বিষয় নং- ২০: সালাতুল তাসবীহ নামাযের গ্রহণযোগ্যতা


আহলে হাদিসদের তথাকথিত মুফতি উছাইমীন তার ‘ফাতওয়ায়ে আরকানূল ইসলাম’ এ একটি প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে লিখেছেন-


الجواب: صلاة التسبيح لا تصح عن النبي صلى الله عليه وسلم


-‘‘জবাব: সলাতুল তাসবীহ নামাযের বিষয়ে রাসূল (ﷺ) থেকে কোন সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়নি।’’ 


(ফাতওয়ায়ে আরকানুল ইসলাম, ৩৬৩ পৃ. প্রশ্ন নং-৩৯৩)


❏ তাকে আরেক স্থানে প্রশ্ন করা হলো যে-


٨٩٧) سئل فضيلة الشيخ: عن صلاة التسبيح؟


فأجاب فضيلته بقوله: صلاة التسبيح لا تصح عن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال الإمام أحمد - رحمه الله تعالى - في حديثها لا يصح، وقال شيخ الإسلام بن تيميه - رحمه الله : إنه كذب.


-‘‘প্রশ্ন নং-৮৯৭: সালাতুল তাসবীহ নামায আসলে কী?


জবাব: সালাতুল তাসবীহ নামাযের বিষয়ে রাসূল (ﷺ) থেকে সহীহ সূত্রে কিছুই বর্ণিত হয়নি, ইমাম আহমদ (رحمة الله) এ হাদিসের বিষয়ে বলেছেন, এটি সহীহ নয়, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেছেন, নিশ্চয় এটা মিথ্যা হাদিস।’’ 


(মাজমূআয়ে ফাতওয়ায়ে ওয়া রসায়েলিল উসাইমীন,  ১৪/৩২৮ পৃ.)


❏ আহলে হাদিসদের আরেক মুফতি ইবনে বায এ নামায বিষয়ক হাদিসের গ্রহণযোগ্য সম্পর্কে লিখেন-


حديث صلاة التسبيح موضوع.


-‘‘সলাতুল তাসবীহ বিষয় হাদিসটি জাল।’’ 


(মাজমূআয়ে ফাতওয়ায়ে ইবনে বায, ২৬/২২৯ পৃ.) 


❏ সুনানে ইবনে মাযাহ এর হাদিস প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন- ليس حديثها بثابت. -‘‘এ বিষয়ের হাদিস প্রমাণিত নয়।’’ 


(মাজমূআয়ে ফাতওয়ায়ে ইবনে বায, ২৬/২৩১ পৃ.) 


❏ আহলে হাদিসদের আরও বিভিন্ন পুস্তুকে এই নিকৃষ্ট বক্তব্যটি আমি দেখেছি। আহলে হাদিসদের আরেক ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী মিশকাতের তাহকীকে নিম্নের এ হাদিসটিকে যঈফ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। 


(আলবানী, তাহকীকে মিশকাত, ১/৪১৮ পৃ. হা/১৩২৮) 


❏ আবার এ ভুয়া তাহকীকারী তার অন্য দুটি গ্রন্থে এটিকে ‘হাসান এবং সহীহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। 


(আলবানী, সহীহ আবু দাউদ, ৫/৪০ পৃ. হা/১১৭৩ এবং সহীহুল জামেউস সগীর ওয়া যিয়াদাহ, ২/১৩১৪ পৃ. হা/৭৯৩৭) 


আল্লাহ আমাদের এ সমস্ত ধোঁকাবাজদের থেকে আমাদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করুন, আমিন। আমরা এখন হাদিসটির গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে আলোকপাত করবো ইন শা আল্লাহ!


حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ بِشْرِ بْنِ الْحَكَمِ النَّيْسَابُورِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ قَالَ: حَدَّثَنَا الْحَكَمُ بْنُ أَبَانَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لِلْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ: يَا عَبَّاسُ يَا عَمَّاهُ أَلَا أُعْطِيكَ، أَلَا أَمْنَحُكَ، أَلَا أَحْبُوكَ، أَلَا أَفْعَلُ لَكَ عَشْرَ خِصَالٍ، إِذَا أَنْتَ فَعَلْتَ ذَلِكَ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ ذَنْبَكَ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ وَقَدِيمَهُ وَحَدِيثَهُ وَخَطَأَهُ وَعَمْدَهُ وَصَغِيرَهُ وَكَبِيرَهُ وَسِرَّهُ وَعَلَانِيَتَهُ عَشْرُ خِصَالٍ: أَنْ تُصَلِّيَ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ تَقْرَأُ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُورَةٍ، فَإِذَا فَرَغْتَ مِنَ الْقِرَاءَةِ فِي أَوَّلِ رَكْعَةٍ قُلْتَ وَأَنْتَ قَائِمٌ، سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ، خَمْسَ عَشْرَةَ مَرَّةً، ثُمَّ تَرْكَعُ فَتَقُولُ، وَأَنْتَ رَاكِعٌ عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ الرُّكُوعِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَهْوِي سَاجِدًا فَتَقُولُهَا وَأَنْتَ سَاجِدٌ عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ السُّجُودِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَسْجُدُ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ السُّجُودِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، فَذَلِكَ خَمْسَةٌ وَسَبْعُونَ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ، تَفْعَلُ فِي أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ، إِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تُصَلِّيَهَا فِي كُلِّ يَوْمٍ مَرَّةً فَافْعَلْ، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَفِي كُلِّ جُمُعَةٍ مَرَّةً، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَفِي كُلِّ شَهْرٍ مَرَّةً، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَفِي عُمُرِكَ مَرَّةً


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হুযূর (ﷺ) আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه)-কে বলিলেন,  হে আব্বাস! হে আমার চাচা আমি কী আপনাকে শিক্ষা দিব না দশটি তাসবীহ? আপনি এগুলো আদায় করলে আল্লাহ্ আপনার মাফ করে দিবেন আপনার আগের,  পরের,  পুরাতন,  নতুন,  ইচ্ছাকৃত,  অনিচ্ছাকৃত,  ছোট,  বড়,  প্রকাশ্য,  অপ্রকাশ্য গুনাহ। আপনি চার রা‘কআত নামায পড়বেন। তার প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ফাতেহার সাথে অপর একটি সূরা তেলাওয়াত করবেন। প্রথম রাকাআ‘তের কিরাতের পড় আপনি দাঁড়ানো অবস্থায় বলিবেন,  সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামদুলিল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লালাহু ওয়াল্লাহু আকবার ১৫ বার। তারপর রূক করিবেন এবং দোয়াটি ১০ পুনরায় দশ বার পড়িবেন, তারপর রুকু হইতে মাথা উঠাইবেন, সামিয়াআল্লাহু লিমান হামিদা বলার পর আবার দশবার দোয়াটি বলিবেন তারপর সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহর পর সিজদার মধ্যে দোয়াটি দশবার পড়িবেন,  তারপর সিজদা হইতে মাথা উঠাইবেন এবং আবার দশবার বলিবেন। তারপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে পূর্বের ন্যায় দোয়াটি দশবার পড়বেন। তারপর সিজদা হইতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দশবার বলবেন। এই মোট ৭৫ বার বলা হল। এভাবে মোট চার রাকাআত সালাত পড়বেন। যদি প্রত্যহ একবার এই নামায পড়তে পারেন তাহলে পড়িবেন; তা না পারলে প্রত্যেক সপ্তাহে একবার, যদি তাও না পারেন,  তবে বছরে একবার হলেও পড়বেন। আর তাও না পারলে অন্তত: সমগ্র জীবনে একবার হলেও তা আদায় করবেন।’’  ১৮৪

➥{ইমাম ইবনে মাজাহ, আস্-সুনান, ১/৪৪২ পৃ. হাদিস:১৩৮৭, আবূ দাউদ, আস্-সুনান, ২/২৯ পৃ. হাদিস:১২৯৭, খতিব তিবরিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, সালাতুল তাসবীহ, ১/২৮২ পৃ. হাদিস:১৩২৮, হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ১/৪৬৩ পৃ. হা/১১৯২, মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত,  ২/৩৭৫ পৃ. হাদিস:১৩২৮ এবং ১৩২৯, ইবনে খুযায়মা, আস্-সহীহ, ২/২২৩ পৃ. হাদিস:১২১৬,  ইমাম বায়হাকি, সুনানে কোবরা, ৩/৭৩পৃ. হা/৪৯১৬, দাওয়াতুল কাবীর, ২/২২ পৃ. হাদিস:৪৪৪, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১১/২৪৩ পৃ. হাদিস:১১৬২২, যিয়া মুকাদ্দাসি, আহাদিসুল মুখতার, ১১/৩২৮ পৃ. হা/৩৩২ এবং ১১/৩২৯ পৃ. অন্য আরেক সনদে, ইবনে শাহিন,  আত্-তারগীব ফি ফাযায়েলে আ‘মাল,  ১/৪২ পৃ. হাদিস:১০৫, যাকারিয়া বাগদাদী, আল-মুখালি­সিয়্যাত, ৪/১৪০ পৃ. হা/৩১২৪, মুফতি আমিমুল ইহসান, ফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার,  ১/৩১১ পৃ. হা/৮৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত।}



সনদ পর্যালোচনা:


১. উক্ত সনদের ব্যাপারে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন, 


وَرَوَاهُ ابْنُ خُزَيْمَةَ فِي صَحِيحِهِ وَغَيْرُهُمْ مِنْ حَدِيثِ ابْنِ عَبَّاسٍ اهـ. وَرَوَاهُ الْحَاكِمُ وَابْنُ حِبَّانَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَلَى مَا فِي الْحِصْنِ.


-“ইমাম ইবনে খুযায়মা (رحمة الله) তার আস্-সহীহ গ্রন্থে সহীহ সনদে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর সনদে এবং হাকিম নিশাপুরী ও ইমাম ইবনে হিব্বান ও সুরক্ষিত সনদে বর্ণনা করেছেন।’’  ১৮৫

➥{মোল্লা আলী ক্বারী,  মেরকাত,  ২/৩৭৬ পৃ. হাদিস:১৩২৮}



২. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী  এর কওল নকল করে লিখেন-


وَصَحَّحَهُ ابْنُ خُزَيْمَةَ، وَالْحَاكِمُ وَحَسَّنَهُ جَمَاعَةٌ


-‘‘ইমাম খুযাইমা ও হাকিম নিশাপুরী বিশুদ্ধ সনদে এবং এক জামাত মুহাদ্দিসগণ ‘হাসান’ সনদের বর্ণনা করেছেন।’’  ১৮৬

➥{মোল্লা আলী ক্বারী,  মেরকাত, ৩/৯৯৫ পৃ. হাদিস:১৩২৯}



৩. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী  আরও একটু সামনে অগ্রসর হয়ে লিখেন-


وَقَالَ الْعَسْقَلَانِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ  حَسَنٌ


-‘‘ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন, হাদিসটি হাসান।’’  ১৮৭

➥{মোল্লা আলী ক্বারী,  মেরকাত, ৩/৯৯৫ পৃ. হাদিস:১৩২৯}



৪. উক্ত সুত্র স¤র্পকে আল্লামা মুফতি আমিমুল ইহসান বলেন আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, ইবনে খুযাইমা বর্ণনা করেছেন। ইব্নুস সাকান ও হাকিম হাদিসটি সহীহ বলেছেন।  ১৮৮

➥{ফিকহুস-সুনানি ওয়াল আছার,  ১/৩১১ পৃ. হাদিস:৮৬৮}




৫. ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) এ হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে লিখেন-


الْحَقُّ فِي حَدِيثِ صَلَاةِ التَّسْبِيحِ أَنَّهُ حَسَنٌ لِغَيْرِهِ فَمَنْ أَطْلَقَ تَصْحِيحَهُ كَابْنِ خُزَيْمَةَ وَالْحَاكِمِ يُحْمَلُ عَلَى الْمَشْيِ عَلَى أَنَّ الْحَسَنَ يُسَمَّى لِكَثْرَةِ شَوَاهِدِهِ صَحِيحًا،


-‘‘হক কথা হলো, সালাতুল তাসবীহ নামাযের হাদিসটির হুকুম ‘হাসান লিগাইরিহী’।’’ 


(ইবনে হাজার মক্কী, আল-ফাতওয়ায়ে ফিকহিয়্যাতুল কোবরা, ১/১৯০ পৃ.) 



৬. আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী লিখেন-


وَقَالَ ابْنُ حَجَرٍ: لا بَأْسَ بِإِسْنَادِ حَدِيثَ ابْنِ عَبَّاسٍ وَهُوَ مِنْ شَرْطِ الْحَسَنِ فَإِنَّ لَهُ شَوَاهِدَ تُقَوِّيهِ وَقَدْ أَسَاءَ ابْنُ الْجَوْزِيِّ بِذِكْرِهِ فِي الْمَوْضُوعَاتِ.


-‘‘ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন, ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)-এর হাদিসের সনদে কোন অসুবিধা নেই, এ হাদিসটি শর্ত সাপেক্ষে ‘হাসান’ কেননা হাদিসটির অনেক শাওয়াহেদ থাকায় বিষয়টি শক্তিশালী করেছে, ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) তার জাল হাদিসের গ্রন্থে একে উল্লেখ করা ভুল।’’ 


(শাওকানী, ফাওয়াইদুল মাজমূআ, ৩৭ পৃ.)



❏ তিনি আরও লিখেন-


وقال في اللآلىء: أَنَّهُ قَالَ الْحَافِظُ الْعَلائِيُّ: هُوَ صَحِيحٌ أَوْ حَسَنٌ وَكَذَا قَالَ الشَّيْخُ سِرَاجُ الدِّينِ فِي التَّدْرِيبِ وَالزَّرْكَشِيُّ.


-‘‘ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) তার ‘আল-লাআলিল মাসনূ’ গ্রন্থে বলেন, নিশ্চয়ই ইমাম হাফেয আলায়ী (رحمة الله) বলেন, এ বিষয়ক হাদিসটি সহীহ অথবা হাসান। এমনটি শায়খ সিরাজুদ্দীন (رحمة الله) তার তাদরীব গ্রন্থে বলেছেন, এমনটি ইমাম যারকাশী (رحمة الله) বলেছেন।’’ 


(শাওকানী, ফাওয়াইদুল মাজমূআ, ৩৮ পৃ.)



৭. মাওলানা আবদুল হাই লাখনৌভি লিখেন-


وَصَححهُ وَالْبَيْهَقِيّ وَقَال ابْن شاهين فِي التَّرْغِيب سَمِعت أَبَا بكر بْن أبي دَاوُد يَقُول سَمِعت أبي يَقُول: أصح حَدِيث فِي صَلَاة التَّسْبِيح هَذَا.


-‘‘ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এটিকে সহীহ বলেছেন, ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) তার তারগীব গ্রন্থে বলেন, আমি মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ ইবনে আবি দাউদ (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে সলাতুল তাসবীহ বিষয়ক বর্ণিত হাদিসটি অধিক বিশুদ্ধ।’’ 


(আছারুল মারফুআহ, ১২৫ পৃ.)



৮. ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) লিখেন-


حَدِيث صَلَاة التَّسْبِيح حَدِيث صَحِيح أَوْ حسن


-‘‘সালাতুল তাসবীহ এর হাদিস সহীহ অথবা হাসান পর্যায়ের।’’ 


(ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ২/৩৮ পৃ.) 


❏ তিনি এ হাদিসের বিষয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরেন-


وقَالَ الشَّيْخ سراج الدّين البُلْقِينِيّ فِي التدريب حَدِيث صَلَاة التَّسْبِيح صَحِيح وَلَهُ طرق يعضد بَعْضهَا بَعْضًا فَهِيَ سنة يَنْبَغِي الْعَمَل بهَا.


وقَالَ الزَّرْكَشِيّ أَحَادِيث الشَّرْح غلط ابْن الْجَوْزِيّ بِلَا شكّ فِي إِخْرَاج حَدِيث صَلَاة التَّسْبِيح فِي المَوْضُوعات لِأَنَّهُ رَوَاهُ منْ ثَلَاث طرق.


أَحدهَا حَدِيث ابْن عَبَّاس وَهُوَ صَحِيح وَلَيْسَ بضعيف فضلا عَنْ أَن يكون مَوْضُوعا وَغَايَة مَا علله بمُوسَى بْن عَبْد الْعَزِيز فَقَالَ مَجْهُول وَلَيْسَ كَذَلِك.


-‘‘শায়খ সিরাজুদ্দীন বুলকীনী (رحمة الله) তার তাদরীব গ্রন্থে বলেন, সলাতুল তাসবীহ বিষয়ক হাদিসকে সহীহ বলেছেন, এ বিষয়ক হাদিস অনেক সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় একটি সূত্র অপর সূত্রকে শক্তিশালী করেছে, তাই এটি সুন্নাত হিসেবে সাব্যস্ত, আমাদের এর উপর আমল করা উচিত হবে। আল্লামা যারকশী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) তার জাল হাদিসের গ্রন্থে এটিকে উল্লেখ করে তিনি ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই, নিশ্চয়ই এটি তিনটিরও বেশি সূত্রে বর্ণিত। প্রথম সূত্রটি হচ্ছে হযরত ইবনে আব্বাস (رحمة الله)-এর বর্ণিত হাদিস, এটি সহীহ, এটি যঈফও নয় জালও নয়, সনদে রাবী ‘মূসা ইবনে আবদুল আযিয’ কে কেউ কেউ মাজহুল হিসেবে তুলে ধরতে চান, আসলে তিনি মোটেও তেমন নন।’’ 


(ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ২/৩৮ পৃ.)



৯. আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) এ হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন-


وذكره ابن شاهين في كتاب الثقات، وقال: قال عبد الله بن أبي داود: أصح حديث في التسبيح حديث العباس - يعني الذي رواه موسى بن عبد العزيز


-‘‘ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) (এ হাদিসের সনদে থাকা ‘মূসা ইবনে আবদুল আযিয’ কে) সিকাহ রাবীর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন এবং বলেছেন, মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ ইবনে আবি দাউদ (رحمة الله) বলেন, রাবী মূসা ইবনে আব্দুল আযিয (رحمة الله) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে যে সালাতুল তাসবীহ এর হাদিস বর্ণনা করেছেন তা অধিক বিশুদ্ধ।’’ 


(মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/২৭ পৃ. ক্রমিক. ৪৮০৯)


আহলে হাদিসদের আপত্তি ও নিষ্পত্তি:


এ সনদে ‘মূসা ইবনে আবদুল আযিয’ নামক একজন রাবীকে আমাদের আহলে হাদিসগণ যঈফ বলতে চান। ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) তাদের জবাবে লিখেন-


مُوسَى بْن عَبْد الْعَزِيز قَالَ فِيهِ ابْن مَعِين لَا أرى بِهِ بَأْسا.


-‘‘মূসা ইবনে আবদুল আযিয রয়েছেন, ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে অসুবিধার কিছু দেখছি না।’’ 


(সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ২/৩৪ পৃ., যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ৪/২১৩ পৃ., ক্রমিক. ৮৮৯৩) 


❏ ইমাম যাহাবী আরও উল্লেখ করেন- وقال النسائي: ليس به بأس. -‘‘ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।’’ 


(যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ৪/২১৩ পৃ., ক্রমিক. ৮৮৯৩ এবং তারিখুল ইসলাম, ৫/৫০৫ পৃ. ক্রমিক. ৩৭৬)


❏ আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-


وخرج ابن خزيمة حديثه في صلاة التسابيح في ্রصحيحهগ্ধ، وكذلك الحاكم النيسابوري. وزعم المزي أن ابن حبان ذكره في كتاب الثقات، ... وذكره ابن شاهين في كتاب الثقات،


-‘‘ইমাম ইবনে খুজায়মা (رحمة الله) তার ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে তার থেকে বর্ণিত সলাতুল তাসবীহ বিষয়ক হাদিস বর্ণনা করেছেন, এমনিভাবে ইমাম হাকেম (رحمة الله) তার মুস্তাদরাকে সহীহ হিসেবে সংকলন করেছেন। ইমাম মিয্যী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় তাকে অর্ন্তভুক্ত করেছেন।.......ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله)ও তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ 


(মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/২৭ পৃ. ক্রমিক. ৪৮০৯) 


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ পর্যন্ত হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর হাদিসের সনদ সর্ম্পকে আলোকপাত করা হলো এবার আমরা অন্য সনদের অবস্থা সর্ম্পকে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো। 



দ্বিতীয় হাদিস:


❏ ইমাম তিরমিযী  সলাতুত তাসবীহ এর হাদিস  হযরত আবু রা‘ফি (رضي الله عنه) এর থেকে সংকলন করেছেন এভাবে-


حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ مُحَمَّدُ بْنُ العَلاَءِ، قَالَ: حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ حُبَابٍ العُكْلِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ عُبَيْدَةَ قَالَ: حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ أَبِي سَعِيدٍ، مَوْلَى أَبِي بَكْرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ، عَنْ أَبِي رَافِعٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْعَبَّاسِ:..... ثُمَّ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَقُلْهَا عَشْرًا، ثُمَّ اسْجُدْ فَقُلْهَا عَشْرًا، ثُمَّ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَقُلْهَا عَشْرًا، ثُمَّ اسْجُدْ فَقُلْهَا عَشْرًا، ثُمَّ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَقُلْهَا عَشْرًا قَبْلَ أَنْ تَقُومَ، فَتِلْكَ خَمْسٌ وَسَبْعُونَ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ وَهِيَ ثَلاَثُمِائَةٍ فِي أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ


-“হযরত আবু রা‘ফি (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) কে বলেন......এই হাদিসে বলা হয়েছে প্রথম রাকাআতের  দ্বিতীয় সিজদার পর আপনি আপনার মাথা উঠাইবেন। তখন আপনি দাঁড়ানোর পূর্বে বাক্যগুলো দশবার উচ্চারণ করবেন। এতে প্রত্যেক রাকআতে পঁচাত্তরবার হবে এবং চার রাকআতে (মোট) তিনশতবার হবে।’’  ১৮৯

➥{ইমাম তিরমিযি,  আস্-সুনান,  ২/৩৫০ পৃ.  হা/৪৮২, খতিব তিবরিযী, মিশকাত,  ২/২৮২ পৃ.  হা/১৩২৯, মোল্লা আলী ক্বারী,  মেরকাত,  ২/৩৭৭ পৃ. হা/১৩২৯, আমিমুল ইহসান,  ফিকহুস-সুনানি ওয়াল আছার,  ১/৩১১পৃ. হা/৮৬৯}



সনদ পর্যালোচনা:


উক্ত হাদিসটি সনদগত ভাবে ‘হাসান’ এর মর্যাদা রাখে। তবে উক্ত সনদের ‘সাঈদ বিন আবি সাঈদ’ এর ব্যাপারে অনেকে আপত্তি তুলেন যে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী  তার তাক্বরীবুত তাহযীব গ্রন্থে তাকে মাজহুল বা অজ্ঞাত রাবী বলেছেন। আমি এ আপত্তির জবাবে বলবো, স্বয়ং ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী  তার আরেক গ্রন্থে লিখেছেন- ذكره ابن حبان في الثقات. -‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ 


(ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত-তাহযিব, ৪/৩৭ পৃ. ক্রমিক.৫৯) 


❏ আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) লিখেন-


خرج ابن حبان حديثه في صحيحه، وكذلك الحاكم أبو عبد الله.


-‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তার হাদিস সহীহ হিসেবে ‘আস-সহীহ’ হিসেবে সংকলন করেছেন, এমনিভাবে ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তার মুস্তাদরাকে সহীহ হিসেবে তার হাদিস সংকলন করেছেন।’’ 


(মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ক্রমিক.৫/৩০২ পৃ. ক্রমিক. ১৯৫৯) 


❏ ইমাম মিয্যী (رحمة الله) লিখেন-


ذكره ابنُ حِبَّان في كتاب الثقات. روى له التِّرْمِذِيّ وابن مَاجَهْ.


-‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে সিকাহ রাবিদের অর্ন্তভুক্ত করেছেন। তার হাদিস ইমাম তিরমিযি এবং ইবনে মাযাহ (رحمة الله) তাদের সুনানদ্বয়ে সংকলন করেছেন।’’  ১৯০

➥{ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ১০/৪৬৫ পৃ. ক্রমিক. ২২৮৩}


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ ! এ পর্যন্ত দুটি সুত্রের আলোচনা করা হলো, আমরা সনদ পর্যালোচনা করে দেখতে পেলাম যে দুটি সূত্রই নির্ভরযোগ্য।



আরও বিভিন্ন সূত্র: 


❏ ইমাম তিরমীযি (رحمة الله) তাবঈ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক এর একটি সুত্র বর্ণনা করেছেন যেখানে একটি দোয়া ও নিয়ম পদ্বতি ভিন্নতা পাওয়া যায়। উক্ত সুত্রগুলো ব্যতীত আরো অনেক সুত্র আছে বলে ইমাম তিরমীযি উলে­খ করেন


وَفِي البَابِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، وَعَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، وَالفَضْلِ بْنِ عَبَّاسٍ، وَأَبِي رَافِعٍ.


-‘‘এই বিষয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه), হযরত ফদ্বল ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং হযরত আবি রা‘ফে (رضي الله عنه) এর হাদিস বর্ণিত আছে।’’  ১৯১ 

➥{ইমাম তিরমিযী,  আস্-সুনান,  ২/৩৫০ পৃ. হাদিস:৪৮১}



প্রথম. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর হাদিসটি প্রথমেই উলে­খ করেছি। 


আর আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস এর বর্ণনাটি সুনানে আবু দাউদে পাওয়া যায়। 


আর তৃতীয় সনদ. ইমাম ইবনে ইরাকী (رحمة الله) হযরত ফদ্বল ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)-এর সূত্রের কথা এভাবে উল্লেখ করেন-


فأخرجه أبو نعيم في كتاب القربان من رواية موسى بن إسماعيل عن عبد الحميد بن عبد الرحمن الطائي عن أبيه عن أبي رافع عن الفضل بن عباس أن النبي - صلّى الله عليه وسلم - قال فذكره قال الحافظ والطائي المذكور لا أعرفه ولا أباه قال وأظن أن أبا رافع شيخ الطائي ليس أبا رافع الصحابي بل هو إسماعيل بن رافع أحد الضعفاء


-‘‘ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) তার ‘কিতাবুল কোরবান’ গ্রন্থে যথাক্রমে মূসা ইবনে ইসমাঈল হতে তিনি আবদিল হুমাইদ বিন আবদুর রহমান তায়ী হতে তিনি তাঁর পিতা হতে তিনি তাবেয়ী আবি রা‘ফে হতে তিনি হযরত ফদ্বল ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন।’’ 


(ইবনুল ইরাকী, তাখরীজু আহাদিসু ইহ্ইয়া, ১/৫৫২ পৃ.) 


আর চতুর্থ সনদ. এ বর্ণনাটি হযরত আবি রা‘ফে (رضي الله عنه) হতে ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) এবং ইমাম ইবনে মাযাহ (رحمة الله) তাদের গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, যা আমি ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি।


উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, যারা বলে থাকেন শবে বরাত বলতে কোনো কিছুই নেই তাদের কথার এবং তাহকীকের কোনো ভিত্তি নেই।

 
Top