বিষয় নং-১৮: মাগরীবের পর আওয়াবিন নামাযের ফযিলত


❏ বিখ্যাত হানাফী ফকীহ ইমাম আফেন্দী (رحمة الله) লিখেন-


(وَالسِّتُّ بَعْدَ الْمَغْرِبِ) تُسَمَّى صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ


-‘‘(মাগরীবের পরে ছয় রাক‘আত সালাত) এ নামযকেই সালাতুল আওয়্যাবীন বলা হয়।’’ 


(মাজমাউল আনহুর, ১/১৩১ পৃ.) 


‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৫০১ পৃষ্ঠায় এ হাদিস সম্পর্কে লেখক বলেন, “ইমাম তিরমিযী এ সময় ছয় রাকাত নামায করলে ১২ বছরের সাওয়াব পাওয়ার হাদিসটি উলে­খ করে বলেন,  হাদিসটি অত্যন্ত দুর্বল। কোনো কোনো মুহাদ্দিস হাদিসটিকে জাল ও বানোয়াট বলে উলে­খ করেছে।” নাঊযুবিল্লাহ


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম তিরমিযীর উপর মিথ্যারোপ করা হয়েছে। ইমাম তিরমিযী কখনো একথা বলেননি। বরং শুধু হাদিসটি গরীব হওয়ার কথা তিনি বলেছেন। 


❏ ইমাম ইবনে মাযাহ  ও তিরমিযি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ الْعُكْلِيُّ، أَخْبَرَنِي عُمَرُ بْنُ أَبِي خَثْعَمٍ الْيَمَامِيُّ، أَخبَرنَا يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ ابْنِ عَوْفٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ، قَالَ: مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ سِتَّ رَكَعَاتٍ لَمْ يَتَكَلَّمْ بَيْنَهُنَّ بِسُوءٍ، عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً


-‘‘হযরত আবু হুরায়রা  হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মাগরীবের নামায সমাপ্তি ৬ রাকআত নামায পড়বে তারপর এর মাঝে কোন অপ্রসাঙ্গিক কথা বলবে না তার এই নামায ১২ বছর (নফল) ইবাদতের সমতুল্য হিসেবে গণ্য করা হবে।’’  ১৭৭

➥{ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ২/২৯৮ পৃ. হা/৪৩৫, ইমাম ইবনে হাজার হায়সামী ঃ মাযমাউদ যাওয়াইদ, ২/২৩০ পৃ., ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ১/৪২৬ পৃ. হা/১১৬৭, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, ৩/১৯ পৃ., ইমাম আবি শায়বাঃ আল-মুসান্নাফ, ২/১৪-১৫ পৃ., ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/১৩৩ পৃ., সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ২/৬৩৮ পৃ. হা/৮৮০৩, আহলে হাদিস আলবানী ঃ সিলসিলাতুল আহাদিসিদি দ্বঈফাহ, হা/৪৬৯, ইমাম খতিব তিবরিযী ঃ মিশকাত, ১/২৩২ পৃ. হা/১১৭৩, বায্যার : আল-মুসনাদ: ১৫/২১৬ পৃ. হাদিস:৮৬২৯, আবু ই‘য়ালা :আল-মুসনাদ : ১০/৪১৩পৃ. হা/৬০২২, তাবরানী : মু‘জামুল আওসাত : ১/২৫০পৃ. হা/৮১৯, ইমাম বগভী : শরহে সুন্নাহ: ৩/৪৭৩ পৃ. হাদিস:৮৯৬}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ এ হাদিসের সনদে ‘উমর ইবনে আবি খাছ‘আম’ নামক একজন রাবী যঈফ। তিনি রাবী হিসেবে দুর্বল তা আমরাও মানি, কেননা ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেছেন- ضَعَّفُوهُ -‘‘সে দুর্বল বর্ণনাকারীর অর্ন্তভুক্ত।’’ 


(আল-মুগনী ফি দ্বুআফা, ২/৪৬৬ পৃ. ক্রমিক.৪৪৫৬) 


তিনি তার আরেক গ্রন্থে লিখেন-


ضعفوه، ..... فروى عباس عن يحيى: ضعيف.


-‘‘তিনি দুর্বল, মুহাদ্দিস আব্বাস (رحمة الله) ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, উমর দুর্বল রাবী।’’ 


(যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ৩/১৯৩ পৃ. ক্রমিক.৬১০১) 


❏ বুঝা যায় সে সাধারণ দুর্বল, কেননা ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার বিষয়ে চূড়ান্ত রায় পেশ করেন- ضعيف -‘‘সে দুর্বল রাবী।’’ 


(ইবনে হাজার, তাক্বরীবুত-তাহযিব, ৪১৪ পৃ. ক্রমিক.৪৯২৮) 


তাই এ গবেষণা থেকে বুঝা যায় এ সনদটি সাধারণ দুর্বল, অত্যন্ত দুর্বল নয়। তাই এ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।


ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার “এহ্ইয়াউস সুনান” গ্রন্থের ১৯১ পৃষ্ঠায় লিখেন-‘‘এই হাদিসটির উপর আমল করা উপরোক্ত শর্ত সাপেক্ষে জায়েয।’’ অতএব , তার বক্তব্য দ্বারা বুঝা গেল হাদিসটি সাধারণ দুর্বল, যার দ্বারা আমল করা যাবে।


❏ অপরদিকে ইমাম তিরমিযী  ও ইবনে মাযাহ  অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে-


عَنْ عَائِشَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ عِشْرِينَ رَكْعَةً بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الجَنَّةِ.


-‘‘হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মাগরীবের পর ২০ রাকাত নামায আদায় করবে আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন।’’  ১৭৮

➥{ইমাম তিরমিযী, আস সুনান, ১/২৬১ পৃ. হা/৪৩৫, ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনানঃ ১/৪৩৭পৃ, হা/১৩৭৩, বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/৪৭৪ পৃ. হাদিস:৮৯৬, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ২/৬৩৮ পৃ. হা/৮৮০৫, তিনি বলেন, হাদিসটি দুর্বল, ইমাম খতিব তিবরিযী, মিশকাত শরীফ, ১/২৩২ পৃ. হা/১১৭৪}



উক্ত সনদ দুটি মিলে হাদিসটি কমপক্ষে ‘হাসান’ হওয়ার মর্যাদা রাখে। এ বিষয়ে আরও সূত্র রয়েছে, যা এ গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে আলোকপাত করা হয়েছে।

 
Top