বিষয় নং-১৯: কিয়ামতে ঐ ব্যক্তিই আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে যে আমার প্রতি বেশী দরূদ শরীফ পড়েছে:


❏ আহলে হাদিস নাসিরুদ্দিন আলবানী নিম্নের হাদিসটিকে যঈফ উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। (আলবানী, যঈফু তিরমিযি, ১/৪৭ পৃ. হা/৩৪৭ এবং যঈফু জামে, হা/১৮২১, যঈফু মিশকাত, হা/৯২৩) 


এছাড়া কতিপয় আহলে হাদিস উক্ত হাদিসটিকে জাল কখনো আবার অত্যন্ত দ্বঈফ বলে চালিয়ে দেন। তাই তাদের ধোঁকার জবাব দেয়ার জন্যই এ হাদিসের সনদটি নিয়ে পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে লিখতে বাধ্য হই। 


❏ ইমাম তিরমিযি, ইবনে হিব্বান সহ আরও অনেক ইমাম সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ ابْنُ عَثْمَةَ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ يَعْقُوبَ الزَّمْعِيُّ قَالَ: حَدَّثَنِي عَبْدُ اللهِ بْنُ كَيْسَانَ، أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ شَدَّادٍ، أَخْبَرَهُ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ: أَوْلَى النَّاسِ بِي يَوْمَ القِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَيَّ صَلاَةً. 


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিনে সেই ব্যক্তি আমার অতি নিকটে থাকবে যে আমার প্রতি অধিক দরূদ পড়ছে।’’  ১৭৯

➥{ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ১/২০৭ পৃ. হা/৩০৬ ও  ৬/৩২৫পৃ. হা/৩১৭৮৭, তিরমিযী : আস্-সুনান : ২/৩৫৪ পৃ. হা/৪৮৪, ইবনে হিব্বান : আস্-সহীহ : ৩/১৯২ পৃ. হা/৯১১, যাহাবী : মিযানুল ই‘তিদাল : ৪/২০৯ পৃ: রাবী : ৯৪৪০, সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১৬০ পৃ: হা/২৬৮,  সাখাভী : আল কওলুল বদী : ২৪১ পৃ: ইবনে হাজার হায়সামী : মাওরিদুয্ যামান : ১/৫৯৪ পৃ. হা/২৩৮৯, ইবনে আছির,  জামিউল উসূল, ৪/৪০৫ পৃ. হা/২৪৭৫, নববী,  খুলাসাতুল আহকাম, ১/৪৩৯ পৃ. হা/১৪৩৩, তিনি বলেন, সনদটি হাসান, ইমাম মিয্যী,  তুহফাতুল আশরাফ বি মা‘রিফাতুল আতরাফ, ৭/৬৯ পৃ. হা/৯৩৪০, ইবনুল ইরাকী, তাখরীযে আহাদিসুল ইহইয়াউল উলূম, ১/৩৬৬ পৃ. সুয়ূতি, আদ্দুরল মুনতাসিরাহ, ১/৮৫ পৃ. হা/১৪০, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/৩৫১ পৃ. হা/৩৮১৯, আজলূনী : কাশফুল খাফা : ১/২৩৯ পৃ: হা/৮৩৫, ইমাম সুয়ূতি : আদ দুররুল মুনতাসিরাহ : ৫/২১৮ পৃ:  ইমাম বুখারী  : তারীখুল কাবীর : ৫/১৭৭ পৃ: হাদিস,  ৫৫৯, ইমাম ইবনে আদী : আল কামিল : ৬/২৪২ পৃ., ইমাম দারেকুতনী : আল-ইলাল: ২৪১ পৃ., ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা : ৩/২৪৯ পৃ. হা/৫৭৯১, বায়হাকী : শু’আবুল ঈমান : ৩/১২৯ পৃ. হা/১৪৬২, ইমাম আবু ই‘য়ালা : আল-মুসনাদ : ৮/৪২৮ পৃ. হা/৫০১১, ইমাম মুনযিরী : তারগীব ওয়াত তারহীব : ২/৩২৭ পৃ. হা/২৫৭৫, খতিব তিবরিযী : মিশকাত : ১/১১৮ পৃ. হা/৯২৩, মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত : ১/৮-৯ পৃ. হা/৯২৩, সুয়ূতি : জামিউস সগীর : ১/১৬৮ পৃ. হা/২২৪৯, আলবানী : দ্বঈফু তারগীব : ৩/২৮০ পৃ. হা/২৫৭৫, দায়লামী : মুসনাদিল ফিরদাউস : ১/৮১ পৃ. হা/২৫০, হাকিম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক : ২/৪২১ পৃ. দিনওয়ারী, মালেকী, মাযালিসে দিনওয়ারী, ১/৪২৯ পৃ. হা/১২৮, বাগবী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৯৭ পৃ. হা/৬৮৬, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১/৪৮৯ পৃ. হা/২১৫১, দরবেশহুত, আস্-সুনানিল মুত্তালিব, ১/৭৫পৃ. হাদিস,  ২৯৫, মিয্যী, তাহযীবুল কামাল, ১৫/৪৮২ পৃ. ক্রমিক.৩৫০৯,}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) এটিকে সংকলন করে ‘হাসান’ বলে উল্লেখ করেছেন। আহলে হাদিস নাসিরুদ্দিন আলবানী সনদের অন্যতম রাবী ‘মুসা বিন ইয়াকুব জামাঈ আল মাদনী’-কে দ্বঈফ বলে চালিয়ে এটিকে হাদিসটি দ্বঈফ বলে তাহকীক করেছেন। তার দলীল ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) বলেন- لَیۡسَ بِالقَوِیُّ -‘‘সে শক্তিশালী বর্ণনাকারী নয়।’’  ১৮০

➥{ইমাম যাহাবী : মিযানুল ইতিদাল : ৪/২০৭-২০৮ রাবী : ৯৪৪০, ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১৬১ : হা/২৬৮, আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ১/২৩৯ : হা/৮৩৫}



আমরা তার জবাবে বলতে চাই, একজন মুহাদ্দিসের রায় দ্বারা সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না, আসুন আমরা দেখি অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ উক্ত রাবীর বিষয়ে কী বলেছেন। 


❏ ইমাম সাখাভী (رحمة الله) আলবানীর মত মিথ্যাবাদীদের মুখোশ উন্মোচন করে লিখেন-


والزمعي قال فيه النسائي: إنه ليس بالقوي، لكن وثقه ابن معين فحسبك به، وكذا وثقه أبو داود، وابن حبان، وابن عدي، وجماعة، وأشار البخاري في تاريخه أيضا


-‘‘যামঈ নামক রাবীকে ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) শক্তিশালী নন বলেছেন, তবে (আসল কথা হলো) ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) তাকে সিকাহ বলেছেন, এমনিভাবে ইমাম আবূ দাউদ, ইবনে হিব্বান, ইবনে আদী (رحمة الله)সহ একজামাত ইমামগণ তাকে সিকাহ বলেছেন, ইমাম বুখারী (رحمة الله)ও তার ‘তারীখে’ সেদিকে ইশারা করেছেন।’’ 


(ইমাম সাখাবী, মাকাসিদুল হাসানা, ২২১ পৃ. হা/২৬৮) 



১-২. ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


عَبَّاس سَمِعت يَحْيى يَقُول مُوسَى بن يعقوب الزمعي ثقة


-‘‘মুহাদ্দিস আব্বাস (رحمة الله) বলেন, আমি ইমাম ইয়াহহিয়া ইবনে মুঈন (رحمة الله) কে তার বিষয়ে বলতে শুনেছি, ثقَةُ -‘‘সে রাবী হিসেবে সিকাহ বা বিশ্বস্ত ছিলেন।’’ 


(ইবনে আদী, আল-কামিল, ৮/৫৬ পৃ. ক্রমিক.১৮২০, তারিখে ইবনে মাঈন (দূরী সংকলিত), ৩/১৫৭ পৃ. ক্রমিক. ৬৭২, মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৪৩ পৃ. ক্রমিক. ৪৮৩০, ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ২৯/১৭২ পৃ. ক্রমিক. ৬৩১৫)


❏ উক্ত রাবী নিয়ে পর্যালোচনা করে ইমাম ইবনে আদি (رحمة الله) নিজেই লিখেন-


وَهو عندي لا بأس بِهِ وبرواياته.


-‘‘আমার নিকট তার হাদিস বর্ণনা করতে কোনো অসুবিধা নেই।’’  ১৮১

➥{ইবনে আদী, আল-কামিল, ৮/৫৮ পৃ. ক্রমিক.১৮২০}



৩. ইমাম মিয্যী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


وَقَال أبو عُبَيد الآجري، عَن أبي داود: صالح


-‘‘মুহাদ্দিস আবূ উবায়দাহ আজরী (رحمة الله) ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, সে তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সৎ ব্যক্তি ছিলেন। 


(তথ্য সূত্র: ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ২৯/১৭২ পৃ. ক্রমিক. ৬৩১৫)



৪. আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


وخرج ابن خزيمة حديثه في ্রصحيحهগ্ধ، وكذا ابن حبان، والحاكم، والطوسي.


-‘‘ইমাম ইবনে খুজায়মা (رحمة الله) তার হাদিস সহীহ হিসেবে তার ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে সংকলন করেছেন, এমনিভাবে ইবনে হিব্বান, হাকেম, তুসী (رحمة الله) তাদের সহীহ গ্রন্থে সহীহ হিসেবে তার হাদিস সংকলন করেছেন।’’


(মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৪৩ পৃ. ক্রমিক. ৪৮৩০)


❏ ইমাম মিয্যী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন-


وذكره ابنُ حِبَّان في كتاب الثقات


-‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’


(তথ্য সূত্র: ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ২৯/১৭২ পৃ. ক্রমিক. ৬৩১৫) 


❏ এমনকি আহলে হাদিস মোবারকপুরী লিখেছেন-


موسى بن يعقوب الزمعي وثقه بن حِبَّانَ كَذَا فِي الْخُلَاصَةِ


-‘‘রাবী ‘মূসা’ কে ইমাম ইবনে হিব্বান  সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন, যেমনটি ইমাম নববী  খুলাসাতুল আহকাম কিতাবে উল্লেখ করেছেন।’’  


(মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজি, ২/৪৯৬ পৃ.)


❏ ইমাম মিয্যী ও বলেন, ‘ইমাম ইবনে হিব্বান  তাঁর সিকাহ গ্রন্থের সিকাহ রাবির তালিকায় তাকে অর্ন্তভুক্ত করেছেন।  ১৮২

➥{ইমাম মিয্যী,  তাহযিবুল কামাল,  ১৫/৪৮২ পৃ. ক্রমিক.৩৫০৯, ইমাম ইবনে হিব্বান,  কিতাবুস সিকাত,  ৭/৪৯ পৃ.}



সুতরাং প্রমাণিত হয়ে গেল অনেক উঁচু স্তরের ইমামগণ তাকে সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন। আর অপরদিকে ইমাম নাসায়ী (رحمة الله) তো তাকে দ্বঈফ বলেননি। বরং শক্তিশালী বর্ণনাকারীর অর্ন্তভুক্ত নন বলেছেন, তিনি এমনটি সহীহ বুখারী-মুসলিমের অনেকে রাবীকেও এমনটি বলেছেন, যা মুহাদ্দিসগণ মেনে নেননি।



এ হাদিসের বিষয়ে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য:


❏ আল্লামা সান‘আনী (رحمة الله) লিখেন-


رمز المصنف لصحته لأن أسانيده صحيحة.


-‘‘গ্রন্থাকার (সুয়ূতি ) এটিকে সহীহ হিসেবে সনাক্ত করেছেন, নিশ্চয় এ সনদটি সহীহ।’’ 


(সান‘আনী, তানভীর, ৩/৬০৩ পৃ. হা/২২৪৩)


❏ আল্লামা মানাভী (رحمة الله) লিখেন- بِإِسْنَاد صَحِيح -‘‘এ সনদটি সহীহ।’’ 


(মানাভী, তাইসীর বিশারহে জামেউস সগীর, ১/৩১৬ পৃ.) 


❏ আহলে হাদিসদের শায়খ উসাইমীন লিখেন- حديث حسن. -‘‘এ হাদিসটি ‘হাসান’।’’ 


(শরহে রিয়াজুস সালেহীন, ৫/৪৭৫ পৃ. হা/১৩৯৮) 


❏ ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী (رحمة الله) এ হাদিসকে (حسن) ‘হাসান’ বলেছেন। 


(কাস্তাল্লানী, ইরশাদুস সারী, ১/৬ পৃ.) 


❏ আহলে হাদিস মোবারকপুরী এ হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে ইমাম তিরমিযির অভিমতের ব্যাখ্যায় লিখেন-


قوله (هذا حديث حسن غريب) أخرجه بن حبان في صحيحه قال بن حِبَّانَ عَقِبَ هَذَا الْحَدِيثِ فِي هَذَا الْخَبَرِ بَيَانٌ صَحِيحٌ


-‘‘(ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) হাদিসটি সংকলন করে বলেছেন, হাদিসটি হাসান, গরীব) ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তার ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে এটি বর্ণনার পরক্ষণে তিনি বলেছেন, এ হাদিসটি সহীহ।’’ 


(মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজি, ২/৪৯৬ পৃ.)


❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন-


وَحَسَّنَهُ التِّرْمِذِيُّ وَصَحَّحَهُ بن حِبَّانَ


-‘‘ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) এটিকে ‘হাসান’ বলেছেন, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) এটিকে সহীহ বলেছেন।’’ 


(ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১১/১৬৭ পৃ.) 


❏ ইমাম ইবনুল মুলাক্কীন (رحمة الله) বলেন-


رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ حسن غَرِيب وَصَححهُ ابْن حبَان وَذكره


-‘‘ইমাম তিরিমিযি (رحمة الله) এটি সংকলন করে বলেন, এটি হাসান, গরীব, ইমাম ইবনে হিব্বান এটিকে সহীহ বলেছেন।’’ 


(তুহফাতুল মুহতাজ ইলা আদিল্লাতিল মিনহাজ, ১/৫২৭ পৃ. হা/৬৬৫)


❏ ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন- حسن -‘‘এ হাদিসটি হাসান’। 


(ইমাম নববী, খুলাসাতুল আহকাম, ১/৪৩৯ পৃ. হা/১৪৩৩)


❏ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি ও মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন হাদিসটি সহীহ।  ১৮৩

➥{মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাত : ৩/৯ পৃ. হা/৯২৩, ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর : হা/২২৪৯}



❏ ধোঁকাবাজ আলবানী এটিকে আবার তার তাহকীক করা ‘সহীহ ইবনে হিব্বানের’ টীকায় এটিকে (حسن لغيره) ‘হাসান লিগাইরিহি’ বলেছেন। 


(আলবানী, সহীহ ইবনে হিব্বানের টীকা, হা/৯০৮-এর আলোচনা)


❏ এ বিষয়ক হযরত আবূ উমামা (رضي الله عنه)-এর হাদিস:


উপরের আলোচনা থেকে বুঝলাম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)-এর সূত্রে বর্ণিত সনদটি সহীহ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এ বিষয়ক আরেকটি সূত্র ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সংকলন করেছেন-


أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ عَبْدَانَ، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْحَجَّاجِ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ بَرَدِ بْنِ سِنَانٍ، عَنْ مَكْحُولٍ الشَّامِيِّ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِي كُلِّ يَوْمِ جُمُعَةٍ، فَإِنَّ صَلَاةَ أُمَّتِي تُعْرَضُ عَلَيَّ فِي كُلِّ يَوْمِ جُمُعَةٍ، فَمَنْ كَانَ أَكْثَرَهُمْ عَلَيَّ صَلَاةً كَانَ أَقْرَبَهُمْ مِنِّي مَنْزِلَةً


-‘‘হযরত আবূ উমামা বাহেলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমরা জুম‘আর দিনে বেশি করে আমার উপর দরূদ পাঠ করবে, কেননা জুম‘আর দিনে দরূদ শরীফ আমার নিকট সরাসরি পেশ করা হয়, আর যে ব্যক্তি আমার উপর যত বেশি দরূদ পাঠ করবে তার স্থান তত বেশি আমার নিকপবর্তী হবে।’’ 


(ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৩/৩৫৩ পৃ. হা/৫৯৯৫, বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৪/৪৩৩ পৃ. হা/২৭৭০)



সনদ পর্যালোচনা:


❏ এ হাদিসটির সনদের মান কমপক্ষে ‘হাসান’। কিন্তু আহলে হাদিস আলবানী এটিকে (ضعيف جدا) অত্যন্ত যঈফ বলে উল্লেখ করেছেন। 


(আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ৬/৪৩০ পৃ. হা/২৮৯২) 


আলবানীর দাবী যে এ হাদিসের সনদে (إبراهيم بن حيان) নামক রাবী রয়েছেন। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আপনারাই দেখুন এ হাদিসের সনদে এ নামে কোনো রাবী আছেন কীনা। অথচ উক্ত রাবীর বিষয়ে ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) লিখেছেন- مدني، ضعيف الحديث. -‘‘তিনি মদিনার অধিবাসী, হাদিস বর্ণনায় দুর্বল।’’ 


(ইবনে আদী, আল-কামিল, ১/৪১০ পৃ. ক্রমিক. ৮৪) 


❏ তবে এটি ঠিক যে তিনি দায়লামীর সনদে রয়েছেন। (ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/৮১ পৃ. হা/২৫০, আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ৬/৪৩০ পৃ. হা/২৮৯২) 


❏ বায়হাকীর সনদ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন- وَلَا بَأْسَ بِسَنَدِهِ -‘‘সনদে কোনো অসুবিধা নেই।’’ 


(ফতহুল বারী, ১১/১৬৭ পৃ.) 


❏ আল্লামা মানাভী (رحمة الله) এ সনদ প্রসঙ্গে লিখেন- رمز المصنف لحسنه -‘‘গ্রন্থকার (সুয়ূতি ) হাদিসটির সনদকে ‘হাসান’ বলে মত প্রকাশ করেছেন।’’ 


❏ (আল্লামা মানাভী, ফয়যুল কাদীর, ২/৮৭ পৃ. হা/১৪০৪) বায়হাকীর সনদের কোনো রাবীর দুর্বলতা নেই, তবে আলবানীর দাবী যে তাবেয়ী মিকহুল শামী (رحمة الله) সাহাবী হযরত আবূ উমামা (رضي الله عنه) হতে শুনেননি। তারপরও আমি বলবো, এ হাদিসের সনদ ‘হাসান’। 


❏ যেমন ইমাম মুনযিরী (رحمة الله) লিখেন-


رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ بِإِسْنَاد حسن إِلَّا أَن مَكْحُولًا قيل لم يسمع من أبي أُمَامَة


-‘‘হাদিসটি ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন, তবে তাবেয়ী মিকহুল শামী (رحمة الله) হযরত আবূ উমামা (رضي الله عنه) হতে কিছুই শুনেনি।’’ 


(ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৩২৮ পৃ. হা/২৫৮৩) 


❏ আল্লামা মানাভী (رحمة الله) লিখেছেন- وَرِجَاله ثِقَات لَكِن فِيهِ انْقِطَاع -‘‘সনদের সমস্ত রাবী সিকাহ, তবে সনদে ইনকিতা বা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।’’ 


(মানাভী, তাইসীর বিশারহে জামেউস সগীর, ১/২০২ পৃ.)


মিকহুল শামী (رحمة الله)-এর শুনা নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে। 


❏ ইমাম ইবনে কাসির (رحمة الله) লিখেন-


روى عن: أنس، وثَوْبان، وسعيد بن المسيب، وأبي أمامة


-‘‘মিকহুল (رحمة الله) হাদিস বর্ণনা করতেন, হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه), ছাওবান (رضي الله عنه), সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (رحمة الله) এবং আবূ উমামা (رضي الله عنه) হতে।’’ 


(ইবনে কাসির, তাকমীল ফি জারহু ওয়া তা‘দীল, ১/১৭১ পৃ. ক্রমিক.২১৪) 


❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-


وقال ابن يونس: كان فقيهاً عالماً، رأى أبا أمامة، وأنس بن مالك، وسمع واثلة بن الأسقع.


-‘‘ইমাম ইবনে ইউনুস (رحمة الله) বলেন, তিনি একজন ফকীহ, আলিম ছিলেন, তিনি হযরত আবূ উমামা বাহেলী (رضي الله عنه) এবং হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) কে দেখেছেন এবং হযরত ওয়াসিলা ইবনে আসকা (رضي الله عنه) হতে শুনেছেন।’’ 


(ইবনে কাসির, তাকমীল ফি জারহু ওয়া তা‘দীল, ১/১৭৩ পৃ. ক্রমিক.২১৪)  


❏ তিনি তার প্রশংসায় বলা কয়েকজন ইমামদের কথা এভাবে উল্লেখ করেন-


وقال الزُّهْري: العلماء أربعة: سعيد بن المسيب بالمدينة، والشعبي بالكوفة والحسن بالبصرة، ومكحول بالشام.


وقال سعيد بن عبد العزيز: مكحول أفقه أهل الشام، وهو أفقه من الزُّهْري.


-‘‘ইমাম জুহুরী (رحمة الله) বলেন, এ যুগে আলেম হলেন চারজন, ১. সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (رحمة الله) হলেন মদিনায়, ইমাম শা‘বী (رحمة الله) হলেন মদিনায়, হাসান বসরী  হলেন বসরায়, মিকহুল  হলেন শাম দেশে।’’ 


(ইবনে কাসির, তাকমীল ফি জারহু ওয়া তা‘দীল, ১/১৭১ পৃ. ক্রমিক.২১৪) 


যাই হোক সব মিলিয়ে এ হাদিসের সনদটি ‘হাসান’ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

 
Top