্যিতকে কবরে দাফন করা হবে এ সময়ে তলকীন করা মুস্তাহাব, আর এটি মদিনাবাসীদের নেককার ব্যক্তিদের কর্ম।’’ 


(মুখতাসারুল খলীল, ৩/৫২-৫৩ পৃ.)



৯. ইমাম রা‘ফেয়ী (ওফাত. ৬২৩ হি.) লিখেন-


ويستحب أن يلقن الميت بعد الدفن


-‘‘মুস্তাহাব হচ্ছে মায়্যিতকে দাফনের পরে তলকীন করা।’’ 


(শারহুল কাবীর, ৫/২৪২ পৃ.)


❏ আল্লামা মোল্লা খসরু  লিখেন-


وَقَالَ فِي الْجَوْهَرَةِ، وَأَمَّا تَلْقِينُ الْمَيِّتِ فِي الْقَبْرِ فَمَشْرُوعٌ عِنْدَ أَهْلِ السُّنَّةِ


-‘‘জাওহারাতুন নায়্যারাহ গ্রন্থকার  বলেন, দাফনের পরে মায়্যিতকে তলকিন করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীদের নিকট প্রসিদ্ধতা রয়েছে।’’ 


(দুররুল হিকাম, ১/১৬০ পৃ.)


❏ আল্লামা যুবাইদী (رحمة الله) লিখেন-


وَأَمَّا تَلْقِينُ الْمَيِّتِ فِي الْقَبْرِ فَمَشْرُوعٌ عِنْدَ أَهْلِ السُّنَّةِ لِأَنَّ اللَّهَ تَعَالَى يُحْيِيه فِي الْقَبْرِ وَصُورَتُهُ أَنْ يُقَالَ يَا فُلَانُ بْنَ فُلَانٍ أَوْ يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ اُذْكُرْ دِينَك الَّذِي كُنْت عَلَيْهِ وَقَدْ رَضِيت بِاَللَّهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا.


-‘‘দাফনের পরে মায়্যিতকে তলকিন করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীদের নিকট প্রসিদ্ধতা লাভ করেছে, নিশ্চয় মহান রব যখন কবরে মৃতদেরকে দাফনের পর জীবিত করেন  নিজ আকৃতিতে, তখন তলকীন দাতা বলবেন হে অমুকের ছেলে অমুক অথবা হে অমুক আল্লাহর বান্দার ছেলে আল্লাহর বান্দা! তুমি তোমার দ্বীনকে স্মরণ কর যে দ্বীনের উপরে তুমি ছিলে, তারপর তলকীন দাতা-


رَضِيت بِاَللَّهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا.


বলবে।’’ 


(জাওহারাতুন নায়্যারাহ, ১/১০২ পৃ.)


❏ ফিকহের গ্রন্থ সিরাজুল ওহ্হাজ এ রয়েছে-


وَيسن تلقين الْمَيِّت الْمُكَلف


-‘‘বালেগ মায়্যিতকে দাফনের পরে তলকীন দেয়া সুন্নাত।’’ 


(সিরাজুল ওহ্হাজ, ১/১১৫ পৃ.)


❏ আল্লামা শরবীনী (رحمة الله) লিখেন-


وَيُسَنُّ تَلْقِينُ الْمَيِّتِ الْمُكَلَّفِ بَعْدَ الدَّفْنِ


-‘‘দাফন কার্য শেষ করে বালেগ মুসলমানের কবরে তলকীন দেয়া সুন্নাত।’’ 


(২/৬০ পৃ. مغني المحتاج إلى معرفة معاني ألفاظ المنهاج)


❏ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) লিখেন-


وهذا التلقين مستحب بالإجماع.


-‘‘এই তলকীন মুস্তাহাব হওয়ার বিষয়ে উম্মতের ইজমা সংঘঠিত হয়েছে।’’ 


(আইনী, বেনায়া শারহুল হেদায়া, ৩/১৭৭ পৃ.) 


❏ তিনি সেখানে আরও লিখেন-


وعند الشافعي يستحب أن يلقن بعد الدفن


-‘‘ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله)-এর নিকট দাফনের পরে তলকীন করা মুস্তাহাব।’’



১০. আল্লামা সায়্যিদ সাবেক (رحمة الله) লিখেন-


استحب بعض أهل العلم والشافعي ان يلقن الميت بعد الدفن


-‘‘এক দল আহলে ইলমের এবং ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله)-এর মত হলো, দাফনের পরে তলকীন করা মুস্তাহাব।’’ 


(সায়্যিদ সাবেক, ফিকহুস সুন্নাহ, ৫৪৭ পৃ.)


এছাড়াও অনেক ফিকহের কিতাবে তালকীনকে মুস্তাহাব বলা হয়েছে।



ধোঁকাবাজ মুফতি থেকে সাবধান


❏ দাফনের পরে তালকীন সম্পর্কে আহলে হাদিসদের প্রধান মুফতিকে জিজ্ঞাসা করা হলে ইবনে বাযকে লিখেন-


س: ما حكم التلقين بعد الدفن؟ .


ج: بدعة وليس له أصل، فلا يلقن بعد الموت وقد ورد في ذلك أحاديث موضوعة ليس لها أصل، وإنما التلقين يكون قبل الموت.



প্রশ্ন: দাফনের পরে তলকীন করার হুকুম কি?


জবাব: এটা বিদআত, এটার কোনো ভিত্তি নেই, মৃত্যুর পরে কোনো তলকীন নেই, এ বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই জাল, কোনো ভিত্তি নেই, তলকীন হবে কেবল মৃত্যুর পূর্বে।’’ 


(মাজমূআয়ে ফাতওয়ায়ে ইবনে বায, ১৩/২০৬ পৃ.)


 সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এত হাদিস এবং প্রাচীন ইমাম মণিষীদের অভিমত এবং পূর্ববর্তী বুযুর্গদের আমল থাকা সত্ত্বেও তিনি কি লিখিছেন! বিদ‘আত বলতে তো দলিল লাগে, এটা সকলেরই জানা। তার কথার কোনো ভিত্তি আমি খুঁজে পাইনি।


❏ আহলে হাদিসদের আরেক মুফতি শায়খ উসাইমীন তিনি এ বিষয়ে কি ফাতওয়া দেন এবার আমরা তা দেখবো-


سئل فضيلة الشيخ رحمه الله تعالى: ما حكم تلقين الميت بعد دفنه؟


فأجاب فضيلته بقوله: القول الراجح أن لا يلقن بعد الدفن وإنما يُستغفر له ويسأل له التثبيت لأن الحديث الوارد في التلقين حديث ضعيف.


প্রশ্ন: দাফনের পরে তলকীন করার বিষয়ে হুকুম কি?


জবাব: আসল ফায়সালা হলো, দাফনের পরে তলকীন করবে না, বরং মায়্যিতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং সাওয়ালের জবাব দেয়ার জন্য দোয়া করবেন, আর দাফনের পরে তলকীন দেয়ার বিষয়ে যে হাদিস বর্ণিত তা যঈফ।’’ 


(মাজমূআয়ে ওয়া রসায়েলে উসাইমীন, ১৭/২১৭ পৃ.)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তিনিও কৌশলে ধোঁকাবাজিই করে গেলেন, তলকিন দেয়া শরিয়তে কেনো নিষিদ্ধ তার তিনি কিছুই প্রমাণ দিলেন না, বরং ভুয়া তাহকীক করে তলকীনের হাদিসকে যঈফ বলে দিলেন, আর ইবনে বায তো (ليس له أصل) এর কোনো ভিত্তি নেই-ই বলে দিলেন!


আমি এ গ্রন্থের শুরুতে আলোকপাত করেছি যে, মুহাদ্দিসগণ একমত পোষণ করেছেন যে, যঈফ হাদিস ফাযায়েল ও আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য, তারপরও উসাইমীন মানুষদেরকে গোমরাহী ফাতওয়া দিয়ে গেলেন!

 
Top