বিষয় নং- ১৬: জুম‘আ হলো নিঃস্বদের জন্য হজ্জ


মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত ‘প্রচলিত জাল হাদিস” গ্রন্থের ১২১ পৃষ্ঠায় জাল প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়ে লিখেছেন-‘‘জামেউস সগীর কিতাবে উক্ত হাদিসটি আল্লামা মানাবী  উলে­খ করেছেন”।


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! যে কিতাবের সম্মানিত লিখকের নামই জানে না, সে আবার কিসের সহীহ দ্বঈফ নির্ণয় করবে! মূলত উক্ত গ্রন্থের লিখক হলেন ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله)। 


❏ ইমাম ক্বাদাঈ (رحمة الله) সংকলন করেন-


أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عُمَرَ الْبَزَّازُ، أبنا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ ثنا مُشْرِفُ بْنُ سَعِيدٍ الْوَاسِطِيُّ، ثنا عِيسَى بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْهَاشِمِيُّ، عَنْ مُقَاتِلٍ، عَنِ الضَّحَّاكِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْجُمُعَةُ حَجُّ الْمَسَاكِينِ


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস  হতে বর্ণিত। হুযূর (ﷺ) ফরমান, জুম‘আ হল নিঃস্বদের জন্য হজ্জ স্বরূপ।’’  ১৬৪

➥{ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, আল-জামেউস সগীর, ১/২৭২পৃ. হা/৩৬৩৫, ইমাম সাখাভীঃ মাকাসিদুল হাসানা, ২০৭ পৃ. হা/৩৭০, আল্লামা আজলূনী: কাশফুল খাফা, ১/২৯৮ পৃ. হা/১০৭৪, ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ২/১১৬ পৃ. হা/২৬১৪, ইমাম মানাবী, ফয়যুল কাদীর, ৩/৩৫৯ পৃ. হা/৩৬৩৫, আল্লামা শাওকানী, ফাওয়াইদুল মওদ্বু’আত, ৩৭৮ পৃ., ইবনে আরাবী,  আল-মু‘জাম, ৩/১১০৩ পৃ. হা/২৩৭৮, ইমাম ক্বদায়ী: মুসনাদে শিহাব : ১/৮১ পৃ. হা/৭৮}



সনদ পর্যালোচনা: 


উক্ত হাদিসটির একটি সনদ পাওয়া গেল, তবে উক্ত হাদিসটির মধ্যে একজন রাবী ‘মুকাতিল ইবনে কায়েস’ রয়েছেন, তাকে একক মুহাদ্দিস আযদী  দুর্বল বলেছেন।  ১৬৫ 

➥{ইমাম যাহাবী, মিযানুল ই’তিদাল, ৩/২৯৮ পৃ. রাবী: ৬৯৯৩, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ৪/৪৫৪ পৃ.}



❏ আহলে হাদিস আলবানী এটিকে রাবী ‘মুকাতিল ইবনে কায়েস’ থাকায় যঈফ বলেছেন। 


(আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ , ১/৩৪৪ পৃ. হা/১৯১) 


❏ তবে অপর আরেকটি সনদ ইমাম কাযাঈ  ইমাম ইবনে আসাকীর  সংকলন করেন এভাবে-


وَأَخْبَرَنَا أَبُو مُحَمَّدٍ التُّجِيبِيُّ، أبنا ابْنُ الْأَعْرَابِيِّ، ثنا الْحَسَنُ هُوَ ابْنُ عَلِيِّ بْنِ عَفَّانَ الْعَامِرِيُّ، ثنا عُثْمَانُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، ثنا أَبُو يُوسُفَ، عَنْ عِيسَى بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ مُقَاتِلٍ، عَنِ الضَّحَّاكِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْجُمُعَةُ حَجُّ الْفُقَرَاءِ


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস  এর সূত্রে المساكين (মাসাকিন) এর স্থলে الفقراء (ফুকারা) বর্ণনা করেন।  ১৬৬

➥{ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, জামেউস সগীরঃ ১/২৭৩পৃ, হা/৩৬৩৬, ইমাম মানাবী, ফয়যুল কাদীর, ৩/৩৫৯পৃ, হা/৩৬৩৬, ইমাম কাদ্বায়ী,  মুসনাদে শিহাব, ১/৮১ পৃ. হাদিস:৭৯}



তবে উক্ত হাদিসের সনদেও রাবী ‘মুকাতিল’ রয়েছেন। তবে এটির আরও শাওয়াহেদ হাদিস রয়েছে।


❏ এই হাদিসটির আরেকটি শক্তিশালী মুরসাল সনদ পাওয়া যায় হযরত যাহ্হাক বিন মুযাহিম (رضي الله عنه)-এর সূত্রে।  ১৬৭

➥{ইমাম ফিকহী: আখবারে মক্কীয়া: ১/৩৭৭ পৃ. হাদিস: ৭৯৫}



এ হাদিসের দুর্বলতা হলো তাবেয়ী তাবেয়ী যাহ্হাক (رحمة الله)-এর ছাত্র নিয়ে, এবার দেখবো তাঁর পর্যন্ত অন্য সূত্র সহীহভাবে পৌঁছেছে কীনা। 


❏ ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন ইসহাক ফাকেহী (رحمة الله) সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ شَبِيبٍ قَالَ: ثنا الْحُسَيْنُ بْنُ الْوَلِيدِ قَالَ: ثنا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي رَوَّادٍ، عَنِ الضَّحَّاكِ بْنِ مُزَاحِمٍ قَالَ: الْجُمُعَةُ حَجُّ الْمَسَاكِينِ


-‘‘তাবেয়ী হযরত যাহ্হাক বিন মুযাহিম (رحمة الله) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,  জুম‘আ হল নিঃস্বদের জন্য হজ্জ স্বরূপ।’’  ১৬৮

➥{ইমাম ফিকহী: আখবারে মক্কীয়া: ১/৩৭৭ পৃ. হাদিস: ৭৯৫}



❏ এ সনদের ‘আবদুল আযিয’ সহীহ বুখারী ও মুসলিমের রাবী। 


(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৯/৪৩৪ পৃ. ক্রমিক. ১৬২)


❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তাঁর জীবনীতে লিখেন-


العَالِمُ، القُدْوَةُ، الحَافِظُ، الصَّادِقُ، شَيْخ الحَرَمِ


-‘‘তিনি ছিলেন আলেম, অনুসরণযোগ্য ব্যক্তি, হাফেযুল হাদিস, সত্যবাদী, হেরম শরীফের শায়খ।’’ 


(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৯/৪৩৪ পৃ. ক্রমিক. ১৬২) 


❏ তিনি আরও লিখেছেন-


قَالَ أَبُو حَاتِمٍ: صَدُوْقٌ .


وَقَالَ أَحْمَدُ بنُ حَنْبَلٍ: رَجُلٌ صَالِحٌ، لَيْسَ بِهِ بَأْسٌ


-‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তিনি সত্যবাদি, ইমাম আহমদ (رحمة الله) বলেন, তিনি সৎ ব্যক্তি, তাঁর হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।’’ 


(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৯/৪৪০ পৃ. ক্রমিক. ১৬২)


❏ বুঝা গেল তাবেয়ী যাহ্হাক ইবনে মুযাহেম (رحمة الله) পর্যন্ত অন্য সূত্রে বিশুদ্ধভাবে এটি পৌঁছেছে, যার দ্বারা উপরের দুর্বল সনদটি শক্তিশালী হওয়া প্রমাণিত হয়। অপরদিকে ইমাম দায়লামী (رحمة الله) হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে আরেকটি দ্বঈফ সনদ বর্ণনা করেছেন, যা উপরের সূত্রগুলোকে শক্তিশালী করেছে।  ১৬৯

➥{ইমাম আজলূনী: কাশফুল খাফা, ১/২৯৮ পৃ. হা/১০৭৪}



❏ শুধু তাই নয় ইমাম ইবনে মাযাহ  দ্বঈফ সনদে উক্ত (মতনে) শব্দে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে আরেকটি সূত্র বর্ণনা করেছেন।  ১৭০

➥{আল্লামা আজলূনী: কাশফুল খাফা, ১/২৯৮ পৃ. হা/১০৭৪}



তাই উক্ত বিষয়ে সর্বমোট চারটিরও বেশি সনদ পাওয়া গেল, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে হাদিসটি কমপক্ষে ‘হাসান’ পর্যায়ের এবং হাদিসের মূল বিষয় বস্তু প্রমাণিত।

 
Top